ফরীদ উদ্দীন - হাতিয়া

৩২৯৩. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পিছলে পড়ে যাই এবং আমার ডান পায়ের গোড়ালি মচকে যায়। তখন লোকজন আমাকে ধরাধরি করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রেখে অবশিষ্ট অংশে প্লাস্টার করে দেন। হুযুরের কাছে আমি জানতে চাই, এ অবস্থায় আমার অযু গোসলের পদ্ধতি কী হবে? আমার জন্য কি তায়াম্মুম করা বৈধ হবে?

 


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে অযুর জন্য আপনি প্লাস্টার করা পা ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ স্বাভাবিক নিয়মেই ধুবেন। আর প্লাস্টারকৃত পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা থাকলেও তা ধোয়া যেহেতু সমস্যা তাই ঐ পা আঙ্গুলসহ পুরোটাই মাসাহ করবেন।

অবশ্য এ অবস্থায় জর বা অন্য কোনো কারণে পানি ব্যবহার করতে সমস্যা হলে তায়াম্মুম করতে পারবেন। আর সমস্যা না হলে উপরোক্ত নিয়মে অযুই করতে হবে, তায়াম্মুম করা জায়েয হবে না। আর এ অবস্থায় গোসল ফরয হলে পস্নাস্টার করা অংশটুকুতে পলিথিন জাতীয় কিছু পেঁচিয়ে গোসল করবেন। এরপর পলিথিন খুলে যে অংশটুকু ধোয়া যায়নি তা মাসাহ করে নিবেন। আর এভাবে গোসল করা সম্ভব না হলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৬২৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩১২, ১/৩৫৭; শরহুল মুনইয়া ১১৬; ১১৮ বাদায়েউস সানায়ে ১/৯০; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৬৮

শেয়ার লিংক

মুনীফ আম্মার - শেওড়াপাড়া, ঢাকা

৩২৯৪. প্রশ্ন

 

আমার ছোট ভাই মাদরাসায় পড়ে। একদিন ও একাকী বাসায় মাগরিবের নামায পড়ছিল। তাকে দেখে আমিও তার সাথে নামাযে শরিক হই। কিন্তু আমি নামাযে দাঁড়ানোর পরও সে আগের মতোই আস্তে আস্তে সূরা কিরাত পাঠ করে নামায শেষ করে। সালাম ফেরানোর পর তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, আমি তো তোমার ইমামতির নিয়ত করিনি। হুযুরের কাছে জানতে চাই, সে যেহেতু ইমামতির নিয়ত করেনি তাই ঐ দিনের মাগরিবের নামায কি আদায় হয়েছে?


 

উত্তর

 

মুক্তাদির নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইমামের ইমামতির নিয়ত করা আবশ্যক নয়। তাই সে ইমামতির নিয়ত না করলেও আপনার নামায সহীহ হয়েছে। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ছোট ভাই যেহেতু ইমামতির নিয়ত করেনি তাই তার উপর মাগরিবের নামাযে কেরাত জোরে পড়া ওয়াজিব হয়নি। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার ছোট ভাইয়ের নিম্নস্বরে কেরাত পড়াটা ভুল হয়নি এবং এ কারণে ইমাম মুক্তাদী কারো নামাযে ত্রম্নটিও হয়নি। 

অবশ্য সে যদি আপনার ইক্তিদাকে লক্ষ্য করে ইমামতির নিয়ত করত তবে তখন জোরে কিরাত পড়া আবশ্যক হত।

 

-শরহুল মুনইয়া ২৫১, ৬১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৮৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; রদ্দুল মুহতার ১/৫৩২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৬৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আদনান - ফেনী

৩২৯৫. প্রশ্ন

আমার পেছনের কিছু নামায কাযা ছিল। তা আদায় করে নিয়েছি। বর্তমানে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে নামায কাযা করি না। কোনো কারণবশত অনিচ্ছাকৃত কখনো কোনো ওয়াক্ত কাযা হয়ে গেলে পরবর্তী ওয়াক্তেই তা আদায় করে নেই। একদিন সকালে সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে না পারায় ফজরের নামায পড়তে পারিনি। যোহরের নামাযের সময় হলে মসজিদে যাই। মসজিদে পৌঁছে দেখি, যোহরের জামাতের কয়েক রাকাত হয়ে গেছে। তখন ফজরের কাযা নামাযের কথা স্মরণ হয়। এখন প্রশ্ন হল, এ অবস্থায় আমার কী করণীয়। এক্ষেত্রে যদি আগে ফজরের নামায পড়ি তাহলে যোহরের জামাত শেষ হয়ে যাবে। তাই আগে ফজরের কাযা পড়ব, নাকি তখন যোহরের জামাতে শরিক হয়ে যাব? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

আপনার যেহেতু পেছনের নামায কাযা নেই তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ফজর পড়ার কারণে যদি যোহরের জামাত নাও পান তবুও আপনাকে আগে ফজরের কাযা নামায আদায় করতে হবে। এরপর যোহরের জামাত পেলে জামাতে শরিক হবেন। যদি জামাত না পান তাহলে যোহরের নামায একাকী পড়ে নিবেন।

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ২/৫-৭; কিতাবুল আসল ১/৩০৪; ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ১/১২২

শেয়ার লিংক

আনিসুর রহমান - কুষ্টিয়া

৩২৯৬. প্রশ্ন

জামান সাহেবের বাড়ি রংপুর। ব্যবসার উদ্দেশ্যে তিনি চট্টগ্রাম শহরে গেছেন। সেখানে তিনি বিশ দিন থাকবেন। কিন্তু দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ বাড়ি থেকে তার মেয়ের অসুস্থতার খবর আসে। তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে আরো একদিন থেকে বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্তনেন। পেছনের দশদিনের চার রাকাত বিশিষ্ট নামায তো তিনি মুকীম হিসেবে আদায় করেছেন কিন্তু এখন যেহেতু তার বিশ দিন থাকা হচ্ছে না বরং সামনের একদিনসহ মোট এগারো দিন থাকা হবে তাই এ অবস্থায় আগামী একদিনের নামায চট্টগ্রাম শহরে থাকা অবস্থায় কীভাবে পড়বেন? কসর, নাকি পূর্ণ নামায পড়বেন?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম শহরে থাকাকালীন আগামী একদিনের নামাযও তাকে মুকীম হিসেবেই আদায় করতে হবে। কসর করা যাবে না। কেননা চট্টগ্রাম শহরে পনেরো দিন বা তার অধিক থাকার নিয়তে প্রবেশ করার দ্বারা তিনি সেখানে মুকীম হয়ে গেছেন। সফরসম দূরত্বের উদ্দেশ্যে ঐ স্থান ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তিনি মুকীমই থাকবেন। শুধু নিয়ত পরিবর্তনের কারণে ইকামতের হুকুম বাতিল হবে না। তাই রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যখন তিনি চট্টগ্রাম সিটি শহরের সীমানা অতিক্রম করবেন তখন থেকে তিনি মুসাফির গণ্য হবেন। 

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৯৪; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৫/১৭৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

৩২৯৭. প্রশ্ন

ইমাম সাহেব ঈদের নামাযের পর খুতবা দেওয়ার সময় মাঝে মাঝে তাকবীর পড়েন। তখন মুসল্লিগণও ইমামের সাথে সাথে উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে থাকে। এখন প্রশ্ন হল, ঈদের খুতবার সময় মুসল্লিগণের উচ্চস্বরে বা আস্তে তাকবীর বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?


উত্তর

ঈদের খুতবা চলাবস্থায় মুসল্লিদের জন্য সম্পূর্ণ চুপ থেকে খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। এ সময় কোনো ধরনের কথাবার্তা বলা অথবা তাকবীর বা অন্য কোনো তাসবীহ পাঠ করা জায়েয নেই। ইবনে জুরাইজ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আতা রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করেছি, আরাফা বা ঈদুল ফিতরের দিন ইমাম যখন খুতবা দিবে এবং মুক্তাদিগণ ইমামের কথা বুঝতে পারে তখন মুক্তাদিগণ কি আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বলেছেন, না। কোনো ঈদের (খুতবার) সময় কথা বলবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮২

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, চারটি স্থানে (অর্থাৎ খুতবায়) চুপ থাকা ওয়াজিব : জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও ইসতিসকার (খুতবার) সময়।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৩/২৮৩; কিতাবুল আছল ১/৩১৮; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; রদ্দুল মুহতার ২/১৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ১/ ৬১৯

শেয়ার লিংক

আমিনুল ইসলাম - ঢাকা

৩২৯৮. প্রশ্ন

সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবের ডান পায়ের গোড়ালি ভেঙ্গে যায়। তিনি দু সপ্তাহ ছুটিতে ছিলেন। গত সপ্তাহে তিনি মসজিদে আসেন এবং না দাঁড়িয়ে মিম্বরে বসেই খুতবা দেন। অথচ সেই স্থানে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার মতো আলেম বিদ্যমান ছিলেন। এ অবস্থায় খতিব সাহেবের জন্য কি বসে খুতবা দেওয়া ঠিক হয়েছে? বসে খুতবা দেওয়ার হুকুম কি? দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া কি জরুরি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া সুন্নত। বিনা ওজরে বসে খুতবা দেওয়া মাকরূহ। হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে জুমআর খুতবা দিতেন এবং উভয় খুতবার মাঝে সামান্য পরিমাণ সময় বসতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৬১

অবশ্য ওজরের কারণে বসে খুতবা দেওয়ার অবকাশ আছে। হযরত মুআবিয়া রা. শেষ বয়সে বসে খুতবা দিয়েছেন বলে প্রমাণিত আছে। তাই উপরোক্ত ওজরের কারণে খতিবের জন্য বসে খুতবা দেওয়া নাজায়েয হয়নি। 

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক; ৫২৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৯২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৬; আলবাহরুর রায়েক ২/১৪৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ বেলাল মাসরুর - খরনা, পটিয়া, চট্টগ্রাম

৩২৯৯. প্রশ্ন

আমার আম্মা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক এবং হৃদরোগে আক্রান্ত। এ কারণে তিনি অত্যন্তদুর্বল হয়ে পড়েছেন। ডাক্তার নিয়মিত ঔষধ খেতে বলেছেন। কোনো সময় ঔষধ না খেলে অসুস্থতা অনেক বেড়ে যায়। তাই আম্মা রমযান মাসে রোযা রাখতে পারেন না। গত রমযান মাসে কয়েকটি রোযা রাখার পর অসুস্থতা ও দুর্বলতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই পরে আর রোযা রাখতে পারেননি।

জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় আমার আম্মার জন্য রমযান মাসে রোযা না রেখে ফিদয়া দেওয়া জায়েয হবে কি? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

হাঁ, এ অবস্থায় আপনার আম্মার জন্য রমযান মাসে রোযা না রেখে ফিদয়া দেওয়া জায়েয হবে। তবে পরবর্তীতে কখনো রোযা রাখার মতো সুস্থতা ফিরে পেলে এ রোযাগুলোর কাযা করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে পূর্বের ফিদয়া যথেষ্ট হবে না। কারণ ফিদয়ার হুকুম ঐ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য, যে পরবর্তীতে কাযা আদায়ে সক্ষম নয়।

-রদ্দুল মুহতার ২/৪২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৭৫-৩৭৬

শেয়ার লিংক

নাবিল আহমদ - কুষ্টিয়া

৩৩০০. প্রশ্ন

গত রমযানে একদিন আমি রোযা অবস্থায় ভুলে পানি পান করে ফেলি। ফলে রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহার করি। এখন আমার করণীয় কী? আমাকে কি রোযার কাযা ও কাফফারা উভয়টা আদায় করতে হবে?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত অবস্থায় ভুলে পানি পান করার কারণে আপনার রোযা ভাঙ্গেনি। কারণ রোযা অবস্থায় ভুলে পানাহার করলে রোযা ভাঙ্গে না। পরে রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত পানাহারের কারণে রোযা ভেঙে গেছে। এক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে সংশয়ে পড়ে পানাহার করার কারণে আপনার উপর ঐ রোযার শুধু কাযা ওয়াজিব হবে,  কাফফারা দিতে হবে না তবে শরীয়তের বিধিবিধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞ কোনো আলেম থেকে  সঠিক মাসআলা না জেনে নিজের ধারণা অনুযায়ী আমল করা অন্যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরী। 

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৩৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৭; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪০১-৪০২; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৬৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাহমুদুল হাসান বাইজিদ - পূর্ব জাফরাবাদ, পুরান বাজার, চাদপুর

৩৩০১. প্রশ্ন

এক ব্যক্তির তিন মেয়ে দুই ছেলে। তাদের মধ্যে এক ছেলে পড়াশোনা করে। ছেলে হল বালেগ। আমার প্রশ্ন হল, ঐ ব্যক্তির নগদ ২ লক্ষ টাকা আছে। সে জানে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়েছে। টাকাগুলো ২ বছর তার অধীনে আছে। সে যাকাতের টাকাগুলো তার ঐ ছেলের পিছনে খরচ করতে চাচ্ছে। এটা কী বৈধ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

সন্তানাদিকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। সন্তান বালেগ হলেও সে পিতামাতার যাকাত গ্রহণ করতে পারবে না। তাই সন্তানকে যাকাতের টাকা দিলে বা তার পড়ালেখার পেছনে এ টাকা খরচ করলে যাকাত আদায় হবে না। 

-আল মুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৬

শেয়ার লিংক

আকবার হোসাইন - লক্ষ্মীপুর

৩৩০২. প্রশ্ন

ভাইবোনসহ আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট পাঁচজন। সকলের সদাকাতুল ফিতর আমাদের পিতা নিজেই আদায় করে থাকেন। তিনি ফিতরার টাকাগুলো প্রত্যেক ফকীরকে ১৫/২০ টাকা হারে ভাগ করে দেন। হুজুরের নিকট আমার প্রশ্ন হল, এভাবে এক ফিতরা কয়েকজনকে ভাগ করে দেওয়া যাবে কি? নাকি এক সদাকাতুল ফিতরের পুরোটা এক ফকীরকে দেওয়া জরুরি?


উত্তর

একটি ফিতরা একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া জায়েয। তাই একেকজনকে ১৫/২০ টাকা করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে। তবে একটি ফিতরা  একজনকে দেওয়া উত্তম।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/২০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৫৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৬৭; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩৯৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফুযায়েল - ঢাকা

৩৩০৩. প্রশ্ন

আমাদের বাসা ক্যান্টনমেন্টে। গাজীপুরে আমাদের একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। আমরা সেটি ভাড়া দেই। আমাদের ঐ বাড়ির উপর কি যাকাত দিতে হবে?


উত্তর

না, ঐ বাড়ির মূল্যের উপর যাকাত দিতে হবে না। তবে ঐ বাড়ি থেকে প্রাপ্ত ভাড়া বছর শেষে নেসাব পরিমাণ হলে তার যাকাত দিতে হবে। 

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৫৩; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৯২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জহিরুল ইসলাম - টাঙ্গাইল

৩৩০৪. প্রশ্ন

আমি ও আমার স্ত্রী উভয়েই নেসাবের মালিক। আমার শ্বশুর অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন। কিন্তু তার সৎ ভাইয়েরা জালিয়াতি করে সব সম্পদ লুটে নেয়। পরবর্তীতে মামলা মোকদ্দমা করেও তার কোনো সুরাহা হয়নি। এ অবস্থায় আমার শ্বশুর ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি বেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো সম্পদই তার অবশিষ্ট নেই। পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৮ জন। এদের মধ্যে ৫ জন প্রাপ্ত বয়স্ক বাকি ৩ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। বড় ছেলে স্বল্প বেতনে শিক্ষকতা করে এবং মাত্র এক হাজার টাকা পরিবারে খরচ হিসেবে দেয়। বড় দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের অবস্থা ভাল। আমার শ্বশুরের আত্মীয়স্বজন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। তারা আমার শ্বশুর বাড়িতে নির্দিষ্ট সময় বিশেষ করে দুই ঈদে তাদের আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে। সাহায্যের ধরন থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তাদেরকে যাকাতের টাকা দ্বারা সাহায্য করা হয়।

আমার জানার বিষয় হল, আমরা যেহেতু উভয়েই নেসাবের মালিক তাই আমাদের জন্য শ্বশুর বাড়ির খাবার-দাবার কি বৈধ? সেখান থেকে আমাদেরকে কোনো কিছু দিলে তা নেওয়া যাবে কি? যদি না হয় তাহলে আমরা যদি সেখানে বেড়াতে যাই তখন আমাদের করণীয় কী?


উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের জন্য যাকাত গ্রহণ করা জায়েয। তারা যাকাত হস্তগত করার পর এ থেকে আপনাদেরকে কোনো কিছু হাদিয়া দিলে কিংবা দাওয়াত করে খাওয়ালে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে। কেননা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তি যাকাত হস্তগত করার পর তা তার নিজস্ব মাল হয়ে যায়। তা যাকাতের মালের হুকুমে থাকে না। অতএব তারা নিজেদের অন্যান্য সম্পদের মতো এই টাকা থেকেও ধনী-গরিব যে কাউকে দাওয়াত দিতে পারবে এবং ধনীদের জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫০৯৭; ফাতহুল বারী ৫/২৪৩; শরহুল মাজাল্লাহ, মাদ্দাহ : ৯৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২০৩; উমদাতুল কারী ৯/৯২; বাযলুল মাজহূদ ৮/১৯৮; আলইসতিযকার ৫/৭৪; মানাসিক ৩৯৩

শেয়ার লিংক

তাহমীদ আর রাফিদ - তেজকুনীপাড়া, ঢাকা

৩৩০৫. প্রশ্ন

আমার খালাম্মার গয়নাগাটিসহ প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার যাকাতযোগ্য সম্পদ আছে এবং সেই সাথে আরো এক লক্ষ টাকা মোহর বাবদ খালুর কাছে পাওনা আছে। আমার প্রশ্ন হল, খালাম্মা যখন যাকাত আদায় করবেন তখন কি মোহরের ঐ এক লক্ষ টাকারও যাকাত আদায় করতে হবে?


উত্তর

না, আপনার খালাম্মা মহরের যে এক লক্ষ টাকা এখনো পাননি সে টাকার যাকাত তাকে এখন আদায় করতে হবে না। মহরের টাকা হসত্মগত হওয়ার পূর্বে ঐ টাকার উপর যাকাত আসে না। 

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৯৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩০৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭২; বাদায়েউস সানায়ে ২/৯০; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আলআমীন - ঢাকা

৩৩০৬. প্রশ্ন

 

আমার মামার মোবাইলের পার্টসের দোকান আছে। মামা চীন থেকে মাল এনে দেশে পাইকারী ব্যবসা করেন। হুযুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, যাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে ঐ পার্টসের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা হবে? এ দেশের মূল্য হিসেবে, নাকি চীনের? বিক্রয় মূল্য নাকি ক্রয়মূল্য? খুচরা মূল্য না পাইকারি মূল্য? আর যাকাতের হিসাবের ক্ষেত্রে ব্যবসার মাল কি ব্যক্তিগত মালের সাথে যুক্ত হবে, নাকি ব্যক্তিগত সম্পদ আর ব্যবসার সম্পদের নেসাব ভিন্ন ভিন্ন?


 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মামা যেদিন যাকাত আদায় করবেন সেদিন দেশের মার্কেটে পার্টসের পাইকারি মূল্য যত হবে সে হিসাবে যাকাত আদায় করবেন। এক্ষেত্রে দেশের পাইকারি বিক্রয় মূল্য ধর্তব্য হবে, ক্রয় মূল্য নয়। আর বছর পূর্ণ হলে ব্যবসার মালের সাথে ব্যক্তিগত স্বর্ণ-রূপা, টাকা-পয়সা ইত্যাদি যাকাতযোগ্য সব ধরনের সম্পদই হিসাব করতে হবে এবং যাকাতযোগ্য সকল সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে। 

-কিতাবুল আমওয়াল, আবু উবায়েদ কাসেম ইবনে সালস্নাম পৃ. ৫২১; বাদায়েউস সানায়ে ২/১১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৮৬, ২/৩০৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২২২, ২/২২৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/১৬৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইদরীস মিয়া - সেনবাগ, নোয়াখালি

৩৩০৭. প্রশ্ন

হজ্ব করার মতো কোনো আর্থিক সামর্থ্য আমার ছিল না। কিন্তু মনে হজ্ব করার খুব আগ্রহ ছিল। এরপর মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম-এর হজ্ব সফরনামা ‘‘বাইতুল্লাহর মুসাফির’’ পড়ে আগ্রহ আরো বেড়ে যায়। ফলে ২০১০ সালে আমার এক বন্ধুর সাথে হজ্বে যাই। আমার হজ্বের যাবতীয় খরচ সে বহন করেছে এ শর্তে যে, পরবর্তীতে সময়-সুযোগমতো তাকে আমি ঐ টাকা পরিশোধ করে দিব। হজ্ব করে আসার পর দুই বছরের মধ্যে আমি তাকে ঐ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। এখন আমার কাছে অনেক টাকা পয়সা আছে। এ বছর আমি আবার হজ্ব করতে চাচ্ছি। তাই হুযুরের নিকট জানতে চাই যে, আমার অস্বচ্ছল অবস্থায় আদায়কৃত হজ্ব কি ফরয হিসেবে আদায় হয়েছে? আর এ বছর আমি কোন হজ্বের নিয়ত করব, ফরয নাকি নফল হজ্বের? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

অস্বচ্ছল অবস্থায় কেউ ঋণ করে হজ্ব আদায় করলেও তা ফরয হিসেবেই আদায় হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ঐ হজ্ব ফরয  হিসেবেই আদায় হয়েছে। এক্ষেত্রে পরবর্তীতে হজ্ব করলে তা নফল গণ্য হবে। তবে ঐ হজ্বের এহরামের সময় আপনি যদি সুনির্দিষ্টভাবে নফল হজ্বের নিয়ত করে থাকেন তা নফল হিসেবেই আদায় হয়েছে। ফরয হজ্ব আদায হয়নি। সামনে তা আদায় করে নিতে হবে।

-গুনইয়াতুন নাসিক ৩২; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৪; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৪১; আলবাহরুল আমীক ১/৩৮৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ - লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

৩৩০৮. প্রশ্ন

আগামী সপ্তাহে আমি জেদ্দায় একটি ব্যবসায়িক কনফারেন্সে যাব। আমার ইচ্ছা হল, মিটিং শেষ হওয়র পর সুযোগ পেলে সেখান থেকে মক্কা শরীফ গিয়ে ওমরাহ করে আসব। ইহরাম বেঁধে কনফারেন্সে যাওয়া সম্ভব নয় তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, এ অবস্থায় আমি ইহরাম না বেঁধে জেদ্দায় কনফারেন্সে যেতে পারব কি না? এরপর কনফারেন্স শেষে সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ করলে কি আমার উপর দম ওয়াজিব হবে?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু কনফারেন্সের উদ্দেশ্যেই জেদ্দা যাচ্ছেন তাই এ অবস্থায় আপনার জন্য ইহরাম না বেঁধে জেদ্দায় যাওয়া জায়েয হবে। কনফারেন্স শেষে জেদ্দাবাসীদের মতো আপনি সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ করতে পারবেন। এ কারণে আপনার উপর কোনো জরিমানা বা দম ওয়াজিব হবে না। 

-আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৭৭; আলবাহরুর রায়েক ৩/৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪১৫; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৮; আলবাহরুল আমীক ২/৩১৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফয়সাল - টেকনাফ, কক্সবাজার

৩৩০৯. প্রশ্ন

দুই মাস পূর্বে আমার বিয়ে হয়। আমার স্ত্রীর আচরণে আমরা সবাই অতিষ্ঠ। তার সাথে আমার সম্পর্ক ভাল না। তাই আমি তাকে সন্তান-সন্তুতি হওয়ার আগেই তালাক দিতে চাচ্ছি। আমার ছোট ভাই মাদরাসায় লেখাপড়া করে। তার সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করলে সে আমাকে তিন তুহুরে তিন তালাক দিতে বলে। এ পদ্ধতি কি উত্তম হবে? আর এভাবে তিন তালাক দিয়ে দিলে মহিলার ইদ্দত শুরু হবে কখন থেকে? প্রথম তালাকের পর নাকি তৃতীয় তালাকের পর? দয়া করে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

শরীয়তের দৃষ্টিতে তালাক খুবই অপছন্দনীয়। ক্ষেত্রবিশেষে এর প্রয়োগ স্ত্রী-সন্তানের প্রতি জুলুমও বটে। তাই অত্যন্তভেবেচিন্তে মুরবিব ও আলেমদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তনেওয়া উচিত। আর তালাকের আগে উভয় পক্ষের মুরবিবদের নিয়ে সমঝোতা ও মীমাংসার চেষ্টা করা কর্তব্য। এরপরও যদি উভয়ের মাঝে সম্পর্কের উন্নতি না ঘটে এবং একত্রে থাকলে একে অপরের হক আদায় করা এবং শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী চলা সম্ভব না হয় তখন চাইলে তালাক দিতে পারবে। আর তালাক দেওয়ার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হল, হায়েয/নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার পর তার সাথে মিলন থেকে বিরত থাকা অবস্থায় এক তালাক দেওয়া। এরপর আর তালাক না দেওয়া। এবং ইদ্দত শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ততার সাথে স্বামী-স্ত্রীসূলভ কোনো আচরণও না করা। এক্ষেত্রে ইদ্দত শেষ হয়ে গেলে তালাকটি বায়েনে পরিণত হয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। এরপর মহিলাটি অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এটি স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সবচেয়ে উত্তম পন্থা। (আল আওসাত, ইবুনল মুনযির ৯/১৩৯)

অবশ্য প্রত্যেক পবিত্রতায় একটি করে তালাক দেওয়ার পদ্ধতিও জায়েয। আর এভাবে তিন তালাক দিলে মহিলার ইদ্দত শুরু হবে প্রথম তালাকের পর থেকেই।

অবশ্য এভাবে তিন তালাক দেওয়ার চেয়ে পূর্বোক্ত নিয়মে এক তালাক দেওয়ার পদ্ধতি অধিক উত্তম। এ ছাড়া এক তালাক দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর পরবর্তীতে কখনো একত্রিত হতে চাইলে নতুন বিবাহের মাধ্যমে এরও সুযোগ থাকে। 

-সূরা নিসা ৪ : ৩৪-৩৫; রদ্দুল মুহতার ৩/২২৮; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৪০-১৪২, ৩/২৮৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৮

শেয়ার লিংক

তাওহীদুল আনওয়ার - চকরিয়া, কক্সবাজার

৩৩১০. প্রশ্ন

তিন তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলাদের জন্য কি স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা জরুরি? বাবার বাড়িতে গিয়ে ইদ্দত পালন করতে পারবে কি না? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী?


উত্তর

তালাকপ্রাপ্তা এবং বিধবা মহিলার জন্য স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করা ওয়াজিব। বিশেষ ওজর ব্যতীত স্বামীর বাড়ি ছাড়া বাবার বাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত পালন করা জায়েয নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তাদেরকে (ইদ্দতরত মহিলাকে) তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না। আর তারা নিজেরাও যেন বের না হয়। যদি না তারা কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়। -সূরা তালাক : ১

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) তোমরা ঐ (তালাক প্রদত্ত) স্ত্রীদেরকে তোমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা অনুপাতে থাকার ঘর দাও যেখানে তোমরা বসবাস কর। আর তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য (বাসস্থান সম্বন্ধে) কষ্ট দিও না।  -সূরা তালাক : ৬

উল্লেখ্য যে, তালাকপ্রাপ্তা মহিলার ইদ্দতের সময় তার স্বামী ভিন্ন ঘরে বসবাস করবে। মহিলার ঘরে নয়।

আরো উল্লেখ্য যে, স্বামীর বাড়িতে যদি পর্দার সাথে থাকার ব্যবস্থা না হয় কিংবা তার জন্য সেখানে থাকা বেশি কষ্টকর বা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে বাড়ি ত্যাগ করে বাবার বাড়ি কিংবা অন্য কোনো নিরাপদ স্থানে ইদ্দত পালন করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে যেখানে যাবে সেখানেই ইদ্দত পূর্ণ করবে। ইদ্দত শেষ হওয়ার আগে বিনা জরুরতে সেখান থেকে অন্যত্র থাকা জায়েয হবে না।

হযরত ফাতেমা বিনতে কায়স রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছি, আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিয়েছে এখন আমি আমার সাথে ব্যভিচারের ভয় করছি। তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্থানান্তর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৮২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১৯১৬৮; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩২৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১২/১৪৫; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়াইতিয়্যাহ ২৯/৩৪৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইয়াকুব হুসাইন - কক্সবাজার

৩৩১১. প্রশ্ন

আমার প্রতিবেশী সাদেক তার স্ত্রী সুহানাকে বিভিন্ন কারণে একের পর এক তিন তালাক দেয়। তৃতীয় তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের ভেতরেই সুহানাকে আশিক বিয়ে করে। সুহানা বিশ দিন যাবত আশিকের কাছে ছিল। এবং তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসূলভ আচরণও হয়। বিশ দিন পর আশিক সুহানাকে তালাক দিয়ে দেয়। পরে আশিক জানতে পারে যে, সুহানার সাথে তার বিবাহ ইদ্দতের ভেতরেই সংগঠিত হয়েছিল। জানার বিষয় হল, সুহানার সাথে আশিকের এই বিবাহ কি শুদ্ধ হয়েছিল? যদি শুদ্ধ না হয় তাহলে এখন মহিলাটি ইদ্দত পালন করবে কীভাবে? আর এ বিবাহের কারণে কি সাদেকের জন্য সুহানাকে দ্বিতীয়বার বিবাহ করা বৈধ হবে? আর আশিক মহিলাটির জন্য বিবাহের সময় যে মোহর নির্ধারণ করেছিল তা কি দিতে হবে?


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আশিকের সাথে মহিলাটির বিবাহ যেহেতু ইদ্দতের ভেতর হয়েছে তাই এ বিবাহ শুদ্ধ হয়নি। এক্ষেত্রে মহিলাটিকে আশিক থেকে পৃথক হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে পূর্ণ ইদ্দত পালন করতে হবে। যদি অমত্মঃসত্ত্বা হয় তাহলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত, আর অন্তসত্ত্বা না হলে তিনটি ঋতুস্রাব পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে। আর দ্বিতীয় বিবাহ যেহেতু শুদ্ধ হয়নি তাই এক্ষেত্রে ইদ্দত শেষে প্রথম স্বামী সাদেকের সাথে মহিলাটির বিবাহ জায়েয হবে না।

উল্লেখ্য যে, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আশিকের সাথে মহিলাটির বিবাহের সময় যে মোহর ধার্য করা হয়েছিল মহিলা তা পাবে না; বরং ধার্যকৃত ঐ মোহর এবং মোহরে মিসিল (অর্থাৎ মহিলার সমপর্যায়ের পিতৃবংশীয় নারীদের মোহর) এর মধ্যে যেটা কম হবে সেটাই মোহর হিসেবে পাবে।

-সূরা বাকারা ২ : ২৩৫; আহকামুল কুরআন, থানভী রাহ. ১/৫৯৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪০৯-৪১০; হেদায়া, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৭৩; আদ্দুররুল মুনতাকা ২/৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩০; আলবাহরুর রায়েক ৩/১৭২

শেয়ার লিংক

আকবার আলী - সিরাজগঞ্জ

৩৩১২. প্রশ্ন

জনৈক মহিলার স্বামী কুয়েতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। গত ২৫ রজব কর্মস্থলে যাওয়ার পথে এক মর্মামিত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। প্রাথমিকভাবে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে উদঘটিত হয় যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তখন উভয় দেশের দূতাবাসের আলোচনার ফলে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়। গত ২৪ শাবান বাংলাদেশ দূতাবাস মৃত ব্যক্তির পরিবারকে খবরটি নিশ্চিত করে। জানার বিষয় হল, উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী কবে থেকে ইদ্দত গণনা শুরু করবে? মৃত্যুবরণ করার সময় থেকে নাকি সংবাদ পাওয়ার পর থেকে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ মহিলা মৃত্যুর দিন থেকেই ইদ্দত গণনা করবে। কেননা স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর খবর না পেলেও স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই ইদ্দত শুরু হয়ে যায়।  সুতরাং উক্ত মহিলা অন্তঃসত্ত্বা না হলে স্বামীর মৃত্যুর দিন ২৫ রজব থেকে চার মাস দশদিন ইদ্দত পালন করবে। আর অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্তইদ্দত পালন করবে। 

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১৯২৪৬; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৫/২৪৮-২৪৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫২০; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৪৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আহমাদুল্লাহ - আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম

৩৩১৩. প্রশ্ন

আমার একটি কাপড়ের দোকান আছে। আমার সহযোগী হিসেবে দোকানে একজন কর্মচারী রেখেছি। তার সাথে আমার এভাবে চুক্তি হয়েছে যে, দোকানের মাল কেনা এবং ক্যাশে বসা আমার দায়িত্বে থাকবে। অবশিষ্ট কাজ, মাল বিক্রি করা, সময়মতো দোকান খোলা-বন্ধ করা ইত্যাদি তোমার দায়িত্ব এবং প্রতি মাসে মুনাফার ৫% তোমাকে দেওয়া হবে। প্রশ্ন হল, ঐ কর্মচারীর সাথে এভাবে চুক্তি করা সহীহ হয়েছে কি না? জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী কর্মচারীর সাথে ঐভাবে চুক্তি করা সহীহ হয়নি। কেননা সে আপনার ব্যবসার অংশিদার নয়; বরং শ্রমদাতা। আর শ্রমদাতার সাথে চুক্তির সময়ই পারিশ্রমিকের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে নেওয়া জরুরি। তাই এ লক্ষ্য মূল বেতন হিসেবে একটি ন্যূনতম পরিমাণ পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে নিবে এরপর চাইলে অতিরিক্ত হিসেবে তাকে মুনাফার নির্ধারিত অংশও দিতে পারবে। কেননা এক্ষেত্রে মূল পারিশ্রমিক আর অনির্দিষ্ট থাকে না। 

-মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়া ৮৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/১১৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইমদাদুল্লাহ - লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

৩৩১৪. প্রশ্ন

আমি ব্যবসা করতে চাচ্ছি। ব্যবসার জন্য ১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। বর্তমানে আমার কাছে ৬ লক্ষ টাকা আছে। বাকি ৪ লক্ষ টাকা আমার এক বন্ধু থেকে এই চুক্তিতে নিতে চাচ্ছি যে, সে ১০ বছর ব্যবসায় অংশীদার থাকবে। প্রতি মাসে মুনাফার ৩০% তাকে দেওয়া হবে। ১০ বছর পর তার টাকা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। হুযুরের কাছে জানতে চাই- এভাবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাকে ব্যবসায় শরিক করে তার থেকে টাকা নেওয়া জায়েয হবে কি না? জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

হাঁ, নির্ধারিত মেয়াদের জন্যও অংশিদার নেওয়া জায়েয। অতএব আপনাদের প্রশ্নোক্ত চুক্তি করা সহীহ হবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৩৫৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৬১৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩০২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/৭৩-৭৪; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২২৬; রদ্দুল মুহতার ৪/৩১২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাশেদ হুসাইন - রামু, কক্সবাজার

৩৩১৫. প্রশ্ন

আমি একজন পিকআপ চালক। গাড়ির এক মালিক থেকে আমি একটি পিকআপ এ চুক্তিতে নিয়েছি যে, গাড়ির প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিয়ে বাকি আয়ের ত্রিশ শতাংশ আমি নেব। অবশিষ্ট সত্তর শতাংশ মালিক পাবে। আমাদের এ চুক্তি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।


উত্তর

না, আপনাদের উক্ত চুক্তি শরীয়তসম্মত হয়নি। কারণ গাড়ির আয় চালক এবং মালিকের মাঝে শতকরা হারে বণ্টনের চুক্তি সহীহ নয়। এক্ষেত্রে সহীহভাবে চুক্তি করতে চাইলে হয়ত চালকের বেতন নির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং গাড়ির সকল আয় মালিকের থাকবে। অথবা চালক গাড়িটি মালিক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিবে। গাড়ি থেকে আয় হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় ভাড়ার টাকা মালিককে দিয়ে দিতে হবে। আর এক্ষেত্রে গাড়ির যা আয় হবে তা সবই চালকের থাকবে।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৩৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪১১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম - পটিয়া, চট্টগ্রাম

৩৩১৬. প্রশ্ন

আমার ছেলের অপারেশনের জন্য চার লক্ষ টাকা প্রয়োজন। তাই আমি এক ব্যক্তির নিকট চার লক্ষ টাকার পরিবর্তে আমার একটি জমি বিক্রি করেছি। সে  পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ পরিশোধ করেছে। তার সাথে কথা হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করলে তাকে জমির রেজিস্ট্রি দিয়ে দিব। সে এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা দেয়নি। এদিকে একদিন পর আমার ছেলের অপারেশনের তারিখ। তাকে বাকি টাকা পরিশোধ করতে বললে  সে বলে, জমির প্রকৃত মূল্য তিন লক্ষ টাকা। চার লক্ষ টাকা দিয়ে আমি জমি নিব না। ইচ্ছা হলে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে জমি বিক্রি করতে পারেন। তখন আমি আরেকজনের নিকট নগদ চার লক্ষ টাকায় জমিটি বিক্রি করে জমির রেজিস্ট্রি দিয়ে দিয়েছি। প্রথম ক্রেতাকে তার টাকা দেওয়ার জন্য গেলে সে আমার সাথে অত্যন্তরাগারাগি করে। তার কথা, আমাকে না জানিয়ে অন্যের কাছে কেন জমি বিক্রি করেছেন? আমার কাছে বিক্রি করার পর অন্য কারো কাছে বিক্রি করা ঠিক হয়নি ইত্যাদি।

তাই হুযুরের কাছে জানতে চাই, উক্ত অবস্থায় অন্য ব্যক্তির নিকট জমি বিক্রি করা কি সহীহ হয়েছে? জানালে উপকৃত হব।


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী জমিটির প্রথম ক্রেতা যেহেতু চার লক্ষ টাকা দিয়ে জমি নিবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে এবং তিন লক্ষ টাকা হলে নিবে বলেছে তাই এর দ্বারাই ঐ ব্যক্তির সাথে পূর্বোক্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে।  সুতরাং এরপর ঐ জমি অন্যত্র বিক্রি করা আপনার জন্য জায়েয হয়েছে। এ পর্যায়ে পূর্বের ক্রেতার জন্য আপনার সাথে রাগারাগি করা বা খারাপ আচরণ করা একেবারেই অন্যায়। শরীয়তের দৃষ্টিতে সে শুধু তার দেওয়া টাকাগুলিই ফেরত পাবে। এর অতিরিক্ত কোনো কিছু দাবি করা তার জন্য জায়েয হবে না। আর আপনার দায়িত্ব হল, অবিলম্বে লোকটির টাকা ফেরত দেওয়া। 

-হেদায়া, ফাতহুল কাদীর ৬/৪১৭; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/১৯৭; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়াহ ৩/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৪৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩৬; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৪৫১

শেয়ার লিংক

ইমদাদুল্লাহ - পল্লবী, ঢাকা

৩৩১৭. প্রশ্ন

আমি একটি বায়িং হাউজে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার পদে কর্মরত। বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে তৈরি পোশাক ইনস্পেকশনের কাজে যেতে হয়। মাঝেমধ্যেই গার্মেন্টেস মালিকগণ উপহার বা গিফট হিসেবে আমাকে বিভিন্ন খাম দেয়। তাতে ভালো অংকের টাকা থাকে। এক্ষেত্রে তাদের গোপন উদ্দেশ্য হল, আমি যেন খুব যাচাই বাছাই না করেই ইনস্পেকশন রিপোর্ট ওকে করে দিই। প্রশ্ন হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে আমার জন্য এ উপহার নেওয়া কি বৈধ? যদি  বৈধ না হয় তাহলে আমার করণীয় কী?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত টাকা উপহার বলে দেওয়া হলেও তা মূলত  ঘুষ। এ টাকা গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা  অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। -সূরা বাকারা ১৮৮

হাদীস শরীফে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুষদাতা ও গ্রহিতা উভয়ের প্রতি অভিসম্পাৎ করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৩৩৭

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যাদের থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে তাদেরকে ঐ টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যাদের সন্ধান পাওয়া যাবে না তাদের টাকা সদকা করে দিতে হবে। আর নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সর্বদা যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং বিগত দিনের জন্য ইসিত্মগফার করতে হবে।

-সূরা বাকারা ১৮৮; তাফসীরে কুরতুবী ২/২২৭; শরহুল মাজাল্লাহ ৬/১৪; মাআরিফুল কুরআন, মুফতী শফী রাহ. ৫/৩৯৭; আলমওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ কুয়েত ২২/২২২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আযীযুল হক - ইনানী, কক্সবাজার

৩৩১৮. প্রশ্ন

গত বছর আমি হজ্ব করতে গিয়েছিলাম। তখন কুরবানীর জন্য টাকা ব্যাংকে দিয়ে দিই। পরে আমার এক সাথীকে বলতে শুনেছি, ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানী করলে নাকি কুরবানী সহীহ হয় না। কারণ ব্যাংককে কুরবানী করার জন্য যতজন হাজ্বী টাকা দেয় ততটা কুরবানী তো করা হয় তবে পশু কোনটা কার জন্য তা নির্দিষ্ট করা হয় না। আর নির্দিষ্ট না করার কারণে তাদের কুরবানী সহীহ হয় না। তাই ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানী করা যাবে না।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত বক্তব্য সঠিক নয়। কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য প্রত্যেকের পশু নির্দিষ্ট করা জরুরি নয়। বরং যতজন হাজ্বী টাকা জমা করবে ততটা পশু যবাই করলেই প্রত্যেকের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। সুতরাং হাজ্বীদের জন্য সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য যারা ব্যাংকের মাধ্যমে দমে শোকর আদায় করবে তারা নির্দিষ্ট সময় থেকে বিলম্ব করে হলক করবে যেন হলক কুরবানীর পর হয়। 

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৫৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৮০

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আরাফাত - খুলনা

৩৩১৯. প্রশ্ন

আমাদের দেশের সাধারণ লোকজন এভাবে কসম করে থাকে, আমি আল্লাহর কালাম কুরআন মাজীদের কসম করে বলছি, আমি অমুক কাজ করব না। অনেকে কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে বা হাতে স্পর্শ করে বলে, আমি কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে বা হাতে স্পর্শ করে বলছি, আমি অমুক কাজ করব না। হুযুরের কাছে জানতে চাই, কুরআন শরীফের কসম করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন? উপরোক্ত বাক্যগুলো দ্বারা কসম করলে কি তা সংঘটিত হবে? হলে সেক্ষেত্রে করণীয় কী?


উত্তর

কুরআন শরীফের কসম করা জায়েয নয়। হযরত সাহাম ইবনে মিনজাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের কোন একটি সূরার কসম করবে সে ঐ সূরার প্রত্যেকটি আয়াতের বদলায় একটি করে গুনাহ নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদীস ১২৩৬০ অবশ্য নাজায়েয হলেও কেউ যদি বলে, আমি কুরআন শরীফের কসম করে বলছি, তাহলে এর দ্বারা কসম সংঘটিত হয়ে যাবে। এ শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারাও ওয়াজিব হবে। আর যদি কসম শব্দ না বলে শুধু বলে যে, কুরআন শরীফ ছুঁয়ে কিংবা মাথায় নিয়ে বলছি, তবে এর দ্বারা কসম সংঘটিত হবে না। 

-ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১৩; ইমদাদুল আহকাম ৩/৩৮

শেয়ার লিংক

রাইহানা তৈয়ব - নোয়াপাড়া, সাবরাং

৩৩২০. প্রশ্ন

আমার খালাম্মা আমার দুধ মা। কয়েকদিন আগে তাঁর বাসায় যাই। এক রুমে আমার খালু (যিনি আমার দুধ পিতা) তার ছোট ভাইয়ের সাথে বসা ছিলেন। খালু আমাকে সে রুমে ডাকলে আমি সেখানে তার ভাই থাকার কারণে প্রবেশ করিনি। তখন খালু আমাকে বলেন যে, এ তো তোমার দুধ চাচা। তার সামনে আসা তো তোমার জন্য জায়েয হবে। এ কথা শোনার পরও আমি কোনো আলেমকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া তার সাথে দেখা করা সমীচীন মনে করিনি। তাই তখন যাইনি। প্রশ্ন হল, আমার জন্য কি আমার দুধ চাচার সামনে যাওয়া বৈধ হবে?


উত্তর

পর্দার ব্যাপারে আপনার দৃঢ় মানসিকতা অত্যন্তপ্রশংসনীয়। মাসআলা যাচাই না করে তার সাথে সাক্ষাৎ না করা ঠিকই হয়েছে। প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ খালুর ভাই আপনার দুধ চাচা। আর দুধ-চাচা মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তার সাথে আপনার দেখা দেওয়া বৈধ। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রা. বলেন, পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার পর একবার আবুল কুআইসের ভাই আফলাহ এসে তার ঘরে ঢুকতে অনুমতি চাইল। আর আবুল কুআইস ছিল হযরত আয়েশা রা.-এর দুধপিতা। হযরত আয়েশা রা. বলেন, আমি বললাম, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া কিছুতেই আমি তাকে ঢোকার অনুমতি দেব না। কারণ আমাকে আবুল কুআইস দুধ পান করায়নি। আমাকে দুধ পান করিয়েছে তার স্ত্রী। হযরত আয়েশা রা. বলেন, অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবুল কুআইসের ভাই আফলাহ আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া তাকে অনুমতি দেইনি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমার সামনে আসতে পারে। কারণ সে তো তোমার (দুধ) চাচা। 

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৪৫; কানযুদ দাকাইক, আলবাহরুর রায়েক ৩/২২৬; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩

শেয়ার লিংক

ফাতেমাতুত তায়্যিবা - তালতলা, টঙ্গি, গাজীপুর

৩৩২১. প্রশ্ন

জনাব, নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।

ক) তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর থেকে নামায শিক্ষা দাও এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও’ এটি হাদীস কি না? যদি হাদীসের কথা হয় তবে বিছানা আলাদা করার গুরুত্ব এবং পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।

খ) আমি চার সন্তানের মা। আমার ছেলেমেয়েরা সবাই বিবাহিত এবং উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু তারা নামায পড়ে না। এদেরকে আমি কীভাবে সৎ কাজে আদেশ করব এবং অসৎ কাজে নিষেধ করব?

গ) বর্তমানে এই অশ্লীলতার যুগে শিশুরাও যেখানে অশ্লীল ছবি দেখতে অভ্যস্ত সেখানে ছেলেমেয়েদের বালেগ হওয়ার বয়স কত এবং আলামত কী কী?


উত্তর

সন্তানের বিছানা পৃথক করে দেওয়া সম্পর্কিত হাদীসটি নিম্নরূপ-

مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع

অর্থ : তোমাদের সন্তানদেরকে নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের বয়স সাত বছর হবে। আর দশ বছর বয়স হলে নামাযের জন্য তাদেরকে প্রহার কর এবং তাদের পরস্পরের বিছানা আলাদা করে দাও। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৯৫

এ হাদীসে সন্তানের বয়স দশ বছর হলে তার শোয়ার বিছানা পৃথক করার হুকুম এসেছে। অবশ্য একটি বর্ণনায় সাত বছর বয়সেই বিছানা পৃথক করে দেওয়ার কথা এসেছে। -মুসতাদরাকে হাকীম, হাদীস ৭৩৪ হাদীস ও ফিকহবিদগণ সুনানে আবু দাউদের উক্ত হাদীসের উপর ভিত্তি করে সন্তানের বয়স দশ বছর হলে তার শোয়ার বিছানা পৃথক করে দেওয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। এ বয়সে ছেলের জন্য মার সাথে এবং মেয়ের জন্য বাবার সাথে একই বিছানায় শোয়া নিষেধ। অবশ্য বাবার সাথে এক ছেলে এবং মায়ের সাথে শুধু এক মেয়ে একই বিছানায় শোয়ার অবকাশ আছে।

বিছানা পৃথক হওয়ার পদ্ধতি:

বিছানা পৃথক হওয়ার অর্থ এই নয় যে, প্রত্যেক সন্তানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রুমের ব্যবস্থা করে দিতে হবে; বরং একই রুমে ভিন্ন খাট, চকি বা ভিন্ন বিছানার ব্যবস্থা করলেও চলবে। আর যদি তাদের জন্য পৃথক পৃথক বিছানার ব্যবস্থা করা সম্ভব না হয় বরং সকলকে এক বিছানাতেই রাত্রিযাপন করতে হয় সেক্ষেত্রে এ বয়সের সন্তানদের মাঝে কোল বালিশ বা এ ধরনের কোনো কিছু দিয়ে হলেও আড়াল রাখা আবশ্যক। আর মেয়েদের বিছানা বাবা ও ছেলেদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হওয়া জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু কোল বালিশ রাখা যথেষ্ট নয়। -আদ্দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮২

খ) সন্তানরা দ্বীনী কথা না শুনলেও পিতামাতার কর্তব্য হল তাদেরকে নামায আদায়ের কথা হেকমতের সাথে বলতে থাকা। নামায পড়ার লাভ এবং না পড়লে কী ক্ষতি ও শাস্তি রয়েছে তা শোনানো। এছাড়া শরীয়তের অন্যান্য হুকুম-আহকাম মেনে চলার প্রতিও আদেশ উপদেশ ও উৎসাহ দিতে থাকা। ইনশাআল্লাহ এতে তাদের উপকার হবে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-  وَذَكِّرْ فَإِنَّ الذِّكْرَى تَنْفَعُ الْمُؤْمِنِينَ

(তরজমা) আর আপনি উপদেশ দিতে থাকুন। কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসবে।  -সূরা যারিয়াত ৫১ : ৫৫

এছাড়া এভাবে বলতে থাকলে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কিছুটা হলেও আদায় হয়। তাই তাদেরকে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে থাকুন। পাশাপাশি নসীহতমূলক দ্বীনী কিতাবাদি থেকে পড়ে শোনান। হক্কানী আলেম ও বুযুর্গদের সোহবত গ্রহণের উপদেশ দিন।

মোটকথা, আপনাদের সাধ্যানুযায়ী সব ধরনের চেষ্টা আব্যাহত রাখুন এবং তাদের হেদায়াতের জন্য বেশী বেশী দুআ করতে থাকুন। ইনশাআল্লাহ এতে কোনো এক সময় তাদের মাঝে দ্বীনি বুঝ সৃষ্টি হবে এবং আমলেও পরিবর্তন আসবে।

প্রকাশ থাকে যে, সন্তানদেরকে নামাযসহ দ্বীনের জরুরি বিষয়াদি, কুরআন মাজীদ ও ঈমান-আকীদার কথা শেখানো, নেক ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা, সুন্নত ও আদব আখলাক শিক্ষা দেওয়া, পিতা-মাতার দায়িত্ব। সন্তানকে দ্বীনিভাবে গড়ে তোলার জন্য শৈশবকাল থেকেই পিতা-মাতাকে যত্নবান হওয়ার প্রতি হাদীসে গুরুত্ব এসেছে। তাই সন্তানের লেখা-পড়ার বয়স হয়ে গেলে তখন থেকেই তাকে কুরআন মাজীদ শিক্ষা দিবে। আর সাত বছর বয়সে নামাযের আদেশ দিবে। আর দশ বছর বয়স হলে নামাযের জন্য জোর তাকীদ দিবে। নামাযের জন্য এ বয়সে প্রয়োজনে হালকা শাস্তিও দেওয়া যাবে। এভাবে শরীয়তের প্রত্যেকটা বিধি-বিধানের প্রতি শৈশব থেকেই যত্নবান হলে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে সন্তান ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শ নিয়েই বড় হবে। এক্ষেত্রে তার বিপথগামী হওয়া বা মা-বাবার অবাধ্য হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। -মুসতাদরাকে হাকীম, হাদীস ৭৭৫৩; ফয়যুল কাদীর ১/২২৬

গ) ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের বালেগ হওয়ার বয়সসীমা ও আলামত শরীয়তের পক্ষ থেকে নির্ধারিত রয়েছে। কোনো ছেলে বা মেয়ের মধ্যে বালেগ হওয়ার নির্দিষ্ট আলামত পাওয়া গেলে বা নির্দিষ্ট বয়সসীমায় পৌঁছলেই তাকে বালেগ গণ্য করা হবে এবং তখন থেকেই শরীয়তের হুকুম-আহকাম তার উপর প্রযোজ্য হবে। ছেলেদের বালেগ হওয়ার আলামত হল: ক) স্বপ্নদোষ হওয়া। খ) বীর্যপাত হওয়া। আর মেয়েদের বালেগ হওয়ার আলামত হল: ক) স্বপ্নদোষ হওয়া। খ) হায়েয (ঋতুস্রাব) আসা। গ) গর্ভধারণ করা। বালেগ হওয়ার উপরোক্ত নির্দিষ্ট আলামত যদি কোনো ছেলে বা মেয়ের মধ্যে পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে উভয়ের বয়স যখন হিজরী বর্ষ হিসাবে পনেরো বছর পূর্ণ হবে তখন প্রত্যেককে বালেগ গণ্য করা হবে এবং পনেরো বছর পূর্ণ হওয়ার পর কোনো আলামত পাওয়া না গেলেও সে বালেগ বলেই বিবেচিত হবে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো ছেলে বা মেয়ের সাথে শরয়ী পর্দা করার হুকুম প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সাথে সীমাবদ্ধ নয়। যেমনটি কেউ কেউ ধারণা করে থাকে। বরং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বেই যখন কোনো ছেলের নারী-পুরুষ সম্পর্কের বিষয়ে বোঝার বয়স হয়ে যায় তখন থেকেই তার সাথে পর্দা করতে হবে। আর মেয়েদের পর্দার বয়স শুরু হয় তার শরীরে মেয়েলী বৈশিষ্ট্য প্রকাশ হওয়ার সময় থেকেই। যখন তাকে দেখলে কোনো পুরুষ আকর্ষণ অনুভব করে। পিতা-মাতার কর্তব্য হল এমন বয়সী ছেলেমেয়েদের পর্দার ব্যাপারে সচেতন থাকা। 

-আল ইনায়া শারহুল হেদায়া ৮/২০১; আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩; তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৫১

শেয়ার লিংক