রবিউল আখির ১৪৩০ || এপ্রিল ২০০৯

মুহাম্মাদ শাহেদ মাহমুদ - শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ

প্রশ্ন

আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া। তাঁর অনুগ্রহে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। অনেক কিতাব পড়ে থাকলেও জিহাদের মাসায়েল সম্পর্কে তেমন অবগত হতে পারিনি। তাই এমন কিছু কিতাবের নাম জানাবেন, যার দ্বারা উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। না থাকলে হযরতের নিকট আবেদন, বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কিতাব লিখতে।

 

 

খ) আমি মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে প্রকাশিত কিতাবুল জিহাদ-এ আপনার লেখা ভূমিকা  পড়েছি। এখন আমার প্রশ্ন, আজ দেখা যায়, তাবলীগ জামাতের সাধারণ ব্যক্তি থেকে নিয়ে মুরুবিবগণ পর্যন্ত জিহাদের আয়াত ও হাদীস তাবলীগের ফযিলত, গুরুত্ব বর্ণনার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া সাহাবাদের জিহাদী সফরের ইতিহাসকে এমনভাবে বর্ণনা করেন যেন সাহাবাগণ রা. কেবল দাওয়াতের কাজই করেছেন। জিহাদ করেননি। তাই এই বিশাল জামাত কুরআন, হাদীসের অপব্যাখ্যার গুনাহে জড়িত নয় কি? এজন্য আলেম সমাজের কর্তব্য কী?

 

 

 

 

 

উত্তর

উস্তাদ মুহতারাম হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাকমিলা ফাতহুল মুলহিমে (খন্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৪) জিহাদের অর্থ ও তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উল্লেখ করে দুটি কিতাবের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। 

আহাম্মিয়্যাতুল জিহাদ ফী নাশরিদ দাওয়াতিল ইসলামিয়া ড. আলী ইবনে নুফাই;আশশারীয়াতুল ইসলামিয়া ওয়াল-কানূনুদ দুওয়ালিয়্যুল আম ড. আব্দুল কারীম যাইদান। 

এটা তাঁর মাজমূআতু বুহূছিন ফিকহিয়্যাতে শামিল রয়েছে। 

দারুল মানারা, জিদ্দা থেকে একটি কিতাব প্রকাশিত হয়েছে আলজিহাদু ফী সাবীলিল্লাহ হাকীকাতুহু ওয়া-গায়াতুহু, আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলকাদেরী। কিন্তু এটা তেমন উন্নতমানের গ্রন্থ নয়। 

বস্ত্তত জিহাদের অর্থ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং এর মৌলিক মাসায়েল সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করাই হল প্রয়োজনীয় বিষয়। এ বিষয়ে আয়াতুল জিহাদ আহাদীসুল জিহাদ মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করা জরুরি। সংক্ষিপ্ত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর এবং শরহে হাদীসের আলোকে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাগাযী, খুলাফায়ে রাশেদীনের গযওয়াসমূহ এবং সাহাবা-তাবেয়ীন যুগের গযওয়াসমূহ মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করা চাই। এরপর খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর মুসলিহীনে উম্মাহর জীবনী এবং তাদের দাওয়াত ও জিহাদের ইতিহাসও অধ্যয়ন করা জরুরি। তাহলে এ বিষয়ে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ ধারণা অর্জন করা সম্ভব হবে। সব ধরনের প্রান্তিক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য উপযুক্ত অধ্যয়ন ও বিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের সাহচর্য গ্রহণের বিকল্প নেই।

মাসায়িলের জন্য নির্ভরযোগ্য ফিকহগ্রন্থের রাহনুমায়ী জরুরি। যেমন শরহুস সিয়ারিল কাবীর সারাখসী, আলমুহীতুল বুরহানী, ফাতহুল কাদীর, রদ্দুল মুহতার এবং তার মৌলিক সূত্র-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকও অধ্যয়ন করা চাই।

তবে শর্ত হল ফিকহে মুদাল্লাল ও ফিকহে মুকারান অধ্যয়নের ইসতিদাদ থাকতে হবে।

আপনি এ বিষয়ে লিখতে বলেছেন, দুআ করুন, আল্লাহ তাআলা যেন, কলব, কলম ও সময়ে বরকত দান করেন, সিহহত, আফিয়ত এবং হায়াতে তাইয়্যেবা তবীলা নসীব করেন। আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ হলে এ বিষয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।

আমার জানা মতে জিহাদের পারিভাষিক অর্থে যেসব আয়াত ও হাদীস এসেছে মুরববীরা  সেগুলোর অর্থ শুধু দাওয়াত বলেন না। তবে তারা সাবীলুল্লাহর ফযীলত বিষয়ক নুসূখের ক্ষেত্রে প্রশস্ততা অবলম্বন করেন। আর এটা তো স্পষ্ট যে, লুগাত ও উরফ-দুই দিক থেকেই সাবীলুল্লাহ শব্দটা ব্যাপক। (দেখুন রফীক আমজাদ কাসেমীকৃত আওয়া লাইসা ফী সাবীলিল্লাহি ইল্লা মান কুতিল।) কিন্তু যেখানে পূর্বাপর দ্বারা জিহাদের বিশেষ অর্থ (ফিকহী পরিভাষার জিহাদ) নির্ধারিত হয়ে যায় সেখানে সম্প্রসারিত অর্থ গ্রহণের সুযোগ নেই।

জিহাদ দাওয়াতেরই একটি প্রকার। মানুষকে দ্বীনের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করার অর্থ জিহাদকে অস্বীকার করা হয় না কিংবা সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের ঘটনাবলি বিকৃত করে দাওয়াতের ঘটনাও বানানো হয় না। আপনি হযরত মাওলানা ইউসুফ ছাহেব রাহ.-এর কিতাব হায়াতুস সাহাবা অধ্যয়ন করুন। তাতে দাওয়াত, হিজরত, নুসরত, জিহাদ ইত্যাদির জন্য ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায় আছে। জিহাদের ওয়াকেআতের উপর দাওয়াত শিরোনাম লাগানো হয়নি।

এরপর থাকল আম মানুষের অতিরঞ্জন সেটা হিকমতের সঙ্গে সংশোধনের চেষ্টা করা কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে একটি প্রচেষ্টা হল, মাদরাসাগুলোর মানগত উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া। এ বিষয়ে তাবলীগী ভাইরাও আরো অধিক সহযোগিতা করুন। যাতে অধিক পরিমাণে যোগ্যতাসম্পন্ন আলিম তৈরি হয় এবং যাতে যোগ্যতাসম্পন্ন ও উন্নত আখলাকের অধিকারী মুদাররিসের প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি একটি সমন্বিত নিয়মের অধীনে তাবলীগের মারকাযসমূহে এবং সাল ও তিন চিল্লার জামাতগুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন আলিমের অভাবও পূরণ হয়।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন