মুহাররম ১৪৩৭ || নভেম্বর ২০১৫

মুহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ - ২য় কলোনী, মিরপুর-১, ঢাকা

৩৫১০ . প্রশ্ন

(ক) আমরা জানি, মৃত ব্যক্তিকে কবরে তিনটি সওয়াল করা হবে। কিন্তু এমনও লোক আছে যাদের মৃত্যু হয় আকাশে বা সাগরে যাদের লাশ মাটিতে দাফন করার সুযোগ হয় না। তাদেরকে কোথায় সুওয়াল করা হবে?

(খ) অনেক মানুষের লাশ সাগরে দাফন করা হয়ে থাকে সেটিই বা বৈধ কতটুকু?

(গ) সাধারণ মানুষ তো আছেই অনেক আলেমকেও দুআর সময় বলতে শুনি, হে আল্লাহ! অমুকের রূহের মাগফিরাত করুন। আসলে অমুকের রূহের মাগফিরাত করুন হবে, নাকি হে আল্লাহ! অমুককে মাফ করে দিনÑ কোনটি সঠিক?

(ঘ) কবর যিয়ারতের সময় কোন দিকে ফিরে দুআ-দরূদ পড়ব?

(ঙ) কবর সামনে রেখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা যাবে কি?

উত্তর

ক) মৃত্যুর পর সওয়াল-জওয়াব এবং এর পরবর্তী প্রতিদান ও শাস্তি ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মৃত্যুর পর সওয়াল-জওয়াব হওয়ার জন্য লাশ মাটিতে দাফন করা এবং লাশ অক্ষত থাকা জরুরি নয়বরং এ সময়ে বান্দার দেহ যেখানে যেভাবে থাকুক আল্লাহ তাঁর কুদরতে ঐ দেহের সাথে রূহের সম্পর্ক করে দিবেন এবং সওয়াল-জওয়াব ও শান্তি বা শাস্তি সব কিছুই হবে। লাশ মাটিতে দাফন করা হোক বা না হোক এবং লাশ অক্ষত থাকুক বা না থাকুক এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন হাদীস শরীফে এসেছেহযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান এবং হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা.সহ অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছেরাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনতোমাদের আগে এক ব্যক্তি ছিলযে মৃত্যুর সময় তার ছেলেদেরকে অসিয়ত করেছে যেআমি তো আল্লাহর নিকট কোনো ভালো আমল জমা রাখিনি। জেনে রাখ,আমি যখন মৃত্যুবরণ করব তোমরা আমার দেহকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে প্রবল বাতাসের দিন সমুদ্রে উড়িয়ে দিবে। অতপর ছেলেরা অসিয়তমতে মৃত্যুর পর তার দেহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে প্রবল বাতাসের দিন সমুদ্রে উড়িয়ে দিয়েছিল। পরে আল্লাহ তাআলা ঐ ছাইগুলো জমা করে তাকে জীবিত করে জিজ্ঞাসা করলেনতোমাকে এ কাজে কিসে প্ররোচিত করলসে বললএকমাত্র আপনার ভয়ই আমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিলেন। Ñসহীহ বুখারী,হাদীস ৬৪৮০৬৪৮১সহীহ মুসলিমহাদীস ২৭৫৭মুসনাদে আহমদহাদীস ২৩৩৫৩কিতাবুর রূহ ৭৪মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৩১০

খ) সাগরের মাঝে নৌযানে কারো ইন্তিকাল হলে নৌযানটি যদি তীরের নিকটবর্তী হয় এবং অবতরণ করা সম্ভব হয় বা নৌযান গন্তব্যে পৌঁছার আগে লাশে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা না থাকে তাহলে লাশ ভূমিতেই দাফন করতে হবে। আর যদি নৌযান থেকে ভূমিতে অবতরণ করার আগে আগে লাশে পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকে তাহলে নৌযানেই তার গোসলকাফন ও জানাযা দিয়ে লাশটি সাগরে ছেড়ে দিবে। সম্ভব হলে লাশের সাথে কোনো ভারি বস্তু যেমন পাথর ইত্যাদি বেঁধে দিবে। যাতে লাশ নিচে চলে যায়। পানিতে ভেসে না থাকে। Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহাদীস ১৯৭৩আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৫ফাতহুল কাদীর ২/১০২ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৩৯

গ) মৃত্যুর পর শান্তি ও আযাব রূহ এবং দেহ উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো শুধু রূহের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। এটিই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা। তাই কেউ যদি রূহের মাগফিরাত দ্বারা এমন উদ্দেশ্য করে যেশাস্তি বা শান্তি শুধু রূহেরই হবে তাহলে সেটি ভুল হবে। তাই কথাটি এভাবে বলা উচিত হবেহে আল্লাহ অমুকের মাগফিরাত করুন। রূহের মাগফিরাত করুনÑ এমনটি না বলাই ভালো। কেননা এতে কারো ভুল বোঝার আশঙ্কা রয়েছে। Ñকিতাবুর রূহ ৬৫-৬৭ফাতহুল বারী ৩/২৭৫;মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৩১০শরহুস সুদূর ২৪৩

ঘ) কবর যিয়ারতের নিয়ম হলমাইয়েতের চেহারার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে সালাম দিবে। অতপর দরূদ শরীফ ও কুরআন মাজীদ থেকে  তিলাওয়াত করতে চাইলে করতে পারবে। অবশ্য উক্ত নিয়মে দাঁড়ানো সম্ভব না হলে যেভাবে সম্ভব সেভাবে দাঁড়াতে পারবে। যিয়ারত শেষে চাইলে কেবলামুখী হয়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে পারবে। Ñজমে তিরমিযীহাদীস ১০৫৩আলআওসাতইবনুল মুনযির ৫/৫০৭রদ্দুল মুহতার ২/২৪২মাজমাউল আনহূর ৪/২২০মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/২১৯

ঙ) কবরকে সামনে রেখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা জায়েয আছে। হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার শিয়রে সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

তাই কবরের সামনে কুরআন মাজীদ পড়া দোষণীয় নয়। তবে ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় নিয়ে কুরআন মাজীদ খতম করার যে প্রচলন রয়েছে তা সম্পূর্ণ বিদআত ও নাজায়েয। Ñআল মুজামুল কাবীরতবারানী ১৯/২২০আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৭৪ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬২ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/৩১৯

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন