মুহাম্মাদ হাসান - কেরানীগঞ্জ

প্রশ্ন

আমি একজন হেদায়াতুন্নাহুর ছাত্র। উক্ত কিতাবের কয়েকটি মাসআলা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাই প্রিয় বন্ধু আলকাউসারের সহযোগিতায় মহোদয়ের শরণাপন্ন হলাম। আশা রাখি প্রশান্তি পাব।

১. এই কিতাবের ৩নং পৃষ্ঠায় আছে-

أما المقدمة ففي المبادي التي يجب تقديمها

এখানে মুকাদ্দামা ও মাবাদী উভয়ের মাফহুম এক তাই যরফিয়্যাতুশ শাই লিনাফসিহ লাযেম আসে। এর জবাব আরবী-উর্দু শরাহগুলোতে এভাবে দেওয়া হয়েছে যে, মুকাদ্দামা দ্বারা আলফাযে মাখছুছা এবং মাবাদী দ্বারা মাআনী মাখছুছা উদ্দেশ্য। অথবা এর বিপরীতও হতে পারে। আমার প্রশ্ন হল : ক) আলফাযে মাখছুছা ও মাআনী মাখছুছা দ্বারা বাস্তবে আমি কী বুঝতে পারি?

খ) বিষয়টা তো কোনো ফরযী বিষয় নয়। মুসান্নিফ নিজেই বলেছেন, ‘‘ওয়ারাততাবতুহু আলা মুকাদ্দিমাতিন ...’’ তাহলে তারতীব দেওয়া একটি বিষয় আলফাযে মাখছুছাও হতে পারে আবার তার বিপরীতও হতে পারে কীভাবে?

গ) কোনো কোনো উস্তাদ বলেন যে, মুকাদ্দিমাটি আম অর্থাৎ মুকাদ্দামাতুল ইলমও হতে পারে আবার মুকাদ্দিমাতুল কিতাবও হতে পারে। আর মাবাদী খাছ শুধু মুকাদ্দিমাতুল ইলম এর জন্য। তাই কোনো প্রশ্ন থাকে না।

এক্ষেত্রে আমার জানার বিষয় হল, মুকাদ্দিমাতুল ইলম ও মুকাদ্দিমাতুল কিতাব বাস্তবে কোন জিনিসগুলো। কিতাবে প্রদত্ত সংজ্ঞা থেকে পূর্ণ বুঝা যাচ্ছে না। আর মাবাদী আশারা যাকে বলা হয় তা কি মুকাদ্দিমাতুল ইলম-এর অন্তর্ভুক্ত না দুটোরই?

ঘ) আবার কোনো উস্তাদ বলেন, এখানে মুকাদ্দিমা শব্দটি শাব্দিক অর্থে ব্যবহৃত। অর্থাৎ যা কিছুই প্রথমে আলোচনা করা হবে অথবা আলোচনার জন্য স্থান বরাদ্ধ থাকবে তাই মুকাদ্দিমা। অতএব এখানে মুকাদ্দিমা বা অগ্রকথার স্থানে মাবাদীর কিছু অংশ আলোচনা করেছেন।

কিন্তু এই জবাবের সাথে আমি একমত নই এজন্য যে, তা কোনো কিতাবে পাইনি। এছাড়া তারতীবকৃত বস্ত্তর অস্তিত্ব থাকা তো জরুরি।

ঙ) আবার কোনো কোনো উস্তাদ বলেন, কাওয়ায়েদ এর আলোকে উভয় জবাব সহীহ। তাই আমি কোনটি মানব?

২. ১৭ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, তারকীবের জন্য শর্ত হল তারকীবে ইসনাদী না হওয়া। যেমন-شاب قرناها

 বাক্যটি ফিল ও ফায়েল দ্বারা গঠিত হয়েছে তাই তা মাবনী। এখন প্রশ্ন হল-حضر موت

অর্থাৎ حضر موت صالح

এ বাক্যটিও তো তারকীবে ইসনাদী দ্বারা গঠিত। সেটা গায়রে মুনছারিফ কেমন করে হল?

মহোদয়ের কাছে আশা রাখি, সব কটি প্রশ্নের বিস্তারিত সমাধান দিয়ে পেরেশানি দূর করবেন।

আল্লাহ তাআলা আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।


উত্তর

১. অত্যন্ত ধৈর্য্য ব্যয় করে আপনার চিঠিটা পড়লাম এবং আরো ধৈর্য্য ধারণ করে তা প্রকাশও করছি। বিষয়বস্ত্ত বুঝে আসার পর শাব্দিক ঘোরপ্যাচে সময় নষ্ট করা উচিত নয়। সময় অতি মূল্যবান এবং তাকে ফলপ্রসূ কাজে ব্যয় করা কর্তব্য। আমার দরখাস্ত এই যে, যখন আপনি এই সব চিন্তা-ভাবনার জন্য সময় পাবেন তো সময়টা এই সব কাজে ব্যয় না করে হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ-এর কিতাব আতত্বরীক ইলাল কুরআন অধ্যয়ন করবেন এবং সে কিতাবের আলোকে কুরআন মজীদের আয়াতসমূহে নাহবী কায়েদা-কানূন প্রয়োগ করে আয়াতের অর্থ ও মর্ম বোঝার চেষ্টা করবেন।

আরো সময় থাকলে তাঁর কিতাব আততামরীনুল কিতাবীর সাহায্যে ইনশা চর্চা করবেন। এর মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ আপনার ইলম ও ফাহমে বরকত হবে এবং ইসতিদাদ তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

আপনার কোনো কোনো বাক্য থেকে কিল্লতে আদবের রেশ পাওয়া যায় যেমন-এই বাক্যটি-কিন্তু এ জওয়াবের সঙ্গে আমি একমত নই এজন্য যে, তা কোনো কিতাবে পাইনি!!

আমি বলি না যে, ইচ্ছাকৃতভাবে আপনি এমন করেছেন, কিন্তু সতর্ক না করে দিলে ইসলাহ কীভাবে হবে? এজন্য বিষয়টার দিকে শুধু একটুখানি ইশারা করে দিলাম।

২. حضر موت শব্দের যবত করতে গিয়ে ইয়াকুত হামাভী (৬২৬ হি.) মুজামুল বুলদান (খন্ড : ২, পৃষ্ঠা : ৩১৩) গ্রন্থে লেখেন-

بالفتح ثم السكون وفتح الراء والميم

অর্থাৎ উচ্চারণটা হল হাদরা মাওত। তাহলে এটা জুমলায়ে ফিলিয়্যাহ হল? এরপর কী দলীলের ভিত্তিতে এর তরজমা حضر موت صالح করেছেন?

কোনো নবী সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য দলীল ছাড়া কোনো কিছু বলে দেওয়া ঠিক নয়।

বুলদান বিষয়ক গ্রন্থাদিতে এবং লুগাত-এর বিস্তারিত গ্রন্থসমূহে এই শব্দের তাহকীক দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে যে, শব্দটা গায়রে মুনসারিফ হওয়াই নির্ধারিত নয়।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ নেয়ামতুল্লাহ ফরীদী - ফরিদাবাদ মাদরাসা

প্রশ্ন

...


