রহমাতুল্লাহ - পটিয়া, চট্টগ্রাম

পটিয়া, চট্টগ্রাম. প্রশ্ন

আমরা সাতজন শরীক হয়ে একটি গরু কুরবানী করব। এ কুরবানীর গোশত বণ্টন সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন হল, জবাইয়ের পর পুরো গরু কাটাকাটি শেষ হতে অনেক সময় লেগে যায়।

এজন্য আমরা চাচ্ছি, কিছু গোশত কাটা হয়ে গেলে তা ভাগ করে রান্নার জন্য নিয়ে যাব। মূল বণ্টনের আগে এভাবে গোশত নিতে পারব কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

হাঁ, গোশত বানানোর কাজ শেষ হওয়ার আগেও শরীকগণ চাইলে নিজেদের অংশ অনুযায়ী কিছু গোশত ভাগ করে নিতে পারবে। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

শেয়ার লিংক

ইমরান রাইহান - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৬৭৩২. প্রশ্ন

ফরয গোসলের জন্য পানি গরম করছিলাম। পানিতে আঙুল দিয়ে দেখলাম, পানি গরম হয়েছে কি না। পরে সন্দেহ জাগে, পানি নাপাক বা ব্যবহৃত হয়ে গেল কি না।

জানতে চাই, এক্ষেত্রে মাসআলা কী? এর দ্বারা কি পানি নাপাক বা ব্যবহৃত হয়ে গেছে?

উত্তর

গোসল ফরয অবস্থায় পানিতে হাত দিলে যদি হাতে সুস্পষ্ট কোনো নাপাকী না থাকে, তবে এ কারণে ঐ পানি নাপাক হয়ে যায় না। আর পাত্রের পানিতে শুধু আঙুল দেওয়ার কারণে তা ব্যবহৃতও হয় না। তাই আপনি ঐ পানি ব্যবহার করে থাকলে তাতে দোষের কিছু হয়নি। ঐ পানি দ্বারা আপনার পবিত্রতা অর্জন করা সহীহ হয়েছে।

* >خلاصة الفتاوى< ১/৬ : الجنب إذا أدخل يده في الإناء، لا ينجسه، هذا إذا لم يرد غسله فيه، بل أراد رفع الماء، وإن أراد غسله، إن كان ما غسل إصبعا أو أكثر دون الكف لم ينجس.

আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৮০; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/২০৫; ফাতহুল কাদীর ১/৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২২; আলবাহরুর রায়েক ১/৯১

শেয়ার লিংক

যুবায়ের - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৬৭৩৩. প্রশ্ন

একদিন ইস্তেঞ্জা করার সময় আমার লুঙ্গিতে পেশাবের ছিটা লাগে। পরের দিন সে লুঙ্গি পরে গোসল করি এবং বালতিতে পানি নিয়ে একবার লুঙ্গিটা ধুই। শুকানোর পরে ওই লুঙ্গি পরে নামায আদায় করি।

হুজুরের কাছে প্রশ্ন, একবার ধোয়ার দ্বারা কি লুঙ্গিটি পবিত্র হয়েছে? যদি পবিত্র না হয়, তাহলে যে নামাযগুলো আদায় করেছি, সেগুলোর হুকুম কী?

উত্তর

ঐ লুঙ্গি পরে আদায়কৃত নামায সহীহ হয়েছে। তা পুনরায় পড়তে হবে না। কেননা ইস্তেঞ্জার সময় কাপড়ে পেশাবের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা লেগে গেলে তা না ধুয়েও নামায পড়া সহীহ আছে। উপরন্তু আপনি তো ঐ লুঙ্গি পরে পানি দিয়ে গোসল করেছেন এবং গোসলের পর তা আলাদাভাবে ধুয়েও নিয়েছেন। এসব কিছু দ্বারা লুঙ্গি থেকে পেশাবের ঐ ছিটাফোঁটাও দূর হয়ে গেছে। তাই ঐ লুঙ্গি পরে নামায আদায় করার কারণে কোনো অসুবিধা হয়নি। এ নিয়ে সংশয় পোষণ অহেতুক।

* >مختارات النوازل< ১/১৬৭ : بول انتضح، فأصاب الثوب مثل رؤوس الإبر، فذاك ليس بشيء؛ لأنه لا يمكن الاحتراز عنه.

আলহাবিল কুদসী ১/১০৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২০৪; আলবাহরুর রায়েক ১/২৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৪৭-১৪৯

শেয়ার লিংক

মাহফুজ আলম - ডেমরা, ঢাকা

৬৭৩৪. প্রশ্ন

মসজিদে কোনো কোনো মুসল্লীকে দেখা যায়, তারা জামাতে নামায পড়ার সময় সামনের কাতার পূর্ণ না করেই পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের এই কাজ কি সঠিক? এতে কি কোনো অসুবিধা আছে?

উত্তর

সামনের কাতার পূর্ণ না করে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো নাজায়েয। হাদীস শরীফে সামনের কাতার ফাঁকা না রেখে কাতারগুলো একেক করে পূর্ণ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং এ নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের ওপর হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হয়েছে।

এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন

خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ... فَقَالَ: أَلَا تَصُفُّوْنَ كَمَا تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ فَقُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ: يُتِمُّوْنَ الصُّفُوْفَ الْأُوَلَ، وَيَتَرَاصُّوْنَ فِيْ الصَّفِّ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা কি সেইভাবে কাতারবদ্ধ হবে না, যেভাবে ফেরেশতাগণ তাদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ফেরেশতাগণ কীভাবে তাদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? তখন তিনি বললেন, তারা সামনের কাতারগুলো আগে পূর্ণ করেন এবং কাতারে মিলে মিলে দাঁড়ান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩০)

আরেক হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى فِيْ أَصْحَابِهِ تَأَخُّرًا فَقَالَ لَهُمْ: تَقَدَّمُوا فَأْتَمُّوا بِيْ، وَلْيَأْتَمَّ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ، لَا يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُوْنَ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ اللهُ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণের মধ্যে কাউকে কাতারের পেছনে দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা সামনে এগিয়ে আসো এবং আমার অনুসরণ করো। তোমাদের পেছনের (কাতারের) লোকেরা যেন তোমাদের অনুসরণ করে। এক শ্রেণির লোক থাকবে, যারা সবসময় নামাযে পেছনে থাকবে। আল্লাহ্ও তাদেরকে (তাঁর রহমত ইত্যাদি থেকে) পেছনে রাখবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৮)

আরেক হাদীসে এসেছে, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

أتِمُّوْا الصَّفَّ المُقَدَّمَ، ثُمَّ الَّذِيْ يَلِيْهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِيْ الصَّفِّ المُؤَخَّرِ.

অর্থাৎ তোমরা সামনের কাতার পূর্ণ কর। তারপর এর পরের কাতার। কাতারে অপূর্ণতা থাকলে তা শেষের কাতারে থাকবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৭১)

তাই সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো যাবে না। সামনের কাতার পূর্ণ হলেই কেবল পেছনের কাতারে দাঁড়াবে।

তাছাড়া বিশেষভাবে প্রথম কাতারে নামায পড়ার সওয়াবও অনেক বেশি। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِيْ النِّدَاءِ  وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ، لَاسْتَهَمُوْا.

অর্থাৎ আযান দেওয়া ও প্রথম কাতারে নামায পড়ায় কী (ফযীলত) রয়েছে তা যদি মানুষ জানত এবং তা হাসিল করার জন্য লটারি ছাড়া কোনো গত্যন্তর না থাকত, তাহলে তারা লটারির মাধ্যমে হলেও তা হাসিল করত। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৫)

অতএব প্রথম কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পেছনে দাঁড়ানো নাজায়েয হওয়ার পাশাপাশি সওয়াব অর্জনের প্রতি বড় উদাসীনতার আলামতও বটে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৯; বাস্তুল কাফ্ ফী ইতমামিছ্ ছফ্ (আলহাবী লিল ফাতাবী), সুয়ূতী ১/৬৮; রদ্দুুল মুহতার ১/৫৭০

শেয়ার লিংক

মাহমুদুল্লাহ - সিরাজগঞ্জ

৬৭৩৫. প্রশ্ন

আইয়ামে তাশরীকের এক দিন আসরের নামাযে আমার এক রাকাত ছুটে যায়। ছুটে যাওয়া রাকাত আদায়ের পর আমি তাকবীরে তাশরীক পড়ার কথা ভুলে যাই। মসজিদ থেকে বের হওয়ার একটু পরে মনে পড়ে। আমি তখনই তাকবীর পড়ি। কিন্তু আমার চাচাতো ভাই বলল, এখন আর তাকবীর পড়ে কী হবে? তাকবীরে তাশরীক তো মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগেই পড়া নিয়ম। মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে তাকবীরে তাশরীক আদায়ের আর সুযোগ থাকে না।

জানতে চাই, তার উক্ত কথা কি ঠিক? মসজিদ থেকে বের হলে কি আর তাকবীরে তাশরীক আদায় করার সুযোগ থাকে না?

এটাও জানতে চাই যে, নামাযের পর কতক্ষণ পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক আদায়ের সুযোগ বাকি থাকে?

উত্তর

মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলে তাকবীরে তাশরীক আদায় করার সুযোগ থাকে না। তাই মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তাকবীর বলার দ্বারা আপনার তাকবীরে তাশরীক আদায় হয়নি। সামনে সতর্ক থাকতে হবে। যেন এ ভুল আর না হয়।

তাকবীরে তাশরীক আদায়ের সময়, ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পরপরই। অবশ্য ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পর তাকবীর বলতে ভুলে গেলে, সেক্ষেত্রে নামায ভেঙে যায় এমন কোনো কাজ করা, মসজিদ থেকে বের হওয়া কিংবা অন্য নামায শুরু করার আগ পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক আদায় করার সুযোগ থাকে। তাই এমন ক্ষেত্রে মনে হওয়ার পর সাথে সাথে তাকবীর বলে নেবে। কিন্তু নামাযের পর উল্লিখিত কোনো কাজ করে ফেললে তাকবীরে তাশরীক আদায়ের সুযোগ থাকে না। সেক্ষেত্রে ওয়াজিব ছুটে যাওয়ার কারণে ইস্তেগফার করে নেবে।

তবে উল্লেখ্য যে, মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর তাকবীর বলার দ্বারা নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক বলার ওয়াজিব আদায় না হলেও তাকবীরে তাশরীক বলা আইয়ামে তাশরীকের ব্যাপক একটি আমল। সে হিসেবে তা যে কোনো সময়ই পড়া যাবে এবং এর দ্বারা সওয়াব লাভ হবে।

* >حاشية الشلبي على تبيين الحقائق< ১/৫৪৫ : وقال في شرح الطحاوي: اعلم أن التكبير يؤدى بناء على الصلاة، لا في حرمة الصلاة، فمن حيث يؤدى بناء على الصلاة، فكل ما يقطع البناء يقطع التكبير، وكل ما لا يقطع البناء لا يسقط التكبير، فإذا تكلم بعد السلام أو ضحك فقهقه أو أحدث عمدا، أو شرع في صلاة أخرى أو أعرض عن القبلة وهو ذاكر للتكبير، أو خرج عن المسجد وهو ساه عنه، أو أكل أو شرب أو اشتغل بعمل كثير، فهذه الأشياء تقطع البناء وتسقط التكبير.

কিতাবুল আছল ১/৩২৭; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪১৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ১৮; রদ্দুল মুহতার ২/১৭৯

শেয়ার লিংক

রাশেদ আজীজ - মাতুয়াইল, ঢাকা

৬৭৩৬. প্রশ্ন

আমি একটা মাকতাবায় প্রুফ রিডিংয়ের কাজ করি। অনেক সময় বাংলা বইয়ের কাজ করতে গেলে সিজদার আয়াত সামনে আসে। সেক্ষেত্রে আমি আয়াতটি না পড়ে কেবল এর অনুবাদ পড়ে নিই।

জানার বিষয় হল, এতে কি আমার ওপর সিজদা ওয়াজিব হবে?

উত্তর

প্রুফ রিডিংয়ে মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে সিজদার আয়াত পড়া হলে (আর এক্ষেত্রে সাধারণত এমনটিই হয়ে থাকে) সিজদা ওয়াজিব হবে না। কেননা সিজদা ওয়াজিব হওয়ার জন্য সিজদার আয়াত মুখে উচ্চারণ করে পড়া জরুরি। নতুবা সিজদা ওয়াজিব হয় না।

এছাড়া সিজদার আয়াতের অনুবাদ মুখে উচ্চারণ করে পড়লেও সিজদা ওয়াজিব হবে না। অবশ্য কোনো কোনো ফকীহ তরজমা উচ্চারণের ক্ষেত্রেও সিজদা ওয়াজিব হওয়ার কথা বলেছেন। তাই সতর্কতামূলক এক্ষেত্রে সিজদা আদায় করে নেবে।

* >غنية المتملي< ص: ৫০০ : وكذا لا تجب بالكتابة أو النظر من غير تلفظ؛ لأنه لم يقرأ ولم يسمع.

* >حلبة المجلي< ২/৫৮৮ : ثم قد ظهر من هذه الجملة رجحان ما ذهب إليه شيخ الإسلام خواهر زاده والمحبوبي ومن عساه وافقهما من أنه لا تجب بتلاوتها ولا بسماعها بالفارسية سجود؛ لانعدام اللفظ العربي القرآني، الذي هذا من خواصه، والله سبحانه أعلم.

আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫; আকামুন নাফাইস, লাখনবী, পৃ. ৪১

শেয়ার লিংক

মুশফিকা আমেনা - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৬৭৩৭. প্রশ্ন

গত রমযানের বারো তারিখে আমার আম্মু হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার কারণে বাকি আঠারোটি রোযা তখন রাখতে পারেননি। চিকিৎসা চালু ছিল। কিছুদিন সুস্থ থাকেন, আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এভাবেই চলছিল। কুরবানীর পর থেকে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে লাগল। সফর মাসের শুরুর দিকে প্রায় পুরোপুরিই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। চলাফেরাসহ সবকিছুই তখন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। তখন আম্মু মাঝে বিরতি দিয়ে দিয়ে বারোটি রোযা কাযা করে নেন। কিন্তু রবিউল আউয়াল মাসের শেষ দিকে অসুস্থতা আবার বেড়ে যায় এবং এর কিছুদিন পরই তিনি ইন্তেকাল করেন।

হুজুরের নিকট জানতে চাই, আম্মু যে ছয়টি রোযা রাখতে পারেননি, আমি কি তার পক্ষ থেকে সেগুলো রাখতে পারব? এতে কি তার পক্ষ থেকে সেগুলো আদায় হবে?

উত্তর

না, আপনার মায়ের অনাদায়ি এ রোযাগুলো আপনার বা তার পক্ষ থেকে অন্য কারো কাযা করার সুযোগ নেই। এর দ্বারা সেগুলো তার পক্ষ থেকে আদায় হবে না। কেননা একজনের নামায-রোযা তার পক্ষ থেকে অন্যজনের আদায় করা যায় না।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

لَا يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، وَلَا يَصُوْمَنَّ أَحَدٌ عَنْ أَحَدٍ، وَلَكِنْ إِنْ كُنْتَ فَاعِلًا تَصَدَّقْتَ عَنْهُ أَوْ أَهْدَيْتَ.

অর্থাৎ কেউ যেন কারো পক্ষ থেকে নামায আদায় না করে। তেমনিভাবে কেউ যেন কারো পক্ষ থেকে রোযাও না রাখে। তবে যদি তুমি কিছু করতেই চাও, তাহলে তার পক্ষ থেকে সদকা করতে পার বা হাদিয়া দিতে পার। (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১৬৩৪৬)

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মা ইন্তেকালের পূর্বে যেহেতু অবশিষ্ট ছয়টি রোযাও কাযা করার জন্য ছয় দিন বা এর বেশি সময় সুস্থ ছিলেন, যেমনটি প্রশ্নের বিবরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে, তাই তিনি মৃত্যুর আগে ঐ রোযাগুলো কাযা না করার কারণে এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল, এ রোযাগুলোর ফিদইয়া আদায় করা।

অতএব আপনার মা যদি ঐ রোযাগুলোর জন্য ফিদইয়া আদায় করার অসিয়ত করে গিয়ে থাকেন, তবে তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে এর ফিদইয়া আদায় করা আপনাদের ওপর জরুরি। আর অসিয়ত না করে গিয়ে থাকলে আপনাদের ওপর ফিদইয়া আদায় জরুরি না হলেও সন্তান হিসেবে মায়ের আখেরাতের প্রতি লক্ষ করে আপনাদের কর্তব্য হল, নিজ থেকে ঐ রোযাগুলোর ফিদইয়া আদায় করে দেওয়া।

ফিদইয়া হচ্ছে, প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়ানো অথবা এর মূল্য দেওয়া।

* كتاب >الأصل< للشيباني ২/১৬৫ : قلت: فإن صام عنه ابنه أيجزيه ذلك؟ قال: لا. قلت: لم؟ قال: للأثر الذي جاء عن عبد الله بن عمر وعن إبراهيم النخعي أنهما قالا: لا يصلي أحد عن أحد، ولا يصوم أحد عن أحد.

কিতাবুল আছার, ইমাম আবু ইউসুফ, বর্ণনা ৭৯৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৬৩; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪৬২; আলগায়া, সারুজী ৭/৪৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪২৪-৪২৫

শেয়ার লিংক

মুহা. সালমান - চান্দিনা, কুমিল্লা

৬৭৩৮. প্রশ্ন

আমি হজ্বের জন্য অফিস থেকে তেরো দিন ছুটি পেয়েছি। যিলহজ্বের এক তারিখ থেকে তেরো তারিখ পর্যন্ত। সে হিসাবে আমাকে তেরো তারিখই দেশে ফিরে আসতে হবে। যে কারণে আইয়ামে নহরের পর তাওয়াফে বিদার সুযোগ পাব না।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমি তাওয়াফে বিদা কখন করব? আইয়ামে নহরের ভেতরই কি তাওয়াফে বিদা করতে পারব? এতে কি কোনো জরিমানা আসবে?

উত্তর

হাঁ, আপনি আইয়ামে নহরের ভেতরই তাওয়াফে বিদা করে নিতে পারবেন। এ কারণে কোনো জরিমানা আবশ্যক হবে না। কেননা দশ তারিখ তাওয়াফে যিয়ারতের পর থেকেই তাওয়াফে বিদার সময় শুরু হয়ে যায়। অতএব তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করার পর আইয়ামে নহরের ভেতরও আপনি তাওয়াফে বিদা করে নিতে পারবেন।

অবশ্য তাওয়াফে বিদা আদায়ের উত্তম ও মূল সময় হল, শেষ সময়ে মক্কা থেকে বিদায়ের আগ মুহূর্ত। তাই বিশেষ কোনো ওযর না থাকলে তাওয়াফে বিদা বেশি আগে না করে মক্কা থেকে বিদায় হওয়ার আগ মুহূর্তেই আদায় করবে।

* >بدائع الصنائع< ২/৩৩৪ : وأما وقته فقد روي عن أبي حنيفة أنه قال : ينبغي للإنسان إذا أراد السفر أن يطوف طواف الصدر حين يريد أن ينفر، وهذا بيان الوقت المستحب، لا بيان أصل الوقت، ويجوز في أيام النحر وبعدها، ويكون أداء لا قضاء، حتى لو طاف طواف الصدر ثم أطال الإقامة بمكة.

আলবাহরুল আমীক ৪/১৯১৯; ফাতহুল কাদীর ২/৩৯৭; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ২৫২; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৯০; রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩

শেয়ার লিংক

ইমতিয়াজ আহমদ - মিরপুর, ঢাকা

৬৭৩৯. প্রশ্ন

আমার বাবা অনেক সম্পত্তির মালিক ছিলেন। কিন্তু জীবদ্দশায় তিনি হজ্ব করে যেতে পারেননি। ইন্তেকালের আগে তিনি বদলী হজ্ব করানোর জন্য অসিয়ত করে গেছেন। এ বছর আমার বড় ভাই তার কোম্পানির খরচে হজ্বে যাচ্ছেন। তিনি আগেও একবার হজ্বে গিয়েছেন। তাই তিনি চাচ্ছেন, এবারের হজ্বে তিনি বাবার বদলী হজ্বের নিয়ত করবেন।

জানার বিষয় হল, ভাই যদি তার হজ্বে বাবার বদলী হজ্ব আদায়ের নিয়ত করেন, তাতে কি বাবার বদলী হজ্ব আদায় হবে?

উত্তর

না, ওই ব্যক্তি কোম্পানির খরচে বদলী হজ্ব করলে এর দ্বারা আপনার বাবার বদলী হজ্ব আদায় হবে না। কেননা বদলী হজ্বের অসিয়তকারীর যদি সম্পদ থাকে, তাহলে অন্যের সম্পদ দ্বারা বদলী হজ্ব করলে তার পক্ষ থেকে তা আদায় হবে না; বরং এক্ষেত্রে বদলী হজ্ব আদায় হওয়ার জন্য তার সম্পদ দ্বারাই করা জরুরি।

সুতরাং আপনার বাবার বদলী হজ্বটি তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকেই কারো মাধ্যমে করাতে হবে।

* >المسالك في المناسك< ২/৮৮৮ : ولو مات وأوصى، فتطوع عنه رجل، لم يجز إذا كان له مال، وكذا لو تطوع وارث لم يجز؛ لأن الفرض هنا يتعلق بماله.

বাদায়েউস সানায়ে ২/৪৫৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩১১; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৩; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৪৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৫৭

শেয়ার লিংক

শাতিলা - উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ

৬৭৪০. প্রশ্ন

আমার স্বামীর সঙ্গে এবার হজ্বে এসেছি। আল্লাহর রহমতে হজ্বের যাবতীয় কার্যক্রম ভালোমতে-ই আদায় করেছি। হজ্বের পর নফল তাওয়াফ করারও সুযোগ হয়েছে। ইচ্ছা ছিল দেশে ফেরার আগে তাওয়াফে বিদা করেই দেশে ফিরব। কিন্তু তখন ঋতুস্রাব থাকায় তাওয়াফে বিদা না করেই দেশে চলে আসতে হয়।

হুজুরের নিকট প্রশ্ন হল, তাওয়াফে বিদা না করেই যে দেশে চলে এসেছি, এর কারণে কি আমাকে কোনো জরিমানা দিতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। কেননা প্রথমত ঋতুস্রাবের কারণে নারীদের থেকে তাওয়াফে বিদা মাফ হয়ে যায়। তাই এ কারণে তাওয়াফে বিদা না করতে পারলে তাদের ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয় না।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

أُمِرَ النَّاسُ أَنْ يَكُوْنَ آخِرُ عَهْدِهِمْ بِالْبَيْتِ، إِلَّا أَنَّهُ خُفِّفَ عَنِ الْمَرْأَةِ الْحَائِضِ.

লোকদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, তাদের সর্বশেষ কাজ যেন হয় বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ। তবে এক্ষেত্রে ঋতুমতী মহিলাকে অবকাশ দেওয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম, বর্ণনা ১৩২৮)

দ্বিতীয়ত, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তো আপনি তাওয়াফে যিয়ারতের পর একটি নফল তাওয়াফ করেছেন। তাই এক্ষেত্রে আপনার এ নফল তাওয়াফটিই তাওয়াফে বিদা হিসেবে গণ্য হয়েছে। কেননা কেউ যদি তাওয়াফে যিয়ারতের পর কোনো নফল তাওয়াফ করে, এরপর দেশে ফেরার আগে তাওয়াফে বিদার নিয়তে কোনো তাওয়াফ নাও করে, তবে সেক্ষেত্রে ঐ নফল তাওয়াফই তার তাওয়াফে বিদা হিসেবে আদায় হয়ে যায় এবং তার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয় না।

* >المبسوط< للسرخسي ৪/৪১ : وليس عليها لترك طواف الصدر شيء؛ لأن للحائض رخصة في ترك طواف الصدر.

বাদায়েউস সানায়ে ২/৩৩৩; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৫৩আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/৪৩২, ৪৩৬; রদ্দুল মুহতার ২/৫২৩

শেয়ার লিংক

মুয়ায মোর্শেদ - দিনাজপুর

৬৭৪১. প্রশ্ন

সায়ী করার সময় আমার অনেক ক্লান্তি লাগছিল। তাই দুই সবুজ বাতির মধ্যবর্তী যে অংশে হালকা দৌড়াতে হয়, আমি সেখানে দৌড়াইনি; বরং পুরো সায়ী আস্তে-ধীরে হেঁটে হেঁটে করেছি।

জানার বিষয় হল, দুই সবুজ বাতির মধ্যবর্তী অংশে না দৌড়ানোর কারণে কি কোনো সমস্যা হয়েছে? এর কারণে কি কোনো জরিমানা আসবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত কারণে আপনার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। তবে সায়ীর সময় দুই সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানটি হালকা গতিতে দৌড়ে অতিক্রম করা সুন্নত।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا طَافَ بِالْبَيْتِ الطَّوَافَ الأَوَّلَ، يَخُبُّ ثَلاَثَةَ أَطْوَافٍ، وَيَمْشِي أَرْبَعَةً، وَأَنَّهُ كَانَ يَسْعَى بَطْنَ المَسِيلِ، إِذَا طَافَ بَيْنَ الصَّفَا وَالمَرْوَةِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহ পৌঁছে প্রথম তাওয়াফ করার সময় প্রথম তিন চক্করে রমল করতেন এবং পরবর্তী চার চক্করে স্বাভাবিক গতিতে হেঁটে চলতেন। আর তিনি সাফা ও মারওয়ায় সায়ী করার সময় উভয় টিলার মধ্যবর্তী নিচু স্থানটুকু হালকা গতিতে দৌড়ে অতিক্রম করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬১৭)

সুতরাং শরীয়তসম্মত ওযর ছাড়া ঐ অংশ না দৌড়ে যদি কেউ স্বাভাবিকভাবে হেঁটে অতিক্রম করে, তাহলে সায়ী আদায় হয়ে গেলেও তা মাকরূহ হবে।

 * >المبسوط< للسرخسي ৪/৫০ : وإذا سعى بين الصفا والمروة، ورمل في سعيه كله من الصفا إلى المروة، ومن المروة إلى الصفا فقد أساء، ولا شيء عليه. وكذلك إن مشى في جميع ذلك.

বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২০; আলবাহরুর আমীক ৩/১২৯৩; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ১৭৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫০১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ রাশেদ শাহরিয়ার - টঙ্গী, গাজীপুর

৬৭৪২. প্রশ্ন

হুজুরের কাছে একটি মাসআলার সঠিক সমাধান জানতে চাই। কুরবানীর জন্য আমরা একটি গরু কিনতে চাচ্ছি। যার মূল্য ঠিক করা হবে এভাবে যে, জবাইয়ের পর এর গোশত ওজন করা হবে এবং প্রতি কেজি সাড়ে ছয় শ টাকা দরে যা দাম আসবে, তাই হবে পশুটির মূল্য।

জানতে চাই, এ পদ্ধতিতে পশু ক্রয় করা বৈধ হবে কি না? আমরা তো কিতাবে পড়েছি, যদি এক স্তূপ ধান (যার নির্দিষ্ট পরিমাণ জানা নেই) প্রতি মণ এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হয় এবং ঐ মজলিসেই ধান ওজন করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তাহলে এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হয়ে যায়। অনুরূপ পশু ক্রয়-বিক্রয়ের মজলিসেই যদি পশুটি জবাই করে তার গোশত ওজন করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তাহলে কি পশুটির ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হয়ে যাবে

উত্তর

না, এ পদ্ধতিতে পশু ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয নয়। কেননা ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হওয়ার জন্য চুক্তির সময়ই পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ সুনির্ধারিত হওয়া শর্ত। কিন্তু প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় পশুটির মূল্য সুনির্ধারিত হয় না। কারণ এক্ষেত্রে বিক্রি করা হচ্ছে জীবিত আস্ত গরু; জবাইকৃত গরুর গোশত নয়। এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির শেষ পর্যায় পর্যন্ত জীবিত পশুটির মূল্য অজানা থেকে যায়। তাই জীবিত পশু এ শর্তে কেনা যে, গোশত মেপে এর মূল্য দেওয়া হবে এমনটি জায়েয নয়। অবশ্য গোড়াতে কারবারটি নাজায়েয হলেও পশু জবাইয়ের পর যদি পূর্বের চুক্তি (কথা-বার্তা) বাদ দিয়ে গোশত মেপে মূল্য আদান-প্রদান করা হয়, তাহলে সেটি জায়েয হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, এক হল গোশত ক্রয়-বিক্রয়। আরেক হল জীবন্ত গোটা পশুর ক্রয়-বিক্রয়। কেউ যদি বলে, এই পশুতে জবাইয়ের পর যত কেজি গোশত হবে তা আমি প্রতি কেজি এত টাকা (যেমন সাত শ টাকা) দরে কিনে নিলাম। এক্ষেত্রে যেহেতু জবাইকৃত পশুর গোশতই পণ্য হিসেবে ধর্তব্য, তাই এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হবে মূলত পশুটি জবাইয়ের পর, যখন গোশত পরিমাপ করে সে অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে ক্রেতা এর গোশত নিয়ে যাবে। এক স্তূপ ধান বিক্রির প্রশ্নোক্ত মাসআলাটি গরুর গোশত বিক্রির এই পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জীবন্ত গোটা পশু ক্রয়-বিক্রয়ের প্রশ্নোক্ত পদ্ধতি এর থেকে ভিন্ন। যা উল্লিখিত কারণগুলোর কারণে সম্পূর্ণ নাজায়েয চুক্তির অন্তর্ভুক্ত।

* >المبسوط< للسرخسي ১৩/৬ : وإذا كانت العبرة للإشارة فثمن جميع ما أشار إليه مجهول عند العقد، وجهالة مقدار الثمن تمنع صحة العقد، وما هو شرط العقد إذا انعدم عند العقد يفسد العقد، ولا يمكن اعتبار إيجابه في الثاني.

বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৫৮

শেয়ার লিংক

জয়নাল কাজী - চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম

৬৭৪৩. প্রশ্ন

আমার এক প্রতিবেশী বন্ধু বিদেশে যাওয়ার আগে তার একটি জায়গায় আমাকে আম-বাগান করার অনুমতি দিয়ে যায়। আমি কতদিন এ জায়গা ভোগ করব তার কোনো নির্দিষ্ট সময় সে আমাকে বলেনি। সেখানে আমি আমের বাগান করেছি প্রায় ছয় বছর হয়ে গেছে। কিছুদিন আগে সে বিদেশ থেকে এসেছে। এখন সেখানে সে বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সে আমাকে বাগান খালি করে দিতে বলেছে। আমি বললাম, আর ছয় মাস পর আমের মৌসুম আসছে, এবারের আমগুলো নেওয়া পর্যন্ত আমাকে সুযোগ দাও। কিন্তু সে এতে সম্মত হচ্ছে না।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এখনই কি উক্ত জায়গা ছেড়ে দেওয়া আমার ওপর জরুরি? ছেড়ে দিতে হলে গাছগুলো কী করা হবে? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জমির মালিক যেহেতু কোনো মেয়াদকাল নির্দিষ্ট করা ছাড়া জমিটি আপনাকে ভোগ করতে দিয়েছে, তাই এক্ষেত্রে জায়গাটি সে ফেরত চাওয়ার পর তা খালি করে সেটি তাকে ফেরত দেওয়া আপনার ওপর জরুরি। এক্ষেত্রে আপনি সামনের মওসুম পর্যন্ত আম-বাগান রেখে দেওয়ার অধিকার রাখেন না। এবং তার ওপরও জরুরি নয়, আপনাকে ঐ সময় পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া; বরং সে যেহেতু তার জায়গাটি ফেরত চাচ্ছে, তাই আপনার ওপর জরুরি হল, গাছগুলো কেটে জায়গাটি খালি করে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া।

তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে জমি মালিকের এক্ষুনি জায়গাটি ফেরত না নিলে যদি বিশেষ কোনো অসুবিধা না হয়, তাহলে তার আবদারের প্রেক্ষিতে তাকে সময় দেওয়া যে বড় সওয়াবের কাজ হবে, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

* كتاب >الأصل< للشيباني ৮/৪৫৩ : قلت: أرأيت رجلا استعار من رجل دارا أو أرضا، على أن يبني فيها أو على أن يغرس فيها نخلا، فأذن له في البناء والغرس، ثم بدا لصاحبها أن يخرجه، هل له أن يضمن له شيئا من غرسه وبنائه، وقد غرس الرجل أو بنى؟ قال: لا يضمن. قلت: لم؟ قال: لأنه لم يوقت له وقتا. قلت: فهل يأخذ صاحب الغرس والبناء غرسه وينقض بناءه؟ قال: نعم.

আলমাবসূত, সারাখসী ১১/১৪১; ফাতহুল কাদীর ৭/৪৭৪; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৬/৯২; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮২; রদ্দুল মুহতার ৫/৬৮১

শেয়ার লিংক

খালেদ - চট্টগ্রাম

৬৭৪৪. প্রশ্ন

আমরা কয়েকজন শরীক হয়ে কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গরু ক্রয় করেছি। এটির কুরবানী সংক্রান্ত একটি প্রশ্ন হল, সমাজে অনেক সময় দেখা যায়, কুরবানীর পশু জবাইয়ের আগে জবাইকারীর হাতে সকল শরীকের নামের তালিকা দেওয়া হয়। সে তা পড়ে সবার নিয়ত করে তারপর জবাই করে।

প্রশ্ন হল, এভাবে সবার নাম পড়ে কিংবা সবার নিয়ত করে জবাই করা কি জরুরি, নাকি সে এমনিতেই জবাই করে দিলেও সবার কুরবানী আদায় হয়ে যাবে? বিষয়টি সম্পর্কে জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

না, জবাইকারীর জন্য পশু জবাইয়ের আগে কুরবানীদাতা শরীকদের নামের তালিকা পড়া জরুরি কিছু নয়; বরং মালিক বা শরীকদের সম্মতিতে ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার’ বলে জবাই করাই কুরবানী আদায়ের জন্য যথেষ্ট। মূল বিষয় হচ্ছে, যাদের কুরবানী হচ্ছে তাদের নিয়ত। কুরবানীদাতাদের নিয়ত থাকার পর জবাইয়ের সময় নাম ঘোষণা না করলেও বা জবাইকারী তাদের নিয়ত না করলেও তাদের পক্ষ থেকে যথাযথভাবেই কুরবানী আদায় হবে।

উল্লেখ্য, হাদীস শরীফে কুরবানীর পশু জবাই করার সময়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি দুআ বর্ণিত হয়েছে। যেগুলোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীদাতা হিসেবে নিজের নাম উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে একটি হল

بِاسْمِ اللهِ، اللهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ مُحَمَّدٍ، وَآلِ مُحَمَّدٍ، وَمِنْ أُمَّةِ مُحَمَّدٍ.

আল্লাহর নামে জবাই করছি। হে আল্লাহ! আপনি তা কবুল করুন মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে এবং তার উম্মতের পক্ষ থেকে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৬৭)

এ রকম আরও দুআ রয়েছে। কেউ নিজেদের কুরবানীর পশু জবাই করার সময় যদি এই দুআগুলো পড়ে, তাহলে اللهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ-এর পরে নিজের বা নিজেদের নাম বলবে।

* كتاب >الأصل< ৫/৪০৬ : قلت: أرأيت إذا ضحوا بالبقرة أو بالبعير عن سبعة، هل يكتفون من ذلك بالنيات إذا ذبحوها ولا يسمون أسماءهم؟ قال: نعم.

শরহু মুখতাসারিল কারখী, ইমাম কুদূরী ৬/৩৮২; খিযানাতুল আকমাল ৩/৫১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০০আততাহকীকুল বাহির ১/২৬২

শেয়ার লিংক

জয়নুল আবেদিন - চট্টগ্রাম

৬৭৪৬. প্রশ্ন

আমি কুরবানীর উদ্দেশ্যে গ্রামের এক ব্যক্তি থেকে একটি গরু ও একটি ছাগল কিনি। কিন্তু কুরবানীর আগের দিন ছাগলটি মারা যায়। তাই আমি শুধু গরু দ্বারাই কুরবানী করি। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই, আমি তো ছাগলটি কুরবানীর উদ্দেশ্যেই কিনেছিলাম। কিন্তু মারা যাওয়ার কারণে তা দ্বারা কুরবানী করতে পারিনি। এতে কি কোনো অসুবিধা হয়েছে? আমার কি মারা যাওয়া ছাগলটির পরিবর্তে আরেকটি ছাগল কুরবানী করা জরুরি?

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মরে যাওয়া ছাগলটির পরিবর্তে আপনাকে আরেকটি কুরবানী করতে হবে না। কেননা একজনের ওপর কুরবানী কেবল একটিই ওয়াজিব। কেউ একাধিক পশু কুরবানী করলে একটি দ্বারা ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়, বাকিগুলো নফল গণ্য হয়। অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ক্রয়কৃত ছাগলটি মারা গেলেও গরুটির কুরবানী দ্বারাই আপনার ওয়াজিব কুরবানী আদায় হয়ে গেছে। ছাগলের পরিবর্তে আরেকটি ছাগল কুরবানী করা জরুরি নয়।

* >المحيط البرهاني< ৮/৪৮১ : اشترى شاتين للأضحية، فضاعت إحداهما، فضحى بالثانية، ثم وجدها في أيام النحر، أو بعد أيام النحر، فلا شيء عليه، سواء كانت هي أرفع من التي ضحى بها، أو أدون منها.

আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৩

শেয়ার লিংক

মেরাজুল ইসলাম - সিরাজগঞ্জ

৬৭৪৭. প্রশ্ন

আমার বড় চাচা গরু পালেন। তার একটি গাভী আছে। জন্ম থেকেই যার দুধের বোঁটা একটি নেই, বাকি তিনটি আছে। তিন বোঁটা থেকেই দুধ আসে। দুধ দোহন করতে কোনো সমস্যা হয় না। এ বছর তিনি ঐ গাভী দ্বারা কুরবানী দিতে চাচ্ছেন। জানার বিষয় হল, এ গাভী দিয়ে কুরবানী করা যাবে?

উত্তর

হাঁ, উক্ত গাভীটির ওলানের বোঁটা যেহেতু তিনটি ভালো আছে, তাই তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে। কেননা কুরবানী সহীহ হওয়ার জন্য চার বোঁটা বিশিষ্ট পশুর অন্তত তিনটি বোঁটা ভালো থাকা শর্ত। তবে ছাগল-ভেড়া যেগুলোর জন্মগতভাবেই ওলানের বোঁটা দুটি হয়ে থাকে সেগুলোর যদি এক বোঁটা না থাকে, তাহলে তা দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে না।

* >خلاصة الفتاوى< ৪/৩২১ :  وفي الشاة والمعز إذا لم تكن لهما إحدى حلمتيها خلقة أو ذهبت بآفة وبقيت واحدة لم تجز، وفي الإبل والبقر إن ذهبت واحدة تجوز، وإن ذهبت اثنتان لا تجوز.

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৩০; গুনইয়াতু যাবিল আহকাম ১/২৭০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪

শেয়ার লিংক