হাফসা আক্তার - রামপুরা, ঢাকা

৪২৮৩. প্রশ্ন

কাঁথা-কম্বল ইত্যাদির কোনো এক কোণে যদি ছোট বাচ্চার পেশাব লাগে এবং তা শুকিয়ে যায় তাহলে কি অপর পাক অংশে নামায পড়া যাবে? তেমনি তোশক বা জাজিমের এক পিঠে নাপাকি লাগলে তা উল্টিয়ে অপর পিঠে কি নামায পড়া যাবে?

উত্তর

কাঁথা-কম্বলের এক অংশ নাপাক হলে এর পাক অংশে নামায পড়া জায়েয আছে। আর ভারী তোশক বা জাজিমের এক পিঠে নাপাকি লাগলে তার অপর পিঠে যদি নাপাকির রং বা আর্দ্রতা প্রকাশ না পায় এবং গন্ধও পাওয়া না যায় তাহলে অপর পিঠে নামায পড়া যাবে।

প্রকাশ থাকে যে, জাজিম, তোশক ইত্যাদি যেগুলো ধোওয়া যায় না, সেগুলোতে নাপাকি লেগে গেলে নাপাকি শুকিয়ে যাওয়ার পর তার উপর জায়নামায বা কাপড় বিছিয়ে তা ব্যবহার করা যাবে এবং নামায পড়া যাবে।

-হালবাতুল মুজাল্লী ১/৫৭১; আসসিআয়া ২/৫৯; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬২; রদ্দুল মুহতার ১/৪০২

শেয়ার লিংক

আরিফুদ্দীন - খাগড়াছড়ি

৪২৮৪. প্রশ্ন

আমি ফজরের নামাযের পর বসে বসে কুরআনে কারীম তিলাওয়াত করছিলাম। সূর্যোদয়ের ১০ মিনিট পূর্বে একটি  সিজদার আয়াত পাঠ করি। একটু পরে আমি সিজদাটি আদায় করি। তখন সূর্য উদয় হচ্ছিল। এখন আমি জানতে চাচ্ছি যে, এ সময় আমার উক্ত সিজদা আদায় করা কি সহীহ হয়েছে?

 

উত্তর

তিলাওয়াতে সিজদাটি আদায় হয়নি। তা পুনরায় আদায় করতে হবে। কেননা সূর্যোদয়ের সময় সিজদা করা নিষেধ।

-আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩৬৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪৪১; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৯০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৭

শেয়ার লিংক

রফিকুল ইসলাম - জালালাবাদ, সিলেট

৪২৮৫. প্রশ্ন

আমি মসজিদে এসে ফজরের সুন্নত পড়ছিলাম। এমন সময় ইমাম সাহেব সিজদার আয়াত পাঠ করেন এবং সিজদাও আদায় করেন। সুন্নত শেষে আমি ঐ রাকাতের রুকুতে শরীক হয়ে যাই। জানার বিষয় হল, এ অবস্থায় নামায শেষে কি আমার উক্ত সিজদা আদায় করতে হবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমাম যে রাকাতে সিজদা করেছেন আপনি যেহেতু সে রাকাতের রুকুতে শরীক হয়েছেন তাই উক্ত সিজদাটিও পেয়েছেন বলে ধর্তব্য হবে। পৃথকভাবে তা আদায় করতে হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৫০২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫০১; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২৬৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১২২

শেয়ার লিংক

নাজিমুদ্দীন - সদর, কুমিল্লা

৪২৮৬. প্রশ্ন

ঈদের খুতবায় ইমামের তাকবীর বলার সময় মুসল্লীরাও কি তাকবীর বলবে না চুপ থাকবে? অনেককে তাকবীর বলতে দেখা যায়। সঠিক মাসআলাটি জানানোর অনুরোধ রইল।

উত্তর

ঈদের খুতবা চলাকালীন উপস্থিত লোকদের জন্য সম্পূর্ণ চুপ থেকে খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাই খুতবার সময় মুসল্লীগণ তাকবীর বলবে না; বরং চুপ থেকে খুতবা শুনবে। হযরত  আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-

وَجَبَ الْإِنْصَاتُ فِي أَرْبَعَةِ مَوَاطِنَ: الْجُمُعَةِ،وَالْفِطْرِ،وَالْأَضْحَى، وَالِاسْتِسْقَاءِ.

চারটি স্থানে চুপ থাকা ওয়াজিব ; জুমা, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা এবং ইসতিসকার খুতবার সময়। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৫৬৪২)

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/৩৭; আলবাহরুর রায়েক ২/১৬২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬১৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৫৪৫

শেয়ার লিংক

খলিলুর রহামন - লাকসাম, কুমিল্লা

৪২৮৭. প্রশ্ন

আমি গত ঈদের ছুটি শেষে ঢাকার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে ৪/৫ মাইল দূরবর্তী স্টেশনে পৌঁছি এবং সেখানে যোহরের নামায কসর করি। কিন্তু পরবর্তীতে বিশেষ কারণে সফর বাতিল করে বাড়িতে এসে দেখি যোহরের ওয়াক্ত এখনো বেশ বাকি। এখন প্রশ্ন হল, আমাকে উক্ত যোহরের নামাযটি কি পুনরায় পূর্ণ ৪ রাকাত পড়তে হবে?

 

উত্তর

না, ঐ নামাযটি পুনরায় আদায় করতে হবে না। তা সহীহভাবে আদায় হয়েছে। কেননা আপনি যখন নামায পড়েছেন তখন আপনি মুসাফির ছিলেন। পরবর্তীতে সফর বাতিল করলেও ঐ নামায বাতিল হয়নি।

-বাদায়েউস সানায়ে ১/২৭২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ১২; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৪২; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫২৯

শেয়ার লিংক

রেজাউল করিম - পেকুয়া, কক্সবাজার

৪২৮৮. প্রশ্ন

কখনো কখনো শেষ রাতে তাহাজ্জুদ শেষ করার পর দেখি, কিছু আগে সুবহে সাদিক হয়ে গেছে। প্রশ্ন হল, আমার এ নামায কি নফল হিসেবে গণ্য হবে? নফল হলে যেহেতু ফজরের সময় হওয়ার পর শেষ হয়েছে এ জন্য তা মাকরূহ হবে কি না?

 

উত্তর

সুবহে সাদিকের পূর্বে নফল শুরু করার পর নামায শেষ করার আগেই যদি সুবহে সাদিক হয়ে যায় তাহলেও তা বাতিল হবে না এবং তা মাকরূহও হবে না। তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে।

-তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/২৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ১/৩৭৪

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ আবরার - জকিগঞ্জ, সিলেট

৪২৮৯. প্রশ্ন

আমাদের মসজিদে আযানের দায়িত্ব নিকটবর্তী হিফজখানার ছাত্ররা পালন করে থাকে। যাদের অধিকাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক। প্রশ্ন হল, অপ্রাপ্তবয়স্কদের আযান দেওয়া সহীহ কি না?

 

উত্তর

আযান প্রাপ্তবয়স্কদেরই দেওয়া উচিত। যদিও নামায ও আযানের বুঝ রাখে এমন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে আযান দিলে তা আদায় হয়ে যাবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১/১৩৮; আলবাহরুর রায়েক ১/২৬৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ১০৮

শেয়ার লিংক

সারওয়ার হুসাইন - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪২৯০. প্রশ্ন

আমরা জানি যে, নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করা গুনাহ। কিন্তু কখনো এমন হয় যে, নামায শেষে বসে তাসবীহ পাঠ করছি, এর মধ্যেই পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার সোজা বরাবর পেছনে একজন নামায পড়ছে। এখন জানার বিষয় হল, নামাযী ব্যক্তির সামনে বসা থেকে উঠে চলে গেলে কি গুনাহ হবে?

 

 

উত্তর

নামাযী ব্যক্তির সামনে অবস্থানকারী প্রয়োজনে ডানে বা বামে সরে যেতে পারবে। এতে নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার গুনাহ হবে না। হাদীস শরীফে যে নিষেধাজ্ঞা এসেছে তা নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে চলাচল করা বা আসা-যাওয়া করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবশ্য নামাযীর সামনে অবস্থানকারী ব্যক্তির প্রয়োজন না থাকলে অপেক্ষা করাই ভালো।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১০৪; ফাতহুল বারী ১/৬৯১; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৬; ইলাউস সুনান ৫/৮১; ইমদাদুল আহকাম ১/৮০৯

শেয়ার লিংক

আশরাফ - নোয়াখালী

৪২৯১. প্রশ্ন

নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর নামায আদায়ের পূর্বেই জনৈকা মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হয়। জানার বিষয় হল, পরবর্তীতে পবিত্র হওয়ার পর সে মহিলাকে উক্ত ওয়াক্তের নামায কাযা করতে হবে কি?

 

উত্তর

না, ঐ ওয়াক্ত নামাযের কাযা করতে হবে না। কেননা ওয়াক্তের শুরুতে পবিত্র থাকলেও ওয়াক্তের ভেতরেই যেহেতু হায়েয এসে গেছে তাই ঐ নামায মাফ হয়ে যাবে। তা আর পড়তে হবে না।

-কিতাবুল আছার ১/৮৪; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৩২; আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/১৮৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৫২

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ফযলুল্লাহ - শিবচর, মাদারীপুর

৪২৯২. প্রশ্ন

অনেক সময় দেখা যায় যে, ফরয নামাযের জামাতে সামনের কাতারে জায়গা ফাঁকা রেখে মুসল্লীরা পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে যায় এবং তাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা ছাড়া সামনের কাতার পুরা করা সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় কি তাদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েয হবে?

 

উত্তর

কাতারের মাঝে ফাঁকা রাখা মাকরূহ তাহরীমী। কোনো জামাতের নামাযে সামনের কাতার খালি রেখে মুসল্লীরা পেছনের কাতারে দাঁড়িয়ে গেলে কাতার পুরা করার জন্য প্রয়োজনে ঐ মুসল্লীদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে। এতে নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমের গুনাহ হবে না।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫৭২৪; রদ্দুল মুহতার ১/৬৩৬; আদ্দুররুল মুনতাকা ১/১৮৪; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুর ১/২৬৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদুল্লাহ - কুমিল্লা

৪২৯৩. প্রশ্ন

কেউ যদি ফজরের সুন্নত নামায ঘরে পড়ে মসজিদে যায় তাহলে সে মসজিদে গিয়ে তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়তে পারবে কি?
 

উত্তর

না, ফজরের সময় তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামায পড়া যাবে না। কারণ, সুবহে সাদিকের পরে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ব্যতীত অন্য কোনো নফল নামায পড়ার নিয়ম নেই। হাদীস শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لَا صَلَاةَ بَعْدَ طُلُوعِ الْفَجْرِ إِلّا رَكْعَتَيْنِ

সুবহে সাদিকের পরে (ফজরের) দুই রাকাত (সুন্নত) ব্যতীত অন্য কোনো (নফল) নামায নেই। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৭৫৬)

-কিতাবুল আছল ১/১৩২; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান - চাটখিল, নোয়াখালী

৪২৯৪. প্রশ্ন

আমি গতকাল আসরের নামাযে ইমাম সাহেবকে শেষ বৈঠকে পাই এবং ইমামের সালাম ফিরানোর পরে বাকি নামায পুরা করি। নামাযের পর এক ব্যক্তি বলল, আপনার নামায পুনরায় পড়তে হবে। কারণ ইমাম সাহেব সিজদায়ে সাহু করার পরে আপনি নামাযে শরীক হয়েছেন। এ সময় ইমামের ইক্তেদা করা সহীহ নয়।

হুযুরের কাছে জানতে চাই, উক্ত ব্যক্তির কথা কি ঠিক? আমার নামায কি পুনরায় পড়তে হবে?

 

উত্তর

ইমাম সিজদায়ে সাহু করার পরও তার ইক্তেদা করা সহীহ। অতএব আপনার নামায সহীহভাবে আদায় হয়েছে। ঐ ব্যক্তির কথা ঠিক নয়। না জেনে দ্বীনী বিষয়ে এভাবে মন্তব্য করা অন্যায়।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২/১১২; বাদায়েউস সানায়ে ১/৪২৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১২৩; ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ১৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৪৮৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইসহাক - মাধবপুর, হবিগঞ্জ

৪২৯৫. প্রশ্ন

 আমি একজন মক্তবের শিক্ষক। বাচ্চাদেরকে কুরআন শরীফ পড়াই। তাদের সবক শোনার সময় অনেক ক্ষেত্রে সিজদার আয়াত আসে এবং কখনও কখনও একই আয়াত একাধিক ছাত্র থেকে শুনতে হয়। হযরতের কাছে জানতে চাই, যদি এক বৈঠকে একই আয়াত একাধিক ছাত্র থেকে শুনি তাহলে কি একাধিক সিজদা করতে হবে?

 

 

উত্তর

এক বৈঠকে একই আয়াত একাধিক ব্যক্তি থেকে শুনলে একটি সিজদাই ওয়াজিব হয়। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে একই আয়াত একাধিক ছাত্র থেকে শুনলেও একটি সিজদাই যথেষ্ট হবে। একাধিক সিজদা করতে হবে না।

-কিতাবুল আছল ১/২৮১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৫৯; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৬৮; মারাকিল ফালাহ পৃ. ২২৯; রদ্দুল মুহতার ২/১১৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ খাইরুল ইসলাম - নোয়াখালী

৪২৯৬. প্রশ্ন

কিছুদিন পূর্বে আমার কয়েকজন আত্মীয় মামার বাড়িতে এসে তাদের মামার কবর যিয়ারত করার ইচ্ছা করে এবং তারা আমাকে সাথে নিয়ে যায়। তখন আমার উপর গোসল ফরয ছিল। আমি লজ্জার কারণে তাদের সামনে অপারগতা প্রকাশ করতে পারিনি ; বরং তাদের সাথে কবরস্থানে গিয়ে কবর যিয়ারত করেছি। হুযুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় কবর যিয়ারত করা জায়েয আছে কি?

 

উত্তর

কবর যিয়ারত পবিত্র অবস্থায় করা উচিত। তবে কোনো কারণে গোসল ফরয অবস্থায় কবর যিয়ারত করে ফেললে গুনাহ হবে না। তবে এ অবস্থায় কুরআনের কোনো সূরা বা আয়াত পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

-ফাতাওয়া সিরাজিয়া পৃ. ৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/৪৮১

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইয়াসিন - সিলেট

৪২৯৭. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার একজন মুরুব্বী ইন্তেকাল করেন। তার মুমূর্ষু অবস্থায় মসজিদের ইমাম সাহেবসহ আমরা কিছু লোক সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তখন তাকে কীভাবে শোয়ানো হবে এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। ইমাম সাহেব তাকে উত্তর দিকে মাথা ও দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে চেহারা কেবলার দিকে ফিরিয়ে শোয়াতে চাচ্ছিলেন। একজন এতে বাধা দিয়ে বলল, ‘বেহেশতী জেওর’ কিতাবে পশ্চিম দিকে পা ও পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে  এবং মাথার নিচে উঁচু কোনো বস্তু দিয়ে শোয়াতে বলা হয়েছে। যেন চেহারা পশ্চিম দিকে হয়ে যায়। জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে উত্তম এবং সুন্নাহসম্মত পদ্ধতি কোনটি? জানালে উপকার হবে।

 

উত্তর

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে যদি সহজে কিবলামুখী করে শোয়ানো সম্ভব হয় তাহলে সেভাবেই শোয়ানো উত্তম হবে। আর কিবলামুখী শোয়ানোর দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হল, বেহেশতী জেওরে উল্লেখিত পদ্ধতি। আরেকটি হল, আমাদের দেশের হিসাবে উত্তর দিকে রোগীর মাথা ও দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে ডান কাত করে শোয়ানো। এটি অধিক উত্তম ও সুন্নাহসম্মত। তাই সম্ভব হলে এভাবে শোয়ানো উত্তম হবে। অন্যথায় বেহেশতী জেওরে যেভাবে শোয়ানোর কথা আছে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে পা ও পূর্ব দিকে মাথা দিয়ে এবং মাথার নিচে উঁচু কোনো বস্তু দিয়ে কিবলামুখী করে শোয়াবে। কিন্তু যদি কিবলামুখী করে শোয়ানো সম্ভব না হয় তাহলে যেভাবে শোয়ালে তার জন্য সহজ ও আরামদায়ক হয় সেভাবে শোয়াবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৬০৫৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/২২; ফাতহুল কাদীর ২/৬৭; শরহুল মুনয়া পৃ. ৫৭৬; হালবাতুল মুজাল্লী ২/৫৯৬; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩০৫; রদ্দুল মুহতার ২/১৮৯; ইমদাদুল আহকাম ১/৮২০

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ - লাকসাম, কুমিল্লা

৪২৯৮. প্রশ্ন

আমি রোযা রেখে বৃষ্টির মধ্যে হাঁটছিলাম। তখন মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমার মুখে কিছু বৃষ্টির পানি ঢুকে ভেতরে চলে যায়। হুযুরের কাছে জানতে চাই, আমার রোযা কি ভেঙ্গে গেছে এবং ভেঙ্গে গেলে কি শুধু কাযা করতে হবে নাকি কাফফারাও দিতে হবে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বৃষ্টির পানি যদি বাস্তবেই গলায় চলে যায়, তাহলে উক্ত রোযা ভেঙ্গে গেছে। রোযাটির কাযা  করে নিতে হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪০৩; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ১/৯৮

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ যায়েদ - চৌমুহনী

৪২৯৯. প্রশ্ন

আমি একজন চাল ব্যবসায়ী। আমার জন্য চাল দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করা সহজ। হযরতের কাছে জানতে চাই, চাল দ্বারা সদকায়ে ফিতর আদায় করলে আদায় হবে কি?

 

উত্তর

হ্যাঁ, চাল বা অন্য খাদ্যশস্য দ্বারাও সদকায়ে ফিতর আদায় করা যাবে। সেক্ষেত্রে  ১ কেজি ৬৩৫ গ্রাম গম অথবা ৩ কেজি ২৭০ গ্রাম খেজুর বা যবের মূল্যের সমপরিমাণ চাল দিতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১০৪৭২; কিতাবুল আছল ২/১৮০; আলমাবসূত, সারাখসী ৩/১১৪; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়্যা ১/২৪৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৫৫

শেয়ার লিংক

রাজিয়া সুলতানা - মুরাদনগর, কুমিল্লা

৪৩০০. প্রশ্ন

আমার কাছে কিছু ব্যবহারের স্বর্ণালংকার আছে, যা নেসাবের সমপরিমাণের কিছু বেশি হবে। আমি মনে করতাম সাধারণ স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত আদায় করতে হয়। ব্যবহারের স্বর্ণালংকারের যাকাত আদায় করতে হয় না। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে জনৈক আলেমে দ্বীনের ওয়াজে শুনলাম, ব্যবহারের স্বর্ণালংকারের যাকাত আদায় করতে হবে। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে।

অতএব আমার জানার বিষয় হল, উক্ত আলেমের কথা কি ঠিক? ব্যবহারের স্বর্ণালংকারেরও কি যাকাত আদায় করতে হবে?

 

উত্তর

হ্যাঁ, উক্ত আলেমে দ্বীন ঠিকই বলেছেন। স্বর্ণালংকার ব্যবহারের জন্য হলেও এর যাকাত দিতে হয়। তাই ব্যবহৃত স্বর্ণ নেসাব পরিমাণ হলে বছর শেষে এর যাকাত আদায় করা আবশ্যক। হাদীস শরীফে হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি এবং আমার খালা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হলাম। তখন তার হাতে স্বর্ণের চুড়ি ছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি এর যাকাত আদায় কর? আমরা বললাম, না। তিনি বললেন, তোমাদের কি এ ভয় হয় না যে, আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে এ কারণে আগুনের চুড়ি পরাবেন? তোমরা এর যাকাত আদায় কর। (মুসনাদে আহমাদ , হাদীস ২৭৬১৪)

 

 

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫৫৮; কিতাবুল আছল ২/৯২; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৩১৩; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৪৯; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৫৪৬

শেয়ার লিংক

রাগিব হাসান - বাড্ডা, ঢাকা

৪৩০১. প্রশ্ন

পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের জন্য বর্তমানে আমার কোনো বাড়ি নেই। বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। আমার তিন কাঠা জমি আছে। শীঘ্রই সেখানে বাড়ি করতে চাচ্ছি। তাই এ উদ্দেশ্যে টাকা জমা করছি। জানতে চাচ্ছি, উক্ত উদ্দেশ্যে জমাকৃত টাকার কি যাকাত দিতে হবে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।
 

উত্তর

হ্যাঁ, বাড়ি বানানোর উদ্দেশ্যে সঞ্চয়কৃত নগদ টাকা বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত খরচ না হলে এর যাকাত দিতে হবে। পূর্ব থেকে নেসাবের মালিক হলে যাকাতবর্ষ শেষে এই জমা টাকাসহ যাকাত দিবেন। আর আগে থেকে যাকাতের নেসাবের মালিক না হলে জমা টাকা নেসাব পরিমাণ হওয়ার পর থেকে এক বছর পূর্ণ হলে যাকাত দিতে হবে।

প্রকাশ থাকে যে, কোনো ভবিষ্যত-প্রয়োজনকে সামনে রেখে টাকা জমা করলে যদি বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায় তখন ঐ টাকা যেহেতু বিগত বছরের জন্য প্রয়োজন-অতিরিক্ত ছিল তাই এর যাকাত দিতে হয়।

উল্লেখ্য যে, আপনি যদি বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বাড়ি করার জন্য নির্মাণ-সামগ্রী কিনে ফেলেন তবে সেগুলোর যাকাত দিতে হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ২/২০৬; আননাহরুল ফায়েক ১/৪১৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৬২; ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/২৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৪৩০২. প্রশ্ন

আমার ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঢাকা থেকে জেদ্দা যাওয়া প্রয়োজন। সময় স্বল্পতার কারণে এবার মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা নেই। আমার জন্য কি ইহরামবিহীন জেদ্দায় যাওয়া জায়েয হবে?

 

উত্তর

হ্যাঁ, ইহরাম ছাড়াই জেদ্দায় যেতে পারবেন। কেননা মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা না থাকলে জেদ্দা যাওয়ার জন্য ইহরাম করা লাগে না। এক্ষেত্রে মীকাত অতিক্রম করতে ইহরামের প্রয়োজন নেই।

-আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৬৮; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ২/৫১৭; আদ্দুরুরল মুখতার ২/৪৭৭; আলইখতিয়ার ১/৪৪৩; মাজমাউল আনহুর ১/৪৪৮

শেয়ার লিংক

এলাকাবাসীর পক্ষে আবু খুবাইব - সদর, কুমিল্লা

৪৩০৪. প্রশ্ন

মুহতারাম মুফতী সাহেব! আমাদের এলাকায় একটি ঘটনা নিয়ে খুব তোলপাড় হচ্ছে। বিষয়টির সমাধান জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন। ঘটনাটি বোঝানোর জন্য আমরা ছদ্মনাম ব্যবহার করছি। ঘটনাটি হল, জনাব আবু বকর সাহেবের দুই স্ত্রী ছিল। যায়নাব ও হাফসা। যায়নাবের ঘরে তার মেয়ে ফাতেমা। আর হাফসার ঘরে তার মেয়ে আয়েশা। আয়েশার ছেলে আবদুর রহমান। আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ। এই আবদুল্লাহ যায়নাবের মেয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করেছে। কেউ এই বিয়েকে জায়েয বলছেন, কেউ নাজায়েয বলছেন। সঠিক মাসআলাটি আলকাউসারে ছাপানোর ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আবদুল্লাহর জন্য যায়নাবের মেয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করা জায়েয হয়নি। কেননা, ফাতেমা আবদুল্লাহর পিতার খালা। আর পিতার খালা মাহরাম নারীদের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে আপন খালা, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় খালার হুকুম একই।

অতএব তাদের কর্তব্য হল, এখনই পৃথক হয়ে যাওয়া এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার করা।

-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১২৩; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩০; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭৩

শেয়ার লিংক

আবু সাফওয়ান - গফরগাঁও, ময়মনসিংহ

৪৩০৫. প্রশ্ন

মুহতারাম! একটি বিষয়ে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তা হল, ১০/১২ বছর আগে আমার এক আত্মীয়ার তালাক হয়েছিল। তখন তার একটি দুধের বাচ্চা ছিল। তালাক হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে অন্যত্র তার বিবাহ হয়। যে লোকটির সাথে তার বিবাহ হয়, তার অন্য স্ত্রীর ঘরে একটি ছেলে আছে। তখন ছেলেটির বয়স ৪ বছর ছিল। আর দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সংসার করার সময়ও আমার আত্মীয়া তার প্রথম সংসারের সেই দুধের শিশুটিকে দুধ পান করিয়েছে। এই শিশুটি মেয়ে শিশু। এখন সে বড় হয়েছে। এখন পারিবারিকভাবে এই মেয়েটির সাথে আমার আত্মীয়ার দ্বিতীয় স্বামীর ছেলের বিবাহ দেওয়ার কথাবার্তা চলছে। কিন্তু কেউ কেউ বলছে, এই বিবাহ বৈধ হবে না। কারণ, তারা দু’জন তো দুধ ভাই-বোন। কেননা, দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সংসার করার সময়ও তো আমার আত্মীয়া তার মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে। এভাবে দ্বিতীয় স্বামী তো মেয়েটির দুধ সম্পর্কীয় বাবা হয়। আর ছেলেটি হয় মেয়েটির দুধ ভাই। এখন হুযুরের নিকট আমরা জানতে চাচ্ছি যে, তারা দু’জন কি দুধ ভাই বোন? এবং তাদের মধ্যে কি বিবাহ অবৈধ? আশা করি, সঠিক মাসআলা জানিয়ে আমাদেরকে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী উক্ত ছেলে-মেয়ের মাঝে বিবাহ জায়েয হবে। তারা দুধ ভাই-বোন নয়। আপনার আত্মীয়ার দ্বিতীয় স্বামী এ মেয়েটির দুধপিতা নয়। কেননা মহিলা তার দ্বিতীয় স্বামীর কাছে থাকা অবস্থায় মেয়েটিকে দুধ পান করালেও এই সন্তান ও তার বুকের দুধে দ্বিতীয় স্বামীর কোনো অংশ ও প্রভাব নেই। তাই দ্বিতীয় স্বামী মেয়েটির দুধপিতা বলে গণ্য হবে না।

