মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - নাটোর

৩০৮৯. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় অনেকে পাট ক্ষেত করে। পাট গাছ কাটার পর এর থেকে পাট ওঠানোর জন্য এগুলো কোনো খাল বা পুকুরের পানিতে অনেকদিন রাখা হয়। তখন এগুলো পচে পানির রংও পরিবর্তন হয়ে যায় এবং পানি কিছুটা দুর্গন্ধও হয়ে যায়। প্রশ্ন হল, ঐ পানি দ্বারা কি অযু-গোসল করা যাবে?


উত্তর

হ্যাঁ, পাটগাছ পচানোর কারণে পানির রং ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেলেও এর দ্বারা অযু-গোসল তথা পবিত্রতা অর্জন করা যাবে। এক্ষেত্রে পানির তরলতা যতক্ষণ পর্যন্ত বাকি থাকবে এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা সহীহ হবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১; রদ্দুল মুহতার ১/১৮১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাইহান - নরসিংদী

৩০৯০. প্রশ্ন

ঋতুমতী মহিলার জন্য দৈনন্দিনের আমল হিসেবে সকালে সূরা ইয়াসিন ও সন্ধ্যায় সূরা ওয়াকিয়া পড়া জায়েয আছে কি? একটি মাসিক পত্রিকায় তা জায়েয লিখেছে। তাই বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

হায়েয-নেফাস অবস্থায় কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করা জায়েয নেই। নিয়মিত আমল হিসেবেও সূরা ইয়াসিন, ওয়াকিয়া ইত্যাদি পড়া যাবে না। পত্রিকার ঐ কথাটি ঠিক নয়।

হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত,  ঋতুমতী মহিলা এবং যার উপর গোসল ফরয হয়েছে তারা যেন সামান্য পরিমাণও কুরআন তিলাওয়াত না করে।

অবশ্য ফকীহগণ বলেছেন, যে সকল আয়াতে দুআর অর্থ রয়েছে তা দুআ হিসেবে পড়া যাবে। যেমন,

ربنا آتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار

ইত্যাদি।

-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৩১; ইলাউস সুনান ১/৩৭৬; শরহুল মুনইয়াহ, পৃষ্ঠা : ৫৭; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; হাশিয়াতুত তহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ ৭৭

শেয়ার লিংক

এইচএমএস - সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা

৩০৯১. প্রশ্ন

আমার বাসা ঢাকা শহরের সিদ্ধেশ্বরীতে। আমি যখন বিদেশ যাই তখন ঢাকা এয়ারপোর্টে মুকীম হব নাকি মুসাফির? অনুরূপভাবে যখন নৌপথে কোথাও যাব তখন সদরঘাটে অথবা নৌযানের উপর (ঘাট না ছাড়া পর্যন্ত) আমি মুকীম হব নাকি মুসাফির?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঢাকা এয়ারপোর্টে এবং সদরঘাটে আপনি পুরো নামায পড়বেন।

-কিতাবুল আছল ১/২৩২; আলবাহরুর রায়েক ২/১১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৮৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ সুহাইল আহমদ - চট্টগ্রাম

৩০৯২. প্রশ্ন

ক) নামাযের জামাত শুরু হওয়ার সময় ইকামত কখন দিবে এবং মুসল্লিরা নামাযের জন্য কখন দাঁড়াবে? তারা কি ইকামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যাবে নাকি হাইয়াআলাল ফালাহ বা ক্বাদকামাতিস সালাহ বলার সময় দাঁড়াবে?

খ) আমাদের এলাকায় কোনো কোনো মসজিদে দেখা যায়, মুআযযিন ইকামাত বলার সময় ইমাম সাহেব কাতারে বা মুআযযিনের স্থানে বসে থাকেন। হাইয়াআলাল ফালাহ বলার পর তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর স্থানে চলে যান। আবার অনেক সময় ইকামতের সময় ইমাম সাহেব মসজিদে প্রবেশ করলে তিনি নিজ স্থানে এসে প্রথমে বসে যান। অতপর হাইয়াআলাল ফালাহ বলার পর দাঁড়ান। এ আমলটি কেমন? এ সম্পর্কে শরীয়তের নির্দেশনা জানতে চাই।


উত্তর

ক) ইমাম নামাযের জন্য প্রস্ত্তত হওয়ার পরই ইকামত শুরু করা উচিত। ইমামের প্রস্ত্তত হওয়ার আগে ইকামত শুরু করা ঠিক নয়। তদ্রূপ মুসল্লিদের জন্যও আগে থেকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকা ঠিক নয়; বরং মুসল্লিগণ ইকামত আরম্ভ হওয়ার সময় দাঁড়িয়ে যাবে। যাতে ইকামতের শেষ পর্যন্ত কাতার সোজা হয়ে যায় এবং ইকামত শেষ হওয়ার পর ইমাম সাহেব নামায শুরু করতে পারেন।

সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে আছে, বিলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আসতে দেখে ইকামত বলা শুরু করতেন। আর অন্যরা কাতার সোজা করা শুরু করতেন। এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছার পূর্বেই কাতার পুরোপুরি সোজা হয়ে যেত। (সহীহ মুসলিম ১/২২০)

অপর হাদীসে আছে, মুআযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে ইকামত বলামাত্রই লোকেরা নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যেত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে কাতার সোজা হয়ে যেত। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৫০৭) এসব হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মুক্তাদীগণ হাইয়া আলাল ফালাহ বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না; বরং ইকামতের শুরুতেই দাঁড়িয়ে যাবে।

খ) ইকামত শুরু হওয়ার পর ইমাম বা কোনো মুক্তাদীর দাঁড়ানো থেকে বসে যাওয়া অতপর হাইয়াআলাল ফালাহ বা ক্বাদকামাতিস সালাহ বলার পর দাঁড়ানোর প্রচলনটি শরীয়তসম্মত নয়। কেননা পূর্বে বর্ণিত সহীহ মুসলিমের হাদীস থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে আসতে দেখলেই ইকামত শুরু হয়ে যেত এবং সাহাবায়ে কেরাম শুরুতেই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করতেন আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোজা ইমামের জায়গায় পৌঁছে যেতেন। এমন ক্ষেত্রে মসজিদে প্রবেশ করে নবীজীর বা কোনো সাহাবীর বসে যাওয়া অতপর হাইয়াআলাস সালাহ বলার সময় দাঁড়ানোর কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।

সুতরাং প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ইকামত শুরু হওয়ার পর ইমামের জন্য মসজিদে এসে বসে যাওয়ার আমলটি একেবারে ভিত্তিহীন ও নবআবিষ্কৃত। আর ইকামতের পূর্ব থেকে যারা বসে আছে তাদের জন্যও হাইয়া আলাল ফালাহ বা ক্বদকামাতিস সালাহ বলা পর্যন্ত বসে অপেক্ষা করতে থাকা ঠিক নয়। এটিও সুন্নত পরিপন্থী কাজ।-জাওয়াহিরুল ফিকহ ২/৪২৭; শরহে মুসলিম, নববী ১/২২০

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ফেনী

৩০৯৩. প্রশ্ন

তাকবীরে তাশরীকের দিনগুলোতে ফরয নামায আদায় করার পর অনেক সময় আমি তাকবীর বলতে ভুলে যাই। পরে কখনো নামাযের ওয়াক্ত বাকি থাকতেই স্মরণ হয়। আবার কখনো ওয়াক্ত শেষ হওয়ার পর অন্য নামাযের সময় স্মরণ হয়। তখন সাথে সাথে তাকবীর পড়ে নেই।

জানতে চাই, পরবর্তীতে স্মরণ হওয়ার পর তাকবীরে তাশরীক পড়ে নিলে ওয়াজিব আদায় হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

ফরয নামায আদায় করার পর তাকবীরে তাশরীক বলা ওয়াজিব।

নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক না বলে  (ক) মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে

(খ) অথবা নামায ফাসেদকারী কোনো কথা বা কাজ করলে

(গ) অথবা অযু নষ্ট হয়ে যায় এমন কোনো কাজ করলে তাকবীরে তাশরীক আদায়ের সময় বাকি থাকে না। তাই এক্ষেত্রে ওয়াজিব ছেড়ে দেওয়ার জন্য তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। আর নামাযের পর উপরোল্লিখিত কোনো কাজ না করলে বিলম্বে হলেও তাকবীরে তাশরীক পড়ে নিতে পারবে এবং এর দ্বারা ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৭-১৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৪৫ ফাতহুল কাদীর ২/৫০

শেয়ার লিংক

দিলরুবা উম্মে ইমরান - ময়মনসিংহ

৩০৯৪. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার মহিলারা বলছে, নামাযের পর মোনাজাতের সময় হেজাবের ভিতর হাত রেখে মোনাজাত করলে এই মোনাজাত নাকি আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে না। আমাদের জানার বিষয় হল, আমরা মোনাজাতের সময় হাত কি হেজাবের ভিতর রাখব নাকি হেজাবের বাইরে রেখে মোনাজাত করব? এ বিষয়ে শরীয়তের হুকুম জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

মহিলাদের উক্ত বক্তব্য ঠিক নয়, তা ভিত্তিহীন কথা। মুনাজাতের সময় হাত তোলা জরুরি নয়। তদ্রূপ হেজাবের বাইরে রাখাও জরুরি নয়। তাই দুআ করার সময় হাত হিজাবের ভেতরে থাকুক বা বাইরে, মনোযোগ সহকারে দুআ করলে তা কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।

শেয়ার লিংক

আহমদ বিন আবদুল্লাহ - টেকনাফ

৩০৯৫. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে খুতবার মিম্বারের সিঁড়ি সামনের কাতারের সিজদা দেওয়ার জায়গায় করা হয়েছে। যার কারণে সামনের কাতারের কয়েকজন মুসল্লিকে সেই সিঁড়ির উপর সিজদা করতে হয়। প্রশ্ন হল, এভাবে সিজদার জায়গা উঁচু হলে নামায সহীহ হবে কি?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যে সিঁড়িতে সিজদা দেওয়া হয় তার উচ্চতা যদি আধা হাত বা তার চেয়ে কম হয় তাহলে সিঁড়িতে সিজদা দিলেও নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর যদি তার উচ্চতা আধা হাতের চেয়ে বেশি হয় তাহলে নামায সহীহ হবে না। উল্লেখ্য যে, প্রথম কাতারের জায়গা পুরো ছেড়ে দিয়ে মিম্বর বানানো উচিত। সামনে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে কাঠের মিম্বার বানানোই ভালো। যেন নামাযের সময় তা সরিয়ে রাখা যায়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৭০; শরহুল মুনইয়াহ ২৮৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩২০; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফাতেহ - কুমিল্লা

৩০৯৬. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি ঈদের নামাযের প্রথম রাকাত পায়নি। দ্বিতীয় রাকাত শুরু থেকেই পেয়েছে। এখন সে বাকি এক রাকাত কীভাবে পড়বে? তখন কি অতিরিক্ত তাকবীর বলতে হবে?


উত্তর

ঐ ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাতটি আদায়ের সময় প্রথমে সূরা কেরাত পড়বে, এরপর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে অতিরিক্ত তিনটি তাকবীর বলবে। প্রত্যেক তাকবীরের পর হাত না বেঁধে ছেড়ে দিবে। এরপর রুকুর তাকবীর বলে রুকুতে যাবে।

-কিতাবুল আছল ১/৩২২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬২৩; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৪

শেয়ার লিংক

ইউনুফ - টেকনাফ

৩০৯৭. প্রশ্ন

চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার দুর্ঘটনায় আমার এক মামা নিহত হন। আমরা তাঁর শুধু কোমর থেকে উপরের অংশটা পেয়েছি। তখন আমরা ঐ অর্ধেক অংশের কাফন-দাফন ও জানাযার ব্যবস্থা করি। ঐ অর্ধেক অংশের উপর আমাদের নামায পড়া কি ঠিক হয়েছে?


উত্তর

হ্যাঁ, ঐ অর্ধেক অংশের জানাযার নামায পড়া ঠিক হয়েছে। কারণ কোনো লাশের মাথাসহ অর্ধেক অংশ পাওয়া গেলে তার জানাযা পড়া জরুরি।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; ফাতহুল কাদীর ২/৭৬; শরহুল মুনইয়াহ ৫৯০; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৯৯

শেয়ার লিংক

আবদুল কারীম (সোহাগ) - মালিবাগ, ঢাকা

৩০৯৮. প্রশ্ন

আমি প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার পর এক রমযান মাসে বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃত ৫টি রোযা ভেঙ্গে ফেলি। পরে আমি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করি এবং ঐ রোযাগুলোর কাযা করি। পরবর্তীতে জানতে পারি যে, ইচ্ছাকৃত রোযা ভাঙলে কাফফারা ওয়াজিব হয়। তাই হুজুরের কাছে আমার প্রশ্ন হল, আমাকে প্রতিটি রোযার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাফফারা দিতে হবে নাকি একটি কাফফারা দিলেই যথেষ্ট হবে?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে সবগুলো রোযার জন্য একটি কাফফারা দেওয়াই যথেষ্ট। কাফফারা হল, চন্দ্রমাস হিসেবে পূর্ণ দুই মাস কিংবা ধারাবাহিক ৬০ টি রোযা রাখা। রোযা রাখতে সক্ষম না হলে ৬০ জন ফকির-মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এর মূল্য দিয়ে দিতে হবে।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৬০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৩৯৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাশেদ - কুষ্টিয়া

৩০৯৯. প্রশ্ন

আমি প্রতি রমযানে যাকাত আদায় করি। কিন্তু এ বছর ব্যবসায়িক ঝামেলার কারণে রমযানে যাকাত আদায় করা হয়নি। তিন মাস যাওয়ার পর পনের মাসের একত্রে যাকাত আদায় করেছি। রমযান পর্যন্ত যাকাতযোগ্য সম্পদের ব্যালেন্স ছিল প্রায় আশি লক্ষ টাকা। তিন মাস পর কোটি টাকা হয়েছে। তাই কোটি টাকার যাকাত আদায় করেছি। আমার এ আদায় কি ঠিক হয়েছে? এখন এ বছরের তিন মাসের যাকাত দিলাম। তাহলে কি আগামী রমযানে বাকি নয় মাসের যাকাত দিলে চলবে?


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এক কোটির মধ্যে আশি লক্ষ টাকার যাকাত গত বছরের যাকাত হিসেবে গণ্য হবে। আর বিশ লক্ষ টাকার যাকাত অগ্রিম আদায় হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। সুতরাং আগামি রমযানে যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ হিসাব করে সেখান থেকে বিশ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে বাকিটার যাকাত আদায় করতে হবে।

উল্লেখ্য, যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার পরই যাকাত ফরয হয়। যাকাতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার আগে যাকাত দিলে তা অগ্রিম গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে বর্ষ শেষে যাকাতযোগ্য সম্পদের সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে।

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল কাদের - নেত্রকোণা

৩১০০. প্রশ্ন

আমার স্ত্রীর স্বর্ণালংকার আছে এবং ব্যাংকে কিছু টাকাও জমা আছে। আমার জন্য কি তার যাকাত দেওয়া জরুরি? আসলে স্ত্রীর যাকাত কার উপর ফরয? আমি যদি তার যাকাত আদায় করে দেই এতে কি আমার সওয়াব হবে?


উত্তর

স্ত্রীর সম্পদের যাকাত স্ত্রীর উপর ফরয। এটি আদায়ের দায়িত্বও তার। তবে স্বামী যদি তার পক্ষ থেকে আদায় করে দেয় তাহলে তা আদায় হয়ে যাবে এবং স্বামী এ কারণে সওয়াব পাবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবু তাহের - খুলনা

৩১০১. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি তাওয়াফে যিয়ারতের পাঁচ চক্কর পূর্ণ করার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তখন সে বাকি দুই চক্কর  আদায় করতে পারেনি। যিলহজ্বের ১২ তারিখের পর সে সুস্থ হয়। এ ব্যক্তির জন্য কী করণীয়? তাকে কি তাওয়াফে যিয়ারত আবার করতে হবে? আর এ কারণে কোনো দম দিতে হবে কি না?


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি তাওয়াফে যিয়ারতের অবশিষ্ট দুই চক্কর আদায় করে নিবে। এতেই তার তাওয়াফে যিয়ারত পূর্ণ হয়ে যাবে। আর এই অবশিষ্ট দুই চক্কর ১২ যিলহজ্বের পর আদায় করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে না। তবে এ কারণে প্রত্যেক চক্করের জন্য একটি করে মোট দুইটি সদকাতুল ফিতর সমপরিমাণ নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্য বা এর মূল্য সদকা করতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ৩/২০; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী ৩৪৭; গুনইয়াতুন নাসিক ২৭৩

শেয়ার লিংক

মুহিউদ্দীন আহমদ - মাদারীপুর

৩১০২. প্রশ্ন

আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার উপর অনেক আগে হজ্ব ফরয হয়েছে। তখন দ্বীনের বুঝ না থাকায় অবৈধ উপার্জন দিয়ে হজ্ব করেছি। এখন আমি জানতে চাই যে, উক্ত হজ্বের মাধ্যমে আমার ফরয হজ্ব কি আদায় হয়েছে, না পুনরায় হজ্ব করতে হবে?


উত্তর

হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যার মাধ্যমে শারীরিক ইবাদতের পাশাপাশি আর্থিক ইবাদতের বিষয়ও রয়েছে। অবৈধ সম্পদের দ্বারা হজ্ব করলে এর দ্বারা ফরয আদায় হয়ে গেলেও আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না। তাই কবুল হজ্বের জন্য পুনরায় হালাল সম্পদ দ্বারা হজ্ব করতে হবে।

-আলবাহরুর রায়েক ২/৩০৯; ফাতহুল কাদীর ২/৩১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২০; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৫৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আল আমীন - ডেমরা, ঢাকা

৩১০৩. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি উমরা করতে যায়। কিন্তু সে উমরার তাওয়াফ সাঈ করার পর মাথা হলক না করে জিদ্দায় চলে আসে এবং জিদ্দাতেই মাথা হলক করে নেয়। এখন তার কী করণীয়? এ কারণে তাকে কোনো জরিমানা দিতে হবে কি?


উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে হেরেমের এলাকায় হলক না করে জিদ্দায় হলক করার কারণে জরিমানা স্বরূপ তাকে একটি দম দিতে হবে। অর্থাৎ কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগল/দুম্বা হেরেমের ভিতরে যবাই করতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে ঐ লোক যদি হেরেমে ফিরে এসে মাথা হলক করত তাহলে তার উপর দম ওয়াজিব হত না।

-গুনয়াতুন নাসিক পৃষ্ঠা : ১৭৫

শেয়ার লিংক

শহীদুল্লাহ মৌলবী - মনোহরদী, নরসিংদী

৩১০৪. প্রশ্ন

এক লোকের দুটি ছেলে আছে। দুজনেরই ভিন্ন ভিন্ন সংসার। বাবা-মাও ছেলেদের থেকে আলাদা থাকেন। দু ছেলের উপার্জন থেকে বাবামাকে কিছু কিছু দেওয়া হয়। এতে তাদের সংসার চলে।

একদিন বাবা বড় ছেলের সাথে ঝগড়া লেগে প্রচন্ড রাগের মাথায় বলে ফেলে, আমি আর তোর কামাই খাব না। তোর কামাই আমার জন্য হারাম।

কয়েকদিন পর প্রতিবেশী লোকজন বাবা-ছেলের মাঝে মিল-মীমাংসা করে দেয়। এখন বাবা ঐ ছেলের উপার্জনও গ্রহণ করে। প্রশ্ন হল, বাবার ঐ কথা বলার কারণে কি কসম হয়ে গেছে? আর এখন তার উপার্জন গ্রহণ করতে কোনো সমস্যা হবে কি?


উত্তর

তোর কামাই আমার জন্য হারাম-এ কথার দ্বারা কসম সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং এরপর বাবা ঐ ছেলের উপার্জন গ্রহণ করার দ্বারা কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে। অতএব তাকে এর কাফফারা দিতে হবে। কাফফারা হল, দশজন মিসকীনকে দু বেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ানো বা প্রত্যেককে এক জোড়া করে বস্ত্র দেওয়া। আর তাতে সক্ষম না হলে লাগাতার তিনটি রোযা রাখা।

-সূরা মায়েদা : ৮৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৫; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭২৫, ৭২৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ কামাল আহমদ - হিলি

৩১০৫. প্রশ্ন

এক মহিলা কোনো কারণে মান্নত করেছিল যে, আগামী সপ্তাহে রোযা রাখবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে ঐ সপ্তাহের শেষ দিকে তার মাসিক এসে যায়। যার কারণে শেষের দুই দিন সে রোযা রাখতে পারেনি। এখন তার  করণীয় কী? সে ঐ মান্নত কীভাবে পূর্ণ করবে?


উত্তর

উক্ত মহিলা পবিত্র হওয়ার পর ঐ রোযাটি রেখে নিবে। এতে তার মান্নত পুরা হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আছল ২/১৬৯

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৩১০৬. প্রশ্ন

আমি দীর্ঘদিন যাবত মাছের ব্যবসা করছি। আমি মাছের আড়ৎ এর মালিক। এই ব্যবসার পদ্ধতি হচ্ছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন নদী ও সাগর পাড়ে একদল মাছ ব্যবসায়ী থাকেন, যাদের সাথে ঢাকাসহ জেলার মাছের আড়তদারগণ প্রতি এক বছরের জন্য একটি চুক্তি করে থাকেন যে, আড়তের মালিক পক্ষ ঐ নদীর পাড়ের মাছ ব্যবসায়ী-যাকে আমরা পার্টি/ব্যাপারী বলে থাকি-তাকে নির্দিষ্ট অংকের যেমন, পাঁচ অথবা দশ লক্ষ টাকা দিবে এই কথার উপর যে, ঐ পার্টি এক বছর ঐ আড়তদারকে মাছ দিবে। আর ঐ মাছ বিক্রি করে দেওয়ার জন্য আড়তদার সেই ক্রয়-বিক্রয় থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পাবে। কিন্তু এই ক্রয়-বিক্রয়ের লাভ/লোকসানের সম্পূর্ণ মালিক হচ্ছেন ঐ পার্টি। আর ঐ যে পূর্বে ৫/১০ লক্ষ টাকা পার্টিকে দেওয়া হয়েছে সেটা আড়তদার এবং পার্টি অর্থাৎ উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে পার্টির কাছ থেকে আড়তদার (মালিক পক্ষ) এক বছরে প্রতিদিন কিছু কিছু করে কেটে রাখবে। এরপর বছর শেষে আবার নতুন করে হিসাব শুরু হবে। দেশের সমস্ত আড়তের কার্যক্রম এভাবেই চলছে। শত শত আড়তদারগণ এই নিয়মেই ব্যবসা করছেন। সম্মানিত মুফতীগণের নিকট আমার জিজ্ঞাসা এই ব্যবসাটি কতটুকু শরীয়তসম্মত? হালাল নাকি হারাম? কুরআন-হাদীসের আলোকে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নে বর্ণিত লেনদেনটি জায়েয নয়। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে তা থেকে উপকৃত হওয়ার একটি পন্থা। কেননা এক্ষেত্রে আড়তদার মাছের ব্যবসায়ীকে ঋণ না দিলে ঐ ব্যবসায়ী তার কাছে মাছ নিয়ে আসত না এবং সে তা থেকে আড়তদারি কমিশনও পেত না। আর কাউকে ঋণ দিয়ে তার থেকে শর্ত করে উপকৃত হওয়া সুদের অন্তর্ভুক্ত। ফাযালা ইবনে উবাইদ রা. বলেন, প্রত্যেক ঋণ, যা লাভ নিয়ে আসে তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৫/৩৫০)

দ্বিতীয়ত এক্ষেত্রে আড়তদার মাছের ব্যবসায়ীকে ঋণ দিচ্ছে এ শর্তে যে, ব্যবসায়ী তার মাছগুলো আড়তদারের কাছে নিয়ে আসবে এবং সে এগুলো বিক্রি করে দিয়ে ব্যবসায়ী থেকে কমিশন নিবে। আর এভাবে এক কারবারের সাথে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করা, বিশেষ করে ঋণ প্রদানের সাথে এভাবে অন্য লেনদেনের শর্ত করা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কারবারে আরেকটি চুক্তির শর্ত করা থেকে নিষেধ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৮৩)

আরেক বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, একই কারবারে আরেকটি চুক্তি শর্তযুক্ত করা সুদের অন্তর্ভুক্ত। (সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১০৫৩)

আরেক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋণের সাথে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি শর্তযুক্ত করা অবৈধ বলেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১২৩৪)

সুতরাং প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে লেনদেন করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে বৈধভাবে কারবার করতে চাইলে ব্যবসায়ীর সাথে মাছের আগাম খরিদের চুক্তি করা যেতে পারে। যাকে পরিভাষায় বাইউস সালাম বলা হয়। তখন এক বছরের জন্য মাছের ব্যবসায়ী থেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ অগ্রিম মূল্যে ক্রয় করে ব্যবসায়ীকে পুরো মূল্য নগদে পরিশোধ করে দিবে। এক্ষেত্রে মাছের প্রকার, সাইজ, মান ও পরিমাণ সবকিছু চুক্তির সময়ই ভালোভাবে ঠিক করে লিখে নিতে হবে।

এভাবে মাছের আগাম খরিদ চুক্তি করার পর মাছের ব্যবসায়ী যখন আড়তদারকে মাছ এনে দিবে তখন আড়তদার এগুলোর মালিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মাছ বিক্রির পর লাভ-ক্ষতি সব আড়তদারের হবে। যা লাভ হবে সে-ই পুরোটার মালিক হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মাছের ব্যবসায়ী যদি আগাম খরিদ চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত আরো মাছ নিয়ে আসে তবে আড়তদার তা বিক্রি করে দিতে পারবে এবং এর বিনিময়ে কমিশনও নিতে পারবে। কিন্তু বাইউস সালামের সাথে এমন কোনো শর্ত করা যাবে না।

-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৮৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ১০৫৩; কিতাবুল আছার ২/৬৪৭; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১২৩৪; আলবাহরুর রায়েক ৭/৩১১; শরহুল মাজাল্লাহ, খালিদ আতাসী ২/৩৮৫

শেয়ার লিংক

ইমরুল হাসান - ঢাকা

৩১০৭. প্রশ্ন

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব হয়? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যে ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হল : স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্ত্তর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে গেলে সেক্ষেত্রেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র-এ সবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফয়সাল ইউনুস - হাটহাজারী, চট্টগ্রাম

৩১০৮. প্রশ্ন

আমার কাছে একটি জমি আছে। ঐ জমির উপার্জন দ্বারা আমার এবং আমার পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। জানার বিষয় হল, ঐ জমির কারণে কি আমার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে?


উত্তর

না, উক্ত জমির কারণে আপনার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে না। কেননা তা আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়; বরং এর আয়ের উপর আপনার পরিবারের খরচ নির্ভরশীল। তাই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে তা ধর্তব্য হবে না।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২; আলবিনায়াহ ১৪/৩৫০; ফাতাওয়া খানিয়া ৬/২৮৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৬; আলবাহরুর রায়েক ৮/১৭৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৪০৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ কবীর হুসাইন - টাঙ্গাইল

৩১০৯. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি মারা যায়। তার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন কেউ নেই। শুধু তার চাচাত ভাইয়ের তিনজন মেয়ে আছে। এছাড়া তার নিকটাত্মীয় বলতে আর কেউ নেই। অপরদিকে সে জীবিত অবস্থায় তার অধিকাংশ সম্পদই মসজিদের জন্য অসিয়ত করে যায়। এখন প্রশ্ন হল, তার এ অসিয়তের কী হুকুম? তা কি পুরোটাই কার্যকর হবে? আমরা তো জানি, ওয়ারিসগণ না মানলে অসিয়ত মৃতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কার্যকর হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে মৃতের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো ওয়ারিস নেই তাই এক্ষেত্রে কি ভিন্ন কোনো হুকুম হবে, না একই হুকুম? জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে চাচাত ভাইয়ের মেয়েরা মৃতের ওয়ারিস। তাই নিয়ম অনুযায়ী মৃতের এক তৃতীয়াংশ সম্পদের ভেতর তার অসিয়ত সহীহ হয়েছে। এটা আদায় করা ওয়ারিসদের উপর কর্তব্য। আর এক তৃতীয়াংশ সম্পদের অতিরিক্ত অংশের অসিয়ত যদি ওয়ারিশগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নেয় এবং তা কার্যকর করতে চায় তবে তা করতে পারবে। কিন্তু তারা সম্মতি না দিলে শুধু এক তৃতীয়াংশের ভেতরেই তা কার্যকর হবে এর অতিরিক্তের অসিয়ত বাতিল গণ্য হবে। এক্ষেত্রে বাকি সকল সম্পদ তার ঐ তিন ভাতিজির মাঝে সমানভাবে বণ্টন হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/৪৪৭, ৪৫৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৬৪-৭৬৫

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুর রহমান - সিমাখালী, মাগুরা

৩১১০. প্রশ্ন

সূরা ফালাক ও নাস কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে? কিছু কিছু লাইব্রেরীর কুরআন শরীফে দেওয়া আছে মাদানী আবার কিছু কিছু লাইব্রেরীর কুরআন শরীফে দেওয়া আছে মক্কী। কোনটা সঠিক অনুগ্রহ করে জানালে খুব উপকৃত হব।


উত্তর

সূরা ফালাক ও নাস মক্কী না মাদানী এ বিষয়ে দুটি মত রয়েছে। হযরত জাবের রা. ও হাসান বসরীসহ কয়েকজন তাবেয়ী সূরা দুটিকে মক্কী বলেছেন। পক্ষান্তরে রঈসুল মুফাসসিরীন আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা., কাতাদাসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুফাসসিরগণ এই দুটিকে মাদানী বলেছেন। তাফসীরে রূহুল মাআনীতে আল্লামা মাহমূদ আলূসী রাহ. মাদানী হওয়ার মতটিকে সহীহ বলেছেন।

এছাড়া সূরা দুটি যে হিজরতের পর নাযিল হয়েছে এ সম্পর্কে একটি বর্ণনা ইবনে হাজার রাহ. ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন। তা হল, সপ্তম হিজরীর মুহাররম মাসে খাযরাজের শাখা গোত্র বনু যুরাইকের লাবীদ নামক এক ইহুদী অন্যান্য ইহুদী সর্দারদের নির্দেশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু করে এবং জাদুর উপকরণসমূহকে মদীনায় অবস্থিত যারওয়ান নামক কূপের নিচে পাথর চাপা দিয়ে রাখে। ফলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ প্রেক্ষিতেই নাযিল হয় উক্ত সূরা দুটি।

-ফাতহুল বারী ১০/২৩৭; রূহুল মাআনী ৩০/২৭৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪/৯১৭; শরহু মুশকিলুল আছার ১৫/১৮০

শেয়ার লিংক

রায়হান - খিলগাও, ঢাকা

৩১১১. প্রশ্ন

আমার কাধে ঝোলানো একটি ছোট ব্যাগ থাকে। যার মাঝে সফরে আমি মোবাইল, মানিব্যাগ, পাতলা একটি জায়নামায ও ছোট একটি কুরআন শরীফ বহন করি। এখন প্রশ্ন, আমি এই ব্যাগ নিয়ে পথে টয়লেটে প্রবেশ করতে পারব কি না? অনেক সময় ব্যাগটি টয়লেটের বাইরে রাখা সম্ভব হয় না।


উত্তর

কুরআন মজীদ, কোনো যিকির বা হাদীস শরীফ সম্বলিত লিখা নিয়ে টয়লেট বা অপবিত্র স্থানে প্রবেশ করা নাজায়েয। অবশ্য তা যদি ব্যাগের ভেতর থাকে আর ব্যাগ বাইরে রাখা নিরাপদ না হয় সেক্ষেত্রে ঐ ব্যাগ নিয়ে ভিতরে যেতে পারবেন।

-ফাতহুল কাদীর ১/১৫০; আলবাহরুর রায়েক ১/২০২; রদ্দুল মুহতার ১/১৭৮

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রেজওয়ান মাহমুদ - জামিআতুস সুন্নাহ মাদরাসা

৩১১২. প্রশ্ন

নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করার নিয়ম কী? লোমনাশক ওষুধ ব্যবহার করা যাবে কি না? অথবা কেউ যদি কেচি দিয়ে একেবারে ছোট করে রাখে তবে কোনো অসুবিধা আছে কি? কোনো কোনো অংশ মুন্ডানো কষ্টকর হয়। বিস্তারিত জানাবেন।


উত্তর

এগুলো পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে উত্তম হল, তা মুন্ডিয়ে ফেলা। আর কেউ মুন্ডাতে না পারলে কেচি দ্বারা একেবারে খাটো করারও অবকাশ রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে লোমনাশক ওষুধও ব্যবহার করা যাবে।

-ফাতহুল মুলহিম ১/৪১৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/১০; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবুল কালাম - ঝিনাইদহ

৩১১৩. প্রশ্ন

আমার ভাতিজার বাম হাতে স্বাভাবিক পাঁচটি আঙ্গুলের অতিরিক্ত একটি আঙ্গুল আছে। আমরা অপারেশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত আঙ্গুলটি কেটে ফেলতে চাচ্ছি। এতে শরীয়তের কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কি না? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

শারীরিক ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে অতিরিক্ত আঙ্গুলটি কেটে ফেলতে পারবেন।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৮৮; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ৪/১৯৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬০; আলমওসূআতুত তিবিবয়্যাহ আলফিকহিয়্যাহ ২৩৭

শেয়ার লিংক