ফখরুল ইসলাম - সিলেট

৬৪৩৩. প্রশ্ন

কিডনিতে পাথর ধরা পড়ার কারণে ডাক্তার আমাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে বলেছেন। একদিন ফজরের নামাযের জন্য ওযু করে দুই-তিন গ্লাস পানি পান করি। একটু পর মসজিদে যাওয়ার পথে আমার বমি বমি ভাব হয়। এরপর বেশ পরিমাণ পানি মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ওযু ভাঙার সন্দেহ হলে আমি সতর্কতামূলক আবার ওযু করে নিই। মুহতারামের কাছে জানতে চাচ্ছি, মুখ দিয়ে এরকম শুধু পানি বেরিয়ে এলে কি ওযু ভেঙে যায়?

উত্তর

মুখ ভরে শুধু পানি বমি হলেও ওযু ভেঙে যায়। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওযু ভেঙে গেছে। তাই এরপর ওযু করে নেওয়া ঠিকই হয়েছে।

-আলজামিউস সাগীর, পৃ. ৭২; শরহুল জামিইস সাগীর, কাযীখান ১/২৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১২৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৪৯

শেয়ার লিংক

নাইমুর রহমান - যশোর

৬৪৩৪. প্রশ্ন

অনেক সময় কুরআন মাজীদের কপি (মুসহাফ) এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরিয়ে রাখার প্রয়োজন হয়। সবসময় তো আর ওযু থাকে না। ওযু না থাকা অবস্থায় কি কাঁধে জড়ানো রুমালের কিনারা দ্বারা কুরআন মাজীদ ধরা যাবে?

উত্তর

না, ওযু বিহীন অবস্থায় পরিহিত রুমালের কোনো অংশ দ্বারা কুরআন মাজীদ স্পর্শ করা  জায়েয নয়। রুমাল দ্বারা কুরআন মাজীদ ধরতে চাইলে শরীর থেকে নামিয়ে নিয়ে তা দ্বারা কুরআন মাজীদ স্পর্শ করতে পারবে।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৪৭; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; রদ্দুল মুহতার ১/১৭৪

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ফরিদপুর

৬৪৩৫. প্রশ্ন

একদিন আমি মগে পানি নিয়ে ওযু করছিলাম। মগ থেকে পানি ঢেলে প্রথমে তিনবার হাত ধুয়ে নিই। এরপর বাকি অঙ্গগুলো ধোয়ার সময় মগের ভেতর হাত দিয়ে পানি নিই। এমন সময় এক ব্যক্তি পাশ থেকে বলে ওঠে, এভাবে মগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে ওযু করা ঠিক নয়। কেননা এতে মগের পানি ব্যবহৃত হয়ে যায়। আর ব্যবহৃত পানি দিয়ে ওযু করলে ওযু হয় না। আমি তার কথা শুনে মগের পানি ফেলে দিয়ে নতুন পানি নিয়ে ওযু করি। হুযুরের কাছে জানতে চাই, তার কথাটি কি সঠিক ছিল?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত কথাটি ঠিক নয়। আপনার এভাবে ওযু করা নিয়মসম্মতই হয়েছে। পাত্র বা মগের ভেতর হাত দিয়ে পানি নিয়ে ওযু করা জায়েয আছে। এক্ষেত্রে উত্তম হল, প্রথমেই সরাসরি পাত্রের ভেতর হাত প্রবেশ না করিয়ে পাত্র থেকে পানি ঢেলে আগে হাত ধুয়ে নেওয়া। হাতে কোনো নাপাকী না থাকলেও প্রথমেই পাত্রের ভেতর হাত দিয়ে পানি নেওয়া অনুত্তম। যদিও এক্ষেত্রেও ওযু সহীহ হয়ে যায়।

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু প্রথমে পাত্র থেকে পানি ঢেলে হাত ধুয়ে নিয়েছেন, তারপর পাত্রের ভেতর হাত দিয়ে পানি নিয়েছেন, তাই তা উত্তম পদ্ধতিতেই সম্পাদন হয়েছে। এভাবে ওযু করা হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে।

সহীহ বুখারীতে আতা ইবনে ইয়াযীদ রাহ. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-

عَنْ حُمْرَانَ، مَوْلَى عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ أَنَّه رَأَى عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ دَعَا بِوَضُوءٍ، فَأَفْرَغَ عَلَى يَدَيْهِ مِنْ إِنَائِهِ، فَغَسَلَهُمَا ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَمِينَه فِي الوَضُوءِ، ثُمَّ تَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَاسْتَنْثَرَ، ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا وَيَدَيْهِ إِلَى المِرْفَقَيْنِ ثَلاَثًا، ثُمَّ مَسَحَ بِرَأْسِه، ثُمَّ غَسَلَ كُلَّ رِجْلٍ ثَلاَثًا، ثُمَّ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَوَضَّأُ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا.

উসমান রা.-এর আযাদকৃত দাস হযরত হুমরান রা. থেকে বর্ণিত যে, তিনি দেখেছেন, একদিন হযরত উসমান রা. পানির পাত্র আনালেন এবং দুই হাতের ওপর পাত্র থেকে পানি ঢেলে তিনবার তা ধৌত করেন। অতঃপর ডান হাত দ্বারা পাত্র থেকে পানি উঠিয়ে কুলি করেন এবং নাকে পানি দেন এবং নাক ঝাড়েন। এরপর তিনবার চেহারা ধৌত করেন এবং দুই হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর মাথা মাসেহ করেন এবং প্রত্যেক পা তিনবার ধৌত করেন। এরপর বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এ ওযুর ন্যায় ওযু করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৪)

সহীহ বুখারীর অন্য হাদীসে এসেছে-

عَمْرُو بْنُ يَحْيَى، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: شَهِدْتُ عَمْرَو بْنَ أَبِي حَسَنٍ، سَأَلَ عَبْدَ اللهِ بْنَ زَيْدٍ عَنْ وُضُوءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَدَعَا بِتَوْرٍ مِنْ مَاءٍ فَتَوَضَّأَ لَهُمْ، فَكَفَأَ عَلَى يَدَيْهِ فَغَسَلَهُمَا ثَلاَثًا، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَه فِي الإِنَاءِ فَمَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ وَاسْتَنْثَرَ ثَلاَثًا، بِثَلاَثِ غَرَفَاتٍ مِنْ مَاءٍ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَه فِي الإِنَاءِ، فَغَسَلَ وَجْهَهُ ثَلاَثًا، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَه فِي الإِنَاءِ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ إِلَى المِرْفَقَيْنِ مَرَّتَيْنِ مَرَّتَيْنِ، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ فَمَسَحَ بِرَأْسِه، فَأَقْبَلَ بِيَدَيْهِ وَأَدْبَرَ بِهِمَا، ثُمَّ أَدْخَلَ يَدَه فِي الإِنَاءِ فَغَسَلَ رِجْلَيْهِ.

