সফর ১৪২৮ || মার্চ ২০০৭

আবু তাহের - লোহাগড়া

প্রশ্ন

(ক) আমি বর্তমানে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া থানার অন্তর্গত চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। কিন্তু হেদায়া, নুরুল আনওয়ার ও তাফসীরে জালালাইন ভালোভাবে বুঝতে পারছি না। বিগত আলিম ক্লাসের শরহে বেকায়াও ভালোভাবে বুঝিনি। এর কারণ হিসেবে আমি মনে করছি শিক্ষকগণই আমাদেরকে একশ ভাগ কিতাব বুঝাতে পারছেন না। তাই উক্ত কিতাবগুলো একশ ভাগ বুঝার জন্য আমাকে কিছু পরামর্শ দানের জন্য হুজুরের কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে আমি ছাত্রদেরকে কিতাবগুলোর হক আদায় করে পড়াতে পারি।

(খ) সুনানে আরবাআর যয়ীফ হাদীসগুলো চেনার উপায় কী?

(গ) আমি ভবিষ্যতে একজন মুজতাহিদ আলেম হতে চাই এবং কুরআনের তাফসীর, হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ, ফিকহের কিতাব ও ফতোয়ার কিতাবসহ অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ লিখতে চাই। তাই আমি নিয়ত করেছি, কামিলে হাদীস বিভাগ পড়ে পরবর্তীতে সম্ভব হলে ফিকহ বিভাগে পড়ব। এখন হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল উক্ত কাজগুলো করার জন্য আমি যে পরিমাণ লেখাপড়ার নিয়ত করেছি তা যথেষ্ট, না আরও লেখা-পড়া করতে হবে? সুপরামর্শ দানে উপকৃত করবেন।

উত্তর

(ক) আপনার চিঠির উত্তরে প্রথম কথাটি হল, আপনি আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান-এই বাক্য দ্বারা আপনার পত্রের সূচনা করেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ্ তাআলাই সর্বশক্তিমান তবে এ বাক্য দ্বারা চিঠি-পত্র আরম্ভ করা সুন্নত তরিকা নয়। চিঠি-পত্র

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

দ্বারা শুরু করাই মাসনূন।

আপনার চিন্তা ও অনুভূতি মোবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে না বোঝার দায় আসাতিযায়ে কেরামের উপর আরোপ করা বেআদবী তো বটেই, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা অবাস্তবও হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিজেদের ত্রট্টটিগুলোর প্রতি নজর দেওয়ার তাওফীক দান করুন এবং আসাতিযায়ে কেরামের হুকুক ও আদাব অনুধাবন করে তা আদায় করার তাওফীক নসীব করুন। আমীন ।

প্রশ্নোক্ত কিতাবগুলো বোঝার জন্য আপনার করণীয় কী- এ প্রসঙ্গে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়ার জন্য আপনার কিতাব বোঝার যোগ্যতা সম্পর্কে জানা জরুরি। এটা আমার জানা নেই। তবে এ প্রসঙ্গে মৌলিক কথা হল, প্রথমে নাহব ছরফ ও লুগাতে আরাবিয়া এবং ইবারত বোঝার যোগ্যতা মজবুত করতে হবে। এরপর এই কিতাবগুলো যে ফন বা শাস্ত্রের- তার কিছু সহজ কিন্তু নির্ভরযোগ্য কিতাব দরসে পড়ে কিংবা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের মাধ্যমে সেই শাস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে। এরপর উপরোক্ত কিতাবগুলো পড়তে হবে এবং সঙ্গে সঙ্গে এসব কিতাবের কিছু নির্ভরযোগ্য আরবী শরহও মুতালাআয় রাখতে হবে।

(খ) জামে তিরমিযীতে সাধারণত হাদীসসমূহের সনদের মান উল্লেখ করা থাকে। সুনানে আবু দাউদের জন্য

مختصر سنن أبي داود، للمنذري

সুনানে ইবনে মাজার জন্য

مصباح الزجاجة، لشهاب الدين البوصيري

 মুতালাআ করতে পারেন। সুনানে নাসায়ীতে যদি কোনো রেওয়ায়াত থাকে, তবে সাধারণত ইমাম নাসায়ী নিজেই তা উল্লেখ করে দেন।

এই চার কিতাবের জন্য মিসরের শায়খ সাঈদ মামদূহ-এর কিতাব

التقريف بأوهام من قسم السنن إلى صحيح وضعيف.

মুতালাআ করাও উপকারী হবে। এটির كتاب الحج পর্যন্ত ছয় খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়া তাখরীজ ও শুরূহে হাদীসের দীর্ঘ কিতাবগুলোতেও সুনানে আরবাআসহ হাদীসের অন্যান্য কিাতবের হাদীস ও রেওয়ায়াতের মান উল্লেখিত থাকে। যথা

نصب الراية لأحاديث الهداية، جمال الدين الزيعلي (৭৬২ هـ)

التلخيص الحبير، ابن حجر العسقلاني (৮৫২هـ)

ইত্যাদি।

 

(গ) আপনাকে প্রথমে  শারায়েতুল ইজতিহাদ ও মাক্বামুল ইজতিহাদ সম্পর্কে খুব চিন্তাভাবনা সহকারে অধ্যয়ন করতে হবে। এরপর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন এ উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য আপনাকে কী কী করতে হবে এবং কী পরিমাণে করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আপনি উসূলে ফিকহের কিতাবসমূহে ইজতিহাদ ওতাক্বলীদ-এর আলোচনা এবং

جامع بيان العلم وفضله، ابن عبد البر (৪৬৩ هـ)

الفقيه والمتفقه الخطيب البغدادي (৪৬৩ هـ)

ও শায়খ মুহাম্মাদ আউয়ামা কৃত  أثر الحديث الشريف في اختلاف الأئمة الفقهاء  أدب الاختلاف في مسائل العلم والدين  মুতালাআ করতে পারেন। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন