নাদিম মাহমুদ - শরীয়তপুর

প্রশ্ন

হুযুর, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক পূর্ণ আদবের সহিত জানাচ্ছি যে, ইনশাআল্লাহ আমি এই রমযানের পর শরহে বেকায়া জামাতে উন্নীত হতে যাচ্ছি। এযাবৎ যত কিতাবাদি পড়েছি শত কষ্ট করে হলেও নিজে ক্রয় করেই পড়েছি। শরহে বেকায়া জামাতের কিতাব ও তার সংশ্লিষ্ট শরাহগুলোও আমি ব্যক্তিগত কিতাব দিয়েই পড়তে ইচ্ছুক। অথচ আমার আর্থিক অবস্থা এতটাই দুর্বল যে, এতগুলো কিতাব ক্রয় করা আমার পক্ষে অসম্ভব। এ নিয়ে বেশ উৎকণ্ঠায় আছি। উপরন্তু পড়া-লেখার প্রতি আমার অধীর আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু যখনই আর্থিক অবস্থার দিকে তাকাই আমার সব আগ্রহ অনাগ্রহে পরিণত হয়। পড়া-লেখা থেকে মন উঠে যায়। মাঝে মাঝে ভাবনাও আসে যে, এত কষ্ট করে পড়া-লেখা করে লাভ কী? হেলায়-খেলায় জীবন কাটিয়ে দিলেও তো অনেক ভালো। এরকম আরো অনেক ভাবনাই জেগে বসে মনে। আর আমার সবচে বড় সমস্যা হল- আমার কোনো তালীমী মুরুব্বী নেই। যাকে সব কিছু খুলে বলব। যার থেকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাবো। হুযুরের কাছে জানতে চাই তালীমী মুরুব্বী প্রাতিষ্ঠানিক কোনো উস্তায হওয়া জরুরি কি না? যদি জরুরি হয় তাহলে আমি কেমন উস্তাযকে তালীমী মুরুব্বী হিসেবে নির্ধারণ করব? আর যদি জরুরি না হয় তাহলে বলি- গত বৎসর থেকে আমি একজন বিজ্ঞ আলেমকে তালীমী মুরুব্বী হিসেবে পছন্দ করে আসছি। এস্তেখারা করেও তার প্রতি ইঙ্গিত পেয়েছি। তবে কেন যেন তাকে বলার সাহস পাচ্ছি না। এখন আমার দিকনির্দেশনাহীন ভয়ঙ্কর জীবনটা যেন উদ্দেশ্যহীন পথের যাত্রী। আমি পত্রোক্ত সবগুলো বিষয় নিয়ে খুব পেরেশানীতে আছি। মেহেরবানী করে সঠিক পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।

 

উত্তর

ইলম ও জ্ঞান সাধনার পথে তালিবে ইলম ও আহলে ইলমদের দারিদ্র ও অভাব-অনটনের কষাঘাতে জর্জরিত হওয়ার তিক্তমধুর অভিজ্ঞতা সম্পর্কিত অধ্যায়টি বেশ বড়। এটা সবার ক্ষেত্রে না হলেও অনেকের ক্ষেত্রে তো বটে। সালাফের ইলম অন্বেষণের অতীত ইতিহাস তারই সাক্ষ্য বহন করে।

এসকল পরিস্থিতিতে করণীয় হলআল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি দুআ করা ও সাহায্য চাওয়া,সবর ও ধৈর্যের সওয়াব লাভের আশা রাখা এবং ইলমের মনযিলে মকসুদে পৌঁছানোর তীব্র বাসনা নিয়ে সকল দুঃখ-কষ্টকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সামনে অগ্রসর হতে থাকা। আপনি এত পেরেশনা হচ্ছেন কেনতালীমী মুরুব্বী গ্রহণ করুন। আল্লাহ আপনার নুসরত করবেন। দুআ ও মুজাহাদা সকল সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। কিতাব সংগ্রহের ব্যাপারে দুআ ও রোনাযারীকে মূল অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করুন। আর সহযোগী উপায় হিসেবে খরচে মিতব্যয়িতা।

হযরত মাওলানা আমীন ছফদর ছাহেব রাহ. অত্যন্ত গরীব মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত কুতুবখানা ছিল বেশ বড়। এ কুতুবখানা তৈরিতে দুআ ও রোনাযারী ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় সহায়। একবার তাঁর আদ্দুররুল মানছূর কিতাবের প্রয়োজন ছিল। রাতভর তাহাজ্জুদের নামাযে কেঁদে কেঁদে দুআ করলেন। এর মধ্যে কিছুটা তন্দ্রা এল। স্বপ্নে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যেয়ারত হয়ে গেল। ইরশাদ হলকিতাবের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। শেষে সেই কিতাবের তো ব্যবস্থা হলই পরবর্তীতে প্রয়োজন মাফিক অন্যান্য কিতাবেরও ব্যবস্থা হতে থাকল। শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ রাহ. কিতাবের জন্য নফল নামাযের মান্নত করতেন। অমুক কিতাব পেলে এত রাকাত নফল পড়ব। কিতাবও সংগ্রহ হত আর নফল নামাযের মাধ্যমে তাকাররুব ইলাল্লাহও হাসিল হত।

আপনি তালীমী মুরুব্বীর কথা জিজ্ঞাসা করেছেন। তো নিজের কোনো অভিজ্ঞ মেহেরবান উস্তাযকে তালীমী মুরুব্বী হিসেবে গ্রহণ করা উত্তম। কারণতিনি আপনার বিস্তারিত হালত সম্পর্কে জেনে পরামর্শ দিতে পারবেন।

শেয়ার লিংক

হুযাইফা কাবীর - শনিরআখড়া, ঢাকা

প্রশ্ন

মুআযযায হযরত, আল্লাহ আপনাকে সিহহাতে কামেলা ও আফিয়াত নসীব করুন। আমি মাদানী নেসাবের একজন তালিবে ইলম। আমি এখন চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়ন করছি। আমি তাফসীরুল কুরআনের উপর তাখাস্সুস করতে আগ্রহী। সুতরাং আমাকে এই ফন্নের ইবতেদায়ী কিতাব সম্পর্কে এবং তা মুতালাআর তরিকা বাতলে দিয়ে উপকৃত করবেন।

আল্লাহ তাআলা আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আমীন।

 

উত্তর

আপনি এ বিষয়ে মাদানী নেসাবের মুআসসিস মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম-এর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - ঢাকা

প্রশ্ন

মুহতারাম, আল্লাহ তাআলা আপনার বরকতময় ছায়াকে দীর্ঘায়িত করুন। কয়েকটি বিষয় অনেক চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারিনি।

(ক) মানুষ মাত্রই ভুলের শিকার হয়। তাই যাঁর কাছে ছবক পড়েছি তিনি যদি কখনো তাকরীরে বা ইবারতে ভুল করেন সেক্ষেত্রে কী করণীয়?

(খ) ইমাম আবু হানিফা রাহ. আল্লাহকে স্বপ্নে দেখেছেন বলে শোনা যায়। কথাটা কতটুকু দলীল সম্বলিত? আর দুনিয়াতে কি কোনো মানুষ আল্লাহকে দেখার যোগ্যতা রাখে

(গ) শরহে বেকায়ার মুকাদ্দামাতে (যা মুসান্নিফ লিখেছেন) আছে

فكتبت في هذا الشرح العبارة التي تقرر عليها المتن لتغير النسخ

জানার বিষয় হল لتغير  শব্দটি কি এখানে তাফাউল-এর মাছদার নাকি তাফয়ীলের মাজহুলের ছীগা। বিভিন্ন জন থেকে বিভিন্ন রকম শুনেছি। অতএব অর্থগত দিক থেকে এবং মুসান্নিফের উদ্দেশ্য প্রকাশে কোনটি সঠিক?

আশা করি নতুন বছর শুরু হওয়ার আগেই বিষয়গুলোর সমাধান দিবেন।

 

উত্তর

(ক) দরস গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হলদরসের কোনো বিষয়ে উস্তাযের কোনো ভুল হয়ে গেলে (যা হওয়া অস্বাভাবিক নয়) আর তালিবে ইলমের এ সম্পর্কে অবগতি থাকলে দরস বা আম মজমায় তা প্রকাশ করবে নাবরং নির্জনে গিয়ে যথাযথ আদব ও বিনয়ের সাথে উস্তাযের নিকট পেশ করবে। ইস্তেফহাম ও পরামর্শ প্রার্থনার পদ্ধতিতে তাঁকে অবহিত করবে। আরেকটি আদব হল,ইস্তেফহাম পেশ করার আগে অনুমতি গ্রহণ করা এবং ইস্তেফহামের ক্ষেত্রে কখনো তর্কের ভাব প্রকাশ না পাওয়া। কেননা এটা মারাত্মক বেআদবী। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আলকাউসার ফেব্রুয়ারি১৪ সংখ্যায় শিক্ষার্থীর পাতার ইলমের সাথে ইলমের আদব শেখাও অপরিহার্য শিরোনামের লেখাটি পড়তে পারেন।

(খ) এধরনের কথা কোনো কোনো কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। ইমাম আবূ হানীফা রাহ. থেকে এ কথা সহীহ সনদে প্রমাণতি কি না তা আমার জানা নেই। যদি সহীহ সনদে প্রমাণতি থাকে তবে তো সেটি খাব ও স্বপ্নমাত্র। ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নে কোনো কিছু দর্শন করা আর জাগ্রত অবস্থায় বাস্তবে কিছু দর্শন করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। কারণ স্বপ্নে মানুষ যা দেখেশুনে কিংবা অনুভব করে তা মূলত সে পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা করে না। হাদীসের ভাষায় যে স্বপ্নগুলো الرؤيا الصالحة    الرؤيا الصادقة(ভালো ও সত্য স্বপ্ন) সেগুলোতেও দৃষ্ট ও শ্রুত বিষয়াবলী সাধারণত স্থুল হাকীকত ও প্রকৃত বিষয় হয় নাবরং উদ্দীষ্ট বিষয়ের সূ² কোনো মিছাল ও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকেএ কারণে ভালো স্বপ্নও তাবীর ও তাবীল সাপেক্ষ।

এছাড়া আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালাম ছাড়া অন্যদের কোনো স্বপ্ন তো শরীয়ত ও আকলের দৃষ্টিতে হুজ্জত নয় একথা সর্বজন স্বীকৃত।

সুতরাং কেউ স্বপ্নে আল্লাহ তাআলার দর্শন লাভ করে থাকলে সেটি যে প্রকৃত দর্শন নয় এবং চর্মচক্ষু দ্বারা দর্শন নয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ধরনের দর্শন মূলত উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত স্বরূপ কোনো ভালো গুণ বা অবস্থার দর্শন। স্বপ্নদ্রষ্টার অবস্থাভেদে সেই উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের বিভিন্নতা হতে পারে। অন্যথায় কুরআনুল কারীমের অকাট্য ঘোষণা হল,

لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

(তরজমা) কোনও জিনিস নয় তার অনুরূপ। তিনিই সব কথা শোনেন ও সবকিছু দেখেন। -সূরা শূরাআয়াত ১১

আর পরীক্ষার ইহজগতে কেউ আল্লাহ তায়ালাকে দেখবে নাএকথা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ

এবং হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে

تعلموا أنه لن يرى أحد منكم ربه عز وجل حتى يموت

 (সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২৯৩০) তবে আল্লাহর মুমিন ও নেক বান্দাগণ আখেরাতে জান্নাতে আল্লাহ তাআলার দিদার লাভে ধন্য হবেসে কথা কুরআন-হাদীস দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণীত।

(اللهم اجعلنا منهم وأسعدنا به)

 বাকী থাকল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজের রজনীতে আল্লাহর দিদার লাভের ঘটনা। তো সেটা এই জড় জগতে ঘটেনিবরং উর্ধ্ব জগতে ঘটেছে। এছাড়া এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একক বৈশিষ্ট্য। এ ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যাও রয়েছে। বিস্তারিত জানার জন্যশরহে হাদীসের কিতাব দেখা যেতে পারে।

স্বপ্নে আল্লাহ তাআলার দর্শন লাভের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু সিদ্দিক আল গুমারী রাহ. (মৃত্যু ১৪১২ হি.) যথার্থই বলেছেন-

"يستدل بعض غلاة أهل السنة بحديث رؤيا الله في المنام على إمكان رؤيته تعالى في اليقظة، وهو خطأ، لأن الله لا يرى في المنام حقيقة، وإنما المرئي مثال يتعرف الله به إلى عبده ويريه ما يريد أن يبينه له من بشارة أو انذار، والمثال غير المثل." انتهى من كتاب "مدى حجية الرؤيا عند الأصوليين" للدكتور علي جمعة ص৫৪ نقلا عن كتاب الرؤيا في القرآن والسنة للشيخ عبد الله الغماري ص৬৭.

এ বিষয়ে আরো জানার জন্য দেখা যেতে পারেআরিযাতুল আহওয়াযী-শরহু সুনানিত তিরমিযী,ইবনুল আরাবী ১২/১১০-১১১মিরকাত শরহুল মিশকাত২/২০৯মজমূউল ফাতাওয়াশায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া ৫/২৫১-২৫৫৩/৩৮৯-৩৯২আত তাকাশশুফহযরত থানবী পৃ ২৮৭;বাওয়াদিরুন নাওয়াদিরহযরত থানবী ৪১১-৪১৬

তাতীরুল আনাম ফি তাফসীরলি মানামআব্দুল গণী নাবলূসী

(গ) প্রশ্নোক্ত শব্দটি বাবে তাফয়ীল থেকে মাজহুলের সীগাহ হওয়াই মুনাসিব বলে মনে হয়। কারণ,এখানে উদ্দেশ্য হল মতনের লেখক মাহমূদ ইবনু সদরুশ শরীয়াহ কর্তৃক সর্বশেষ সম্পাদিত ও সংশোধিত নুসখা অনুসারে যেন অন্যরা তাদের পূর্ববর্তী নুসখাগুলোকে সংশোধন করে নেয়একথা ব্যক্ত করা। আর এই উদ্দেশ্যটি এখানে ফেয়েলের সীগাহ থেকেই সাবলীলভাবে বুঝে আসে। কিতাবে فكتبت শব্দের উপরে যে হাশিয়াটি রয়েছে তা মনোযোগ দিয়ে পড়লেও বিষয়টি বুঝতে পাড়বেন বলে আশা করি। 

শেয়ার লিংক