অর্থাৎ ইয়াহইয়া রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার আমর ইবনু আবী হাসান রাহ.-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা.-কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ রা. একটি পানির পাত্র আনান এবং তাদেরকে ওযু করে দেখান। তিনি পাত্রটি কাত করে উভয় হাতের ওপর পানি ঢেলে উভয় হাত তিনবার ধৌত করেন। অতঃপর পাত্রের মধ্যে হাত প্রবেশ করান এবং তিন অঞ্জলী পানি দিয়ে তিনবার করে কুলি করেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক ঝাড়েন। অতঃপর পুনরায় পাত্রে হাত ঢুকিয়ে (পানি নিয়ে) তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে পানি নিয়ে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। তারপর আবার পাত্রে হাত প্রবেশ করিয়ে উভয় হাত দ্বারা মাথার সামনের অংশ ও পেছনের অংশ মাছেহ করেন। অতঃপর পুনরায় পাত্রে হাত ঢুকিয়ে উভয় পা ধৌত করেন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২)

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/৫২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৩৪৬; ফাতহুল কাদীর ১/৭৬; আলবাহরুর রায়েক ১/১৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/১১২

শেয়ার লিংক

মুজিবুর রহমান - মোহাম্মাদপুর, ঢাকা

৬৪৩৬. প্রশ্ন

জনৈক মহিলার স্বামী প্রবাসে থাকে। কয়েক বছর পর পর মাস খানেকের জন্য দেশে আসে। সেই সময়টাতে মহিলাটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খেয়ে স্রাব বন্ধ রাখেজানার বিষয় হল, ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে ঔষধ খেয়ে স্রাব বন্ধ রাখলে তখন স্বামীর সাথে তার মেলামেশা বৈধ হবে কি? আর সেই সময় তার নামায ও রোযার কী বিধান হবে?

উত্তর

ঔষধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখলেও যতদিন স্রাব না আসবে ততদিন সে পবিত্র থাকবে। বন্ধের দিনগুলো পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী মাসিকের দিনগুলোর মধ্যে পড়লেও বাস্তবে স্রাব না দেখা গেলে তাতে ঋতুস্রাবের বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে না। তাই ঔষধ খেয়ে মাসিক বন্ধ রাখার পর পরবর্তী স্রাব আসার আগ পর্যন্ত স্বামীর সাথে মেলামেশা বৈধ হবে এবং নামায, রোযাও তাকে স্বাভাবিকভাবে আদায় করতে হবে।

-মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা ১২১৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১৫১; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৫৩; আলমাজমূ শরহুল মুহাযযাব ৩/১১

শেয়ার লিংক

আবদুস সামাদ - চট্টগ্রাম

৬৪৩৭. প্রশ্ন

যিলহজ্বের তেরো তারিখ দুপুরে আমি এক লম্বা সফর থেকে বাড়ি ফিরি। বিশ্রামের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি; কিন্তু এর মাঝেই আসরের সময় শেষ হয়ে যায়। মাগরিবের আযানের সময় আমার ঘুম ভাঙে। পরে আমি দ্রুত ওযু করে আগে আসর নামায পড়ি। এরপর মাগরিব পড়ি। কিন্তু আসর নামায পড়ার পর তাকবীরে তাশরীক বলিনি। হযরতের কাছে জানার বিষয় হল, উক্ত আসরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার দ্বারা তো তাকবীরে তাশরীকের সময়ও শেষ হয়ে গেছে; এখন এ আসর নামাযের কাযা আদায়ের পর কি তাকবীরে তাশরীক বলা জরুরি ছিল?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ আসরের নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক না বলা নিয়মসম্মত হয়েছে। কেননা তাকবীরে তাশরীক বলার বিধান নয় যিলহজ্ব ফজর থেকে তেরো যিলহজ্ব আসর পর্যন্ত। এ দিনগুলোতে কাযা হওয়া কোনো নামায যদি তেরো যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর আদায় করা হয়, তাহলেও আর তাকবীরে তাশরীক বলার বিধান নেই।

-আলজামিউল কাবীর, পৃ. ১৩; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৯৭; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪২০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৫১২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/৩৫৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ মাসুদ - ঢাকা

৬৪৩৮. প্রশ্ন

হুজুরের কাছে একটি মাসআলা জানতে চাই। নামাযের ভেতরে হাঁচি আসার পর আলহামদু লিল্লাহবললে কি নামাযের কোনো সমস্যা হবে? এবং এক্ষেত্রে আলহামদু লিল্লাহবলব, নাকি বলব না?

 

উত্তর

নামাযে হাঁচি দেওয়ার পর আলহামদু লিল্লাহবলা অনুত্তম। তবে আলহামদু লিল্লাহবললে নামায নষ্ট হবে না। কিন্তু কাজটি অনুত্তম হবে।

-উয়ূনুল মাসায়িল, পৃ. ২৫; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১২০; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৭৮; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৩৯

শেয়ার লিংক

মুছাদ্দাদ - মোমেনশাহী

৬৪৩৯. প্রশ্ন

মহিলারা দাঁড়ানো থেকে সিজদায় যাওয়ার সময় দেখা যায়। সরাসরি সিজদায় না গিয়ে প্রথমে ডান দিকে পা বের করে বসে, এরপর সিজদায় যায়। এ পদ্ধতি কি ঠিক? আমাদের ঘরের মা-বোনদেরকেও এভাবে সিজদা করতে দেখা যায় এবং তারা এটাকেই মহিলাদের সিজদায় যাওয়ার সঠিক পদ্ধতি বা নিয়ম বলে জানেন।

জানতে চাই, মহিলাদের সিজদায় যাওয়ার এ পদ্ধতিটি কি সঠিক?

