জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩ || জানুয়ারি ২০২২

মুনীরুল ইসলাম - পাবনা

৫৬১৯. প্রশ্ন

২০১৫ সালে আমি বিবাহ করি। পাঁচ বছর আমার স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার করার পর গত বছরের আগস্ট মাসে পারিবারিক কিছু জটিলতা নিয়ে আমাদের মাঝে খুব ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাগের মাথায় আমি তাকে তিন তালাক দিয়ে বসি। পরিবেশ শান্ত হলে আমি নিজের ভুলের জন্য খুবই অনুতপ্ত হই। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ না থাকায় আমরা পৃথক হয়ে যাই। গত মাসে তার ইদ্দত পূর্ণ হলে সে অন্যত্র বিবাহ বসে। বিয়ের প্রথম রাতে সে তার নতুন স্বামীর সাথে ছিল। কিন্তু তার বক্তব্য অনুযায়ী তাদের মাঝে স্বামী-স্ত্রী সুলভ কোনো আচরণ হয়নি। পরের দিন তার স্বামী মটর সাইকেল এক্সিডেন্ট করে মারা যায়। হুজুরের কাছে জানতে চাই, তার যেহেতু অন্যত্র বিয়ে হয়েছে এবং সে তার নতুন স্বামীর সাথে রাত্রি যাপনও করেছে সুতরাং এমতাবস্থায় আমি কি তাকে পুনরায় আমার বিবাহ বন্ধনে নিয়ে  আসতে পারব?

উল্লেখ্য, আমাদের তিন বছরের দুটি সন্তান রয়েছে। সুতরাং তাকে আমার খুবই প্রয়োজন।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ মহিলাকে আপনি এখনই বিবাহ করতে পারবেন না। কেননা তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে পুনরায় বিবাহ করার জন্য ইদ্দতের পর ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয় এবং নতুন স্বামীর সাথে সহবাস হওয়াও জরুরী। এরপর যদি ঐ স্বামী মৃত্যুবরণ করে অথবা তাকে তালাক দিয়ে দেয় তাহলে ঐ স্বামীর মৃত্যু বা তালাকের ইদ্দতের পর মহিলাটি আপনার সাথে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাত্রি যাপন বা নির্জনবাস যথেষ্ট নয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عُرْوَةُ بْنُ الزّبَيْرِ، أَنّ عَائِشَةَ أَخْبَرَتْهُ: أَنّ امْرَأَةَ رِفَاعَةَ القُرَظِيِّ جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنّ رِفَاعَةَ طَلّقَنِي فَبَتّ طَلاَقِي، وَإِنّي نَكَحْتُ بَعْدَهُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ القُرَظِيّ، وَإِنّمَا مَعَهُ مِثْلُ الهُدْبَةِ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: لَعَلّكِ تُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ؟ لاَ، حَتّى يَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ وَتَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ.

হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, হযরত রিফাআ কুরাযী রা.-এর স্ত্রী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! রিফাআ আমাকে তিন তালাক দিয়েছে। অতঃপর আমি আব্দুর রহমান কুরাযীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। কিন্তু সে দুর্বল ব্যক্তি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সম্ভবত তুমি রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চাচ্ছো? তা পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের মাঝে সহবাস না হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২৬০)উল্লেখ্য, তালাক হচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে এবং সমস্যা সমাধানের আর কোনো উপায় না থাকলে তা থেকে নিষ্কৃতির পথমাত্র। তালাকের ব্যাপারে অত্যন্ত ভেবে-চিন্তে বিজ্ঞজনের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক দেওয়া অন্যায় আর একত্রে তিন তালাক দেয়া গুনাহের কাজ। মুসলমানদের এসব থেকে বেঁচে থাকা কর্তব্য।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/২৯৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৫৫১আলবাহরুর রায়েক ৪/৫৬, ১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০৬; রদ্দুল মুহতার ৩/১১৯, ৪১০

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন