জুমাদাল আখিরাহ ১৪২৮ || জুলাই ২০০৭

মাওলানা সফিউল্লাহ ফুয়াদ - দারুল উলূম মাদানী নগর মাদরাসা, ঢাকা

প্রশ্ন

আল্লামা সাইয়েদ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী রাহ.-এর ফিকহুস সুনানি ওয়াল আছার কিতাবটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই। কিতাবটির বৈশিষ্ট্য কী? গ্রন্থকার তা কী উদ্দেশ্য রচনা করেছেন? হানাফী আলিম ও তালিবে ইলম সমাজের জন্য কিতাবটির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? কিতাবটি কেমন গুরুত্বের সঙ্গে পড়া উচিত? তাছাড়া কিতাবটিকে যদি কওমী মাদরাসার নিসাবভুক্ত করা হয় তাহলে কেমন হয়? যদি সঙ্গত হয় তাহলে তা কোন জামাতের জন্য প্রযোজ্য? শুনেছি, কিতাবটি নাকি ইলমে হাদীসের আলোকে হানাফী মাযহাবের যথার্থতা প্রকাশের ক্ষেত্রে ইমাম ত্বহাবী রাহ.-এর পরেই এর স্থান। কথাটা কতটুকু বাস্তব? আশা করি বিস্তারিতভাবে উত্তর প্রদান করে বাধিত করবেন। আল্লাহ তাআলা আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন।

উত্তর

আল্লামা সাইয়েদ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী রাহ. (১৩২৯ হি.-১৩৯৪ হি.) সংকলিত ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার মূলত আহাদীসে আহকাম বিষয়ক কিতাব। তবে তিনি এ বিষয়ক হাদীসসমূহের সঙ্গে উসূলুদ্দীন, আদাব, রিক্বাক ও যুহদ বিষয়ক কিছু হাদীসও এ কিতাবে শামিল করেছেন। কিতাবটির বৈশিষ্ট্য এই যে, কলেবরের দিক দিয়ে সংক্ষিপ্ত হলেও প্রত্যেক জরুরি অধ্যায়ের হাদীস এতে এসে গেছে। সংকলক মূল কিতাব থেকে হাদীসটি বের করে তারপর খণ্ড-পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি সংযুক্ত করেছেন। পরবর্তীকালে রচিত কোনো কিতাবের উদ্ধৃতির উপর নির্ভর করেননি। মূল কিতাব থেকে যাচাই না করে পরবর্তী কোনো লেখকের উদ্ধৃতির উপর নির্ভর করে খণ্ড-পৃষ্ঠা সংযুক্ত করার বিষয়টি সম্ভবত গোটা কিতাবের কোথাও নেই।

কিতাবটির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য এই যে, অধিকাংশ হাদীসেই কোনো না কোনো মুহাদ্দিসের উদ্ধৃতিতে কিংবা প্রয়োজনের স্থানগুলোতে নিজে তাহকীক করে সনদগত মান উল্লেখ করেছেন। এ ক্ষেত্রেও সংকলক সংশ্লিষ্ট কিতাবসমূহ সরাসরি পড়ে সেগুলোর খণ্ড ও পৃষ্ঠার উদ্ধৃতি সংযুক্ত করেছেন। এই ছোট কলেবরের কিতাবটি লেখার জন্য তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ২৩৩টি কিতাবের সহযোগিতা নিয়েছেন।

কিতাবটির তৃতীয় বৈশিষ্ট্য এই যে, যে হাদীসগুলো মুখতালাফুল হাদীস-এর অন্তর্ভুক্ত সেখানে نسخ ترجيح ـ جمع এর নীতি অনুযায়ী আহলে ফন-এর উদ্ধৃতিতে কিংবা নিজে তাহকীক করে কোনো একটি সিদ্ধান্ত সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও উল্লেখ করেছেন। শুনেছি, কিতাবটি নাকি কোনো এক সময় জামিয়াতুল আযহার-এর নিসাবভুক্ত ছিল।

যদি আমাদের এ অঞ্চলেও এ কিতাবটি নিসাবভুক্ত করা হত তাহলে খুব ভালো হত। কিতাবটি হিদায়া জামাতের জন্য খুবই উপযোগী, শরহে বিকায়া জামাতেও চলতে পারে। পরিভাষার প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা কিতাবটির ভূমিকা অংশে মীযানুল আখবার নামে বিদ্যমান রয়েছে। মূল কিতাবের দরস শুরু করার আগে এই ভূমিকা ছাত্রদেরকে পড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। মুসান্নিফের আত্মজীবনী দ্বিতীয় সংস্করণে কিতাবটির শেষে সংযুক্ত হয়েছে।

কিতাবটি দীর্ঘদিন যাবৎ পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বপ্রথম ১৩৫৯ হিজরীতে এটি প্রকাশিত হয়েছিল। আমার কাছে ১৭৭৩ হি. মুদ্রিত সংস্করণের ফটোকপি রয়েছে। কিতাবটি আধুনিক পদ্ধতিতে তাহকীক করে এবং মুসান্নিফ যে উদ্ধৃতিগুলো দিয়েছেন তা বহাল রেখে এর সঙ্গে বর্তমানে বহুল প্রচলিত সংস্করণগুলোর উদ্ধৃতি সংযুক্ত করে ভালো কাগজ, পরিষ্কার মুদ্রণ ও যথোপযোগী অঙ্গসজ্জার সঙ্গে প্রকাশিত হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে কিতাবটির কদরদানী করার তাওফীক দান করুন।

প্রশ্নের শেষ অংশটি প্রসঙ্গে কথা এই যে, শরহু মাআনিল আছার-এর সঙ্গে এই কিতাবের তুলনা মোটেই ঠিক নয়। কেননা একটি হল ইমামুল আইম্মার কিতাব আর অন্যটি একজন আলিমের; একটি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর কিতাব, অন্যটি চতুর্দশ শতাব্দীর; একটি হল সম্পূর্ণ মৌলিক ও মুজাদ্দিদানাহ আর অন্যটি অমৌলিক ও মুকাল্লিদানা।

قد جعل الله لكل شيء قدراً.

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন