আমরা (নারীরা) যখন রাস্তা দিয়ে বোরকা পরে চলাফেরা করি তখন কিছু বেগানা পুরুষলোক আমাদেরকে সালাম দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি তাদের সালামের উত্তর দিতে পারব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
আমরা (নারীরা) যখন রাস্তা দিয়ে বোরকা পরে চলাফেরা করি তখন কিছু বেগানা পুরুষলোক আমাদেরকে সালাম দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি তাদের সালামের উত্তর দিতে পারব? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।
বেগানা পুরুষ সালাম দিলে তাকে শুনিয়ে জবাব দেওয়া যাবে না। চাইলে মনে মনে উত্তর দিতে পারবেন। তবে সালামদাতা একেবারে বৃদ্ধ হলে তাকে উত্তর শুনিয়ে দেওয়া যাবে।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৩; আলইখতিয়ার ৪/১৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৮; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯
রহমত সাহেব এক স্ত্রী ও প্রাপ্তবয়স্ক তিন ছেলে রেখে মারা গেছেন। তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যে বাড়ি ও ফসলী জমির পাশাপাশি বাজারের একটি দোকান আছে। পিতার জীবদ্দশায় বড় ছেলে ঐ দোকান পরিচালনা করত। বাবার মৃত্যুর পর সে দাবি জানিয়েছে যে, বাজারের ঐ দোকান তাকে দিয়ে দিলে অন্য সব সম্পত্তি থেকে সে মীরাসের হক ছেড়ে দিবে। অন্য ওয়ারিশগণও এতে সম্মত হয়েছে।
জানার বিষয় হল, উপরোক্ত বিষয়টি কি শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে? এবং সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট সম্পত্তির বণ্টন পদ্ধতি কী হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সকল ওয়ারিশ যদি সতঃস্ফূর্তভাবে বড় ছেলেকে দোকানটি দিয়ে দিতে সম্মত হয় তাহলে তা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে সে কোনো অংশ পাবে না। সেগুলো অন্য ওয়ারিসদের মাঝে তাদের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টিত হবে।
শেয়ার লিংক-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/১৮০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/৪৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৫/৫০৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪২, ৫৪৪
জনৈক ব্যক্তির দুটি গাভী ছিল, যেগুলোর দুধ বিক্রি করে তার সংসার চলত। ঘটনাক্রমে একবার তার দুটো গাভীই রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। একসময় সে বলে, গাভীগুলো সুস্থ হলে সামনের কুরবানী ঈদে এই কালো গাভীটা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করব। পরবর্তীতে গাভীদুটো সুস্থ হয়। কিন্তু কোনো কারণে সে ঐ বছর কালো গাভীটি কুরবানী করেনি। এদিকে পরের বছর ঐ গাভীটি একটি বাচ্চা প্রসব করে এবং তা বড়ও হয়ে যায়।
এখন ঐ ব্যক্তি গাভীটি কুরবানী না করার কারণে অনুতপ্ত। সেইসাথে সে জানতে চাচ্ছে, এ অবস্থায় এখন তার করণীয় কী?
উল্লেখ্য, সে একজন খেটে খাওয়া গরীব মানুষ। তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এবং সাধারণত সে কুরবানী করে না।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে লোকটির জন্য গত কুরবানীর সময় কালো গাভীটি কুরবানী করা ওয়াজিব ছিল। যেহেতু সে গাভীটি ঐ বছর কুরবানী করেনি তাই এখন তাকে এ গাভীটি তার বাচ্চাসহ জীবিত সদকা করে দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২, ২০২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৪২; আলকেফায়া শরহুল হেদায়া ৮/৪৩২; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২২
আমাদের এলাকার এক ব্যক্তি সুদী ব্যাংকের এমডি। সে এলাকায় বেশ কিছু জমি কিনে রেখেছে। জমিগুলো সে তার চাকরির টাকা দ্বারাই কিনেছে। এছাড়া তার অন্য কোনো আয় নেই। এই জমিগুলো সে অর্ধার্ধি হারে ফসল বণ্টনের শর্তে বর্গা দিয়ে রেখেছে।
আমি জানতে চাচ্ছি, তার কাছ থেকে জমি বর্গা নেওয়া জায়েয হবে কি না? যদি জায়েয না হয় তাহলে যারা ইতিপূর্বে তার থেকে জমি বর্গা নিয়েছে তাদের কী করণীয়? দয়া করে জানাবেন।
যদি জমিগুলো হারাম উপার্জন দ্বারাই খরিদ করা হয়ে থাকে তবে জেনেশুনে কারো জন্য তা বর্গা নেওয়া জায়েয হবে না। আর তার কাছ থেকে কেউ এ ধরনের জমি বর্গা নিয়ে ফসল করে থাকলে তার করণীয় হল, অবিলম্বে বর্গাচুক্তি বাতিল করে ফেলা। আর এ জমি থেকে বর্গার মাধ্যমে যে ফসল সে পেয়েছে এর মধ্যে তার খরচ সমপরিমাণ রেখে অতিরিক্ত অংশ সদকা করে দেওয়া কিংবা এর মূল্য সদকা করা।
শেয়ার লিংক-আলবাহরুর রায়েক ৮/১১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ৩/১৪৪; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যা ২/১৭১
আমাদের এলাকার সিএনজি মালিকরা চালকদের সাথে এভাবে চুক্তি করে যে, গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন যা ইনকাম হবে তার চারভাগের একভাগ চালক নিয়ে যাবে। আর তিনভাগ মালিক পাবে। এটা আমাদের এলাকার বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সবাই এভাবেই চুক্তি করে। জানার বিষয় হল, এভাবে চুক্তি করা কি সহীহ?
না, এভাবে চুক্তি করা সহীহ নয়। কেননা আয় থেকে চালকের অংশ দেওয়ার চুক্তি শরীয়তসম্মত নয়। বরং তার পারিশ্রমিক নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক। উপরোক্ত চুক্তি এভাবে সংশোধন করা যেতে পারে যে, চালক মালিকের কাছ থেকে নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে গাড়িটি ভাড়া নিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মালিক উক্ত ভাড়া পাবে। আর গাড়ির সকল আয় চালকের হবে। এতে মালিকের কোনো অংশ থাকবে না। অথবা এভাবে চুক্তি হতে পারে যে, চালকের জন্য একটি বেতন ঠিক করা হবে। সে ঐ টাকা পেতে থাকবে। আর গাড়ির সকল আয় মালিক পাবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/১১৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/২১৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৯৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯৬; রদ্দুল মুহাতার ৪/৩২৫
সালাম ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নিবেদন এই যে, আমাদের এলাকায় ১৯৮৩ ঈ. সালে দুই দাগ জমি মসজিদ-মাদরাসার জন্য ওয়াক্ফ করা হয়। কিন্তু মসজিদ ও মাদরাসার জন্য পৃথকভাবে জমির দাগ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে সাথে সাথে ওয়াকফকারীগণ ও গ্রামবাসী সকলে মিলে এক দাগে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। সেখানে ১৯৯৪ ঈ. সন পর্যন্ত নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও জুমা হতে থাকাকালীন জায়গাটি যমুনা নদীতে ভেঙ্গে যায়। আনুমানিক ২০০১ বা ২০০২ ঈ. সনে জায়গাটি পুনরায় উঠে যায় এবং সেখানে কিছু বসতি স্থাপন হয়। তারা যেই দাগে পূর্বে মসজিদ ছিল তা নিচু থাকাতে অপর দাগে একটি টিনের ঘর উঠিয়ে নামায ও জুমা পড়তে থাকে এবং পূর্বের মসজিদের কিছু জায়গায় টয়লেট বানানো হয়। বর্তমানে এলাকাবাসী একটি পাকা মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
অতএব, জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় পাকা মসজিদ কোথায় নির্মাণ করবে, পূর্বের মসজিদের জায়গায়, না বর্তমান মসজিদের জায়গায় এবং টয়লেটগুলোর হুকুম কী হবে? শরীয়তের দৃষ্টিতে বিস্তারিত বিধান জানিয়ে আমাদেরকে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওয়াকফকারী মসজিদের জন্য পৃথকভাবে দাগ ও পরিমাণ নির্দিষ্ট করে না দিলেও পরবর্তীতে যেহেতু উক্ত দুই দাগের এক দাগে মসজিদ নির্মিত হয়েছে এবং এরপর তাতে নামায পড়া হয়েছে তাই এ জায়গাটিই মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। সুতরাং নদী থেকে জেগে ওঠার পরও সেটি মসজিদের জন্যই নির্ধারিত থাকবে। তা মসজিদ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
অতএব, এখন আপনাদের করণীয় হল, উক্ত জায়গায় নির্মিত টয়লেট ভেঙ্গে তাতে পুনরায় মসজিদ নির্মাণ করা। আর বর্তমানে যে জায়গায় ঘর বানিয়ে অস্থায়ীভাবে নামায পড়া হচ্ছে সেটি অস্থায়ী নামায ঘর হিসাবে ধর্তব্য হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৩৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৫১; আলইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ পৃ. ৭১-৭২
একদিন এক বন্ধুর সাথে রেগে গিয়ে একটি বিষয়ে ‘কাজটি করব না’ বলে কসম করি। পরের দিন সে আবার প্রসঙ্গটি উঠালে আমি গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আবারো কসম করে একই কথা বলি। এমনভাবে অন্য একজনের সাথে আলাপকালে ঐ বিষয়ে একই ধরনের কসম করি। কিন্তু পরে ঐ বন্ধুর চাপাচাপিতে বাধ্য হয়ে কাজটি করে ফেলি। জানার বিষয় হল, এখন আমাকে কি প্রতিটি কসমের জন্য আলাদা আলাদা কাফফারা দিতে হবে, না সবক’টির জন্য একটা কাফফারা দিতে হবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার কসম করার সময় যদি প্রথম কসমটিকেই ব্যক্ত করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে সবগুলো মিলে একটি কসমই গণ্য করা হবে এবং একটি কাফফারা দিতে হবে। কিন্তু যদি প্রথম কসমটিকেই বারবার বলা উদ্দেশ্য না হয় বরং প্রত্যেকবার পৃথক কসম করে থাকেন তাহলে প্রতিবারের উল্লেখিত বাক্য স্বতন্ত্র কসম ধরা হবে এবং প্রতিটি কসমের জন্য আলাদা আলাদা কাফফারা দিতে হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ২/২৯৭; আলমাবসূত, সারাখসী ৮/১৫৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/২৯; রদ্দুল মুহতার ৩/৭১৪
আমার ছেলেকে মাদরাসায় পড়াতে গিয়ে আমার জীবনে অনেক কষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন সময় সে মাদরাসা থেকে চলে আসত। এভাবে তার জীবনে অনেক সময়
নষ্ট হয়েছে। আমারও পূর্ণ সংকল্প ছিল যত কিছুই হোক আমি তাকে মাদরাসায় পড়াব। ফলে আমি কঠোর অবস্থানে যাই। একদিন আমি তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে বলেছি, কসম করে বললাম তোকে আর আমার ঘরে ঢুকতে দিব না। এরপর বিভিন্ন সময় সে আমার ঘরে আসতে চাইলেও আমি তাকে ঘরে ঢুকতে দিইনি। আল্লাহ্র রহমতে এখন সে মাদরাসায় পড়ে। হুযূরের কাছে জানতে চাই, এখন আমি তাকে আমার ঘরে আসতে দিতে পারব কি না? একজন আলেম বলেছেন, আমি যেহেতু আল্লাহ্র নামে কসম করি নাই তাই আমার কসমই হয়নি। সঠিক বিষয়টি হুযূরের কাছে জানতে চাই।
কসম শুদ্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহ্র নাম নেওয়া জরুরি নয়। শুধু কসম শব্দ দ্বারাও কসম হয়ে যায়। তবে এখন ছেলেকে ঘরে প্রবেশ করতে দিলে আপনার উক্ত কসম ভঙ্গ হবে না। কারণ আপনার উচ্চারিত বাক্যটি দ্বারা তৎক্ষণাৎ ঘরে প্রবেশে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যই বোঝা যায়, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বুঝা যায় না।
শেয়ার লিংক-ফাতহুল কাদীর ৪/৩৯৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/৩১৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৬১
এক মাস আগে আমার স্বামী আমাকে এক তালাকে রজঈ প্রদান করেন। আমার ইদ্দত চলা অবস্থায় তিন সপ্তাহের মাথায় স্বামী ইন্তেকাল করেন। এখন জানার বিষয় হল, মাসিক হিসেবে তালাকের যে ইদ্দত পালন করছিলাম সেই হিসাব পুরা করব, নাকি স্বামী-মৃত্যুর ইদ্দত- চার মাস দশ দিনের ইদ্দত পালন করব?
স্বামী ইন্তেকালের কারণে আপনার তালাকের ইদ্দত বাতিল হয়ে গেছে। এখন আপনাকে স্বামী মৃত্যুর ইদ্দতই পালন করতে হবে। অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে নতুন করে চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। তালাকের ইদ্দত এক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৪১২; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩৯; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১৭; মাজমাউল আনহুর /১৪৫; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৭
দু’মাস আগে বিজিবিতে চাকরিরত এক ছেলের সাথে আমার চাচাত বোনের বিয়ে হয়। চাকরির নিয়ম অনুযায়ী ঐ সময় তার বিবাহের অনুমতি না থাকায় তখন শুধু আকদ সম্পন্ন হয়। স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকা হয়নি। এর একমাস পর চাকরির প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঐ ছেলে মারা যায়।
এখন প্রশ্ন হল, এখন কি আমার বোনের কোনো ইদ্দত পালন করতে হবে, অথচ বিয়ের পর তাদের একসাথে থাকাই হয়নি? আর এ অবস্থায় সে কি কোনো মোহর পাবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিবাহের পর স্বামী স্ত্রীর একসাথে থাকা না হলেও আপনার বোনকে পূর্ণ চার মাস দশ দিন স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত পালন করতে হবে। এবং এক্ষেত্রে সে পূর্ণ মোহরেরও হকদার হবে। বৈবাহিক বন্ধন হলেই মৃত্যুকালীন ইদ্দত পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে অবস্থান হয়েছে কি না তা ধর্তব্য নয়।
উল্লেখ্য যে, আকদের পর স্বামী-স্ত্রী মিলনের পূর্বে তালাক হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হয় না।
শেয়ার লিংক-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪; আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১২১; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৫৮৮, ৩/৩০৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২২৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১০
দু’বছর আগে হোসেন মিয়ার সাথে আমার বিবাহ হয়। তখন এক লক্ষ টাকা মহর ধার্য হয়েছিল। তার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেছিলেন। অতপর বিশেষ কিছু কারণে বাধ্য হয়ে আমি স্বামীর কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ‘খোলা’র আবেদন করি। তিনিও ২০ হাজার টাকার বিনিময় খোলা করেন। তখন আমি তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি এবং অনাদায়ী ৫০ হাজার টাকার দাবিও ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মহর বাবদ প্রদত্ত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে ২০ হাজার টাকার বিনিময় খোলার কথা বলা হয়েছে কেবলমাত্র সেই ২০ হাজার টাকা আপনার স্বামীর প্রাপ্য। আর মহরের অনাদায়ী ৫০ হাজার টাকাও খোলার কারণে মাফ হয়ে যাবে। তাই এর দাবি ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়েছে। কিন্তু আপনার স্বামী মহর বাবদ যে পঞ্চাশ হাজার টাকা পূর্বেই পরিশোধ করে দিয়েছেন সেটার মালিক আপনি হয়ে গেছেন। খোলার কারণে এ টাকা ফেরত দেওয়া আপনার উপর জরুরি নয়। তাই আপনার স্বামীর জন্য এ টাকা ফেরত চাওয়া বৈধ নয়।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৫৬৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১০১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/২০৩
আমার প্রতিবেশী মুহাম্মাদ আলমগীর হোসেন। ছোট বেলায় ৮ মাস বয়সে তার মা হৃদরোগে মারা যান। এরপর তার দাদী তাকে দুধ পান করায় এবং তিনিই তাকে লালন পালন করেন। এমনকি ছোট বেলায় তার দাদীকেই সে মা ডাকত। পরে অবশ্য বড় হয়ে বুঝার পর আর ডাকেনি। কিছুদিন আগে তার এক চাচাতো বোনের সাথে তার বিবাহ ঠিক হয়। কিন্তু স্থানীয় এক আলেম এ ঘটনা জানার পর বললেন যে, সে যদি তার দাদীর দুধ পান করে থাকে তাহলে সে তার চাচাতো বোনকে বিবাহ করতে পারবে না।
এখন সেই আলেমের কথা শোনার পর তার পরিবার বলছে যে, চাচাতো বোনকে আবার বিবাহ করা যাবে না কেন? এদিকে তার চাচারাও একই কথা বলছে।
তাই হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক? সে কি তার চাচাতো বোনকে বিবাহ করতে পারবে না? দয়া করে দ্রুত জানালে ভালো হয়।
উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। ঐ ছেলের জন্য তার চাচাতো বোনকে বিবাহ করা জায়েয নয়। কারণ ছেলেটি দাদীর দুধ পান করার ফলে চাচা তার দুধ ভাই এবং চাচাতো বোনটি তার দুধ ভাতিজী হয়ে গেছে। আর বংশীয় ভাতিজীর মত দুধ ভাতিজীও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাই তাকে বিবাহ করা জায়েয নয়।
শেয়ার লিংক-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৪৭; আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৫/৭২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/৩৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১৭
তিন মাস পূর্বে আমার খালাত বোনের বিয়ে হয় এবং এর মাত্র আড়াই মাস পরই তার স্বামী দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেন। স্বামীর ইন্তেকালের ফলে আমার খালাত বোন একেবারে ভেঙে পড়ে এবং বিভিন্ন অনিয়মের ফলে তার গর্ভ নষ্ট হয়ে যায় এবং এক ক্লিনিকে তার গর্ভপাত
করানো হয়। গর্ভটি অল্পদিনের ছিল, কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি। ছোট একটি গোশতপি-ের মত হয়েছিল। এখন জানার বিষয় হল, গর্ভপাত করানোর দ্বারা তার ইদ্দত কি শেষ হয়ে গেছে? যদি না হয় তাহলে এখন তার করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি গর্ভটির কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ না হয়ে থাকে যেমন, হাত-পায়ের আঙ্গুল, নখ, চুল ইত্যাদি তাহলে গর্ভপাত করানোর দ্বারা তার ইদ্দত সম্পন্ন হয়নি। সেক্ষেত্রে তাকে স্বামীর ইন্তিকালের তারিখ থেকে পূর্ণ চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছল ৪/৪০০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২৯
কিছুদিন আগে আমার এক চাচাত ভাই শ্রমিক ভিসায় সৌদীআরব গিয়েছেন। কাজ কোথায় হবে তা আগে থেকে জানা ছিল না। জেদ্দায় পৌছার পর ভিসাদাতা কোম্পানি মক্কার একটি রডের দোকানে তাকে নিয়োগ দেয়। মক্কায় পৌঁছলে জানতে পারেন যে, ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করা অন্যায়। তাই তাকে জরিমানা স্বরূপ দম দিতে হবে।
তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষ, মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। তিনি এ ব্যাপারে ভীষণ অস্থিরতার মধ্যে আছেন।
জানার বিষয় হল, এ পরিস্থিতিতে তার এখন করণীয় কী? আশা করি দ্রুত জানাবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যেহেতু জেদ্দার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছে, তখন তার মক্কায় প্রবেশের ইচ্ছা ছিল না তাই সেক্ষেত্রে তার জন্য মীকাত অতিক্রম করার সময় ইহরাম করা জরুরি ছিল না। এবং পরবর্তীতে জেদ্দা থেকে মক্কায় ইহরাম ছাড়া প্রবেশ করাও অন্যায় হয়নি। সুতরাং উক্ত কারণে তাকে কোনো দম দিতে হবে না। এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।
উল্লেখ্য যে, যদি কখনো আপনার ভাই ওমরা করতে চায় তবে জেদ্দা বা হেরেমের বাইরে যে কোনো স্থান থেকে ইহরাম করে ওমরা আদায় করতে হবে।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭৬; আননাহুরুল ফায়েক ২/১৫২; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৭
ইদানিং হজে¦র মওসুমে হজ¦যাত্রীদের অনেকে হজ¦ এজেন্সী কর্তৃক বিড়ম্বনার শিকার হন। তাদের মধ্যে কারো কারো বেলায় এমনও ঘটে যে, ইহরাম বেঁধে ফ্লাইটের দোরগোড়ায় যাওয়ার পর ফেরত আসতে হয়। এখন জানার বিষয় হল, কেউ কিরান হজে¦র ইহরাম বাঁধার পর হজ্জে যেতে না পারলে তার করণীয় কী? সে ইহরাম থেকে হালাল হবে কীভাবে? এবং পরবর্তীতে উক্ত হজ¦ কাযা করার নিয়ম কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
কিরান হজে¦র ইহরাম করার পর কোনো ওযরের কারণে হজে¦ যেতে না পারলে তাকে উক্ত ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য কারো মাধ্যমে হেরেমের এলাকায় দুটি দম কুরবানী করতে হবে। দুটি দম কুরবানী করার পর সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। তবে ইহরাম পারিপন্থী কিছু করার আগে তার জন্য মাথা মু-ন করা বা চুল খাটো করে নেওয়া মুস্তাহাব। না করলেও সমস্যা নেই।
আর কেরানের ইহরাম করার পর যেহেতু হজ¦ করতে পারেনি তাই এক্ষেত্রে পরবর্তীতে তাকে একটি হজ¦ ও দুটি উমরা কাযা হিসেবে আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে হজ¦ ও দুই উমরা আলাদা আলাদাও করতে পারবে অথবা কিরান হজ¦ করে আলাদা একটি উমরাও করে নিতে পারে।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/৪৫৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯৫; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ৩১৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯
আমাদের গ্রামের একজন মহিলা তার অবিবাহিত তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে। তাদের থাকার মত একটি ভালো টিনশেড বাড়ী আছে। প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা সুদের উপর দিয়ে রেখেছে। আর তিন সন্তান কাঠমিস্ত্রী। মাস প্রতি তাদের সম্মিলিত আয় চল্লিশ হাজারের উপরে। পরিবারের কোনো ঋণ নেই। সন্তানরা টাকার বড় অংশই মায়ের হাতে দেয়। এই মহিলা সন্তানদের বাধা সত্ত্বেও যাকাত ও ফিতরা গ্রহণ করে এবং কেউ না দিলে মানুষের নিকট তার বদনাম ছড়ায়, যার কারণে মানুষও বাধ্য হয়ে তাকে দেয়।
আমার জানার বিষয় হল, তাকে কি যাকাত দেওয়া যাবে? যদি না দেয়া যায় তাহলে যারা জেনেও দেয় তাদের যাকাত ও ফিতরা কি আদায় হবে?
প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এই মহিলা যাকাত ফিতরার উপযুক্ত নয়। বরং দুই লক্ষ টাকার নগদ অর্থ থাকায় তার উপর যাকাত ফরয। অতএব তাকে যাকাত ও ফিতরা দেওয়া যাবে না এবং তার অবস্থা জানা সত্ত্বেও তাকে যাকাত ও ফিতরা প্রদান করলে তা আদায় হবে না। সে মানুষের নিকট দুর্নাম ছাড়াবে- এই অজুহাতেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। বরং লোকজনকে তার প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে দেওয়া দরকার। যেন মানুষ প্রতারিত না হয়।
শেয়ার লিংক-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩৯০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২
আমি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক। আমার অনেকগুলো গাড়ী আছে, যা ফ্যাক্টরির পণ্য ট্রান্সপোর্টের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রশ্ন হল, আমাকে ফ্যাক্টরির পণ্যের যাকাতের সাথে গাড়ীগুলোর যাকাত কি আদায় করতে হবে?
আপনাকে ঐ গাড়ীগুলোর যাকাত দিতে হবে না। কেননা নিজের ব্যবহারের জন্য বা ব্যবসার কাজের জন্য নির্ধারিত গাড়ী যাকাতযোগ্য সম্পদ নয়।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছার ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৩০৮; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক; বর্ণনা ৬৮২৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০
কানাডা প্রবাসী আমার বোনের একটি মেয়ে সন্তান আছে। যে এখনও নাবালেগ। কিন্তু জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত উপহারস্বরূপ প্রাপ্ত তার অনেক স্বর্নালংকার আছে। তাই জানার বিষয় হল, এসব স্বর্ণালংকারের কি যাকাত আদায় করতে হবে?
যাকাত ফরয হয় প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর। নাবালেগের উপর যাকাত ফরয নয়। তাই আপনার বোনের ঐ মেয়ে বালেগা হওয়া পর্যন্ত তার স্বর্ণালংকারের উপর যাকাত আসবে না।
শেয়ার লিংক-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ ১/৩০০; খিযানাতুল আকমাল ১/২৪৮; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০২
আমার চাচা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসার জন্য অন্যের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নেন এবং এর দ্বারা চিকিৎসা সম্পন্ন করেন। এখন তিনি সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু ঐ ঋণ এখনও পরিশোধ করতে পারেননি। এখন আমি কি তাঁকে আমার যাকাতের টাকা দিতে পারব?
আপনার চাচার নিকট যদি ঋণ পরিশোধ করার মত সম্পদ না থাকে তাহলে তিনি যাকাত গ্রহণ করতে পারবেন। তদ্রƒপ তার নিকট যদি এ পরিমাণ সম্পদ থাকে যে, ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ নেসাব পরিমাণ থাকবে না তাহলেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। আর যদি ঋণ আদায় করে দেওয়ার পরও তার কাছে নেসাব পরিমাণ প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদ থেকে যায় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১০; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৩
আমি গত বছর গরু মোটাতাজাকরণের একটি খামার বানিয়েছি। গত বছর অনেক ষাঁড় বাছুর ক্রয় করি এবং কুরবানীর ঈদের পূর্বে যেগুলোর বয়স দুই বছর পূর্ণ হয় সেগুলো বিক্রি করে দেই। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার গরু রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, খামারের গরুর মূল্যমানের উপর কি যাকাত আদায় করতে হবে?
আপনার উক্ত খামারের গরুগুলো যেহেতু বিক্রির উদ্দেশ্যে খরিদ করা হয়েছে তাই সেগুলো ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে গণ্য হবে। অতএব যাকাতবর্ষ শেষে গরুর বাজার মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।
শেয়ার লিংক-সুনানে আবুদাউদ, হাদীস ১৫৬২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭০, ১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৩; রদ্দুল মুহতার ২/২৭৩
আমার ব্যবসার মালামাল ও নগদ অর্থের যাকাতবর্ষ পূর্ণ হবে আগামি ৬ মাস পর। কিন্তু কারণবশত এ বছর অগ্রিম যাকাত আদায় করে দিয়েছি। সাথে দু’লাখ টাকা সম্ভাব্য লাভ হিসাব করে সেগুলোর যাকাতও আদায় করে দিয়েছি। কিন্তু যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর দেখলাম আমার সম্ভাব্য দু’লাখ টাকা লাভ হয়নি।
এখন মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই যে, আমি সম্ভাব্য লাভের যে যাকাত আদায় করেছি তা কী হিসাবে গণ্য হবে। জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
অগ্রিম যাকাত দেওয়া জায়েয। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সম্ভাব্য লাভ না হলেও আপনি যত টাকা অগ্রিম যাকাত হিসাবে দিয়েছেন পুরোটাই অন্য সম্পদের যাকাত হিসাবে গণ্য করতে পারবেন। এ বছরের সব যাকাত যদি দেওয়া হয়ে যায় তাহলে পরবর্তী বছরের অগ্রিম যাকাত হিসাবেও তা গণ্য করতে পারবেন।
শেয়ার লিংক-আলবাহরুর রায়েক ২/২২৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১৯৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩
জনৈক অসুস্থ মাযূর ব্যক্তি যিনি রোযা রাখতে পারেন না তিনি তার রোযার ফিদইয়া পুরা রমযানেরটা একসাথে রমযানের শুরুতেই আদায় করে দিতে পারবেন কি না?
হাঁ, রমযানের শুরুতেই পুরা রমযানের ফিদইয়া একত্রে আদায় করে দিতে পারবে।
শেয়ার লিংক-আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭
আমার ছোট ভাই ২৭ রমযানে মটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্টে মারাত্মকভাবে আহত হয়। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। আমরা মনে করেছি সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পূর্বেই সে মারা গেছে। তাই শেষের তিনটি রোযা রাখতে পারেনি এবং রোযা রাখার মত সামর্থ্য ফিরে আসার আগেই ইন্তেকাল করে। জানার বিষয় হল, অসুস্থাতার কারণে রমযানের শেষের যে তিন দিনের রোযা সে রাখতে পারেনি সেগুলোর ফিদইয়া আদায় করা কি তার উপর ওয়াজিব ছিল? ওয়াজিব হলে আমরা তার পক্ষ থেকে ফিদইয়া আদায় করলে কি তা আদায় হয়ে যাবে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যেহেতু ছুটে যাওয়া রোযাগুলো কাযা করার মত সময় পায়নি তাই তার পক্ষ থেকে কোনো ফিদইয়া বা কাফফরা আদায় করতে হবে না।
শেয়ার লিংক-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬০
গত রমজানে একদিন গোসল করার সময় আমার কানে পানি ঢুকে যায়। আমি কানে আরেকটু পানি দিয়ে তা বের করি। এক ভাই তা দেখে বললেন, ইচ্ছাকৃত এভাবে কানের ভেতর পানি দেওয়ার কারণে আপনার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, তার এ কথাটি কি ঠিক?
না, ওই ভাইয়ের কথাটি ঠিক নয়। রোযা অবস্থায় কানে পানি ঢুকলে রোযা ভাঙ্গে না। এমনকি ইচ্ছাকৃত পানি দিলেও রোযা নষ্ট হয় না। সুতরাং আপনার রোযা ভাঙ্গেনি। তা আদায় হয়ে গেছে।
শেয়ার লিংক-ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; যাবিতুল মুফাত্তিরাত পৃ. ৫৮
আমি একদিন মসজিদে এসে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায় পাই। কাতার পর্যন্ত পৌঁছার আগে ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে যাওয়ার আশংকা ছিল তাই রাকাতটি পাওয়ার জন্য কাতার থেকে দূরে থাকতেই ইমামের একতেদা করি। অতপর এক রোকন পরিমাণ থেমে থেমে দু-এক কদম করে কাতারে গিয়ে মিলিত হই। জানার বিষয় হল, নামাযের মধ্যে এভাবে হাঁটার দ্বারা কি নামায নষ্ট হয়ে গেছে?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু এক-দু কদম চলার পর এক রুকন পরিমাণ থেমে সামনে অগ্রসর হয়েছেন তাই আপনার নামায ভাঙ্গেনি। তা আদায় হয়ে গেছে। তবে দূর থেকে নামায শুরু হতে দেখলেও এমনটি করা ঠিক নয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, একেবারে কাতারের সাথে মিলে দাঁড়ানো। তাড়াহুড়া করে পিছনে দাঁড়িয়ে না যাওয়া। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِذَا أُقِيمَتِ الصّلاَةُ، فَلاَ تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ، وَأْتُوهَا تَمْشُونَ، عَلَيْكُمُ السّكِينَةُ، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمّوا.
জামাত শুরু হয়ে গেলে তোমরা তাড়াহুড়া করে এসো না। বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে আস, এবং শান্ত থাকো। অতপর যত রাকাত পাবে তা পড়ে নিবে। আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নিবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯০৮)
আরেক হাদীসে আছে, আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এমন সময় পৌঁছলেন যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম রুকুতে। তখন তিনি কাতারে পৌঁছার আগেই (তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে) রুকুতে চলে গেলেন। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ব্যক্ত করলে তিনি বললেন-
زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلاَ تَعُدْ.
আল্লাহ তাআলা তোমার আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দিন। তবে সামনে থেকে আর এমন করবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৮৩)
শেয়ার লিংক-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬২৭
আমি কখনো কখনো দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহার পূর্বে ভুলবশত তাশাহহুদ পড়ে ফেলি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহার পূর্বে ভুলবশত তাশাহহুদ পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।
উল্লেখ্য যে, নামাযে মনোযোগী হওয়া উচিত, যাতে এমন ভুল বারবার না হয়।
শেয়ার লিংক-হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১৩; ফাতহুল কাদীর ১/৫২১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৯৩
বিতির নামাযের পর নফল নামায পড়া যাবে কি না? অনেকে বলে, এশার নামাযের পর বিতির নামায পড়ে কোনো নফল পড়া যায় না। তা কি ঠিক? দলীলভিত্তিক জানালে ধন্য হব।
উত্তম হল রাতের নফলগুলো শেষ করে এরপর বিতির পড়া। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, বিতির পড়ে ফেললে এরপর কোনো নফল পড়া যাবে না। বরং বিতর নামাযের পরও নফল নামায পড়া জায়েয আছে।
আবু বকর রা., আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও আম্মার বিন ইয়াসীর রা. প্রমুখ সাহাবীদের আমল দ্বারা এমনটি প্রমাণিত আছে যে, তাঁরা ইশার পর বিতর পড়ে শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়েছেন। (আল আওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/১৯৮, মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, বর্ণনা ৪৬১৫-৪৬২১)
শেয়ার লিংক-জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৭১-এর অধীনে; ফাতহুল বারী ২/৫৫৪
জুতা পরিধান করে অথবা জুতার উপর দাঁড়িয়ে জানাযার নামায পড়ার বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
জুতায় নাপাকী না থাকলে জানাযার নামাযের সময় জুতা পায়ে রাখতে অথবা জুতার উপর দাঁড়াতে অসুবিধা নেই। তবে জুতা পরা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর স্থানও পবিত্র হওয়া জরুরি। আর জুতার নিচের অংশে নাপাকী থাকলে পা থেকে খুলে জুতার উপর দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে জুতা পরে জানাযার নামায পড়া যাবে না।
শেয়ার লিংক-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩১৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০২
আমার বাড়ি যশোর, বাড়িতে সাধারণত রাতেই রওয়ানা দিই। এশার নামায সাধারণত ফেরিতে পড়া হয়। তদানুযায়ী গাড়ি ফেরিতে আসলে আমি নামাযে দাঁড়াই। পরক্ষণেই মনে পড়ল যে, এশার নামায তো গাড়িতে উঠার আগেই পড়া হয়েছে। তখন সাথে সাথে আমি নামায ছেড়ে দেই। জানার বিষয় হল, যে নামায ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা কি আমাকে কাযা করতে হবে? কারণ, আমার জানামতে হানাফী মাযহাবে নামায শুরু করার পর ভেঙ্গে ফেললে তা কাযা করতে হয়।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু এশার ফরয মনে করে নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন নফলের নিয়তে দাঁড়াননি তাই তা ভেঙ্গে ফেলার কারণে এর কোনো কাযা ওয়াজিব হয়নি। তবে এক্ষেত্রে আপনি নামায শেষ করে সালাম ফিরাতে পারতেন। এতে তা নফল হয়ে যেত।
আর নামায শুরু করে ভেঙ্গে ফেললে তার কাযা করার বিধানটি শুধু নফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৪৩; মাজমাউল আনহুর ১/১৯৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩০
আমরা দু’জন সর্দি-জ¦রে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মসজিদের নিচতলায় এসির ঠা-ায় খুব সমস্যা হচ্ছিল। তাই নিচে ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও দোতলায় গিয়ে জামাতে শরীক হই।
এখন প্রশ্ন হল, এতে আমাদের নামায মাকরূহ হবে কি না?
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওজরের কারণে আপনাদের জন্য দোতলায় দাঁড়ানো মাকরূহ হয়নি। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় মুসল্লীদের কর্তব্য হল, নিচতলা পূর্ণ করার পরই উপর তলায় দাঁড়ানো। নিচতলায় ফাঁকা রেখে উপরতলায় দাঁড়ানোর হুকুম প্রায় সামনের কাতার পূর্ণ না করে পেছনের কাতারে দাঁড়ানোর মতই। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَتِمّوا الصَفّ الْمُقَدّمَ، ثُمّ الّذِي يَلِيهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِي الصّفّ الْمُؤَخّرِ.
তোমরা সামনের কাতার পূর্ণ কর। এরপর তার পরবর্তী কাতার। অপূর্ণ থাকলে তা যেন পিছনের কাতারে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৭১)
শেয়ার লিংক-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/৫৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭০