মুহাম্মাদ আতাউল্লাহ - হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম

প্রশ্ন

(ক) মুহতারাম! আমি শরহে জামী জামাতে পড়ি। কানযুদ্দাক্বায়েকের শরহ হিসেবে আল-বাহরুর রায়েক কিনেছি। এছাড়া কানযের সাথে হাশিয়া কুনূযুল হাকায়েক সংযুক্ত আছে। প্রসঙ্গত, আমি ড. সা-ইদ বাকদাশের তাহক্বীককৃত নুসখাটি ক্রয় করেছি। কিন্তু আমাদেরকে প্রতিদিন যে পরিমাণ সবক দেওয়া হয় তাতে আল-বাহরুর রায়েক-এর (জাকারিয়া বুক ডিপো) অন্তত ২০-৩০ পৃষ্ঠা হয়, যা কুনূযুল হাকায়েকসহ নুসখায় প্রায় দেড় পৃষ্ঠা। এমতাবস্থায় অন্যান্য বিষয়সমূহসহ আলবাহরুর রায়েক (পূর্ণ) পড়া সম্ভব হয় না। আর হাশিয়া ‘কুনূযুল হাকায়েক’ (পূর্ণ সবক) পড়তে গেলে আল বাহরুর রায়েক পড়ার ফুরসত পাওয়া যায় না। অতএব কোনটিকে গুরুতব দেব ও কোনটি রেখে কোনটি পড়ব সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। আশা করি, দ্রুত কোনো সমাধান পাব।

(খ) উসূলুশ শাশীর শরহ হিসেবে ‘ফুসূলুল হাওয়াশী’ মুতালাআ করি। এর লেখক কে? এতে কয়েকটি স্থানে ‘শাইখুল উস্তায’ ইত্যাদি  (যেমন মাকতাবাতুল হারাম, লাহোর থেকে প্রকাশিত নুসখার ৬৯ পৃষ্ঠায়) বলে কাকে বোঝানো হয়েছে। জানালে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।


উত্তর

(ক) এর একটি সমাধান এই হতে পারে যে, এখন দরস চলাকালীন কিতাব হল করার জন্য ‘কুনূযুল হাকায়েক’ হাশিয়াটি নিয়মিত মুতালাআয় রাখবেন। আর ফিকহী মাসায়েলের তাফসীলাত জানার জন্য প্রয়োজন হলে গুরুত্বপূর্ণ মাসআলাসমূহ আলবাহরুর রায়েক মুরাজাআত করবেন। কিতাব হল করার জন্য কুনূযুল হাকায়েক-এর পরিবর্তে আইনী রাহ.-এর সংক্ষিপ্ত হাশিয়া ‘লামযুল হাকায়িক’ মুতালাআয় রাখতে পারেন।

(খ) আমার সামনে ফুসূলুল হাওয়াশীর যে নুসখাটি আছে তাতে শুরুতে বা শেষে মুসান্নিফের নাম আমি খুঁজে পাইনি। তবে কিতাবটি যে শায়খ ইলাহদাদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল জৌনপুরী রাহ. (মৃত্যু ৯২৩ হি.)-এর তাসনীফ তা একাধিক সূত্রে প্রমাণ পাওয়া যায়। এক. আরবী-ফারসী রিসার্চ ইন্সটিটিউট, রাজস্থান, টৌঙ্ক থেকে প্রকাশিত ‘খযীনাতুল মাখতুতাত’ ৪/৪০-৪২ সংকলক মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান খান। এতে রিসার্চ ইন্সটিটিউটে সংরক্ষিত (ফুসূলুল হাওয়াশী’-এর একাধিক পাণ্ডুলিপির বিবরণ পেশ করা হয়েছে। এসব পাণ্ডুলিপিতে শায়খ ইলাহদাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও সংকলক এখানে কিতাব ও মুসান্নিফের পরিচয়ের ক্ষেত্রে আরো দুটি সূত্রের বরাত দিয়েছেন। যথা, ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরী লন্ডন-এর ক্যাটালগ (২/২৫০) এবং খোদা বখশ ওরিয়েন্টাল পাবলিক লাইব্রেরী, বানকীপুর, পাটনা-এর ক্যাটালগ পৃ. ১৪৯৪

দুই. মুজামু মাতবুআতিল আরাবিয়্যাহ ফী শিবহিল কাররাতিল হিন্দিয়া আল বাকিস্তানিয়া পৃ. ৪১-এ দুটি নুসখার বিবরণ দেয়া হয়েছে। এতেও শায়খ ইলাহদাদের নাম উল্লেখ রয়েছে।

তিন. শায়খ ইলাহদাদ-এর জীবনীতে উসূলুশ শাশীর শরহের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাঁর বিস্তারিত জীবনী জানার জন্য দ্রষ্টব্য ১. আখবারুল আখইয়ার, আব্দুল হক দেহলবী পৃ. ২৭৫-২৭৬ (উর্দূ অনুবাদ) ২. আল ইলাম (নুযহাতুল খাওয়াতির, ৪/৩৭-৩৯, ৩. আবজাদুল উলূম, সিদ্দিক হাসান খান পৃ. ৩/৮৯৪-৮৯৫ ৪. হাদায়িকুল হানাফিয়্যাহ, মৌলবী ফকীর মুহাম্মাদ জিহলামী (মৃত্যু ১৪৩৫ হি.) পৃ. ৩৮৮-৩৮৯

   ফুসূলুল হাওয়াশী কিতাবে মুসান্নিফ কয়েক জায়গায় নিজের কোনো এক উস্তাযের হাওয়ালা দিয়েছেন এভাবে- "كذا سمعت من فوائد شيخي وأستاذي نفع الله المقتبسين بطول بقائه" এবং  وقال شيخي وأستاذي متع الله المقتبسين بطول بقائه.

এই উস্তায দ্বারা মুসান্নিফের কোন উস্তায উদ্দেশ্য তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। এর জন্য আরো তাহকীক প্রয়োজন তবে তার একজন খাস উস্তায হলেন শায়খ আব্দুল মালেক জৌনপুরী। তিনি হলেন কাযীল কুযাত শিহাবুদ্দীন আহমদ দৌলতাবাদী (মৃত্যু ৮৪৯ হি.)-এর শাগরিদ। দ্রষ্টব্য. আল ইলাম (নুযহাতুল খাওয়াতির)

   উল্লখ্য, প্রাচ্যবিদ কার্ল বুরুক্লম্যান-এর তারীখুল আদাবিল আরাবি (আরবী অনুবাদ, মূল জার্মানী ভাষা থেকে) ২/২৮-এ ফুসূলুল হাওয়াশী শরহু উসূলিশ শাশীকে মওলবী আইনুল্লাহ-এর দিকে নিসবত করা হয়েছে। এই নিসবতটি ভুল। মওলবী আইনুল্লাহ মূলত ফুসূলুল হাওয়াশির উপর হাশিয়া লিখেছেন, যা আমার সামনের মতবুয়া নুসখাটিতেও উলেস্নখ রয়েছে। আরো দ্রষ্টব্য : মুজামু মাতবুআতিল আরাবিয়্যাহ ফী শিবহিল কাররাতিল হিনদিয়্যাহ পৃ. ৪১

শেয়ার লিংক

আবু সালেহ মুহাম্মাদ মূসা - জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া মালনী, নেত্রকোনা

প্রশ্ন

(ক) মুহতারাম আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। আমি مِثْلٌ এবং مَثَلٌ শব্দদুটোর পার্থক্য ও ব্যবহারবিধি জানতে চাই। সুদ সম্পর্কিত বিখ্যাত হাদীস

الذهب بالذهب والفضة بالفضة ... مثلا بمثل...

এখানে   مثلا بمثل শব্দ দুটি কীভাবে পড়া সহীহ    مِثْلا بمِثْل নাকি  مََثَلا بمَثَل? আর যদি দুটোই শুদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে কোনটা অধিক শুদ্ধ?

(খ) আমরা পরীক্ষার উত্তরপত্রে কেউ কেউ الجواب عن السؤال... লিখি, আর কেউ কেউ  الإجابة عن السؤال... লিখি। الجوابالإجابة শব্দ দুটোর পার্থক্য জানতে চাই এবং উত্তরপত্রে কোনটা লেখা অধিক বিশুদ্ধ হবে তা জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

(ক) ‘মিছলুন’ ও ‘মাছালুন’ শব্দদ্বয়ের মাঝে মাদ্দা ও ‘মোশাবাহাত’-এই মূল অর্থে মিল রয়েছে। কিন্তু এ দুয়ের মাঝে ব্যবহারগত পার্থক্য রয়েছে। যেমন ইমাম খলীল ইবনে আহমদ রাহ. কিতাবুল আইন (৪/১১৮)-এ লিখেছেন-

المَثَل : الشيء يضرب للشيء فيجعل مثله

والمَثَل : الحديث نفسه والمِثْل : شبه الشيء في المثال والقدر ونحوه حتى في المعنى . انتهى

সারকথা, মাছালুন হলো কোনো কিছুর দৃষ্টান্ত ও উপমা। যার একটি প্রকার হল প্রবাদ-প্রবচন। আর মিছলুন অর্থ হল, সাদৃশ ও অনুরূপ। তবে মনে রাখতে হবে, মাছালুন শব্দটি কখনো কখনো মিছলুন অর্থেও ব্যবহার হয়ে থাকে। এছাড়াও ‘মাছালুন’ শব্দটির আরো একাধিক শাখাগত অর্থ রয়েছে। কিন্তু মিছলুন শব্দটি সর্বদা ‘শিবহুন’ বা সাদৃশ ও অনুরূপ অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। দ্রষ্টব্য : লিসানুল আরব ১৪/১৭-২০; তাজুল আরূস ৩০/৩৭৯-৩৯০; আলমুজামুল ওয়াসীত

   যাহোক, প্রশ্নোক্ত হাদীসের শব্দটি مِثْلا بمِثْل  হওয়াই বাঞ্ছনীয়। কারণ এখানে ‘শিবহুন’ বা সাদৃশ অর্থটি উদ্দেশ্য। আর এ অর্থে ‘মাছালুন’ নয় বরং ‘মিছলুন’ শব্দটিই অধিক ব্যবহৃত এবং স্পষ্ট। মুহাক্কিক ও মুতকিন আহলে ইলম ও মাশায়েখগন এটিকে مِثْلا بمِثْل পড়ে থাকেন। তাঁদের অনেকেই এটিকে এভাবেই যবত বিল হারাকাত করেছেনহযরত সাঈদ আহমদ পালনপুরী দামাত বারাকাতুহুম তো مََثَلا بمَثَل পড়াকে ভুল বলেছেন। দেখুন : তুহফাতুল আলমায়ী ৪/১৫৪

(খ) ‘জাওয়াবুন’ হল ইসমে মাসদার। যার অর্থ হল ما يجاب به المرأ অর্থাৎ যে কথা দ্বারা উত্তর দেয়া হয়। আর ‘ইজাবাতুন’ হচ্ছে মাসদার। যেমন  عطاء হল ইসমে মাসদার আর إعطاء হল মাসদার। কোনো কিছুর উত্তর দেয়ার ক্ষেত্রে উভয় শব্দের ব্যবহার সহীহ।

শেয়ার লিংক