জুমাদাল উলা ১৪৩১ || মে ২০১০

মুহাম্মাদ সালমান - মিরপুর, ঢাকা

প্রশ্ন

ক) আমি শরহে বেকায়া জামাতের একজন ছাত্র। নাহব, ছরফে বেশ দুর্বল। এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য আমি কী করতে পারি? আরবী ইবারত সহীহ-শুদ্ধভাবে পড়ার মূল নীতিমালা উল্লেখ করলে কৃতজ্ঞ হব।
খ) নবী-রাসূল, আকাবির-আওলিয়া বিশেষত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন-চরিত জানার জন্য নির্ভরযোগ্য বাংলা গ্রন্থগুলোর নাম জানতে চাই।
গ) আরবী, বাংলা, উর্দূ-ইংরেজি সব লেখায় আমার ভুল হয়ে থাকে। এ সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
ঘ) হেদায়া কিতাবের সবচেয়ে ‘জামে মানে’ শরাহ কোনটি?

উত্তর

ক) প্রশ্নোক্ত বিষয়ে আলকাউসারের বিগত সংখ্যাগুলোতে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মূল কথা হল, এই বিষয়ে দক্ষতা অনুশীলনের মাধ্যমে আসে, মৌখিক কিছু কায়দা-কানুন মুখস্থ করে নেওয়া কোনোক্রমেই যথেষ্ট নয়। নাহব-ছরফে দুর্বল-এটা অনেকটা অস্পষ্ট কথা। ঐসব বিষয়ের কোন কোন জায়গায় আপনার দুর্বলতা রয়েছে, তা নির্ধারণ করা জরুরি। তাহলে আপনার চিন্তাও স্বার্থক হবে, মেহনতও ফলপ্রসূ হবে। তবে আপনি অনতিবিলম্বে দু’টি কাজ করতে পারেন। প্রথমত : নাহব-ছরফের উপর বর্তমান সময়ে রচিত ‘আননাহবুল ওয়াযেহ’ বা এ জাতীয় কোনো কিতাব, যার উপস্থাপনাও সহজ এবং যাতে প্রতি সবকের সঙ্গে অনুশীলন রয়েছে, নির্বাচন করুন। নিজে চিন্তা-ভাবনা করে অথবা কোনো অভিজ্ঞ উস্তাদের সাহায্যে ঐ কিতাবের এমন বহসগুলো চিহ্নিত করে নিন, যা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে আপনার বেশি প্রয়োজন হবে। অথচ তাতে আপনার দুর্বলতা আছে। তারপর এক একটি বহস বুঝে শুনে পড়ুন এবং হাতে কলমে অনুশীলনের মাধ্যমে অবিরাম মেহনত জারি রাখুন। দ্বিতীয়ত : আপনার নেসাবী কিতাবসমূহের কোন একটি আরবী কিতাব প্রত্যেক সবকের সাথে বা আগে সম্ভব হলে আরবী হাশিয়াসহ গভীরভাবে মুতালাআ করবেন। অতঃপর আপনার একজন মুহসিন ও শফীক উস্তাদের কাছে গিয়ে নিয়মিত শুনাবেন। আপনি পড়বেন, আর উস্তাদ শুনে শুনে যে সব সংশোধনী ও দুর্বলতার দিক চিহ্নিত করে দিবেন, তা দূর করার চেষ্টা করবেন হতাশার কিছু নেই। এই দুই তরীকায় মেহনত করতে থাকুন। অবশ্যই সফল হবেন ইনশাআল্লাহ। খ) ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কর্তৃক অনুদিত ও প্রকাশিত হাফেয ইবনে কাসীর রাহ.-এর ‘আলবিদায়া ওয়াননিহায়া’য় সাধারণ ইতিহাসের পাশাপাশি নবী-রাসূল ও আকাবির-আওলিয়ার জীবনী রয়েছে। আর শুধু সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়ে বাংলাভাষায় রচিত কবি গোলাম মোস্তফার ‘বিশ্বনবী’, প্রফেসর আবদুল খালেকের ‘সাইয়িদুল মুরসালীন’ এর কথা অনেকে উল্লেখ করে থাকেন। তদ্রূপ আরবী ও উর্দু ভাষার বেশ কিছু মৌলিক ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থও বাংলায় অনুদিত হয়েছে। তন্মধ্যে ইবনুল কাইয়্যিম রাহ.-এর যাদুল মাআদ, শিবলী নুমানী ও সাইয়েদ সুলায়মান নদভী রাহ.-এর ‘সীরাতুন্নবী’ ও ইদরীস কান্ধলভী রাহ.-এর ‘সীরাতুল মোস্তফা’, মাওলানা আবদুর রউফ দানাপুরীর ‘আসাহহুস সিয়ার’, মাওলানা আবুল হাসান আলী মিয়া নদভী রাহ.-এর ‘নবীয়ে রহমত’ এবং মাওলানা সফীউর রহমান মুবারকপুরীর ‘আররহীকুল মাখতূম’ ইত্যাদি সংগ্রহে রাখার মতো গ্রন্থ। গ) ‘লেখায় ভুল হয়ে থাকে’ বলে সম্ভবত বানানের ভুলই আপনার উদ্দেশ্য। তাই যদি হয় তবে এই সমস্যার সমাধান একটিই। তা হল, যা পড়বেন, মনোযোগের সাথে পড়ুন। যে ভাষাতেই হোক, প্রতিটি শব্দ পড়ার সময় খেয়াল করবেন যেন, এই শব্দটি আপনি মুখস্থও লিখতে পারেন। শুধু এতটুকু কাজ করলেই আপনার এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এরপরও কিছু জটিলতা বাংলা বানানের ক্ষেত্রে থেকে যেতে পারে। সে জন্য বাংলা একাডেমীর অভিধান বা অন্য কোনো অভিধানের সাহায্য নিতে থাকুন। সাথে প্রতিদিন তিন-চারটি করে শব্দ বানানশুদ্ধির জন্য নিয়মিত লিখুন এবং হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুমের ‘এসো কলম মেরামত করি’ থেকে বানান সংক্রান্ত লেখাগুলো ভালো করে পড়ুন। এভাবে ধীরে ধীরে এই দুর্বলতাও কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশা রাখি। ঘ) এই সম্পর্কে আলকাউসারের বিগত সংখ্যাগুলোতে বেশ কয়েকবার লেখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত লিখিত শরাহগুলোর মধ্যে ‘ফাতহুল কাদীর’ কে একটি অনন্য শরাহ বলা যায়। এর সাথে কিতাব হলের জন্য আল্লামা আইনী রাহ.-এর ‘আলবিনায়া’ যা ষোল খণ্ডে মুলতান থেকে ছেপেছে এবং সংক্ষেপে ‘মতলব’ বোঝার জন্য ‘ফাতহুল কাদীর’-এর টীকায় প্রকাশিত বাবেরতীকৃত আলইনায়া’ও মুতালাআয় রাখতে পারেন। আর মুহাক্কিক আলেমদের জন্য পাঁচ খণ্ডে মুদ্রিত ইবনে আবিল ইয্‌ হানাফী রাহ,.-এর ‘আততানবীহ আলা মুশকিলাতিল হিদায়া’ অধ্যয়নযোগ্য।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন