রবিউল আউয়াল ১৪৩১ || মার্চ ২০১০

মুহাম্মাদ ওমর ফারূক - জামিয়া আরাবিয়া ফরিদাবাদ

প্রশ্ন

(ক) আমি একজন তালিবুল ইলম। দরসের পাশাপাশি ইতিহাসগ্রন্থ অধ্যয়ন করা আমার অভ্যাস। আমার চারজন মুজাহিদের জীবনী ও অবদান সম্পর্কে জানার খুব ইচ্ছা। তারা হলেন : ১. মুসলমানদের প্রথম কেবলা পুনরুদ্ধারকারী হযরত সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রাহ.। ২. ক্রুসেডারদের আতঙ্ক নূরুদ্দীন জঙ্গী রাহ.। ৩. মূর্তি-সংহারক সুলতান মাহমুদ গযনভী রাহ. এবং কনস্টান্টিনোপোল বিজয়ী সুলতান মুহাম্মাদ ফাতেহ রাহ.। দুঃখের বিষয় আমি শুধু তাদের নিয়ে রচিত কোনো ইতিহাসের বইয়ের নাম জানি না। হুজুরের নিকট আমার অনুরোধ, উল্লেখিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে লিখিত ইতিহাসের বইয়ের নাম, লেখকের নামসহ পত্রিকায় উল্লেখ করবেন। প্রশ্ন : খ) হযরত আবুল হাসান আলী নাদভী রা. তার ‘‘তারীখে দাওয়াত ও আযীমত’’-গ্রন্থে সালাহুদ্দীন আইয়ূবী রাহ. ও নূরুদ্দীন জঙ্গী রাহ. এর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে কাযী বাহাউদ্দীন শাদ্দাদ কর্তৃক রচিত ‘‘আননাওয়াদিরুস সুলতানিয়া’’ থেকে অনেক তথ্য পেশ করেছেন, কিন্তু আমি অনেক অনুসন্ধান করেও বইটি পাইনি। হুজুরের নিকট বিনীত অনুরোধ, কিতাবটি কোথায় পাওয়া যেতে পারে, জানিয়ে বাধিত করবেন। প্রশ্ন : গ) হযরত আদীব ছাহেব হুজুর দা.বা. প্রাথমিক সাহিত্যচর্চার জন্য তার লিখিত বই পড়তে বলেন। আলহামদুলিল্লাহ। শুধু সাহিত্যচর্চার জন্য নয়; বরং তালিবে ইলমের অনেক অভাব পূরণে তার বইয়ের কোনো তুলনা নেই। কিন্তু আমরা তার বইসমূহের নাম না জানার কারণে অনেক অপূর্ণতায় ভুগছি। বাজারে বই কিনতে গেলে অকল্পনীয়ভাবে তার বই পাচ্ছি। কিন্তু আমরা যদি তার সকল বইয়ের নাম জানতাম তাহলে আমাদের অনেক উপকার হত। তাই হুজুরের নিকট আমাদের আকুল আবেদন, আদীব ছাহেব হুজুরের লিখিত, অনূদিত ও সম্পাদিত সকল বইয়ের তালিকা, প্রকাশনীর নামসহ আলকাউসারে প্রকাশ করে উপকৃত করবেন। সবশেষে হুজুরের নিকট দুআর আবেদন, আল্লাহ তাআলা যেন আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে তাকী উসমানী (দা.বা.)-এর মতো মুহাক্কিক আলিম, আদীব হুজুরের (দা.বা.)-এর মতো লেখক এবং সালাহুদ্দীন আইয়ূবীর (রাহ.)-এর মতো মুজাহিদ হওয়ার তাওফীক দান করেন।

উত্তর

ইতিহাসের প্রতি ঝোঁকের জন্য আপনাকে মোবারকবাদ। তবে খেয়াল রাখা উচিত যে, এতে করে যেন মৌলিক পড়ালেখায় কোনো ত্রুটি বা অবহেলা না হয়। আলকুদস বিজয়ী ইউসুফ বিন আইয়ূব শাযী (৫৩২-৫৮৯ হি., মোতাবেক ১১৩৭-১১৯৩ ঈ.) যিনি সালাহ উদ্দীন আইয়ূবী নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, তারীখ, রিজাল ও আলামের বিভিন্ন কিতাব ছাড়াও স্বতন্ত্র তাঁর জীবনের উপর অনেক কিতাব রচিত হয়েছে। তন্মধ্যে ১. ইবনে শাদ্দাদের ‘‘আননাওয়াদিরুস সুলতানিয়াহ ওয়াল মাহাসিনিল ইউসুফিয়্যাহ’’ (প্রকাশিত) যাকে ‘‘সীরাতে সালাহুদ্দীন’’ও বলা হয়, ইমাদ উদ্দীন কাতেবের দু’টি কিতাব ‘‘আল-বারকুশ শামী’’ এবং ‘‘আন-নাফহুল ক্বাসী ফিল ফাতহিল কুদসী’’ ও সমসাময়িকদের মধ্যে মুহাম্মাদ ফরীদ আবু হাদীদ এর ‘‘সালাহুদ্দীন আলআইয়ূবী ওয়া আসরুহু’’, ও আহমদ বিলী আল মিরীর ‘‘হায়াতু সালাহুদ্দীন আল-আইয়ূবী’’ উল্লেখযোগ্য। আর একই যুগের ন্যায়পরায়ণ শাসক নূরুদ্দীন মাহমুদ বিন ইমাদুদ্দীন জঙ্গী (৫১১-৫৬৯ হি., মোতাবেক ১১১৮-১১৭৪ ঈ.)-এর জীবনের উপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ হিসাবে মুহাম্মাদ বিন আবু বাকার বিন কাযী শাহবার কিতাব ‘‘আদদুররুস সামীন’’ এবং সমসাময়িকদের মধ্যে ড. আলী মুহাম্মাদ আস সাল্লাবীর রচিত দুটি কিতাব ‘‘আলকায়িদুল মুজাহিদ নূরুদ্দীন মাহমুদ জনকী’’ এবং ‘‘আসরুদ দাওলাতিল যানকিয়্যা’’ উল্লেখযোগ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, এই দু’জন মনীষীর জীবন ও তাদের রাষ্ট্র পরিচালনাকালীন ঘটনার জন্য নির্ভরযোগ্য ও সর্বপ্রাচীন গ্রন্থ হল ইমাম আবু শামা (৫৯৯-৬৬৫ হি.) লিখিত ‘আর রাওযাতাইন ফী আখবারিদ দাওলাতাইন’ নামক কিতাবটি, যা বৈরুতের ‘মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ’ কর্তৃক পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। আর ভারতে অভিযান পরিচালনাকারী ‘ইয়ামিনুদ দাওলাহ’ সুলতান মাহমুদ বিন সুবাগতিগীন (৩৬১-৪২১ হি., মোতাবেক ৯৭১-১০৩০ ঈ.) এর জীবনের উপর মুহাম্মাদ বিন আবদুল জব্বার উতবীর লিখিত কিতাব ‘আল ইয়ামিনী’ দ্বাদশ শতাব্দীর আহমদ বিন আলী আলমানিনী দুই খণ্ডে যার ব্যাখ্যা লিখেছেন-মৌলিক কিতাব। চুতর্থ মুসলিম বীর সুলতান ‘মুহাম্মদ’ সানী (৮৩৩-৮৮৬ হি., মোতাবেক ১৪২৮-১৪৮১ ঈ.) যিনি ফাতেহ উপাধিতেই প্রসিদ্ধ। তিনি ছিলেন খোলাফায়ে ওসমানিয়ার সপ্তম খলীফা। তিনি পরবর্তী যুগের হওয়া সত্ত্বেও তাঁর জীবনের উপর তখনকার যুগের ঐতিহাসিকরা খুব কমই লিখেছেন। এই বিষয়টি আফসোস করে বলেছেন মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উছমানী। তিনি তাঁর তুরষ্কের সফরনামায় লেখেন, ‘আফসোসের কথা হল, বর্তমানে ওসমানীয় খলীফাদের ইতিহাসের অধিকাংশ সূত্র ইংরেজিতে। এই বিষয়ের মৌলিক গ্রন্থগুলি ঐসব পশ্চিমা ইতিহাসবিদদেরই লেখা অথবা ঐ সব ইংরেজি গ্রন্থাদি থেকেই আহরণ করা নতুবা তা তুর্কী ভাষায় রচিত, যা থেকে তুরষ্কের বাইরের মুসলিম পাঠক উপকৃত হতে পারে না। এজন্য না জানি কত ‘হাকীকত’ এখনও পর্দার আড়ালে রয়ে গেছে, যে পর্যন্ত আমরা এখনও পৌঁছতে পরিনি। (জাহানে দীদাহ পৃ. ৩২৯) তবু ইদানীং আরবী ভাষায় তার জীবনের উপর স্বতন্ত্র কিতাব ‘মুহাম্মদ আল-ফাতিহ’ এসেছে, যার লেখক হলেন, ড. আলী মুহাম্মদ আস সাল্লাকী। এছাড়াও তার কিতাব ‘আদ-দাওলাতুল উসমানিয়া আওয়ামিলুন নুহুদ ও আসবাবুস সুকুত’ও একটি ভালো কিতাব। প্রশ্নোক্ত চারজন মনীষীর মূল নাম ও মৃত্যুসন লিখে দেওয়াতে এখন আপনি সহজে উল্লেখিত স্বতন্ত্র কিতাব ছাড়াও ‘আলাম’ ও ‘তারীখ’ সংক্রান্ত যে কোনো নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ অধ্যয়ন করতে পারেন। মনে রাখবেন, এই গ্রন্থগুলোও তাদের জীবনীর মৌলিক উৎস। উত্তর : খ) হ্যাঁ, ৭ম হিজরীর প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ আবুল মাহাসিন বাহাউদ্দীন ইউসুফ বিন রাফে বিন তামীম মাওসীলি (৬৩৫ হি.) যিনি কাযী শাদ্দাদ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ, এর লিখিত এই কিতাবটি যার পূর্ণ নাম আমি কিছু আগেই উল্লেখ করেছি এটি প্রকাশিত হয়েছে অনেক আগেই। এটি ড. জামাল উদ্দীন আশশায়্যাল এর তাহকীকে মিসরের কায়রোর প্রসিদ্ধ মাকতাবাতুল খানজী থেকে প্রকাশিত হয়েছে। উত্তর : গ) এখানে উল্লেখ করার তো প্রয়োজন নেই। আপনি একদিন ‘মাদরাসাতুল মদীনা’ আশরাফাবাদ অথবা বাংলা বাজারস্থ ইসলামী টাওয়ারে ‘সাবআ সানাবিল’ বা ‘দারুল কলম’ প্রকাশনীতে গিয়ে সাধ্যমতো অনুসন্ধান করে নিজেই একটি তালিকা তৈরি করে নিতে পারেন।

এই সংখ্যার অন্যান্য শিক্ষা পরামর্শসমূহ পড়ুন