আব্দুল্লাহ জাইফ - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৬৭৮২. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে একজন বৃদ্ধ লোককে নামাযের পূর্বে মসজিদের দেয়াল ধরে তায়াম্মুম করতে দেখা যায় পরে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তার একটা পা ক্ষত হয়েছে ব্যান্ডেজ করে রাখা ডাক্তার পানি লাগাতে নিষেধ করেছেন এজন্য তিনি তায়াম্মুম করেছেন

এখন আমার প্রশ্ন, আলেমদেরকে তো বলতে শুনেছি, ক্ষত জায়গাটা মাসেহ করে বাকি ওযু করে নিতে হয় মসজিদে তো ওযুর ব্যবস্থাও ছিল তিনি চাইলে ওযু করতে পারতেন এখন এ অবস্থায় ওযু না করে তায়াম্মুম করা কি তার জন্য সহীহ হয়েছে?

২. দেয়ালের ওপর তায়াম্মুম করা যাবে কি না?

উত্তর

১. না, পায়ে ব্যান্ডেজ থাকার কারণে তার তায়াম্মুম করা সহীহ হয়নি; বরং এক্ষেত্রে তার জন্য ওযু করাই জরুরি ছিল তার করণীয় ছিল, স্বাভাবিকভাবেই ওযু করা এবং পায়ের ব্যান্ডেজের ওপর মাসেহ করা কেননা ওযুর অধিকাংশ অঙ্গ ধোয়া সম্ভব হলে ওযু করাই জরুরি; তায়াম্মুম সহীহ নয় অতএব ঐ ব্যক্তি তায়াম্মুম করে যে নামাযগুলো পড়েছে, তা আদায় হয়নি সেগুলো পুনরায় পড়ে নিতে হবে

২. মসজিদের দেয়াল যদি শুধু ইট, বালু বা সিমেন্টের হয়; কোনো ধরনের রঙ করা না থাকে, তবে তো এর ওপর নির্দ্বিধায় তায়াম্মুম সহীহ আছে আর যদি দেয়াল রঙ করা থাকে, তবে দেখতে হবে, রঙের উপাদান কীসের যদি চুনা জাতীয় হয়, তবে এর ওপরও তায়াম্মুম সহীহ হবে কিন্তু যদি তা প্লাস্টিক পেইন্ট জাতীয় হয়, তাহলে এর ওপর তায়াম্মুম সহীহ হবে না

* >المحيط البرهاني< /৩০৪ : وإذا كان عامة بدن الجنب جريحا، أو عامة أعضاء المحدث، فإنه يتيمم ولا يستعمل الماء فيما كان صحيحا. وإن كان على العكس، فإنه يغسل ويمسح على الجراحة إن أمكنه، أو فوق الخرقة إن كان المسح يضره، ولا يتيمم، وهو قول علماءنا رحمهم الله.

কিতাবুল আছল ১/১০৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৩৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৭৪; আলবাহরুর রায়েক ১/১৪৭, ১৭৩; রদ্দুল মুহতার ১/২৫৭

শেয়ার লিংক

যুলফা আক্তার - বারিধারা

৬৭৮৩. প্রশ্ন

আমার বড় বোন সন্তান প্রসব করার পর তার নেফাস চল্লিশ দিনের বেশি ছিল এটিই তার প্রথম সন্তান আমি চল্লিশ দিনের পর তাকে নামায আদায় করতে বললে তিনি নেফাস মনে করে নামায শুরু করেননি এরপর আরো দশ দিন ব্লাড এসেছিল এখন নেফাস বন্ধ হয়েছে প্রায় তিন-চার মাস কিন্তু এর ভেতর একবারও হায়েয আসেনি সন্তান গর্ভধারণের পূর্বে মাসের কোন্ তারিখে তার হায়েয আসত, সেটাও তিনি ভুলে গেছেন এতদিন তিনি নামায চালুই রেখেছেন

প্রশ্ন হল, তিনি কি হায়েয না আসলেও মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়কে হায়েযের জন্য নির্ধারণ করে নামায পড়া থেকে বিরত থাকবেন, নাকি নিয়মিত নামায পড়তে পারবেন?

উত্তর

কোনো নারীর দীর্ঘদিন কোনো স্রাব দেখা না গেলেও যতদিন স্রাব আসবে না ততদিন সে পবিত্রই থাকবে এবং তার ওপর তখন নিয়মিত নামায (এবং রোযার সময় রোযা) আদায় করা ফরয এক্ষেত্রে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিছু দিনকে হায়েয ধরার কোনো সুযোগ নেই সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার বড় বোনের যতদিন ঋতুস্রাব দেখা না দেবে ততদিন তার নিয়মিত নামায আদায় করা জরুরি

আর সন্তান প্রসবের পর চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পর থেকে (স্রাব চলমান থাকলেও) তার নামায না পড়া বড়ই ভুল কাজ হয়েছে কেননা নেফাস (সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব)-এর মেয়াদ সর্বোচ্চ চল্লিশ দিন এরপর রক্ত দেখা গেলেও তা নেফাস নয়; বরং ইস্তেহাযা তাই এরপর থেকে তার ওপর নামায আদায় করা ফরয ছিল তা না করে ঐ দিনগুলোতে তার নামায আদায় থেকে বিরত থাকা বড় গুনাহের কাজ হয়েছে তার ওপর জরুরি হল, যত দ্রুত সম্ভব ঐ নামাযগুলোর কাযা করে নেওয়া এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তাওবা-ইস্তেগফার করা আর ভবিষ্যতে দ্বীনী যে কোনো বিষয়ে নিজের ধারণা মতো আমল না করে বিজ্ঞ আলেম থেকে সঠিক মাসআলা জেনে সে অনুযায়ী আমল করা

উল্লেখ্য, নারীদের কর্তব্য হল, মাসিকের দিন-তারিখের হিসাব গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ রাখা কেননা নামায, রোযা, স্বামী-সহবাস, ইদ্দতসহ শরীয়তের বহু বিধান এর সাথে সংশ্লিষ্ট তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা কোনোক্রমেই ঠিক নয়

* >بدائع الصنائع< /১৫৬ : وأما أكثر الطهر فلا غاية له، حتى أن المرأة إذا طهرت سنين كثيرة، فإنها تعمل ما تعمل الطاهرات بلا خلاف بين الأئمة.

কিতাবুল আছল ১/২৯৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৪৮; আলইনায়া শরহুল হিদায়া ১/১৫৫, ১৬৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৭৯

শেয়ার লিংক

নোমান উদ্দীন - উত্তরা, ঢাকা

৬৭৮৪. প্রশ্ন

তারাবীর নামাযে খতমের সময় হাফেজ সাহেবগণ কোনো এক সূরার শুরুতে উচ্চৈঃস্বরে বিসমিল্লাহ পড়ে থাকেন এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী? উচ্চৈঃস্বরে একবার বিসমিল্লাহ পড়া কি জরুরি?

উত্তর

না, তারাবীর নামাযে

بسم الله الرحمن الرحيم একবার উচ্চৈঃস্বরে পড়া জরুরি নয় তবে بسم الله الرحمن الرحيم কুরআন মাজীদের স্বতন্ত্র একটি আয়াত তাই খতম তারাবীতে মুক্তাদির খতম পূর্ণ হওয়ার জন্য ইমামকে কোনো এক সূরার শুরুতে একবার উচ্চৈঃস্বরে

بسم الله الرحمن الرحيم পড়ে নিতে হবে নতুবা মুক্তাদির খতম অপূর্ণ থেকে যাবে

* >إحكام القنطرة في أحكام البسملة< ضمن مجموع رسائل اللكهنوي /৭১: مسألة : قد صرحوا أن ختم القرآن بجميع أجزائه في التراويح مرة سنة مؤكدة، حتى لو ترك آية منه لم يخرج عن العهدة. وقد ثبت أن البسملة آية منه على الأصح. فيستخرج من أنه لو قرأ تمام القرآن في التراويح، ولم يقرأ البسملة في ابتداء سورة من السور، سوى ما في سورة النمل، لم يخرج عن عهدة السنية. ولو قرأها الإمام سرا، خرج عن العهدة، ولكن لم يخرج المقتدون عن العهدة.

আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/১২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯১; আস্সিআয়া ২/১৭০

শেয়ার লিংক

সাহবান সুহাইল - কুমিল্লা

৬৭৮৫. প্রশ্ন

নামাযে সালাম ফেরানোর সঠিক পদ্ধতি কী? উভয় সালাম কোত্থেকে শুরু করবে এবং কোথায় শেষ করবে? জানিয়ে বাধিত করবেন

উত্তর

সালাম ফেরানোর সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, কিবলার দিকে চেহারা থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা ডানদিকে ফেরাবে তেমনিভাবে দ্বিতীয় সালামের ক্ষেত্রেও চেহারা সামনের দিকে এনে কিবলার দিকে থাকা অবস্থায় সালাম শুরু করবে এবং সালাম বলতে বলতে চেহারা বাম দিকে ফেরাবে

* >الكوكب الدري< ١/১৪০ : (تحت حديث عائشة رضي الله عنها أن رسول اللهصلى الله عليه وسلم كان يسلم في الصلاة تسليمة واحدة تلقاء وجهه، ثم يميل إلى الشق الأيمن شيئاً) أي يأخذ فيها من تلقاء وجهه ويختمها إذا مال وجهه إلى اليمين. وكذا الحكم في تسليم اليسار. لكنها اكتفت بذكر تسليمة؛ لما أن مقصودها بالذكر إنما هو بيان التسليمة، من أين تبتدأ وبيان كيفيتها كيف هي.

আলমাজমূ শরহুল মুহায্যাব ৩/৪৫৮; লামিউদ দারারী ১/১৪০; মাআরিফুস সুনান ৩/১১০

শেয়ার লিংক

আবদুর রহীম - কক্সবাজার

৬৭৮৬. প্রশ্ন

আমি এক মাদরাসার পরিচালক প্রতি রমযানে মাদরাসার গোরাবা ফান্ডে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত তালেবে ইলমদের জন্য অনেক টাকা জমা হয় সেগুলো দিয়ে কেবল তাদেরই থাকা-খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় এক তালেবে ইলম, যে আরেক মাদরাসায় পড়ে, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে সে কিতাব কিনতে পারছিল না জানতে পেরে আমার মাদরাসার গোরাবা ফান্ড থেকে তাকে কিছু টাকা দিই

জানার বিষয় হল, আমার কাজটি কি নিয়মসম্মত হয়েছে? না হয়ে থাকলে এখন কী করণীয়?

উত্তর

আপনার কাজটি বৈধ হয়নি কেননা এ টাকার হকদার কেবল এই মাদরাসার যাকাত-সদকা গ্রহণের উপযুক্ত তালেবে ইলমরা এ মাদরাসার বাইরের অন্য কাউকে তা থেকে দেওয়ার সুযোগ নেই; যদিও সে যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয় এখন আপনার কর্তব্য হল, ঐ পরিমাণ অর্থ এই মাদরাসার গোরাবা ফান্ডে জমা করে দেওয়া

* >المحيط البرهاني< ১৫/৪২ : لو قال: تصدق بها على فقراء مكة، فتصدق بها على فقراء الكوفة، ضمن؛ لأنه سمى له قوما ووصفهم، فصار بالدفع إلى غيرهم مخالفا.

শরহু মুখতাসারিল কারখী, কুদূরী ২/১৮৯; আলমুজতাবা, যাহেদী ২/১৪৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/২২৮; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৯; ইমদাদুল আহকাম ২/৯০

শেয়ার লিংক

আবু সুফিয়ান - নোয়াখালী

৬৭৮৭. প্রশ্ন

আমার দূর সম্পর্কের একজন চাচি আছেন যিনি ছোটবেলায় আমাকে দুধ পান করিয়েছিলেন বর্তমানে তিনি বিধবা আর্থিকভাবেও খুবই কষ্টে আছেন তাই আমি তাকে যাকাতের টাকা দিয়ে সহায়তা করতে চাচ্ছি

হুজুরের কাছে জানতে চাই, দুধ-মাকে কি যাকাতের টাকা দেওয়া যায়? তাকে কি আমি আমার যাকাতের টাকা দিতে পারব?

উত্তর

দুধ-মাকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে তাই আপনার ঐ দুধ-মা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে আপনি তাকে নিজের যাকাতের টাকা দিতে পারবেন

* >المبسوط< للسرخسي ১৬/১২৫: لأن الرضاع تأثيره في الحرمة خاصة، وفيما وراء ذلك كل واحد منهما من صاحبه كالأجنبي.

কিতাবুল আছল ২/১২৪; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১; আলহাবিল কুদসী ১/২৯৮; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/২১২; মিরাজুদ দিরায়া ২/৭৬২; ফাতহুল কাদীর ২/২০৯; রদ্দুল মুহতার ২/৩৪৬

শেয়ার লিংক

হাবিবুল্লাহ - উত্তরা, ঢাকা

৬৭৮৮. প্রশ্ন

আমি এ বছর হজ্ব করতে গিয়েছিলাম হজে¦র সব আমল ঠিকমতোই ছিল তবে কঙ্কর নিক্ষেপ করার প্রথম দিন (অর্থাৎ দশ তারিখ) কঙ্কর নিক্ষেপ করে আমি মক্কায় চলে আসি এর পরের দুই দিন আর কঙ্কর নিক্ষেপ করতে যাইনি আমার ধারণা ছিল, শুধু প্রথম দিন কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব পরের দুই দিনও যে কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব, তা আমার জানা ছিল না তাই পরের দুই দিন অর্থাৎ এগারো ও বারো তারিখ কঙ্কর নিক্ষেপ করিনি পরে দেশে এসে জানতে পারি যে, ঐ দুই দিনও কঙ্কর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব

এখন আমার জানার বিষয় হল, আমি যে দুই দিন কঙ্কর নিক্ষেপ করতে যাইনি, এর কারণে কি আমার ওপর দম ওয়াজিব হয়েছে? এবং হয়ে থাকলে কয়টা দম ওয়াজিব হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, এ কারণে আপনার ওপর দম ওয়াজিব হয়েছে অবশ্য এক্ষেত্রে একটি দম দেওয়াই যথেষ্ট দুই দিনের কঙ্কর নিক্ষেপ ছেড়ে দিলেও একাধিক দম ওয়াজিব হয়নি

অতএব, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে দম হিসেবে আপনাকে কুরবানীর উপযুক্ত কোনো পশু (যেমন ছাগল, ভেড়া, দুম্বা কিংবা কুরবানীর নিয়ম অনুযায়ী উট, গরুর এক সপ্তমাংশ) হেরেম এলাকায় জবাই করতে হবে তবে তা নিজে করা জরুরি নয়; বরং হেরেম এলাকায় অন্য কারো মাধ্যমে করালেও হবে

* >المبسوط< للسرخسي /৬৫ : (قال) وإن ترك الرمي كله في سائر الأيام إلى آخر أيام الرمي، رماها على التأليف؛ لأن وقت الرمي باق، فعليه أن يتدارك المتروك ما بقي وقته، كالأضحية إذا أخرها إلى آخر أيام النحر، وعليه دم للتأخير في قول أبي حنيفة رحمه الله تعالى، ولا دم عليه في قولهما. فإن تركها حتى غابت الشمس من آخر أيام الرمي، سقط عنه الرمي بفوات الوقت، ... وعليه دم واحد عندهم جميعا.

আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪১০; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী, পৃ. ৩৫৮, ৩৯২; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ২৪০, ২৭৯

শেয়ার লিংক

শাহরিয়ার সাকিব - রায়পুর, লক্ষ্মীপুর

৬৭৮৯. প্রশ্ন

আমার বন্ধু ছোটবেলা তার নানির দুধ পান করেছে এখন তার মামাতো বোনের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এ দুজনের মধ্যে কি বিবাহ শুদ্ধ হবে?

উত্তর

না, মামাতো বোনকে বিয়ে করা বৈধ হলেও প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে এ দুজনের মধ্যে বিবাহ বৈধ হবে না কারণ, ওই ছেলে তার নানির দুধ পান করায় তার নানি তার দুধ-মা আর তার মামা তার দুধ-ভাই হয়ে গেছে অতএব ওই মেয়েটি তার মামাতো বোন হলেও দুধ-ভাইয়ের মেয়ে হিসেবে তার দুধ-ভাতিজি হয়ে গেছে আর আপন ভাতিজির সাথে বিবাহ যেমন হারাম, তেমনি দুধ-ভাতিজির সাথেও বিবাহ হারাম তাই এক্ষেত্রে তার জন্য ওই মেয়েকে বিবাহ করার কোনো সুযোগ নেই

* >بدائع الصنائع< /৩৯৬ : أثبت الله تعالى الأخوة بين بنات المرضعة وبين المرضع، والحرمة بينهما مطلقا من غير فصل بين أخت وأخت، وكذا بنات بناتها وبنات أبنائها، وإن سفلن؛ لأنهن بنات أخ المرضع وأخته من الرضاعة، وهن يحرمن من النسب، كذا من الرضاعة.

সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৪৭; তাফসীরে কুরতুবী ৫/৭২; আলমুহীতুর রাযাবী ৩/৪৭৮; জামিউল মুজমারাত ৩/৫৮৯; মাজমাউল আনহুর ১/৫৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩

শেয়ার লিংক

নোমান বিন কবির - বন্দর, নারায়ণগঞ্জ

৬৭৯০. প্রশ্ন

আমার বন্ধু তার স্ত্রীকে এক তালাকে বায়েন প্রদান করেছে ইতিপূর্বে সে আর কোনো তালাক দেয়নি এখন সে এবং তার স্ত্রী পুনরায় একসাথে থাকতে চাচ্ছে

হুজুরের কাছে জানতে চাই, পুনরায় বিবাহের জন্য তাদের কতদিন অপেক্ষা করতে হবে? স্থানীয় এক আলেম বলেছেন, এক্ষেত্রে তাদের বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য নাকি স্ত্রীর ইদ্দত পালন শেষ হওয়া জরুরি এ কথা কি ঠিক? বিষয়টি জানিয়ে বাধিত করবেন

উত্তর

না, ওই কথাটি ঠিক নয় স্ত্রীকে এক তালাক বা দুই তালাকে বায়েন দিলে ইদ্দতের ভেতরও তালাকদাতা স্বামীর সাথে তার বিবাহ জায়েয আছে অতএব এক্ষেত্রে তারা চাইলে ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে এতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু তালাকদাতা স্বামী ছাড়া অন্য কারো সাথে ওই মহিলা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে ইদ্দত শেষ হওয়া জরুরি এর আগে অন্য কারো সাথে তার বিবাহ বৈধ নয়

* >بدائع الصنائع< /৩২৩ : ويجوز لصاحب العدة أن يتزوجها؛ لأن النهي عن التزوج للأجانب، لا للأزواج.

মিরাজুদ দিরায়া ৪/৩১৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/১৪৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/৫৬; আননাহরুল ফায়েক ২/৪২০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪০৯

শেয়ার লিংক

ড. আবদুল হক - সিলেট

৬৭৯১. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমি একটি ব্যবসা শুরু করেছিলাম এখন আবার তা বন্ধ করে দিয়েছি তখন মান্নত করেছিলাম, ব্যবসায় যদি লাভ হয়, তাহলে আমি লাভের দশ শতাংশ দান করব আলহামদু লিল্লাহ, ব্যবসায় ভালো লাভ হয়েছে

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, মান্নতের এ অর্থ কি মসজিদ নির্মাণের কাজে ব্যয় করা যাবে?

উত্তর

না, মান্নতের অর্থ মসজিদে দেওয়া যাবে না; বরং তা যাকাতগ্রহণের উপযুক্ত গরিব-মিসকীনদের দান করে দিতে হবে মসজিদে দিলে তা নফল সদকা হিসেবে গণ্য হবে; মান্নত আদায় হবে না

* >الحاوي القدسي< /৩০০ : ومصارف العشر وسائر الصدقات الواجبات مصارف الزكاة.

وفيه أيضا /২৯৯ : ولا يجوز أداء الزكاة إلا على وجه التمليك ممن هو من أهل الملك، حتى لا يجوز أن يقضي من الزكاة دين ميت، ولا يبني بها مسجدا.

আলইখতিয়ার ১/৩৮৩; আলজাওহারাতুন নায়্যিরা ১/১৬৭; জামিউর রুমূয ১/৩৩৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৪২৩; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯

শেয়ার লিংক

(মুফতী) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান - লক্ষ্মীপুর ভরেরচর, মুন্সিগঞ্জ

৬৭৯২. প্রশ্ন

মুহতারাম, লক্ষ্মীপুর ভরেরচর, গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ-এ ওয়াকফকৃত আমাদের একটি পুরাতন মসজিদ রয়েছে যা এলাকার মুসল্লীবৃন্দের পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমা, জানাযা, তারাবীসহ অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীর একমাত্র কেন্দ্রস্থল বর্তমানে এদিক দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক প্ল্যানকৃত একটি রাস্তা হতে যাচ্ছে, যা মতলব এলাকায় গিয়ে পৌঁছবে সরকারি কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে, মসজিদটি ভেঙে সেখান দিয়ে রাস্তা নিয়ে মসজিদটি অন্য স্থানে স্থানান্তর করে দেবে আমরা এলাকাবাসী ও মুসল্লীবৃন্দ জানতে চাই, একটি প্রাচীন মসজিদ এভাবে ভেঙে রাস্তা নির্মাণ করা শরীয়তে কতটুকু বৈধ?

উল্লেখ্য, মসজিদের জমিদাতা মোতাওয়াল্লি এমনটি করতে আদৌ রাজি নন; বরং তিনি এবং এলাকাবাসী মসজিদকে যথাস্থানে রেখে রাস্তা করার জন্য সরকারকে অন্য দিক দিয়ে জায়গা দিতে প্রস্তুত এমতাবস্থায় সরকার-কর্তৃপক্ষের জন্য করণীয় কী? শরীয়তের আলোকে জানিয়ে আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে সহায়তা করুন

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী সরকারি কর্তৃপক্ষের জন্য উক্ত মসজিদটিকে ভেঙে দিয়ে তাতে সড়ক নির্মাণ করা বৈধ হবে না এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে সরকার অন্যত্র মসজিদের জায়গা দিয়ে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করে দিলেও এ কাজ কখনো বৈধ হবে না আগের মসজিদকে বিরান করা কবীরা গুনাহ ও স্পষ্ট হারাম হবে এবং চরম জুলুম ও অন্যায় হবে মসজিদ আল্লাহ তাআলার ঘর, ইসলামের শিআর মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গায় যখন মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়, তা চিরস্থায়ীভাবে মসজিদের জন্য নির্ধারিত হয়ে যায় উক্ত মসজিদকে স্বস্থানে আবাদ রাখা এলাকাবাসী সকলের ওপর আবশ্যক তা ভেঙে ফেলা, বিরান করা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ

কুরআন মাজীদে মসজিদ আবাদ করাকে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসাবে ব্যক্ত করা হয়েছে

ইরশাদ হয়েছে

اِنَّمَا یَعْمُرُ مَسٰجِدَ اللهِ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ وَ لَمْ یَخْشَ اِلَّا اللهَ فَعَسٰۤی اُولٰٓىِٕكَ اَنْ یَّكُوْنُوْا مِنَ الْمُهْتَدِیْنَ.

আল্লাহর মসজিদসমূহ তো আবাদ করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছে এবং নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না এরূপ লোকদের সম্পর্কেই আশা আছে যে, তারা সঠিক পথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে সূরা তাওবা (০৯) : ১৮

অপরদিকে মসজিদ বিরানে অপচেষ্টাকারীকে সর্বাধিক জালেম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ اَنْ یُّذْكَرَ فِیْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰی فِیْ خَرَابِهَا  اُولٰٓىِٕكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ یَّدْخُلُوْهَاۤ اِلَّا خَآىِٕفِیْنَ لَهُمْ فِی الدُّنْیَا خِزْیٌ وَّ لَهُمْ فِی الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِیْمٌ.

সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে আল্লাহর নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং তাকে বিরান করার চেষ্টা করে? এরূপ লোকের তো ভীত-বিহ্বল না হয়ে তাতে প্রবেশ করাই সংগত নয় তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা এবং আখেরাতে রয়েছে মহা শাস্তি সূরা বাকারা (০২) : ১১৪

হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন

وعلى الجملة فتعطيل المساجد عن الصلاة وإظهار شعائر الإسلام فيها خراب لها. ... ولذلك قلنا: لا يجوز نقض المسجد ولا بيعه ولا تعطيله وإن خربت المحلة.

সারকথা হল, মসজিদসমূহে নামায আদায় ও ইসলামের নিদর্শনাবলি প্রকাশে বিঘ্ন সৃষ্টি করা মসজিদ বিরান করার নামান্তর এ কারণেই আমরা বলি, মহল্লা বিরান হয়ে গেলেও মসজিদ ভেঙে ফেলা, বিক্রি করা বা তা বন্ধ করে দেওয়া কোনোটিই জায়েয নয় (তাফসীরে কুরতুবী ২/৭৭)

আরো দ্রষ্টব্য : আলহিদায়া ইলা বুলূগিননিহায়া, মাক্কী ইবনে আবী তালিব ১/২৭৫

ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. (১৮২হি.) বলেন

مسجد باد أهله، وعطلت الصلوات فيه، لم يجز لأحد أن يهدمه، ولا يتخذه منزلا، ولا يسعه ذلك.

কোনো মসজিদ যদি আবাদিশূন্য হয়ে পড়ে, ফলে উক্ত মসজিদে নামায আদায় না হয়, তথাপি কারো জন্যই উক্ত মসজিদ ভেঙে ফেলা, তাকে ঘর বানিয়ে নেওয়া কোনো কিছুই জায়েয নয় (আলআজনাস, নাতিফী ১/৫৪৭)

সুতরাং সরকারি কর্তৃপক্ষের উক্ত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা কর্তব্য এক্ষেত্রে তাদের কর্তব্য হল, সুবিধাজনক অন্য দিক দিয়ে রাস্তা বের করা আর প্রশ্নের বক্তব্য অনুযায়ী প্রস্তাবিত রাস্তাটি নির্মাণের জন্য অন্য দিক দিয়ে যেহেতু জায়গা প্রস্তুত রয়েছে, তাই তা কঠিন কিছু বিষয়ও নয় কিন্তু তা না করে স ও জ কর্তৃপক্ষ যদি মসজিদ ভেঙে দিয়ে সেখানে রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগী হয়, তবে একে তো তা হবে আল্লাহর ঘরের সাথে চরম জুলুম ও অন্যায় আচরণ, অপরদিকে এ নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সাথে বিবাদে জড়াবার এবং খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সমূহ আশঙ্কা প্রবল তাই ধর্মীয় ও সামাজিক সকল বিবেচনায়ই স ও জ কর্তৃপক্ষের উক্ত পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য 

উল্লেখ্য, এমন হারাম কাজের বৈধতার জন্য জনৈক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাব রা.-এর দিকে সম্বন্ধকৃত একটি ঘটনা উল্লেখ করেছে তা হল, তিনি নাকি কূফার একটি মসজিদকে বিশেষ এক কারণে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন কিন্তু এ বর্ণনাটি সূত্র বিচ্ছিন্ন যা হাদীস শাস্ত্রের মূলনীতি অনুসারে প্রমাণযোগ্য নয়

ইমাম ইবনে কাছীর রাহ. আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে উক্ত ঘটনা উল্লেখপূর্বক বর্ণনাটিকে সূত্র বিচ্ছিন্ন  বলেছেন প্রখ্যাত হাদীসবিদ ইমাম নুরুদ্দীন হাইসামী রাহ.-ও এমনটিই বলেছেন

দেখুন : আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ৯/৫১১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৬/৪২৪

আরো উল্লেখ্য, জনগণের সুবিধার্থে রাস্তাঘাট নির্মাণ, গণমুখী বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সরকারের দায়িত্ব এসবের জন্য প্ল্যান-পরিকল্পনা অত্যন্ত সুচিন্তিত হওয়া দরকার এসব ক্ষেত্রে মসজিদ-মাদরাসা, ওয়াকফিয়া কবরস্তান যেন সুরক্ষিত থাকে, তা প্রকল্পের নকশা তৈরির সময়ই মাথায় রাখা কর্তব্য কিন্তু দুঃখজনকভাবে এদেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে উক্ত বিষয়গুলোকে অবহেলা করা হয়ে থাকে যার দরুন মাঝে মাঝেই বিভিন্ন অঞ্চলে সরকার ও সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে বিবাদ ও পরস্পর বিরোধী অবস্থান তৈরি হয় যা কারো জন্যই কাম্য নয়

 

* >الأجناس< للناطفي /৫৪৯: وفي >نوادر هشام< : سألت محمدا عن ...، ولو كان مسجدا في محلة ضاق بأهله، لا يقدرون أن يزيدوا فيه، فسـألهم بعض الجيران أن يجعلوا ذلك المسجد له يدخله داره، ويعطيهم مكانه عوضا من داره ما هو خير منه، ويسع فيه أهل المحلة، قال: لا يسعهم ذلك.

* >خزانة الأكمل< /৭৯০: أرض متصلة بالمسجد وبالطريق، شهدا أنها من المسجد، وشهد آخران أنها من الطريق، فالمسجد أولى؛ فإنه أخص، فإنه يتخذ الطريق مسجدا، وبالعكس لم يجز.

* رد المحتار /৩৭৮-৩৭৯ : لكن كلام المتون في جعل شيء منه طريقا، وأما جعل كل المسجد طريقا، فالظاهر أنه لا يجوز قولا واحدا. ... بخلاف جعل المسجد طريقا؛ لأن المسجد لا يخرج عن المسجدية أبدا.

আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১৩২১৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/৪২; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১২৫; আলহাবিল কুদসী ১/৪৫৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ২/৫৪৩; মাজমূউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া ২২/১৯৩

শেয়ার লিংক

আবু সাঈদ - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৬৭৯৩. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একজন আরেকজনের জমি বন্ধক ও বর্গাচাষের নাম দিয়ে চাষাবাদ করে থাকে তার কয়েকটি পদ্ধতি এখানে উল্লেখ করা হল

১. বন্ধকের পদ্ধতি হল, জমির মালিক চাষিকে বলে, আমার এই পঞ্চাশ শতক জমির বিনিময়ে আপনি আমাকে দুই লক্ষ টাকা ঋণ দেবেন যতদিন পর্যন্ত আমি আপনার টাকা পরিশোধ করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আপনি আমার জমি চাষ করবেন

২. বর্গার পদ্ধতি হল, জমির মালিক চাষিকে বলে, আপনি আমার এই পঞ্চাশ শতক জমি চাষ করেন বিনিময়ে প্রতি সিজনে শতক প্রতি আমাকে চার কেজি করে মোট পাঁচ মণ ধান দেবেন

৩. বর্গার আরেকটি পদ্ধতি হল, জমির মালিক চাষিকে বলে, আপনি আমার এই পঞ্চাশ শতক জমি চাষ করেন বিনিময়ে প্রতি সিজনে উৎপাদিত ফসলের এক তৃতীয়াংশ আমাকে দিবেন

মুহতারামের সমীপে আকুল আবেদন এই যে, উল্লিখিত পদ্ধতিগুলো জায়েয কি না তা জানিয়ে বাধিত করবেন আর কুরআন-হাদীসের আলোকে বৈধ পদ্ধতি উল্লেখ করবেন, যে পদ্ধতিতে যৌথ চাষাবাদ করে মানুষ শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বাঁচতে পারে

উত্তর

১. জমি বন্ধক নেওয়ার উক্ত পদ্ধতি জায়েয নয় কেননা এটি এক প্রকারের বন্ধক চুক্তি আর ঋণের বিনিময়ে বন্ধকী বস্তু ভোগ করা সুদের অন্তর্ভুক্ত

মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন রাহ. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর কথা বর্ণনা করেন

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ مَسْعُوْدٍ فَقَالَ: إِنَّ رَجُلًا رَهَنَنِيْ فَرَسًا فَرَكِبْتُهَا، قَالَ: مَا أَصَبْتَ مِنْ ظَهْرِهَا فَهُوَ رِبًا.

এক লোক আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর নিকট এসে বলল, এক ব্যক্তি আমার কাছে একটি ঘোড়া বন্ধক রেখেছে আমি তাতে আরোহণ করেছি (এখন তার হুকুম কী)?

তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বললেন, তুমি ঘোড়াটিতে চড়ে যে উপকার ভোগ করেছ তা সুদ হয়েছে (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৮০৭১)

হযরত শাবী রাহ. বলেন

لَا يُنْتَفَعُ مِنَ الرَّهْنِ بِشَيْءٍ.

বন্ধকী বস্তু থেকে কোনো উপকার গ্রহণ করা বৈধ নয় (শরহু মাআনিল আছার ২/২৩১)

এক্ষেত্রে বৈধভাবে অন্যের জমি চাষাবাদ করে উপকৃত হতে চাইলে ঋণ ও বন্ধকের চুক্তি বাদ দিয়ে শুরু থেকেই জমি ভাড়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে জমির মালিকের যদি এক্ষেত্রে এক মুঠে বেশি টাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে জমি মালিক ভাড়াটিয়ার সাথে দীর্ঘমেয়াদি ভাড়া চুক্তি করতে পারে এবং কয়েক বছরের ভাড়া অগ্রিম নিয়ে নিতে পারে উদাহরণস্বরূপ, কোনো জমির বার্ষিক ভাড়া বিশ হাজার টাকা আর জমি-মালিকের দরকার হল, এক লক্ষ টাকা তাহলে এক্ষেত্রে জমি-মালিক চাষির কাছে তার জমি পাঁচ বছরের জন্য ভাড়া দেবে এবং আগাম ভাড়া হিসাবে এক লক্ষ টাকা গ্রহণ করবে এরপর পাঁচ বছর ভাড়াগ্রহীতা তা ভোগ করবে আর মেয়াদান্তে মালিক জমি ফেরত পাবে; কিন্তু কোনো টাকা ফেরত পাবে না কারণ টাকাগুলো জমির ভাড়া বাবদ কাটা গেছে যা সে এতদিন ভোগ করেছে

* كتاب >الأصل< /২২৯: وإذا ارتهن الرجل أرضا وقبضها فليس للراهن أن يزرعها ولا يؤاجرها، وليس للمرتهن أن يزرعها ولا يؤاجرها، فإن فعل ذلك ضمن ما نقص الأرض، وتصدق بالفضل إن زرع أو آجر.

আলমাবসূত, সারাখসী ২১/১৬৩; শরহুল বেকায়া, ইবনে মালাক ৪/১০৮; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/২৩৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২

২. হাঁ, জমির মালিক থেকে এ শর্তে চাষাবাদ করার জন্য জমি নেওয়া বৈধ হবে এটি বর্গাচাষ নয়; বরং জমি ভাড়া নেওয়ার একটি প্রকার এখানে ভাড়া হিসাবে টাকার বদলে শস্য দেওয়া হচ্ছে এটি যেহেতু নির্ধারিত পরিমাণ শস্যের বিনিময়ে জমির ভাড়া চুক্তি, তাই কোনো সিজনে ফসল হোক আর না হোক, কম হোক বা বেশি, এমনকি সে যদি তাতে চাষাবাদ নাও করে বা অন্য কোনো শস্যের চাষ করে, সর্বাবস্থায় জমির মালিককে চুক্তি অনুযায়ী প্রতি সিজনে ওই পরিমাণ ধান প্রদান করতে হবে

তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় হল, ওই নির্ধারিত পরিমাণের ধান উক্ত জমির উৎপাদিত ফসল থেকেই দেওয়ার শর্ত করা যাবে না এমন শর্ত থাকলে চুক্তিটি সহীহ হবে না; বরং শস্য-পণ্যের বিষয়টি ব্যাপক থাকতে হবে যেন অন্য জমি বা বাজার থেকে ক্রয়কৃত পণ্য থেকে দেওয়ারও সুযোগ থাকে চুক্তিতে যদি এই জমির ফসল থেকে দেওয়ার কথা না থাকে, তবে পরবর্তীতে চাষি চাইলে উক্ত জমির ফসল দ্বারাও মালিককে তা পরিশোধ করতে পারবে

* >الفتاوى الهندية< /৪১২ : وما صلح أن يكون ثمنا في البيع كالنقود والمكيل والموزون، صلح أن يكون أجرة في الإجارة.

৩. বর্গাচাষের এ পদ্ধতিটি অর্থাৎ উৎপাদিত ফসল চাষি ও মালিকের মাঝে আনুপাতিক হারে বণ্টনের চুক্তি জায়েয আছে এক্ষেত্রে চুক্তির সময় বর্গার মেয়াদ এবং ফসলের কত শতাংশ কে পাবে এসব সুনির্ধারিত করে নেবে

কিতাবুল আছল ৯/৫৮০; আলমাবসূত, সারাখসী ২৩/১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/২২৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৪; রদ্দুল মুহতার ৬/২৭৬ 

শেয়ার লিংক