মুশফিকা আমেনা - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত
৬৭৩৭. প্রশ্ন
গত রমযানের বারো তারিখে আমার আম্মু হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার কারণে বাকি আঠারোটি রোযা তখন রাখতে পারেননি। চিকিৎসা চালু ছিল। কিছুদিন সুস্থ থাকেন, আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এভাবেই চলছিল। কুরবানীর পর থেকে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে লাগল। সফর মাসের শুরুর দিকে প্রায় পুরোপুরিই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। চলাফেরাসহ সবকিছুই তখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। তখন আম্মু মাঝে বিরতি দিয়ে দিয়ে বারোটি রোযা কাযা করে নেন। কিন্তু রবিউল আউয়াল মাসের শেষ দিকে অসুস্থতা আবার বেড়ে যায় এবং এর কিছুদিন পরই তিনি ইন্তেকাল করেন।
হুজুরের নিকট জানতে চাই, আম্মু যে ছয়টি রোযা রাখতে পারেননি, আমি কি তার পক্ষ থেকে সেগুলো রাখতে পারব? এতে কি তার পক্ষ থেকে সেগুলো আদায় হবে?
উত্তর
না, আপনার মায়ের অনাদায়ি এ রোযাগুলো আপনার বা তার পক্ষ থেকে অন্য কারো কাযা করার সুযোগ নেই। এর দ্বারা সেগুলো তার পক্ষ থেকে আদায় হবে না। কেননা একজনের নামায-রোযা তার পক্ষ থেকে অন্যজনের আদায় করা যায় না।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন–
لَا يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، وَلَا يَصُوْمَنَّ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، وَلَكِنْ إِنْ كُنْتَ فَاعِلًا تَصَدَّقْتَ عَنْهُ أَوْ أَهْدَيْتَ.
অর্থাৎ কেউ যেন কারো পক্ষ থেকে নামায আদায় না করে। তেমনিভাবে কেউ যেন কারো পক্ষ থেকে রোযাও না রাখে। তবে যদি তুমি কিছু করতেই চাও, তাহলে তার পক্ষ থেকে সদকা করতে পার বা হাদিয়া দিতে পার। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৬৩৪৬)
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মা ইন্তেকালের পূর্বে যেহেতু অবশিষ্ট ছয়টি রোযাও কাযা করার জন্য ছয় দিন বা এর বেশি সময় সুস্থ ছিলেন, যেমনটি প্রশ্নের বিবরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে, তাই তিনি মৃত্যুর আগে ঐ রোযাগুলো কাযা না করার কারণে এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, এ রোযাগুলোর ফিদইয়া আদায় করা।
অতএব আপনার মা যদি ঐ রোযাগুলোর জন্য ফিদইয়া আদায় করার অসিয়ত করে গিয়ে থাকেন, তবে তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে এর ফিদইয়া আদায় করা আপনাদের ওপর জরুরি। আর অসিয়ত না করে গিয়ে থাকলে আপনাদের ওপর ফিদইয়া আদায় জরুরি না হলেও সন্তান হিসেবে মায়ের আখেরাতের প্রতি লক্ষ করে আপনাদের কর্তব্য হল, নিজ থেকে ঐ রোযাগুলোর ফিদইয়া আদায় করে দেওয়া।
ফিদইয়া হচ্ছে, প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা এর মূল্য দেওয়া।
* كتاب >الأصل< للشيباني ২/১৬৫ : قلت: فإن صام عنه ابنه أيجزيه ذلك؟ قال: لا. قلت: لم؟ قال: للأثر الذي جاء عن عبد الله بن عمر وعن إبراهيم النخعي أنهما قالا: لا يصلي أحد عن أحد، ولا يصوم أحد عن أحد.
–কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ৭৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৬২; আলগায়া, সারুজী ৭/৪৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪২৪-৪২৫