যিলহজ্ব ১৪৪৬ || জুন ২০২৫

মাহফুজ আলম - ডেমরা, ঢাকা

৬৭৩৪. প্রশ্ন

মসজিদে কোনো কোনো মুসল্লীকে দেখা যায়, তারা জামাতে নামায পড়ার সময় সামনের কাতার পূর্ণ না করেই পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের এই কাজ কি সঠিক? এতে কি কোনো অসুবিধা আছে?

উত্তর

সামনের কাতার পূর্ণ না করে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো নাজায়েয। হাদীস শরীফে সামনের কাতার ফাঁকা না রেখে কাতারগুলো একেক করে পূর্ণ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অনেক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং এ নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের ওপর হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হয়েছে।

এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন

خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ... فَقَالَ: أَلَا تَصُفُّوْنَ كَمَا تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ فَقُلْنَا: يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ: يُتِمُّوْنَ الصُّفُوْفَ الْأُوَلَ، وَيَتَرَاصُّوْنَ فِيْ الصَّفِّ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা কি সেইভাবে কাতারবদ্ধ হবে না, যেভাবে ফেরেশতাগণ তাদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ফেরেশতাগণ কীভাবে তাদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হন? তখন তিনি বললেন, তারা সামনের কাতারগুলো আগে পূর্ণ করেন এবং কাতারে মিলে মিলে দাঁড়ান। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩০)

আরেক হাদীসে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى فِيْ أَصْحَابِهِ تَأَخُّرًا فَقَالَ لَهُمْ: تَقَدَّمُوا فَأْتَمُّوا بِيْ، وَلْيَأْتَمَّ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ، لَا يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُوْنَ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ اللهُ.

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীগণের মধ্যে কাউকে কাতারের পেছনে দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা সামনে এগিয়ে আসো এবং আমার অনুসরণ করো। তোমাদের পেছনের (কাতারের) লোকেরা যেন তোমাদের অনুসরণ করে। এক শ্রেণির লোক থাকবে, যারা সবসময় নামাযে পেছনে থাকবে। আল্লাহ্ও তাদেরকে (তাঁর রহমত ইত্যাদি থেকে) পেছনে রাখবেন। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩৮)

আরেক হাদীসে এসেছে, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন

أتِمُّوْا الصَّفَّ المُقَدَّمَ، ثُمَّ الَّذِيْ يَلِيْهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِيْ الصَّفِّ المُؤَخَّرِ.

অর্থাৎ তোমরা সামনের কাতার পূর্ণ কর। তারপর এর পরের কাতার। কাতারে অপূর্ণতা থাকলে তা শেষের কাতারে থাকবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৭১)

তাই সামনের কাতার ফাঁকা রেখে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো যাবে না। সামনের কাতার পূর্ণ হলেই কেবল পেছনের কাতারে দাঁড়াবে।

তাছাড়া বিশেষভাবে প্রথম কাতারে নামায পড়ার সওয়াবও অনেক বেশি। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِيْ النِّدَاءِ  وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوْا عَلَيْهِ، لَاسْتَهَمُوْا.

অর্থাৎ আযান দেওয়া ও প্রথম কাতারে নামায পড়ায় কী (ফযীলত) রয়েছে তা যদি মানুষ জানত এবং তা হাসিল করার জন্য লটারি ছাড়া কোনো গত্যন্তর না থাকত, তাহলে তারা লটারির মাধ্যমে হলেও তা হাসিল করত। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৫)

অতএব প্রথম কাতারে জায়গা থাকা সত্ত্বেও পেছনে দাঁড়ানো নাজায়েয হওয়ার পাশাপাশি সওয়াব অর্জনের প্রতি বড় উদাসীনতার আলামতও বটে।

সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৯; বাস্তুল কাফ্ ফী ইতমামিছ্ ছফ্ (আলহাবী লিল ফাতাবী), সুয়ূতী ১/৬৮; রদ্দুুল মুহতার ১/৫৭০

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন