ইবনে আলী - লাকসাম, কুমিল্লা

৪৪৫৭. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় প্রায় সকল মসজিদে তারাবির নামাযে চার রাকাত অন্তর  অন্তর একটি দুআ-

سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ...

ও তারপর মোনাজাতের রীতি রয়েছে। গত বছর হাফেজ সাহেব এভাবে মোনাজাত করাকে অনুত্তম বলেন এবং তা না করার কথা বলেন। এতে মুসল্লিরা দুই পক্ষ হয়ে যায়। ফিতনার আশংকায় কেউ কেউ মোনাজাত করার পরামর্শ দেন এবং তিনি তাই করেন। এ প্রেক্ষিতে একজন মুসল্লি বললেন, অনেকে এ মোনাজাতকে মুস্তাহাব পর্যায়ের বলে থাকে। অথচ তারাবির এ মোনাজাত সাহাবায়ে কেরাম, তাবিয়ীন ও তাবে-তাবেয়ীন কেউ করেননি; তাহলে মুস্তাহাব সাব্যস্ত হয় কীভাবে?

২য় বিষয় : মোনাজাতের পূর্বে

سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ ...

দুআর ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?

উপরোক্ত বিষয়সমূহের দালীলিক সমাধান দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

উত্তর

(১, ২) তারাবীর নামাযের চার রাকাত পর পর এবং বিশ রাকাত শেষে বিতিরের পূর্বে কিছু সময় বিরতি দেওয়া মুস্তাহাব। এই বিরতীর সময় কী করতে হবে শরীয়ত তা নির্ধারণ করে দেয়নি। তাই ফকীহগণ বলেছেন, এসময় মুসল্লীরা যেমন তাসবীহ, তাহলীল দুআ-দুরূদ  বা যে কোনো যিকিরে কাটাতে পারে তেমনি কেউ চাইলে নিরবও বসে থাকতে পারে। আর আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকায় পঠিত-

سُبْحَانَ ذِي الْمُلْكِ....

তাসবীহটির পূর্ণ পাঠ সহীহ হাদীসে পাওয়া যায় না। আর তারাবীর তারবীহার সময় পড়ার বিষয়টি একেবারেই নবআবিষ্কৃত। সাহাবায়ে কেরামের কেউ এসময় এ ধরনের কোনো  তাসবীহ পড়েছেন- এমন প্রমাণও পাওয়া যায় না। তাই এই তাসবীহকে মুস্তাহাব বা সুন্নত মনে করার সুযোগ নেই এবং এটিকে এক্ষেত্রে পড়ার মত নির্দিষ্ট তাসবীহও মনে করা যাবে না। বিশেষ করে কোনো কোনো এলাকায় যৌথভাবে উচ্চস্বরে যেভাবে তাসবীহটি পড়া হয় তা পরিহারযোগ্য। তবে তাসবীহের এ দুআটি হাদীসে বর্ণিত না হলেও তার অর্থ ঠিক আছে। তাই কেউ এটিকে সুন্নত মনে না করে ব্যক্তিগতভাবে অনুচ্চস্বরে এটি পড়লে তাকে নিষেধ করারও প্রয়োজন নেই।

আর কোনো কোনো এলাকায় চার রাকাত পর পর মুনাজাতের যে প্রচলন আছে- এ আমলেরও কোনো দলীল নেই এবং সালাফে সালেহীন থেকে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

তাই নিয়ম করে এমনটি না করাই উচিত। কেননা এতে কেউ আমলটাকে শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত বা আবশ্যকীয় মনে করতে পারে, যা বিদআতের রাস্তা খুলে দেয়। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা আবশ্যক।

উল্লেখ্য যে, এ আমলটি কোনো কোনো এলাকায় যেহেতু বহুদিন থেকে প্রচলিত আছে তাই মানুষকে বুঝিয়ে ধীরে ধীরে সংস্কার করতে হবে। কোনোক্রমেই ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া যাবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪৮; মা সাবাতা বিস-সুন্নাহ পৃ. ২১২; ইমদাদুল আহকাম ১/৬৫৬

শেয়ার লিংক

আবুল খায়ের - বগুড়া

৪৪৫৮. প্রশ্ন

আমি এক মসজিদের ইমাম। সাধারণত ফজর ও আসর নামাযের পর মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসি। কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে প্রশ্ন জাগে- আসলে বিষয়টি কতটুকু শরীয়তসম্মত। প্রশ্ন জাগার কারণ হল, মুসল্লীরা কিবলামুখী হয়ে দুআ করছে আর আমি কিবলার দিকে পিঠ করে। আর যদি বিষয়টি শরীয়তসম্মত হয় তাহলে জানার বিষয় হল, পুরোপুরি মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসতে হবে, নাকি ডান বা বাম দিকে ফিরে বসলেও চলবে?

উত্তর

নামায শেষে মুসল্লীর দিকে ইমামের ফিরে বসা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত সামুরাহ বিন জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-

كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا صَلّى صَلاَةً أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো নামায আদায় করতেন নামায শেষে আমাদের দিকে ফিরতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৪৫)

তবে হাদীসে উদ্দেশ্য সম্ভবত এমন হবে, যা ফকীহগণ বলেছেন- ইমামের বরাবর সামনে কোনো মাসবুক থাকলে তিনি ডান বা বাঁ দিকে ফিরে বসবেন। অন্যাথা পুরোপুরি মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসবেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৩; শরহুল মুনয়া পৃ. ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩৩

শেয়ার লিংক

হাবীবুর রহমান - ডেমরা, ঢাকা

৪৪৫৯. প্রশ্ন

নামাযে ভুলের কারণে ইমাম সাহু সিজদা দিলে মাসবুক ব্যক্তি কি ঐ  সিজাদায় ও সালামে শরীক হবে, নাকি হবে না? এ সম্পর্কে সঠিক পদ্ধতিটি জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

মাসবুক ব্যক্তি- যে ইমামের সাথে পুরো নামায পায়নি বরং কিছু রাকাত ছুটে গেছে সে ইমামের সাথে সাহু সিজদার সালাম ফিরাবে না। বরং শুধু সাহু সিজদায় শরীক হবে। অবশ্য কখনো ভুলে ইমামের সাথে সাহু সিজদার সালাম ফিরিয়ে ফেললে নামায ফাসেদ হবে না এবং নিজ নামায শেষে সাহু সিজদাও করতে হবে না। তবে মাসবুক ইচ্ছাকৃত এ সালাম ফিরালে তার নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২২; আলবাহরুর রায়েক ২/১০০; রদ্দুল মুহতার ২/৮২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৫২

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - নোয়াখালী

৪৪৬০. প্রশ্ন

আমাদের মহল্লার মসজিদে নামায পড়তে গেলে প্রায়শই একটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কখনো তাশাহ্হুদ শেষ করার আগেই ইমাম সাহেব তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যান। আবার কখনো আখেরী বৈঠকে দরূদ ও দুআ পড়ার আগে সালাম ফিরিয়ে ফেলেন। উল্লেখিত দুুটি ক্ষেত্রে আমার করণীয় কী হবে, জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

তাশাহ্হুদ পড়া যেহেতু মুক্তাদীর জন্য ওয়াজিব তাই মুক্তাদীর তাশাহ্হুদ শেষ হওয়ার পূর্বে ইমাম দাঁড়িয়ে গেলে সে তাশাহ্হুদ শেষ করেই দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে মুক্তাদী তাশাহ্হুদ পূর্ণ না করে দাঁড়িয়ে গেলে মাকরূহে তাহরীমী হবে।

আর দরূদ-দুআ পড়া যেহেতু সুন্নত তাই শেষ বৈঠকে মুক্তাদী দরূদ-দুআ শেষ করার আগে ইমাম সালাম ফিরিয়ে দিলে মুক্তাদী দরূদ-দুআ পূর্ণ করবে না। বরং ইমামের অনুসরণের জন্য তার সাথে সালাম ফিরিয়ে দিবে।

উল্লেখ্য, ইমাম সাহেবদের উচিত এমন গতিতে তাশাহ্হুদ ও দরূদ-দুআ পড়া যেন মুসল্লীগণও ভালোভাবে তা শেষ করতে পারে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৯৬; রদ্দুল মুহতার ১/৪৭০; মারাকিল ফালাহ পৃ. ১৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ - বংশাল, ঢাকা

৪৪৬১. প্রশ্ন

কেউ ফজরের সুন্নত ঘরে পড়ে যদি মসজিদে যায় এবং সময় থাকে তাহলে ঐ সময় তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়তে পারবে কি? না পারলে কেন? এবং ঐ সময় কী আমল করলে  তাহিয়্যাতুল মসজিদের সওয়াব পাওয়া যাবে? দলীলসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

ফজরের সময় হয়ে যাওয়ার পর তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া যায় না। কেননা হাদীস শরীফে ফজরের সময় শুরু হওয়ার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের সুন্নাত ব্যতীত অন্য কোনো নফল নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

উম্মুল মুমিনীন হাফসা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ، لَا يُصَلِّي إِلّا رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর উদিত হলে সংক্ষিপ্তভাবে দুই রাকাত (সুন্নত) নামায ব্যতীত আর কোনো (নফল) নামায পড়তেন না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৩)

অন্য বর্ণনায়  আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لَا صَلَاةَ بَعْدَ الفَجْرِ إِلّا سَجْدَتَيْنِ.

ফজরের সময় শুরু হওয়ার পর সুন্নত ছাড়া  অন্য কোনো নফল নামায নেই। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৪১৯)

-কিতাবুল আছল ১/১৩২; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৫০; হালবাতুল মুজাল্লী ২৮৫৫৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬

শেয়ার লিংক

হাসান - ফেনী

৪৪৬২. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি চার রাকাত নফল নামায আদায় করেছে। কিন্তু তৃতীয় রাকাতে সে শুধু তাশাহ্হুদ পড়েছে; কোনো কেরাত পড়েনি। এমনকি সূরা ফাতেহাও না। এখন জানার বিষয় হল, তার এ নামাযের হুকুম কী?

উত্তর

নফল-সুন্নত নামাযের সকল রাকাতে কেরাত পড়া ফরয। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি যেহেতু তৃতীয় রাকাতে কেরাত পড়েনি তাই লোকটির শেষ দুই রাকাত নামায ফাসেদ হয়ে গেছে। অতএব সে ঐ দুই রাকাত নামায পুনরায় আদায় করে নিবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২২৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/২০; আলবাহরুর রায়েক ২/১০৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩২

শেয়ার লিংক

মাসউদ আবদুল্লাহ - দাশেরহাট, কুড়িগ্রাম

৪৪৬৩. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব যোহরে এবং এশার সময় কোনো এক রাকাতে তিন সিজদা দেন। পরে সাহু সিজদা দেন। মুসল্লীরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তর দেন যে, কেউ যদি দুই সিজদা অতিক্রম করে অতিরিক্ত আরো এক সিজদা দেয়, অর্থাৎ তিন সিজদাহ দেয়, তারপর সাহু সিজদা দেয় তবে নামায হয়ে যাবে। উক্ত কথাটি কতটুকু সঠিক। উত্তর দিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

জী হাঁ, ঐ ইমাম সাহেব ঠিকই বলেছেন। নামাযে ভুলবশত অতিরিক্ত সিজদা করলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়। আর ইমাম সাহেব যেহেতু সিজদায়ে সাহু করেছেন তাই ঐ নামায সহীহভাবেই আদায় হয়েছে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৩৫; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৯

শেয়ার লিংক

মাহমুদুর রহমান - উত্তরখান, ঢাকা

৪৪৬৪. প্রশ্ন

মসজিদে নামায পড়তে গেলে কখনো কখনো এমন হয় যে, আমার সামনের মুসল্লীর পিঠে কোনো মানুষ বা প্রাণীর ছবি থাকে। এক আলেমের কাছে শুনেছি যে, নামায পড়ার সময় সামনে, ডানে বা বামে ছবি থাকলে নামায মাকরূহ হয়। আমার জানার বিষয় হল উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক?

এমন পরিস্থিতিতে তার পেছনে নামায পড়ার কারণে কী আমার নামাযও মাকরূহ হবে?

উত্তর

নামাযী ব্যক্তির সামনে ডানে বা বামে যদি কোনো প্রাণীর ছবি এভাবে থাকে যে, নামাযী ব্যক্তি তা দেখতে পায় তাহলে নামায মাকরূহ হবে। তাই ইচ্ছাকৃত এমন জায়গায় দাঁড়াবে না যেখানে কোনো প্রাণীর ছবি দৃশ্যমান রয়েছে। কিন্তু যদি প্রাণীর ছবিযুক্ত পোষাক নিয়ে কোনো ব্যক্তি নামাযীর সামনে বা পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে এর জন্য নামাযী ব্যক্তি দায়ী হবে না এবং তার নামায মাকরূহ হবে না। এক্ষেত্রে যে ঐ পোষাক পরেছে তার গুনাহ হবে।

উল্লেখ্য যে, স্বাভাবিক অবস্থাতেই প্রাণীর দৃশ্যমান ছবি সম্বলিত পোষাক পরা মাকরূহে তাহরীমী। আর এ ধরনের পোষাক পরে নামায পড়া এবং মসজিদে আসা ও অন্যের নামাযের ক্ষতি করা তো আরো গুনাহের কাজ। তাই এধরনের পোষাক পরিধান করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৪৭

শেয়ার লিংক

আবদুল হাসীব - বি. বাড়িয়া

৪৪৬৫. প্রশ্ন

বসে নামায পড়া অবস্থায় কেরাত পড়ার সময় হাত বাঁধতে হবে কি? আমি একটি ইসলামী বইতে পড়েছি, নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় হাত বাঁধা সুন্নত। এখন জানার বিষয় হল, হাত বাঁধা কি দাঁড়ানো অবস্থার বিশেষ সুন্নত, নাকি বসে নামায আদায় করলেও তা সুন্নত হিসেবে বিবেচ্য হবে? বিষয়টির শরঈ সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, বসে কেরাত পড়া অবস্থায়ও হাত বাঁধতে হবে। কেননা বসে নামাযের ক্ষেত্রে কেরাত পড়া অবস্থার হুকুম দাঁড়ানোর মতই। তাই এক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে নামায পড়ার সব নিয়মগুলোই প্রযোজ্য হবে। যেমন, ছানা ও কেরাত পড়া, হাত বাঁধা ইত্যাদি।

-হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ১৪০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৭

শেয়ার লিংক

রাকিবুদ্দীন - কুমিল্লা

৪৪৬৬. প্রশ্ন

আমরা দু’জন সর্দি-জ¦রে আক্রান্ত হওয়ার কারণে মসজিদের নিচতলায় এসির ঠা-ায় খুব সমস্যা হচ্ছিল। তাই নিচে ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও দোতলায় গিয়ে জামাতে শরীক হই।

এখন প্রশ্ন হল, এতে আমাদের নামায মাকরূহ হবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওজরের কারণে আপনাদের জন্য দোতলায় দাঁড়ানো মাকরূহ হয়নি। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় মুসল্লীদের কর্তব্য হল, নিচতলা পূর্ণ করার পরই উপর তলায় দাঁড়ানো। নিচতলায় ফাঁকা রেখে উপরতলায় দাঁড়ানোর হুকুম প্রায় সামনের কাতার পূর্ণ না করে পেছনের কাতারে দাঁড়ানোর মতই। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

أَتِمّوا الصَفّ الْمُقَدّمَ، ثُمّ الّذِي يَلِيهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِي الصّفّ الْمُؤَخّرِ.

তোমরা সামনের কাতার পূর্ণ কর। এরপর তার পরবর্তী কাতার। অপূর্ণ থাকলে তা যেন পিছনের কাতারে থাকে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৭১)

-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/৫৭; রদ্দুল মুহতার ১/৫৭০

শেয়ার লিংক

মাহফুজুর রহমান - লালমোহন, নবীনগর

৪৪৬৭. প্রশ্ন

আমার বাড়ি যশোর, বাড়িতে সাধারণত রাতেই রওয়ানা দিই। এশার নামায সাধারণত ফেরিতে পড়া হয়। তদানুযায়ী গাড়ি ফেরিতে আসলে আমি নামাযে দাঁড়াই। পরক্ষণেই মনে পড়ল যে, এশার নামায তো গাড়িতে উঠার আগেই পড়া হয়েছে। তখন সাথে সাথে আমি নামায ছেড়ে দেই। জানার বিষয় হল, যে নামায ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তা কি আমাকে কাযা করতে হবে? কারণ, আমার জানামতে হানাফী মাযহাবে নামায শুরু করার পর ভেঙ্গে ফেললে তা কাযা করতে হয়।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু এশার ফরয মনে করে নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন নফলের নিয়তে দাঁড়াননি তাই তা ভেঙ্গে ফেলার কারণে এর কোনো কাযা ওয়াজিব হয়নি। তবে এক্ষেত্রে আপনি নামায শেষ করে সালাম ফিরাতে পারতেন। এতে তা নফল হয়ে যেত।

আর নামায শুরু করে ভেঙ্গে ফেললে তার কাযা করার বিধানটি শুধু নফলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/২৮৮; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৩৪৩; মাজমাউল আনহুর ১/১৯৮; রদ্দুল মুহতার ২/৩০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সুলায়মান - খাগড়াছড়ি

৪৪৬৮. প্রশ্ন

জুতা পরিধান করে অথবা জুতার উপর দাঁড়িয়ে জানাযার নামায পড়ার বিধান কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

জুতায় নাপাকী না থাকলে জানাযার নামাযের সময় জুতা পায়ে রাখতে অথবা জুতার উপর দাঁড়াতে অসুবিধা নেই। তবে জুতা পরা অবস্থায় থাকলে দাঁড়ানোর স্থানও পবিত্র হওয়া জরুরি। আর জুতার নিচের অংশে নাপাকী থাকলে পা থেকে খুলে জুতার উপর দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে  জুতা পরে জানাযার নামায পড়া যাবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩১৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০২

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

৪৪৬৯. প্রশ্ন

বিতির নামাযের পর নফল নামায পড়া  যাবে কি না? অনেকে বলে, এশার নামাযের পর বিতির নামায পড়ে কোনো নফল পড়া যায় না। তা কি ঠিক? দলীলভিত্তিক জানালে ধন্য হব।

উত্তর

উত্তম হল রাতের নফলগুলো শেষ করে এরপর বিতির পড়া। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, বিতির পড়ে ফেললে এরপর কোনো নফল পড়া যাবে না। বরং বিতর নামাযের পরও নফল নামায পড়া জায়েয আছে।

আবু বকর রা., আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও আম্মার বিন ইয়াসীর রা. প্রমুখ সাহাবীদের আমল দ্বারা এমনটি প্রমাণিত আছে যে, তাঁরা ইশার পর বিতর পড়ে শেষরাতে তাহাজ্জুদ পড়েছেন। (আল আওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/১৯৮, মুসান্নাফে আবদুর রযযাক, বর্ণনা ৪৬১৫-৪৬২১)

-জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৭১-এর অধীনে; ফাতহুল বারী ২/৫৫৪

শেয়ার লিংক

ইউসুফ হাসান - কুমিল্লা

৪৪৭০. প্রশ্ন

আমি কখনো কখনো দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহার পূর্বে ভুলবশত তাশাহহুদ পড়ে ফেলি। এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহার পূর্বে ভুলবশত তাশাহহুদ পড়ে ফেললে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে।

উল্লেখ্য যে, নামাযে মনোযোগী হওয়া উচিত, যাতে এমন ভুল বারবার না হয়।

-হালবাতুল মুজাল্লী ২/৪৪৫; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১৩; ফাতহুল কাদীর ১/৫২১; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৯৩

শেয়ার লিংক

রহমাতুল্লাহ - চাঁদপুর

৪৪৭১. প্রশ্ন

আমি একদিন মসজিদে এসে ইমাম সাহেবকে রুকু অবস্থায়  পাই। কাতার পর্যন্ত পৌঁছার আগে ইমাম সাহেব রুকু থেকে উঠে যাওয়ার আশংকা ছিল তাই রাকাতটি পাওয়ার জন্য কাতার থেকে দূরে থাকতেই ইমামের একতেদা করি। অতপর এক রোকন পরিমাণ থেমে থেমে দু-এক কদম করে কাতারে গিয়ে মিলিত হই। জানার বিষয় হল, নামাযের মধ্যে এভাবে হাঁটার দ্বারা কি নামায নষ্ট হয়ে গেছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু এক-দু কদম চলার পর এক রুকন পরিমাণ থেমে সামনে অগ্রসর হয়েছেন তাই আপনার নামায ভাঙ্গেনি। তা আদায় হয়ে গেছে। তবে দূর থেকে নামায শুরু হতে দেখলেও এমনটি করা ঠিক নয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, একেবারে কাতারের সাথে মিলে দাঁড়ানো। তাড়াহুড়া করে পিছনে দাঁড়িয়ে না যাওয়া। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إِذَا أُقِيمَتِ الصّلاَةُ، فَلاَ تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ، وَأْتُوهَا تَمْشُونَ، عَلَيْكُمُ السّكِينَةُ، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلّوا، وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمّوا.

জামাত শুরু হয়ে গেলে তোমরা তাড়াহুড়া করে এসো না। বরং স্বাভাবিকভাবে হেঁটে আস, এবং শান্ত থাকো। অতপর যত রাকাত পাবে তা পড়ে নিবে। আর যা ছুটে যাবে তা পূর্ণ করে নিবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৯০৮)

আরেক হাদীসে আছে, আবু বাকরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এমন সময় পৌঁছলেন যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি

ওয়াসাল্লাম রুকুতে। তখন তিনি কাতারে পৌঁছার আগেই (তাকবীরে তাহরীমা বেঁধে) রুকুতে চলে গেলেন। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ব্যক্ত করলে তিনি বললেন-

زَادَكَ اللهُ حِرْصًا وَلاَ تَعُدْ.

আল্লাহ তাআলা তোমার আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দিন। তবে সামনে থেকে আর এমন করবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৮৩)

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৩১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫১২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; শরহুল মুনয়া পৃ. ৪৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬২৭

শেয়ার লিংক

রফিক বিন মাহমুদ - কানাইঘাট, সিলেট

৪৪৭২. প্রশ্ন

গত রমজানে একদিন গোসল করার সময় আমার কানে পানি ঢুকে যায়। আমি কানে আরেকটু পানি দিয়ে তা বের করি। এক ভাই তা দেখে বললেন, ইচ্ছাকৃত এভাবে কানের ভেতর পানি দেওয়ার কারণে আপনার রোযা নষ্ট হয়ে গেছে। জানার বিষয় হল, তার এ কথাটি কি ঠিক?

উত্তর

না, ওই ভাইয়ের কথাটি ঠিক নয়। রোযা অবস্থায় কানে পানি ঢুকলে রোযা ভাঙ্গে না। এমনকি ইচ্ছাকৃত পানি দিলেও রোযা নষ্ট হয় না। সুতরাং আপনার রোযা ভাঙ্গেনি। তা আদায় হয়ে গেছে।

-ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; যাবিতুল মুফাত্তিরাত পৃ. ৫৮

শেয়ার লিংক

আতীকুল্লাহ - আলীনগর, ভোলা

৪৪৭৩. প্রশ্ন

আমার ছোট ভাই ২৭ রমযানে মটরসাইকেল অ্যাক্সিডেন্টে মারাত্মকভাবে আহত হয়। প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। আমরা মনে করেছি সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পূর্বেই সে মারা গেছে। তাই শেষের তিনটি রোযা রাখতে পারেনি এবং রোযা রাখার মত সামর্থ্য ফিরে আসার আগেই ইন্তেকাল করে। জানার বিষয় হল, অসুস্থাতার কারণে রমযানের শেষের যে তিন দিনের রোযা সে রাখতে পারেনি সেগুলোর ফিদইয়া আদায় করা কি তার উপর ওয়াজিব ছিল? ওয়াজিব হলে আমরা তার পক্ষ থেকে ফিদইয়া আদায় করলে কি তা আদায় হয়ে যাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যেহেতু ছুটে যাওয়া রোযাগুলো কাযা করার মত সময় পায়নি তাই তার পক্ষ থেকে কোনো ফিদইয়া বা কাফফরা আদায় করতে হবে না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৮৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬০

শেয়ার লিংক

আবুল বাশার - ভালুকা, ময়মনসিংহ

৪৪৭৪. প্রশ্ন

জনৈক অসুস্থ মাযূর ব্যক্তি যিনি রোযা রাখতে পারেন না তিনি তার রোযার ফিদইয়া পুরা রমযানেরটা একসাথে রমযানের শুরুতেই আদায় করে দিতে পারবেন কি না?

উত্তর

হাঁ, রমযানের শুরুতেই পুরা রমযানের ফিদইয়া একত্রে আদায় করে দিতে পারবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলম - টেকনাফ, কক্সবাজার

৪৪৭৫. প্রশ্ন

আমার ব্যবসার মালামাল ও নগদ অর্থের যাকাতবর্ষ পূর্ণ হবে আগামি ৬ মাস পর। কিন্তু কারণবশত এ বছর অগ্রিম যাকাত আদায় করে দিয়েছি। সাথে দু’লাখ টাকা সম্ভাব্য লাভ হিসাব করে সেগুলোর যাকাতও আদায় করে দিয়েছি। কিন্তু যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পর দেখলাম আমার সম্ভাব্য দু’লাখ টাকা লাভ হয়নি।

এখন মাননীয় মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই যে, আমি সম্ভাব্য লাভের যে যাকাত আদায় করেছি তা কী হিসাবে গণ্য হবে। জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

 

উত্তর

অগ্রিম যাকাত দেওয়া জায়েয। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সম্ভাব্য লাভ না হলেও আপনি যত টাকা অগ্রিম যাকাত হিসাবে দিয়েছেন পুরোটাই অন্য সম্পদের যাকাত হিসাবে গণ্য করতে পারবেন। এ বছরের সব যাকাত যদি দেওয়া হয়ে যায় তাহলে পরবর্তী বছরের অগ্রিম যাকাত হিসাবেও তা গণ্য করতে পারবেন।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২২৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/১৯৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৯৩

শেয়ার লিংক

তাকী আশরাফ - আকুয়া, ময়মনসিংহ

৪৪৭৬. প্রশ্ন

আমি গত বছর গরু মোটাতাজাকরণের একটি খামার বানিয়েছি। গত বছর অনেক ষাঁড় বাছুর ক্রয় করি এবং কুরবানীর  ঈদের পূর্বে যেগুলোর বয়স দুই বছর পূর্ণ হয় সেগুলো বিক্রি করে দেই। বর্তমানে আমার খামারে প্রায় ৫ লক্ষ টাকার গরু রয়েছে। আমার প্রশ্ন হল, খামারের গরুর মূল্যমানের উপর কি যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

আপনার উক্ত খামারের গরুগুলো যেহেতু বিক্রির উদ্দেশ্যে খরিদ করা হয়েছে তাই সেগুলো ব্যবসায়িক পণ্য হিসাবে গণ্য হবে। অতএব যাকাতবর্ষ শেষে গরুর বাজার মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।

-সুনানে আবুদাউদ, হাদীস ১৫৬২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৭০, ১৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৩; রদ্দুল মুহতার ২/২৭৩

শেয়ার লিংক

মুঈনুল ইসলাম - সিলেট

৪৪৭৭. প্রশ্ন

আমার চাচা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং চিকিৎসার জন্য অন্যের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা ঋণ নেন এবং এর দ্বারা চিকিৎসা সম্পন্ন করেন। এখন তিনি সুস্থ হয়েছেন। কিন্তু ঐ ঋণ এখনও পরিশোধ করতে পারেননি। এখন আমি কি তাঁকে আমার যাকাতের টাকা দিতে পারব?

উত্তর

আপনার চাচার নিকট যদি ঋণ পরিশোধ করার মত সম্পদ না থাকে তাহলে তিনি যাকাত গ্রহণ করতে পারবেন। তদ্রƒপ তার নিকট যদি এ পরিমাণ সম্পদ থাকে যে, ঋণ পরিশোধ করার পর তার কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ নেসাব পরিমাণ থাকবে না তাহলেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে। আর যদি ঋণ আদায় করে দেওয়ার পরও তার কাছে নেসাব পরিমাণ প্রয়োজন-অতিরিক্ত সম্পদ থেকে যায় তাহলে তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১০; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৩

শেয়ার লিংক

হাবীবুল হক্ব - সিলেট

৪৪৭৮. প্রশ্ন

কানাডা প্রবাসী আমার বোনের একটি মেয়ে সন্তান আছে। যে এখনও নাবালেগ। কিন্তু জন্মের পর থেকে এখন পর্যন্ত উপহারস্বরূপ প্রাপ্ত তার অনেক স্বর্নালংকার আছে। তাই জানার বিষয় হল, এসব স্বর্ণালংকারের কি যাকাত আদায় করতে হবে?

 

উত্তর

যাকাত ফরয হয় প্রাপ্ত বয়স্কদের উপর। নাবালেগের উপর যাকাত ফরয নয়। তাই আপনার বোনের ঐ মেয়ে বালেগা হওয়া পর্যন্ত তার স্বর্ণালংকারের উপর যাকাত আসবে না।

-কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ ১/৩০০; খিযানাতুল আকমাল ১/২৪৮; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; আলবাহরুর রায়েক ২/২০২

শেয়ার লিংক

মাহমুদুল হাসান - রামপুরা, ঢাকা

৪৪৭৯. প্রশ্ন

আমি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক। আমার অনেকগুলো গাড়ী আছে, যা ফ্যাক্টরির পণ্য ট্রান্সপোর্টের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রশ্ন হল, আমাকে ফ্যাক্টরির পণ্যের যাকাতের সাথে গাড়ীগুলোর যাকাত কি আদায় করতে হবে?

উত্তর

আপনাকে ঐ গাড়ীগুলোর যাকাত দিতে হবে না। কেননা নিজের ব্যবহারের জন্য বা ব্যবসার কাজের জন্য নির্ধারিত গাড়ী যাকাতযোগ্য সম্পদ নয়।

-কিতাবুল আছার ইমাম মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৩০৮; মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক; বর্ণনা ৬৮২৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪০; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৫; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫০

শেয়ার লিংক

সালমান - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৪৪৮০. প্রশ্ন

আমাদের গ্রামের একজন মহিলা তার অবিবাহিত তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে। তাদের থাকার মত একটি ভালো টিনশেড বাড়ী আছে। প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা সুদের উপর দিয়ে রেখেছে। আর তিন সন্তান কাঠমিস্ত্রী। মাস প্রতি তাদের সম্মিলিত আয় চল্লিশ হাজারের উপরে। পরিবারের কোনো ঋণ নেই। সন্তানরা টাকার বড় অংশই মায়ের হাতে দেয়। এই মহিলা সন্তানদের বাধা সত্ত্বেও যাকাত ও ফিতরা গ্রহণ করে এবং কেউ না দিলে মানুষের নিকট তার বদনাম ছড়ায়, যার কারণে মানুষও বাধ্য হয়ে তাকে দেয়।

আমার জানার বিষয় হল, তাকে কি যাকাত দেওয়া যাবে? যদি না দেয়া যায় তাহলে যারা জেনেও দেয় তাদের যাকাত ও ফিতরা কি আদায় হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এই মহিলা যাকাত ফিতরার উপযুক্ত নয়। বরং দুই লক্ষ টাকার নগদ অর্থ থাকায় তার উপর যাকাত ফরয। অতএব তাকে যাকাত ও ফিতরা দেওয়া যাবে না এবং তার অবস্থা জানা সত্ত্বেও তাকে যাকাত ও ফিতরা প্রদান করলে তা আদায় হবে না। সে মানুষের নিকট দুর্নাম ছাড়াবে- এই অজুহাতেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে না। বরং লোকজনকে তার প্রকৃত অবস্থা জানিয়ে দেওয়া দরকার। যেন মানুষ প্রতারিত না হয়।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩৯০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৪২

