নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - নোয়াখালী

প্রশ্ন

আমি একজন মাঝারি মানের ছাত্র। বর্তমানে আমি মিশকাত জামাতে পড়ি। আমাদের থানায় কোনো কওমী মাদ্রাসা নেই এবং আমি ছাড়া এলাকায় কোনো কওমী আলেম না থাকায় বিদাআতীরা আমাদের সমাজকে বিভ্রান্ত করছে। অন্যদিকে আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার জন্য আমাকে ও আমার আব্বাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করেছে এমনকি মৃত্যুর হুমকি পর্যন্ত তারা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমান ফিতনার যুগে অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে  কাঙ্খিত মুক্তির পথে আনার জন্য সকল কষ্ট-নির্যাতন সহ্য করে কওমাী মাদ্রাসায় পড়ছি এবং ইনশাআল্লাহ মৃত্যু পর্যন্ত এর উপরই কায়েম থাকব। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমার সেই কাঙ্খিত আশার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনাকাঙ্খিত কিছু বিষয়। যথা (ক) কথনের অক্ষমতা। যদি  কোনো স্থানে ওয়াজ বা বক্তৃতা কিংবা মানুষকে বুঝাতে যাই তখন অবশ্য বুক কাঁপে না কিন্তু মুখের জড়তার কারণে কথাই বলতে পারি না। অথচ বিদআতীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমি আল্লাহর কাছে বহুবার নফল, ফরজ ও তাহাজ্জুদের নামায পড়ে কান্নাকাটি করে দুআ করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। আমি সব সময় হযরত মূসা আ. এর দুআ

رَبِّ اشْرَحْ لِیْ صَدْرِیْۙ وَ یَسِّرْ لِیْۤ اَمْرِیْۙ وَ احْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِیْۙ یَفْقَهُوْا قَوْلِیْ۪

পাঠ করি তথাপিও কোনো ফল পাইনি। পরিশেষে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে মন চায়; কিন্তু যখনই এই ইচ্ছা জাগ্রত হয় তখনই এই আয়াতটি স্মরণে পড়ে যায় لا تقنطوا من رحمة الله

(খ) লিখনের অক্ষমতা। জীবনে বহুবার লেখার পিছনে বহু সময় খরচ করেছি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, অনেক সময় নিজের নামটা পর্যন্ত ভালো করে  লিখতে পারি না। এসব কারণে যখনই পড়তে বসি তখনই মনের অজান্তেই বেরিয়ে আসে দুফোঁটা তপ্ত অশ্রু এবং ভাবি, কী হবে আমার আলেম হয়েকোনো দিন ইলমের দরস দিতে পারব না। কারণ মুখের জড়তার কারণে ছাত্ররা তাকরারের সময় আমার কথা বুঝে না। অথচ আমার চেয়ে নিম্নমানের ছাত্ররা খুব সুন্দর করে তাকরার করছে। তাই বলি, আমার মত অযোগ্যের মাদরাসায় পড়ে কী লাভ হবে? এমনকি অনেক সময় পাক্কা ইরাদা হয়ে যায় যে, পড়া বাদ দিয়ে চাকরি করি কিংবা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হই, যেখানে কথা বলার প্রয়োজন নেই। এর কারণে আমি সব সময় চিন্তিত থাকি। পড়ালেখায় তেমন মন বসে না এবং স্বাস্থ্য খুব ভেঙ্গে গেছে। অতএব জনাব আব্দুল মালেক সাহেবের নিকট আমার আকুল আবেদন, আমি এখন কী করব? আমি কি মাদরাসার পড়াশোনা চালিয়ে যাব নাকি ...এবং কীভাবে এই ধ্বংসাত্মক বিপদ থেকে মুক্তি পাব সুপরামর্শ চাই এবং তিনি যেন আমার জন্য বিশেষভাবে তাহাজ্জুদের সময় দুআ করেন। আলকাউসারের সকল পাঠকপাঠিকার নিকটও এই অধম দুআপ্রার্থী। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমীন।

উত্তর

আপনার হিম্মত প্রশংসনীয়। এই হিম্মতের সঙ্গে  হতাশার সংযোগ কীভাবে ঘটতে পারে, এটা আমি বুঝতে পারছি না। আল্লাহ তাআলা আপনাকে হিফাজত করুন এবং আপনার সকল নেক কামনা  পূরণ করুন।

হাদীস শরীফে দুআর ব্যাপারে ইসতিজাল নিষেধ করা হয়েছে। ইসতিজাল এর ব্যাখ্যা হাদীস শরীফেই এভাবে করা হয়েছে যে, দুআ করে একথা বলা, আমি দুআ করেছি কিন্তু তা কবুল হয়নি। আশা করি আপনি সালাতুল হাজত এবং رَبِّ اشْرَحْ لِیْ এর আমল জারি রাখবেন। মাঝে মাঝে  يا امبين জপবেন। পাশাপাশি কোনো বুযুর্গের নিকট থেকে কোনো আমল নিয়ে তা আদায় করবেন এবং কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। ইনশাআল্লাহ আপনার অসুবিধা দূর হয়ে যাবে।

আপনি যথারীতি পড়াশোনা জারি রাখুন। লেখা ও বক্তৃতা চর্চাও বাদ দিবেন না। আর সামনের জীবনে আপনি কীভাবে দরস দিবেন এই বিষয়ে এখন একদম পেরেশান না হয়ে

 وَ اُفَوِّضُ اَمْرِیْۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بَصِیْرٌۢ بِالْعِبَادِ বলে বিষয়টি আল্লাহর সোপর্দ করে দিন। সকাল সন্ধ্যায় এই নিম্নোক্ত দুআটি পড়বেন।

اللَّهُمَّ إنِّي أعُوذُ بكَ مِنَ الهَمِّ والحَزَنِ، والعَجْزِ والكَسَلِ، والجُبْنِ والبُخْلِ، وضَلَعِ الدَّيْنِ، وغَلَبَةِ الرِّجالِ.

আপনি দুআ করতে বলেছেন, আমি আপনার জন্য দুআ করছি এবং ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও দুআ করতে থাকব। আপনিও আমাকে ও আমার সঙ্গীগণকে দুআতে শামিল করবেন।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আব্দুল মতিন - তেলীনগর মাদ্রাসা, বি.বাড়িয়া

প্রশ্ন

আমি হেদায়াতুন্নাহব এর ছাত্র। আমরা সাধারণত যে বানানে আরবী লিখি তা শুদ্ধ ও رسم الخط অনুযায়ী হওয়া সত্ত্বেও কুরআনের লেখার নিয়মের সাথে মেলে না কেন জানতে চাই।

উত্তর

অনেকগুলো কারণ ও মাসলাহাতে কুরআন কারীমের রাসমুল খাতবা লিখনপদ্ধতি المصحف الامام  এর মতো রাখা জরুরি। এর উপরই সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর তাআমুল বা কর্মধারা বিদ্যমান রয়েছে। এই লিখনপদ্ধতিতে যে কোনো ধরনের পরিবর্তনে অনেক সমস্যা রয়েছে। তাই একে অপরিবর্তিত রাখাই সর্বস্বীকৃত বিষয়।

অন্যদিকে সাধারণ লেখা-লেখিতে নিয়ম নীতি সর্বযুগে অভিন্ন রাখার কোনো দ্বীনী প্রয়োজনও নেই, দুনিয়াবী উপকারিতাও নেই। তাই প্রতি যুগেই সে সময়ের রুচি অনুযায়ী সৌন্দর্য ও সহজতার লক্ষ্যে তাতে পরিবর্তন হতে পারে এবং তা হয়েছে।

শেয়ার লিংক

মুহাঃ আতিকুর রহমান - জামাতে কাফিয়া, আলজামিআতুল-মাদানিয়া, রাজফুলবাড়িয়া, সাভার, ঢাকা

প্রশ্ন

মুহতারাম, আমি কাফিয়া জামাতের একজন ছাত্র। আমার সমস্যাটি হল, আমি আরবীতে ধারাবাহিকভাবে কথা বলতে পারি না। আমি কী করলে আরবীতে অনর্গল কথা বলতে পারব, এ বিষয়ে আমাকে পথ নির্দেশনা দিলে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

এ প্রসঙ্গে আমি আলকাউসার সফর ২৬হি. পৃ. ৩৭, রবিউস সানী ২৬ হি. পৃ. ৩৮, সফর ২৭হি.পৃ. ৪১ -এ সংখ্যাগুলোতে বিভিন্ন আঙ্গিকে বার বার লিখেছি। আপনি যদি সেই আলোচনাগুলো পড়ে নেন তাহলে ইনশাআল্লাহ আপনি আপনার উত্তর পেয়ে যাবেন। এরপরও কোনো বিষয় জানার থাকলে আমাকে লিখবেন।

শেয়ার লিংক