শাবান-রমযান ১৪৩৯ || মে-জুন ২০১৮

আফরোজা আক্তার - মতিঝিল, ঢাকা

৪৪৩৭. প্রশ্ন

কোনো কোনো মহলে প্রচলন আছে, বিশেষ কেউ মারা গেলে তাকে কবর দেওয়ার পর বা পরবর্তীতে বিশেষ কোনো উপলক্ষে  তার আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যরা এসে তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কিছু সময় নীরবতা পালন করে এবং ফুলের মালা, ফুলের তোড়া কবরের উপর বা কবরের পাশে রাখে।

হুযুরের কাছে জানতে চাই, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন এবং তার কবরের উপর বা কবরের পাশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ  করা কতটুকু কুরআন-হাদীস সম্মত? দলীল-প্রমাণসহ জানানোর অনুরোধ রইলো।

উত্তর

মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নীরবতা পালন করা, মৃত ব্যক্তির কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা শরীয়তসম্মত নয়। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। বিধর্মীদের আবিষ্কার। আর বিজাতিদের অনুসরণের ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন-

 

مَنْ تَشَبّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে- সে তাদের দলভুক্ত হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১

সুতরাং মুসলমানদের কর্তব্য এসব অহেতুক মনগড়া কাজ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।

প্রকাশ থাকে যে, কোন মুসলমান ইন্তেকাল

করার পর তার কবরের কাছে গিয়ে জীবিতদের কী করতে হবে তা ইসলামে সুনির্দিষ্টভাবে বলে দেওয়া আছে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ী থেকে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল কী ছিল সে ব্যাপারে উসমান রা. বলেছেন-

كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيكُمْ، وَسَلُوا لَهُ بِالتّثْبِيتِ، فَإِنّهُ الْآنَ يُسْأَلُ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোনো মৃতের দাফনকার্য সম্পন্ন করতেন তখন কিছু সময় সেখানে অবস্থান করতেন এবং সঙ্গীদের বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং অবিচল থাকার দুআ করো। তাকে তো এখনই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২১৩

তাবেয়ী আলা ইবনে লাজলাজ থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি তার সন্তানদেরকে বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর যখন তোমরা আমাকে কবর দিবে তখন তোমরা আমাকে লাহদ (বোগলী) কবরে রেখ এবং بِسم الله وعَلى سنة رَسُول الله

 

বলে সুন্দরভাবে মাটি দিয়ে দিও। তারপর আমার মাথার কাছে সূরা বাকারার শুরু ও শেষাংশ পাঠ করো। কারণ আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. কে এটা পছন্দ করতে দেখেছি। (তারীখে ইবনে মাঈন-দুরী সংকলিত ২/৩৭৯-৩৮০)

সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, সাহাবী হযরত বুরায়দা রা. বলেন, যখন তারা কবর (যিয়ারতের জন্য) যেতেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিখিয়ে দিতেন। তখন তারা এভাবে বলতেন-

السّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنّا إِنْ شَاءَ اللهُ لَلَاحِقُونَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ .

হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ আমরাও শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হব। আল্লাহ্র কাছে আমাদের জন্য ও তোমাদের জন্য ‘আফিয়ত’ (সব রকমের বিপদ-আপদ এবং অনাকাক্সিক্ষত ও অবাঞ্ছিত বিষয় থেকে নিরাপত্তা)-এর প্রার্থনা করি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৫

দাফনকার্য সম্পন্ন করার পর এবং অন্যান্য সময় কবর যিয়ারত করার নিয়মাবলী সম্পর্কে এ ধরণের আরো বহু হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত এ সকল আমলের দ্বারা মৃত ব্যক্তি যেমন উপকৃত হবে তদ্রƒপ যারা মৃতের জন্য আমল করবে তারাও ফায়েদা পাবে।

অতএব মুসলমানের কর্তব্য কবর যিয়ারতের ক্ষেত্রেও ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ অনুযায়ী আমল করা, হাদীস ও সুন্নাহ্র অনুসরণ করা এবং অমুসলিমদের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি পরিহার করা।

-মাআরিফুস সুনান ১/২৬৫

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন