জাহিদ বিন ছায়েদুল হক - গোপালপুর, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

৩২৯০. প্রশ্ন

বর্তমানে এক ধরণের পায়জামার প্রচলন রয়েছে যা অত্যন্ত টাইটফিট ও আঁটসাঁট হওয়ার কারণে শরীরের সাথে একেবারে লেগে থাকে। যা চূস পায়জামা নামে পরিচিত। পুরুষ বা মহিলার জন্য এ ধরনের পায়জামা পরা জায়েয কি না জানাবেন।

 


উত্তর

পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে শরীয়তের একটি মূলনীতি হল, পোশাক এমন হতে হবে যার দ্বারা সতর পূর্ণভাবে আবৃত হয়ে যায়। যা পরিধান করলে শরীরের আকার আকৃতি বাহির থেকে ফুটে উঠে না। পোশাক এমন পাতলা বা আঁটসাঁট না হতে হবে যা পরলে সতরের রঙ  বা আকৃতি বাহির থেকে বুঝা যায়।

হাদীস শরীফে এ ধরনের আঁটসাঁট ও পাতলা পোশাক পরিধানকারীদের প্রতি কঠোর ধমকি ও অভিসম্পাত এসেছে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন : দুই শ্রেণীর জাহান্নামীকে আমি দেখিনি, (অর্থাৎ পরবর্তী যুগে এদের সন্ধান পাওয়া যাবে) এক শ্রেণী ঐ সকল মানুষ যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, যার দ্বারা তারা মানুষকে প্রহার করবে। দ্বিতীয় শ্রেণী হল ঐ সকল নারী যারা পোশাক পরিহিতা হয়েও উলঙ্গ  (কেননা তারা এমন পোশাক পরবে যার দ্বারা সতর পূর্ণরূপে ঢাকা হয় না। পাতলা হওয়ার কারণে সতরের আকৃতি ফুটে উঠে।) যারা নিজে গুনাহর দিকে ধাবিত এবং অন্যকেও অশ্লীলতার প্রতি আকৃষ্ট করে। তাদের মাথা হবে লম্বা গর্দান বিশিষ্ট উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। (অর্থাৎ তারা চুল কিংবা কৃত্রিম কোনো বস্তু মাথায় পেঁচাবে। যার ফলে তাদের মস্তক ফুলে থাকবে) এরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১২৮; শরহে নববী ১৪/১১০

উসামা ইবনে যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, দিহয়া কালবী রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে কাপড় হাদিয়া দিয়েছেন সেগুলোর মধ্য থেকে একটি মোটা কুবতী কাপড় (যা খুব নরম হয়ে থাকে) তিনি আমাকে পরিধান করার জন্য দেন। আমি কাপড়টি আমার স্ত্রীকে পরতে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, কী ব্যাপার, তুমি কুবতী কাপড়টি পরিধান করনি কেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা আমার স্ত্রীকে পরতে দিয়েছি। তখন তিনি আমাকে বললেন, তুমি তাকে নির্দেশ দাও সে যেন এর নিচে আরেকটা কাপড় পরে নেয়। কারণ, আমার ভয় হচ্ছে যে, ঐ কাপড়টি তার হাড়ের আকৃতি বর্ণনা করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৭৮৬

উল্লেখিত বর্ণনাগুলো থেকে একথা স্পষ্ট হয় যে, এমন পোশাক পরা যাবে না যার দ্বারা সতর যথাযথভাবে আবৃত হয় না বা যা পরার পরও সতরের আকৃতি বুঝা যায়।

অতএব প্রশ্নোক্ত পায়জামা যেহেতু আঁটসাঁট হওয়ার কারণে তা পরলে সতরের আকৃতি বাহির থেকে ফুটে উঠে। তাই এটিও হাদীসের নিষিদ্ধ পোশাকেরই অন্তর্ভুক্ত। অতএব এ ধরনের পায়জামার উপর কিছু না পরে তা পরা যাবে না।

অবশ্য কেউ যদি ঐ পায়জামার উপর এমন লম্বা জামা পরে নেয় যার দ্বারা সতরের অংশ ঢেকে থাকে এবং চলাফেরা উঠাবসার সময় সতরের অবস্থা প্রকাশ না পায় তবে তা পরতে পারবে।

উল্লেখ্য, এ ধরনের পায়জামার আরেকটি সমস্যা হল তা সাধারণত টাখনু গিরার নিচ পর্যন্ত পরা হয়। অথচ পুরুষের জন্য টাখনু গিরা আবৃত করে জামা বা পায়জামা পরা নাজায়েয। হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে কঠোর ধমকি এসেছে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, টাখনু গিরার নিচের যে অংশ ইযার (পায়জামা বা লুঙ্গি) দ্বারা আবৃত থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৮৭

আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। ...

১.টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী

২.কারো উপর অনুগ্রহ করে খোঁটা দানকারী

৩.মিথ্যা কসম করে পণ্য বিক্রয়কারী। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭১

সুতরাং টাখনু গিরা আবৃত করে এমন পায়জামা বা পোশাক পরিধান করা থেকেও পুরুষের জন্য বিরত থাকা জরুরি।

-তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/২০০; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৮৬১২

শেয়ার লিংক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক - লক্ষ্মীপুর

৩২৯১. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি সেদিন পর্দার আলোচনা করতে গিয়ে বললেন, কোনো মহিলার যখন ৬৫ বছর বয়স পূর্ণ হয়ে যায় তখন আর তার সাথে পর্দার বিধান থাকে না। তাই তার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েয। তার এ কথা কি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

 


উত্তর

বেগানা নারীর সাথে পর্দা করা ফরয। বয়স্কা মহিলার সাথেও পর পুরুষের পর্দা করা জরুরি। তবে অতিশয় বৃদ্ধা মহিলা, যাকে দেখলে পর পুরুষের কোনো আকর্ষণই সৃষ্টি হয় না- এ ধরনের বুড়ি মহিলার ক্ষেত্রে শুধু চেহারার পর্দার ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে। এ বয়সেও পর পুরুষের সামনে চুল ইত্যাদি পরিপূর্ণ ঢেকে রাখতে হবে। অবশ্য এগুলো ঢেকে শুধু চেহারা খোলা রাখা বৈধ।

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) আর বয়স্কা বৃদ্ধা নারীগণ যাদের বিবাহের কোনো আশা নেই তারা যদি তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে তাদের (অতিরিক্ত) বস্ত্র খুলে রাখে তাহলে তাদের জন্য কোনো দোষ নেই। তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। -সূরা নূর : ৬০

উল্লেখ্য, অতিশয় বুড়ি মহিলার সাথে চেহারার পর্দার বিধানের উক্ত শিথিলতা নির্দিষ্ট কোনো বয়সের সাথে সীমাবদ্ধ নয়। বরং বৃদ্ধা হওয়ার পাশাপাশি চেহারার আকর্ষণ এবং গড়ন ভেঙ্গে পড়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত।

তাই কোনো মহিলার বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হয়ে গেলেই তার সাথে পর পুরুষের দেখা-সাক্ষাৎ করা জায়েয-এমন কথা ব্যাপকভাবে বলা ঠিক নয়। বরং ৬৫ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও কোনো মহিলার শারীরিক গঠন ও চেহারার আকর্ষণ যদি বাকি থাকে তাহলেও ঐ মহিলার চেহারার পর্দার হুকুম বহাল থাকবে। তার ক্ষেত্রে উক্ত ছাড় প্রযোজ্য হবে না।

-আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৩৪; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৮৬-৭; তাফসীরে কুরতুবী ১২/২০৩

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ - জুরাইন, ঢাকা

৩২৯২. প্রশ্ন

কোনো মহিলার জন্য তার দেবর বা ভাসুর কিংবা তার স্বামীর ভগ্নিপতি এবং অন্যান্য গাইরে মাহরাম আত্মীয়স্বজন যেমন স্বামীর মামা, খালু, ফুফা ইত্যাদি এদের সাথে পর্দার অন্তরালে থেকে বা ফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলা কিংবা খোঁজখবর নেওয়া জায়েয হবে কি?

বা ঐ সকল লোকেরা ঐ মহিলার সাথে কথাবার্তা বলতে গেলে জায়েয হবে কি না? এমনিভাবে স্বামীর জন্য তার স্ত্রীর ঐ সকল আত্মীয়স্বজন যাদের সাথে পর্দা করা ফরয তাদের সাথে পর্দা করে বা ফোনের মাধ্যমে কথাবার্তা বলা বা খোঁজ-খবর নেওয়া জায়েয হবে কি? বা ঐ সকল মহিলারা ঐ পুরুষের সাথে কথা বলতে চাইলে তা জায়েয হবে কি?

 

 

 


উত্তর

পর্দার আড়াল থেকে বেগানা পুরুষের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা জায়েয। তবে বিনা প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে কথাবার্তা বলা যাবে না।

তদ্রূপ জরুরতবশত কথা বললেও যদি গুনাহে পতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে সেক্ষেত্রেও তাদের সাথে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আর প্রয়োজনবশত কথা বলার ক্ষেত্রেও কোমলতা পরিহার করে কথা বলতে হবে।

কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, (তরজমা) তোমরা (পর পুরুষের সাথে) বাক্যালাপে কোমলতা অবলম্বন কর না। যাতে এরূপ লোকের অন্তরে আকাঙ্ক্ষা (সঞ্চার) হয়, যার অমত্মরে কুপ্রবৃত্তি রয়েছে। -সূরা আহযাব : ৩২

আর পুরুষের জন্যও বিনা প্রয়োজনে কোনো বেগানা নারীর সাথে কথা বলা নিষেধ।

তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো মহিলার জন্য তার স্বামী পক্ষের গায়রে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে এবং পুরুষের জন্য তার স্ত্রী পক্ষের গায়রে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা পর্দার আড়ালে থেকে বলতে পারবে। 

-সূরা আহযাব : ৩২; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৭৬৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৩৮; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৫৯; রদ্দুল মুহতার ১/৪০৬; ইমদাদুল ফাত্তাহ পৃ. ২৬৯

শেয়ার লিংক