উত্তর

আপনার প্রশ্ন পেয়েছি, কিন্তু যেহেতু তা সুওয়ালনামা আকারে বড়দের প্রতি এক অভিযোগনামা। তাই তা প্রকাশ করা সমীচীন মনে হল না। আপনার কাছে দরখাস্ত এই যে, আপনি মাওলানা যায়েদ মাজাহেরী নদভীকৃত ইসলামী হুকূমত আওর দুসতূরে মামলাকাত (যা হাকীমুল উম্মত রাহ.-এর গ্রন্থাদি এবং তাঁর খুতবাত ও মালফূযাত থেকে নির্বাচিত বিষয়বস্ত্তর দ্বারা প্রস্ত্তত করা হয়েছে) অধ্যয়ন করুন।

কিতাবুল জিহাদ ইবনুল মুবারক এর অনুবাদের শুরুতে আমার লিখিত ভূমিকাটিও অধ্যয়ন করুন। এরপর যদি কোনো ইলমী প্রশ্ন বাকি থাকে তাহলে সে সম্পর্কে লিখবেন। ইনশাআল্লাহ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আর তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বিষয় জানতে চাইলে সাক্ষাতে আলোচনা করতে পারেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ এবং দ্বীনী গায়রত দান করুন। আমীন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শাহেদ মাহমুদ - শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ

প্রশ্ন

আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া। তাঁর অনুগ্রহে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। অনেক কিতাব পড়ে থাকলেও জিহাদের মাসায়েল সম্পর্কে তেমন অবগত হতে পারিনি। তাই এমন কিছু কিতাবের নাম জানাবেন, যার দ্বারা উক্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। না থাকলে হযরতের নিকট আবেদন, বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কিতাব লিখতে।

 

 

খ) আমি মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে প্রকাশিত কিতাবুল জিহাদ-এ আপনার লেখা ভূমিকা  পড়েছি। এখন আমার প্রশ্ন, আজ দেখা যায়, তাবলীগ জামাতের সাধারণ ব্যক্তি থেকে নিয়ে মুরুবিবগণ পর্যন্ত জিহাদের আয়াত ও হাদীস তাবলীগের ফযিলত, গুরুত্ব বর্ণনার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে থাকেন। তাছাড়া সাহাবাদের জিহাদী সফরের ইতিহাসকে এমনভাবে বর্ণনা করেন যেন সাহাবাগণ রা. কেবল দাওয়াতের কাজই করেছেন। জিহাদ করেননি। তাই এই বিশাল জামাত কুরআন, হাদীসের অপব্যাখ্যার গুনাহে জড়িত নয় কি? এজন্য আলেম সমাজের কর্তব্য কী?

 

 

 

 

 

উত্তর

উস্তাদ মুহতারাম হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম তাকমিলা ফাতহুল মুলহিমে (খন্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ১৪) জিহাদের অর্থ ও তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য উল্লেখ করে দুটি কিতাবের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। 

আহাম্মিয়্যাতুল জিহাদ ফী নাশরিদ দাওয়াতিল ইসলামিয়া ড. আলী ইবনে নুফাই;আশশারীয়াতুল ইসলামিয়া ওয়াল-কানূনুদ দুওয়ালিয়্যুল আম ড. আব্দুল কারীম যাইদান। 

এটা তাঁর মাজমূআতু বুহূছিন ফিকহিয়্যাতে শামিল রয়েছে। 

দারুল মানারা, জিদ্দা থেকে একটি কিতাব প্রকাশিত হয়েছে আলজিহাদু ফী সাবীলিল্লাহ হাকীকাতুহু ওয়া-গায়াতুহু, আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ আলকাদেরী। কিন্তু এটা তেমন উন্নতমানের গ্রন্থ নয়। 

বস্ত্তত জিহাদের অর্থ, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং এর মৌলিক মাসায়েল সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করাই হল প্রয়োজনীয় বিষয়। এ বিষয়ে আয়াতুল জিহাদ আহাদীসুল জিহাদ মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করা জরুরি। সংক্ষিপ্ত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর এবং শরহে হাদীসের আলোকে। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাগাযী, খুলাফায়ে রাশেদীনের গযওয়াসমূহ এবং সাহাবা-তাবেয়ীন যুগের গযওয়াসমূহ মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করা চাই। এরপর খিলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর মুসলিহীনে উম্মাহর জীবনী এবং তাদের দাওয়াত ও জিহাদের ইতিহাসও অধ্যয়ন করা জরুরি। তাহলে এ বিষয়ে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ ধারণা অর্জন করা সম্ভব হবে। সব ধরনের প্রান্তিক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য উপযুক্ত অধ্যয়ন ও বিজ্ঞ ব্যক্তিত্বের সাহচর্য গ্রহণের বিকল্প নেই।

মাসায়িলের জন্য নির্ভরযোগ্য ফিকহগ্রন্থের রাহনুমায়ী জরুরি। যেমন শরহুস সিয়ারিল কাবীর সারাখসী, আলমুহীতুল বুরহানী, ফাতহুল কাদীর, রদ্দুল মুহতার এবং তার মৌলিক সূত্র-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকও অধ্যয়ন করা চাই।

তবে শর্ত হল ফিকহে মুদাল্লাল ও ফিকহে মুকারান অধ্যয়নের ইসতিদাদ থাকতে হবে।

আপনি এ বিষয়ে লিখতে বলেছেন, দুআ করুন, আল্লাহ তাআলা যেন, কলব, কলম ও সময়ে বরকত দান করেন, সিহহত, আফিয়ত এবং হায়াতে তাইয়্যেবা তবীলা নসীব করেন। আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ হলে এ বিষয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।

আমার জানা মতে জিহাদের পারিভাষিক অর্থে যেসব আয়াত ও হাদীস এসেছে মুরববীরা  সেগুলোর অর্থ শুধু দাওয়াত বলেন না। তবে তারা সাবীলুল্লাহর ফযীলত বিষয়ক নুসূখের ক্ষেত্রে প্রশস্ততা অবলম্বন করেন। আর এটা তো স্পষ্ট যে, লুগাত ও উরফ-দুই দিক থেকেই সাবীলুল্লাহ শব্দটা ব্যাপক। (দেখুন রফীক আমজাদ কাসেমীকৃত আওয়া লাইসা ফী সাবীলিল্লাহি ইল্লা মান কুতিল।) কিন্তু যেখানে পূর্বাপর দ্বারা জিহাদের বিশেষ অর্থ (ফিকহী পরিভাষার জিহাদ) নির্ধারিত হয়ে যায় সেখানে সম্প্রসারিত অর্থ গ্রহণের সুযোগ নেই।

জিহাদ দাওয়াতেরই একটি প্রকার। মানুষকে দ্বীনের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করার অর্থ জিহাদকে অস্বীকার করা হয় না কিংবা সাহাবায়ে কেরামের জিহাদের ঘটনাবলি বিকৃত করে দাওয়াতের ঘটনাও বানানো হয় না। আপনি হযরত মাওলানা ইউসুফ ছাহেব রাহ.-এর কিতাব হায়াতুস সাহাবা অধ্যয়ন করুন। তাতে দাওয়াত, হিজরত, নুসরত, জিহাদ ইত্যাদির জন্য ভিন্ন ভিন্ন অধ্যায় আছে। জিহাদের ওয়াকেআতের উপর দাওয়াত শিরোনাম লাগানো হয়নি।

এরপর থাকল আম মানুষের অতিরঞ্জন সেটা হিকমতের সঙ্গে সংশোধনের চেষ্টা করা কর্তব্য। এ প্রসঙ্গে একটি প্রচেষ্টা হল, মাদরাসাগুলোর মানগত উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া। এ বিষয়ে তাবলীগী ভাইরাও আরো অধিক সহযোগিতা করুন। যাতে অধিক পরিমাণে যোগ্যতাসম্পন্ন আলিম তৈরি হয় এবং যাতে যোগ্যতাসম্পন্ন ও উন্নত আখলাকের অধিকারী মুদাররিসের প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি একটি সমন্বিত নিয়মের অধীনে তাবলীগের মারকাযসমূহে এবং সাল ও তিন চিল্লার জামাতগুলোতে যোগ্যতাসম্পন্ন আলিমের অভাবও পূরণ হয়।

শেয়ার লিংক