-বাদায়েউস সানায়ে ৩/৪০৯; আলমাবসূত, সারাখসী ৫/১৩৩; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৪/৩৭০; আদ্দুররুল মুখতার ৩/২২১

শেয়ার লিংক

রায়হান ফিরদাউস - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৪৩০৬. প্রশ্ন

মসজিদের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গায় যে সমস্ত ফলের গাছ আছে সেগুলোর ফল পাশের মাদরাসার ছাত্ররা খেতে পারবে কি না? আসলে এ ফলগুলোর হকদার কারা? বিষয়টি নিয়ে এলাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে। দ্রুত সমাধান জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

মসজিদের জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গার গাছের ফল মসজিদের সম্পদ। তা বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা মসজিদের ফান্ডে সংরক্ষণ করতে হবে, যা মসজিদের প্রয়োজনে বা উন্নয়নে খরচ করা হবে। মাদরাসার ছাত্র, এলাকাবাসী বা অন্য কারো জন্য বিনামূল্যে তা খাওয়া জায়েয হবে না। খেতে চাইলে কর্তৃপক্ষ থেকে তা ক্রয় করে নিতে হবে।

-ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩১০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭৭; আলবাহরুর রায়েক ৫/২০৪; আলইসআফ পৃ. ২২; রদ্দুল মুহতার ৪/৪৩২

শেয়ার লিংক

সাইফুল ইসলাম - মালিবাগ, ঢাকা

৪৩০৭. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় এক ব্যক্তি একটি মসজিদ ওয়াকফ করেছেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনিই সেই মসজিদের মুতাওয়াল্লী ছিলেন। এখন তার মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে মুতাওয়াল্লী হতে চাচ্ছে। সে বলছে, ‘আমার বাবা এই মসজিদ ওয়াক্ফ করেছেন এবং তিনি মুতাওয়াল্লীও ছিলেন। এখন তার মৃত্যুর পরে তার বড় ছেলে হিসেবে আমিই এই মসজিদের মুতাওয়াল্লী হব।’ কিন্তু এলাকাবাসী তাকে মুতাওয়াল্লী বানাতে চাচ্ছে না। অবশ্য অল্প কিছু মানুষ তাকে সমর্থন করছে। কিন্তু বাকিরা অন্য একজনকে মুতাওয়াল্লী বানাতে চাচ্ছে। আর ওয়াক্ফকারীও তার সন্তান মুতাওয়াল্লী হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলে যাননি। এখন আমরা জানতে চাচ্ছি যে, এমতাবস্থায় আমাদের কী করণীয়?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃত মুতাওয়াল্লীর বড় ছেলে যদি মুতাওয়াল্লী হওয়ার যোগ্য অর্থাৎ নামাযী ও আমানতদার হন এবং তার মধ্যে মসজিদ পরিচালনার যোগ্যতা থাকে, তাহলে তাকে মুতাওয়াল্লী বানাতে কোনো সমস্যা নেই; বরং বিশেষ কোনো সমস্যা না থাকলে তিনি অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য। আর যদি তিনি মুতাওয়াল্লী হওয়ার যোগ্য না হন, তাহলে মুসল্লীরা অন্য কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে মুতাওয়াল্লী বানাতে পারবেন। এতে মুতাওয়াল্লীর ওয়ারিশদের জন্য হস্তক্ষেপ করা বৈধ হবে না।

-আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২৩; আলমাবসূত, সারাখসী ১২/৪৪; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৩২; মাজমাউল আনহুর ২/৬০৩; আদ্দুররুল মুখতার ৪/৪২৪

শেয়ার লিংক

দুলাল মিয়া - টঙ্গী, গাজীপুর

৪৩০৮. প্রশ্ন

আমার ভাই এক চাষীকে এই শর্তে ধানি জমি বর্গা দিয়েছে যে, ধান উৎপন্ন হওয়ার পরে চাষী আমার ভাইকে পাঁচ মন ধান দিবে। আর বাকিটা সে নিবে। আমার ভাই চাষীকে বীজও দিয়েছেন। আর আমাদের জমিতে প্রায় ১০-১২ মন ধান হয়। আমরা জানতে চাচ্ছি যে, এভাবে জমি বর্গা দেওয়া কি ঠিক হয়েছে?

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই যেভাবে জমি বর্গা দিয়েছে তা জায়েয হয়নি। কেননা,  আপনার ভাই নিজের জন্য পাঁচ মন ধান পাওয়ার শর্ত করেছে। আর বর্গা চাষে উভয় পক্ষের কারো জন্য ফসলের নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা জায়েয নয়। বৈধভাবে করতে চাইলে ফসল শতকরা হারে বণ্টনের চুক্তি করা আবশ্যক। যেমন, এভাবে চুক্তি করা যে, উৎপাদিত ফসলের ৬০% নিবে চাষী, আর ৪০% নিবে জমির মালিক। অথবা উভয়ের সম্মতিতে অন্য যে কোনো পরিমাণও ঠিক করা যেতে পারে। আর এক্ষেত্রে বীজ যেহেতু আপনার ভাই দিয়েছে তাই জমির পুরো ফসল সে পাবে, আর চাষী তার কাজের পারিশ্রমিক পাবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ২৩/১৯; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২৫৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৩৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৩৫, ২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ৬/২৭৬, ২৭৯

শেয়ার লিংক

মুহিব্বুল্লাহ - ফেনী

৪৩০৯. প্রশ্ন

আমি ও আমার বন্ধু মিলে দশ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি চালের আড়ত দিয়েছি।

আমার পুঁজি চার লক্ষ টাকা আর বন্ধুর ছয় লক্ষ টাকা। ব্যবসা পরিচালনা আমি একাই করি। তাই তার সাথে আমার চুক্তি হয় যে, লাভের ৩৩% তার আর বাকিটা আমার। আর লোকসান হলে অর্ধেক সে বহন করবে আর বাকি অর্ধেক আমি। সে এতে রাজি হয়। প্রশ্ন হল, এভাবে চুক্তি করা কি বৈধ হয়েছে?

 

উত্তর

লভ্যাংশ কমবেশি করে বণ্টন করার চুক্তিটি বৈধ হয়েছে। তবে লোকসান অর্ধাঅর্ধি হারে বহন করার শর্ত করা বৈধ হয়নি। অবশ্য এ কারণে পুরো চুক্তি বাতিল হয়ে যায়নি। শুধু এ শর্তটি বাতিল গণ্য হবে। সুতরাং আপনারা উক্ত ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে চুক্তিটি এভাবে সংশোধন করে নিতে হবে যে, লোকসান হলে প্রত্যেককে নিজ নিজ মূলধন অনুপাতে তা বহন করতে হবে। অর্থাৎ যে ছয় লক্ষ টাকা প্রদান করেছে সে ৬০% এবং যে চার লক্ষ টাকা প্রদান করেছে সে ৪০% লোকসান বহন করবে।

-বাদায়েউস সানায়ে ৫/৮৩; ফাতহুল কাদীর ৫/৩৯৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৪৯১; রদ্দুল মুহতার ৪/৩০৫

শেয়ার লিংক

ইয়াকুব - গাজীপুর

৪৩১০. প্রশ্ন

আমি গ্রামের এক চাষীকে এক লক্ষ টাকা এই শর্তে দিয়েছি যে, তিন মাস পর সে আমাকে পাঁচ শত টাকা মন হিসেবে দুইশ মন ধান দিবে। টাকা দেওয়ার এক মাস পরেই আমার একটি ছেলে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফলে চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন আমার বড় ভাই থেকে ৫০,০০০/- টাকা এই বলে ঋণ নিয়েছি যে, দু’মাস পর ঐ কৃষক দুইশ মন ধান দিলে আমরা দু’জনে একশত মন করে ভাগ করে নিব। আর এভাবে তার ঋণ পরিশোধ হয়ে যাবে। জানার বিষয় হল, ভাইয়ের সাথে এই ঋণ চুক্তিটি কি সহীহ হয়েছে? দয়া করে জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ভাই থেকে ঋণ নিয়ে বিনিময়ে আপনার পাওনা ধান দেওয়ার চুক্তি করা বৈধ হয়নি। কেননা আপনাদের এ লেনদেন মূলত কৃষক থেকে আগাম চুক্তিতে ক্রয়কৃত ধানের বিক্রি চুক্তি। আর আগাম চুক্তিতে ক্রয়কৃত পণ্য হস্তগত করার পূর্বে তা অন্যত্র বিক্রি চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে আপনার কর্তব্য হল ৫০,০০০/- টাকাই ফেরত দেওয়া।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/৩৪৩; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৬৪; রদ্দুল মুহতার ৫/২১৮

শেয়ার লিংক

তৌহিদুল ইসলাম - মাধবদী, নরসিংদী

৪৩১১. প্রশ্ন

নানা মারা যাওয়ার পর আমার দুই মামা অনেক সম্পদ পেয়েছেন। এখনো তা অবণ্টিত। বড় মামা ঢাকায় থাকার কারণে গ্রামের জায়গা জমি দেখাশুনা করতে পারেন না। এদিকে ছোট মামা সব জমিতে চাষ করে নিজে একাই ভোগ করেন। গাছের ফল-ফলাদি সে একাই নেয়। এতদিন বড় মামা কিছু বলেননি। একদিন  দু’জনের কথা কাটাকাটিতে বড় মামা বললেন, আমার দু’বছরের ৯০ আড়ি ধান, আর গাছের ফল-ফলাদির ৪০ হাজার টাকা দিয়ে দিতে হবে। ছোট মামা বলে, সবগুলো আমি দেখাশুনা করেছি। আপনি কিছু পাবেন না। পরবর্তীতে তারা দু’জনই অনুতপ্ত হয়। এখন উভয়ে উভয়ের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে।

১. সব জমিতে ছোট মামার চাষ করাটা অন্যায় হলে এখন তার কী করতে হবে?

২. চাষের এক অংশ বড় মামাকে দিতে হবে কি না?

৩. ছোট মামা ফল-ফলাদি কিছু খেয়েছেন কিছু বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে কী করতে হবে? দয়া করে সব বিষয় জানাবেন।

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মনোমালিন্য হওয়ার আগে বড় ভাইয়ের মৌন সম্মতি ও সমঝোতার মাধ্যমেই ছোট ভাই চাষাবাদ ও বাগান দেখাশোনা করে আসছিল। ছোট জনের এসব কাজে বড় জনের কোনো আপত্তি ছিল না। এরপর কোনোদিন হয়ত রাগ হওয়ার কারণে আপনার বড় মামা ঐ কথাগুলো বলেছেন। তাই এতদিন যাবৎ উক্ত জমিগুলোতে আপনার ছোট মামার চাষ করাটা অন্যায় হয়নি। এবং এতদিন ছোট ভাই যেহেতু নিজেই চাষবাস করেছে, বড় ভাই তাতে কোনো অংশ দাবি করেনি তাই সব ফসলের মালিক সেই হবে। তবে যেদিন থেকে বড় ভাই আপত্তি করেছে সেদিনের পর থেকে চাষাবাদ করতে হলে হয় প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ ভাগ করে নিয়ে তাতে করবে, অন্যথায় বর্গা ইত্যাদি কোনো শরীয়তসম্মত পন্থায় করবে। এমনিভাবে জমিতে যদি ফলগাছ থাকে তাহলে তার ফলফলাদি সমানভাবে ভাগ করে নিবে।

উল্লেখ্য যে, মীরাসী সম্পত্তি যত দ্রুত সম্ভব বণ্টন করে নেওয়া শরীয়তের নির্দেশ। এ নির্দেশ পালন করলে এ ধরনের ঝগড়া-বিবাদে পড়ার আশংকা থাকে না।

-আলবাহরুর রায়েক ৫/১৬৭; রদ্দুল মুহতার ৪/৩০৪; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যা, মাদ্দা ১০৭৬, ১০৮৯, ১০৮৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৭/৫১৪; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসী ৪/১৯

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ আল মামুন - মনিরামপুর, যশোর

৪৩১২. প্রশ্ন

গত ঈদে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসের টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি টিকেট শেষ। মন খারাপ করে ফিরে আসছিলাম। এক লোক ডেকে বলল, আমার কাছে একটা টিকেট আছে। ৫০০ টাকায় হলে নিতে পারবেন। আমার খুব প্রয়োজন ছিল। তাই নিরুপায় হয়ে ৪০০ টাকার টিকেট ৫০০ টাকায়ই কিনে নিলাম। জানতে চাচ্ছি, এভাবে যারা বাস বা ট্রেনের টিকেট কিনে রেখে পরবর্তীতে মানুষের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে তাদের এ কাজটা কি ঠিক? দয়া করে জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

ঐ ব্যক্তির জন্য ৪০০ টাকার টিকেট ৫০০ টাকায় বিক্রি করা জায়েয হয়নি। এই অতিরিক্ত টাকা তার গ্রহণ করা নাজায়েয। টিকেট কিনে এভাবে ব্যবসা করা জায়েয নয়। কেননা একটি টিকেট কেনার অর্থ হল একটি সিট ভাড়া নেওয়া। আর এভাবে সিট ভাড়া নিয়ে বেশি ভাড়ায় অন্যের কাছে হস্তান্তর করা নাজায়েয।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৫/১৩০; আলমুহীতুল বুরহানী ১১/২৬৮;

শেয়ার লিংক

মামুন - ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়

৪৩১৩. প্রশ্ন

আমি একজনকে ২,০০০/- টাকা কর্জ দিলাম। বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে এ দ্বারা ৪০ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। আমি তাকে বললাম, ১ বছর পর ফেরত দিলেই চলবে। ইত্যবসরে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় উক্ত টাকায় ২৫ কেজি খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। এখানে যদি আমি ৩,২০০ টাকা পেতাম তাহলে পূর্বের ন্যায় ৪০ কেজি শস্য কিনতে পারতাম। এক্ষেত্রে শরীয়তের ফয়সালা কী? আমি এহসান করব? তার কাছ থেকে সুদ হিসেবে অতিরিক্ত কিছু নেব এমন আগ্রহ আমার নেই; কিন্তু আমি ক্ষতিগ্রস্ত কেন হব?

আবার দাম যদি কমে যায় সেক্ষেত্রে ধরা যাক উক্ত টাকায় ৫০ কেজি শস্য পাওয়া যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার জন্য (২,০০০/- টাকার কম) ৪০ কেজির দাম ১,৬০০ টাকা দেওয়া ঠিক হবে কি না?

উত্তর

আপনি যদি কাউকে ৪০ কেজি ধান ঋণ দেন তবে বছর শেষে আপনি সে পরিমাণ অর্থাৎ ৪০ কেজি ধানই নিবেন। সেক্ষেত্রে ধানের দাম যদি অর্ধেক হয়ে যায় তবুও আপনি বেশি নিতে পারবেন না। আবার ধানের দাম বেড়ে গেলেও আপনি কম নিবেন না। টাকার ঋণের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি তেমনি। সাধারণ গতিতে এর বিনিময়মূল্য কিছুটা বেড়ে বা কমে গেলেও করজে হাসানার ক্ষেত্রে তা বেশ-কম করা যায় না; বরং যে পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়েছিল সে পরিমাণই ফেরত নিতে পারবেন।

উল্লেখ্য, করজে হাসানা দেওয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে একটি ফযীলতপূর্ণ ও মহৎ আমল। সাধারণতঃ বাহ্যিকভাবে অর্থনৈতিক কিছু ক্ষতি মেনে নিয়েই তা প্রদান করা হয়ে থাকে। তাই এক্ষেত্রে পুঁজিবাদী মানসিকতা পোষণ করা ও সংকীর্ণমনা হওয়া উচিত নয়। ঋণ দেওয়ার কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হয় তা মেনে নেওয়ার কারণেই এতে অর্থ সদকা করার সওয়াব পাওয়া যায়। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৯১১,

-মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ৩/২২৬১; ফিকহুন নাওয়াযিল ৩/২৬

শেয়ার লিংক