যিলহজ্ব ১৪৩৫ || অক্টোবর ২০১৪

এইচএমএস - সিদ্ধেশ্বরী

৩২১১. প্রশ্ন

 

আমার ৩ মেয়ে ১ ছেলে। আমি ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে প্রত্যেক মেয়েকে পঞ্চাশ হাজার এবং ছেলেকে ১ লক্ষ টাকা করে দিচ্ছি। এখন জানার বিষয় হল, আমার জীবদ্দশায় এভাবে ছেলেকে মেয়েদের দ্বিগুণ টাকা দেওয়া শরীয়তসম্মত হচ্ছে কি? যদি ছেলেকে মেয়ের সমান সমান দিতে হয় সেক্ষেত্রে ছেলের বউকেও সমপরিমাণ টাকা দিতে পারব কি?


 

উত্তর

 

আপনি ছেলে মেয়েদের যে টাকা দিয়ে আসছেন তা কি তাদের প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের জন্য দিচ্ছেন নাকি উপঢৌকন ও হাদিয়াস্বরূপ দিচ্ছেন এ বিষয়টি প্রশ্নে উল্লেখ করেননি। 

যদি উক্ত টাকা তাদের প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের জন্য দিয়ে থাকেন তাহলে তাদের প্রয়োজন অনুপাতে কমবেশি করে প্রদান করতে কোনো অসুবিধা নেই। এ অবস্থায় তাদের প্রয়োজনই মুখ্য থাকবে। তাই এক্ষেত্রে সমতা রক্ষার প্রশ্ন আসবে না। কিন্তু যদি তাদেরকে উপহার বা হাদিয়া হিসেবে দিয়ে থাকেন তাহলে জীবদ্দশায় সন্তানদের হাদিয়া দেওয়ার নীতিমালা অনুযায়ী ছেলে-মেয়েকে সমান সমান দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে মীরাসের নীতি অর্থাৎ ছেলেকে মেয়ের দ্বিগুণ দেওয়ার নীতি প্রযোজ্য হবে না।

অবশ্য সন্তানদের কারো দ্বীনদারী, উন্নত আখলাক বা বাসত্মব প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য করে কিংবা মা-বাবার খেদমত ইত্যাদির কারণে কিছু বেশি দিতে চাইলে সেটারও সুযোগ আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়া হাদিয়ার ক্ষেত্রে তারতম্য করা ঠিক নয়। কেননা হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তানদেরকে হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন।

নুমান ইবনে বাশীর রা. বলেন, আমার পিতা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাক্ষী রেখে আমাকে একটি জিনিস হাদিয়া দিবেন। তখন তিনি আমার পিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সে ছাড়া তোমার কি আর কোনো সন্তান আছে? তিনি বললেন, জ্বী, আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৮৩৫৯)

সহীহ বুখারীর একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানদের হাদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা কর। (সহীহ বুখারী ১/৩৫২)

সুতরাং হাদিয়া বা উপহার দিতে চাইলে আপনার ছেলে-মেয়েদের মাঝেও সমতা রক্ষা করে দেওয়াই সমীচীন হবে। অবশ্য ছেলেকে বেশি দেওয়ার পিছনে যদি যথাযথ কারণ থাকে সেক্ষেত্রে তাকে মেয়েদের থেকে বেশি দিতে পারবেন।

আর পুত্রবধূকে দেওয়ার দ্বারা যদি ছেলেকেই বেশি দেওয়া উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে তাও যথাযথ কারণ ছাড়া করা উচিত হবে না।

 

-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৪০৫৬; তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম ২/৭১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৩৭

এই সংখ্যার অন্যান্য প্রশ্ন-উত্তর পড়ুন