শাওয়াল ১৪৪২ || মে ২০২১

ডা. শহিদুল হক - চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুর

৫৩৭৮. প্রশ্ন

১. আমার নিকট একজন লোক জমি বন্ধক রেখে কিছু টাকা নিয়েছে। প্রতি বছর কিছু ভাড়া নির্ধারণ করে উভয়ের সম্মতিতে বন্ধককৃত জমিতে ফসলাদি করে আমি ভোগ করতে পারব কি না?

২. আমি জমি বাৎসরিক ভাড়া নিয়ে অগ্রিম হিসেবে বেশি পরিমাণ টাকা জমির মালিককে দিতে পারব কি না? পরবর্তীতে ভাড়া কর্তন করে বাকি টাকা মালিকের কাছ থেকে নিয়ে জমি ফেরত দেওয়া ঠিক হবে কি না? যদি উপরোক্ত দুইটিই জায়েয হয় তবে কোন্টি উত্তম?

উত্তর

১. বন্ধকি জমি ভোগ করা জায়েয নয়। এটা ঋণ দিয়ে সুবিধা ভোগ করার অন্তর্ভুক্ত। যা এক প্রকারের সুদ। তবে জমিটি বৈধভাবে ভাড়া নিতে চাইলে নিম্নোক্ত বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রেখে ভাড়া নেওয়া জায়েয হবে-

(ক) পূর্বের বন্ধকি চুক্তিটি বাতিল করে আলাদাভাবে নতুন ভাড়া চুক্তি করতে হবে। এক্ষেত্রে জমিটি আর উক্ত ঋণের বন্ধক হিসাবে বহাল থাকবে না; বরং তা ভাড়া চুক্তির অধীন বলে বিবেচ্য হবে।

(খ) যেহেতু লোকটির কাছে আপনার টাকা পাওনা রয়েছে তাই ভাড়া যৌক্তিক ও প্রচলিত বাজারদরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এত কম ভাড়া নির্ধারণ করা যাবে না, যার কারণে এমন সন্দেহ হয় যে, ঋণের কারণে ভাড়া অস্বাভাবিক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনটি হলেও তা ঋণ দিয়ে সুবিধা ভোগ করা হবে, যা সুদ গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত।

(গ) ঋণ আদান-প্রদানের সাথে জমি ভাড়া দেওয়ার শর্ত করা যাবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ১৫০৬৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২

২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে জমি ভাড়া নিয়ে যদি অনেক টাকা অগ্রিম দেওয়া হয় তবে তাতে দোষ নেই। সেক্ষেত্রে প্রদানকৃত পুরো টাকাই অগ্রিম ভাড়া হিসাবে ধর্তব্য হবে এবং ভাড়ার হার হতে হবে বাজারদর অনুযায়ী, বাস্তবসম্মত। অর্থাৎ মোটা অংকের টাকা অগ্রিম ভাড়া প্রদানকালে বাজারে যে হারে ভাড়া নির্ধারিত হয় ঠিক সে হারে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। ছলচাতুরী করে নামমাত্র ভাড়া ধরা বৈধ হবে না।

উল্লেখ্য, মুসলমানদের জন্য লেনদেনের ক্ষেত্রে শরীয়তের মাসআলার খেয়াল রাখা এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখা কর্তব্য। সুদ গ্রহণের জন্য কোনো হিলা-বাহানা তালাশ করা কোনোক্রমেই বৈধ নয়। এহেন কাজ থেকে সকল মুমিনের বিরত থাকা জরুরি। -আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪২২

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন