সফর ১৪২৮ || মার্চ ২০০৭

মুহা. মাহফুজুর রহমান - জামাত: আলিয়া ২য় বর্ষ <br>  জামেয়া দরগাহ্ মাদরাসা, সিলেট

প্রশ্ন

মুহতারাম, আমি উর্দূ শরাহ মোটামুটি বুঝি। কিন্তু আরবী শরাহ বুঝতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। এদিকে আমার আরবীর প্রতি আগ্রহও রয়েছে অত্যন্ত বেশি। এখন জানতে চাই এঅবস্থায় আমার করণীয় কী? উর্দূ বর্জন করে আরবী বোঝার যোগ্যতা অর্জনে  ব্রতী হব, না উর্দূর  দ্বারা  বর্তমানে কাজ চালানোর পাশাপাশি আরবী বোঝার প্রতি মনোনিবেশ করব? আর এও জানতে চাই যে,অনেকে বলে বাংলা নোট, শরাহ বের হওয়ার কারণে দুনিয়া থেকে ইলম দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে -এ কথাটি কতটুকু সঠিক।

(খ) মুখতারাত ও লামিয়াতুল মুজিযাত কিতাবদ্বয় কীভাবে পড়লে ভালো হবে, জানিয়ে উপকৃত করবেন।

উত্তর

(ক) কিতাবী ইসতিদাদ অর্জন করার প্রচেষ্টা অবশ্যই জারি রাখতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তবে এই যোগ্যতা অর্জিত হওয়া পর্যন্ত কোনো উর্দূ শরহের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হলে তাতেও কোনো বাধা নেই; উর্দূ ভাষায লিখিত যেসব শরহে বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্য  রয়েছে কিংবা ইলমী ফাওয়াইদ রয়েছে তা তো সবাই পড়তে পারে।

বাংলা ভাষায় লিখিত নোট বা শরহের মাধ্যমে ইলমের ক্ষতি হচ্ছে এ কথাটির সঠিক ভাষা হল, ছাত্রদের অমনোযোগিতা, স্বাভাবিক যোগ্যতার অভাব এবং শিক্ষাব্যবস্থার জটিলতার কারণে তালিবে ইলমদের  যে পরিমাণ  যোগ্যতা সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন ছিল তা যখন হচ্ছে না তখন এর সমাধানের জন্য উর্দূ বা বাংলা ভাষায় শরহ লেখা আরম্ভ হল। অথচ এটি রোগের প্রতিষেধক নয়। ফল এই হল যে, রোগ প্রতিকার তো দূরের কথা রোগের অনুভূতিও বিলুপ্ত হতে লাগল। তো রোগীর যদি রোগের অনুভূতিই না থাকে তখন যে এটা ক্রমান্বয়ে কঠিনরূপ ধারণ করবে তা তো বলাই বাহুল্য।

উপরন্তু অধিকাংশ উর্দূ ও বাংলা শরহের অবস্থা হল, এগুলো এতটাই অবহেলা ও অমনোযোগিতার সঙ্গে প্রস্তুত করা হয়েছে যে, এগুলোতে তালিবে ইলমদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে না এবং প্রয়োজনীয় স্থানগুলোতে তাদের কাজে আসে না; বরং অনেক ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুকে আরও কঠিন করে তোলে।

আমরা উর্দূ বা বাংলা ভাষায় লিখিত শরহের বিরোধিতা এজন্য করি না যে, এগুলো উর্দূ বা বাংলা ভাষায় রচিত; বরং এজন্য করি যে, এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ শরহই মানোত্তীর্ণ নয়। বরং এগুলো উপকারিতাশূন্য ও নানা সমস্যায় পরিপূর্ণ। এবং এগুলোকে অনুচিত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

অন্যথায় মাতৃভাষায় সিলেবাসের কিছু কিতাব তৈরি হওয়া এবং কিছু সিলেবাসভুক্ত কিতাবের মানসম্পন্ন শরহ ভালো বাংলায় তৈরি হওয়া একটি বাস্তব প্রয়োজন। তদ্রূপ মাতৃভাষায় বা অন্য যেকোনো ভাষায় রচিত কোনো মানসম্পন্ন কিতাব থেকে উপকৃত হতেও কোনো বাধা নেই।

(খ) কিতাব পড়তে হয় কিতাবটি রচিত হওয়ার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। একটি কিতাব সফলভাবে পড়ার অর্থ হল, এ কিতাব থেকে ওই বিষয়গুলো অর্জন করতে সক্ষম হওয়া, যা লেখক পাঠককে দিতে চেয়েছেন। তবে কোনো কোনো কিতাব রচনার একাধিক উদ্দেশ্য থাকে কিংবা উদ্দেশ্য একটা তবে খুব উঁচু। এমন কিতাবের সফল পাঠের জন্য তা বারবার মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।

মুখতারাত কিতাবটির রচনার উদ্দেশ্য সংক্ষেপে বললে এই যে, এর মাধ্যমে আরবী সাহিত্যের তুলনামূলক অধ্যয়নে সক্ষম হওয়া এবং আরবী সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ ও রুচির সঙ্গে পরিচিত হওয়া।

আমাদের এ অঞ্চলে যে শ্রেণীতে এই কিতাব পড়ানো হয় কিংবা বলুন যে যোগ্যতা অর্জিত হওয়ার পর ছাত্ররা এ কিতাব পড়ে থাকে সে বিচারে এর পঠনপদ্ধতি কী হতে পারে এ সম্পর্কে আমি মাওলানা আবু তাহির মিছবাহ দামাত বারাকাতুহুম এর সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি যা বলেছেন তার খুলাসা হল

১. সুন্দর বাক্যগুলিকে বারবার পড়ে মুখস্থ করা। অন্তত মুখস্থের মতো হয়ে যাওয়া তো অবশ্যই দরকার, যাতে আরবীতে কথা বলার সময় কিংবা লেখার সময় তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়।

২. প্রয়োজনীয় শব্দ বিশ্লেষণ মুখস্থ করা। এ ক্ষেত্রে এটুকু করবে যে, শব্দটি মুজাররাদ থেকে হলে মুজাররাদ-এর মধ্যেই সিলাহ অর্থের যে পরিবর্তন হয়  তা মুখস্থ করবে এবং শব্দটি মাযিদ ফীহ থেকে হলে মাযিদ ফীহ-এর মধ্যেই সিলাহ পরিবর্তনে যে অর্থগত পরিবর্তন হয় তা মুখস্থ করা। এক শব্দের  সকল মুশতাক্কাত মুখস্থ করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এর জন্য পেরেশান হওয়ার দরকার নেই। তবে কোনো হিম্মতওয়ালা মেধাবী ছাত্রের পক্ষে যদি তা সম্ভব হয় তাহলে তার জন্য বাধাও নেই।

৩. সাধারণ তারকীবগুলো বুঝে নেওয়া। কঠিন ও নতুন তারকীব যদি বুঝে না আসে এতেও তেমন ক্ষতি নেই।

৪. মাতৃভাষায় তরজমা বোঝা এবং ইয়াদ করার ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া। প্রথমে প্রতিটি  শব্দ ও প্রতিটি বাক্যের তরজমা বোঝার চেষ্টা করবে এরপর পুরো কথাটি সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় অনুবাদ করবে।

৫. আরও একটি কাজ যা এ কিতাবের আগেই হয়ে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু সাধারণত নাহওয়ার কারণে এখানেও তা করা প্রয়োজন। তা হল, আকর্ষণীয় বাক্যগুলোকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন কাঠামোতে ব্যবহারের মশক করা।

এ প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, মুখতারাত এর ভূমিকা অংশটি খুব প্রয়োজনীয় হওয়া সত্ত্বেও  আমাদের এ অঞ্চলে তা সাধারণত পড়ানো হয় না। সপ্তাহে দুইদিন অল্প অল্প করে ভূমিকা অংশটির দরস হওয়া দরকার। এভাবে একবার শেষ হওয়ার পর পুনরায় পড়া দরকার। মাদরাসায় এই ব্যবস্থা না থাকলে তালিবে ইলম নিজেও  দুচার লাইন করে প্রতিদিন তা পড়তে পারে।

এতটুকু হল এই কিতাব অধ্যয়নের প্রথম পর্যায়। এর পরবর্তী পর্যায়গুলো সম্পর্কে প্রয়োজনের সময় আবার মশোয়ারা করতে পারবেন।

আপনি লামিয়াতুল মুজিযাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। এ প্রসঙ্গে  আগামী কোনো সংখ্যায় লিখব ইনশাআল্লাহ।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন