আব্দুল্লাহ মামুন - জয়দেবপুর, গাজীপুর

৩৩৮১ . প্রশ্ন

আমার স্ত্রী দেড়মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার গর্ভ নষ্ট হয়ে যায়। আর তা কিছু গোশতের টুকরার আকারে বেরিয়ে আসে। এরপর ৫/৬ দিন পর্যন্ত রক্ত আসে। স্রাবের সময়ও তার এমনই দেখা যায়। ঐ দিনগুলোতে সে নামায পড়েনি। আমার স্ত্রী মুফতী সাহেবের নিকট জানতে চায় যে, তার ঐ নামায কি কাযা করতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে গর্ভটির যেহেতু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়নি তাই ৫/৬ দিন পর্যন্ত যে রক্ত এসেছে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে;নেফাস নয়। আর উভয় অবস্থাতেই যেহেতু মহিলাদের নামায পড়া থেকে বিরত থাকা জরুরি তাই আপনার স্ত্রী ঐ দিনগুলোর নামায ছেড়ে দিয়ে ঠিকই করেছেন। তা কাযা করতে হবে না।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২১৯; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৫-১৬৬; আদ্দুররুল মুখতার ১/ ৩০২-৩০৩

শেয়ার লিংক

আবুল হাসানাত - জামিয়াতুল ঈমান

৩৩৮২. প্রশ্ন

যদি কেউ নামাযে নিশ্চিতভাবে ভুল না হওয়া সত্ত্বেও ভুল হয়েছে ভেবে সাজদায়ে সাহু করে তাহলে তার নামাযে কোনো সমস্যা হবে কি? দয়া করে জানাবেন।


উত্তর

নামাযে ভুল হওয়ার সন্দেহ প্রবল হলেই কেবল সাহু সিজদা করার নিয়ম রয়েছে। নিছক সন্দেহের উপর সাহু সিজদা করা ঠিক নয়। অবশ্য ভুলের ধারণা প্রবল না হওয়া সত্ত্বেও কেউ সাহু সিজদা করলে তার নামায আদায় হয়ে যাবেতবে মাকরূহ হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৯৯; ইমদাদুল মুফতীন ৩১৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইশতিয়াক - নারায়ণগঞ্জ

৩৩৮৩. প্রশ্ন

আমি একজন ট্রাক চালক। ট্রাক নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর করতে হয়। অনেক সময় জুমার দিন সফরে বের হতে হয়। এ অবস্থায় আমার জন্য কি জুমার দিন ১০/১২ টার সময় সফরে বের হওয়া জায়েয হবে?

উল্লেখ্য যে, পথে জুমার নামায আদায় করা সম্ভব হয় না।


উত্তর

জুমার দিন সফরে বের হয়ে পথিমধ্যে জুমা আদায় করা সম্ভব হলে জুমার দিন যে কোনো সময় সফরে বের হওয়া জায়েয আছে। আর সূর্য ঢলার পূর্বে সর্বাবস্থায় সফরে বের হওয়া জায়েয আছে। কিন্তু সফরে বের হলে পথিমধ্যে জুমা পড়া সম্ভব না হওয়ার আশঙ্কা হলে সূর্য ঢলার পর বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সফরে বের হওয়া মাকরূহ। তবে বিশেষ কোনো ওজরের ক্ষেত্রে আবশ্যক হয়ে পড়লে বের হতে পারবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৫১৫০; শরহুস সিয়ারিল কাবীর ১/৪৯; শরহুল মুনইয়া ৫৬৫; ইলাউস সুনান ৮/৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/১৬২; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ২৫/৩৯; আলমাজমূ ৪/৩৬৫;

শেয়ার লিংক

লুৎফুর রহমান - ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত

৩৩৮৪. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে এক অপরিচিত জায়গায় আমরা কয়েকজন যোহরের ওয়াক্তে খোলা ময়দানে জামাতের সাথে যোহরের নামায আদায় করি। নামায শেষ হলে স্থানীয় একজন বললেন, আমাদের কিবলার দিক ভুল ছিল। পরবর্তীতে পুনরায় নামায আদায় করতে চাইলে কেউ কেউ বলেছেন, নামায হয়ে গেছে। তাই আর পড়া হয়নি।

এখন আমার জানার বিষয় হল, উপরোক্ত অবস্থায় আমাদের নামায কি আসলেই সহীহ হয়েছে? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উল্লেখ্য যে, কিবলার দিক নিয়ে আমরা কেউ সন্দিহান ছিলাম না। তাই যাচাই করার যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যাচাই করা হয়নি।


উত্তর

নামাযে কিবলামুখী হওয়া ফরয। আর প্রশ্নোক্ত অবস্থায় যেদিকে নামায পড়া হয়েছে সেটা যেহেতু কেবলার দিক ছিল না তাই আদায়কৃত নামায হয়নি। তা পুনরায় পড়ে নিতে হবে। যারা নামায হয়ে গেছে বলেছে তাদের কথা সহীহ নয়।

-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৪; বাদায়েউস সানায়ে ১/৩১০; রদ্দুল মুহতার ১/৪৩৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৫; আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৭

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ কোরবান আলী - মিরপুর, ঢাকা

৩৩৮৫. প্রশ্ন

ক) কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে মাগরিব নামাযের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে মসজিদের অস্থায়ী ইমাম মাইকে বয়ান আরম্ভ করেন। যা ইতিপূর্বে করা হয়নি। তাই জানতে চাই, এই সময় বয়ান করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে কি?

খ) উক্ত সময় ইমাম সাহেবের বয়ানের বিষয়ে চার মাযহাবের বিধান কী? মাগরিবের নামাযে কোনো কোনো মাযহাবে আযানের পর ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নামায পড়ার বিধান আছে। তাই কেউ নামায পড়বে কেউ ইমামের বয়ান শুনবে। এক্ষেত্রে ইমাম সকল মাযহাবের মুসল্লি নিয়ে নামায কীভাবে পড়বেন?


উত্তর

ক) ওয়ায-নসীহতদ্বীনী বয়ান ও মাসআলা-মাসাইলের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসল্লিগণকে দ্বীনী কথাবার্তা ও প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসাইলের তালিম দেওয়া একজন ইমামের মৌলিক দায়িত্ব। তবে ওয়ায-নসীহতবয়ান ইত্যাদির জন্য মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়টি উপযুক্ত সময় নয়। কেননা মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে স্বল্প বিরতি থাকে। যা নামাযের প্রস্তুতির জন্যই প্রয়োজন। এছাড়া এত অল্প সময়ে বয়ানে বা মাসআলার উপস্থাপনায় মুসল্লিদের কাছে অনেক বিষয় অস্পষ্ট থেকে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত আযান-ইকামতের মধ্যবর্তী এ সময়টি হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী দুআ কবুলের সময়। তাই এ সময় ওয়ায করা বা মাসআলা বলার জন্য উত্তম সময় নয়। অবশ্য ইমাম চাইলে কোনো দিন প্রয়োজনে এ সময়ও কোনো বিষয় বা মাসআলা আলোচনা করতে পারেন। কেননা এ সময় অল্পস্বল্প কিছু বলা তো নিষিদ্ধ নয়। তাই কোনো দিন এ সময় আলোচনা করতে চাইলে জামাতের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আলোচনা শেষ করে দেওয়া উচিত হবে। আর সংক্ষিপ্ত এ সময়ে দুর্বোধ্য ও জটিল কোনো মাসআলা বা বিষয়ের আলোচনা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। জটিল কোনো বিষয়ের আলোচনা করা জরুরি হলে তা ভিন্ন কোনো সময়ে করবে।

খ) মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে তা জায়েয আছে। খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এ সময় কোনো নামায পড়তেন না।

যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে যেআবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কাউকে উক্ত নামায পড়তে দেখিনি। -সুনানে আবু দাউদহাদীস : ১২৭৮

মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,মুহাজির সাহাবীগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামায পড়তেন না। আর আনসারী সাহাবীগণ তা পড়তেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস : ৩৯৮৪

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,আবু বকর,উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস : ৩৯৮৫

হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর ও উমর রা. তা পড়েননি। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩

সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই যেহেতু এ সময় কোনো নফল নামায পড়তেন না এবং এ সময়ের নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত নেইঅন্যদিকে মাগরিবের নামায আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত আদায় করার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী,মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দু রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি।

আর শাফেয়ী মাযহাবে এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী এ সময় দু রাকাত নফল পড়া মুস্তাহাব। আর অপর মত অনুযায়ী তা জায়েয। যারা মুস্তাহাব বলেন তারা এ সংক্রান্ত একটি হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন। হাদীসটি হল-

بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة، ثم قال في الثالثة : لمن شاء

 (অর্থ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনপ্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেনযে ব্যক্তি চায়।-সহীহ বুখারীহাদীস : ৬২৭

তবে ভিন্নমতের লোকজন বলেন যে,এটি শুধু জায়েয হওয়ার দলিল,মুস্তাহাব হওয়ার নয়।

এখন প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের দেশের মুসল্লিগণ ব্যাপকভাবে হানাফী মাযহাবের অনুসারী আর সে অনুযায়ী মাগরিবের আযানের পর ফরযের পূর্বে যেহেতু নফল নামায পড়ার বিশেষ কোনো বিধানও নেই তাই ইমাম যদি একান্ত প্রয়োজনে মাগরিবের ফরযের পূর্বে কোনো আলোচনা করেন তবে তার এ আলোচনা এ সময়ের নামাযের প্রতিবন্ধক হবে না। অবশ্য কোনো মুসল্লি যদি এ সময় নফল নামাযে দাঁড়িয়ে যায় তবে তার নামাযে যেন ব্যাঘাত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা সকলের কর্তব্য। অন্যদিকে ইমাম এ সময় কোনো আলোচনা শুরু করে দিলে তখন কারো জন্য নফলে দাঁড়ানোও উচিত নয়। -ফতহুল কাদীর ১/৩৮৮-৩৮৯আদদুররুল মুখতার ২/১৪মাওয়াহিবুল জালীল ২/৩৭০আলমুগনী ২/৫৪৬

শেয়ার লিংক

হুসাইন আহমাদ - বেতাগী, বরগুনা

৩৩৮৬. প্রশ্ন

আমাদের এলাকার জামে মসজিদে আযানের পর নামাযের আনুমানিক ৫ মিনিট পূর্বে মুয়াযযিন সাহেব মাইকে

سووا صفوفكم، فإن تسوية الصفوف من إقامة الصلاة .

এবং নামাযের ৫ মিনিট বাকি আছে বলে মুসল্লিদেরকে আহ্বান করে।

জানার বিষয় হল, জামাতের পূর্বে এরূপ বলে ডাকা যাবে কি না? সহীহ হাদীসের আলোকে জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী আযানের পর পুনরায় ঐভাবে ডাকাডাকি করা ঠিক নয়। তাছাড়া যে হাদীসটি বলে ডাকাডাকি করা হয় তা এই সময় বলাও প্রযোজ্য নয়। কেননা হাদীসটির অর্থ হলতোমরা কাতার সোজা কর। কেননা কাতার সোজা করা নামায কায়েম করার অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত কথা জামাত শুরু করার ঠিক আগ মুহূর্তে মসজিদে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলতেন যেন সকলে কাতার সোজা করে নেয়।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাতার সোজা করার জন্য ঐ কথা নামাযের ইকামত হয়ে যাওয়ার পর বলতেন। -সহীহ বুখারীহাদীস ৭১৯সহীহ মুসলিমহাদীস ৪৩৬

এছাড়া সাহাবায়ে কেরামও কাতার সোজা করার কথা বলতেন ইকামত হয়ে যাওয়ার পর। নাফে রাহ. বলেনউমর রা. এক ব্যক্তিকে কাতার সোজা করার জন্য পাঠাতেন। ঐ ব্যক্তি উমর রা.-এর নিকট যতক্ষণ পর্যন্ত কাতার সোজা হওয়ার সংবাদ না দিতেন উমর রা. ততক্ষণ পর্যন্ত তাকবীর বলতেন না। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ২৪৩৭

মালেক ইবনে আবু আমের রাহ. বলেনযখন নামাযের ইকামত হত উসমান রা. লোকদেরকে বলতেনতোমরা কাতার সোজা করে নাওকাঁধে কাঁধ মিলাও। কেননা কাতার সোজা করা নামাযের পূর্ণতার অংশ। এরপর তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত তাকবীরে তাহরীমা বলতেন না যতক্ষণ না লোকেরা সংবাদ দিত যেকাতার সোজা হয়েছে। তখন তিনি তাকবীর বলে নামায শুরু করতেন। -মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ২৪৪২

সুতরাং কাতার সোজা করার কথা তো বলা হবে জামাতের সময় হওয়ার পর মসজিদে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যেই। এ কথা বাইরের লোকদেরকে ডাকাডাকির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা অনর্থক।

আর আযানের পর পুনরায় ডাকাডাকির প্রচলন গড়লে এতে আযানের গুরুত্ব কমে যাবে। সেক্ষেত্রে অনেক মানুষ আযানকে গুরুত্ব না দিয়ে দ্বিতীয় ঘোষণার অপেক্ষায় থাকবে।

আযানের অন্যতম উদ্দেশ্য হললোকদেরকে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে অবহিত করা এবং জামাতের সময় অতি নিকটে তা জানানো। যেন আযান শুনে লোকজন কর্মব্যস্ততা ছেড়ে নামাযের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে হাজির হয়ে যায়।

শেয়ার লিংক

আবুল খায়ের নূর - হবিগঞ্জ, সিলেট

৩৩৮৭. প্রশ্ন

আমার এক বন্ধু তার নিজ খরচে আমাকে হজ্বে নিয়ে গেছে। আমার উপর বর্তমানে হজ্ব ফরয নয়। আমি জানতে চাই যে, পরবর্তীতে আমি যদি হজ্বের খরচ সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হই তাহলে আমাকে কি পুনরায় হজ্ব করতে হবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

ফরয হজ্ব আদায় হওয়ার জন্য নিজ খরচে হজ্ব করা জরুরি নয়। বরং অন্যের খরচে হজ্ব করলেও ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যায়। তবে যদি কেউ ইচ্ছা করে নফল হজ্ব আদায়ের নিয়ত করে থাকে সেটা ভিন্ন কথা। এক্ষেত্রে তার ফরয হজ্ব আদায় হবে না। তবে সাধারণ হজ্বের নিয়তে করলে ফরয হজ্বই আদায় হবে। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইহরামের সময় আপনি নফল হজ্বের নিয়ত না করে থাকলে এর দ্বারা আপনার ফরয হজ্বই আদায় হয়েছে। পরবর্তীতে সামর্থ্যবান হলেও আপনার উপর পুনরায় হজ্ব করা ফরয হবে না। পরবর্তীতে হজ্ব করলে তা নফল হিসেবেই গণ্য হবে।

- ফাতাওয়া খানিয়া ১/২৮১; রদ্দুল মুহতার ২/৪৬০

শেয়ার লিংক

বিনতে মুহাম্মাদুল্লাহ - আশরাফাবাদ, ঢাকা

৩৩৮৮. প্রশ্ন

মাস কয়েক আগে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের দিন আমার শাশুড়ি কিছু অলংকার নিয়ে এসে বলেন, এটা আমার পক্ষ থেকে গিফট, এটা আমার বড় ছেলের পক্ষ থেকে, এটা আমার ছোট ছেলের পক্ষ থেকে। আমাকে ঐ অলংকারগুলো পরিয়েও দেন।

আমার জানার বিষয় হল, এ অলংকারগুলোর কি আমি মালিক হয়ে গেছি, নাকি আমার স্বামী চাইলে এগুলোকে মহর হিসেবে গণ্য করতে পারবেন? বিষয়টির সমাধান জানালে কৃতজ্ঞ হব।


উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী ঐ অলংকারগুলো দেওয়ার সময় আপনার শাশুড়ি যেহেতু তার পক্ষ থেকে এবং স্বামীর দুই ভাইয়ের পক্ষ থেকে গিফটের (হাদিয়ার) বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন তাই ঐ অলংকারগুলো আপনার জন্য হাদিয়া হিসেবেই গণ্য হবে। সেগুলোর মালিক সরাসরি আপনিই। আপনার স্বামীর জন্য এ অলংকারগুলো মহর হিসেবে গণ্য করা জায়েয হবে না। কেননা মহর দেওয়ার দায়িত্ব স্বামীর উপর। স্বামী নিজে কিংবা তার পক্ষ থেকে কেউ মহর হিসেবে আদায় করলেই তা মহর হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু স্বামী পক্ষের আত্মীয়স্বজন স্ত্রীকে হাদিয়া হিসেবে কোনো কিছু দিলে তা স্বামী দিয়েছে বলে ধর্তব্য হবে না। সুতরাং স্বামীর জন্য সেগুলোকে মহর হিসেবে গণ্য করার সুযোগ নেই।

-মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ পৃ. ১৬২; শরহুল মাজাল্লাহ, খালেদ আতাসী ৩/৩৪৭-৮; রদ্দুল মুহতার ৩/১৫৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদুল্লাহ - ঝিগাতলা, ঢাকা

৩৩৮৯. প্রশ্ন

আমি জানি যে, শাশুড়িকে বিয়ে করা যায় না। এখানে দুটি বিষয় একটু পরিষ্কারভাবে জানালে আমি উপকৃত হব :

১। বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে মিলন না হলেও কি শাশুড়িকে বিয়ে করা নাজায়েয হয়ে যায় এবং তার সাথে দেখা করা জায়েয হয়ে যায়?

২। স্ত্রী মৃত্যুবরণ করার পরও কি শাশুড়ি মাহরামের অন্তর্ভুক্ত থাকে। তখনও কি তার সাথে দেখা-সাক্ষাত জায়েয?


উত্তর

জীশুধু বিবাহের দ্বারাই শাশুড়ি (স্ত্রীর আপন মা) সম্পূর্ণরূপে হারাম হয়ে যায়। স্ত্রীর সাথে মিলন হোক বা না হোক এবং স্ত্রী জীবিত থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় শাশুড়ি মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বিবাহ করা হারাম এবং তার সাথে দেখা দেওয়া জায়েয। এমনকি স্ত্রীর মৃত্যুর পরও তার সাথে দেখা দেওয়া জায়েয।

কুরআন মাজীদে সূরা নিসার ৩২ নং আয়াতে শাশুড়ির সাথে বিবাহ হারাম হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

প্রসিদ্ধ তাফসীরগ্রন্থ রূহুল মাআনীতে আল্লামা আলূসী রাহ. বলেনকুরআন মাজীদে وأمهات نسائكم (স্ত্রীর মাতাগণ) এই আয়াতে স্ত্রীর সাথে মিলন হোক বা না হোক সব ধরনের স্ত্রীর মা উদ্দেশ্য। -তাফসীরে রূহুল মাআনী ৪/২৫৭

একটি হাদীসে এসেছেযে ব্যক্তি কোনো মহিলাকে বিবাহ করবে তার সাথে মিলন হোক বা না হোক (সর্বাবস্থায়) তার মায়ের  সাথে বিবাহ নাজায়েয।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, ৬/২৭৩; আলমাবসূত, সারাখসী ৪/১৯৯; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৩১

শেয়ার লিংক

আনোয়ার হুসাইন - মুন্সীগঞ্জ

৩৩৯০. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় জামে মসজিদ কমিটি আমাদের গ্রামের এক বাসিন্দা থেকে জামে মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিম দিকের ৮ শতাংশ জমি সাব কবলা ক্রয়ের জন্য ১,৭০,০০০/- (এক লক্ষ সত্তর হাজার) টাকা শতাংশ হিসেবে ২,২০,০০০/- (দুই লক্ষ বিশ হাজার) টাকা বায়না চুক্তি করে। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয় যে, অদ্যাবধি তিনি মসজিদকে জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে আমরা মসজিদ কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রামের মুরব্বিদের নিয়ে তার বাসায় গিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার অনুরোধ করি। সে সভায় তিনি আমাদেরকে জমি রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তবে শর্ত দেন যে, গ্রামে সে জমির পাশে তাদের আত্মীয়ের নিকট তাদের জমি বেদখল হয়ে আছে সেগুলো আদায় করে দেওয়ার। আমরা তাকে আমাদের সহযোগিতা করার কথা দেই। কিন্তু যে তারিখে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা ছিল সেই তারিখে তিনি উপস্থিত হননি। এরপর থেকে তার সাথে মোবাইল ফোনে কয়েকবার কথা হলেও তিনি বারবার আমাদের এড়িয়ে যান।

মসজিদটি আমাদের গ্রামের একমাত্র মসজিদ। বর্তমানে মসজিদটি দ্বিতল বিশিষ্ট ৮৯০ বর্গফুট। এত ছোট মসজিদে আমাদের সম্পূর্ণ গ্রামের প্রায় ১০০০ (এক হাজার) জন মুসল্লির জুমার নামায আদায় করতে সমস্যার সম্মুখিন হতে হচ্ছে।

এ অবস্থায় আমাদের মসজিদটি পুনঃনির্মাণের জন্য উক্ত ব্যক্তির বায়নাকৃত (জমিটি বর্তমানে মসজিদ কমিটির দখলে আছে) জমিতে আমরা মসজিদটি সম্প্রসারণ করতে পারি কি না? সম্প্রসারণকৃত স্থানে ওয়াক্তিয়া ও জুমার নামায আদায়ে কোনো সমস্যা হবে কি? সমাধানের জন্য আপনার সুচিন্তিত মতামত কামনা করছি।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির সাথে বায়না চুক্তি সম্পন্ন করার দ্বারা উক্ত জমির বিক্রি সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং জমিটি মসজিদের দখলে থাকার কারণে তাতে মসজিদের মালিকানাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। এখন বিক্রেতার দায়িত্ব হল,জমিটি মসজিদ বরাবর রেজিস্ট্রি করে দেওয়া। আর মসজিদ কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে বকেয়া মূল্য নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করে দেওয়া। এক্ষেত্রে বিক্রেতার জন্য জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিতে বিলম্ব করা বা অস্বীকৃতি জানানোর কোনো সুযোগ নেই। এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে অন্যের হক আটকে রাখার মতো বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর জমিটির উপর যেহেতু মসজিদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তাই রেজিস্ট্রি কাজে বিলম্ব হলেও এখন ঐ জায়গায় মসজিদ সম্প্রসারণ করা যাবে। তবে রেজিস্ট্রির সময়ই বিক্রেতার অবশিষ্ট মূল্য অবশ্যই পরিশোধ করে দিতে হবে। 

-কিতাবুল হুজ্জা আলা আহলিল মাদীনা ১/৭২৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৬২; মাজাল্লাতুল আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ১৬৭, ৩৬৯; রদ্দুল মুহতার ৪/৫০৬; বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪৮২; শরহুল মাজাল্লাহ, খালেদ আতাসী ২/৩৫৭

শেয়ার লিংক

আবু তাহের - পুলিশলাইন, কুষ্টিয়া

৩৩৯১. প্রশ্ন

আমি জানুয়ারি মাস থেকে মাসিক আলকাউসারের নিয়মিত পাঠক। আলহামদুলিল্লাহ আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। দুআ করি আল্লাহ তাআলা যেন আপনাদের দ্বারা আরো বেশি দ্বীনের খেদমত নেন এবং একে নাজাতের কারণ বানান। আমীন।

আমার জানার বিষয় হল, ক) আকীকা কী ও তার হুকুম কী? খ) আকীকা আদায়ের সময় নির্দিষ্ট আছে কি না এবং তা আদায়ের নিয়ম কী? গ) নিজের আকীকা নিজেই আদায় করতে পারবে নাকি তা পিতাকেই আদায় করতে হবে এবং এ আকীকার গোশত পিতামাতা ও আত্মীয়রা খেতে পারবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

সন্তান জন্মের পর আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের লক্ষ্যে জন্মের সপ্তম দিনে পশু যবাই করাকে আকীকা বলে। আকীকা করা মুস্তাহাব। হাদীস শরীফে এর প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনযে ব্যক্তি সন্তানের আকীকা করার ইচ্ছা করে সে যেন তা পালন করে। ছেলের জন্য সমমানের দুটি ছাগল। আর মেয়ের জন্য একটি। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস : ৭৯৬১

অন্য হাদীসে আছেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনসন্তানের সাথে আকীকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু যবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও।-সহীহ বুখারীহাদীস : ৫৪৭২

সন্তান জন্মের সপ্তম দিন আকীকা করা উত্তম। জামে তিরমিযীর এক হাদীসে সপ্তম দিনে আকীকা করার কথা বলা হয়েছে। -হাদীস : ১৫২২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দৌহিত্রদ্বয় হাসান ও হুসাইন রা.-এর আকীকা সপ্তম দিনে করেছেন।-সুনানে আবু দাউদহাদীস : ২৮৩৪

তাই সম্ভব হলে সপ্তম দিনেই আকীকা করা উত্তম।

সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে বা একুশতম দিনে করা ভালো। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেনআকীকা সপ্তম দিনে হওয়া উচিত। তা সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে। এবং তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে। -মুসতাদরাকে হাকেমহাদীস ৭৬৬৯

অবশ্য একুশ দিনের মধ্যে করা না হলে পরবর্তীতেও তা আদায় করা যাবে।

সন্তানের আকীকা করার দায়িত্ব তার পিতার। অবশ্য অন্য কেউ বা নিজেও নিজের আকীকা করা জায়েয আছে।

আকীকার গোশত সন্তানের পিতামাতাআত্মীয়স্বজন সকলেই খেতে পারবে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যেতিনি বলেনআকীকার গোশত নিজে খাবেঅন্যকে খাওয়াবে এবং কিছু সদকা করবে। -মুসতাদরাকে হাকেমহাদীস ৭৬৬৯

সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রাহ. বলেনআমি আতা রাহ.-কে বলতে শুনেছি, ... আকীকার গোশত তার পরিবার খেতে পারবে এবং হাদিয়াও দিতে পারবে। ... আমি জিজ্ঞাসা করলামতা কি সদকা করে দিতে হবেতিনি বললেননা,তুমি চাইলে খেতে পার এবং হাদিয়াও দিতে পার।... (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস : ৭৯৬৯)

-ফাতহুল বারী ৯/৫০৭; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৩/৩৭০; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত ৩০/২৭৬; তুহফাতুল মাওদূদ বিআহকামিল মাওলূদ ৭৮

শেয়ার লিংক

আবদুল আওয়াল - রামপুরা, ঢাকা

৩৩৯২. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি এক অবিবাহিতা নারীর সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় ফলে একটি পুত্রসন্তান জন্ম হয়। বিষয়টি এলাকার অনেক মানুষই জানে। সেই ব্যক্তি মারা গেলে তার অবৈধ সন্তান উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তির দাবি করে। তখন মৃতের বৈধ ছেলে-মেয়ে ও অন্যান্য ওয়ারিসগণ তাকে সম্পত্তি দিতে অস্বীকার করে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এর সমাধান কী? জারজ সন্তান কি এক্ষেত্রে মিরাসের অধিকার লাভ করবে? আশা করি উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন।


উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের দাবিদার উক্ত সন্তান ঐ ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে না। তার বংশসূত্র তার মা থেকে প্রমাণিত হবে এবং সে তার থেকে মিরাস পাবে। হাদীস শরীফে এসেছেনবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনযে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন নারী অথবা বাদীর সথে ব্যভিচারে লিপ্ত হল (এবং তাতে সন্তান জন্ম নিল) তাহলে সেটা জারজ সন্তান। সে ব্যভিচারী থেকে মিরাস পাবে নাব্যভিচারীও তার থেকে মিরাস পাবে না। -জামে তিরমিযী,হাদীস : ২১১৩

সুতরাং এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তির মিরাসের দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৩২০৬৫; ইলাউস সুনান ৮/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ৮/৫০৩; আলমুহীতুল বুরহানী ২৩/৩৬৪; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৭/৪৯১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২০/৩৪৭

শেয়ার লিংক

মাহবুবুল আলম - কুমিল্লা

৩৩৯৩. প্রশ্ন

হজ্বের একটি বইয়ের মধ্যে দেখতে পাই, ফরয তাওয়াফে অতিরিক্ত ভীড় হলে আল্লাহুম্মা ওয়াক্বিয়াতান কাওয়াক্বিয়াতিল ওয়ালীদ- এ দুআ পড়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলে গায়েব থেকে সাহায্য আসবে। আমি কয়েকজনকে এর অর্থ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলতে পারেননি। দয়া করে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।

 

উত্তর

এ দুআটি তাওয়াফের সময় পড়ার কথা হাদীসে পাওয়া যায়নিবরং এটি সাধারণ সময়ের একটি দুআ হিসেবে হাদীসে এসেছে। একটি যয়ীফ সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেনরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুআর মধ্যে বলতেন-

اللهم واقية كواقية الوليد

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে হেফাযত করুন যেমনি আপনি নবজাতক শিশুকে হেফাযত করেন। -আদ দুআতাবারানী,হাদীস ১৪৪৬মুসনাদে আবু ইয়ালাহাদীস ৫৫০২

আল্লামা আসকারী রাহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেনঅর্থাৎ নবজাতকের অক্ষমতা ও দুর্বলতাবশত আল্লাহ তাআলা তাকে যেভাবে কীট-পতঙ্গ ও জীব-জন্তুর অনিষ্ট থেকে হেফাযত করেন ঠিক তেমনি আমাকে হেফাযত করুন। -ফয়যুল কাদীর ২/১২০

তাই উক্ত দুআকে তাওয়াফের ভীড় থেকে রক্ষা পাওয়ার আমল বা ওযীফা মনে করা ঠিক হবে না। তবে সাধারণ দুআ হিসেবে ঐ সময় তা পড়তে নিষেধ নেই।

শেয়ার লিংক

রাফে’ ইবনে খাদীজ - রায়পুর

৩৩৯৪. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তা হল, আমরা এতদিন জেনে এসেছি যে, ইস্তেঞ্জার সময় টুপি, রুমাল বা গামছা ইত্যাদি দ্বারা মাথা ঢেকে নেওয়া মুস্তাহাব। খালি মাথায় ইস্তেঞ্জায় যাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের এলাকার এক আহলে হাদীস ভাই বললেন, খালি  মাথায় পেশাব-পায়খানা করতে কোনো অসুবিধা নেই। এ সময় মাথা ঢেকে রাখতে হবে- এমন কথা ঠিক নয়। এ ধরনের কথা হাদীস-আসারে প্রমাণিত নয়।

আমি এ ব্যাপারে সঠিক নির্দেশনা জানতে চাই।


উত্তর

ওই ব্যক্তির কথা ঠিক নয়বরং ইস্তেঞ্জার সময় মাথায় কোনো কাপড় রাখা উত্তম। একেবারে খালি মাথায় ইস্তেঞ্জায় যাওয়া ঠিক নয়। ইস্তেঞ্জার সময় কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মাথা আবৃত করে রাখার কথা সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত।

যেমন : উরওয়া রাহ.তাঁর পিতা বিখ্যাত সাহাবী যুবায়ের রা. থেকে বর্ণনা করেন যেএকবার আবু বকর সিদ্দীক রা. লোকদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিতে গিয়ে বলেনহে মুসলমান লোকসকল! তোমরা আল্লাহ তাআলার সাথে লজ্জা বজায় রাখ। ঐ সত্ত্বার কসমযার হাতে আমার প্রাণনিশ্চয়ই আমি যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য লোকালয় থেকে দূরে যাই তখন আমি আমার রবের থেকে লজ্জাবনত হয়ে মাথা ঢেকে নিই। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহাদীস : ১১৩৩

মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবার অন্য এক বর্ণনায় ইবনে তাউস রাহ. বলেনআমি যখন ইস্তেঞ্জাখানায় প্রবেশ করতাম আমার পিতা আমাকে মাথা ঢেকে নিতে আদেশ করতেন। -হাদীস : ১১৪১

এছাড়াও সাহাবায়ে কেরাম যে স্বাভাবিকভাবেই ইস্তেঞ্জার সময় কাপড় দ্বারা মাথা আবৃত করে রাখতেন তা সহীহ বুখারীতে ইহুদী আবু রাফের হত্যা সম্পর্কিত বর্ণনা থেকেও বুঝা যায়। তা হলসাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা. বলেনআমি (তাকে হত্যার জন্য) দুর্গের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ খুঁজছিলাম। ঠিক সে মুহূর্তে দূর্গের কিছু লোক তাদের একটি গাধার খোঁজে লণ্ঠন নিয়ে দুর্গের বাইরে বের হল। তিনি বলেনতখন আমার আশঙ্কা হল যেতারা আমাকে চিনে ফেলবে। তাই আমি আমার মাথা ঢেকে নিলাম। যেন মনে হয় আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারছি। -সহীহ বুখারীহাদীস : ৪০৪০

সুতরাং ইস্তেঞ্জার সময় মাথা আবৃত করে নেয়ার ব্যাপারে আবু বকর সিদ্দীক রা.-এর নিজ আমলবিখ্যাত তাবেয়ী তাউস রাহ. কর্তৃক নিজ ছেলেকে আদেশ প্রদান এবং সহীহ বুখারীর বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে আতীক রা.-এর বক্তব্য দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যেইস্তেঞ্জার সময় কাপড় ইত্যাদি দ্বারা মাথা আবৃত রাখা উত্তম কাজ। ফিকহবিদগণ এ সকল বর্ণনার ভিত্তিতেই ইস্তেঞ্জার সময় মাথা আবৃত রাখাকে ইস্তেঞ্জার আদব ও মুস্তাহাব গণ্য করেছেন এবং মাথা অনাবৃত রাখাকে অনুত্তম বলেছেন। তাই হাদীস ও আসারে এ বিষয়ে প্রমাণ নেই প্রশ্নের এ বক্তব্য সহীহ নয়। না জেনে এমন বলাটা অন্যায় হয়েছে।

-আস সুনানুল কুবরা, বায়হাকী ১/৯৬; মুগনীল মুহতাজ ১/৬০

শেয়ার লিংক

খলীলুর রহমান - ফেনী

৩৩৯৫. প্রশ্ন

অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্য যেমন,বই,খাতা ইত্যাদি ক্রয়ের পর যে প্যাকেটে করে তারা পণ্য দেয় তার গায়ে বিসমিল্লাহ লেখা থাকে। এ ধরনের প্যাকেটে বিসমিল্লাহ লেখা এবং তাতে পণ্য আদান-প্রদান করার হুকুম কী?


উত্তর

বইখাতা বা যে কোনো পণ্য বহনের জন্য যে প্যাকেট দেওয়া হয় তা সাধারণত হেফাযত করা হয় না। এক দুবার ব্যবহারের পর তা ফেলে দেওয়া হয়। রাস্তাঘাটে যত্রতত্র তা পড়ে থাকে। এতে আল্লাহ তাআলার পবিত্র নামের অসম্মান হয়। তাই এগুলোতে আল্লাহ তাআলার নাম বা বিসমিল্লাহ ইত্যাদি লেখা অন্যায়। কেননা আল্লাহ তাআলার নামের সম্মান রক্ষা করা সকলের ঈমানী দায়িত্ব।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৪২৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩৩১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪৬

শেয়ার লিংক