ইবনে আবদুল হাকীম - খুলনা

প্রশ্ন

হুজুর, আমি জালালাইন, হিদায়া ও অন্যান্য কিতাব পড়ি। আলহামদুলিল্লাহ, ইবারত বিশুদ্ধভাবে পড়তে পারি এবং তারকীবও বুঝে এসে যায়। মুফরাদাত-এর অর্থও বুঝতে পারি এবং মনে হয় যে, বিষয়বস্তুও বুঝতে পেরেছি। সহপাঠীদের সাথে তাকরারও করি, কিন্তু যখন উস্তাদকে শোনাতে যাই তখন তিনি বলেন যে, তুমি আলোচনাটা যেভাবে বুঝেছ তা সঠিক নয়। অনুগ্রহ করে জানাবেন, এখন আমি কী করতে পারি? তারকীব বোঝার পরও আলোচনা সঠিকভাবে কেন বুঝতে পারছি না?

উত্তর

যথার্থ প্রশ্ন। আজকাল ছাত্ররা ব্যাপকভাবে এ অসুবিধার শিকার হচ্ছে। এর একাধিক কারণ রয়েছে। যথা : ১. নাহবী তারকীব অসম্পূর্ণ বোঝা। অনেক সময় এমন হয় যে, তারকীব বুঝেছেন বলে আপনার মনে হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে বোঝেননি। শুধু ইবারত সহীহ পড়তে পারা যায়-এ পরিমাণ নাহবী জ্ঞান সঠিকভাবে তারকীব বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এজন্য নাহবের সঙ্গে আরো অধিক মুনাসাবাত প্রয়োজন। ২. লোগাতের জ্ঞান অসম্পূর্ণ হওয়া। বিষয়বস্তু বোঝার জন্য শুধু শব্দার্থ জানা যথেষ্ট নয়। লুগাতের আরবী কিতাবসমূহের সাহায্যে ‘লফয’ ও ‘তা’বীরে’র উদ্দিষ্ট অর্থ নির্ণয় করার অভ্যাস করাও প্রয়োজন। ৩. উপস্থাপনা-ভঙ্গির সঙ্গে পরিচয় না থাকা। কোনো ইবারতের মর্মোদ্ধারের জন্য ছরফী তাহকীক, নাহবী তাহকীক ও মুফরাদাতের ইলম থাকাও যথেষ্ট নয়। আরবী ভাষার উপস্থাপন-ভঙ্গির সঙ্গেও পরিচয় থাকতে হয়। দেখুন, এ প্রসঙ্গে ইলমে বয়ানে যেসব আলোচনা আছে সেগুলো বোঝারও প্রয়োজন আছে, কিন্তু আমি এখানে তা বলচি না। আমার উদ্দেশ্য হল আরবী ভাষায় একটি ভাব কীভাবে প্রকাশ করে সে সম্পর্কে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এটা এমন এক জিনিস যে, ইবারতের মৌলিক শব্দগুলোর অর্থ জানা থাকলে, নাহবী তারকীব না বুঝলেও ইবারতের সহজ-সরল অর্থ বুঝে এসে যায়। এজন্য ইবারত বোঝার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ভাষার ভাবপ্রকাশের ভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আরবী কিতাব সম্পর্কে কথা হচ্ছে তাই বলতে পারি যে, আরবী আদব বা আরাবিয়্যাতের সঙ্গে পরিচিত হওয়া ইবারতের ভাবার্থ বোঝার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক বিষয়। আরবী আদবের প্রাণই হচ্ছে ‘আরাবিয়্যতের যওক’। আল্লাহপ্রদত্ত মেধা ও রুচি তো প্রথম শর্ত। এটা থাকলে অবশিষ্ট উন্নতির জন্য এই মেহনত করুন যে, ‘আত-তরীক ইলাল আরাবিয়্যা’ দ্বারা উস্তাদ ও তালিবে ইলম উভয়ে সহীহ তরীকায় নিজ নিজ মেহনত জারী রাখুন। ‘আরবী আদব’ শব্দ থেকে এই ভুল ধারণা করবেন না যে, আমি আপনাকে ‘আদীব’ হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি বা বলতে চাচ্ছি যে, ইবারত বোঝার জন্য আপনার প্রচলিত ইলমে আদব শিক্ষা করা জরুরি। না এমন নয়। আফসোস, আমি আপনাকে সম্পূর্ণরূপে বিষয়টি বোঝাতে পারিনি। আসলে তা পত্রিকার পাতায় লিখে বোঝানোও যায় না, এটা হচ্ছে সামনে বসিয়ে হাতে কলমে বোঝানোর বিষয়। ৪. চতুর্থ যে জিনিসটি কিতাব বোঝার জন্য প্রয়োজন তা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ফনের সঙ্গে মুনাসাবাত। কিতাবটি যে ফনের সে ফনের সঙ্গে অপরিচিতি দূর হয়ে ইসতিলাহাত, কাওয়াইদ ও মওযূআত-এর সঙ্গে মুনাসাবাত পয়দা হয়ে যাওয়া জরুরি। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ফনের সঙ্গে মুনাসাবাত তো কিতাবের দ্বারা হবে এখন কিতাবই যদি বুঝে না আসে? তাছাড়া ফনের প্রথম কিতাব ‘হল’ হবে কীভাবে? এই প্রশ্ন এজন্য ঠিক নয় যে, ফনের সঙ্গে মুনাসাবাত শুধু কিতাব দ্বারা হয় না, আর আমরা এখানে শুধু ফনের প্রথম কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করছি না। কিতাব বোঝার ক্ষেত্রে শেষোক্ত বিষয় দুটির প্রয়োজন অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আর এই দুই বিষয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শফীক ও বা-যওক উস্তাদের সোহবত। উস্তাদের সঙ্গে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক বা দরসগাহের সম্পর্ক যথেষ্ট নয়। আপনি লিখেছেন যে, ‘কিতাবের কোনো সন্তান উস্তাদকে শোনালে তিনি বলেন, তুমি সঠিকভাবে বিষয়টি বুঝতে পারনি।’ আমার পরামর্শ এই যে, আপনি ওই উস্তাদের সঙ্গেই আপনার ইলমী তাআল্লুক গড়ে তুলুন। তাঁর নিকটে বারবার যান এবং বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার বোঝা কেন সঠিক নয়, কোথায় ভুল হওয়ার কারণে আপনার বোঝাটা সঠিক হচ্ছে না এবং কোন বিষয়টি অনুধাবন না করার কারণে সঠিক ভাবার্থ বুঝতে পারছেন না। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।

শেয়ার লিংক

আবু সালেহ মুহাম্মাদ মুসা - মিরপুর, ঢাকা

প্রশ্ন

আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ একটি খুতবা শুনে এসেছি। কিছু দিন আগে কোনো এক কাজে ইমাম বায়হাকীর ‘দালাইলুন নুবুওয়াহ’ দেখার প্রয়োজন হয়েছিল। তাতে (৫/২৪১-২৪২) খুতবাটি দেখতে পেলাম। ইমাম বায়হাকী সনদসহ উল্লেখ করেছেন যে, গযওয়ায়ে তবুকের সময় তবুকে পৌঁছার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবাটি প্রদান করেছিলেন। তবে দালাইলুন নুবুওয়াহর টীকাকার হাফেয ইবনে কাছীর থেকে এই রেওয়ায়েত সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেন, জানার বিষয় এই যে, খুতবাটি হাদীস হিসেবে বর্ণনা না করে নিছক খুতবা হিসেবে পাঠ করা যাবে কি না? হাফেয ইবনে কাছীর রাহ.-এর মন্তব্য ‘ওয়াফীহি নাকারাতুন’-এর কারণে কিছুটা সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন এবং হায়াতে তাইয়েবা নছীব করুন। আমীন।

উত্তর

আমরা দালাইলুন নুবুওয়াহ ও আলবিদায়াহ ওয়ান নিহায়া (ইবনে কাছীর) দেখেছি। উপরোক্ত খুতবা হাদীস হিসেবে উল্লেখ না করে শুধু খুতবা হিসাবে পাঠ করতে অসুবিধা নেই। এর বক্তব্য সহীহ। ‘ফীহি নাকারাতুন’-এর সম্পর্ক খুৎবাটির পূর্ণ কাঠামো এবং এভাবে তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, খুতবার বক্তব্য সহীহ হওয়া বা না হওয়ার সঙ্গে নয়। অবশ্য শেষ শব্দটি এর পরিবর্তে পড়া উচিত।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রফী উদ্দীন রাফি - চাটখিল, নোয়াখালী

প্রশ্ন

আমার এক বোন লন্ডনে থাকে, সে ইসলামী বইপত্র পাঠে আগ্রহী। এজন্য ইংরেজি ভাষার কিছু ধর্মীয় বইয়ের নাম জানতে চেয়েছে। আপনার কাছে নির্ভরযোগ্য কিছু বইয়ের নাম জানতে চাচ্ছি। অনুগ্রহ করে বইয়ের নাম জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

এ উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত বইগুলো উপকারী হবে ইনশাআল্লাহ। ১. ইসলাম ক্যায়া হ্যায় (What Islam Is), মাওলানা মুহাম্মাদ মানযুর নু’মানী রাহ. ২. দ্বীন ও শরীয়ত (Islamic Faith and Practice), মাওলানা মুহাম্মাদ মানযুর নু’মানী রাহ. ৩. আরকানে আরবাআ (The Four Pillers of Islam), মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদাভী ৪. উসওয়ায়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (The ways of the Holy Prophet Muhammad (Peach be upon him)), ডা. মুহাম্মাদ আবদুল হাই আরেফী রাহ. ৫. তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন (Ma’ariful Quran), মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.। ৬. নবীয়ে রহমত (Muhammad Rasulullah) মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদাভী ৭. তারীখে দাওয়াত ওয়া আযীমত (Saviours of Islamic Spirit), মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদাভী ৮. মাআরিফুল হাদীস (Meaning and Message of the traditions), মাওলানা মুহাম্মাদ মানযুর নু’মানী রাহ. ৯. ইসলাম আওর জিদ্দত পছন্দী (Islam and Modernism), মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী। ১০. হুজ্জিয়্যতে হাদীস (The authority of Sunnah), মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ১১. The glorious Caliphate, সাইয়েদ আতহার হুসাইন ১২. কুরআন আপ ছে ক্যায়া কেহতা হ্যায় (The Quran and you), মাওলানা মুহাম্মাদ মনযুর নু’মানী রাহ. ১৩. বেহেশতী যেওর, (Heavenly Ornaments), হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ. ১৪. মালাবুদ্দা মিনহু (Essential Islamic Knowledge), কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রাহ. ১৫. ইখতিলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম (Differences in Ummah and the Straight Path), মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ. ১৬. The legal status of following a Madhab, মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী ১৭. Comtemporary Fatawaa, প্রাগুক্ত ১৮. Islahi Khutbaat Discourses on Islamic way of Life, প্রাগুক্ত ১৯. First Things of First, খালেদ বেগ। আরো জানার জন্য স্থানীয় হক্কানী উলামায়ে কেরামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে এবং ইন্টারনেটে ‘মাসিক আলবালাগ ইন্টারন্যাশনাল ও মাসিক আলফারূক, করাচী ভিজিট করা যেতে পারে।

শেয়ার লিংক

ইবনে সুফিয়ান - চাদপুর

প্রশ্ন

আমি নূরুল আনওয়ার জামাতের তালিবে ইলম। ফিকহ ও উসূলে ফিকহ সম্পর্কে আমার আগ্রহ আছে। আমি উসূলে ফিকহ-এর মাসাইলগুলো দালায়েল ও সালাফের নূসূসের আলোকে মুতালাআ করতে চাই। এ ব্যাপারে কোন কোন কিতাবের সাহায্য নিতে পারি?

উত্তর

আমি নূরুল আনওয়ার জামাতের তালিবে ইলম। ফিকহ ও উসূলে ফিকহ সম্পর্কে আমার আগ্রহ আছে। আমি উসূলে ফিকহ-এর মাসাইলগুলো দালায়েল ও সালাফের নূসূসের আলোকে মুতালাআ করতে চাই। এ ব্যাপারে কোন কোন কিতাবের সাহায্য নিতে পারি? উত্তর : এমন কিতাব তো অনেক রয়েছে। এ মুহূর্তে আপনি তিনটি কিতাব থেকে সাহায্য নিতে পারেন। ১. আললুবাব ফী উসূলিল ফিকহ, সফওয়ান আদনান, প্রকাশক : দারুল কলম, দিমাশক। ২. আলফুসূল ফিল উসূল, আবু বকর জাসসাস ও ৩. মানহাজুছ ছাহাবা ফিততারজীহ। প্রকৃতপক্ষে উসূলে ফিকহ উপরোক্ত পদ্ধতিতে পড়া অনেক উত্তম, কিন' তা একটু কঠিন ও নাযুকও বটে। এ জন্য আপনি এই ফনের কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির সোহবতে থেকে চর্চা অব্যাহত রাখুন।

শেয়ার লিংক