জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩১ || জুন ২০১০

মুহাম্মাদ সাইফুল মালিক - ময়মনসিংহ

প্রশ্ন

আমি তাফসীরে জালালাইন জামাতের ছাত্র। আমার সমস্যা হল, দরসের কিতাবাদি বোঝার জন্য আমার নীরব, আওয়াজবিহীন মুতালাআর প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেটা আমি করতেই পারি না। পারলেও দশ মিনিটের বেশি কখনো নয়। কারণ ওভাবে বসলেই আমার চোখে ঘুম নেমে আসে। অনেকের কাছে আমি সমস্যাটির সমাধান চেয়েছি। কেউ বলেছেন, চোখ ধুয়ে নিতে, কেউ মাথা ধুয়ে নিতে। কিন্তু বিশেষ ফল পাইনি। আবার কেউ কেউ পরামর্শ দিয়েছেন যে, খাবার কমিয়ে ফেলতে। আসলে যে খাবার গ্রহণ করি তা এমন বেশি নয় যে, তা থেকে খুব একটা কমানো যায়। তবু কাজটি আমি করেছি। ফল একেবারে শূন্যই। উল্টো শারীরিক দুর্বলতার কারণে ঘুম বহু গুণে বেড়ে গেছে। এখন হযরতের নিকট আরজ, আমার সমস্যার কোনো সমাধান দিয়ে প্রকৃত তালিবুল ইলম হওয়ার সাহস যোগাবেন।

উত্তর

উত্তর : আপনার এই সমস্যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকতে পারে। প্রথমত : জীবন যাপনে নেযামের অভাব। মনে রাখবেন, প্রকৃত তালিবে ইলম সেই হতে পারে, যার প্রতিটি কাজ-কর্ম নেযাম মোতাবেক হয়। হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দা.বা. যথার্থই বলেন, ‘নেযামুল আওকাত’ ছাড়া কোনো তালিবে ইলমের যিন্দেগী বনতে পারে না।’ অতএব আপনি দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় ঘুমের জন্য নির্ধারণ করুন। এছাড়া একটি নেযামুল আওকাতের পাবন্দী করে নির্দিষ্ট সময়ে সব কাজ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ‘ঘুমের সময় পড়া আর পড়ার সময় ঘুমের’ অভ্যাস থাকলে তা একেবারে পরিহার করুন। দ্বিতীয়ত : রাতে বা দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর পরও যদি আপনার একই সমস্যা হয় তাহলে এ বিষয়ে একটি সমাধান আমি পেয়েছি হযরত থানভী রাহ.-এর মালফুযাত, মাকতুবাত ও রাসায়েল থেকে চয়নকৃত ‘উস্তায শাগরিদ কে হুকুক’ নামক কিতাবে। হিম্মত হলে আপনি আমল করে দেখতে পারেন। হযরত থানভী রাহ. বলেন, এই ব্যাপারে আমার একটি প্রস্তাব হল, গোল মরিচ পকেটে রাখবে। যখন ঘুমের প্রকোপ বাড়বে তখন একটি মরিচ চাবাতে থাকবে। এটি দেমাগের জন্যও ‘মুকাব্বী’। তাতে ক্ষতি নেই। কারণ প্রয়োজনমতো পূর্ণ ঘুমানোর পরও যার ঘুম আসে তার এই ঘুমের কারণ হল অলসতা। তাছাড়া কম খেলে ঘুম কম আসে আর বেশি খেলে বেশি। খানা যখন উদর পুরে খাবে তখন ঘুমও চোখ ভরে নামবে। (উস্তাদ শাগরিদ কে হুকুক ৭৬-৭৭) তৃতীয়ত : কারো সামনে বিশাল বড় কোনো কাজ থাকলে কিংবা মাথার উপর গুরুত্বপূণ কোনো কাজ চেপে বসলে তার নিদ্রা তো দূরে থাক, এর চিন্তাও আসতে পারে না। আর তালিবে ইলমের জন্য ইলম অর্জনের চেয়ে বিশাল কোনো কাজ তো পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। অতএব আপনিও ইলমের মর্যাদা ও ওলামাদের মাহাত্ম এবং ইলমের ব্যাপ্তি ও প্রশস্ততার কথা বারবার ভাবুন। নিজের মধ্যে ইলমের জন্য অনির্বাণ জ্বালা ও সীমাহীন তড়প পয়দা করুন। ইলমের জন্য যারা পূর্ণ জীবন-যৌবন উৎসর্গ করেছেন, সকল আরাম-আয়েশ পরিত্যাগ করেছেন, তাদের জীবনী পড়ুন। এতেও ফায়দা পেতে পারেন। তবে এ কথাও ঠিক যে, এই ধরনের সমস্যা অনেক সময় শারীরিক কোনো অসুস্থতার ফলেও হয়ে থাকে। এজন্য আপনি কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে কুষ্টিয়ার ডাক্তার তানভীর এর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন অথবা তাঁর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে পারেন। তাঁর মোবাইল নম্বরটি এই ০১৭১৭-২৮৭২২৭। ইনশাআল্লাহ ভালো কোনো পরামর্শ পাবেন বলে আশা রাখি।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন