জুমাদাল উলা ১৪৪৩ || ডিসেম্বর ২০২১

মারূফ হুসাইন - টাঙ্গাইল

৫৫৯৭. প্রশ্ন

আমার স্ত্রীর সঙ্গে কোনো বিষয়ে ঝগড়া হলেই সে শুধু বলত, আমাকে ভালো না লাগলে তালাক দিয়ে দেন, অন্য কারো সাথে সংসার করেন। একদিন ঝগড়ার সময় সে বারবার ঐ কথাটি বলছিল। একপর্যায়ে আমি তাকে বলি, ঠিক আছে শুনে রাখো, আমি তোমাকে তালাক দিলাম, আমি তোমাকে তালাক দিলাম। উক্ত কথার দ্বারা এক তালাক দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তাকে বোঝানোর জন্য কথাটি দুই বার বলেছিলাম। এ ঘটনার এক মাস পর একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার স্ত্রী আবার একই ধরনের কথা বলে। সেদিনও আমি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বলে ফেলি, আজকে তোমাকে আবার তালাক দিলাম।

হুজুরের কাছে জানার বিষয় হল, এই কথাগুলো দ্বারা আমার স্ত্রীর উপর কয় তালাক পতিত হয়েছে? এখন কি আমরা একসঙ্গে ঘর-সংসার করতে পারব?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম ঘটনায় যদি বাস্তবেই আপনার এক তালাক দেওয়াই উদ্দেশ্যে থাকে তবে ঐ ঘটনার কারণে আপনার স্ত্রীর উপর একটি তালাক পতিত হয়েছে। পরবর্তীতে একত্রে বসবাসের কারণে রাজআত হয়ে গেছে। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পুনর্বহাল হয়ে গেছে।

আর দ্বিতীয় ঘটনার কারণে আরো একটি অর্থাৎ দ্বিতীয় তালাক পতিত হয়েছে। অবশ্য এ তালাকটিও রাজঈ তালাক হয়েছে। তাই এখন আপনারা পুনরায় সুষ্ঠুভাবে ঘর-সংসার করতে চাইলে আপনি ইদ্দতের মধ্যে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবেন। আর ফিরিয়ে নেয়ার উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, ইদ্দতের ভেতর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করা। যেমন, আমি তোমাকে ফেরত নিলাম বলা।

আর যদি আপনি ইদ্দতের ভেতরে (ঋতুমতী মহিলার জন্য তিনটি ঋতু্স্রাব অতিবাহি হওয়া পর্যন্ত। আর অন্তঃসত্ত্বা মহিলার জন্য সন্তান প্রসব পর্যন্ত) ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যক্ত না করে থাকেন তাহলে ইদ্দত শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে আবার ঘর-সংসার করতে চাইলে নতুন মহর ধার্য করে যথানিয়মে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, আপনার স্ত্রীকে আপনি ইদ্দতের ভেতর ফিরিয়ে নেন বা ইদ্দত শেষ হওয়ার পর পুনরায় বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীকে গ্রহণ করেন, উভয় ক্ষেত্রে আপনি পরবর্তীতে কখনো তাকে এক তালাক দিলে পূর্বের দুই তালাকের সাথে মিলে তিন তালাক হয়ে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে নতুন করে বিবাহ করেও একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তাই ভবিষ্যতে তালাকের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

উল্লেখ্য, তালাক হল বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্নকারী চূড়ান্ত পদক্ষেপ। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা জটিল হয়ে পড়লে উভয়ের জন্য তা থেকে নিষ্কৃতির সর্বশেষ পথ। তাই অত্যন্ত ভেবেচিন্তে এবং পরামর্শ সাপেক্ষে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। কোনো কথা বা সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তালাক দেওয়া অন্যায়। এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১৬২, ২৮৩, ২৮৮, ২৯৫; আলবাহরুর রায়েক ৩/২৩৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৫৫, ৪৭০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২৯৩, ৩৯৭

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন