যিলহজ্ব ১৪৪৩ || জুলাই ২০২২

সুবহান মাহমুদ - গুলিস্তান, ঢাকা

৫৭৫২. প্রশ্ন

আমার সাথে আমার স্ত্রীর একটি বিষয়ে নিয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার একপর্যায়ে আমি রেগে গিয়ে স্ত্রীকে বলি; ‘আমি তোমাকে তালাক দিলাম। তখন আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘কী...! তুমি কী বললে?’ তখন আমি এর জবাবে বলি, ‘তোমাকে তালাক দিলাম। পাশে আমার মা ছিলেন, তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন যে, ‘এই...! তুই কী বললি?’ তখন আমি তার কথার জবাবে বলি যে, ‘তোমার বউমাকে তালাক দিলাম। এরপর ঝগড়া থেমে গেলে সবাই আমাকে বলে যে, আমাদের নাকি তিন তালাক হয়ে গেছে।

সম্মানিত মুফতী সাহেবের নিকট আমার প্রশ্ন হল, আমি তিনবার তালাক বলার দ্বারা কি তিন তালাক হয়ে গেছে? আমি কি এরপর আমার স্ত্রীর সাথে সংসার করতে পারব?

মুহতারাম, আমার এক তালাক দেওয়াই উদ্দেশ্য ছিল।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি আপনার স্ত্রীকে প্রথমবার তোমাকে তালাক দিলামবলার দ্বারা আপনার স্ত্রীর উপর এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে। এরপর স্ত্রী ও মায়ের জবাবে যা বলেছেন তা দ্বারা কোনো তালাক পতিত হয়নি। কেননা তা পূর্বের দেওয়া তালাকের বিবরণ ছিল। পৃথকভাবে তালাক প্রয়োগের জন্য বলা হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে তিন তালাক হয়েছে বলা ভুল।

এখন আপনি পুনরায় সুষ্ঠুরূপে ঘর-সংসার করতে চাইলে ইদ্দতের মধ্যে রাজআত অর্থাৎ স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন। রাজআতের উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করা বা প্রকাশ করা যেমন, এ কথা বলবেন যে, তোমাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করলাম। এর দ্বারাই আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে যাবে। আর যদি আপনি ইদ্দতের ভেতরে (ঋতুমতী মহিলার জন্য তিনটি হায়েয অতিক্রান্ত হওয়া পর্যন্ত, আর অন্তঃসত্তা মহিলার জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত) রাজআত না করেন, তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে দুজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে পরস্পর নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, এই স্ত্রীকে ইদ্দতের ভিতরে গ্রহণ করা হোক কিংবা শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিবাহ করা হোক পরবর্তীতে আপনি দুই তালাকের অধিকারী থাকবেন। তাই পরবর্তীতে এই স্ত্রীকে কখনো দুই তালাক দিলেই পূর্বের এক তালাকসহ তিন তালাক হয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই সামনে থেকে তালাক বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায়, বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে তালাক স্ত্রী-সন্তানের উপর এবং নিজের উপরও জুলুমের কারণ হয়, তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা কর্তব্য।

-কিতাবুল আছল ৪/৪৭২; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৬৩ ও ৩/২৮৮; আলআজনাস, নাতিফী ১/২৭২; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৩৯৭

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন