আবদুল্লাহ - ঢাকা

৫৬৫০. প্রশ্ন

আমি একদিন ওযু করতে বসে চেহারা ও হাত ধৌত করি। এমতাবস্থায় ট্যাপের পানি বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানতে পারলাম ট্যাংকির পানি শেষ হয়ে গেছে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর আবার পানি এল। তারপর আমি পুনরায় ওযু করতে বসি। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার আগের ওযুর বাকি অংশ পুরা করে নিলেই হবে, নাকি পুনরায় ওযু করতে হবে?

উত্তর

এক্ষেত্রে পুনরায় শুরু থেকে ওযু করা উত্তম। কেননা ওযুতে এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা সুন্নত। অবশ্য এ অবস্থায় অঙ্গগুলো শুকিয়ে গেলেও ওযু ভেঙে যায় এমন কোনো কিছু যদি না ঘটে থাকে তাহলে বাকি ওযু সম্পন্ন করে নিলেও হয়ে যাবে।

-মুআত্তা মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৫০; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৫৬; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১২২

শেয়ার লিংক

সিনান - উত্তরা, ঢাকা

৫৬৫১. প্রশ্ন

প্রস্রাব করার পর ভালো করে ঢিলা ব্যবহার করা সত্ত্বেও বারবার মনে হতে থাকে, মুত্রফোঁটা বের হয়েছে। নামাযে রুকুতে বা সিজদায় যাওয়ার সময় এমনটা খুব হয়। কিন্তু যাচাই করে কিছুই পাই না। জানার বিষয় হল, এমতাবস্থায় আমার করণীয় কী? আর নামাযে মুত্রফোঁটা বের হলে কি নামায ভেঙে যাবে?

 

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনের পর সেখানে কিছু পানি ছিটিয়ে দেয়া। তারপর আর যাচাই করতে না যাওয়া এবং নামাযে দাঁড়িয়ে মুত্রফোঁটা আসল কি না সেদিকে ভ্রম্নক্ষেপ না করে নামায চালিয়ে যাওয়া। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-কে এক লোক তার এই সমস্যার কথা জানালে তিনি তাকে এমনটি করতে বলেন এবং তাকে এই আদেশ দেন যে-

إِذَا تَوَضّأتَ فَانْضَحْ فَرجَكَ بِالْمَاءِ، فَإِنْ وَجَدْتَ قُلْتَ: هُوَ مِنَ الْمَاءِ.

তুমি ওযু করার পর তোমার লজ্জাস্থানে পানি ছিটিয়ে নিবে। অতঃপর যদি আর্দ্রতা অনুভব হয় তবে সেটাকে তোমার ছিটানো পানির আর্দ্রতা বলে মনে করবে। (মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৮৩)

সুতরাং আপনিও এভাবে পবিত্রতা অর্জন ও নামায আদায় করবেন। আর ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহকে মোটেও স্থান দিবেন না।

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৯৫; কিতাবুল আছল ১/৫৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৮, ২৬৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৯

শেয়ার লিংক

হাফেজ আলাউদ্দীন - বরিশাল

৫৬৫২. প্রশ্ন

একদিন আমি আমাদের বাড়ির বাগানে কাজ করছিলাম। তখন মাগরিবের আযান হল। আমি ওযু করে মসজিদে গেলাম এবং মাগরিবের নামায আদায় করলাম। নামাযের পর দেখি, বাগানের কাজের সময় নখের ভিতর যে মাটি ঢুকেছে তা ওযুর পরও যায়নি। এ অবস্থায় কি আমার ওযু এবং ওই ওযু দিয়ে আদায়কৃত নামায সহীহ হয়েছে?

উত্তর

সাধারণ অবস্থায় মাটিতে পানি লাগলে তা ভিজে পানি নিচ পর্যন্ত চলে যায়। অর্থাৎ এটি শরীরে পানি পেঁৗছাতে প্রতিবন্ধক হয় না। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অবস্থা এমন হলে আপনার ওযু সহীহ হয়েছে এবং সে ওযু দিয়ে আদায়কৃত নামাযও সহীহ হয়েছে।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশাইখ, পৃ. ১৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২২; হালবাতুল মুজাল্লী ১/১৫১; আলবাহরুর রায়েক ১/১৩; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫৪

শেয়ার লিংক

মাহমুদুল হাসান - সালথা, ফরিদপুর

৫৬৫৩. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে একটি ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য আমার রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়। রক্ত দেওয়ার পর যোহরের নামাযের সময় হয়। আমি নতুন ওযু না করেই যোহরের নামায পড়ে নিই।

 

মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন  হল, আমার নামায কি সহীহ হয়েছে? সিরিঞ্জের সাহায্যে রক্ত বের করা হলে কি ওযুর সমস্যা হয়?

উত্তর

সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত নেওয়ার দ্বারা আপনার ওযু নষ্ট  হয়ে গেছে। কারণ শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হলে বা বের করলে উভয় অবস্থাতেই ওযু নষ্ট হয়ে যায়। তাই আপনাকে ওই দিনের যোহরের ফরযের কাযা পড়ে নিতে হবে।

-ফাতহুল কাদীর ১/৩৪দুরারুল হুক্কাম ১/১৩  শরহুল মুনইয়া, পৃ. ১৩৬, ১৩০; আলবাহরুর রায়েক ৩২; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৪

শেয়ার লিংক

জামিল আহমাদ - ভোলা

৫৬৫৪. প্রশ্ন

প্রতি বছর আমাদের বাড়ির পাশে একটি বড় গাছে অনেকগুলো বক একসাথে বাসা বাঁধে। ঐ গাছের নিচ দিয়েই আমাদেরকে মসজিদে যেতে হয়। প্রায়সময় এসব পাখি উপর থেকে বিষ্ঠা ছাড়ে। কখনো কম, কখনো বেশি। অনেকসময় এমনও হয় যে, নিজের অজান্তে ঐ বিষ্ঠা নিয়েই নামায আদায় করে ফেলি।

 

মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, নিজের অজান্তে ওসব পাখির বিষ্ঠা নিয়ে নামায আদায় করলে কি নামায সহীহ হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

বক হালাল পাখি। আর হালাল পাখির বিষ্ঠা নাপাক নয়। তাই তা কাপড়ে লাগার কথা জানা থাক বা না থাক, উভয় অবস্থায় তা নিয়ে নামায আদায় করলে নামায সহীহ হয়ে যাবে। তবে নামাযের আগে জানা গেলে এবং ময়লা স্থানটি ধুয়ে নেওয়া অথবা কাপড় পরিবর্তন করা সম্ভব হলে তা করে নামায আদায় করাই উত্তম।

-মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ১২৬৬; কিতাবুল আছল ১/৪৭; খিযানাতুল আকমাল ১/৩০; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৯৭; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩০; আলইখতিয়ার ১/১১৮

শেয়ার লিংক

হাসান - বরিশাল

৫৬৫৫. প্রশ্ন

আমার মাঝেমধ্যে কৃমির প্রকোপ খুব বেড়ে যায়। তখন কখনো তা পায়ুপথ থেকে বেরিয়ে আসে। আমি তা বুঝতে পারি।

 

মুহতারামের কাছে আমার জানার বিষয় হল, কৃমি যদি পায়ুপথ থেকে বেরিয়ে আসে তাহলে কি ওযু ভেঙ্গে যায়? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

হাঁ, পায়ুপথ থেকে কৃমি বের হয়ে আসলে ওযু নষ্ট হয়ে যায়। এর সাথে কোনো ময়লা বের হোক বা না হোক উভয় ক্ষেত্রে একই হুকুম।

-মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, বর্ণনা ৪১৫; কিতাবুল আছল ১/৪৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ১/৩৬৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৩১; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৬

শেয়ার লিংক

মোবারক - বছিলা, ঢাকা

৫৬৫৬. প্রশ্ন

আমি একজন হাফেয, প্রতি রমযানে তারাবী পড়াই। আমি কখনোই তারাবীতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমজোরে পড়তাম না। গত রমযানে জানতে পারলাম, মুক্তাদীদের খতম পূর্ণ করার জন্য একবার হলেও বিসমিল্লাহ জোরে পড়তে হয়। না হয় খতম অসম্পূর্ণ থেকে যায়। জানার বিষয় হল, উক্ত কথা কি সঠিক?

উত্তর

হাঁ, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমকুরআন মাজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত। দুই সূরার মাঝে পার্থক্য করার জন্য এই আয়াত নাযিল হয়েছে। সুতরাং মুক্তাদীদের কুরআনের খতম পূর্ণ হওয়ার জন্য কোনো এক সূরার শুরুতে উঁচু আওয়াজে একবার বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীমপড়ে নিবেন।

-আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/১২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯১;   আসসিআয়া ২/১৭০

শেয়ার লিংক

আহমাদ - কুমিল্লা

৫৬৫৭. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক অন্ধ ব্যক্তি গত কয়েক বছর যাবৎ আযান দিচ্ছে। সে সুন্নত তরীকায় আযান দিয়ে থাকে। গত কয়েক দিন থেকে এলাকার কিছু লোক বলতে লাগল, অন্ধ ব্যক্তির আযান সহীহ হয় না। এখন আমার জানার বিষয় হল, অন্ধ ব্যক্তির আযান কি সহীহ?

উত্তর

হাঁ, অন্ধ ব্যক্তির আযান সহীহ। হযরত উরওয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

أَنّ ابْنَ أُمِّ مَكْتُومٍ، كَانَ يُؤَذِّنُ لِلنّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَكانَ أَعْمَى.

হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় আযান দিতেন, আর তিনি ছিলেন অন্ধ। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২২৬৫)

অবশ্য অন্ধ ব্যক্তি যথা সময়ে আযান দেওয়ার ব্যাপারে ভুল করতে পারে। তাই চক্ষুষ্মান ব্যক্তি থাকলে তার আযান দেওয়াই উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

مَا أُحِبّ أَنْ يَكُونَ مُؤَذِّنُوكُمْ عُمْيَانَكُمْ.

তোমাদের মধ্যে কোনো অন্ধ ব্যক্তি মুআযযিন হবে তা আমি পছন্দ করি না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ২২৬৬

মাবসূত, সারাখসী ১/২৩৭; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৭৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৯৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৫; রদ্দুল মুহতার ১/৩৯১

শেয়ার লিংক

আবরারুল হক - টাঙ্গাইল

৫৬৫৮. প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে আমি একবার মসজিদে সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলাম। হঠাৎ আমার দৃষ্টি পড়ে দেয়ালে ঝুলানো একটি ক্যালেন্ডারের উপর। আমি তখন ক্যালেন্ডারের উপরের দিকে বাংলায় লেখা কয়েকটি লাইন মনে মনে পড়ে ফেলি এবং বুঝেও ফেলি কিন্তু মুখে উচ্চারণ করিনি। হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, নামাযের ভেতর এভাবে মনে মনে বাংলা পড়ার কারণে আমার নামায কি ভেঙে গেছে?

উত্তর

নামায অবস্থায় উক্ত লেখাটি যদি বাস্তবেই মুখে উচ্চারণ না করে থাকেন তাহলে মনে মনে কল্পনা করার দ্বারা বা বোঝার কারণে আপনার নামায নষ্ট হয়নি। তবে মনে মনে এর কল্পনা করা ও তা বোঝার কারণে মাকরূহ হয়েছে।

প্রকাশ থাকে যে, নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা সুন্নত। বিনা কারণে ডানে-বামে তাকানো মাকরূহ। তদ্রƒপ ইচ্ছাকৃত সামনের কোনো লেখা বা বস্তুর দিকে তাকানোও মাকরূহ। এগুলো খুশুখুযুর খেলাফ কাজ। তাই এ  থেকে বিরত থাকা উচিত।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৫৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩৯৯; ফাতহুল কাদীর ১/৩৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০১; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৩৭০

শেয়ার লিংক

আবূ সালেহ - কাশিয়ানী, গোপালগঞ্জ

৫৬৫৯. প্রশ্ন

গত রমযানে আমি একদিন দিনের বেলা রোযার কথা ভুলে গিয়ে ওযুর সময় স্বাভাবিকভাবে গড়গড়া করে কুলি করছিলাম। তখন গলার ভেতরে অল্প পানি চলে যায়।

 

মুহতারামের নিকট জানতে চাই, আমার কি ওই দিনের রোযা ভেঙে গিয়েছে? যদি ভেঙে গিয়ে থাকে তাহলে কি আমার ওপর ওই দিনের কাযা-কাফফারা উভয়টি আবশ্যক হবে, নাকি শুধু ওই দিনের রোযার কাযা আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আপনার রোযার কথা স্মরণ ছিল না, তাই গড়গড়া করে ওযু করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে যাওয়াতে আপনার রোযা ভাঙেনি।

সুতরাং আপনাকে ওই দিনের রোযার কাযা-কাফফারা কোনোটিই আদায় করতে হবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৫৮০; কিতাবুল আছল ২/১৫০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২; রদ্দুল মুহতার ২/৪০১

শেয়ার লিংক

হাফসা জান্নাত - হবিগঞ্জ, সিলেট

৫৬৬০. প্রশ্ন

এবার রমযানে আমার ছোট বোন গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় আমাকে এক ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। আলহামদু লিল্লাহ, বুঝ হওয়ার পর থেকে আমি কখনো রোযা ভাঙিনি। তাই ঐদিন রক্ত দেওয়ার পরও আমি রোযা ভাঙিনি। তখন আমাকে কেউ কেউ বলল, রক্ত বের হলে যেমন ওযু ভেঙে যায়, তেমনি রোযাও ভেঙে যায়।

 

মুহতারামের কাছে জানতে চাই, বাস্তবেই কি রক্ত দেওয়ার দ্বারা রোযা ভেঙে যায়? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

না, রক্ত দিলে রোযার ক্ষতি হয় না। তাই আপনার উক্ত রোযা নষ্ট হয়নি। তা সহীহভাবে আদায় হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

احْتَجَمَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَهُوَ صَائِمٌ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৯)

প্রকাশ থাকে যে, রোযা অবস্থায় রক্ত দিলে দুর্বল হয়ে পড়া এবং রোযা রাখতে বেশি কষ্ট হওয়ার আশঙ্কা হলে বেশি ওজর ছাড়া রক্ত দেয়া মাকরূহ হবে। অবশ্য এমন আশঙ্কা না থাকলে রক্ত দিতে অসুবিধা নেই।

-কিতাবুল আছল ২/১৪৬; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৩৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৬৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৬

শেয়ার লিংক

হাসান জামিল - ঢাকা

৫৬৬১. প্রশ্ন

এবার ৯ই যিলহজ্ব রোযা রাখার তাওফিক হয়। আসরের পর ইফতারী ক্রয় করার জন্য  রিকশায় করে বাজারে যাই। পথে হঠাৎ একটি মশা বা মাছি উড়ে এসে গলার ভেতর চলে যায়। অনেক চেষ্টা করেও তা বের করা সম্ভব হয়নি। আমার রোযা ভেঙে গেল কি না এ নিয়ে আমি খুব পেরেশান।

 

তাই মুহতারামের কাছে জানতে চাই, অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর মশা বা মাছি ঢুকে যাওয়ার দ্বারা কি রোযা ভেঙে যায়? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

রোযা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর মশা, মাছি ঢুকে গেলে রোযা নষ্ট হয় না। মুজাহিদ রাহ. হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-

الرّجُلِ يَدْخُلُ حَلْقَهُ الذّبَابُ، قَالَ: لَا يُفْطِرُ.

কারো গলার ভেতর মাছি প্রবেশ করলে রোযা ভাঙে না। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৯৮৮৬

কিতাবুল আছল ২/১৬৯; মাবসূত, সারাখসী ৩/৯৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৬১; ফাতহুল কাদীর ২/২৫৯

শেয়ার লিংক

আহমাদ - ফরিদপুর

৫৬৬২. প্রশ্ন

আমি মুহাররমের নয় তারিখে রোযা রাখি। দুপুর বেলায় হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হই। হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় রাস্তায় ভুলে এক গ্লাস শরবত কিনে পান করে ফেলি। তারপর যখন গাড়ির সিটে বসি তখন আমার স্মরণ হয় যে, আমি রোযাদার। পরে দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে পূর্ণ বিরত থাকি। এখন আমার জানার বিষয় হল, আমার উক্ত রোযাটি কি সহীহ হয়েছে, নাকি কাযা করে নিতে হবে?

উত্তর

আপনার উক্ত রোযাটি সহীহ হয়েছে। কাযা করতে হবে না। কেননা রোযাদার ভুলবশত কিছু খেলে বা পান করলে রোযা নষ্ট হয় না। চাই তা ফরয রোযা হোক বা নফল রোযা।

হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِذَا نَسِيَ فَأَكَلَ وَشَرِبَ، فَلْيُتِمّ صَوْمَهُ، فَإِنّمَا أَطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ.

রোযাদার ভুলে পানাহার করে ফেললে সে তার রোযাকে পুরা করবে। কেননা আল্লাহ তাআলাই তাকে পানাহার করিয়েছেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৩৩

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭১; আলইখতিয়ার ১/৪১২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪৪৯

শেয়ার লিংক

কাউসার আহমাদ - তালতলা, ঢাকা

৫৬৬৩. প্রশ্ন

স্ত্রীর প্রতি ভালবাসার কারণে মাঝেমধ্যে আমি তাকে আপু বলে ডাকি। কিছুদিন আগে হঠাৎ আমার ভেতর খটকা লাগে যে, এই শব্দে স্ত্রীকে সম্বোধন করা কি ঠিক। তো আমি জানতে চাই, স্ত্রীকে আপু বলে সম্বোধন করার বিধান কী?

উত্তর

স্ত্রীকে আপু বলে ডাকা উচিত নয়। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে এভাবে বলতে শুনে তা থেকে বারণ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২১০)

তাই স্ত্রীকে এভাবে সম্বোধন করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তবে এর দ্বারা  বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না।

-ফাতহুল কাদীর ৪/৯০-৯১; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭; বাযলুল মাজহুদ ১০/৩২২

শেয়ার লিংক

রাইয়ান আহমেদ - ঢাকা

৫৬৬৪. প্রশ্ন

আমার বাবা সাভারে তার নিজের জমিতে বাড়ি বানানোর কাজ শুরু করেছেন। সেখানে কাজের জন্য প্রতিদিন কখনো ৫ জন আবার কখনো ১০ জন শ্রমিককে দৈনিক নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সারা দিনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। যেহেতু এখন বর্ষাকাল, তাই কখনো এমন হয় যে, শ্রমিকরা কাজে আসার পর বৃষ্টির কারণে পুরা দিন কোনো কাজই করতে পারে না। প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে কি আমার বাবার জন্য তাদেরকে ঐ দিনের পারিশ্রমিক দেওয়া জরুরি?

উত্তর

শ্রমিকরা বৃষ্টির কারণে যদি কোনো কাজই করতে না পারে, তাহলে তারা পারিশ্রমিকের হকদার হয় না। তাই এ অবস্থায় পারিশ্রমিক দেওয়া জরুরি নয়।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ৬/১৪৩; মাজমাউল আনহুর ৩/৫৪৮; দুরারুল হুক্কাম ২/২৩৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৫০০; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৪৮৭

শেয়ার লিংক

আবদুর করীম - মোমেনশাহী

৫৬৬৫. প্রশ্ন

আমি আমার ছোট ভাইকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছি মুযারাবার ভিত্তিতে ব্যবসা করার জন্য। চুক্তি হয়েছে, লভ্যাংশ অর্ধেক করে নিব। কিছুদিন পর সে আমার সাথে পরামর্শ করে নিজের থেকে দেড় লক্ষ টাকা উক্ত ব্যবসায় বিনিয়োগ করে। জানার বিষয় হল, এখন লভ্যাংশ বণ্টনের হিসাবটা কীভাবে করব? তার বিনিয়োগকৃত টাকার জন্য কি তাকে অতিরিক্ত লাভ দিতে হবে, নাকি পূর্ব নির্ধারিত হারেই লভ্যাংশ বণ্টন করা যাবে?

 

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের ব্যবসার লাভ থেকে খরচাদি বাদ দিয়ে নীট মুনাফাকে ৬.৫০ (সাড়ে ছয়) ভাগ করতে হবে। এ সাড়ে ছয় ভাগের দেড় ভাগ এককভাবে আপনার ছোট ভাই পাবে। আর অবশিষ্ট ৫ ভাগের ২.৫০ (আড়াই ভাগ) পাবেন আপনি। আর আড়াই ভাগ ব্যবসা পরিচালনাকারী হিসাবে পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী আপনার ভাই পাবে। অর্থাৎ নীট মুনাফার ৬১.৫৩% আপনার ছোট ভাই পাবে। আর আপনি পাবেন ৩৮.৪৬%।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৪৯; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ১৪১৭; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৪/৩৪৯

শেয়ার লিংক

আফিফ আবদুল্লাহ - ঢাকা

৫৬৬৬. প্রশ্ন

আমি সৌদি প্রবাসী। ১০ বছর যাবৎ সৌদিতে আছি। সম্প্রতি গ্রামে একটি ভবন নির্মাণের ইচ্ছা করেছি। সে উদ্দেশ্যে আমি আমার ভাগিনার একাউন্টে ৭ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছি। কিছু ঝামেলার কারণে কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছিল। তাই টাকাটা প্রায় দেড় বছর যাবৎ একাউন্টে পড়ে আছে। কিছুদিন আগে জানতে পারলাম, ভাগিনা আমার অনুমতি ছাড়াই সেখান থেকে দেড় লক্ষ টাকা ব্যবসায় খাটিয়েছে এবং কিছু লাভও করেছে। জানার বিষয় হল, তার জন্য কি কাজটা জায়েয হয়েছে? এখন করণীয় কী?

উত্তর

আপনার প্রেরিত ৭ লক্ষ টাকা ভাগিনার কাছে আমানত হিসাবে ছিল। আপনার অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে দেড় লক্ষ টাকা ব্যবসায় খাটানো জায়েয হয়নি। আমানতের খেয়ানত হয়েছে। সুতরাং ঐ টাকা দিয়ে সে যা লাভ করেছে তার জন্য তা ভোগ করা জায়েয হবে না। বরং গরীব-মিসকীনদের সদকা করে দিতে হবে।

-মাবসূত, সারাখসী ১১/১১১; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৭২তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৪০৭; ফাতহুল কাদীর ৬/১০৪; মাজমাউল আনহুর ৩/৪৭৩ 

শেয়ার লিংক

মশিউর রহমান - রাজশাহী

৫৬৬৭. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় ক্ষেতে কাজ করার জন্য দিন মজুরদের সঙ্গে এভাবে চুক্তি করা হয় যে, তারা যদি মালিকের বাড়িতে সকাল ও দুপুর দুই বেলা খাবার খায় তাহলে তাদের পারিশ্রমিক দিন প্রতি ৫৫০ টাকা। আর যদি খাবার না খায় তাহলে ৬০০ টাকা। আর খাবার খাওয়ানোর ক্ষেত্রে কী খাবার দেয়া হবে তা নির্ধারিত থাকে না; বরং প্রত্যেকেই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী খাওয়ানোর চেষ্টা করে। জানার বিষয় হল, এভাবে খাবার খাইয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া জায়েয কি না?

উত্তর

খাবার খাওয়ানোও পারিশ্রমিকের অন্তভুর্ক্ত হতে পারে। সুতরাং আপনাদের এলাকার প্রচলন অনুযায়ী উপরোক্ত উভয় পদ্ধতিই বৈধ আছে।

উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে খাবারের ধরন পূর্ব থেকে নির্ধারণ না করা হলেও কোনো অসুবিধা নেই। বরং গৃহস্থের সামর্থ্য ও প্রচলন অনুযায়ী খাবার দিলেই যথেষ্ট হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৪২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৭; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ : ৫৭৬; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ২/৬৭৫

শেয়ার লিংক

মাহমুদুল্লাহ - টাঙ্গাইল

৫৬৬৮. প্রশ্ন

বিনীত নিবেদন এই যে, আমার আব্বা একজন ব্যবসায়ী। তিনি দীর্ঘ ১৩ বছর গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি করার পর আল্লাহর দয়ায় হজ্ব যান। হজ্ব থেকে ফেরার পর তিনি তার ভুল বুঝতে পারেন যে, তার এই কাজ শরীয়তসম্মত নয়। তাই, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে টাইলস, মটরস, সেনেটারী এগুলোর ব্যবসা করেন। কিন্তু কিছু পারিবারিক ও বহিরাগত কারণে তিনি নিজেই এই ব্যবসাটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এখন তিনি ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট নিজ মালিকানাধীনে নিতে চাচ্ছেন। এখন শুধু ব্যাংকটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছেন। উক্ত এজেন্টভুক্ত ব্যাংকটিতে ইসলামী ব্যাংক-এর সমস্ত কার্যক্রম থাকবে। যেমন- টাকা লেনদেন, বীমা করা, বিদেশে টাকা আদান-প্রদান করা, শিক্ষার্থী একাউন্ট, এটিএম বুথ ইত্যাদি। তো ব্যাংকটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম চলবে ইসলামী ব্যাংকের অধীনে। আমার আব্বু শুধু ব্যাংকটির লেনদেনের উপর কিছু পার্সেন্ট পাবেন। আর ব্যাংকটিতে কিছু গরীব বেকার মানুষদেরকে নিয়োগ দেবেন।

 

অতএব, মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাচ্ছি যে, আমার আব্বুর ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট নিজ মালিকানাধীন নেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ঠিক হবে। আর ঠিক না হলে এখন কী করণীয়?

বর্তমানে তিনি কর্মহীন অবস্থায় আছেন। আর কিছুদিনের মধ্যে হয়তোবা ব্যাংকটিতে যুক্ত হবেন। সুতরাং ইসলামী ব্যাংক ও ব্যাংকটির এজেন্ট সম্পর্কে যাবতীয় বিধান জানিয়ে বাধিত করবেন। আর এ বিষয়টিও জানিয়ে বাধিত করবেন যে, এখন আমার আব্বুর কী করণীয়? আর এটি ঠিক না হলে কোনো একটি নির্দিষ্ট কাজের পরামর্শ জানিয়ে বাধিত করবেন, যেটি সম্পূর্ণ হালাল।

উত্তর

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলো শরীয়া মোতাবেক পরিচালিত হওয়ার দাবি করলেও বাস্তবে তাদের কার্যক্রম এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। বাস্তব পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রমগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে শরীয়া নীতিমালা পালিত হয় না; বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু কিছু কাগজপত্রে দস্তখত করানো এবং বিভিন্ন আরবী পরিভাষার ব্যবহার পর্যন্তই তা সীমিত থাকে। তাই পূর্ণ শরীয়া পালনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এসব ব্যাংকে চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়া এবং এর বেতনাদি বা কমিশন ভোগ করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ হবে। কেননা চাকরি করা বা এজেন্ট হওয়ার মানে হলে, সরাসরি তাদের কাজে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করা। যা সংশ্লিষ্ট কারবার হালাল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার আগে করা যায় না।

উল্লেখ্য, ইসলামে জীবিকা উপার্জনের বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি তা হালাল ও বৈধ পন্থায় হওয়াও অতীব জরুরি। সুতরাং আপনার বাবাকে জীবিকা নির্বাহের জন্য হালাল কোনো উপার্জন ব্যবস্থার অনুসন্ধান করতে হবে। দুনিয়াতে হালাল পেশার তো (চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি) অনেক আছে। অভিজ্ঞজনদের সাথে পরামর্শ করে আপনার বাবার উপযোগী যে কোনো কাজই তিনি করতে পারেন।

-সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৬; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪২৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দা ১২/১/৬৯৭

শেয়ার লিংক

আবদুল আযীয - যাত্রাবাড়ী

৫৬৬৯. প্রশ্ন

আমি আমাদের গ্রামের এক লোকের সঙ্গে এভাবে চুক্তি করি যে, আমি এখন তাকে ১৬ হাজার টাকা দিব। ৬ মাস পর সে আমাকে উন্নতমানের ২০ মন গম দেবে। এদিকে হঠাৎ আমার কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। তাই আমি এক প্রতিবেশীকে বললাম, আমি অমুক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে ২০ মন গম কিনেছি। তুমি আমাকে এখন ৮ হাজার টাকা দিলে আমি ওখান থেকে ১০ মন গম তোমার কাছে বিক্রি করে দিব। সে এতে রাজি হয়ে আমাকে ৮ হাজার টাকা দেয়। আর আমি তার কাছে ১০ মন গম বিক্রি করে দেই। জানার বিষয় হল, আমার উক্ত বিক্রি কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে প্রতিবেশীর কাছে গম বিক্রি করা জায়েয হয়নি। কারণ, বাকিতে ক্রয় করা পণ্য বুঝে পাওয়ার আগে অন্যত্র বিক্রি করা নাজায়েয। হাদীসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

مَنِ ابْتَاعَ طَعَامًا فَلَا يَبِعْهُ حَتّى يَسْتَوْفِيَهُ، قَالَ ابْنُ عَبّاسٍ: وَأَحْسِبُ كُلّ شَيْءٍ مِثْلَهُ.

কোনো ব্যক্তি খাবার ক্রয় করলে তা বুঝে পাওয়ার আগে যেন অন্য জায়গায় বিক্রি না করে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি মনে করি, সব পণ্যের ব্যাপারে একই হুকুম প্রযোজ্য। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫২৫)

-শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৩/১৩৩; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪; ফাতহুল কাদীর ৬/২৩০; দুরারুল হুক্কাম ১/১৯৬

শেয়ার লিংক

মামুনুর রশীদ - বাড্ডা

৫৬৭০. প্রশ্ন

আমার এক আত্মীয় বিদেশে থাকে। ঈদের পর দেশে আসার সময় তাকে বলেছিলাম, একটা আইফোন ফাইভ নিয়ে আসতে। তো সে ফোনটা কিনে আমাকে জানায় এবং সে এ কথাও বলে যে, তুমি অনুমতি দিলে মোবাইলের প্যাকেট খুলে দেখব। আমি বললাম, দেখো তবে খেয়াল রেখ, যেন নষ্ট না হয়। সে দেখেছে ভালো কথা, কিন্তু ফোনটা দেশে আনার সময় ভুলে ফোনটা প্যাকেটে না ভরে নিজের হাতব্যাগে করে নিয়ে এসেছে। প্যাকেটটা রেখেছে বড় ব্যাগে অন্যান্য জিনিসপত্রের সাথে। দেশে আসার পর বিমানবন্দর থেকে যখন বাসায় ফিরছিল তখন হাত ব্যাগটা বড় ব্যাগগুলোর নীচে চাপা পড়ে স্ক্রীনে খুব কঠিন একটা দাগ পড়েছে। এখন আমি তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলছি, কিন্তু সে এতে রাজি হচ্ছে না। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে কি সে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য নয়?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত বর্ণনা অনুযায়ী আপনার আত্মীয় যেহেতু মোবাইলটি প্যাকেট থেকে বের করার পর তাতে আর রাখেনি বরং খোলা অবস্থায় নিয়ে এসেছে, সুতরাং এ কারণে দাগ পড়লে অথবা মোবাইলে অন্য কোনো ক্ষতি হলে তার থেকে ক্ষতিপূরণ নেয়া জায়েয হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৩৮; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ৩/১১৭; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৬৭; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়া, মাদ্দাহ, ৭৮২, ৭৮৭; দুরারুল হুক্কাম শরহুল মাজাল্লাহ ২/২৭১

শেয়ার লিংক

ওয়ালিউল্লাহ - পাবনা

৫৬৭১. প্রশ্ন

আমার একটা বিরিয়ানির দোকান আছে। মজাদার বিরিয়ানি রান্নার ব্যাপারে আমার বেশ প্রসিদ্ধি আছে। তাই আমার দোকানে ক্রেতাদের ভীড়ও  বেশি হয়। আমার দোকানের আশেপাশে আরো এক-দুটো বিরিয়ানির দোকান আছে; কিন্তু সেখানে ক্রেতাদের ভীড় তেমন দেখা যায় না। এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে লোকজন আমাকে দিয়েই রান্না করায়। মাঝেমধ্যে আমার এখানে একসঙ্গে এত বেশি অর্ডার চলে আসে যে, আমি অর্ডার সরবরাহ করতে হিমশিম খেয়ে যাই। তখন আমি কিছু অর্ডার পাশের দোকানগুলোতে ভাগ করে দেই। আমি জানি যে, ক্রেতারা যদি জানতে পারে যে, আমি অন্য কাউকে দিয়ে রান্না করাই তাহলে তারা খাবার নিতে চাইবে না। তা সত্ত্বেও বাধ্য হয়েই আমি এই কাজ করি। জানার বিষয় হল, আমার এই কাজ কি শরীয়তসম্মত?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, যারা আপনার কাছে খাবারের অর্ডার করে তারা আপনার হাতে রান্না করা খাবারই নিতে চায়। তাই এক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে না জানিয়ে অন্যকে দিয়ে রান্না করিয়ে সে খাবার তাদরেকে সরবরাহ করা বৈধ হবে না।

-আলহাবিল কুদসী ২/৭৭; আলইখতিয়ার ২/১৩৬; ফাতাহুল কাদীর ৮/২১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৮

শেয়ার লিংক

উসামা - সাতক্ষীরা

৫৬৭২. প্রশ্ন

আমার একট বন্ধু তার উপর কুরবানী ওয়াজিব না হওয়া সত্ত্বেও এ বছর সে কুরবানী করে। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয় দিনে অর্থাৎ যিলহজে¦র ১১ তারিখে তার পিতা মারা যায়। তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে কয়েক কাঠা জমি ও নগদ ৭০,০০০/- টাকা তার হিস্যায় আসে।

 

এখন তার জানার বিষয় হল, উক্ত ক্ষেত্রে কি তার উপর আরেকটি কুরবানী করা ওয়াজিব, নাকি নফল কুরবানীটা তার জন্য যথেষ্ট হয়েছে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত কুরবানী করার দ্বারা তার এ বছরের ওয়াজিব কুরবানীও আদায় হয়ে গেছে। তাই তার জন্য এ বছর আর কুরবানী করা আবশ্যক নয়।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৮১; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/২৯২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৯; তাকমিলাতুল বাহরির রায়েক ৮/১৭৮

শেয়ার লিংক

মুনির হুসাইন - ভোলা

৫৬৭৩. প্রশ্ন

একাধিক ব্যক্তি মিলে মৃতের পক্ষ থেকে একটি ছাগল বা গরুর এক সপ্তমাংশ দ্বারা নফল কুরবানী করলে তা কি জায়েয হবে? যেমন চার ভাই মিলে একটি ছাগল কুরবানী করল বা ২০-৩০ জন মিলে গরুর এক সপ্তামাংশ দ্বারা কুরবানী করল। এভাবে কুরবানী করা কি জায়েয? একটি বাংলা বইয়ে আছে- কয়েকজন মিলে একটি ছাগল বা গরুর এক সপ্তমাংশে শরীক হয়ে ঈসালে সাওয়াবের জন্য কুরবানী করলে তা জায়েয আছে। এমনকি ৪০ জন বা ১০০ জন মিলেও এমন কুরবানী করা জায়েয। এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানতে চাই।

উত্তর

একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা কেবল একজনের কুরবানী করা জায়েয। কয়েকজন মিলে যদি এমন একটি প্রাণী কুরবানী দেয় তাহলে তা সহীহ হবে না। তদ্রূপ উট, গরু বা মহিষের এক সপ্তমাংশেও কয়েকজন মিলে একটি অংশ কুরবানী করা জায়েয নয়।

উল্লেখ্য, একাধিক ব্যক্তি মিলে একটি ছাগল বা গরুর এক সপ্তমাংশ কুরবানী করতে চাইলে এর সঠিক পন্থা হল, সকলে মিলে নিজেদের টাকাগুলো একত্র করে কোনো একজনকে এর মালিক বানিয়ে দেবে। অতঃপর ঐ ব্যক্তি তাদের উদ্দিষ্ট মৃতের পক্ষ থেকে অথবা যে কোনো জনের পক্ষ থেকে তা কুরবানী করবে। এক্ষেত্রে গোশতের মালিক হবে সে ব্যক্তি। সে তা নিজেও নিতে পারবে। অন্যদেরও দিতে পারবে এবং দান-সদকাও করতে পারবে।

-মাবসূত, সারাখসী ১২/১২; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫২; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ৭৯৪

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ নোমান - মুন্সীগঞ্জ, সদর

৫৬৭৪. প্রশ্ন

(ক) মুহতারাম মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চাচ্ছি যে, আমার ভাই একটি ইসলামী ব্যাংকে এমসি পোস্টে চাকরি করেন।

অতএব আমার ভাইয়ের উক্ত চাকরি করা বৈধ হবে কি?

(খ) কোনো ব্যক্তি তার সৎ পুত্রবধূর সাথে দেখা দিতে পারবে কি? দলীল সহকারে জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

(ক) আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো শরীয়াভিত্তিক বলে দাবি করলেও বাস্তব পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এদের বিনিয়োগ কার্যক্রমগুলোতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথভাবে শরয়ী নীতিমালা পরিপালিত হয় না। তাই যতদিন পর্যন্ত এসব ব্যাংকে পূর্ণ শরীয়া পরিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত না হবে ততদিন পর্যন্ত এসব ব্যাংকে চাকরি করা ও এর বেতনাদি ভোগ করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ পথ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৬; জামে তিরমিযী, হাদীস ১২৩৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪২৬; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, জিদ্দা ১২/১/৬৯৭

(খ) সৎ পুত্রবধূ মাহরামের অন্তভুর্ক্ত নয়।  তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা যাবে না। পূর্ণ পর্দা করতে হবে। -রদ্দুল মুহতার ৩/৩১; ফাতাওয়া খাইরিয়া ১/৩৯

শেয়ার লিংক