শেয়ার লিংক

আফনান সা‘দ - রামগড়, খাগড়াছড়ি

৪৪৮১. প্রশ্ন

ইদানিং হজে¦র মওসুমে হজ¦যাত্রীদের অনেকে হজ¦ এজেন্সী কর্তৃক বিড়ম্বনার শিকার হন। তাদের মধ্যে কারো কারো বেলায় এমনও ঘটে যে, ইহরাম বেঁধে ফ্লাইটের দোরগোড়ায় যাওয়ার পর ফেরত আসতে হয়। এখন জানার বিষয় হল, কেউ কিরান হজে¦র ইহরাম বাঁধার পর হজ্জে যেতে না পারলে তার করণীয় কী? সে ইহরাম থেকে হালাল হবে কীভাবে? এবং পরবর্তীতে উক্ত হজ¦ কাযা করার নিয়ম কী? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

কিরান হজে¦র ইহরাম করার পর কোনো ওযরের কারণে হজে¦ যেতে না পারলে তাকে উক্ত ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার জন্য কারো মাধ্যমে হেরেমের এলাকায় দুটি দম কুরবানী করতে হবে। দুটি দম কুরবানী করার পর সে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে। তবে ইহরাম পারিপন্থী কিছু করার আগে তার জন্য মাথা মু-ন করা বা চুল খাটো করে নেওয়া মুস্তাহাব। না করলেও সমস্যা নেই।

আর কেরানের ইহরাম করার পর যেহেতু হজ¦ করতে পারেনি তাই এক্ষেত্রে পরবর্তীতে তাকে একটি হজ¦ ও দুটি উমরা কাযা হিসেবে আদায় করতে হবে। এক্ষেত্রে হজ¦ ও দুই উমরা আলাদা আলাদাও করতে পারবে অথবা কিরান হজ¦ করে আলাদা একটি উমরাও করে নিতে পারে।

-কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/৪৫৫; আলবাহরুর রায়েক ২/৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৯৫; গুনয়াতুন নাসিক পৃ. ৩১৪; রদ্দুল মুহতার ২/৫১৯

শেয়ার লিংক

তাহের বিন মাহমুদ - সিলেট

৪৪৮২. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার এক চাচাত ভাই শ্রমিক ভিসায় সৌদীআরব গিয়েছেন। কাজ কোথায় হবে তা আগে থেকে জানা ছিল না। জেদ্দায় পৌছার পর ভিসাদাতা কোম্পানি মক্কার একটি রডের দোকানে তাকে নিয়োগ দেয়। মক্কায় পৌঁছলে জানতে পারেন যে, ইহরাম ছাড়া মক্কায় প্রবেশ করা অন্যায়। তাই তাকে জরিমানা স্বরূপ দম দিতে হবে।

তিনি গ্রামের সাধারণ মানুষ, মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। তিনি এ ব্যাপারে ভীষণ অস্থিরতার মধ্যে আছেন।

জানার বিষয় হল, এ পরিস্থিতিতে তার এখন করণীয় কী? আশা করি দ্রুত জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যেহেতু জেদ্দার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করেছে, তখন তার মক্কায় প্রবেশের ইচ্ছা ছিল না তাই সেক্ষেত্রে তার জন্য মীকাত অতিক্রম করার সময় ইহরাম করা জরুরি ছিল না। এবং পরবর্তীতে জেদ্দা থেকে মক্কায় ইহরাম ছাড়া প্রবেশ করাও অন্যায় হয়নি। সুতরাং উক্ত কারণে তাকে কোনো দম দিতে হবে না। এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তার প্রয়োজন নেই।

উল্লেখ্য যে, যদি কখনো আপনার ভাই ওমরা করতে চায় তবে জেদ্দা বা হেরেমের বাইরে যে কোনো স্থান থেকে ইহরাম করে ওমরা আদায় করতে হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৭৬; আননাহুরুল ফায়েক ২/১৫২; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী পৃ. ৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৭

শেয়ার লিংক

যুলফা যায়নাব - আকুয়া, ময়মনসিংহ

৪৪৮৩. প্রশ্ন

তিন মাস পূর্বে আমার খালাত বোনের বিয়ে হয় এবং এর মাত্র আড়াই মাস পরই তার স্বামী দুর্ঘটনায়  ইন্তেকাল করেন। স্বামীর ইন্তেকালের ফলে আমার খালাত বোন একেবারে ভেঙে পড়ে এবং বিভিন্ন অনিয়মের ফলে তার গর্ভ নষ্ট হয়ে যায় এবং এক ক্লিনিকে তার গর্ভপাত

করানো হয়। গর্ভটি অল্পদিনের ছিল, কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি। ছোট একটি গোশতপি-ের মত হয়েছিল। এখন জানার বিষয় হল, গর্ভপাত করানোর দ্বারা তার ইদ্দত কি শেষ হয়ে গেছে? যদি না হয় তাহলে এখন তার করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাস্তবেই যদি গর্ভটির কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ না হয়ে থাকে  যেমন, হাত-পায়ের আঙ্গুল, নখ, চুল ইত্যাদি তাহলে গর্ভপাত করানোর দ্বারা তার ইদ্দত সম্পন্ন হয়নি। সেক্ষেত্রে তাকে স্বামীর ইন্তিকালের তারিখ থেকে পূর্ণ চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে।

-কিতাবুল আছল ৪/৪০০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২৯

শেয়ার লিংক

কবির হোসেন - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৪৮৪. প্রশ্ন

আমার প্রতিবেশী মুহাম্মাদ আলমগীর হোসেন। ছোট বেলায় ৮ মাস বয়সে তার মা হৃদরোগে মারা যান। এরপর তার দাদী তাকে দুধ পান করায় এবং তিনিই তাকে লালন পালন করেন। এমনকি ছোট বেলায় তার দাদীকেই সে মা ডাকত। পরে অবশ্য বড় হয়ে বুঝার পর আর ডাকেনি। কিছুদিন আগে তার এক চাচাতো বোনের সাথে তার বিবাহ ঠিক হয়। কিন্তু স্থানীয় এক আলেম এ ঘটনা জানার পর বললেন যে, সে যদি তার দাদীর দুধ পান করে থাকে তাহলে সে তার চাচাতো বোনকে বিবাহ করতে পারবে না।

এখন সেই আলেমের কথা শোনার পর তার পরিবার বলছে যে, চাচাতো বোনকে আবার বিবাহ করা যাবে না কেন? এদিকে তার চাচারাও একই কথা বলছে।

তাই হুযূরের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক? সে কি তার চাচাতো বোনকে বিবাহ করতে পারবে না? দয়া করে দ্রুত জানালে ভালো হয়।

উত্তর

উক্ত আলেম ঠিকই বলেছেন। ঐ ছেলের জন্য তার চাচাতো বোনকে বিবাহ করা জায়েয নয়। কারণ ছেলেটি দাদীর দুধ পান করার ফলে চাচা তার দুধ ভাই এবং চাচাতো বোনটি তার দুধ ভাতিজী হয়ে গেছে। আর বংশীয় ভাতিজীর মত দুধ ভাতিজীও মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাই তাকে বিবাহ করা জায়েয নয়।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৪৭; আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৫/৭২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৬; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/৩৬৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২১৭

শেয়ার লিংক

নূরজাহান ইসলাম - ভোলা, লালমোহন

৪৪৮৫. প্রশ্ন

দু’বছর আগে হোসেন মিয়ার সাথে আমার বিবাহ হয়। তখন এক লক্ষ টাকা মহর ধার্য হয়েছিল। তার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেছিলেন। অতপর বিশেষ কিছু কারণে বাধ্য হয়ে আমি স্বামীর কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ‘খোলা’র আবেদন করি। তিনিও ২০ হাজার টাকার বিনিময় খোলা করেন। তখন আমি তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছি এবং অনাদায়ী ৫০ হাজার টাকার দাবিও ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মহর বাবদ প্রদত্ত ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন। এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী? দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে ২০ হাজার টাকার বিনিময় খোলার কথা বলা হয়েছে কেবলমাত্র সেই ২০ হাজার টাকা আপনার স্বামীর প্রাপ্য। আর মহরের অনাদায়ী ৫০ হাজার টাকাও খোলার কারণে মাফ হয়ে যাবে। তাই এর দাবি ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়েছে। কিন্তু আপনার স্বামী মহর বাবদ যে পঞ্চাশ হাজার টাকা পূর্বেই পরিশোধ করে দিয়েছেন সেটার মালিক আপনি হয়ে গেছেন। খোলার কারণে এ টাকা ফেরত দেওয়া আপনার উপর জরুরি নয়। তাই আপনার স্বামীর জন্য এ টাকা ফেরত চাওয়া বৈধ নয়।

-কিতাবুল আছল ৪/৫৬৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১০১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ১/২০৩

শেয়ার লিংক

আফীফ মাহমুদ - ফরিদপুর

৪৪৮৬. প্রশ্ন

দু’মাস আগে বিজিবিতে চাকরিরত এক ছেলের সাথে আমার চাচাত বোনের বিয়ে হয়। চাকরির নিয়ম অনুযায়ী ঐ সময় তার বিবাহের অনুমতি না থাকায় তখন শুধু আকদ সম্পন্ন হয়। স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকা হয়নি। এর একমাস পর চাকরির প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঐ ছেলে মারা যায়।

এখন প্রশ্ন হল, এখন কি আমার বোনের কোনো ইদ্দত পালন করতে হবে, অথচ বিয়ের পর তাদের একসাথে থাকাই হয়নি? আর এ অবস্থায় সে কি কোনো মোহর পাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিবাহের পর স্বামী স্ত্রীর একসাথে থাকা না হলেও আপনার বোনকে পূর্ণ চার মাস দশ দিন স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত পালন করতে হবে। এবং এক্ষেত্রে সে পূর্ণ মোহরেরও হকদার হবে। বৈবাহিক বন্ধন হলেই মৃত্যুকালীন ইদ্দত পালন করতে হয়। এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর একত্রে অবস্থান হয়েছে কি না তা ধর্তব্য নয়।

উল্লেখ্য যে, আকদের পর স্বামী-স্ত্রী মিলনের পূর্বে তালাক হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হয় না।

-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪; আলজামে লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১২১; আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৩০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৫৮৮, ৩/৩০৪; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৪৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২২৬;  আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১০

শেয়ার লিংক