আসাদুল্লাহ - মিরপুর, ঢাকা
৬৭৩১. প্রশ্ন
আমরা জানি, স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ওপর চার মাস দশ দিন শোক পালনের বিধান আছে। এছাড়া নিকটাত্মীয় অন্য কেউ মারা গেলে তিন দিন শোক পালনের যে কথা আছে, তা কি শুধু নারীদের জন্য, নাকি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এ শোক পালনের সুযোগ আছে?
আরও জানার বিষয় হল, স্বামী মারা গেলে যেভাবে নারীরা সাজসজ্জা ত্যাগ করার মাধ্যমে শোক পালন করে, এক্ষেত্রেও কি সেভাবেই তা পালন করতে পারবে? পুরুষরা কীভাবে শোক পালন করবে? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
উত্তর
পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজন কেউ মারা গেলে তার জন্য নারী-পুরুষ সকলেরই তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করা জায়েয আছে। তিন দিনের বেশি শোক পালন করা জায়েয নয়। তিন দিনের এ শোক পালনের বিষয়টি শুধু নারীদের জন্যই নয়; বরং পুরুষরদের জন্যও এর সুযোগ আছে।
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. থেকে বর্ণিত–
أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْهَلَ آلَ جَعْفَرٍ ثَلَاثاً أَنْ يَأتِيَهُمْ، ثُمَّ أَتَاهُمْ، فَقَالَ: لَا تَبْكُوْا عَلَى أَخِيْ بَعْدَ الْيَوْمِ.
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাফর রা.-এর পরিবারকে (তার শাহাদাতের পর) তিন দিন শোক পালনের জন্য সময় দেন। এরপর তিনি সেখানে গিয়ে বলেন, আজকের পর তোমরা আর আমার ভাইয়ের জন্য কাঁদবে না। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪১৮৯)
ইমামুল হারামাইন জুওয়াইনী রাহ. শোক পালনإحداد) ) সংক্রান্ত হাদীস উল্লেখ করে বলেন–
ثُمَّ هَذَا التَّحَزُّنَ فِيْ هَذِهِ الْمُدَّةِ لَا يَتَخَصَّصُ بِالنِّسْوَةِ.
এ সময়ে (তিন দিনের) এই শোক পালন কেবল নারীদের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। (নিহায়াতুল মাতলাব ১৫/২৪৭)
আর এ শোক পালন দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নারীরা চাইলে এসময় সাজসজ্জা পরিত্যাগ করতে পারবে। আর পুরুষগণ শোক পালনার্থে এই তিন দিন মৃতের বিয়োগ ব্যথায় ঘরে অবস্থান করতে পারবে। এছাড়া সকলেই মৃতের জন্য কান্না আসলে বিলাপ না করে কান্নাকাটি ও দুঃখ ভারাক্রান্ত ভাব প্রকাশ করতে পারবে। মৃতের জন্য শোক পালন দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু এতটুকুই; এর অতিরিক্ত কিছু নয়।
তবে কারও মৃত্যুতে তিন দিনের এ শোক পালন শুধুই একটি মুবাহ ও বৈধ কাজ; সুন্নত বা মুস্তাহাব কিছুই নয়।
এক্ষেত্রে ভালোভাবে মনে রাখতে হবে যে, শোক প্রকাশের ক্ষেত্রে বিলাপ করা বা হা-হুতাশ করে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, কপাল চাপড়ানো বা এজাতীয় বাড়াবাড়ি করা সম্পূর্র্ণ নাজায়েয ও গুনাহ। এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া বর্তমানে সমাজে শোক পালনের যে প্রথা আবিষ্কার হয়েছে, যেমন, কালো পোশাক পরা, কালো পতাকা টানানো, পতাকা অর্ধনমিত রাখা, বছর বছর শোক দিবস পালন করা, বার্ষিকী পালন করা– এসবই কুসংস্কার ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের এ ধরনের গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
* >التجنيس والمزيد< ২/২৮৬-২৯০ : الجلوس للمصيبة ثلاثة أيام للرجال، جاءت الرخصة فيه، وتركه أحسن؛ لقوله: لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تحد على ميت فوق ثلاثة أيام، إلا على زوجها أربعة أشهر وعشرا، والإخفاء أحسن. ... ويكره النوح والصياح؛ لما روي أن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى عن الصوتين الأحمقين الفاجرين: صوت النائحة والمغنية، وأما البكاء فلا بأس به. ... ويكره الجلوس على باب الدار للمصيبة، فإن ذلك عمل أهل الجاهلية، ... ويكره تمزيق الثياب، وتخميش الوجه؛ لأن النبيصَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى عن ذلك.
–ফাতহুল কাদীর ৪/১৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আলমুজতাবা ২/১১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৩০২, ৪/১৯৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৪১