আবুল হাসান - গোপালগঞ্জ
প্রশ্ন
হিন্দুস্তানের উলামায়ে কেরাম এবং আরবের উলামায়ে কেরাম তাদের মাতৃভাষায় লেখা শরাহ মুতালাআ করে কিতাব হল্ করে থাকেন। তাহলে আমাদের মাতৃভাষায় লেখা শরাহ পড়তে কেন আমাদের নিষেধ করা হয়? উস্তাযগণ বলে থাকেন, বাংলা শরাহ মুতালাআ করে কিতাব হল্ করলে ইস্তে‘দাদ কমে যায়। তাহলে আরবরা আরবী শরাহ দ্বারা কিতাব হল্ করলে কি তাদের ইস্তে‘দাদও কমে যায়?
উত্তর
‘তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয় কিতাবে (পৃ. ৪৫৩-৪৫৪)-এ আপনার এই প্রশ্নের সমাধান রয়েছে।
দেখুন, মূল মাকসাদ হল, তালিবে ইলমের মাঝে কিতাবী ইস্তে‘দাদ, ইলমী ইস্তে‘দাদ ও ফন্নী যওক তৈরি হওয়া। এটা যে ভাষার কিতাব পড়েই হোক– অসুবিধা নেই। তবে কাক্সিক্ষত ইস্তে‘দাদ ও যোগ্যতা অবশ্যই হাসিল হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তাই যেসমস্ত কিতাব ও শরাহ এই মাকসাদ হাসিলে সহায়ক হয়, আসাতিযায়ে কেরাম তালিবে ইলমদের সেগুলো পড়ার পরামর্শ দেন।
আজকাল ছাত্রদের অমনোযোগিতা, উদাসীনতা ইত্যাদির কারণে তাদের মধ্যে কাক্সিক্ষত ইস্তে‘দাদ তৈরি হচ্ছে না। সেই ইস্তে‘দাদের বিকল্প হিসেবে ছাত্রদের মধ্যে উর্দু ও বাংলা ভাষায় বিভিন্ন নোট বা শরাহ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেগুলো অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তিতে ভরপুর। এগুলোর দ্বারা ছাত্রদের কিতাবী ও ইলমী ইস্তে‘দাদ তো পয়দা হচ্ছেই না, বরং এগুলোর কারণে তারা ইস্তে‘দাদ হাসিলের আবশ্যকতা এবং মেহনত করে কিতাব হল্ করার প্রয়োজনীয়তা ভুলে যাচ্ছে। ফলে সেসব নোট ও শরহের সাহায্য ছাড়া তারা ইলমের ময়দানে এক কদমও ফেলতে পারে না। অর্থাৎ এগুলো ছাত্রসমাজকে দিন দিন পঙ্গু বানিয়ে দিচ্ছে। এসব কারণে আসাতিযায়ে কেরাম তাদেরকে এসবের কাছে যেতে নিষেধ করেন।
সুতরাং বিষয়টা বাংলা বা উর্দু ভাষায় হওয়ার কারণে নয়। তাই কোনো আরবী কিতাব বা শরাহের অবস্থাও যদি এই হয় যে, সেটা পড়লে তালিবে ইলমদের মধ্যে সাতহিয়্যাত পয়দা হয় এবং তাদের ইস্তে‘দাদের ক্ষতি হয়, তাহলে উস্তাযগণ সেটাও পড়তে বারণ করেন। উদাহরণস্বরূপ আজকাল কিছু আরবী নোট বের হয়েছে, যেন ছাত্ররা পরীক্ষায় আরবীতে উত্তর লিখতে পারে। অথচ এগুলোর দ্বারা ছাত্রদের সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। তাদের মেহনতের মাদ্দা কমে যাচ্ছে। কিতাব হল্ ও ইস্তে‘দাদ হাসিলের ফিকির ও মেহনত বাদ দিয়ে তারা কেবল পরীক্ষামুখী হচ্ছে। অথচ ইস্তে‘দাদ হাসিল করা ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
উর্দু ও বাংলা ভাষায় লিখিত যেসকল কিতাব ও শরাহ তালিবে ইলমদের মধ্যে কাক্সিক্ষত ইস্তে‘দাদ তৈরিতে সহায়ক, আসাতিযায়ে কেরাম তাদেরকে সেসব শরাহ ও কিতাব পড়ার পরামর্শ দেন। এই বিভাগেও ইতিপূর্বে এ ধরনের বিভিন্ন কিতাবের কথা বলা হয়েছে।