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত পদ্ধতিটি সঠিক নয়; বরং মহিলারাও দাঁড়ানো থেকে সরাসরি সিজদায় চলে যাবে এবং সিজদায় যেতে যেতেই উভয় পা ডান দিকে বের করে দিয়ে সিজদা করবে।

দাঁড়ানো থেকে প্রথমে ডান দিকে পা বের করে সোজা হয়ে বসা, এরপর সিজদায় যাওয়া- তাদের জন্য এমন কোনো নিয়ম নেই। অবশ্য শারীরিক ওযরের কারণে কারো যদি না বসে দাঁড়ানো থেকে সরাসরি সিজদায় যাওয়া কষ্টকর হয় তবে সেটি ভিন্ন বিষয়। ওযরবশত এমনটি করার সুযোগ আছে।

-আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ২/২২২; মুখতাসারুত তাহাবী, পৃ. ২৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩০৫; ইমদাদুল আহকাম (হাশিয়া) ১/৪৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইরফান - চট্টগ্রাম

৬৪৪০. প্রশ্ন

কয়েকদিন আগে এশার নামাযে আমি ইমামের সাথে শুধু এক রাকাত পেয়েছিলাম। যেহেতু তিন রাকাত পাইনি। তাই স্বাভাবিকভাবে তো বাকি তিন রাকাতের প্রথম রাকাতে বৈঠক করার কথা। কিন্তু ভুলে ঐ রাকাতে বৈঠক করিনি। পরের রাকাতে বৈঠক করি। এরপর শেষ রাকাতে সাহু সিজদাও করিনি। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার উক্ত নামায কি সহীহ হয়েছে? প্রথম রাকাতে (আমার নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে) বৈঠক না করে দ্বিতীয় রাকাতে (আমার নামাযের তৃতীয় রাকাতে) বৈঠক করার কারণে কি সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়েছিল? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

আপনার এশার নামাযটি আদায় হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে আপনার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়নি। তবে এক্ষেত্রে উত্তম নিয়ম হল, প্রথম রাকাতের পর (আপনার নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে) বৈঠক করা; দ্বিতীয় রাকাতের পর নয়। তবে কেউ যদি প্রথম রাকাতে বৈঠক না করে দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করে, তাহলে এটি অনুত্তম হলেও তার নামায আদায় হয়ে যাবে এবং তাকে সাহু সিজদা করতে হবে না।

Ñকিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ ১/১৫০; আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৮৯; আলগায়া, সারুজী ৪/৬৪; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৭৯; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৪৬৮; রদ্দুল মুহতার ১/৫৯৭

শেয়ার লিংক

মিনহাজুর রহমান - যশোর

৬৪৪১. প্রশ্ন

আমার দাদার ইন্তেকালের পর তাকে সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সেখানে কবরের পাশে নাম-পরিচয় লিখে একটি ফলক স্থাপন করলে চিনতে সহজ হয়। তাই আমরা একটি ফলক স্থাপন করে তাতে কালিমা, কুরআনের আয়াত- كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ও নাম-পরিচয় লিখতে চাচ্ছি।

জানার বিষয় হল, এভাবে ফলক স্থাপনে কি শরীয়তের দৃষ্টিতে সমস্যা আছে?

উত্তর

কবর চিহ্নিত করে রাখার প্রয়োজনে মৃত ব্যক্তির নাম-পরিচয় ফলকে লিখে কবরের পাশে তা লাগানো জায়েয। তবে তাতে কালিমা, কুরআনের আয়াত, দুআ, যিকির-আযকার ইত্যাদি লেখা যাবে না।

-শরহুল জামিইস সাগীর, কাযীখান ১/২৪৭; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৪৭০ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৭১; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৬২৭; মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৬৬

শেয়ার লিংক

জান্নাতুল মাওয়া - চৌমুহনী, নোয়াখালী

৬৪৪২. প্রশ্ন

গত রমযানে ঋতুস্রাবের কারণে আমি পাঁচ দিন রোযা রাখতে পারিনি। গত সপ্তাহে আমি রোযাগুলো কাযা শুরু করি। পাঁচটি পূর্ণ করার পর কাযা রোযা ছয়টি ছিল মনে করে আরো একটি রোযা রাখা শুরু করি। কিন্তু ঐদিন সকাল নয়টার দিকে স্পষ্ট মনে পড়ে যে, ঋতুস্রাবের কারণে আমার মাত্র পাঁচটি রোযা ছুটেছিল। তাই আমি সাথে সাথে রোযাটি ভেঙে ফেলি।

এখন জানার বিষয় হল, উক্ত রোযা শুরু করার পর ভেঙে ফেলার কারণে আমাকে কি এখন এর কাযা করতে হবে?

উত্তর

না, প্রশ্নোক্ত রোযাটি কাযা করা জরুরি নয়। কেননা, কেউ নিজের ওপর রোযা ওয়াজিব আছে মনে করে রোযা শুরু করার পর তা ওয়াজিব না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কারণে ভেঙে ফেললে উক্ত রোযা পরবর্তীতে কাযা করা জরুরি হয় না। তবে এক্ষেত্রে রোযাটি না ভেঙে নফল হিসেবে তা পূর্ণ করা উত্তম ছিল।

-কিতাবুল আছল ২/১৬৩; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৪৭; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৬৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৭; রদ্দুল মুহতার ২/৩৮০

শেয়ার লিংক

নুহা - নোয়াখালী

৬৪৪৩. প্রশ্ন

গত বছর ২৬ রমযান সকাল বেলা আমি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভেঙে ফেলেছিলাম। পরে আমি এ কাজের জন্য খুবই অনুতপ্ত হয়েছি। রোযাটি ভাঙার পর ঐদিন বিকেলের দিকে আমার স্রাবও শুরু হয়েছিল।

মুফতী সাহেবের কাছে জানার বিষয় হল, এখন আমাকে কি রোযাটির কাফফারা আদায় করতে হবে, নাকি শুধু কাযা করলেই যথেষ্ট হবে?

উত্তর

কোনো ওজর ছাড়া রোযাটি ভেঙে ফেলা মারাত্মক গুনাহের কাজ হয়েছে। এজন্য আপনাকে আল্লাহ তাআলার দরবারে কায়মনোবাক্যে তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। আর এভাবে কোনো ওজর ছাড়া রমযানের রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেললে সাধারণত কাযা-কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হয়। তবে প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু ঐদিন রোযাটি ভেঙে ফেলার পর সূর্যাস্তের আগেই ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল, তাই রোযাটির কাফফারা আদায় করতে হবে না; বরং শুধু একটি রোযা কাযা করে নিলেই হবে। যদিও ওজর ছাড়া রোযাটি ভেঙে ফেলার গুনাহ আপন জায়গায় থেকে যাবে, যতক্ষণ না তওবা করার দ্বারা আল্লাহ তাআলা তা মাফ করেন।

-কিতাবুল আছল ২/১৫৩; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৪৫; মুখতারাতুন নাওয়াযেল ১/৪৭১ ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১৫; ইমদাদুল ফাত্তাহ, পৃ. ৬৮৫; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪১৩

শেয়ার লিংক

আল আমিন - যশোর

৬৪৪৪. প্রশ্ন

আমি অনেকদিন যাবৎ ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছি। ডাক্তার বলেছেন, দিনে কয়েকবার গরম পানিতে মেন্থল মিশিয়ে এর ভাপ নিতে। জানতে চাই, রোযা অবস্থায় মেন্থলের ভাপ নেওয়া যাবে কি?

উত্তর

মেন্থলের ভাপ নিলে কিংবা মেন্থল ছাড়া শুধু গরম পানির ভাপ টেনে নিলেও যেহেতু এর মাধ্যমে পানির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা গলায় প্রবেশ করে, তাই এর দ্বারা রোযা ভেঙে যাবে। সুতরাং রোযা অবস্থায় তা নেওয়া যাবে না। অতএব, রমযান মাসে মেন্থলের ভাপ গ্রহণ করার প্রয়োজন হলে তা রাতে গ্রহণ করবেন।

-আলবিনায়া ৪/৩১৫; রদ্দুল মুহতার ২/৩৯৫; হাশিয়াতুশ শারহিল কাবীর, দাসূকী ১/৫২৫; ওসাইকুন নাওয়াযিল ১/৫৬৮

শেয়ার লিংক

আমিন ভূঁইয়া - গাজীপুর

৬৪৪৫. প্রশ্ন

আমার একটি পোল্ট্রি মুরগির ফার্ম আছে। এটি লেয়ার মুরগির ফার্ম। ডিমের ব্যবসার উদ্দেশ্যে তা করা হয়েছে; মুরগি বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়। একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত এগুলো ডিম দেয়। পরবর্তীতে যখন মুরগিগুলো ডিম পাড়ার অনুপযোগী হয়ে যায় তখন সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখন প্রশ্ন হল, আমাকে কি এই মুরগিগুলোর যাকাত দিতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুরগিগুলো ক্রয়ের প্রাথমিক উদ্দেশ্য যেহেতু তা থেকে ডিম উৎপাদন করে ওই ডিম বিক্রি করা, তাই পরবর্তীতে মুরগিগুলো বিক্রি করার নিয়ত থাকলেও এ কারণে তা ব্যবসায়িক পণ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে নাসুতরাং এগুলোর ওপর যাকাত ফরয নয়।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ১১২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/১৬৭; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৮৪

শেয়ার লিংক

মীযানুর রহমান - না. গঞ্জ

৬৪৪৬. প্রশ্ন

আমার শ্বশুরের ইন্তেকালের পর শাশুড়ি আম্মাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। তাই আমিই তার দেখাশুনা করি এবং খরচাদি দিই। এক্ষেত্রে আমি কি তাকে যাকাত দিতে পারব?

উত্তর

শাশুড়িকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। তাই আপনার শাশুড়ি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হলে তাকে যাকাত দিতে পারবেন।

-কিতাবুল আছল ২/১২৪; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৫৫৫; আলবাহরুর রায়েক ২/২৪৩; আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৪৫-৬

শেয়ার লিংক

সাখাওয়াত হোসেন - চরফ্যাশন, ভোলা

৬৪৪৭. প্রশ্ন

অনেক বছর আগেই আমার ওপর হজ্ব ফরজ হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়িক ব্যস্ততার কারণে সময় বের করতে পারছিলাম না। গত তিন বছর আগে হঠাৎ স্ট্রোক করে আমার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে যায়। আমি পরের বছর আমার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাই। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি আবার ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। এখন আমি হজ্ব করতে সক্ষম

হুজুরের কাছে জানতে চাই, বদলি হজ্ব করানোর দ্বারা আমার ফরজ হজ্বটি আদায় হয়েছিল কি? নকি আমি নিজে গিয়ে তা আবার আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি যেহেতু নিজে গিয়ে হজ্ব করার মতো সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন, তাই এখন আপনার নিজের উক্ত ফরজ হজ্বটি আদায় করা জরুরি। পূর্বে অন্যের মাধ্যমে যে বদলী করিয়েছেন তা এক্ষেত্রে যথেষ্ট হবে না; তা নফল গণ্য হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৫২; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ২/৪৭৯, ৪৮১; আলবাহরুর রায়েক ৩/৬০, ২/৩০৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫৯৮

শেয়ার লিংক

জুনায়েদ আহমেদ - নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা

৬৪৪৮. প্রশ্ন

গত বছর আল্লাহ তাআলার রহমতে আমি হজ্ব পালন করি এবং পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী হাতে আংটি পরেই হজ্বে চলে যাই। হজ্বের পুরো সময় আংটি আমার হাতেই ছিল। হজ্ব শেষে এক সফরসঙ্গী বললেন, ইহরাম অবস্থায় আংটি পরা যায় নাকি? তার এ কথা শুনে আমার সংশয় তৈরি হয় যে, ইহরাম অবস্থায় আংটি পরা আমার জন্য ঠিক হয়েছে কি না?

তাই মুহতারামের কাছে অনুরোধ, এ বিষয়ে সঠিক সমাধান জানিয়ে আমাকে উপকৃত করবেন।

উত্তর

ইহরাম অবস্থায় আংটি পরা জায়েয আছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

لاَ بَأْسَ بِالْخَاتَمِ لِلْمُحْرِمِ.

অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় আংটি পরতে কোনো অসুবিধা নেই। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৪২৭)

-আলমুহীতুর রাযাবী ২/২৩৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২৬২; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ১২২; আদ্দুররুল মুুখতার ২/৪৯১

শেয়ার লিংক

কামাল - ঢাকা

৬৪৪৯. প্রশ্ন

একবার দরজার চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে আমার ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলিতে প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। কিছুদিন পর দেখি, আঙ্গুলটির নখের নিচে রক্ত জমে নখটি মরে গেছে। এদিকে আমার হজ্বে যাওয়ার সময় হওয়ায় ওভাবেই হজ্বে চলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, মরা নখটি স্ব-স্থান থেকে আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে। ঐ অবস্থায় চলা-ফেরা কষ্ট হাওয়ায় একদিন ইহরাম অবস্থায় আমি নখটি কেটে ফেলে দিই।

এখন আমার জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় নখটি কেটে ফেলে দেওয়ায় আমার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে কি?

উত্তর

না, ইহরাম অবস্থায় মরা নখটি কেটে ফেলায় আপনার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। কেননা ইহরাম অবস্থায় ভালো নখ কাটা নিষেধ। ভেঙে যাওয়া নখ কাটা নিষেধ নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

إذَا انْكَسَرَ ظُفْرُ الْمُحْرِمِ فَلْيَقُصَّه.

ইহরাম অবস্থায় কারো নখ ভেঙে গেলে সে তা কেটে ফেলতে পারবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১২৯০৩)

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/৭৮; আলমুহীতুর রাযাবী ২/২৪৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮৯; আননাহরুল ফায়েক ২/১২১

শেয়ার লিংক

আশহাদ - চট্টগ্রাম

৬৪৫০. প্রশ্ন

আমরা স্বপরিবারে হজ্বে গিয়েছিলাম। আমার ৮ বছরের সন্তানও আমাদের সাথে হজ্বের ইহরাম করে। একবার সে ইহরাম অবস্থায় লাগেজ থেকে বডি স্প্রে এবং আতর বের করে হাতে, শরীরে লাগিয়ে ফেলেআমরা তখন কাছে ছিলাম না, তাই নিষেধ করতে পারিনি। হুজুরের কাছে প্রশ্ন হল, তার এমন কাজে তার ওপর বা তার অভিভাবক হিসেবে আমার ওপর কোনো জরিমানা আসবে কি?

উত্তর

আপনার নাবালেগ সন্তান সুগন্ধি ব্যবহার করার কারণে কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি। কেননা ইহরাম অবস্থায় নাবালেগ বাচ্চা ইহরাম পরিপন্থী কোনো কাজ করে ফেললে তার ওপর বা তার অভিভাবকের ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয় না। অবশ্য অভিভাবকের দায়িত্ব হল, নাবালেগকেও যথাসম্ভব ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজসমূহ থেকে বিরত রাখা।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৩০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৬৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৩৬; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ২/২৯৩; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ১১২

শেয়ার লিংক

ইরফান - বরিশাল

৬৪৫১. প্রশ্ন

আমি এ বছর হজ্ব পালন করেছি। ১১ তারিখ আমাদের কাফেলা যখন কংকর নিক্ষেপ করতে মিনায় পৌঁছে তখন সেখানে অনেক ভিড় ছিল। সেজন্য আমি তিনটি জামরাতে কংকর নিক্ষেপকালে তুলনামূলক যেখানে ভিড় কম ছিল সেখানে আগে, এরপর অন্য জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করি। ফলে জামরায়ে আকাবাতে আগে, এরপর মধ্য জামরাতে এবং সর্বশেষ জামরায়ে উলাতে কংকর নিক্ষেপ করি। হজ্ব থেকে আসার পর শুনলাম যে, জামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে নাকি প্রথম, মধ্যম ও বড় জামরার ধারাবাহিকতা আছে। অবশ্য বাকি দিনগুলোতে এ ধারাবাহিকতায় কংকর নিক্ষেপ করেছি। আমার জানার বিষয় হল, ১১ তারিখ কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে আমি যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করিনি, এ কারণে আমার ওপর কোনো জরিমানা আসবে কি?

উত্তর

জামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে প্রথমে ছোট জামরাতে, তারপর মধ্যমটিতে, এরপর বড় জামরাতে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সুন্নতে মুআক্কাদা। এর ব্যতিক্রম করা মাকরূহ। সুতরাং উক্ত ধারাবাহিকতা লঙ্ঘন করা সুন্নত পরিপন্থী কাজ হয়েছে। অবশ্য এ কারণে আপনার ওপর কোনো জরিমানা আবশ্যক হয়নি।

-বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪০৯; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/৬০৩; আলবাহরুল আমীক ৪/১৮৭০; মানাসিকমোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ২৪৯

শেয়ার লিংক

খালেদ - উত্তরা, ঢাকা

৬৪৫২. প্রশ্ন

আমার আম্মু থেকে আমার ছোট খালা দুধ পান করেছে। পরবর্তীতে আমার ছোট খালা থেকে আমার মেজো খালার এক মেয়ে দুধ পান করে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এখন মেজো খালার ঐ মেয়ের সাথে কি আমি দেখা করতে পারব?

উত্তর

হাঁ, আপনি তার সাথে দেখা করতে পারবেন। কেননা, আপনার ছোট খালা আপনার মায়ের দুধ পান করার কারণে ছোট খালা আপনার দুধ বোন হয়ে গেছে। আর আপনার মেজো খালার ঐ মেয়ে আপনার ছোট খালার (যিনি আপনার দুধ বোন) দুধ পান করার কারণে আপনার ঐ খালাতো বোন আপনার দুধ ভাগনি হয়ে গেছে। আর আপন ভাগনির মতো দুধ ভাগনিও মাহরামের অন্তÍর্ভুক্ত, তার সাথে দেখা করা জায়েয।

-কিতাবুল আছল ৪/৩৫৯, ২/২৩৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৪১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৯৮; আলমুহীতুর রাযাবী ২/৪৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৪৩

শেয়ার লিংক

আব্দুল হাই - মাগুরা

৬৪৫৩. প্রশ্ন

আমার বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই আমার স্ত্রী খারাপ আচরণ শুরু করে। সে বলে, তোমার সাথে আমার পরিবার না বুঝেই বিয়ে দিয়েছেআমি তোমার সাথে সংসার করতে চাই না। আমাকে তালাক দাও। আমি তালাক দিতে অস্বীকৃতি জানালে একপর্যায়ে মহরের বিনিময়ে খোলা তালাকের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তালাকের পর সে ইদ্দত চলাকালীন ভরণপোষণ দাবি করছে।

জানার বিষয় হল, তার কারণেই তো খোলা তালাক দিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রেও কি তার ইদ্দতকালীন ভরেেপাষণ দেওয়া জরুরি?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খোলা তালাক যেহেতু শুধু মোহরের বিনিময়ে হয়েছে; ইদ্দত চলাকালীন ভরণপোষণও তাকে দেওয়া হবে না- এমন শর্তে খোলা করেনি, তাই এক্ষেত্রে ইদ্দত পালনকালে তার ভরণপোষণ দেওয়া আপনার ওপর জরুরি।

তাবেয়ী ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন-

لِلْمُخْتَلِعَةِ السُّكْنَى وَالنَّفَقَةُ.

খোলাকারিণী মহিলা (ইদ্দত চলাকালীন) বাসস্থান ও ভরণপোষণ পাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৮৮১১)

-কিতাবুল আছল ১০/৩৩৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৩০; ফাতহুল কাদীর ৪/৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৫২

শেয়ার লিংক

আবিদুর রহমান - হবিগঞ্জ

৬৪৫৪. প্রশ্ন

আমার ওপর একটি কসমের কাফফারা ওয়াজিব হয়েছে। এখন আমি এর কাফফারা দিতে চাচ্ছি। আমি জানি যে, কসমের কাফফারাস্বরূপ দশজন দরিদ্রকে দুই বেলা খাওয়াতে হয়। আমাদের এলাকায় একজন হতদরিদ্র লোক আছে। আমি তাকে কাফফারাস্বরূপ দশ দিন খাওয়াতে চাচ্ছি এবং রমযান মাসে খাওয়াতে চাচ্ছি। প্রতিদিন সাহরী ও রাতের খাবার খাওয়াতে চাই।

এখন আমার জানার বিষয় হল, এভাবে একজন লোককেই দশ দিন দুই বেলা খাওয়ালে কি কাফফারা আদায় হবে? এবং সেই দশ দিন যদি রমযান মাসে হয় এবং তাকে প্রতিদিন সাহরী ও রাতের খাবার খাওয়ানো হয়, তাহলে এই কাফফারা আদায় হবে কি না?

উত্তর

হাঁ, দশজনের পরিবর্তে একজন দরিদ্রকে দুই বেলা করে দশ দিন খাওয়ালেও কাফফারা আদায় হয়ে যায় এবং রমযানে সাহরী ও রাতের খাবার খাওয়ানোর দ্বারাও কাফফারা আদায় করা সহীহ আছে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ দরিদ্র লোকটিকে রমযানে দশ দিন সাহরী ও রাতের খাবার খাওয়ালে কসমের কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।

-কিতাবুল আছল ২/২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২৬৪; ফাতাওয়া খানিয়া ২/১৯; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২৭২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭৯, ৭২৫

শেয়ার লিংক

উম্মে শহীদ - যশোর

৬৪৫৫. প্রশ্ন

আমি মান্নত করেছিলাম, আমার ছেলে পরীক্ষায় পাশ করলে বিশজন দরিদ্র মানুষকে এক বেলা খাওয়াব। আলহামদু লিল্লাহ, আমার ছেলে পাশ করেছে। কিন্তু বিশ জন মানুষকে বাড়িতে এনে খাওয়ানো আমার জন্য কষ্টের ব্যাপার।

জানার বিষয় হল, বিশজনকে কি খাওয়ানো জরুরি। না তাদেরকে খাবারের টাকা দিয়ে দিলেও মান্নত আদায় হয়ে যাবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে খাবার খাওয়ানোর পরিবর্তে টাকা দিলেও মান্নত আদায় হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে বিশ জনের প্রত্যেককে এক বেলা তৃপ্তিসহকারে খেতে পারে- এই পরিমাণ টাকা দেবেন।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ.  ২৮৭; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৪৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৬৯; ফাতাহুল কাদীর ২/১৪৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭৪১

শেয়ার লিংক

আসেম - খুলনা

৬৪৫৬. প্রশ্ন

আমি মনে মনে কসম করেছিলাম যে, আমার মেয়ে যদি আমাকে আর কখনো বকাঝকা করে, তাহলে আর তার বাড়িতে যাব না। কিন্তু মুখে উচ্চারণ করিনি। পরবর্তীতে সে আমাকে কোনো এক কারণে বকাঝকা করে। এ কারণে দীর্ঘদিন থেকে আমি তার বাড়িতে যাই না। একদিন প্রতিবেশী এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে, আপনি মেয়ের বাড়িতে যান না কেন? তখন আমি বললাম, আমি ঐ বাড়িতে না যাওয়ার কসম করেছি, তাই যাই না। কিছুদিন যাবৎ আমার মেয়ে অসুস্থ, আমি তাকে দেখতে তার বাড়িতে যেতে চাচ্ছি।

জানার বিষয় হল, আমার এ কসম কি সংঘটিত হয়েছে? আমি তো মুখে কোনো কিছু উচ্চারণ করিনি। আর যদি এর দ্বারা কসম না হয়ে থাকে, তবে পরে প্রতিবেশীকে উক্ত কসম সম্পর্কে বলার কারণে কি কসম হয়ে গেছে? এখন আমি মেয়ের বাড়ি গেলে কি কসম ভঙ্গ হয়ে যাবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর

কসম সংঘটিত হওয়ার জন্য কসমের বাক্য মুখে উচ্চারণ করা শর্ত। মুখে উচ্চারণ না করে শুধু মনে মনে কসম করার দ্বারা কসম হয় না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ না করে শুধু মনে মনে কসম করার দ্বারা কসম সংঘটিতই হয়নি। এবং পরবর্তীতে প্রতিবেশীকে উক্ত কসম সম্পর্কে অবহিত করার দ্বারাও নতুন করে কসম হয়নি। কেননা তা কেবল পূর্বের কসমের সংবাদ মাত্র; নতুন করে ভিন্ন কোনো কসমের কথা নয়। অতএব আপনি মেয়ের বাড়ি গেলে কসম ভঙ্গ হওয়ার কিছু নেই।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/১০; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/৪১৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৬/১৩

শেয়ার লিংক

জিসান জামান - নিউ মার্কেট, যশোর

৬৪৫৭. প্রশ্ন

আমার দাদা বছরখানেক আগে গ্রামের মাদরাসার জন্য ৩০ শতাংশ জায়গা ওয়াকফ করেন এবং মাদরাসার নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। সেখানে অনেক আগে থেকেই আমার দাদার লাগানো বড় বড় গাছ আছে। গাছগুলোর ব্যাপারে দাদা ওয়াকফের সময় কিছুই বলেননি। দাদার ইন্তেকালের পর এখন চাচাদের কেউ কেউ গাছগুলো কেটে নিতে চাচ্ছে।

জানার বিষয় হল, চাচাদের জন্য ওই গাছগুলো কেটে নেওয়া কি বৈধ হবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার দাদা যেহেতু জমিটি ওয়াকফ করার সময় গাছগুলো ওয়াকফ বহির্ভূত থাকবে- এমন কোনো কথা বলেননি, তাই জমির সাথে গাছগুলোও ওয়াকফের অন্তÍর্ভুক্ত হয়ে গেছে। সেগুলো এখন মাদরাসার ওয়াকফ সম্পদ। সুতরাং আপনার চাচাদের জন্য তা কেটে নেওয়া বৈধ হবে না।

-আহকামুল আওকাফ, খাস্সাফ, পৃ. ২২২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩০৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০০; আলইসআফ, পৃ. ১৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩৬২

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান - কুমিল্লা

৬৪৫৮. প্রশ্ন

আমি আমার পরিচিত এক লোক থেকে ৬০০ টাকা দিয়ে একটি বই কিনি। আমার এক বন্ধু বইটি দেখে তার কাছে বইটি খুব ভালো লেগেছে বিধায় ৬০০ টাকা দিয়েই সে আমার কাছ থেকে বইটি কিনে নেয়। পরে আমি জানতে পারি যে, বইটি আরেকজন ৫৫০ টাকা করে বিক্রি করছে। তখন যার কাছ থেকে আমি ৬০০ টাকা দিয়ে বইটি কিনেছিলাম, তাকে বিষয়টি জানালে সে বলে, ৬০০ টাকার কমে এই বই বিক্রি করা আমার পক্ষে সম্ভব না। অবশ্য আপনি চাইলে বইটি ফেরত দিয়ে তার মূল্য নিয়ে নিতে পারেন।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, তার কাছ থেকে আমি যে কপিটি কিনেছিলাম সেটি তো এখন আমার কাছে নেইএক্ষেত্রে আমি যদি তাকে অন্য কপি দিয়ে মূল্য ফেরত নেই, তাহলে তা কি ঠিক হবে? এ ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?

উত্তর

না, এমনটি করা আপনার জন্য বৈধ হবে না। কেননা বিক্রেতার সম্মতিতে পণ্য ফেরত দিয়ে মূল্য ফেরত নিতে চাইলে বিক্রেতাকে তার থেকে ক্রয়কৃত ঐ পণ্যই ফেরত দেওয়া জরুরি। তার পরিবর্তে অনুরূপ অন্য পণ্য দিয়ে মূল্য ফেরত নেওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং বিক্রেতাকে অনুরূপ অন্য বই দিয়ে মূল্য ফেরত নিতে পারবেন না। তাছাড়া ওই বইটি তো আপনি কেনা দামেই (৬০০ টাকায়) বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই এখন আর কিছুতেই বিক্রেতা থেকে মূল্য ফেরত নেওয়ার সুযোগ নেই।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৫৯৭; আলহাবিল কুদসী ২/৪০; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৩৭০; আলইখতিয়ার ২/৩৫; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১২৮

শেয়ার লিংক

আবু সাঈদ - বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৬৪৫৯. প্রশ্ন

কয়েক বছর আগে আমার বড় ভাই আব্বুর সাথে দোকানে সময় দেওয়া শুরু করে। এরপর থেকে তারা দুইজন মিলেই দোকান চালাত। কিছুদিন আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আব্বু ও ভাইয়ের মধ্যে খুব মনোমালিন্য ও কথা কাটাকাটি হয়। ইতিপূর্বেও এসব বিষয়ে সামান্য ঝামেলা হয়েছিল। পরে তা মীমাংসা হয়ে গেছে। কিন্তু এবার ভাইয়া কোনোভাবেই আব্বুর সাথে এক দোকানে থাকতে রাজি হচ্ছে না; বরং সে নিজে আলাদা দোকান দিতে চাচ্ছে। তার কাছে যেহেতু আলাদা দোকান দেওয়ার জন্য কোনো অর্থ নেই, তাই সে আব্বুর দোকান থেকে নতুন দোকানের জন্য মূলধন দাবি করছে। কিন্তু আব্বু এতে রাজি না। কারণ এই দোকান পুরোটা আব্বুর নিজের। এর মূলধনে ভাইয়ার কোনো অংশ নেই। তার শুধু শ্রম আছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ভাইয়া নিজ স্ত্রীসহ আব্বুর সাথেই আছে। আব্বুই তাদের খরচাদি বহন করছেন। আব্বু ভাইয়াকে বলছেন, তুমি আরো কিছুদিন আমার সাথে থাকো। আস্তে আস্তে আমি তোমাকে দোকানের ব্যবস্থা করে দেব। ভাইয়া এতেও রাজি না। অবশেষে ভাইয়া বলছে, আমি যে এতদিন দোকানে শ্রম দিয়েছি এর পারিশ্রমিক আমাকে দিয়ে দেন।

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এক্ষেত্রে আব্বু কি ভাইয়াকে কোনো পারিশ্রমিক দিতে বাধ্য? যদি দিতে বাধ্য হন, তাহলে তার পরিমাণ কী? এ ব্যাপারে তো পূর্বে কোনো আলোচনা বা চুক্তি কিছুই হয়নি।

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আপনার ভাই যেহেতু পিতার সংসারে তার ভরণপোষণাধীন ছিল এবং পিতার ব্যবসায় তার নিজস্ব কোনো মূলধনও ছিল না এবং সে পিতার বেতনভুক্ত কর্মচারীও ছিল না, তাই এক্ষেত্রে সে যে এতদিন তার পিতার দোকানে শ্রম দিয়েছে এর বিনিময়ে সে কোনো পারিশ্রমিকের হকদার হবে না। সুতরাং পিতার জন্য এক্ষেত্রে তাকে পারিশ্রমিক দেওয়া জরুরি নয়। অবশ্য পিতা যদি স্বেচ্ছায় তাকে কিছু দিতে চায়, তবে সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।

-ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৫/৩৭৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৩২৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৩২৫; তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়া ২/১৭; দুরারুল হুক্কাম শরহু মাজাল্লাতিল আহকাম ৩/৪২০

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - ঢাকা

৬৪৬০. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদের উত্তর পাশে বড় একটা জমি আছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষের প্ল্যান ছিল, ঐ জমিটা কিনে মসজিদের স্থায়ী আয়ের লক্ষ্যে সেখানে একটা মার্কেট বানিয়ে ভাড়া দেবে। কিন্তু কিছুদিন আগে জমিটা বিক্রি হয়ে যায়। মসজিদ কর্তৃপক্ষ এটা জানার পর জমিটা যিনি কিনেছেন তার কাছে আবেদন করেন, তিনি যেন জমিটা মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। কিন্তু তিনি জমি বিক্রি করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এখন মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই লোক স্বেচ্ছায় জমিটা বিক্রি না করলে তারা আদালতে প্রিএমশনের দাবি করবে। কারণ জমিটা মসজিদের পাশেই অবস্থিত।

মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ উক্ত জমিতে প্রিএমশনের দাবি করতে পারবে কি? আশা করি সঠিক উত্তর জানাবেন।

উত্তর

শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রিএমশন বা শুফআ দাবির অধিকার রাখেন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকগণ। কোনো ওয়াকফিয়া প্রতিষ্ঠান প্রিএমশনের অধিকার রাখে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বিক্রিত জমিটি মসজিদ সংলগ্ন হলেও মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদের পক্ষে তাতে শুফআদাবি করতে পারবে না।

-আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়েখ, পৃ. ৪৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৯৭, ৪/১১২; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/৫; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২২৩; শরহুল মাজাল্লা, আতাসী ৩/৫৮৪

শেয়ার লিংক

ইকবাল হুসাইন - উত্তরা, ঢাকা

৬৪৬১. প্রশ্ন

একদিন আমি বাজার থেকে কয়েকটি নারিকেল কিনে আনি। বাসায় এনে ভাঙার পর দেখি, সবগুলো নারিকেলই নষ্ট। মোটেও খাওয়ার উপযোগী নয়। পরে বিক্রেতার কাছে ফেরত দিতে গেলে তিনি তা ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানান। বাধ্য হয়ে আমি নারিকেলগুলো ফেলে দিয়ে চলে আসি। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে তার কাজটি বৈধ হয়েছে কি?

উত্তর

নারিকেলগুলো ভাঙার পর সেগুলো যদি বাস্তবেই একেবারে নষ্ট দেখা যায় এবং মোটেও খাওয়ার উপযুক্ত না থাকে, তাহলে উক্ত বিক্রয়চুক্তি বাতিল গণ্য হবে। সুতরাং এক্ষেত্রে বিক্রেতার ওপর জরুরি হল, আপনাকে এর মূল্য ফেরত দেওয়া। অতএব তার কাছে উক্ত মূল্য ফেরত চাওয়ার পরও আপনাকে ফেরত না দেওয়া তার জন্য সম্পূর্ণ নাজায়েয হয়েছে।

-কিতাবুল আছল ২/৫০০; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৩/৭৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১০/১২১; ফাতহুল কাদীর ৬/১৮; রদ্দুল মুহতার ৫/২৫

শেয়ার লিংক

সোহাগ - কেরানীগঞ্জ, ঢাকা

৬৪৬২. প্রশ্ন

গতকাল আমাদের গ্রামে কিছু লোক একটি পিকআপ নিয়ে চাল, ডাল ও বিভিন্ন ধরনের কাঁচা তরকারি বিক্রি করতে আসে। তখন প্রতিবেশী কিছু মহিলা আমাকে সেখান থেকে তাদের জন্য এক কেজি, দুই কেজি করে পোলাওয়ের চাল কিনে আনতে বলে। তারা আমাকে প্রতি কেজির নির্ধারিত মূল্য ৯০ টাকা করে দিয়ে দেয়। কিন্তু একসাথে ৫ কেজির ঊর্ধ্বে উক্ত চাল ক্রয় করায় বিক্রেতারা আমাকে (তাদের নিয়মানুযায়ী) প্রায় ৭০ টাকা ছাড় দেয়। তবে বিষয়টি প্রতিবেশী মহিলারা জানে না।

মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাচ্ছি, উক্ত টাকা কি আমি গ্রহণ করতে পারব? কারণ তাদের কেউ তো পৃথকভাবে এ ছাড় কোনোভাবেই পাবে না। এক্ষেত্রে সঠিক মাসআলা কী?

উত্তর

মূল্য ছাড়ের ঐ টাকা আপনার জন্য নেওয়া জায়েয হবে নাবরং চালের ক্রেতা মালিকের প্রত্যেককে প্রাপ্য অনুপাতে ফেরত দিতে হবে। কেননা উক্ত ছাড় পণ্য ক্রয়ের ওপর দেওয়া হয়। সুতরাং ক্রয়কৃত পণ্যের যিনি মালিক তিনি উক্ত ছাড়কৃত মূল্যের মালিক। আপনি কেবল তাদের পক্ষ থেকে ক্রয় প্রতিনিধি। অবশ্য মূল্য ছাড়ের বিষয়টি তাদেরকে জানানোর পর তারা যদি খুশি মনে উক্ত টাকা আপনাকে দিয়ে দেয়, তাহলে তা আপনি নিতে পারবেন।

-আলমুহীতুল বুরহানী ১৫/৬৫; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৬; আলবাহরুর রায়েক ৭/১৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৫৮৮; রদ্দুল মুহতার ৫/৫১৬

শেয়ার লিংক