মুহাম্মাদ এনামুল হাসান - ফরিদপুর

৬০২৪. প্রশ্ন

আমার চার বিঘা ফসলি জমি আছে। জমিগুলো এক ব্যক্তির নিকট বর্গা দিয়েছি। বর্গাচাষীর সঙ্গে আমার চুক্তি হয় এভাবে- আমি শুধু জমি দেব। শ্রম ও চাষাবাদের কোনো খরচ আমি দেব না। শ্রম ও চাষাবাদের যাবতীয় খরচ বহন করবে চাষী। তবে ফসল বণ্টিত হবে সমান-সমানভাবে। জানার বিষয় হল, চাষাবাদের কোনো খরচ না দেওয়ার শর্তে উপরোক্ত পদ্ধতিতে জমি বর্গা দেওয়ার চুক্তিটি কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

হাঁ, প্রশ্নে বর্ণিত বর্গা চুক্তিটি সহীহ হয়েছে। বর্গা সহীহ হওয়ার জন্য জমিদাতার চাষাবাদের খরচ দেওয়া আবশ্যক নয়। বরং জমিদাতার শুধু জমি আর চাষাবাদের যাবতীয় খরচ বর্গাচাষীর, এ পদ্ধতিতেও বর্গাচুক্তি জায়েয আছে। আর ফসল বণ্টনের যে চুক্তি করা হয়েছে (৫০%-৫০%) তাও ঠিক আছে। কেউ চাইলে ভিন্ন হারেও চুক্তি করতে পারে। যেমন কোথাও এভাবে চুক্তি হয়, জমিওয়ালা পাবে ১/৩(এক তৃতীয়াংশ) আর অবশিষ্ট ২/৩ (দুই তৃতীয়াংশ) পাবে চাষী। এটিও সহীহ তরীকা।

-সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৫১; আলমাবসূত, সারাখসী ২৩/১৯, ৩৬; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৩৫২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৬০, ২৬২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/১৮০; রদ্দুল মুহতার ৬/২৮১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - কুড়িগ্রাম

৬০২৫. প্রশ্ন

গ্রাম-গঞ্জে বিভিন্ন ফেরিওয়ালাকে দেখা যায় বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে তারা নারীদের জমানো চুল ক্রয় করে। নারীরাও নিজেদের জমানো চুল বিক্রি করে দেন। জানতে চাই, এ কাজটি কি জায়েয আছে?

উত্তর

চুলসহ মানবদেহের কোনো কিছু বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বেচাকেনা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। শরীয়ত এগুলোর বেচাকেনা নিষিদ্ধ করেছে। তাছাড়া নারীদের কর্তিত চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত। তা বিনা প্রয়োজনে বেগানা পুরুষকে দেখানো জায়েয নয়। তাই চুল বেচাকেনা করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কর্তিত চুল সম্ভব হলে দাফন করে দেবে।

-আলজামেউস সাগীর, পৃ. ৩২৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৩৩; ফাতহুল কাদীর ৬/৬৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৩৭৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪০৫

শেয়ার লিংক

তাসনিয়া তানহা - টুটপাড়া, খুলনা

৬০২৬. প্রশ্ন

আমি একটি দামি থ্রি-পিছ কিনে একটি টেইলার্সে বানাতে দিই। কোন্ ডিজাইনে কী মাপে বানাবে তা দর্জিকে বলে দিই। সে মাপ নিয়ে লিখেও রাখে। আমি তাকে বলেছিলাম, আপনি যদি ঠিকভাবে বানাতে না পারেন তাহলে আমি অন্য টেইলার্সে কথা বলে দেখব। সে তখন ঠিকভাবে বানাতে পারবে বলে জানায়। থ্রি-পিছটি বানানোর পর বাড়িতে এনে দেখি, আমি যেভাবে বলেছিলাম সেভাবে তো সে বানাতে পারেইনি উল্টো আমার থ্রি-পিছটি নষ্ট করে ফেলেছে। আমি যে মাপে দিয়েছিলাম তার থেকে অনেক টাইট ফিটিং করে বানিয়েছে এবং ঝুলেও অনেক কম দিয়েছে। ঐ থ্রি-পিছটি এখন আর আমার পরার মতো অবস্থায় নেই।

মুহতারামের নিকট জানতে চাই, আমি কি এখন দর্জিকে ঐ থ্রি-পিছটি ফেরত দিয়ে তার কাছ থেকে মূল্য দাবি করতে পারব?

উত্তর

বাস্তবেই যদি দর্জি আপনার থ্রি-পিছটি সেলাই করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলে এবং আপনার পরার যোগ্য না থাকে তাহলে আপনি দর্জিকে থ্রি-পিছটি ফেরত দিয়ে তার কাছ থেকে আপনার কাপড়ের মূল্য নিয়ে নিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, যদি আপনার দেওয়া মাপের চেয়ে সামান্য বেশ কম হয় এবং মোটামুটি ব্যবহারযোগ্য হয় তাহলে থ্রি-পিছটি ফেরত দিয়ে মূল্য দাবি করতে পারবেন না।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/৭৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৩/১৩৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১২/৪০, ৪৮; আলইখতিয়ার ২/১২৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৫/২৮২, ২৮৪; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৫ 

শেয়ার লিংক

আদিল - চুয়াডাঙ্গা

৬০২৭. প্রশ্ন

গ্রামের বাড়িতে আমাদের একটা জমি আছে। আগে নিয়মিত আমরা সেখানে ধান চাষ করতাম। কয়েক মাস যাবৎ জমিটা খালি পড়ে আছে। তাই সেখানে অনেক ঘাস জন্মেছে। আব্বা এখন নতুন করে ঐ জমিটা চাষ করতে চাচ্ছেন। তাই গ্রামের কয়েকজন রাখালের সঙ্গে এভাবে চুক্তি করেছেন যে, তারা ঐ ঘাসগুলো নিজেরাই কেটে নেবে এবং ২৫ কেজি মাপের বস্তা হিসেবে প্রতি বস্তা বাবদ ৮০/- টাকা করে দেবে। এখন আমার জানার বিষয় হল, এই চুক্তিটি কি সহীহ আছে?

উত্তর

আপনার বাবা যদি উক্ত ঘাসের কোনো পরিচর্যা না করে থাকেন যেমন সার দেওয়া ইত্যাদি তাহলে নিজ থেকে হওয়া ঘাস বিক্রি করা সহীহ হয়নি। কারণ, চাষাবাদ ছাড়া এমনিতেই যে ঘাস হয় নিজের জমিতে হলেও তা বিক্রি করা জায়েয নয়। অবশ্য, আপনার বাবা যদি ঐ ঘাসগুলো নিজ দায়িত্বে কাটিয়ে এরপর ঐ কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন তাহলে তা জায়েয হবে।

-মুখতারাতুন নাওয়াযিল ৩/২৮৪-২৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/৩২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৮/৩২৮; আলবাহরুর রায়েক ৬/৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - সিলেট

৬০২৮. প্রশ্ন

আমরা অনেক সময় খাল-বিলে কোনো পাখি দেখলে গুলতি, মাটির চাকা, ইট বা পাথরের টুকরা মেরে পাখিটি শিকার করার চেষ্টা করি। জীবিত ধরতে পারলে বিসমিল্লাহ বলে দ্রুত জবাই করে ফেলি। কিন্তু কখনো কখনো পাখিটি ধরতে দেরি হলে জবাই করার আগেই তা মরে যায়। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে জবাই করার আগেই আঘাতপ্রাপ্ত পাখিটি যদি মরে তাহলে কি তা খাওয়া জায়েয হবে?

উত্তর

শিকারকৃত পাখি যদি জীবিত ধরা যায় এবং জীবিত অবস্থায় বিসমিল্লাহ বলে জবাই করা সম্ভব হয় তাহলে তা খাওয়া হালাল। যদি জীবিত ধরার পর জবাই করার সময় না পাওয়া যায় কিংবা ধরার আগেই তা মরে যায় এবং কোনো ধারালো বস্তু দ্বারা তাকে জখম না করা হয় বরং মারবেল, মাটির চাকা, ইট বা পাথরের টুকরা এজাতীয় ধারহীন কোনো বস্তু দ্বারা শিকার করা হয় তাহলে উক্ত পশু মৃতের হুকুমে। তা খাওয়া জায়েয হবে না। কিন্তু শিকার করার যন্ত্র বা বস্তুটি যদি ধারালো হয় যেমন, ছুরি, বর্শা বা বন্দুকের ধারালো গুলি তাহলে এজাতীয় ধারালো জিনিস দ্বারা শিকারকৃত প্রাণীর রক্ত প্রবাহিত হয়ে মারা গেলে এবং তা বিসমিল্লাহ বলে নিক্ষেপ করা হলে খাওয়া জায়েয হবে।

-মুআত্তা মুহাম্মাদ, বর্ণনা ৬৫৪; আলমাবসূত, সারাখসী ১১/২৫৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/১২৯; আলইনায়া ৯/৫২; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৭১; ইমদাদুল মুফতীন, পৃ. ৭৮০

শেয়ার লিংক

ওয়ালিউল্লাহ - মোমেনশাহী

৬০২৯. প্রশ্ন

আমার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশে একটি অতিরিক্ত আঙ্গুল আছে। যার কারণে আমার অনেক সময় লজ্জা হয়। আমি চাচ্ছি, অপারেশনের মাধ্যমে আঙ্গুলটি কেটে ফেলতে। মুহতারামের কাছে জানার বিষয় হল, আমার জন্য কি এ কাজ করা বৈধ হবে? জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

অতিরিক্ত আঙ্গুল কেটে ফেললে যদি ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে তাহলে তা অপারেশন করে কেটে ফেলে দেওয়া বৈধ। তাই এ ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।

-ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/২৮৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৬০; বাযলুল মাজহুদ ১৭/৫৪

শেয়ার লিংক

আবদুর রাহমান - বরগুনা

৬০৩০. প্রশ্ন

আমি একটি প্রাইভেট স্কুলের ১ম ও ২য় শ্রেণীর বাচ্চাদেরকে আরবী পড়াই। আমার সব ছাত্র-ছাত্রীই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তারা প্রতিদিনই বাসা থেকে নিজেদের জন্য বিভিন্ন রকম খাবার নিয়ে আসে। তারা সেই খাবার থেকে আমাকেও দিতে চায়। কখনও কখনও খাবার ছাড়া অন্য জিনিসও উপহার দিতে চায়। জানার বিষয় হল, আমার জন্য তাদের দেওয়া খাবার বা অন্যান্য জিনিস গ্রহণ করা জায়েয হবে কি?

উত্তর

অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েয নয়। তাই নাবালেগ ছাত্র-ছাত্রীর দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্য অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ের অভিভাবকগণ যদি আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে কিছু হাদিয়া পাঠায় তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয হবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/১৬৮; আলবাহরুর রায়েক ৭/২৮৪; জামিউ আহকামিস সিগার ১/২১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/১১০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৮৭ 

শেয়ার লিংক