অযুর সময় থুতনির নিচের অংশও কি ধোয়া জরুরি? কেউ যদি এ অংশ পুরোপুরি না ধোয় তাহলে কি তার অযু সহীহ হবে?
অযুর সময় থুতনির নিচের অংশও কি ধোয়া জরুরি? কেউ যদি এ অংশ পুরোপুরি না ধোয় তাহলে কি তার অযু সহীহ হবে?
অযুতে থুতনির নিচের অংশ ধোয়া লাগবে না। ঐ অংশ না ধুলেও অযু হয়ে যাবে।
Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১; আস সেআয়া ১/৪৬শেয়ার লিংক
হায়েয অবস্থায় মহিলারা সিজদার আয়াত শুনলে পবিত্র হওয়ার পর তাদেরকে কি সেই সিজদা আদায় করে নিতে হবে? আশা করি উত্তর জানাবেন।
হায়েয অবস্থায় সিজদার আয়াত শুনলে সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই পবিত্র হওয়ার পর তাকে সেই সিজদা আদায় করতে হবে না।
Ñমাবসূত, সারাখসী ২/৫; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৬৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৯শেয়ার লিংক
বিতর নামায আমরা কোন নিয়মে পড়ব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
বিতর নামায তিন রাকাত। ওয়াজিব। যা এশার পর থেকে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত আদায় করা যায়। তা আদায়ের নিয়ম স্বাভাবিক নামাযের মতই। তবে এতে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। যেমন এর প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। দ্বিতীয় রাকাত শেষে বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পর্যন্ত পড়বে। এরপর তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর পর আল্লাহু আকবার বলে দুই হাত উঠাবে। এরপর দুই হাত বেঁধে দুআ কুনূত পাঠ করবে, অতপর যথানিয়মে নামায শেষ করবে।
বিতর নামায আদায়ের উক্ত পদ্ধতি ও বিবরণ বিশুদ্ধ হাদীস ও আসার দ্বারা প্রমাণিত। যেমন :
এক. সহীহ মুসলিমের একটি দীর্ঘ হাদীসে ইবনে আব্বাস রা. বলেন, একবার তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট রাত্রিযাপন করলেন। রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মিসওয়াক, ওযু করে দীর্ঘ কেরাত ও রুকু-সিজদার সাথে দুই রাকাত নামায আদায় করলেন। অতপর তিনি পুনরায় নিদ্রা যাপন করলেন। এরূপভাবে তিনবারে তিনি ছয় রাকাত আদায় করলেন অতপর তিন রাকাত বিতর আদায় করলেন। Ñসহীহ মুসলিম, ১/২৬১
দুই. আয়েশা রা. হতে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাত শেষে সালাম ফেরাতেন না। Ñসুনানে নাসায়ী ১/২৪৮
তিন. উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতির পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরূন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনত পড়তেন...। Ñসুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬৯৯; শরহু মুশকিলিল আসার ১১/৩৬৮
চার. উবাই বিন কাব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর পড়তেন এবং রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। Ñসুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস ১১৮২; উমদাতুল ক্বারী ৭/১৯
পাঁচ. সাবেত আল বুনানী রাহ. বলেন, আমি আনাস রা.-এর ঘরে রাত্রি যাপন করেছি এবং তার সাথে নামায পড়েছি। তাঁকে দেখেছি রাতে দুই রাকাত করে নামায পড়েছেন এবং সবশেষে মাগরিবের নামাযের মত তিন রাকাত বিতর পড়লেন। Ñমুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস ৪৬৩৬
ছয়. সুফিয়ান সাওরী রাহ. বলেন, তারা (অর্থাৎ তাবেয়ীগণ) তিন রাকাত বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা পড়তেন দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফীরুন পড়তেন। তারপর বসে তাশাহহুদ পড়ে আবার উঠে দাঁড়াতেন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়তেন। Ñসালাতুল বিতর লিল মারওয়াযী পৃ. ২৭৯
সাত. আসওয়াদ রাহ. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কেবল বিতর নামাযেই কুনূত পড়তেন। তিনি রুকুর আগে কুনূত পড়তেন, কেরাআত শেষ করে কুনূতের জন্য তাকবীর বলতেন। Ñশরহু মুশকিলুল আছার ১১/৩৭৪
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বায় আরো এসেছে যে, তিনি কুনূতের জন্য হাত উঠাতেন। Ñহাদীস ৭০২৭; জুযউ রাফইল ইয়াদাইন, ইমাম বুখারী, ৬৮-৬৯
আট. আসেম রাহ. বলেন আমি আনাস রা. কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বলেছেন, কুনূত পড়ার বিধান রয়েছে। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম রুকুর পরে না রুকুর আগে? তিনি বললেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক আমাকে বলেছে, আপনি নাকি রুকুর পরে কুনূত পড়ার কথা বলেন। তিনি বললেন, সে ভুল বলেছে। রুকুর পরে নবী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামশুধু একমাস কুনূত পড়েছিলেন। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১০০২
উলেখ্য যে, বিতর নামাযে দুআ কুনূত পাঠ করা ওয়াজিব। আর হাদীসে বর্ণিত দুআই কুনূতের জন্য পাঠ করা উত্তম।
বি. দ্র. মাসিক আল কাউসারের মে/জুন/জুলাই-আগষ্ট ২০১০ সংখ্যায় বিতর নামায সম্পর্কে বিস্তারিত প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। প্রয়োজনে তা দেখা যেতে পারে।
শেয়ার লিংক
কাকরাইল থেকে একটি তিন চিল্লার জামাতকে দিনাজপুরের এক ইউনিয়নে ৪০ দিনের জন্য রোখ দিয়েছে। সে ইউনিয়নের একাধিক গ্রামের মসজিদে তিন দিন করে থাকা হবে। এভাবে ৪০ দিন পূর্ণ হওয়ার পর জামাতটি আবার কাকরাইলে ফিরে আসবে। আমরা জানি, ১৫ দিনের নিয়তে কোথাও অবস্থান করলে মুকীম গণ্য হয়। তাহলে সেই ইউনিয়নে ৪০ দিন অবস্থানের নিয়ত করলে জামাতের সকলেই কি মুকীম গণ্য হবে?
উল্লেখ্য, কাকরাইল থেকে চিল্লার রোখ দেওয়া হলে সাধারণত চিল্লা পূর্ণ করেই ফিরে আসা হয়।
মুকীম হওয়ার জন্য এক গ্রামে বা এক শহরে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করা জরুরি। একাধিক গ্রাম মিলে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করলে মুকীম হয় না। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চিল্লার জামাতটির যেহেতু একই গ্রামে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি থাকা হচ্ছে না; বরং এক ইউনিয়নের একাধিক গ্রামে থাকা হচ্ছে, তাই এক্ষেত্রে তারা মুকীম হবে না;বরং মুসাফিরই থাকবে। তবে কোনো জামাত যদি এক গ্রামের এক বা একাধিক মসজিদে ১৫ দিন অবস্থানের নিয়ত করে থাকে তবে তারা মুকীম গণ্য হবে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ১/২৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৯১-৩৯২; আদ্দুররুল মুখতার ২/১২৫-১২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৪৯৯শেয়ার লিংক
আমরা অনেক সময় মসজিদে যেতে দেরি হয়ে গেলে দুজন মিলে জামাতে নামায পড়ি। এক্ষেত্রে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে একটু পিছনে সরে দাঁড়ায়। কয়েকদিন আগে এক হুজুরের সাথে নামায পড়ছিলাম। আমি তার থেকে একটু পিছনে সরে দাঁড়ালে তিনি আমাকে তার বরাবরে দাঁড় করালেন এবং বললেন যে, এটাই নাকি নিয়ম। তার এ কথা কি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।
হ্যাঁ, উক্ত কথাটি সঠিক। দুজন জামাতে নামায পড়লে নিয়ম হল, মুক্তাদি ইমামের বরাবর দাঁড়াবে। আবদুল্লাহ বিন উতবা রাহ. বলেন, আমি দ্বিপ্রহরে হযরত উমর রা.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন তিনি নফল নামায পড়ছিলেন। তিনি আমাকে (নামাযের জন্য) তাঁর ডান পাশে তাঁর বরাবরে দাঁড় করালেন। Ñ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৮৮৮; আলআওসাত, হাদীস ১৯৫৫
ইবনে জুরাইজ রাহ. বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, দুজন জামাতে নামায পড়লে মুক্তাদি কোথায় দাঁড়াবে? উত্তরে তিনি বললেন, মুক্তাদিও ইমামের ডান পাশে এভাবে দাঁড়াবে। আমি বললাম, সে কি ইমামের সাথে একেবারে এমনভাবে দাঁড়াবে যেন ইমামের আগে-পিছে না হয়। তিনি বললেন, হ্যাঁ। Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস ৩৮৭০
এ সম্পর্কিত বর্ণনার ভিত্তিতে ফিকহবিদগণ বলেছেন যে, মুক্তাদী একজন হলে ইমামের ডান পাশে ইমামের বরাবর দাঁড়াবে। তবে কোনো মুক্তাদীর যদি ইমামের বরাবর দাঁড়ালে আগে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে সে কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়াতে পারে। যাতে ইমামের আগে বেড়ে যাওয়ার কারণে তার নামায ফাসেদ না হয়ে যায়।
Ñমুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৩৮৮৮, ৩৮৭০; মাবসূত, সারাখসী ১/৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৬৫৫; রদ্দুল মুহতার ১/৫৬৭; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২০১; ইলাউস সুনান ৪/২৪৬শেয়ার লিংক
ক) ফরয নামাযের শেষের দুই রাকাতে সূরা ফাতেহার পর ভুলে বিসমিল্লাহ পাঠ করলে সাহু সিজদা দিতে হবে কি না?
খ) আমার এক প্রতিবেশী হেফযখানায় পড়ে দীর্ঘ ৩ বছর যাবত। সে বলে, আমার তিন বছরের জীবনে কোনোদিন তেলাওয়াতে সিজদা আদায় করিনি। মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির করণীয় কী? যদি সিজদা আদায় করতে হয় তাহলে কীভাবে আদায় করবে?
ক) না, উক্ত ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। এমনকি সূরা মিলালেও সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত এমনটি করা সুন্নতের খেলাফ। Ñসহীহ বুখারী,হাদীস ৭৭৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৫৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ১৩৫
খ) ছেলেটি বালেগ হওয়ার পর থেকে যতগুলো তিলাওয়াতে সিজদা ছুটেছে সেগুলো আদায় করে নিতে হবে। আর নাবালেগ অবস্থায় যেগুলো ছুটেছে সেগুলো আদায় করা জরুরি নয়। সুতরাং গত তিন বছরের মধ্যে ছেলেটি বালেগ হয়ে থাকলে বালেগ হওয়ার পর থেকে ছুটে যাওয়া তিলাওয়াতে সিজদাগুলো অনুমান করে আদায় করে নিবে।
উল্লেখ্য, সিজদায়ে তিলাওয়াত একটি ওয়াজিব আমল। তা তিলাওয়াতের সাথে সাথে আদায় করে নেওয়া উচিত। বিনা ওজরে তা বিলম্ব করবে না। Ñহাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ২৪৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৩২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৫৪
শেয়ার লিংক
মাগরিবের নামায কখন পড়া উত্তম? রমযান মাসে ইফতারের জন্য কিছুটা বিলম্ব করে জামাত দাঁড়ায়Ñ এর হুকুম কী?
সাধারণ অবস্থায় সূর্যাস্তের পর মাগরীবের নামায বিলম্ব না করা মুস্তাহাব। এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
সালামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী কারীম সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিব পড়তাম যখন সূর্য অস্ত যেত। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬১
রাফে ইবনে খাদীজ রা. বলেন, আমরা নবীজী সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করতাম। অতপর নামায শেষে আমাদের কেউ চলে গেলে তখন সে তীর নিক্ষেপের স্থান দেখতে পেত। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৭; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৯
হাদীস ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রাহ. বলেন, উক্ত হাদীস থেকে এ কথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিব নামায সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে পড়তেন এবং এত আগে পড়তেন যে, নামায শেষ করার পরও চতুর্দিক আলোকিত থাকত। অন্ধকার হয়ে যেত না। আর এটিই অধিকাংশের মত। Ñউমদাতুল কারী ৫/৫৫
হাদীস বিশারদ হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেন, উপরোক্ত হাদীসের দাবি হল, মাগরিব নামায ওয়াক্তের শুরুতেই আদায় করা। যেন আলো থাকতে থাকতে নামায শেষ করা যায়। Ñফাতহুল বারী ২/৫০
ফকীহগণ বলেছেন, ওয়াক্তের শুরুতেই মাগরিবের নামায পড়ে নেওয়া মুস্তাহাব। তবে সূর্যাস্তের পর নামাযের প্রস্তুতি নিতে যে পরিমাণ সময় লাগে এতটুকু পরিমাণ সময় বিলম্ব করা অনুত্তম হবে না। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ. বলেছেন, ১০ মিনিট বিলম্ব করলে মাকরূহ হবে না। Ñইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১০৪
এর চেয়ে বেশি অর্থাৎ আকাশের তারকারাজী অধিক পরিমাণে প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত বিলম্ব করা মাকরূহ তানযীহী। আর তারকারাজী অধিক পরিমাণে প্রকাশ হয়ে যায় এত বিলম্ব করা মাকরূহ তাহরীমী।
সুতরাং রমযানে ইফতারির প্রয়োজনে ১০-১২ মিনিট বিলম্ব করা যাবে। এতে অসুবিধা নেই। মাকরূহ হবে না। তবে এর চেয়ে বেশি বিলম্ব করা ঠিক হবে না। রমযানে ইফতারের জন্য কিছুটা বিলম্ব করার কথা সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রমাণিত আছে।
আবু জামরা দুবায়ী রাহ. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রমযানে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে ইফতার করতেন। ... তিনি বলেন,
فاذا غابت الشمس أذن، فيأكل ونأكل، فإذا فرغ أقيمت الصلاة، فيقوم فيصلي ونصلي معه.
যখন সূর্য অস্ত যেত তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. আযান দিয়ে খাবার খেতেন। আমরাও তাঁর সাথে খাবার খেতাম। খাবার শেষে ইকামত দেওয়া হত। তখন তিনি নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেতেন। আমরাও তাঁর সাথে নামায পড়ে নিতাম।
Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯০৩৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২১; সহীহ ইবনে খুযাইমা, ১/২০৬; মাবসূত, সারাখসী ১/১৪৪, ১৪৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৮; বাযলুল মাজহূদ ৩/২১৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৩৪; রদ্দুল মুহতার ১/৩৬৯;শেয়ার লিংক
(ক) আমরা জানি, মৃত ব্যক্তিকে কবরে তিনটি সওয়াল করা হবে। কিন্তু এমনও লোক আছে যাদের মৃত্যু হয় আকাশে বা সাগরে যাদের লাশ মাটিতে দাফন করার সুযোগ হয় না। তাদেরকে কোথায় সুওয়াল করা হবে?
(খ) অনেক মানুষের লাশ সাগরে দাফন করা হয়ে থাকে সেটিই বা বৈধ কতটুকু?
(গ) সাধারণ মানুষ তো আছেই অনেক আলেমকেও দুআর সময় বলতে শুনি, হে আল্লাহ! অমুকের রূহের মাগফিরাত করুন। আসলে অমুকের রূহের মাগফিরাত করুন হবে, নাকি হে আল্লাহ! অমুককে মাফ করে দিনÑ কোনটি সঠিক?
(ঘ) কবর যিয়ারতের সময় কোন দিকে ফিরে দুআ-দরূদ পড়ব?
(ঙ) কবর সামনে রেখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা যাবে কি?
ক) মৃত্যুর পর সওয়াল-জওয়াব এবং এর পরবর্তী প্রতিদান ও শাস্তি ইসলামী আকীদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মৃত্যুর পর সওয়াল-জওয়াব হওয়ার জন্য লাশ মাটিতে দাফন করা এবং লাশ অক্ষত থাকা জরুরি নয়; বরং এ সময়ে বান্দার দেহ যেখানে যেভাবে থাকুক আল্লাহ তাঁর কুদরতে ঐ দেহের সাথে রূহের সম্পর্ক করে দিবেন এবং সওয়াল-জওয়াব ও শান্তি বা শাস্তি সব কিছুই হবে। লাশ মাটিতে দাফন করা হোক বা না হোক এবং লাশ অক্ষত থাকুক বা না থাকুক এর সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান এবং হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা.সহ অন্যান্য সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের আগে এক ব্যক্তি ছিল, যে মৃত্যুর সময় তার ছেলেদেরকে অসিয়ত করেছে যে, আমি তো আল্লাহর নিকট কোনো ভালো আমল জমা রাখিনি। জেনে রাখ,আমি যখন মৃত্যুবরণ করব তোমরা আমার দেহকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে প্রবল বাতাসের দিন সমুদ্রে উড়িয়ে দিবে। অতপর ছেলেরা অসিয়তমতে মৃত্যুর পর তার দেহকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে প্রবল বাতাসের দিন সমুদ্রে উড়িয়ে দিয়েছিল। পরে আল্লাহ তাআলা ঐ ছাইগুলো জমা করে তাকে জীবিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে এ কাজে কিসে প্ররোচিত করল? সে বলল, একমাত্র আপনার ভয়ই আমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিলেন। Ñসহীহ বুখারী,হাদীস ৬৪৮০, ৬৪৮১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৫৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২৩৩৫৩; কিতাবুর রূহ ৭৪; মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৩১০
খ) সাগরের মাঝে নৌযানে কারো ইন্তিকাল হলে নৌযানটি যদি তীরের নিকটবর্তী হয় এবং অবতরণ করা সম্ভব হয় বা নৌযান গন্তব্যে পৌঁছার আগে লাশে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা না থাকে তাহলে লাশ ভূমিতেই দাফন করতে হবে। আর যদি নৌযান থেকে ভূমিতে অবতরণ করার আগে আগে লাশে পরিবর্তন ঘটার আশঙ্কা থাকে তাহলে নৌযানেই তার গোসল, কাফন ও জানাযা দিয়ে লাশটি সাগরে ছেড়ে দিবে। সম্ভব হলে লাশের সাথে কোনো ভারি বস্তু যেমন পাথর ইত্যাদি বেঁধে দিবে। যাতে লাশ নিচে চলে যায়। পানিতে ভেসে না থাকে। Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯৭৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৫; ফাতহুল কাদীর ২/১০২; ইমদাদুল ফাত্তাহ ৬৩৯
গ) মৃত্যুর পর শান্তি ও আযাব রূহ এবং দেহ উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলো শুধু রূহের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। এটিই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা। তাই কেউ যদি রূহের মাগফিরাত দ্বারা এমন উদ্দেশ্য করে যে, শাস্তি বা শান্তি শুধু রূহেরই হবে তাহলে সেটি ভুল হবে। তাই কথাটি এভাবে বলা উচিত হবে, হে আল্লাহ অমুকের মাগফিরাত করুন। রূহের মাগফিরাত করুনÑ এমনটি না বলাই ভালো। কেননা এতে কারো ভুল বোঝার আশঙ্কা রয়েছে। Ñকিতাবুর রূহ ৬৫-৬৭; ফাতহুল বারী ৩/২৭৫;মিরকাতুল মাফাতীহ ১/৩১০; শরহুস সুদূর ২৪৩
ঘ) কবর যিয়ারতের নিয়ম হল, মাইয়েতের চেহারার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে সালাম দিবে। অতপর দরূদ শরীফ ও কুরআন মাজীদ থেকে তিলাওয়াত করতে চাইলে করতে পারবে। অবশ্য উক্ত নিয়মে দাঁড়ানো সম্ভব না হলে যেভাবে সম্ভব সেভাবে দাঁড়াতে পারবে। যিয়ারত শেষে চাইলে কেবলামুখী হয়ে কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করতে পারবে। Ñজমে তিরমিযী, হাদীস ১০৫৩; আলআওসাত, ইবনুল মুনযির ৫/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৪২; মাজমাউল আনহূর ৪/২২০; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/২১৯
ঙ) কবরকে সামনে রেখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা জায়েয আছে। হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার শিয়রে সূরা বাকারার প্রথম এবং শেষের কয়েকটি আয়াত পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে।
তাই কবরের সামনে কুরআন মাজীদ পড়া দোষণীয় নয়। তবে ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে বিনিময় নিয়ে কুরআন মাজীদ খতম করার যে প্রচলন রয়েছে তা সম্পূর্ণ বিদআত ও নাজায়েয। Ñআল মুজামুল কাবীর, তবারানী ১৯/২২০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৬২; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ২/৩১৯
শেয়ার লিংক
মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে পাথরে বা খোদাই করে বিভিন্ন পঙক্তি, আয়াত, দুআ বা বাণী লিখে রাখার হুকুম কী? এটা কি শরীয়তসম্মত? তাছাড়া কবর সনাক্ত করার জন্য কবরে নাম ও ঠিকানা লিখে রাখতে দেখা যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে তা কি বৈধ? আশা করি সবিস্তারে জানাবেন।
মৃত ব্যক্তির কবরের উপর বা পাশে কুরআনের আয়াত, দুআ, কবিতা বা প্রশংসা-স্তুতিমূলক বাক্য লিখে রাখা নিষেধ। হাদীস শরীফে কবরে লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করা, তার উপর লেখা, কবরের উপর ঘর নির্মাণ করা এবং তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১০৫২
অবশ্য কখনো কবর সনাক্ত করার প্রয়োজন হলে মৃতের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিখে রাখার অবকাশ আছে। সাহাবী হযরত উসমান বিন মাযউন রা.-এর কবরের পাশে এ উদ্দেশ্যেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাথর রেখেছিলেন এমন বর্ণনা হাদীস শরীফে এসেছে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৯৮
এ বর্ণনার আলোকে ফকীহগণ বলেছেন, কবর পরিচয়ের স্বার্থে কবরের পাশে মৃতের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিখে রাখার অনুমতি রয়েছে।
Ñআদ্দুররুল মুখতার ২/২৩৭; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৬৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৪; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৩৬শেয়ার লিংক
শহরের অনেক মসজিদেই জানাযার নামায আদায় করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে সাধারণত মসজিদের বাইরে সামনের দিকে লাশ রাখার জন্য কিছু খালি জায়গা রাখা হয়। আর ইমাম সাহেব মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদের ভেতরই নামাযে জানাযা আদায় করেন।
আমার জানার বিষয় হল, মসজিদে জানাযার নামায পড়ার হুকুম কী? লাশ মসজিদের ভেতরে রাখা বা বাইরে রাখার কারণে কি হুকুমের মাঝে কোনো পার্থক্য হবে?
লাশ মসজিদের ভেতরে রাখা হোক বা বাইরে রাখা হোক বিনা ওজরে মসজিদে জানাযার নামায পড়া মাকরূহ। নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,যে ব্যক্তি মসজিদের ভেতর জানাযার নামায আদায় করবে তার কোনো সওয়াব হবে না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩১৮৪
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবায় আছে, উক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর হযরত সালেহ রাহ. বলেন, জানাযার মাঠে জায়গা না হলে সাহাবীরা ফিরে যেতেন। নামাযে শরিক হতেন না। Ñমুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১২০৯৭
উল্লেখ্য, মসজিদে নববী সংলগ্ন একটি খালি জায়গা ছিল যেখানে জানাযার নামায আদায় করা হত। দেখুন : আলমাওয়াহিবুলদুন্নিয়্যা ৩/৩৯৬; ওফাউল ওফা ২/৫৩৪
অবশ্য অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদেও দুজন সাহাবীর জানাযার নামায আদায় করেছেন। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৩
এই দুই ধরনের হাদীসের মাঝে ফকীহগণ এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, স্বাভাবিক অবস্থায় জানাযার নামায মসজিদের বাইরেই আদায় করবে। আর কোনো ওজর থাকলে যেমন বৃষ্টি হলে অথবা বাইরে পড়ার মতো ব্যবস্থা না থাকলে মসজিদের ভেতরও আদায় করা যাবে।
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে শহরগুলোতে মসজিদের বাইরে জায়গা না থাকার কারণে মসজিদে জানাযার নামায আদায় করা হয়। তাই তা দোষণীয় হবে না।
Ñযাদুল মাআদ ১/৫০১; ইলাউস সুনান ৮/২৭৭; রদ্দুল মুহতার ২/২২৬, ২/২২৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫৮০; ফাতাওয়াল ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১৫৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২২; কিতাবুত তাজনীস ২/২১৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৯৫; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৪৯৪ ফাতহুল কাদীর ২/৯০-৯২; উমদাতুল কারী ৮/২০-২১শেয়ার লিংক
রমযানের শেষ দশকে কোনো ব্যক্তি ইতিকাফরত অবস্থায় পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে বের হলে পথে সালামের আদান-প্রদান করতে পারবে কি না? তদ্রƒপ কারো শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে পারবে কি না? আমাদের এখানে প্রচলিত আছে যে, ইতিকাফরত ব্যক্তি রাস্তায় কাউকে সালাম দেয় না এবং তাকে সালাম দিলে জবাব দেয় না; বরং কোনো ধরনের কথাবার্তা না বলে প্রয়োজন সেরে মসজিদে চলে যায়। হুযুরের কাছে এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলাটি জানতে চাচ্ছি।
ইতিকাফরত ব্যক্তি পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে গেলে আসা যাওয়ার পথে পথ চলতে চলতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবে। তদ্রƒপ এসময় পথ চলতে চলতে কারো সাথে অল্পস্বল্প কথাও বলতে পারবে। এতে ইতিকাফের ক্ষতি হবে না। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় চলতে চলতে রোগীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু এর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতেন না। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৪৭২
তবে কারো সাথে কথা বলা বা কুশলাদি জিজ্ঞাসার জন্য মসজিদের বাইরে অল্প সময়ও দাঁড়ানো জায়েয হবে না।
Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৭; মিরকাতুল মাফাতিহ ৪/৫২৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২১শেয়ার লিংক
আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর আমি হজ্ব করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। কিন্তু অনাকাংক্ষিতভাবে তাওয়াফে যিয়ারাতের সময় হায়েয এসে যায়। বুঝতে না পারার কারণে ঐ অবস্থাতেই আমি পূর্ণ তাওয়াফ সম্পন্ন করি। অবশ্য পরবর্তীতে ১৫ যিলহজ্ব পবিত্র হওয়ার পর তা পুনরায় আদায় করি।
হুযুরের নিকট আবেদন এই যে, এক্ষেত্রে আমার উপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে কি না? মক্কায় আমাদের কাফেলার একজনকে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বলেছিলেন, একটি দুম্বা জবাই করলেই চলবে। তার কথামতো হারামে একটি দুম্বা জবাই করেছি। কিন্তু দেশে ফিরে আসার পর আরেকজন বললেন, একটি উট জবাই করা ওয়াজিব ছিল। সঠিক সমাধান ও এখন আমার করণীয় কী? জানিয়ে বাধিত করবেন।
ভুলক্রমে হায়েয-নেফাস অবস্থায় তাওয়াফে যিয়ারাত করলেও জরিমানা হিসেবে বাদানা অর্থাৎ একটি উট কিংবা একটি গরু জবাই করা ওয়াজিব হয়। অবশ্য পবিত্র অবস্থায় পুনরায় ঐ তাওয়াফ করে নিলে বাদানা মওকুফ হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের এত আগে যদি সে পবিত্র হয় যে, পবিত্রতা অর্জন করে সূর্যাস্তের আগে তাওয়াফের অন্তত চার চক্কর আদায় করা সম্ভব তাহলে তাকে এর ভেতরেই তা আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে সে যদি এসময়ের ভেতর তা আদায় না করে তাহলে তখন বিলম্ব করার কারণে একটি জরিমানা দম অর্থাৎ একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা কুরবানী করতে হবে। অবশ্য যদি ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের ঐ পরিমাণ সময় আগে পবিত্র না হয় বা ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর পবিত্র হয় এবং এরপর সে পবিত্রতা অর্জন করে ঐ তাওয়াফ আবার আদায় করে নেয় তাহলে তার উপর কোনো জরিমানা দমও ওয়াজিব হবে না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু ১৫ যিলহজ্ব পবিত্র হয়েছেন এবং এরপর পবিত্র অবস্থায় ঐ তাওয়াফ পুনরায় আদায় করে নিয়েছেন তাই এক্ষেত্রে আপনার উপর কোনো জরিমানা দমও ওয়াজিব হয়নি। অতএব আপনি যে দুম্বা জবাই করেছেন তা জরিমানা দম হিসাবে আদায় হয়নি। বরং তা নফল কুরবানী গণ্য হবে এবং আপনি এর সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।
Ñমানাসিক ৪৮৮, ১১৫ রদ্দুল মুহতার ২/৫৫১; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৮; গুনইয়াতুন নাসিক ২৭২শেয়ার লিংক
আমরা কোনো একটি ভবনের শুধু মাঝের এক তলা মসজিদ এবং উপর তলা এবং নিচ তলায় মাদরাসা হিসেবে তৈরি করতে চাই। এভাবে শুধু মাঝের তলাকে মসজিদ বানানোর দ্বারা উক্ত মসজিদ ‘‘মসজিদে শরয়ী’’ হবে কি না?
কোনো স্থান শরয়ী মসজিদ হওয়ার জন্য ঐ স্থানের উপর-নিচ পুরোটাই মসজিদের জন্য ওয়াকফ হওয়া শরীয়তের নিয়ম। তাই কোনো স্থানে মসজিদ বানাতে হলে ঐ স্থানের উপর-নিচ পুরোটাই মসজিদের জন্য নির্ধারণ করে দিবে। নিচে বা উপরে মসজিদ ব্যতীত অন্য কিছু বানাবে না। তবে জায়গা সংকটের কারণে একটি ভবনের কোনো এক তলাকে মসজিদের জন্য স্থায়ীভাবে ওয়াকফ করে দিলেও কোনো কোনো ফকীহের নিকট তা শরয়ী মসজিদ হয়ে যায়।
এ মত অনুযায়ী প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ভবনের মাঝের এক তলাকে মসজিদের জন্য ওয়াকফ করলে সেটা শরয়ী মসজিদ হিসেবে গণ্য হবে এবং মসজিদের যাবতীয় হুকুম তাতে প্রযোজ্য হবে।
Ñফাতহুল কাদীর ৫/৪৪৪-৪৪৫; আলইসআফ ফী আহকামিল আওকাফ ৭২-৭৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/২৭২; দুরারুল হুককাম ২/১৩৫শেয়ার লিংক
আমরা হিয়ারিং এইডের ব্যবসা করি। অর্থাৎ মানুষ কানে কম শুনলে অথবা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে আমরা কানের পরীক্ষা করি এবং কানে কম শোনার মেশিন বিক্রি করে থাকি। আমাদের এই ব্যবসায় সাধারণত নাক, কান, গলা বিভাগের ডাক্তারদের সাথে সম্পর্ক। আমাদের মার্কেটিংয়ের লোক বিভিন্ন হাসপাতাল বা চেম্বারে গিয়ে কান স্পেশালিস্ট ডাক্তারদের সাথে দেখা করেন এবং বলেন, স্যার! আমাদের কাছে রোগী পাঠাবেন। তখন ডাক্তারগণ আমাদের সাথে চুক্তি করেন। আমাকে কত পার্সেন্ট দিবেন। অমুক সেন্টার আমাদেরকে ৬০% দেয়। তখন আমাদের বাধ্য হয়ে বলতে হয় স্যার, তাহলে আমরা ৭০% পার্সেন্ট অথবা ৮০% দিব। এবং মাঝেমধ্যে বিভিন্ন গিফটও প্রদান করে থাকি। ব্যবসার খাতিরে আমাদের মন না চাইলেও এই কমিশন দিতে আমরা বাধ্য। এখানে উল্লেখ্য, কানের টেস্ট ফি নির্ধারিত এবং তা সব জায়গায় এক। এমন নয় যে, কমিশন দিতে হবে বিধায় রোগী থেকে বেশি ফি নিব।
অবশ্য কোনো কোনো ডাক্তার খোদাভীরু, যারা বলেন, আমাকে যে কমিশন দিবেন সেটা রোগী থেকে কম নিবেন। তখন আমরা বলি, স্যার! আপনি এত পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট এভাবে লিখে দিবেন আমরা কম নিব, ইনশাআল্লাহ। আমরা তাই করে থাকি।
এখন আপনাদের নিকট জানার বিষয় হল, ডাক্তারদের সাথে এমন লেনদেন করা কতটুকু শরীয়তসম্মত? যদি বলি, এই ব্যবসা ছেড়ে দিব তাহলে এটাই কি সমাধান? এভাবে সকলে ছেড়ে দিলে এই সেবা কে করবে?
কোনো রোগী যখন ডাক্তারের কাছে নির্ধারিত চিকিৎসা ফি প্রদানের মাধ্যমে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে তখন ডাক্তারের দায়িত্ব হয়ে যায় রোগীকে সঠিক ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা। এ ব্যবস্থাপত্র প্রদানের জন্য কখনো রোগীকে টেস্ট দেওয়ার প্রয়োজন হলে তা লিখে দেওয়া এবং কোথা থেকে তা করালে ভাল হবে এটা বলে দেওয়াও ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র প্রদান সংক্রান্ত দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। যার জন্য রোগী ডাক্তারকে পূর্বেই নির্ধারিত ফি প্রদান করেছে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষার জন্য কোনো রোগীকে কোনো হিয়ারিং এইড সেন্টারে পাঠানোর প্রয়োজন হলে কোথায় পাঠালে ভাল হবেÑ এ বিষয়ে রোগীকে নির্দেশনা দেওয়া ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র প্রদান সংক্রান্ত দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। এ দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো হিয়ারিং এইড সেন্টার থেকে ডাক্তারের কমিশন নেওয়া ঘুষের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর ঘুষ নেওয়া যেমন হারাম তেমনি কাউকে ঘুষ দেওয়াও হারাম। হাদীস শরীফে আছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর লানত করেছেন। Ñমুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৫৩২
আর এই কমিশনের বাইরে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানী বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে ডাক্তারকে যেসব উপহার দেওয়া হয় তা যদি নগদ অর্থ বা চেক হয় কিংবা বিদেশে যাওয়ার প্যাকেজ অথবা মূল্যবান কোনো ব্যবহার সামগ্রী ইত্যাদি হয় তাহলে তাও ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো গ্রহণ করা ডাক্তারের জন্য জায়েয নয়। অবশ্য ওষুধের সেম্পল কিংবা ওষুধের বিজ্ঞাপন সম্বলিত চিকিৎসার ব্যবহার সামগ্রী, যেমন কলম, খাতা, প্যাড, পেপারওয়েট ইত্যাদি নেওয়া ডাক্তারের জন্য জায়েয আছে। তবে ডাক্তারের জন্য এগুলো বিক্রি করে এর মূল্য ভোগ করা বৈধ হবে না।
উল্লেখ্য, ডাক্তারদেরকে কমিশন দেওয়ার এ প্রথাটি আগে ছিল না। এটি চালু করেছে কিছু অসাধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ। তারা ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় অনৈতিক পথে আগায় এবং ডাক্তারদেরকে তাদের কাছে রোগী পাঠানোর জন্য কমিশন দেওয়ার প্রলোভন দেয়। প্রথমে এর পরিমাণ কম ছিল। পরে কমিশনের হার আকাশচুম্বী করা হয়। আর এ টাকার ভার রোগীদেরকেই বহন করতে হয়। এই অনৈতিক কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে ওইসব অসাধু ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষই দায়ী। এই অবৈধ পন্থা চালু হওয়ার কারণে কোনো রকম গুণগত মান ছাড়াই রাতারাতি গজিয়ে উঠে অসংখ্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যাদের মূল কামাইয়ের অধিকাংশ বা তারও বেশি ডাক্তারদেরকে কমিশন হিসেবে দিয়ে দিতে হয়।
বর্তমানে এর সমাধানও খুব কঠিন নয়। মানসম্মত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যদি ডাক্তারদেরকে কমিশন না দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেয়, সাথে টেস্টের ফিও স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসে এবং টেস্টের মানও উন্নত করে এবং রোগীদেরকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাহলে সহজেই ঐ কমিশন পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাবে। এবং অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোও ব্যবসায়িক খাতিরেই নিজেদের মান উন্নত করতে বাধ্য হবে এবং টেস্ট ফিও কমাবে।
Ñমাআলিমুস সুনান ৪/১৬১; আলমাবসূত সারাখসী ১৬/৮২শেয়ার লিংক
গত বছর জুন মাসে এক বাড়িওয়ালার সাথে আমার এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা অগ্রীম ও মাসিক তের হাজার টাকা ভাড়া হিসেবে বাড়ি ভাড়ার কথা হয়। একই সময়ে বাড়িওয়ালা ঠিক সমান মাপ ও মানের একই তলার আরেকটি ফ্ল্যাট আরেক ব্যক্তির কাছে এ চুক্তিতে ভাড়া দেয় যে, অগ্রীম এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিলে ভাড়া বারো হাজার আর ত্রিশ হাজার টাকা অগ্রীম জামানত দিলে মাসিক ভাড়া তের হাজার টাকা হবে। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যে অগ্রীম ত্রিশ হাজার ও মাসিক তের হাজার টাকার ভাড়ার চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু আমি যখন জুলাই মাসে অগ্রীম এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে যাই তখন তিনি সেচ্ছায় স্বপ্রণোদিত হয়ে মাসিক ভাড়া বারো হাজার টাকা করেন। প্রথম দশ মাস অগ্রীম টাকা থেকে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা কাটা যাবে। বাকী ত্রিশ হাজার টাকা জামানত হিসাবে রয়ে যাবে। কিন্তু বাড়িওয়ালা ও অন্যদের সাথে কথা বলে এই কথা প্রায় নিশ্চিত যে, আমার ভাড়া এক হাজার টাকা কম হওয়া অগ্রীম টাকা অন্যজনের চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, মাসিক আলকাউসার ২০১৫ জুন-জুলাই সংখ্যায় ছাপাÑ রিবার প্রচলিত কয়েকটি রূপ শীর্ষক প্রবন্ধের তের নম্বরে বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি বেশি দিলে ভাড়া কমিয়ে দেওয়া শিরোনামের অধীনে যে মাসআলা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে এই একহাজার টাকা কম দেওয়া সুদ বলে গণ্য হবে কি? যদি সুদ হয় তাহলে এখন করণীয় কী?
মাসিক আলকাউসারের উক্ত প্রবন্ধে সিকিউরিটি মানি সম্পর্কে যে মাসআলাটি বলা হয়েছে তা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। কেননা প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক আপনার ভাড়া একহাজার টাকা কমিয়ে দিয়েছে দশ মাসের ভাড়া বাবত ১,২০,০০০/= টাকা অগ্রীম দিয়ে দেওয়ার কারণে। এই ১,২০,০০০/= টাকা সিকিউরিটি মানি নয়; বরং তা এ্যাডভান্স তথা অগ্রীম ভাড়া। আর কিছু ভাড়া অগ্রীম পরিশোধ করে দিলে ভাড়াদাতা যদি মূল ভাড়ার পরিমাণ যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছুটা কমিয়ে দেয় তবে তা নাজায়েয নয়। আর সিকিউরিটি মানি ভাড়াদাতার নিকট ঋণ হিসাবে থাকে। তাই এই অর্থের কারণে ভাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিলে তা ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহীতা থেকে অতিরিক্ত সুবিধা গ্রহণের অন্তর্ভুক্ত, যা সুদ ও হারাম।
-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৫/৫৭৩; আলমাবসূত, সারাখসী, ১৪/৩৫; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ ৪৬৮; আলমাআয়ীরুশ শরইয়্যাহ পৃ. ১৪৮শেয়ার লিংক
আমি বাজার থেকে এক হালি ডিম কিনে আনি। ভাঙ্গার পর ২টি ডিম পুরোপুরি নষ্ট পাই। দোকানদারের কাছে তা পরিবর্তন করে দেওয়ার জন্য নিয়ে গেলে সে ফেরত নিতে অস্বীকার করে। প্রশ্ন হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য নষ্ট ডিম ফেরত দেওয়ার অধিকার আছে কি? যদি বিক্রেতা মূল্য ফেরত দিতে অথবা ডিম পরিবর্তন করে দিতে না চায় তাহলে কি সে গুনাহগার হবে?
নষ্ট ডিমের বিক্রি নাজায়েয। বিক্রেতার জন্য এর মূল্য ভোগ করা বৈধ নয়। তাই নষ্ট ডিম ফেরত দেওয়ার অধিকার ক্রেতার রয়েছে। বিক্রেতা হয়ত মূল্য ফেরত দিবে কিংবা এর পরিবর্তে ভালো ডিম দিবে। তা না করলে সে গুনাহগার হবে।
Ñআলমুহীতুল বুরহানী ১০/১২৩, ১২১-১২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ৬/১৮; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২৫শেয়ার লিংক
ঢাকা শহরের এক শপিং সেন্টারে দশ বছর যাবৎ আমি একটি দোকান ভাড়া নিয়ে কাপড়ের ব্যবসা করছি। বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পেরেছি যে, আমার পার্শ্ববর্তী দোকানটি বিক্রি হবে। ফলে আমি বিক্রেতার কাছে গিয়ে দোকানটি কেনার প্রস্তাব দিলাম। কিন্তু তিনি কোনো সায় দিলেন না। পরবর্তীতে তিনি কোনো এক ব্যবসায়ীর কাছে দোকানটি বিক্রি করে দিলেন। আমি কি এই দোকানটি প্রি-এমশনের ভিত্তিতে অগ্রক্রয়ের অধিকার লাভ করব? এ ব্যাপারে শরয়ী সমাধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি প্রি-এমশন তথা অগ্রক্রয়ের অধিকার লাভ করবেন না। কেননা ভাড়াটিয়া অগ্রক্রয়ের অধিকারী হয় না। অগ্রক্রয়ের অধিকারী কেবলমাত্র বিক্রিত সম্পত্তির শরীকগণ কিংবা এর পার্শ্ববর্তী বাড়ি বা ভূমি মালিকগণই হতে পারে।
Ñবাদায়েউস সানায়ে ৪/১১২; মাবসূত, সারাখসী ১৪/৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২১৭শেয়ার লিংক
জামালপুর শহরের কেন্দ্রে আমার একটি বেশ বড় মুদি দোকান আছে। একদিন আমার এক বন্ধু এসে বলল যে, এখানে বিকাশ, মোবাইল রিচার্জ ও কার্ড বিক্রি করলে খুব চলবে। তার কথা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হল এবং আমরা যৌথ কারবার করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাদের মাঝে এভাবে চুক্তি হল, আমি আমার মুদি দোকানের একটি অংশ দিব। আর সে মূলধন বিনিয়োগ করে ব্যবসা করবে। যা লাভ হবে এর ৩০% আমি নিব আর ৭০% সে নিবে। আমাদের মাঝে এভাবে চুক্তি করা কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? আশা করি উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।
প্রশ্নে উলেখিত চুক্তিটি শুদ্ধ হয়নি। কেননা ঐ ব্যক্তিকে ব্যবসার জন্য দোকানের এক অংশ ছেড়ে দেওয়ার দ্বারা আপনি তার ব্যবসায় অংশিদার গণ্য হবেন না। সুতরাং লভ্যাংশ থেকে আপনার পাওনা ধার্য করা বৈধ নয়। এক্ষেত্রে আপনি দোকানের ঐ অংশের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভাড়া নিতে পারবেন। আর ব্যবসায় যা লাভ হবে তা পুরোটাই ঐ ব্যক্তির থাকবে।
Ñমাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দা: ১৩৪৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৫০৫; আলবাহরুর রায়েক ৫/১৮৪; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/২৬৬শেয়ার লিংক
দুই বছর আগে আমরা পাঁচজন সাথী মিলে ছোট্ট একটি সমিতি করেছিলাম। মাসে ৫০০/- টাকা করে জমা করে দুই বছরে মোটামুটি একটি সঞ্চয় হয়েছে। সাথে এককালীন কিছু টাকাও আছে। সমিতি করার সময় আমাদের উদ্দেশ্য ছিল শুধু টাকা জমা করা। কোথাও বিনিয়োগ করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু এখন সবাই চাচ্ছে, এক বছরের জন্য এই টাকা দিয়ে ছোটখাটো একটি ব্যবসা করতে এবং সে দায়িত্বটা সবাই মিলে আমাকে দিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, লভ্যাংশ মূলধন হারেই বণ্টিত হবে। আমার জন্য অতিরিক্ত কোনো অংশ নির্ধারণ করা হয়নি। কিন্তু সমস্যা হল, এ টাকা দিয়ে ব্যবসা করার মতো এত সময় এখন আমার হাতে নেই। তাই আমি চাচ্ছি এই টাকা দিয়ে কারো সাথে ১ বছরের জন্য মুদারাবা চুক্তি করতে এবং তাতে আমার জন্য যে লাভ ধার্য করা হবে সেটা সবাই মিলে ভাগ করে নিব।
হুযুরের কাছে জানতে চাই, এভাবে কারবার করা আমার জন্য বৈধ হবে কি না?
প্রশ্নের বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে সদস্যগণ আপনাকে এ টাকা দিয়েছে যেন আপনি নিজে ব্যবসা পরিচালনা করেন। তাই এক্ষেত্রে তাদের অনুমতি ব্যতীত টাকাগুলো অন্যের নিকট মুদারাবা ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন না। সদস্যগণ বা পরিচালনা কর্তৃপক্ষ যদি অনুমতি দেয় তখন অন্যত্র মুদারাবা বিনিয়োগ করতে পারবেন।
Ñশরহুল মজাল্লাহ ৪/৩০৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৬; ফাতহুল কাদীর ৫/৪০৪; শরহুল মাজাল্লাহ ৪/৩০৭-৩০৮; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২০শেয়ার লিংক
আমার এক মেয়ে আমাদের কথার অবাধ্য হয়ে একটি ছেলেকে বিয়ে করে তার সাথে চলে গেছে। বর্তমানে আমাদের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আমার প্রশ্ন হলÑ
ক) পিতামাতার এ ধরনের অবাধ্য সন্তান পিতামাতার সম্পত্তি থেকে মিরাস পাবে কি না?
খ) পিতামাতার জন্য তাকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করা বৈধ হবে কি না?
কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিকে মিরাস বলে। মৃত্যুর পর উক্ত সম্পত্তি তার জীবিত ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন হবে। এটি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বিধান। মৃত্যুর সাথে সাথে উক্ত সম্পত্তিতে জীবিত সকল ওয়ারিশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। জীবদ্দশায় সে কোনো ওয়ারিশের উপর অসন্তুষ্ট থাকলে বা তাকে সম্পত্তি না দেওয়ার কথা বলে গেলেও এ কারণে কোনো ওয়ারিশ মিরাস থেকে বঞ্চিত হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে পিতামাতা জীবদ্দশায় ঐ সন্তানের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে মিরাস থেকে বঞ্চিত ঘোষণা করলেও সে মিরাস থেকে বঞ্চিত হবে না এবং অন্যান্য ওয়ারিশদের জন্য তাকে বঞ্চিত করাও জায়েয হবে না।
Ñরদ্দুল মুহতার ৭/৫০৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৭১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০০; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৭৯; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১শেয়ার লিংক
অনেক সময় পার্কে হাঁটতে বের হই। সেখানে ভিক্ষুকরা কিছুদূর পরপর বসে থাকে। তারা পথচারীদেরকে সালাম দিতে থাকে।
জানতে চাই, ভিক্ষুকের সালামের উত্তর দেওয়া কি ওয়াজিব?
যে ভিক্ষুক ভিক্ষার উদ্দেশ্যে পথচারীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সালাম দেয় তার ঐ সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে প্রকৃত অর্থে সালাম দেয় এবং সালামকে ভিক্ষার মাধ্যম না বানায় তার সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব। অবশ্য কোন্ উদ্দেশ্যে সালাম দিচ্ছে তা যেহেতু জানা মুশকিল তাই সকল ভিক্ষুকের সালামের উত্তর দেওয়াই অধিক সতর্কতা।
Ñখুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৭৭; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৩শেয়ার লিংক
জনৈক মুরব্বির তিনটি সন্তান। তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে তার সমস্ত সম্পদ নিজ সন্তানদের মাঝে ভাগ করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে তার সন্তানরা আর তাকে দেখাশুনা করছে না এবং তার খরচাদিও দেয় না। জানতে চাই, তিনি কি তার প্রয়োজনীয় খরচাদি সন্তানদের সম্পদ থেকে নিয়ে নিতে পারবেন? জানালে উপকৃত হব।
পিতা-মাতা যদি আর্থিকভাবে অসচ্ছল হন এবং সন্তানরা সামর্থ্যবান হয় তাহলে পিতা-মাতার প্রয়োজনীয় খরচাদি দেওয়া সন্তানের উপর আবশ্যক। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রেও সন্তানদের জন্য কর্তব্য হল, পিতার প্রয়োজনীয় খরচ দেওয়া। তারা যদি এ খরচ না দেয় তবে পিতা নিত্য প্রয়োজনীয় খরচাদি তাদের সম্পদ থেকে নিতে পারবেন। অবশ্য প্রয়োজন অতিরিক্ত খরচ, বিলাসিতা ও দান-সদকার জন্য এভাবে টাকা নিতে পারবেন না।
হাদীস শরীফে এসেছে, এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, আমার পিতা আমার সম্পদ নিয়ে নিতে চান। রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এবং তোমার সম্পদ তো তোমার পিতার জন্য। তোমাদের সর্বোত্তম আহার হল নিজেদের উপার্জন থেকে। আর সন্তানদের সম্পদ তোমাদের উপার্জনের অংশ। তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে আহার কর। Ñমুসনাদে আহমদ, হাদীস ৬৬৭৮
উল্লেখ্য যে, পিতামাতার সাথে সদাচরণ করা এবং তাদেরকে কোনো প্রকার কষ্ট না দেওয়ার প্রতি কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে জোর তাগিদ করা হয়েছে। আর তাদের দেখাশোনা করা, ভরণ-পোষণ দেওয়া সদাচরণেরই অন্তর্ভুক্ত। পিতামাতা যখন বৃদ্ধ বয়সে উপণীত হন তখন তাদের খেদমত করা, তাদের দেখাশোনা করা তো একান্ত অপরিহার্য। বিশেষত এ বয়সে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা অত্যন্ত ঘৃণিত ও চরম অন্যায়। কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমার রব আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁর ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তোমার বর্তমানে তাদের একজন বা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায় তবে তুমি তাদের উফ বলবে না এবং তাদের ধমক দিবে না। বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। আর করুণাভরে তাদের সামনে বিনয়ের ডানা ঝুঁকিয়ে দাও এবং বল, হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন। যেমন তাঁরা শৈশবে আমাকে লালন-পালন করেছেন। Ñসূরা বানী ইসরাইল (১৭) : ২৩-২৪
মাতাপিতার সাথে সদাচরণ করা জান্নাত লাভের উপায় বলা হয়েছে। তাদের খেদমত করে যে ব্যক্তি জান্নাত লাভ করতে পারে না তার জন্য বদ দুআ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তার নাক ধুলোয় ধূসরিত হোক। তার নাক ধুলোয় ধূসরিত হোক। তার নাক ধুলোয় ধূসরিত হোক। জিজ্ঞাসা করা হল, কোন সে ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তি যে বৃদ্ধ বয়সে তার পিতামাতা একজনকে বা উভয়কে পেল, তারপরও জান্নাত লাভ করতে পারল না। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৫১
অন্য হাদীসে এসেছে, পিতার সন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর পিতার অসন্তুষ্টির মাঝে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।
Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৩৯; বাযলুল মাজহূদ ১৫/২১০; মাবসূত, সারাখসী ৫/২২২; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/৩৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৬২২; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/১৯৭শেয়ার লিংক