যিলকদ ১৪৪০ || জুলাই ২০১৯

জালাল সরকার - নবীনগর, বি. বাড়িয়া

৪৮২৩. প্রশ্ন

মুহতারাম, ফরহাদ আহমদ আমার ছোট ভাই। সে আমেরিকা থাকে। তার উপার্জিত টাকা আমার কাছেই পাঠিয়ে থাকে। আমি সে টাকা দিয়ে ব্যবসা করি এবং পরিবারের ভরণপোষণ করি। ফরহাদ একবার লটারীতে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পায়। লটারীর এসব টাকা সে  আমার নিকট পাঠিয়ে দিলে আমি সে টাকা থেকে কিছু ব্যবসায় বিনিয়োগ করি আর কিছু জমি ক্রয় করি এবং নিজেও কিছু খরচ করি।

এখানে উল্লেখ্য যে, আমি এক আলেমকে জিজ্ঞেস করে জেনেছিলাম যে, কাফের মুলুকে পাওয়া লটারীর  টাকা  বৈধ, এতে সুদ নেই। তবে তা শুধু ফরহাদের জন্য জায়েয। কিন্তু এখন সঠিক মাসআলা জেনেছি যে, মূলত ওই টাকা ফরহাদের জন্যও নাজায়েয। কিন্তু এর মধ্যে আমি লটারীর টাকা ও পূর্বে পাঠানো টাকা দিয়ে বেশ মোটা অংকের টাকা ব্যয়ে একটি জমি ও দোকান ক্রয় করি। দ্বিতীয়ত সংসারের ভরণপোষণও এ টাকা থেকেই করেছি। তৃতীয়ত যাকাত, সাধারণ দান-খায়রাতও এ টাকা থেকেই দিয়েছি।

এ অবস্থায় কী পন্থা অবলম্বন করলে উক্ত টাকা ও সম্পদ বৈধ হবে? আর এ টাকা থেকে দেওয়া যাকাত ও দান-খায়রাতের কী বিধান?

উল্লেখ্য, আমাদের এক বিধবা খালা ও খালাতো ভাই-বোন আছে। এখন তাদেরকে কি পুরো টাকা দিয়ে দেওয়া যাবে? কেননা একে  তো তারা গরিব আবার এক খালাতো বোন বিয়ের উপযুক্ত। টাকাটা দিলে তাদের অনেক উপকার হবে।

উত্তর

‘কাফের মুলুকের লটারীর টাকা বৈধ, এতে সুদ নেই’  প্রশ্নের একথা সহীহ নয়। সুতরাং ফরহাদ ও তার পরিবারের জন্য উক্ত লটারীর টাকা ভোগ করা সম্পূর্ণ হারাম হয়েছে। তাই উক্ত লটারী থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে যেসকল জমি ও দোকান ক্রয় করেছেন এবং এছাড়া আরো অন্যান্য খাতে যা খরচ করেছেন, তা নাজায়েয হয়েছে। এখন উক্ত জমি ও দোকান থেকে বৈধভাবে উপকৃত হতে চাইলে এবং তা হালাল সম্পদে রূপান্তর করতে চাইলে; উক্ত জমি ও দোকানে লটারীর যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করেছেন এবং এতদিন দোকান থেকে যা লাভ হয়েছে তা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। এভাবে মূল টাকা সদকা করে দিলে উক্ত সম্পদ বৈধ বলে গণ্য হবে। আর ঐ টাকা থেকে পরিবারের জন্য যা খরচ করেছেন তাও হিসাব করে সদকা করে দিতে হবে।

উল্লেখ্য যে, উক্ত লটারীর টাকা থেকে গরীবদেরকে বা কোন মাদরাসার গোরাবা ফান্ডে যা দান-সদকা করা হয়েছে সে পরিমাণ টাকা আবার নতুন করে সদকা করা লাগবে না। তা আদায় হয়ে গেছে।

আপনাদের বিধবা খালা ও খালাতো ভাই-বোন যদি যাকাত গ্রহণের যোগ্য হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকেও তাদের প্রয়োজন অনুপাতে ঐ টাকা থেকে দিতে পারবেন। তবে একত্রে এত বেশি টাকা দেওয়া যাবে না যে, বর্তমান প্রয়োজন পূর্ণ হওয়ার পরও তাদের কাছে নেসাব পরিমাণ টাকা থেকে যায়। সুতরাং তাদেরকে দেওয়ার পর বাকি টাকা অন্যান্য গরীব-মিসকীনদের দিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৭৮, ৩৬৮৫; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, বর্ণনা ২৩৫৯৩; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/৪৬৫; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২১৩; আলবাহরুর রায়েক ৮/২০১; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৫; বযলুল মাজহুদ ১/১৪৮

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন