রবিউল আখির ১৪৩৫ || ফেব্রুয়ারি ২০১৪

মুনিরুল ইসলাম - দারুল উলূম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ি

৩০৩৪. প্রশ্ন

আমরা বিভিন্ন সময় আলেমগণ থেকে দরূদ শরীফ পড়ার বিশেষ ফযীলত শুনেছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, দরূদ শরীফ কি নিজ থেকে বানিয়ে পড়লেও দরূদ আদায় হয়ে যাবে? নাকি হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদই পড়া শর্ত?


উত্তর

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল দরূদ শরীফ হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো

পড়া সর্বাপেক্ষা উত্তম। সাহাবায়ে কেরাম আরবী ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কীভাবে দরূদ  পড়বেন তা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে জেনে নিতেন। যেমন হাদীস শরীফে এসেছে, কাব বিন উজরা রা. বলেছেন, একবার রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলে আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার প্রতি সালাম পেশ করার পদ্ধতি তো জানলাম কিন্তু দরূদ কীভাবে পেশ করব? তখন তিনি বললেন, তোমরা বল-

اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد.

 (সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৩৭০)

অন্য একটি বর্ণনায় তিনি বলেছেন, তোমরা (এভাবে দরূদ) পড়)-

اللهم اجعل صلواتك وبركاتك على آل محمد كما جعلتها على آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.

 (মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস : ৮৭২৬)

তাই যথাসম্ভব হাদীসে বর্ণিত দরূদ শরীফ পড়ার অভ্যাস করা উচিত।

এছাড়া কোনো কোনো সাহাবা থেকেও কিছু দরূদ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। যেমন, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তাঁর সঙ্গীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা এভাবে দরূদ পড়-

اللهم اجعل صلاتك ورحمتك وبركاتك على سيد المرسلين وإمام المتقين وخاتم النبيين محمد عبدك ورسولك، إمام الخير وقائد الخير ورسول الرحمة، اللهم ابعثه مقاما محمودا يغبطه به الأولون والآخرون، اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وآل إبراهيم، إنك حميد مجيد.

 (আলমুজামুল কাবীর, হাদীস : ৮৫৯৪)

উপরোক্ত দরূদ শরীফ আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে।

তাই সম্ভব হলে এগুলোও পড়বে।

অবশ্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে নিজ থেকে দরূদ শরীফের বাক্য তৈরী করা বা বুযুর্গদের মামুল কোনো দরূদ পাঠ করারও অবকাশ আছে। যে বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে তা নিম্নরূপ :

ক) সালাত ও সালাম সম্বলিত বাক্য হওয়া এবং ভাষা বিশুদ্ধ হওয়া।

খ) দরূদে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশাপাশি তাঁর আল ও আযওয়াজ অর্থাৎ পরিবার পরিজন ও স্ত্রীগণকেও অন্তর্ভুক্ত রাখা। কেননা সালাত ও সালাম দ্বারা মূল দরূদ আদায় হয়ে গেলেও দরূদের পরিপূর্ণতার জন্য এগুলোও দরকার। (দেখুন : আলকাওলুল বাদী ৮৩)

এছাড়া প্রায় সকল হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদ শরীফে আল কে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কোনোটিতে আযওয়াজ কেও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সহীহ বুখারীতে (হাদীস : ৬৩৬০) এসেছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা (এভাবে দরূদ) পড় 

اللهم صل على محمد وأزواجه وذريته كما صليت على آل إبراهيم، وبارك على محمد وأزواجه وذريته كما باركت على آل إبراهيم، إنك حميد مجيد.

গ) তাওহীদ পরিপন্থী বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের আকীদা পরিপন্থী কোনো বিষয় না থাকা।

ঘ) হাদীস ও আছারে বর্ণিত দরূদের চেয়ে অন্য কোনো দরূদকে অধিক মর্যাদাপূর্ণ ও বিশেষ ফযীলতপূর্ণ মনে না করা।

ঙ) যেসব ক্ষেত্রে শরীয়তের পক্ষ হতে বিশেষ বিশেষ দরূদ শরীফ নির্ধারিত আছে। যেমন নামাযে দরূদে ইবরাহীমী সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ঐ দরূদ শরীফই পাঠ করবে। 

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন