যে ব্যক্তি কলেজে, উচ্চ বিদ্যালয়ে বা এমন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা বা চাকরি করেন, যেখানে ছেলে মেয়ে একসাথে পড়ালেখা করে বা নারী-পুরুষ অবাধে একসাথে কাজ করে। মেয়েরা কেউ বোরকা পরে এলেও খোলা মুখে থাকে। এমন ব্যক্তির ইমামতি করা বা তাঁকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া শরীয়তসম্মত হবে কি না? এছাড়া যে ব্যক্তি বেগানা মেয়েদেরকে প্রাইভেট পড়ান এবং যে ব্যক্তি কোনো সুদি প্রতিষ্ঠানে/সুদি ব্যাংকে, বীমা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে মসজিদে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার হুকুম কী? দলীল-প্রমাণসহ সমাধান জানতে চাই।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দায়িত্ব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে এর গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
الْإِمَامُ ضَامِنٌ.
অর্থাৎ ইমাম মুসল্লীদের নামাযের যিম্মাদার। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৪২৮
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِن سَرَّكُمْ أَنْ تُقْبَلَ صَلَاتُكُمْ فَلْيَؤُمَّكُمْ خِيَارُكُمْ، فَإِنَّهُمْ وَفْدُكُمْ فِيمَا بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ رَبِّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ.
যদি তোমরা চাও তোমাদের নামায কবুল হোক, তাহলে তোমাদের ইমাম যেন হয় তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি। কারণ ইমাম হল তোমাদের ও তোমাদের রবের মধ্যকার প্রতিনিধি। -মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৫০৩৪
তাই ফকীহগণ বলেন, ইমাম হতে হবে সহীহ আকীদাসম্পন্ন ব্যক্তি, বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের অধিকারী, খোদাভীরু, সুন্নতের অনুসারী আলেম। প্রকাশ্য গোনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। মসজিদের দায়িত্বশীল বা মহল্লাবাসীর কর্তব্য হল, ইমাম নিয়োগ দেওয়ার সময় উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করত দ্বীনদার পরহেযগার যোগ্য আলেমকে নিয়োগ দেওয়া।
প্রশ্নে যে কয়টি কাজ বা চাকরির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তথা, গায়রে মাহরাম মেয়েদের সরাসরি পড়ানো, সহশিক্ষার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, বেগানা নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করে এমন চাকরি, সুদি ব্যাংক বা বিমা কোম্পানিতে চাকরি- এসবই সম্পূর্ণ নাজায়েয কাজ ও শরীয়ত পরিপন্থী পেশা। এধরনের নাজায়েয চাকরি বা প্রকাশ্য নাজায়েয কাজে জড়িত ব্যক্তি ইমাম হওয়ার যোগ্য নয়। এমন ব্যক্তির পেছনে নামায পড়া মাকরূহে তাহরীমী। সুতরাং মসজিদের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য এধরনের ব্যক্তিকে ইমাম নিয়োগ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা।
এধরনের নাজায়েয পেশায় যুক্ত কেউ ইমাম হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে ইমামেরই উচিত, ইমামতির গুরুত্ব ও মহত্ত্ব উপলব্ধি করে নিজ থেকে এধরনের নাজায়েয চাকরি ছেড়ে দেওয়া। মসজিদের দায়িত্বশীলগণও ইমামকে এমন চাকরি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করবে। কিন্তু ইমাম যদি উক্ত চাকরি না ছাড়েন, তাহলে মসজিদের দায়িত্বশীলদের উচিত হবে, তার পরিবর্তে দ্বীনদার পরহেযগার যোগ্য আলেমকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। তবে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে মসজিদের যিম্মাদার, মুসল্লীবৃন্দ এবং ইমাম সাহেবের মধ্যে পরস্পর বোঝাপড়ার মাধ্যমে, শরীয়তের বিধানের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিয়ে। এ নিয়ে কোনো প্রকার দলাদলি বা ফেতনা ফাসাদ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
উল্লেখ্য, এধরনের ব্যক্তিদের পেছনে নামায পড়া যদিও মাকরূহ, তবে কেউ পড়ে ফেললে তা আদায় হয়ে যায়। তাই পেছনে আদায়কৃত নামায পুনরায় পড়তে হবে না।