হযরত! ইসলামের কিছু বিধিবিধান নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী এমনকি কিছু নামধারী মুসলমানও না বোঝার কারণে প্রশ্ন করে থাকে। অতএব এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কী?
হযরত! ইসলামের কিছু বিধিবিধান নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী এমনকি কিছু নামধারী মুসলমানও না বোঝার কারণে প্রশ্ন করে থাকে। অতএব এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কী?
আপনি কোন্ জামাতে অধ্যয়নরত তা কিন্তু উল্লেখ করেননি। তাহলে কথা বলা সহজ হতো। যাহোক এ বিষয়ে এ বিভাগে ইতিপূর্বে একাধিকবার লেখা হয়েছে।
গত জুলাই ও আগস্ট ২০২৫ ঈ. সংখ্যায়–
الفقہ العام للدین کی تھوڑی سی تفصیل
এ বিষয়ে বিভিন্ন কিতাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তেমনিভাবে জানুয়ারি ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘দিরাসাতে উলইয়ার তালিবে ইলমের প্রতি : নিজেদের প্রস্তুত করুন ফেতনার ইলমী ও দাওয়াতী মোকাবেলার জন্য’ প্রবন্ধে বিভিন্ন কিতাবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আপনি উভয় মাকালা মুতালাআ করে সেখান থেকে কিতাব নির্বাচন করুন এবং আপনার উস্তাযের পরামর্শে মুতালাআ করুন।
শেয়ার লিংক
উস্তাযে মুহতারামের কাছে দুটি বিষয় জানতে চাই–
ক. কানযুদ দাকায়েক কিতাবটি কীভাবে পড়লে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জিত হবে?
খ. আমি আকীদার কিছু কিতাব মুতালাআ করতে চাই। আমরা পড়তে পারব এমন কিছু আরবী কিতাবের নাম জানতে চাই। বাংলা বা উর্দু ভাষায় এ বিষয়ে সহজবোধ্য কোনো কিতাব থাকলে সেটাও জানতে চাই।
ক. কানযুদ দাকায়েক হানাফী ফিকহের প্রসিদ্ধ মতন। এটি মুখতাসার হলেও জামে‘। তাই কিতাবের প্রতিটি অধ্যায়ে যে বুনিয়াদী মাসআলাগুলো আছে, সেগুলো ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে। সুরতে মাসআলা ও হুকুম ইহতেমামের সাথে খেয়াল করে বুঝে পড়তে হবে এবং আত্মস্থ করতে হবে।
মুসান্নিফ রাহ. সংক্ষিপ্ততার উদ্দেশ্যে কিতাবে বিভিন্ন রুমূয ও ইশারা ব্যবহার করেছেন। পড়ার সময় কিতাবের মর্মার্থ ভালোভাবে বোঝার সাথে সাথে মুসান্নিফের ব্যবহৃত রুমূয ও ইশারাগুলোও সাধ্য মোতাবেক বোঝার চেষ্টা করবেন।
কানযুদ দাকায়েকের গুরুত্বপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য একাধিক শরাহ রয়েছে। সেগুলোর নাম ও পরিচয় জানা থাকা উচিত, যাতে প্রয়োজনের সময় মুরাজাআত করা যায়।
হিন্দুস্তানী নুসখার সাথে মাওলানা মুহাম্মাদ আহসান সিদ্দিকী নানুতবী (১৩১২ হি.) রাহ.-এর যে আরবী হাশিয়া রয়েছে, সেটি নিয়মিত মুতালাআ করবেন। আর মাঝেমধ্যে কানযুদ দাকায়েকের শরাহ ‘আলবাহরুর রায়েক’ ও ‘তাবয়ীনুল হাকায়েক’-এর কিছু মুতালাআ করলে আরবী শুরূহের সঙ্গে মুনাসাবাত তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। তবে কখনো নোটের সাহায্য নেওয়া যাবে না। বরং আপনি নিজে মেহনত করে ইবারতের সঠিক মর্ম উদ্ধারের চেষ্টা করবেন। প্রয়োজনে আরবী শরাহ ও হাশিয়ার সাহায্য নেবেন। সংশ্লিষ্ট উস্তাযের শরণাপন্ন হবেন এবং সাথিদের সঙ্গে মুযাকারা করবেন। এভাবে মেহনত করে পড়তে থাকলে ইস্তে‘দাদ বাড়তে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
খ. আকীদা সম্পর্কে অধ্যয়নের বিভিন্ন স্তর ও পর্যায় এবং বিভিন্ন দিক রয়েছে। আপনি আপাতত হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ.-এর তালীমুদ্দীন এবং বেহেশতী জেওরের আকীদা অধ্যায় মুতালাআ করতে পারেন। তেমনিভাবে মাওলানা মুহাম্মাদ মানযূর নোমানী রাহ.-এর চার কিতাব– ১. ‘কালিমায়ে তায়্যেবাহ কী হাকীকত’, ২. ‘ইসলাম কিয়া হ্যায়?’, ৩. ‘কুরআন আপ সে কিয়া কাহ্তা হ্যায়?’ ও ৪. ‘দ্বীন ও শরীয়ত’ এবং মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.-এর ‘দস্তূরে হায়াত’ মুতালাআ করতে পারেন। আরবী কিতাবসমূহের মধ্যে আপাতত ইমাম ইবনে আবী যায়েদ কায়রাওয়ানী (৩১০-৩৮৬ হি.) রাহ. রচিত কিতাব–
العقيدة الإسلامية التي يُنَشَّأ عليها الصِّغار
মুতালাআ করতে পারেন। এটি শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর তাহকীকে প্রকাশিত হয়েছে।
আপনি আপনার উস্তাযের সঙ্গে মশওয়ারা করবেন, এ কিতাবগুলোর মধ্যে কিংবা এগুলোর বাইরে কোন্ কোন্ কিতাব এখন আপনার জন্য মুনাসিব।
শেয়ার লিংক
হিন্দুস্তানের উলামায়ে কেরাম এবং আরবের উলামায়ে কেরাম তাদের মাতৃভাষায় লেখা শরাহ মুতালাআ করে কিতাব হল্ করে থাকেন। তাহলে আমাদের মাতৃভাষায় লেখা শরাহ পড়তে কেন আমাদের নিষেধ করা হয়? উস্তাযগণ বলে থাকেন, বাংলা শরাহ মুতালাআ করে কিতাব হল্ করলে ইস্তে‘দাদ কমে যায়। তাহলে আরবরা আরবী শরাহ দ্বারা কিতাব হল্ করলে কি তাদের ইস্তে‘দাদও কমে যায়?
‘তালিবানে ইলম : পথ ও পাথেয় কিতাবে (পৃ. ৪৫৩-৪৫৪)-এ আপনার এই প্রশ্নের সমাধান রয়েছে।
দেখুন, মূল মাকসাদ হল, তালিবে ইলমের মাঝে কিতাবী ইস্তে‘দাদ, ইলমী ইস্তে‘দাদ ও ফন্নী যওক তৈরি হওয়া। এটা যে ভাষার কিতাব পড়েই হোক– অসুবিধা নেই। তবে কাক্সিক্ষত ইস্তে‘দাদ ও যোগ্যতা অবশ্যই হাসিল হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তাই যেসমস্ত কিতাব ও শরাহ এই মাকসাদ হাসিলে সহায়ক হয়, আসাতিযায়ে কেরাম তালিবে ইলমদের সেগুলো পড়ার পরামর্শ দেন।
আজকাল ছাত্রদের অমনোযোগিতা, উদাসীনতা ইত্যাদির কারণে তাদের মধ্যে কাক্সিক্ষত ইস্তে‘দাদ তৈরি হচ্ছে না। সেই ইস্তে‘দাদের বিকল্প হিসেবে ছাত্রদের মধ্যে উর্দু ও বাংলা ভাষায় বিভিন্ন নোট বা শরাহ ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, যেগুলো অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তিতে ভরপুর। এগুলোর দ্বারা ছাত্রদের কিতাবী ও ইলমী ইস্তে‘দাদ তো পয়দা হচ্ছেই না, বরং এগুলোর কারণে তারা ইস্তে‘দাদ হাসিলের আবশ্যকতা এবং মেহনত করে কিতাব হল্ করার প্রয়োজনীয়তা ভুলে যাচ্ছে। ফলে সেসব নোট ও শরহের সাহায্য ছাড়া তারা ইলমের ময়দানে এক কদমও ফেলতে পারে না। অর্থাৎ এগুলো ছাত্রসমাজকে দিন দিন পঙ্গু বানিয়ে দিচ্ছে। এসব কারণে আসাতিযায়ে কেরাম তাদেরকে এসবের কাছে যেতে নিষেধ করেন।
সুতরাং বিষয়টা বাংলা বা উর্দু ভাষায় হওয়ার কারণে নয়। তাই কোনো আরবী কিতাব বা শরাহের অবস্থাও যদি এই হয় যে, সেটা পড়লে তালিবে ইলমদের মধ্যে সাতহিয়্যাত পয়দা হয় এবং তাদের ইস্তে‘দাদের ক্ষতি হয়, তাহলে উস্তাযগণ সেটাও পড়তে বারণ করেন। উদাহরণস্বরূপ আজকাল কিছু আরবী নোট বের হয়েছে, যেন ছাত্ররা পরীক্ষায় আরবীতে উত্তর লিখতে পারে। অথচ এগুলোর দ্বারা ছাত্রদের সৃজনশীলতা নষ্ট হচ্ছে। তাদের মেহনতের মাদ্দা কমে যাচ্ছে। কিতাব হল্ ও ইস্তে‘দাদ হাসিলের ফিকির ও মেহনত বাদ দিয়ে তারা কেবল পরীক্ষামুখী হচ্ছে। অথচ ইস্তে‘দাদ হাসিল করা ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।
উর্দু ও বাংলা ভাষায় লিখিত যেসকল কিতাব ও শরাহ তালিবে ইলমদের মধ্যে কাক্সিক্ষত ইস্তে‘দাদ তৈরিতে সহায়ক, আসাতিযায়ে কেরাম তাদেরকে সেসব শরাহ ও কিতাব পড়ার পরামর্শ দেন। এই বিভাগেও ইতিপূর্বে এ ধরনের বিভিন্ন কিতাবের কথা বলা হয়েছে।
শেয়ার লিংক