যিলহজ্ব ১৪২৭ || জানুয়ারি ২০০৭

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - নোয়াখালী

প্রশ্ন

আমি একজন মাঝারি মানের ছাত্র। বর্তমানে আমি মিশকাত জামাতে পড়ি। আমাদের থানায় কোন কওমী মাদ্রাসা নেই এবং আমি ছাড়া এলাকায় কোন কওমী আলেম না থাকায় বিদআতিরা আমাদের সমাজকে বিভ্রান্ত করছেআমি কওমী মাদরাসায় পড়ার কারণে আমাকে ও আমার আব্বাকে নির্যাতন করে এবং আমাকে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। এমনকি হত্যার হুমকি পর্যন্ত তারা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান ফিতনার যুগে অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে  কাক্সিক্ষত মুক্তির পথে আনার জন্য সকল কষ্ট-নির্যাতন সহ্য করে কওমী মাদ্রাসায় পড়ছি এবং ইনশাআল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত এর উপরই কায়েম থাকব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমার সেই কাক্সিক্ষত আশার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনাকাক্সিক্ষত কিছু বিষয়। যথা (ক) কথনের অক্ষমতা। যদি  কোন স্থানে ওয়াজ বা বক্তৃতা দিতে কিংবা মানুষকে বুঝাতে যাই তখন অবশ্য বুক কাঁপে না কিন্তু মুখের জড়তার কারণে কথাই বলতে পারি না। অথচ বিদআতিরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমি আল্লাহর কাছে বহুবার নফল, ফরজ এবং তাহাজ্জুদের নামায পড়ে কান্নাকাটি করে দুআ করেছি। কিন্তু কোন ফল পাইনি। আমি সবসময় হযরত মূসা আ.-এর দুআ-

رَبِّ اشْرَحْ لِیْ صَدْرِیْ وَ یَسِّرْ لِیْۤ اَمْرِیْ وَ احْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِیْ یَفْقَهُوْا قَوْلِیْ.

পাঠ করি তথাপিও কোন ফল পাইনি। পরিশেষে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে মন চায়; কিন্তু যখনই এই ইচ্ছা জাগ্রত হয় তখনই এই আয়াতটি স্মরণে পড়ে যায়- لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللّٰهِ (খ) লিখনের অক্ষমতা। জীবনে বহুবার লেখার পিছনে বহু সময় খরচ করেছি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, অনেক সময় নিজের নামটা পর্যন্ত ভাল করে  লিখতে পারি না। এসব কারণে যখনই পড়তে বসি তখনই মনের অজান্তেই বেরিয়ে আসে দুফেঁাটা তপ্ত অশ্রম্ন। এবং ভাবি, কী হবে আমার আলেম হয়েকোন দিন ইলমের দরস দিতে পারব না। কারণ মুখের জড়তার কারণে ছাত্ররা তাকরারের সময় আমার কথা বুঝে না। অথচ আমার চেয়ে নিম্নমানের ছাত্ররা খুব সুন্দর করে তাকরার করছে। তাই বলি, আমার মত অযোগ্যের মাদরাসায় পড়ে কী লাভ হবে? এমনকি অনেক সময় পাক্কা ইরাদা হয়ে যায় যে, পড়া বাদ দিয়ে চাকরি করি কিংবা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হই, যেখানে কথা বলার প্রয়োজন নেই। এর কারণে আমি সবসময় চিন্তিত থাকি। পড়ালেখায় তেমন মন বসে না এবং স্বাস্থ্য খুব ভেঙ্গে গেছে। জনাব আব্দুল মালেক সাহেবের নিকট আমার আকুল আবেদন, আমি এখন কী করব? আমি কি মাদরাসার পড়াশোনা চালিয়ে যাব নাকি... এবং কীভাবে এই ধ্বংসাত্মক বিপদ থেকে মুক্তি পাব সু-পরামর্শ চাই এবং তিনি যেন আমার জন্য বিশেষভাবে তাহাজ্জুদের সময় দুআ করেন। আলকাউসারের সকল পাঠকপাঠিকার নিকটও এই অধম দুআপ্রার্থী। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।

উত্তর

আপনার হিম্মত প্রশংসনীয়। এই হিম্মতের সঙ্গে  হতাশার সংযোগ কীভাবে ঘটতে পারে, এটা আমি বুঝতে পারছি না। আল্লাহ তাআলা আপনাকে হিফাজত করুন এবং আপনার সকল নেক কামনা  পূরণ করুন।

হাদীস শরীফে দুআর ব্যাপারে ইসতিজালনিষেধ করা হয়েছে। ইসতিজাল-এর ব্যাখ্যা হাদীস শরীফেই এভাবে করা হয়েছে যে, দুআ করে একথা বলা, আমি দুআ করেছি কিন্তু তা কবুল হয়নি। আশা করি আপনি সালাতুল হাজত এবং رَبِّ اشْرَحْ لِیْ এর আমল জারি রাখবেন। মাঝে মাঝে  يا مبينবারবার পড়বেন। পাশাপাশি কোন বুযুর্গের নিকট থেকে কোন আমল নিয়ে তা আদায় করবেন এবং কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ইনশাআল্লাহ আপনার অসুবিধা দূর হয়ে যাবে।

আপনি যথারীতি পড়াশোনা জারি রাখুন। লেখা ও বক্তৃতা চর্চাও বাদ দিবেন না। আর সামনের জীবনে আপনি কীভাবে দরস দিবেন এই বিষয়ে এখন একদম পেরেশান না হয়ে وَ افَوِّضُ اَمْرِیْۤ اِلَی اللّٰهِ  اِنَّ اللّٰهَ بَصِیْرٌۢ بِالْعِبَادِ  বলে বিষয়টি আল্লাহর সোপর্দ করে দিন। সকালসন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়বেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ، وَقَهْرِ الرِّجَالِ.

আপনি দুআ করতে বলেছেন, আমি আপনার জন্য দুআ করছি এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও দুআ করতে থাকব। আপনিও আমাকে ও আমার সঙ্গীগণকে দুআতে শামিল করবেন।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন