নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - খাবাশপুর, ফরিদপুর

২৯৭৫. প্রশ্ন

জনৈক মহিলার দুই মাসের গর্ভাবস্থায় প্রচন্ড জ্বরের কারণে গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ডাক্তারের পরামর্শে তা ফেলে দেওয়া হয়। গর্ভটির কোনো আকার আকৃতি হয়নি। তা একটি গোশতের টুকরার মতো। অতপর একদিন পর থেকে তার রক্ত দেখা দেয় এবং তা এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে থাকে।

প্রশ্ন হল, এ রক্ত কি নেফাস হবে, না ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য হবে? জানালে উপকৃত হব।

উল্লেখ্য, উক্ত এক সপ্তাহ সে মহিলা নামায থেকে বিরত ছিল।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গর্ভটির যেহেতু কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি তাই ওই এক সপ্তাহের রক্ত নেফাস হবে না; তবে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং সে সময় নামায না পড়া ঠিকই হয়েছে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৭০; আলবাহরুর রায়েক ১/২১৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৫-১৬৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৫৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০২

শেয়ার লিংক

ফরহাদ হোসেন - সাভার, ঢাকা

২৯৭৬. প্রশ্ন

একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরা-কিরাত, তাসবীহ-দুআ ইত্যাদি কতটুকু জোরে পড়বে? নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ জোরে, নাকি শুধু ঠোঁট নাড়িয়ে হরফের মাখরাজ আদায় করে নিলেই যথেষ্ট হবে?


উত্তর

নিম্নস্বরে আদায়কৃত নামাযসমূহে নামাযী সূরা-কিরাত নিজ কানে শুনতে পায়-এ পরিমাণ আওয়াজে পাঠ করা উত্তম। তবে পাশের মুসল্লি পর্যন্ত আওয়াজ না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। অবশ্য কেউ যদি ঠোঁট নাড়িয়ে একেবারে নিম্ন আওয়াজে হরফের মাখরাজ যথাযথভাবে আদায় করে পড়ে তবেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আসল ১/১৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৯৭; আততাসহীহ ওয়াত তারজীহ আলা মুখতাসারিল কুদুরী ৭৪; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৫৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাকিবুল ইসলাম - ঢাকা

২৯৭৭. প্রশ্ন

একদিন বিকেলে পান খাওয়ার সময় বাম হাতের কনুইয়ের নিচে একটু সামান্য চুন লেগে যায়, যা তখন আমার চোখে পড়েনি। এরপর আমি ইস্তেঞ্জা-অযু করে মাগরিবের নামায আদায় করি। নামায শেষে বাসায় যাওয়ার পর হাতের চুন চোখে পড়ে। এখন জানার বিষয় হল, হাতে চুন থাকা অবস্থায় অযু করলে কি তা সহীহ হবে? আর আমার আদায়কৃত মাগরিবের নামাযের কী হুকুম হবে? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

চুন মাটি জাতীয় পদার্থ, যা সহজেই পানিকে শোষণ করে নেয় ও ভিজে যায়। তাই শরীরের কোথাও চুন লেগে থাকলেও চামড়ায় পানি পৌঁছার ক্ষেত্রে তা প্রতিবন্ধক হয় না।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার অযু এবং নামায উভয়টি সহীহ হয়েছে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪; শরহুল মুনইয়াহ ৪৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হাসিবুল ইসলাম - ঢাকা

২৯৭৮. প্রশ্ন

একদিন মসজিদে গিয়ে দেখি ইমাম সাহেব রুকুতে চলে গেছেন। আমি নামাযে শরিক হওয়ার আগেই তিনি রুকু থেকে উঠে সিজদায় চলে যান। আমি তখন নামাযে শরিক না হয়ে ইমাম সাহেবের দাঁড়ানোর অপেক্ষা করতে থাকি। এরপর দ্বিতীয় রাকাতে শরিক হই। জানার বিষয় হল, আমার এ কাজটা কি ঠিক হয়েছে? আর এ অবস্থায় আমার করণীয় কী? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

ইমাম নামাযের যে অবস্থায় থাকুক মুক্তাদীর জন্য তৎক্ষণাৎ নামাযে শরিক হয়ে যাওয়া সুন্নত। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে তাকিদ এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে রুকু, সিজদা কিংবা কিয়াম অবস্থায় পায় সে যেন সে অবস্থাতেই আমার সাথে শরিক হয়ে যায়।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৬১৬

তাই ইমাম সিজদায় থাকলে সিজদাতেই শরিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে নামাযে শরিক না হয়ে পরবর্তী রাকাতের জন্য অপেক্ষা করা মাকরূহ।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৭; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৫০৪

শেয়ার লিংক

আবু আইয়ুব - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

২৯৭৯. প্রশ্ন

আমার বাড়ি চট্টগ্রামে। সেটাই আমার স্থায়ী ঠিকানা। আমি এখনো তা ত্যাগ করিনি। তবে চাকরির সুবাদে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকি। মাঝেমধ্যে বাড়িতে যাই। সেখানে আববা-আম্মা ও ভাইবোনেরা থাকেন। কিছুদিন ধরে একটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে আমাদের বাড়িটির পুননির্মাণ কাজ চলছে। এজন্য আববা-আম্মা, ভাইবোনেরা পাশেই একটি বাসা ভাড়া করে আছেন। এ অবস্থায় আমি যদি কোনো কাজে স্ত্রীকে নিয়ে ৪/৫ দিনের জন্য চট্টগ্রাম যাই তাহলে আমি কি মুসাফির হব, নাকি মুকীম?


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যেহেতু চট্টগ্রামের ঐ বাড়ি পরিপূর্ণভাবে ত্যাগ করে ঢাকা বা অন্য কোথাও স্থায়ীভাবে থাকার নিয়ত করেননি তাই পূর্বের মতো সেখানে আপনি মুকীম থাকবেন।

সুতরাং ঐ এলাকার অন্য কোনো ভাড়া বাসায় অবস্থান করলেও আপনি মুকীম গণ্য হবেন।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩৯, ১/১৪২; আলবাহরুর রায়েক ২/১৩৬, ২/১৩৮; রদ্দুল মুহতার ২/১২৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রিয়াসত আলম - বাইতুস সালাম মাদরাসা, উত্তরা, ঢাকা

২৯৮০. প্রশ্ন

ক) কোনো ব্যক্তি শরয়ী মুসাফির হবে কোন জায়গা থেকে? নিজ ইউনিয়ন অথবা ওয়ার্ড থেকে বের হলে, নাকি শহর থেকে বের হলে? উদাহরণ স্বরূপ আমার বাড়ি ঢাকার জুরাইনে ৮৯ নং ওয়ার্ডে। এখানে যাবতীয় নাগরিক সুবিধা পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। যথা-বাজার-ঘাট, চেয়ারম্যান-মেম্বার, সালিশ ও বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক সকল সুবিধা ইত্যাদি। এ অবস্থায় আমি জুরাইন থেকে বের হলেই মুসাফির হব, নাকি জুরাইন থেকে আবদুল্লাহপুর (উত্তর দিকে ঢাকার শেষ প্রান্ত) পর্যন্ত প্রায় ৩০ কি.মি. পার হওয়ার পর ঢাকার বাইরে বের হলে মুসাফির হব?

খ) আমরা তাবলীগ জামাতে যাই। কাকরাইল থেকে আমাদেরকে ১টি ইউনিয়নে রোখ দেয় এবং আমরা ঐ ইউনিয়নে পৌঁছার পর স্থানীয় যিম্মাদার সাথীরা ঐ ইউনিয়নের ১৩টি মসজিদে (৩ দিন ঢ ১৩ দিন = ৩৯ দিন) ঠিক করে দেন। তখন সকল সাথী পূর্ণ ইতমিনানের সাথে ঐ মসজিদগুলোতে ৪০ দিন পূর্ণ করেন। কখনো মনে আসে না যে, আমাদেরকে কাকরাইল থেকে ডেকে নিবে এবং আমাদেরকে এমন হেদায়াত দেওয়াও হয় না যে, যে কোনো মুহূর্তে ডেকে আনা হবে। আর কখনো এমন দেখা যায়নি যে, কাকরাইল কোনো জামাতকে ফিরিয়ে এনেছে। আর যদি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা ঘটেও যায় তাহলে তা ধর্তব্য নয়। সুতরাং এ অবস্থায় কি চিল্লার জামাতে কসর পড়তে হবে নাকি পূর্ণ নামায পড়তে হবে? দয়া করে সঠিক সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

ক) সফরসম দূরত্বের উদ্দেশে নিজ এলাকার বসতি ত্যাগ করলে অর্থাৎ গ্রামের অধিবাসী নিজ গ্রাম ছাড়লে, শহরের অধিবাসী শহর ত্যাগ করলে এবং সিটি শহরে বসবাসকারী সিটি শহর থেকে বের হওয়ার পর থেকে মুসাফির গণ্য হবে।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনি জুরাইন থেকে বের হওয়ার পর মুসাফির গণ্য হবেন না। বরং উত্তর দিক দিয়ে ঢাকা সিটির শেষ অংশ টঙ্গী ব্রিজ থেকে মুসাফির গণ্য হবেন। কেননা জুরাইন ঢাকা সিটির অংশ।

খ) মুকীম হওয়ার জন্য একটি এলাকা অর্থাৎ একটি গ্রাম বা একটি শহরে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করতে হবে। এক ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে ১৫ দিনের নিয়ত করলে মুকীম হবে না।

সুতরাং প্রশ্নোক্ত অবস্থায় চিল্লার জামাত যদি ১টি ইউনিয়নের উদ্দেশে রোখ দেওয়া হয় তাহলেও তারা সেখানে মুকীম হবে না। মুসাফিরই থাকবে। তবে কোনো বড় গ্রাম বা শহরে যদি ১৫ দিন থাকার নিয়ত করা হয় তখন মুকীম গণ্য হবে।

-কিতাবুল আসল ১/২৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৯১; বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭০

শেয়ার লিংক

আতিকুল্লাহ - ঢাকা

২৯৮১. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি যোহর নামাযের পূর্বের চার রাকাত সুন্নতের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর ভুলে দরূদ শরীফের আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ পর্যন্ত পড়েছে। এ কারণে কি তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে?


উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় তাকে সাহু সিজদা দিতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে বিলম্ব না করে তাশাহহুদের পরপরই দাঁড়িয়ে যাওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু তা না করে ভুলে দরূদ শরীফের এ পরিমাণ পড়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছে।

-আদ্দুররুল মুখতার, হা©র্শয়াতুত তহতাবী ১/২২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪০১; শরহুল মুনইয়াহ ৩৩১; আলবাহরুর রায়েক ২/৯৭

শেয়ার লিংক

মাওলানা কারি কবিরুল আলম - দারুল ফালাহ জামে মসজিদ

২৯৮২. প্রশ্ন

আমি বর্তমানে দুই তলা একটি বিল্ডিং এর মালিক। এই বাড়ি নির্মাণের সময় ব্যাংক থেকে ২৭ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছি। আবার চাকুরি শেষে ১৬ লক্ষ টাকা পেয়ে সেই টাকা এই ব্যাংকেই ফিক্সড ডিপোজিট করেছি। ডিপোজিটের লভ্যাংশ থেকে ২৭ লক্ষ টাকার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে। ঋণ শেষ হতে আরো ১২ বছর সময় লাগবে। ১২ বছর পর ১৬ লক্ষ টাকা আবার নিজের অধীনে এসে যাবে। এছাড়া আরো ৩ লক্ষ টাকা বর্তমানে বিল্ডিংয়ের বাবদ ঋণ আছে। আমার নিকট বর্তমানে স্বর্ণ আছে ৭ ভরি। মাসিক আয়-ব্যয় সমান। মাসিক আয় থেকে আবার মাসিক ডিপিএস-এ জমা দেওয়া হয় ৫,০০০/-। আর ডিপিএস-এ জমা হয়েছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। এই ডিপিএস থেকে অন্য একজন লোন নিয়েছে ৬০ হাজার টাকা। যেই ব্যক্তি লোন নিয়েছে সে ব্যক্তিই লোন পরিশোধ করছে। এমন অবস্থায় আমার উপর যাকাত ফরয হবে কি না? কিতাবের দলিলসহ জানালে উপকৃত হব।

বি. দ্র. : একটি ফ্ল্যাটে আমি থাকি। আর বাকি তিনটি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। মূলত ভাড়ার অংশ করার জন্যই ঋণ করতে হয়েছে। শুধু এক ফ্ল্যাট করলে ঋণ করতে হত না।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ সকল সম্পদের যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করা ১৬ লক্ষ টাকা, ৭ ভরি স্বর্ণ এবং ডিপিএস-এর ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার যাকাত দিতে হবে।

বাড়ি বাবদ আপনার যে ঋণ আছে তা যাকাতযোগ্য সম্পদ থেকে কর্তন যাবে না। কারণ একে তো এই ঋণ প্রবৃদ্ধির জন্য করা হয়েছে। অর্থাৎ ভাড়া বাড়ি নির্মাণের জন্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত ঋণের বিপরীতে সম্পদও মজুদ আছে। তাই এ ঋণের কারণে যাকাত মওকুফ হবে না। আর ফিক্সড ডিপোজিট করলে টাকা যদিও নিজের হাতে নেই, কিন্তু নিজ প্রয়োজনে ও হেফাযতেই রাখা আছে। সুতরাং মূল জমার যাকাত দিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, সাধারণ ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট এবং ডিপিএস সুদী একাউন্ট। সুদ জঘন্যতম হারাম। এর ভয়াবহতা সরাসরি কুরআন মজীদেই উল্লেখ হয়েছে। তাই এসব সুদী হিসাব দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া দরকার। এসব হিসাব থেকে অতিরিক্ত যা পাওয়া যাবে তা সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দিতে হবে।

-আলমাআঈরুশ শরইয়াহ পৃষ্ঠা : ৫৭৩, ৫৮০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - ঢাকা

২৯৮৩. প্রশ্ন

এ বছর আমি হজ্ব করেছি। আমরা দুজন সাথী আরাফা থেকে আসরের পরই রওনা হয়ে যাই। মাগরিবের আগেই মুযদালিফার সীমানার ভিতরে পৌঁছে গেছি। একজন হুজুর বললেন, আমাদের উপর দম ওয়াজিব হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে টাকা না থাকার কারণে দম দেইনি। সফর মাসে আমার চাচা যিনি সৌদী আরব থাকেন তিনি যাবেন। তাকে দমের টাকা দিলে কি চলবে? তিনি কি হজ্বের মাস আসার আগেই দম যবাই করতে পারবেন? আর এর গোশত কি চাচারা খেতে পারবেন? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

আপনার চাচার মাধ্যমে দম আদায় করতে পারবেন। আর তা হজ্বের মাস আসার আগেও যবাই করা যাবে। কেননা দম ওয়াজিব হলে ঐ বছরের ১০ থেকে ১২ যিলহজ্বের মধ্যে আদায় করা উত্তম। তবে এরপর বছরের অন্য সময়ও জরিমানা দম আদায় করা জায়েয। আর দমের পশু যবাই করতে হবে হারামের এলাকাতেই। হারামের বাইরে যবাই করলে তা দ্বারা দম আদায় হবে না। দমের গোশত সদকা করা জরুরি। এটা ফকীর-মিসকীনের হক। চাচা যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হন তবে তিনিও আপনার দমের গোশত খেতে পারবেন।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৭৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/৭২; মানাসিক ৩৯৩-৫; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৫৮

শেয়ার লিংক

আনোয়ার শাহ মাবরূর - বারাহিপুর, ফেনী

২৯৮৪. প্রশ্ন

আমরা জানি, কিরান ও তামাত্তুকারী হাজ্বীর যদি দমে শোকর আদায়ের সামর্থ্য না থাকে তবে তাকে দশটি রোযা রাখতে হবে। জানতে চাই, এই দশটি রোযা রাখার সময় কখন? আরাফার দিনে কি রোযা রাখা জরুরি? আরাফার দিন পর্যন্ত নাকি তিনটি শেষ করতে হয়। তাহলে এ কথার অর্থ কী? এ রোযা কখন থেকে শুরু করা যাবে? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

তামাত্তু ও কিরানকারীর হজ্বের কুরবানী দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে এর পরিবর্তে তাকে দশটি রোযা রাখতে হবে। সেগুলোর তিনটি রাখতে হবে ৯ যিলহজ্বের (আরাফার) মধ্যেই। আর বাকিগুলো হজ্বের পরে রাখবে এবং তা দেশে ফেরার পরও হতে পারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) কারো যদি কুরবানী করার সামর্থ্য না থাকে তবে সে হজ্বের দিনে তিনটি রোযা রাখবে এবং সাতটি রোযা রাখবে সে সময় যখন তোমরা বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করবে।-সূরা বাকারা : ১৯৬

উল্লেখ্য, উপরোক্ত তিনটি রোযা রাখার ক্ষেত্রে সামর্থ্যবান ও রোযা রেখে দুর্বল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই এমন ব্যক্তির জন্য উত্তম হল হজ্বের ইহরাম বাঁধার পর থেকে আরাফার দিনের মধ্যেই রোযাগুলো শেষ করা। আর আরাফার দিন এ রোযা রাখা জরুরি নয়। এর আগে শেষ করলেও চলবে। অবশ্য কারও যদি রোযা রেখে হজ্বের আমল করতে কষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে সে এ সময় রোযা রাখবে না। বরং সে হজ্বের সফরে উমরার ইহরাম বাঁধার পর থেকে নিয়ে নয় তারিখ তথা আরাফার দিন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনটি রোযা রেখে নিবে। মোটকথা উমরার ইহরামের পর থেকে দশ তারিখের পূর্বেই ঐ তিনটি রোযা আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় তার জন্য দমে শোকর আদায় করা অপরিহার্য হয়ে যাবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৮/৬৩৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৩৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৮৬; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৮১; ফাতহুল কাদীর ২/৪১৮; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ২৬৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ কামাল - কুড়িল বিশ্বরোড, ঢাকা

২৯৮৫. প্রশ্ন

আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমার বাবা মায়ের সাথে দীর্ঘদিন যাবত ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। কিছুদিন আগে আমার সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে আমি রাগ করে বললাম, ঠিক আছে, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিব তখন আপনারা বিপদমুক্ত হয়ে যাবেন। প্রশ্ন হল, আমার উক্ত কথা দ্বারা কি আমার স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়েছে? দয়া করে তাড়াতাড়ি জানালে উপকৃত হব। উল্লেখ্য, উক্ত কথা দ্বারা আমার তালাক দেওয়া উদ্দেশ্য ছিল না। বরং উদ্দেশ্য ছিল আমার আম্মাকে ভয় দেখানো।


উত্তর

ঐ কথা বলার দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর কোনো তালাক পতিত হয়নি। কেননা ঐ বাক্যে স্ত্রীকে পরবর্তীতে তালাক দেওয়া হবে শুধু এতটুকুই বলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে কোনো তালাক দেওয়া হয়নি।

প্রকাশ থাকে যে, তালাক শরীয়তের দৃষ্টিতে ঘৃণ্যতম বিষয়। মা-বাবা আদেশ করলেও যথাযথ কারণ ছাড়া তালাক দেওয়া যাবে না। বর্তমান সময়ে তালাক স্ত্রীর প্রতি অনেক ক্ষেত্রে যুলুম। উভয় পরিবারে ফেতনারও কারণ হয়ে যায়। তাই শুধু ঝগড়া-ঝাটির কারণে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। মুরববীদের সাথে ঝগড়া না করা এবং তাদেরকে সম্মান করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। স্ত্রীকে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আর শ্বশুর-শাশুড়ির কর্তব্য বউয়ের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়া এবং তার সাথে স্নেহ-মমতার আচরণ করা।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮৪; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামীদিয়া ১/৩৮

শেয়ার লিংক

আরিফুল ইসলাম - মালিবাগ

২৯৮৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী তার বাপের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার থেকে অনুমতি চায়। আমি তাকে সাফ মানা করে দেই। তারপর কথার এক পর্যায়ে সে আমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। আমি তাকে বারবার তর্ক করতে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে আমার সাথে তর্ক করেই যাচ্ছে। ফলে এক পর্যায়ে আমি রাগের মাথায় তালাকের নিয়তে বলে ফেলি, যাও, তুমি আজ থেকে স্বাধীন। পরক্ষণেই আমি ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হই। এখন আমি জানতে চাই, আমার উক্ত কথার দ্বারা তালাক পতিত হয়েছে কি না? আর হয়ে থাকলে এখন আমাদের ঘর-সংসার করার জন্য করণীয় কী? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ কথা বলার দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। সুতরাং তাকে ঐ দিন থেকেই ইদ্দত পালন করতে হবে। অবশ্য আপনারা যদি উভয়ে পুনরায় সুষ্ঠুরূপে ঘর সংসার করতে চান তাহলে ইদ্দতের ভিতরে বা পরে নতুন করে মোহর ধার্য করে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।  এভাবে দ্বিতীয়বার তাকে বিবাহ করলে আপনি দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এই স্ত্রীকে কখনো দুই তালাক প্রদান করলেই তার সাথে স্থায়ীভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। তখন এভাবে নতুন বিবাহ করেও একত্রে থাকার সুযোগ থাকবে না।  

উল্লেখ্য যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক খুবই অপছন্দনীয়। তাই সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে তালাক দিয়ে দেওয়া অন্যায়। ক্ষেত্রবিশেষে তা স্ত্রী-পুত্রের প্রতি যুলুমও বটে। তাই তালাক দিতে চাইলে ভেবে-চিন্তে মুরববীদের সাথে পরামর্শ করে এবং বিজ্ঞ আলেম থেকে মাসআলা জেনে নিবে। রাগের বশবর্তী হয়ে কখনো তালাক দিবে না। কেননা এর পরিণাম অনেক ভয়াবহ ও লজ্জাকর।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৯৫, ২/৫৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/১৪৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৭২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩০০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মিসবাহুদ্দীন - চাটখিল, নোয়াখালি

২৯৮৭. প্রশ্ন

আমার পিতা গত বছর ইন্তেকাল করেছেন। আমি তার নামে কুরবানী করার নিয়ত করেছি। প্রশ্ন হল, মৃত ব্যক্তির নামে দেওয়া কুরবানীর গোশত কী করতে হবে? তার অংশের পুরো গোশতই কি সদকা করতে হবে, নাকি নিজেরাও তা খেতে পারব? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানীর জন্য ওসিয়ত না করে থাকে তবে তার পক্ষ থেকে দেওয়া কুরবানীর গোশতের হুকুম সাধারণ কুরবানীর মতো; নিজেরাও খেতে পারবে অন্যদেরকেও দিতে পারবে। পুরোটা সদকা করা জরুরি নয়। তবে মৃত ব্যক্তি যদি অসিয়ত করে যায় এবং তার সম্পদ দ্বারাই কুরবানী করা হয়ে থাকে তাহলে এ কুরবানীর পুরো গোশত সদকা করা জরুরি। এ থেকে নিজেদের খাওয়া জায়েয হবে না।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৩; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩৩৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম - যশোর

২৯৮৮. প্রশ্ন

আমরা গরুর ভুঁড়ি  খাই না। তাই আমার বাবা প্রতি বছর তা বিক্রি করে দেন। আম্মা কুরবানীর গরু ও খাসির চর্বি জমা করে ফেরিওয়ালার কাছে বিক্রি করেন। জানতে চাই, এই টাকা কি আমাদের ব্যবহার করা হালাল হবে?


উত্তর

নিজের কুরবানীর পশুর ভুঁড়ি, চর্বি, গোশত কিছুই বিক্রি করা জায়েয নেই। এতে কুরবানী ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায়। বিগত দিনে নিজেদের কুরবানীর পশুর চর্বি, ভুড়ি বিক্রি করে যত টাকা পেয়েছেন তা গরীবদেরকে সদকা করে দিতে হবে। আর আল্লাহ তাআলার দরবারে ইস্তিগফার করতে হবে। ভুঁড়ি, চর্বি নিজেরা খেতে না পারলে সরাসরি গরীবদেরকে দান করে দিবে, বিক্রি করবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৮

শেয়ার লিংক

ইশতিয়াক আহমাদ - বিবাড়িয়া

২৯৮৯. প্রশ্ন

আমার বড় ভাই আমাকে মুদারাবার ভিত্তিতে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়েছেন এবং লভ্যাংশের ৪০% তাকে দিতে বলেছেন। আমি সে টাকা দিয়ে একটি দোকান ভাড়া নেই এবং তাতে মুদি ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে দোকানে একজন কর্মচারী প্রয়োজন। তাই প্রশ্ন হল, উক্ত দোকানের জন্য কি কর্মচারী রাখা যাবে? নাকি সব কাজ আমাকেই করতে হবে? আর কর্মচারী রাখা হলে তার খরচ কে বহন করবে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

মুদারাবা ব্যবসায় কর্মচারীর প্রয়োজন হলে ব্যবসার খরচ থেকে কর্মচারী নেওয়া যাবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও দোকানের জন্য কর্মচারীর প্রয়োজন হলে আপনি ব্যবসার খরচ থেকে কর্মচারী রাখতে পারবেন। তবে বিষয়টি বড় ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৭/২৬৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/৪৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৯

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - টুমচর ফাজিল মাদরাসা, লক্ষ্মীপুর

২৯৯০. প্রশ্ন

আমি মাদরাসায় পড়ি। আববা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন মাদরাসায় যাওয়ার ভাড়া, নাশতা বাবদ বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে থাকেন। ঐ টাকা থেকে যৎসামান্য বাঁচিয়ে বই কেনা, কাগজ-কলম ইত্যাদি কাজে খরচ করি। তারা যেহেতু ভাড়া, নাশতার জন্য দিচ্ছেন তাই এ সকল কাজে খরচ করা জায়েয হবে কি?


উত্তর

হ্যাঁ, ঐ টাকা থেকে বাঁচিয়ে বইপত্র, কাগজ-কলম ইত্যাদি কিনতে পারবেন। কেননা ঐ টাকা আপনাকে খরচের জন্যই দেওয়া হয়েছে। তাই এর মালিক আপনিই। সুতরাং যে কোনো প্রয়োজনে তা খরচ করতে পারবেন।

আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৬৯; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৫

শেয়ার লিংক

নুমান বিন মুদ্দাচ্ছির - দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

২৯৯১. প্রশ্ন

পুরান ঢাকার কিছু এলাকায় বিগত ৩-৪ বছর আগে একটি মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থা চালু হয়েছে এবং ক্রমেই তা দ্রুত বিস্তার ঘটছে। মূলত বাড়িওয়ালাদের অর্থের প্রয়োজন মেটাতেই এই মর্টগেজ ভাড়াটিয়া ব্যবস্থাটি চালু হয়েছে। যার বিবরণ এই যে, বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিকদের তিন বা পাঁচ লক্ষ টাকা একত্রে প্রদান করে মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বাড়ি বা ফ্ল্যাটে উঠে। ব্যবহৃত গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির বিলই তারা কেবল পরিশোধ করে। মাসিক কোনো ভাড়া তাদের দিতে হয় না। একসঙ্গে নগদ তিন-পাঁচ লক্ষ টাকা প্রদানের কারণেই বিনা ভাড়ায় বসবাসের এমন ব্যবস্থা। রীতিমতো দলিল-দস্তাবেজ করেই পরস্পর চুক্তিবদ্ধ হয়। তিন বা পাঁচ বছর মেয়াদে সাধারণত চুক্তি হয়ে থাকে। চুক্তির সময়সীমা অতিক্রমের পর বাড়িওয়ালাকে শুরুতে দেওয়া তিন বা পাঁচ লক্ষ টাকা মর্টগেজ ভাড়াটিয়াকে একত্রে ফেরত দিতে হয়। অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদকাল পর্যন্ত মর্টগেজ ভাড়াটিয়া বিনা ভাড়ায় থাকবে। কেবল গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করবে। চুক্তির মেয়াদ শেষে লগ্নির পুরো টাকা একত্রে ফেরত নেবে। কোনো কারণে বাড়িওয়ালা অর্থ ফেরত দিতে অক্ষম হলে তাদের মধ্যে পুনরায় নতুন করে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে আগের নিয়মেই ফ্ল্যাট বা বাড়িতে বিনা ভাড়ায় বসবাস করতে পারবে।

ব্যবস্থাটি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

মর্টগেজ ভাড়ার এ লেনদেন সম্পূর্ণ নাজায়েয। এটি সুদী লেনদেন। এককালীন ফেরতযোগ্য কিছু টাকা দিয়ে বিনিময়ে বন্ধকী বাড়ি বা ফ্ল্যাটে বসবাস করাটা মূলত ঋণের বিনিময়ে সুবিধা ভোগ করা, যা হারাম। তাই মর্টগেজ ভাড়ার এ পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগযোগ্য। বাসা-বাড়ি ভাড়ার স্বাভাবিক প্রচলিত বৈধ তরিকাটাই অনুসরণযোগ্য। বেশি টাকার প্রয়োজন হলে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য এককালীন অগ্রিম ভাড়া দিয়ে দিবে। প্রয়োজনে এক্ষেত্রে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে কমও নির্ধারণ করতে পারবে। আর মেয়াদ শেষে ভাড়ার টাকা ফেরত দিতে হবে না।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ১৫০৭১; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; শরহুল মাজাল্লাহ ৩/১৯৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মোয়াজ্জেম হুসাইন - চাটখিল, নোয়াখালি

২৯৯২. প্রশ্ন

সূরা আলেইমরান-এর ১০৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ জানতে চাই। বিশেষ করে ঈমানের পর কুফর দ্বারা কাদেরকে বোঝানো হয়েছে? বিস্তারিত দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত আয়াতের তরজমা হল, সেই দিন (কিয়ামতের দিন) কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হয়ে যাবে। যাদের মুখ কালো হয়ে যাবে তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফর অবলম্বন করেছিলে? সুতরাং তোমরা এ শাস্তি আস্বাদন কর, যেহেতু তোমরা কুফরি করতে।

অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে উক্ত আয়াতে চেহারার শুভ্রতা ও উজ্জ্বলতা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঈমানের নূর। আর কৃষ্ণতা দ্বারা বুঝানো হয়েছে কুফরের অন্ধকার। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন কারো চেহারা ঈমানের নূরে আলোকিত ও উজ্জ্বল হবে। আর কুফরের অন্ধকারের কারণে কারো চেহারা হবে কালো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন।

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত সাহাবী উবাই ইবনে কাব রা. বলেছেন, কাফেরদের চেহারা কালো হবে আর মুমিনদের চেহারা হবে উজ্জ্বল ও শুভ্র।-তাফসীরে তাবারী ৩/৩৮৭

ইমাম ইবনে জারির তাবারী রাহ. এ প্রসঙ্গে কয়েকটি মত উদ্ধৃত করার পর উবাই ইবনে কাব রা.-এর উক্ত মতকে অধিক নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আর ঈমান আনয়নের পর কি তোমরা কুফরী করেছিলে? এই আয়াতে কাফেরদের ঈমান আনার দ্বারা উদ্দেশ্য ওই ঈমান, যার সম্পর্ক রূহের জগতের সাথে। অর্থাৎ যখন সকল রূহ আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে স্বীকার করেছিল এবং বলেছিল, হ্যাঁ, আপনি আমাদের রব। অতপর দুনিয়াতে এসে তারা কুফুরি অবলম্বন করেছে।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আরো দেখুন : তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/২৫; তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ২/১৪৭

শেয়ার লিংক

নাজিয়ুল্লাহ ফাতিহ - উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা

২৯৯৩. প্রশ্ন

পাগড়ি পরিধানের হুকুম সবিস্তারে জানতে চাই। অনেককে দেখা যায়, বিশেষ বিশেষ সময় বিশেষ বিশেষ স্থানে পাগড়ি পরিধান করে থাকেন। কেউ ফরয নামাযের সময়, কেউ আবার জুমার নামাযের সময় আর কেউ ঈদ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিধান করেন। দলিল-প্রমাণসহ জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

পাগড়ি পোশাকের একটি সুন্নত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যেসকল পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের নিকট পাগড়ি একটি পছন্দনীয় পোশাক ছিল এটি আরবের একটি ঐতিহ্যও বটে।

স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। এখানে দু একটি হাদীস উল্লেখ করা হল।

জাবির রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৮

মুগীরা ইবনে শুবা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮১

সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আমর ইবনে হুরাইস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার লোকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিলেন। সে সময় তিনি কালো পাগড়ি পরিহিত ছিলেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৯

তাঁর পাগড়ি পরিধান সংক্রান্ত এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।

সাহাবা, তাবেয়ীগণও নামাযে এবং নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি ব্যবহার করতেন। দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী ১/৫৬

সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ রাহ. বলেন, আমি মুহাজির সাহাবীগণকে কালো, সাদা, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৪৮৯

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মক্কা মুকাররমার উদ্দেশে বের হলে সঙ্গে পাগড়ি নিতেন এবং তা পরিধান করতেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৫২

আবু উবাইদ রাহ. বলেছেন, আমি আতা ইবনে ইয়াযিদকে পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৮০

উপরোক্ত হাদীস ও আছার থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, সাহাবা, তাবেয়ীন নামাযে ও নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন। তাঁদের কাছে পোশাক হিসেবে পাগড়ির একটি বিশেষ অবস্থান ও গুরুত্ব ছিল।

তাই পোশাকের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফের অভ্যাসের অনুসরণ করা ভালো এবং তাদের মহববতে এই অনুসরণের কারণে ইনশাআল্লাহ সওয়াবও হবে।

তবে জেনে রাখা দরকার যে, পাগড়ি নির্দিষ্ট কোনো সময়, স্থান বা বিশেষ ইবাদতের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। পাগড়িকে নামাযের জন্য অপরিহার্য মনে করা অথবা পাগড়িসহ নামায আদায় করলে বিশেষ ছওয়াব (যেমন, এক রাকাতে পঁচিশ রাকাত বা সত্তর রাকাতের সওয়াব) হবে-এমন ধারণা করা ভুল; বরং পাগড়ি পোশাকেরই একটি ঐচ্ছিক অংশ।

পোশাক হিসাবে তা পরিধান করা বা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো অনুষ্ঠানে পরা বা সকল নামাযের জন্য পাগড়ি পরা কিংবা জুমা-ঈদ ইত্যাদিতে বা কোনো কোনো নামাযে পরা সবই ঠিক আছে।

উল্লেখ্য, পাগড়িকে এমন সীমাবদ্ধতার সাথে ব্যবহার করা উচিত নয়, যার কারণে বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় যে, পাগড়ি ঐ সময়ের একটি বিশেষ আমল। এমনভাবে সীমাবদ্ধ করে নেওয়া তার ব্যবহার রীতিরও পরিপন্থী। যেমনটি কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ফরয নামাযের ইকামত যখন শুরু হয় তখন পাগড়ি বাঁধে আবার সালাম ফেরানোমাত্রই তা খুলে ফেলে। পাগড়িকে এভাবে নামাযের সাথে সম্পৃক্ত মনে করা ঠিক নয়।

আরো উল্লেখ্য যে, পাগিড় পরিধান করে নামায আদায় করলে ছওয়াব বেশি হওয়া সংক্রান্ত যেসকল বর্ণনা রয়েছে সেগুলোর কোনোটি সহীহ নয়।

শেয়ার লিংক