জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩০ || জুন ২০০৯

মুহাম্মাদ আবুল হোসেন - গোপালগঞ্জ

১৬৭৪. প্রশ্ন

বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক মসজিদে জামাত শুরুর আগে ইমাম সাহেব ঘোষণা করেন, যাদের মোবাইল আছে তা বন্ধ করে দিন। কিন্তু আমাদের এলাকার মাদরাসা-মসজিদে এই ঘোষণা হয় না। ফলে যেসব মুসল্লী মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যান তাদের রিং টোনের আওয়াজে মসজিদের পরিবেশ বিঘ্নিত হয় এবং নামাযের একাগ্রতা নষ্ট হয়। একদিন মসজিদের ইমাম সাহেব নামাযের পূর্বে মোবাইল বন্ধ করার অনুরোধ করলেন। এতে এক স্থানীয় ভদ্রলোক খুব রেগে গেলেন এবং মোবাইল বন্ধের এলান দেওয়ার অপরাধে ইমাম সাহেবকে অনেকক্ষণ বকাবকি করলেন। ফলে পরবর্তীতে এ ধরনের এলান করতে আর কেউ সাহস করেনি। এখন আমার প্রশ্ন এই যে, জামাত শুরুর আগে মোবাইল বন্ধ করার এলান করা কি অপরাধ হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

ঈমানের পরই নামাযের মর্যাদা। এটি আল্লাহ তাআলার সামনে দন্ডায়মান হয়ে তাঁর সাথে কথোপকথনের এক অপূর্ব মুহূর্ত। এ কারণেই নামাযের খুশু-খুযু ও একাগ্রতার প্রতি যেভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে অন্য কোনো ইবাদতের বেলায় তেমন করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘ঐ সকল মুমিন সফলকাম, যারা নিজেদের নামাযে বিনম্র।’ (সূরা মুমিনূন : ২) অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘সেসব নামাযীদের জন্য দুর্ভোগ যারা তাদের নামায সম্বন্ধে উদাসীন।’ (সূরা মাউন : ৪-৫)

এ কারণে ইমাম, মুসল্লী সকলের কর্তব্য হল নামাযের খুশু-খুযু তথা একাগ্রতার প্রতি সবিশেষ লক্ষ রাখা। বর্তমানে মোবাইলের রিং টোন দ্বারা যেহেতু মসজিদের আদব ক্ষুণ্ণ হয় এবং নামায বা অন্য ইবাদতের একাগ্রতা বিনষ্ট হয়  তাই মসজিদে প্রবেশ করার আগেই মোবাইল বন্ধ করে নিবে কিংবা সাইলেন্ট দিয়ে রাখবে। এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা সকল মুসল্লীদের জন্য জরুরি। যেন কোনো অবস্থাতেই মসজিদে প্রবেশ করার পরও মোবাইল খোলা না থাকে। এরপরও অনেকে মোবাইল বন্ধ করতে ভুলে যায় তাই নামায শুরু করার আগে ইমাম বা মুয়াজ্জিন সাহেব মোবাইল বন্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তা খুবই ভালো কাজ হিসেবে গণ্য হবে। এভাবে এলান করা নিষিদ্ধ তো নয়ই; বরং প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

হাদীস ও ফিকহের প্রখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহ. এবং ইমাম নববী রাহ. একটি হাদীস থেকে প্রমাণ করেছেন যে, জামাত শুরু করার পূর্বে ইমাম সাহেব নামাযের স্বার্থে যে কোনো কথা বলতে পারেন।

অতএব প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী, মোবাইল বন্ধের এলান করার কারণে ইমাম সাহেবের উপর আপত্তি করা ঠিক হয়নি। না জেনে এভাবে আপত্তি করা অন্যায় হয়েছে।

-সহীহ মুসলিম ১/১৮১; ইকমালুল মু’লিম ২/৩৪৮; ফাতহুল বারী ২/১৪৭; উমদাতুল কারী ৫/২৫৫;আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৮৯, ৫৬৮; হাশিয়াতুত্তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৪৬

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন