মুহাম্মদ আবদুল মান্নান - জামাতে নাহবেমীর, জামিআ আরাবিয়া আনোয়ারুল উলূম রশীদিয়া মাইজদী, নোয়াখালী

প্রশ্ন

 

আমি এখন নাহবেমীর পড়ি। পাশাপাশি সরফের কিতাব পাঞ্জেগাঞ্জ পড়ি এবং গত বছর মীযান কিতাবটি পড়েছি। কিন্তু ছরফের একটি মাসআলা আমার নিকট স্পষ্ট নয়। তা এই যে, আমরা জানি যে, নফী ফেলে মাজীর শুরুতে মা  আসে এবং নফী ফেলে মুজারে এর শুরুতে লা  আসে। কিন্তু এমন কিছু জায়গা পাওয়া যায় যেখানে এর উল্টো হয়। যেমন মাজী-এর শুরুতে লা আসে আবার মুজারে-এর শুরুতে মা আসে।

যদিও এর সমাধান দিতে গিয়ে অনেকে বলেছেন যে, মাজী যখন তাকরার হয় তখন তার শুরুতে লা যেমন 

فلا صدق ولا صلى 

কিন্তু তাও কোনো কায়েদায়ে কুল্লিয়া নয়। অনেক সময় তাকরার ছাড়াও প্সড্ড আসে। তাই আমি আশা করি যে, হুযুর আমাকে এ ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করবেন।  


  

 

উত্তর

 

তালিবে ইলমীর প্রকৃতিই এই যে, পর্যায়ক্রমে জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে এবং ধীরে ধীরে পরিপক্কতা অর্জিত হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সকল বিষয় জানাও সম্ভব নয় আর প্রাথমিক কিতাবাদিতে তার আলোচনাও সম্ভব নয়। 

মাজীতেও লা-এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। আপনি যে আয়াত উল্লেখ করেছেন তার সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে আল্লামা ছামীন হালাবী (৭৫৬ হি.) বলেন- 

لا هنا دخلت على الماضي وهو مستفيض في كلامهم

আর তাকরার ছাড়াও লা আসার যে কথা আপনি বলেছেন তা-ও সঠিক এবং সেটাও ফসীহব্যবহার। তবে এ ব্যবহারটা কম। ফাররা ও যাজ্জাজ বলেন-

والعرب لا تكاد تفرد لا مع الفعل الماضي حتى تعيدها.

তাঁদের বক্তব্য এই যে, যেখানে বাহ্যত এমন দেখা যায় সেখানে উহ্যত হলেও একটা দ্বিত্ত বা তাকরার রয়েছে। যেমন-

فلا اقتحم العقبة

এখানে ১৭ নম্বর আয়াতের ইঙ্গিতে বাক্য এমন হবে-

فلا اقتحم العقبة ولا آمن

কিংবা যমখশরী যেমন বলেছেন-

هي منكرة في المعنى، لأن المعنى فلا اقتحم العقبة فلا فك رقبة ولا أطعم مسكينا، ألا ترى أنه فسر اقتحام العقبة بذلك.

الدر المصون 6/525؛ والكشاف 4/756

 

শেয়ার লিংক

মুহাম্মদ সাইদুর রহমান - খাজা মঈন উদ্দীন মাদরাসা, বাজার রোড, বরিশাল

প্রশ্ন

(ক) আমি জামাতে শরহে জামীর একজন ছাত্র। আমার প্রধান সমস্যা হল, আমি আরবী বলতে সক্ষম নই। যে কোনো বিষয়ে আরবীতে কিছু লেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। অথচ আমি দরসী কিতাব-আতত্বরিক ইলাল ইনশা অধ্যয়ন করেছি। এতে তেমন কোনো ফায়দা অনুভব করছি না। তাই কীভাবে আরবীতে বলা ও লেখায় পারদর্শী হতে পারব এবং কী পদ্ধতি অনুসরণ করলে আমার দরসী কিতাবটি হতে উপকৃত হতে পারব জানালে খুশি হব।

(খ) মুতালাআ আমি একদম বুঝি না। বারবার মুতালাআর পরও কোনো বিষয় আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় না। তাই কী করলে সহজে মুতালাআর মাধ্যমে কিতাব আয়ত্ত করা যায়। সামান্য আভাস দিলে ধন্য হব।

(গ) আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে আমার হেফয শক্তি মোটামুটি ভালো। কিন্তু স্মরণশক্তি একদম শূন্যের কোঠায়। শত চেষ্টা করলেও কোনো জিনিস স্মৃতিতে ধরে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। অবশ্য একটি পড়া বারবার পড়লে মনে থাকে। কিন্তু তাতে কি আমার পোষায়? এত বড় বড় কিতাব বারবার পড়ার সময়টা কোথায়? আশা করি, সুন্দর পরামর্শ দিয়ে উপকৃত করবেন।


উত্তর

(ক) এমনিতেও বিষয়টি পরিষ্কার, তাছাড়া আমিও ইতোপূর্বে একাধিক বার আরজ করেছি যে, লেখা ও বলা এবং রচনা ও বক্তৃতা এই বিষয়গুলো অনুশীলন-নির্ভর। শুধু কিতাবী যোগ্যতা কিংবা ব্যাকরণের জ্ঞান এসব বিষয়ে যথেষ্ট নয়। তাছাড়া এটাও অপরিহার্য নয় যে, প্রত্যেকের মধ্যেই  এই যোগ্যতা বিদ্যমান থাকবে।

আমাদের মনে রাখা কর্তব্য যে, মূল বিষয় হল কিতাব বোঝার যোগ্যতা এবং অন্যকে বোঝানো ও কিতাবের বিষয়গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপনের যোগ্যতা। এ দুটি যোগ্যতা যদি কারো মধ্যে থাকে তাহলে উপরোক্ত বিষয়ে রুচি ও স্বভাবের  যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও তা হাসিল করার জন্য পেরেশান হওয়া একেবারেই কাম্য নয়।

এরপরও যদি প্রয়োজন অনুপাতে এসব বিষয়ে যোগসূত্র গড়ে তুলতে চান তাহলে আতত্বরীক ইলাল আরাবিয়্যা ও আততামরীনুল কিতাবী আলাত ত্বরীক ইলাল আরাবিয়্যা-এ দুটো কিতাব সামনে রেখে অনুশীলন করুন। অন্তত দুজন একত্র হয়ে মুযাকারার আঙ্গিকে পড়তে থাকলে ইনশাআল্লাহ উপরোক্ত সবগুলো বিষয় সহজ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হচ্ছে, এ কাজে প্রতিদিন পনেরো মিনিটের অধিক ব্যয় করবেন না এবং এ পরামর্শও আপনার তালীমী মুরববীর অনুমতির ওপর মওকুফ থাকবে।

(খ) একদম বোঝেন না-এ কথা ঠিক নয়। যতটুকু বোঝেন দরসের পূর্বের মুতালাআয় অতটুকুই যথেষ্ট। তবে সাধারণভাবে না বোঝার প্রতিকারের জন্য তিনটি বিষয়ে মনোযোগী হওয়া কর্তব্য।

১. না-বোঝার কারণ চিহ্নিত করে তা ধীরে ধীরে দূর করার চেষ্টা করা।

২. না-বোঝার কষ্ট সহ্য করেও অধ্যয়ন অব্যাহত রাখা।

৩. আল্লাহর কাছে দুআ করতে থাকা।

(গ) বারবার পড়ার পর যদি আপনার স্মরণ থাকে তবে প্রমাণ হয় যে, আপনার মুখস্থ করার শক্তি ও মনে রাখার শক্তি দুটোই ঠিক আছে। এজন্য আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবেন। আর সব কিতাব বারবার পড়ার প্রয়োজন নেই। গুরুত্বপূর্ণ ও নির্বাচিত কিছু কিতাব বারবার পড়বেন। এটাই যথেষ্ট। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।  

শেয়ার লিংক

হাছানুযযামান - ফরিদাবাদ মাদরাসা, ঢাকা

প্রশ্ন

আমরা সোহবতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে আসছি। এ সম্পর্কে     উস্তাদের পরামর্শে আদাবুল ইখতেলাফ পাঠকালে সুন্দর আলোচনাও নজরে এসেছে।

আমি জানতে চাই, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাফাককুহ ফিদ্দীন-এর উদ্দেশ্যে মুরববী বা উস্তাদ থেকে কী পদ্ধতি অবলম্বন করার দ্বারা ফায়দা উঠানো যেতে পারে। চাই সেটা দাওরার পূর্বে হোক বা পরে।


উত্তর

আপাতত এটুকুই করুন যে, সকল কাজ আপনার তালীমী মুরববীর পরামর্শক্রমে করবেন এবং আপনার  উস্তাদগণের আচার-আচরণ থেকে আদাবুল মুআশারা শেখার চেষ্টা করবেন। সঙ্গে সঙ্গেমিশকাতুল মাসাবীহ-এর কিতাবুর রিকাক ও কিতাবুল আদব-এর হাদীসগুলো অধ্যয়নের সময় সেগুলো নিজের বাস্তব জীবন ও আচার-আচরণে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করবেন। এবং আগামীতেও এ বিষয়ে আপনার তালীমী মুরববীর সঙ্গে পরামর্শ ও নির্দেশনা-গ্রহণ অব্যাহত রাখবেন। 

শেয়ার লিংক