মুহাররম ১৪২৯ || জানুয়ারি ২০০৮

মুহা. ইহসানুল বারী - মাছনা মাদরাসা, যশোর

প্রশ্ন

ক. আমার জানার বিষয় মাফহুমে মুখালিফ সম্পর্কে। উসূলে ফিকহ থেকে আমরা জানি, হানাফী মাযহাবে নুসূসে শরঈয়্যাহতে মফহূমে মুখালিফকে হুজ্জত মনে করা হয় না।

কিন্তু আমরা হানাফী মাযহাবের অনেক কিতাবে অনেক ইস্তিদলাল পাই যেগুলো থেকে বাহ্যত মনে হয় যে, মফহূমে মুখালিফকে হুজ্জত বানানো হয়েছে।

যেমন : হিদায়াহ এর ৩১১ পৃষ্ঠায়-

 

 

 

এই আয়াত উল্লেখ করার পর বলা হয়েছে

 

এবং ৩০৮ পৃষ্ঠায়

 

 

এই আয়াত উল্লেখের পর বলা হয়েছে

 

 

এবং ৩১৮ পৃষ্ঠায়

 

-এই নসকে আসাবা ভিন্ন অন্যদের বিবাহ-দানের অধিকার ছাবিত না হওয়ার উপর দলীল পেশ করা হয়েছে। এখন জানার বিষয় হল এ সমস্ত আলোচনা দ্বারা বাস্তবে মফহুমে মুখালিফকে দলীল বানানো হয়েছে কি না। আর বানানো হলে আমাদের মাযহাবের দৃষ্টিতে এর সমাধান কী?

 

খ. হিদায়াগ্রন্থকার অনেক হাদীসকে দলীল হিসাবে উল্লেখ করেছেন অথচ তার অনেকগুলো হাদীস নয়। আবার অনেক হাদীস ঐ লফজে পাওয়া যায় না। তাহলে এভাবে ইসতিলাল করা সহীহ হবে কি না? এবং তাঁর মতো একজন বড় ফকীহ থেকে এভাবে ইসতিদলাল করার ব্যাপারে আমরা কী জওয়াব দিতে পারি?

 

গ. আমরা এ বছর হিদায়া পড়ছি। হিদায়া এর মাসআলা ভালোভাবে অনুধাবন করার জন্য আমরা বিভিন্ন কিতাব দেখি। যেমন ফাতহুল কাদীর, নাসবুর রায়াহ, হাশিয়ায়ে ইবনে আবেদীন ইত্যাদি। তাফসীরের ক্ষেত্রে তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে কুরতুবী ইত্যাদি।

এভাবে বিভিন্ন কিতাব দেখা আমাদের জন্য লাভজনক হবে কি না। হলে এর লাভ সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে ইচ্ছুক।

উত্তর

ক. উসূলে ফিকহের বিশদ ও শক্তিশালী গ্রন্থসমূহ মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়নের পাশাপাশি ওই গ্রন্থগুলোর মাসাদিরমাআখিয-এর দিকেও যদি লক্ষ করা হয় তাহলে প্রতীয়মান হয় যে, নুসূসে শরঈয়্যাহএর মফহূম কোনো অবস্থায় গ্রহণযোগ্য হবে না-এটা হানাফী মাযহাবের উসূল নয়। যদি কারাইনে খারিজিয়্যাহ বা কারাইনে দাখিলিয়্যাহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আলোচ্য কয়েদটি ইহতিরাযী, এছাড়া এর অন্য কোনো উদ্দেশ্য বা হিকমত নেই তাহলে মফহূম হুজ্জত হিসেবে গণ্য হবে এবং এর মাধ্যমে দলীল দেওয়া যাবে। কারাইনে খারিজিয়্যাহতে ইজমা এবং ফাহমে মুতাওয়ারাছও অন্তর্ভুক্ত। আর যেখানে কারাইন দ্বারা এ কয়েদ আরোপের অন্য কোনো হিকমত প্রমাণিত হয় সেখানে তা হুজ্জত হিসেবে গণ্য হবে না।

এ প্রসঙ্গে আরেকটি কথা মনে রাখা উচিত যে, মফহূমে মুখালিফ হুজ্জত না হওয়ার অর্থ হচ্ছে আলোচ্য নসে বিপরীত দিকটি মাসকূত আনহু পর্যায়ে থাকবে। এ দিকের বিধান অন্যান্য নসে কিংবা কাওয়ায়েদে শরীয়তের মধ্যে অন্বেষণ করতে হবে।

যদি অন্যান্য নসকাওয়াইদে মুসাল্লামা দ্বারা ওই হুকুমই প্রমাণিত হয়, যা আলোচ্য নসের মাফহূম থেকে পাওয়া যাচ্ছিল তাহলে এটাও এ বিষয়ের করীনা হবে যে, এখানে মাফহুমে মুখালিফ বিবেচিত ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রশ্নোক্ত আয়াতটি উল্লেখ করা যেতে পারে। যদি মফহূমে আদদ বিবেচনায় না আনা হয় তাহলে অর্থ এই হবে যে, এখানে চারের বেশি সংখ্যার কথা অনালোচিত, কিন্তু এই মূলনীতি সর্বজন স্বীকৃত যে,

 

 

অতএব চারের অধিক সংখ্যাগুলো হুরমতের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তাহলে আলোচ্য আয়াত থেকে উপরোক্ত বিষয়টি এভাবেও পেশ করা যায় যে, বৈধতা ও হালাল হওয়ার বিধান চার পর্যন্ত পাওয়া গেল, এরপরে আর পাওয়া যায়নি।

 

খ. হিদায়া ও তার হাদীস সম্পর্কে আমি এ বিভাগেই একাধিকবার লিখেছি। অনুগ্রহপূর্বক ওই আলোচনাগুলো পড়ে নিন। এর সঙ্গে শায়খ মুহাম্মাদ আওয়ামাহ-এর কিতাব আসারুল হাদীসিশ শরীফ ফিখতিলাফিল আয়িম্মিাতিল ফুকাহা কিংবা নাসবুর রায়াহ-এর দারুল কিবলা, জিদ্দা থেকে প্রকাশিত সংস্করণে তার লিখিত মুকাদ্দিমা মুতালাআ করুন।

এ প্রসঙ্গে সারকথা হচ্ছে, তাহকীক করলে দেখা যায়, এমন রেওয়ায়েতের সংখ্যা বেশি নয়। আর যে রেওয়াতগুলো এ পর্যায়ের রয়েছে তা না সংশ্লিষ্ট বিধানে কোনোরূপ প্রভাব ফেলে আর না ছাহিবে হিদায়ার ইলম ও কামালকে প্রশ্নযুক্ত করে। কেননা, ওই বিষয়গুলোতে অন্যান্য দলীল রয়েছে আর ছাহিবে হিদায়ার সকল মাসাদির আমাদের নিকটে নেই। এ বিষয়টি খুবই যুক্তিসঙ্গত; বরং বিভিন্ন অভিজ্ঞতা থেকেও প্রমাণিত যে, আমরা যদি ওই মাসাদির পেয়ে যাই তাহলে এই রেওয়ায়াতগুলো যে শব্দে ছাহিবে হিদায়া উল্লেখ করেছেন সে শব্দেই অন্তত কাবেলে ইস্তিশহাদ সনদে পেয়ে যাব।

গ. এক দুটি কিতাব সবকের সঙ্গে নিয়মিত মুতালাআ করুন। যেমন ফাতহুল কাদীর, আলইনায়া, নাসবুর রায়াহ, (বুগয়াতুল আলমাঈমুনয়াতুল আলমাঈসহ)। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্যান্য কিতাবের মুরাজাআত করুন।

যদি ভালো স্বাস্থ্য ও বুলন্দ হিম্মতের অধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে প্রশ্নোক্ত সবগুলো কিতাবই মুতালাআ-যোগ্য। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দিন। সবকের সঙ্গে যে পরিমাণ সম্ভব হয় আলহামদুলিল্লাহ, অবশিষ্টটুকু অন্য সময় হতে পারবে।

আর এ কিতাবগুলোর বৈশিষ্ট্য, সেটা অধ্যয়ন অব্যাহত রাখলে সংক্ষিপ্তভাবে উপলব্ধিতে এসে যাবে। বিশদ আলোচনার ফুরসৎ এখন নেই। আল্লাহ তাআলা যদি তাওফীক দেন তাহলে অন্য কোনো সময় সে সম্পর্কে আরজ করব ইনশাআল্লাহ।

আরেকটি কথা, এক প্রশ্নে সাত-আট কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা না করে এক দুটি কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে সুবিধা হয়। আল্লাহ তাআলা আপনাকে ও আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন