রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ || সেপ্টেম্বর ২০২৫

আবু সাঈদ - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৬৭৯৩. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একজন আরেকজনের জমি বন্ধক ও বর্গাচাষের নাম দিয়ে চাষাবাদ করে থাকে তার কয়েকটি পদ্ধতি এখানে উল্লেখ করা হল

১. বন্ধকের পদ্ধতি হল, জমির মালিক চাষিকে বলে, আমার এই পঞ্চাশ শতক জমির বিনিময়ে আপনি আমাকে দুই লক্ষ টাকা ঋণ দেবেন যতদিন পর্যন্ত আমি আপনার টাকা পরিশোধ করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আপনি আমার জমি চাষ করবেন

২. বর্গার পদ্ধতি হল, জমির মালিক চাষিকে বলে, আপনি আমার এই পঞ্চাশ শতক জমি চাষ করেন বিনিময়ে প্রতি সিজনে শতক প্রতি আমাকে চার কেজি করে মোট পাঁচ মণ ধান দেবেন

৩. বর্গার আরেকটি পদ্ধতি হল, জমির মালিক চাষিকে বলে, আপনি আমার এই পঞ্চাশ শতক জমি চাষ করেন বিনিময়ে প্রতি সিজনে উৎপাদিত ফসলের এক তৃতীয়াংশ আমাকে দিবেন

মুহতারামের সমীপে আকুল আবেদন এই যে, উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো জায়েয কি না তা জানিয়ে বাধিত করবেন আর কুরআন-হাদীসের আলোকে বৈধ পদ্ধতি উল্লেখ করবেন, যে পদ্ধতিতে যৌথ চাষাবাদ করে মানুষ শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বাঁচতে পারে

উত্তর

১. জমি বন্ধক নেওয়ার উক্ত পদ্ধতি জায়েয নয় কেননা এটি এক প্রকারের বন্ধক চুক্তি আর ঋণের বিনিময়ে বন্ধকী বস্তু ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত

মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর কথা বর্ণনা করেন

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ مَسْعُوْدٍ فَقَالَ: إِنَّ رَجُلًا رَهَنَنِيْ فَرَسًا فَرَكِبْتُهَا، قَالَ: مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا.

এক লোক আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে আমি তাতে আরোহণ করেছি (এখন তার হুকুম কী)?

তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তুমি ঘোড়াটিতে চড়ে যে উপকার ভোগ করেছ তা সুদ হয়েছে (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৮০৭১)

হযরত শাবী রাহ. বলেন

لَا يُنْتَفَعُ مِنَ الرَّهْنِ بِشَيْءٍ.

বন্ধকী বস্তু থেকে কোনো উপকার গ্রহণ করা বৈধ নয় (শরহু মাআনিল আছার ২/২৩১)

এক্ষেত্রে বৈধভাবে অন্যের জমি চাষাবাদ করে উপকৃত হতে চাইলে ঋণ ও বন্ধকের চুক্তি বাদ দিয়ে শুরু থেকেই জমি ভাড়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে জমির মালিকের যদি এক্ষেত্রে এক মুঠে বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে জমি মালিক ভাড়াটিয়ার সাথে দীর্ঘমেয়াদি ভাড়া চুক্তি করতে পারে এবং কয়েক বছরের ভাড়া অগ্রিম নিয়ে নিতে পারে উদাহরণস্বরূপ, কোনো জমির বার্ষিক ভাড়া বিশ হাজার টাকা আর জমি-মালিকের দরকার হল, এক লক্ষ টাকা তাহলে এক্ষেত্রে জমি-মালিক চাষির কাছে তার জমি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া দেবে এবং আগাম ভাড়া হিসাবে এক লক্ষ টাকা গ্রহণ করবে এরপর পাঁচ বছর ভাড়াগ্রহীতা তা ভোগ করবে আর মেয়াদান্তে মালিক জমি ফেরত পাবে; কিন্তু কোনো টাকা ফেরত পাবে না কারণ টাকাগুলো জমির ভাড়া বাবদ কাটা গেছে যা সে এতদিন ভোগ করেছে

* كتاب >الأصل< /২২৯: وإذا ارتهن الرجل أرضا وقبضها فليس للراهن أن يزرعها ولا يؤاجرها، وليس للمرتهن أن يزرعها ولا يؤاجرها، فإن فعل ذلك ضمن ما نقص الأرض، وتصدق بالفضل إن زرع أو آجر.

আলমাবসূত, সারাখসী ২১/১৬৩; শরহুল বেকায়া, ইবনে মালাক ৪/১০৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২

২. হাঁ, জমির মালিক থেকে এ শর্তে চাষাবাদ করার জন্য জমি নেওয়া বৈধ হবে এটি বর্গাচাষ নয়; বরং জমি ভাড়া নেওয়ার একটি প্রকার এখানে ভাড়া হিসাবে টাকার বদলে শস্য দেওয়া হচ্ছে এটি যেহেতু নির্ধারিত পরিমাণ শস্যের বিনিময়ে জমির ভাড়া চুক্তি, তাই কোনো সিজনে ফসল হোক আর না হোক, কম হোক বা বেশি, এমনকি সে যদি তাতে চাষাবাদ নাও করে বা অন্য কোনো শস্যের চাষ করে, সর্বাবস্থায় জমির মালিককে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি সিজনে ওই পরিমাণ ধান প্রদান করতে হবে

তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হল, ওই নির্ধারিত পরিমাণের ধান উক্ত জমির উৎপাদিত ফসল থেকেই দেওয়ার শর্ত করা যাবে না এমন শর্ত থাকলে চুক্তিটি সহীহ হবে না; বরং শস্য-পণ্যের বিষয়টি ব্যাপক থাকতে হবে যেন অন্য জমি বা বাজার থেকে ক্রয়কৃত পণ্য থেকে দেওয়ারও সুযোগ থাকে চুক্তিতে যদি এই জমির ফসল থেকে দেওয়ার কথা না থাকে, তবে পরবর্তীতে চাষি চাইলে উক্ত জমির ফসল দ্বারাও মালিককে তা পরিশোধ করতে পারবে

* >الفتاوى الهندية< /৪১২ : وما صلح أن يكون ثمنا في البيع كالنقود والمكيل والموزون، صلح أن يكون أجرة في الإجارة.

৩. বর্গাচাষের এ পদ্ধতিটি অর্থাৎ উৎপাদিত ফসল চাষি ও মালিকের মাঝে আনুপাতিক হারে বণ্টনের চুক্তি জায়েয আছে এক্ষেত্রে চুক্তির সময় বর্গার মেয়াদ এবং ফসলের কত শতাংশ কে পাবে এসব সুনির্ধারিত করে নেবে

কিতাবুল আছল ৯/৫৮০; আলমাবসূত, সারাখসী ২৩/১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/২২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৪; রদ্দুল মুহতার ৬/২৭৬ 

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন