সফর ১৪৩৭ || ডিসেম্বর ২০১৫

মাওলানা মোশারফ হোসেন - ডিওএইচএস মসজিদ, ঢাকা

৩৫৩৩. প্রশ্ন

ফজরের নামাযের জামাত শুরু হওয়ার পর কোনো মুসল্লি যদি মসজিদে এসে বারান্দায় অথবা মসজিদের পেছনের দিকে ফজরের সুন্নত নামায পড়তে চান তা কি তার জন্য জায়েয হবে? কুরআন ও হাদীসের আলোকে মাসআলাটি জানার আগ্রহ প্রকাশ করছি। এ ব্যাপারে কোনো কোনো ব্যক্তি মত প্রকাশ করে থাকেন যে, ‘‘ফরয নামাযের জন্য ইকামত দেওয়া হয়ে গেলে অন্য কোনো নামায বা সুন্নত নামায (বিশেষ করে ফজরের সুন্নত) সম্পূর্ণ হারাম, সুন্নত বিরোধী।’’এ সম্পর্কে তারা একটি লিফলেট প্রচার করে থাকে। যাতে তাদের স্বপক্ষে কয়েকটি হাদীসও উল্লেখ আছে। উক্ত লিফলেটটি প্রশ্নের সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হল।


উত্তর

কোন ব্যক্তি যদি ফজরের ইকামত চলাবস্থায় বা জামাত চলাবস্থায় মসজিদে আসে আর তার কাছে মনে হয় যে সুন্নত পড়ে অন্তত এক রাকাত পাওয়া যাবে তাহলে এ ব্যক্তির জন্য মূল জামাতের কাতার থেকে দূরে বারান্দায় বা খুঁটির আড়ালে ফজরের সুন্নত আদায় করা জায়েয আছে।

একাধিক সাহাবা তাবেয়ীন থেকে ইকামত শুরু হওয়ার পর জামাত চলাবস্থায় ফজরের সুন্নত আদায় করা প্রমাণিত আছে। যেমন:

এক. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদআবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা. একবার সাঈদ ইবনে আসের নিকট থেকে বের হলেন। ইতিমধ্যে ফজর নামাযের ইকামত হয়ে গেল। তখন ইবনে মাসউদ রা. দুরাকাত সুন্নত পড়ে লোকদের সাথে নামাযে শরীক হলেনআর আবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা. কাতারে প্রবেশ করলেন। (শরহু মাআনীল আসার,১/২৫৫)

দুই. আবু মিজলায রাহ. বলেন আমি ফজর নামাযে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.-এর সাথে মসজিদে এমন সময় প্রবেশ করলাম যে ইমাম নামায পড়াচ্ছিলেনতখন ইবনে আব্বাস রা. দুরাকাত সুন্নত পড়ে ইমামের সাথে শরীক হলেন। আর ইবনে ওমর রা. ইমামের সাথে নামাযে শরীক হয়ে গেলেন। ইমাম সালাম ফেরানোর পর তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকলেন অতপর উঠে দুরাকাত নামায আদায় করলেন। (প্রাগুক্ত ১/২৫৫)

তিন. আবু দারদা রা. বলেন আমি একদা লোকদের নিকট এমন সময় আসি যে তারা কাতারবদ্ধ হয়ে ফজর নামায আদায় করছিল। আমি তখন ফজরের দুরাকাত সুন্নত আদায় করি অতপর তাদের সাথে নামাযে শরীক হই। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহাদীস ৬৪৮২

চার. নাফে রাহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনইবনে ওমর রা. একদা ফজর নামাযের জন্য পোশাক পরিধান করছিলেন। ইতিমধ্যে তিনি ইকামত শুনতে পেলেনতিনি তখন কামরাতে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করলেন অতপর বের হয়ে লোকদের সাথে ফরয আদায় করলেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকহাদীস ৪০১৯

পাঁচ. আবু উসমান নাহদী রাহ. বলেন আমরা ওমর রা.-এর নিকট ফজরের সুন্নত না পড়ে এসে যদি দেখতাম যে তিনি ফজরের জামাতে আছেন তাহলে আমরা মসজিদের শেষ দিকে এসে সুন্নত পড়ে নিতাম অতপর জামাতে শরীক হতাম। -শরহু মাআনীল আছার ১/২৫৬

ছয়. বিখ্যাত তাবেয়ী মাসরূক রাহ. মসজিদে প্রবেশ করলেনতখন লোকেরা ফজর নামায পড়ছিল,তিনি এক কোনায় ফজরের দুই রাকাত সুন্নত আদায় করেন অতপর জামাতে শরীক হন।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহাদীস ৬৪৭২

সাত. মুজাহিদ রাহ. বলেনযখন তুমি মসজিদে এসে লোকদেরকে ফজরের জামাতে দেখতে পাবে,আর তুমি ফজরের সুন্নত পড়নি তাহলে তুমি তা পড়ে নাও যদিও তোমার প্রথম রাকাত ছুটে যাওয়ার আশংকা হয়। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহাদীস ৬৪৭৯

তাবেয়ীদের মধ্যে আরো যাদের থেকে ফজরের জামাত চলাবস্থায় সুন্নত পড়া প্রমাণিত আছে তারা হলেনসাঈদ ইবনে জুবাইরহাসান বসরীইকরিমাইবরাহীম নাখায়ী রহ.। ইবনে বাত্তাল রহ. উমর রা. এর  আমলও এমন ছিল বলে উল্লেখ করেছেন।

কোনো কোনো সাহাবীতাবেয়ী ইকামত বা জামাত চলাবস্থায় মসজিদের অভ্যন্তরে ফজরের সুন্নত না পড়লেও মসজিদের বাহিরে বা মসজিদের দরজা সংলগ্ন স্থানে পড়ে নিতেন। তন্মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.হাম্মাদআব্দুর রহমান ইবনে মাকিলআতাইবরাহীম নাখায়ী রাহ. উল্লেখযোগ্য।

উপরোক্ত সাহাবাতাবেয়ীদের আছারআমল ও ঘটনাবলী থেকে একথা সুপ্রমাণিত যেফজরের ইকামত চলার সময় বা ইকামতের পরও মসজিদের বাহিরে বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের বারান্দায় বা কোনায় কিংবা খুঁটির আড়ালে ফজরের সুন্œত পড়া জায়েয আছে। মহান পূর্বসুরী এ সকল সাহাবাতাবেয়ীদের বক্তব্য ও আমল থাকা সত্তে¡ও হাদীসের মর্ম ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ না বুঝে ফজরের সুন্নত পড়াকে নাজায়েযহারাম বা বিদআত বলা বড় অন্যায়। এমন কথা প্রকারান্তরে সাহাবা-তাবেয়ীদের আমলকেও বিদআত ও হারাম বলার নামান্তর।

এ কথা সত্য যেকিছু সংখ্যক সাহাবা   إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইকামত শুরু হওয়ার পর ফজরের সুন্নত পড়তেন নাবরং জামাতে শরীক হয়ে যেতেন। যেমনআবু হুরায়রা রা.হুযায়ফা রা. তাবেয়ীদের মধ্যে ইবনে সীরীনইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীরসহ আরো প্রমুখ। কিন্তু যে সকল সাহাবাতাবেয়ীন ইকামত অবস্থায় বা পরে মসজিদে বা মসজিদের বাহিরে ফজরের সুন্নত পড়েছেন তাদেরকে তারা কোনোরূপ তিরস্কার করেননি। যেমন পূর্বে উল্লেখিত ইবনে মাসউদআবু মুসা আশআরী ও হুযায়ফা রা.-এর ঘটনা এবং আবু মিজলাযের বর্ণনায় ইবনে ওমর ও ইবনে আব্বাসের ঘটনা এবং আবু উসমান নাহদীর বর্ণনায় ওমর রা.-এর ঘটনা। এ সময় ফজরের সুন্নত পড়া যদি নাজায়েযহারাম বা বিদআতই হত তাহলে সাহাবা কেরাম অবশ্যই এমন নাজায়েয ও হারাম কাজ করতে বাধা দিতেন। কেননা সাহাবা কেরাম কোনো নাজায়েয বা হারাম কাজকে কিছুতেই বরদাশত করতেন না।

মূলত এ মাসআলায় শুরু থেকেই সাহাবা তাবেয়ীনের মাঝে দুধরনের মত ও আমল চালু ছিল। তাদের এক জামাত إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইকামত শুরু হওয়ার পর কোন নামাযের পূর্বে সুন্নত পড়তেন না। এমনকি ফজরের সুন্নতও না।

পক্ষান্তরে অনেক সাহাবা ও তাবেয়ীন ফজরের সুন্নত অন্য সকল সুন্নত অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এবং বিভিন্ন দিক থেকে ফজরের সুন্নত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়ার কারণে তারা ইকামত শুরু হওয়ার পরও তা আদায় করে নিতেন এবং إذا أقيمت الصلاة فلا صلاة إلا المكتوبة এ হাদীসের নিষেধাজ্ঞা থেকে ফজরের সুন্নতকে ভিন্ন মনে করতেন।

হাদীস শরীফে এসেছে :

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনফজরের দুই রাকাত (সুন্নত) দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। -সহীহ মুসলিমহাদীস ৭২৫

দুই.  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নতকে অধিক গুরুত্ব দিতেন যতটা না অন্য কোনো নফল বা সুন্নতকে গুরুত্ব দিতেন। -সহীহ বুখারীহাদীস ১১৬৩

এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা ফজরের সুন্নতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

উপরোক্ত বর্ণনাগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে অনেক সাহাবী ইকামত শুরু হওয়ার পর অন্য নামায পড়ার নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে হাদীসটিকে এক্ষেত্রে অপ্রযোজ্য মনে করতেন। তারা বরং ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্য চার ওয়াক্তে ইকামতের সময় কোনো ধরনের সুন্নত-নফল শুরু না করার সাথে হাদীসটির বক্তব্য সীমাবদ্ধ রেখেছেন। আর ফজরের সুন্নত সম্পর্কিত হাদীসের কারণে তারা ইকামত শুরু হলেও ছোট সূরা দিয়ে অল্প সময়ের ভিতরে তা আদায় করে নিতেন। এতে উভয় হাদীসের উপরই আমল হয়ে যেত।

অবশ্য জামাত শুরু হওয়ার পর ভিন্ন নামায পড়ার দ্বারা যেন তার প্রতি অবজ্ঞা জাতীয় কিছু বোঝা না যায় এজন্য এ সুন্নত পড়তে বলা হয়েছে নিজ ঘরে বা মসজিদের বারান্দায় অথবা অনেক বড় মসজিদ হলে জামাতের স্থান থেকে অনেক দূরে পিছনে গিয়ে কোনো খুটির আড়ালে। যদি তৎক্ষণাৎ এমন জায়গা না পাওয়া যায় তাহলে ঐ সময় সুন্নত না পড়ে বরং জামাতেই শরীক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর সুন্নত পড়ে নিবে।

দ্বিতীয় বিষয় হলকোনো ব্যক্তি যদি ফরযের পূর্বে সুন্নত পড়তে না পারে তাহলে সে তা কখন আদায় করবে?

এক্ষেত্রে দলীল-প্রমাণের আলোকে শক্তিশালী মত হলএ ব্যক্তি ফজরের সুন্নত সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে। ফরযের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে আদায় করবে না। হাদীস শরীফে এসেছে:

এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেনযে ব্যক্তি ফজরের সুন্নত আদায় করতে পারেনি সে যেন তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নেয়। -জামে তিরমিযীহাদীস ৪২৩

দুই. স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে তিনি সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নিতেন।

যেমন বিশুদ্ধ সূত্রে আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছেএকবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ঘুমের কারণে পড়তে পারেননিতিনি তা সূর্যোদয়ের পর আদায় করে নিয়েছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহহাদীস ১১৫৫

তিন. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন এবং আসরের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। -জামে তিরমিযীহাদীস ১৮৩

এ হাদীসে ব্যাপকভাবেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে ফজরের সুন্নতও শামিল। এ থেকে ফজরের সুন্নতকে বাদ দেয়ার সহীহ ও নির্ভরযোগ্য কোনো  হাদীস নেই। ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেনসাহাবা ও তাদের পরবর্তী অধিকাংশ ফকীহের মত হল,তারা ফজর ও আসরের পর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে ফরযের কাযা ছাড়া অন্য কোনো নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন।

তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের আমল ও নির্দেশনা এবং ঐ সময়ে সুন্নত নফল আদায়ের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার হাদীস এবং সাহাবা তাবেয়ীনের অধিকাংশের বক্তব্য ও আমল দ্বারা শক্তিশালীভাবে প্রমাণিত যেফজরের সুন্নত ফরযের আগে পড়তে না পারলে সূর্যোদয়ের আগে তা পড়বে নাবরং সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে।

আর প্রশ্নপত্রের সাথে সংযুক্ত লিফলেটে ফরযের পর সূর্যোদয়ের আগে সুন্নত পড়ার স্বপক্ষে যে হাদীস পেশ করা হয়েছে সনদের বিচারে তা সহীহ নয়। খোদ ইমাম তিরমিযী রাহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেছেনএ হাদীসের সনদ মুত্তাসিল নয়। হাদীসের রাবী মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত তাইমী রাহ. কায়েস রাহ. থেকে কোনো হাদীস শুনেননি। সে মতে এ হাদীসটি منقطع যা পূর্বোক্ত মারফু মুত্তাসিল হাদীসের মোকাবেলায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

আর বায়হাকীর রেওয়ায়েতের বর্ধিত অংশ ফজরের দুরাকাতও পড়া যাবে না” দলীলযোগ্য নয়। কেননা মুহাদ্দিসীনে কেরামের বক্তব্য অনুযায়ী এ অংশটি সহীহ নয়। স্বয়ং ইমাম বায়হাকী রাহ. এ হাদীসটি উল্লেখ করার পর বলেনআবু আহমাদ বলেনমুসলিম ইবনে খালিদের সূত্রে আমর থেকে এ হাদীস যারা বর্ণনা করেছেন ইয়াহইয়া ইবনে নসর ব্যতিত অন্য কেউ তার বর্ণনায় এ অতিরিক্ত অংশ উল্লেখ করেছে বলে আমি জানি না। তিনি আরো বলেনবলা হয়ে থাকে যেআহমদ ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন নসর ইবনে  হাজিব থেকে! কিন্তু এটা ভুল (وهم)

এ ছাড়া নসর ইবনে হাজিব আল মারওয়াযী শক্তিশালী রাবী নন। তার পুত্র ইয়াহইয়াও অনুরূপ। (সুনানে কুবরাবাইহাকী ২/৪৮৩)

প্রকাশ থাকে যেলিফলেটে একটি মাসআলা বলা হয়েছে যেমসজিদে এসে যদি দেখা যায় যে জামাতের দুই/এক মিনিট সময় বাকি আছে তাহলে সুন্নত নামায শুরু করবে না।

প্রশ্ন হলএটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিতএ ধরনের কোনো কথা কি সাহাবা তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে?

হাদীস শরীফে তো ইকামত শুরু হলে সুন্নত নফল শুরু করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইকামত শুরুর দুই/ এক মিনিট আগে থেকে সুন্নত নফল শুরু করা যাবে না -এমন কথা তো হাদীস আসারে নেই। তিনি কী করে তা বললেন?

এর চেয়েও অধিক মনগড়া কথা হল সুন্নত পড়া অবস্থায় যদি একামত শুরু হয়ে যায় আর সুন্নত আদায়কারী ব্যক্তি প্রথম রাকাতে থাকে বা মাত্র প্রথম রাকাত শেষ হলো তাহলে নামায ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হবেন” এটা কোন হাদীস দ্বারা প্রমাণিতএটা তো বরং আল্লাহ তাআলার নির্দেশনাولا تبطلوا أعمالكم(তরজমা. আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না) এর ব্যাপকতার বিরোধী।

ইমাম জাসসাস রাযী রাহ. বলেনএই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যেযে ব্যক্তি নামাযরোযাহজ্বসহ যে কোনো সওয়াবের কাজ শুরু করেছে তা পূর্ণ করার আগে বাতিল করা জায়েয নয়। (আহকামুল কুরআন ৩/৩৯৩)

অনুরূপ কথা ইমাম কুরতুবী রাহ.ও বলেছেন। (দেখুনআল জামে লিআহকামিল কুরআন ১৬/১৬৮)

ইবনে কুদামা রাহ. বলেননফল পড়া অবস্থায় একামত হয়ে গেলে এবং জামাত ছুটে যাওয়ার আশংকা না হলে তা পূর্ণ করবেতা বাতিল করবে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেনولا تبطلوا أعمالكم   (আর তোমরা তোমাদের আমলকে বাতিল করে দিয়ো না।)

-আলমুগনী ২/১২০; শরহু মুশকিলিল আছার, হাদীস ৪১৩৬, ১০/৩২৮; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৯৩৮৫; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ২৩৯৬

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন