সাইমুন আমীন - খাগড়াছড়ি

৩১৬৪. প্রশ্ন

আমাদের এক প্রতিবেশী একটি হাতি পালে। গরমের সময় হাতি তার অভ্যাস অনুযায়ী শুঁড় দিয়ে পেট থেকে পানি বের করে তার শরীরের উপর ছুঁড়ে মারে। ফলে অনেক সময় সে পানি কাপড়েও পড়ে। জানার বিষয় হল, ঐ পানি কি পাক, না নাপাক? ঐ পানি কাপড়ে লাগলে তা কি নাপাক হয়ে যাবে?

উত্তর

হাতির পেট থেকে নির্গত ঐ পানি নাপাক। তা কাপড়ে লাগলে নাপাক হয়ে যাবে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ১/২১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৫৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ শাওকাত - নোয়াপাড়া, সাবরাংক

৩১৬৫. প্রশ্ন

আমি গত বিশ্ব ইজতিমায় গিয়েছিলাম। নামাযের সময় মানুষ বেশি হওয়ার কারণে পেন্ডেলে জায়গা পাইনি। তাই রাস্তায় নামায পড়ি। রাস্তা গরম হওয়ার কারণে সিজদা পাগড়ির পেঁচের উপর করেছি। আবার পাশের এক মুসল্লিকে দেখেছি যে, সে গরমের কারণে কপাল মাটিতে লাগায়নি; বরং মাথার উপরই সিজদা করেছে। এ কারণে কি নামাযের কোনো সমস্যা হয়েছে?

উত্তর

প্রচন্ড রোদের কারণে উত্তপ্ত জমিনে সিজদা করতে কষ্ট হলে পাগড়ি বা টুপির একাংশ কপালের উপর টেনে নিয়ে তার উপর সিজদা করা যাবে। এতে নামায মাকরূহ হবে না। সাহাবায়ে কেরাম থেকেও প্রচন্ড শীত বা গরমে সরাসরি মাটিতে সিজদা করতে কষ্ট হওয়ার কারণে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করা প্রমাণিত আছে। (দেখুন : সহীহ বুখারী ১/৫৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ১/৪০০

তবে ঐ ধরনের বিশেষ ওজর ছাড়া পাগড়ি বা টুপির কোনো অংশের উপর সিজদা করা মাকরূহ। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করতে দেখে তার কপালের দিকে ইশারা করে বলেন, তোমার পাগড়ি আরো উঠাও। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকেও বর্ণিত আছে যে, তিনি পাগড়ির পেঁচের উপর সিজদা করাকে অপছন্দ করতেন।-আলআওসাত ৩/৩৪৩; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০০

আর কেউ যদি সিজদাতে জমিনে শুধু মাথা রাখে অর্থাৎ চুলের অংশ জমিনে রাখে কপালের কোনো অংশই জমিনে না লাগে তবে তার সিজদা আদায় হবে না। তাই তার নামাযও হবে না। কারণ সিজদার অঙ্গ কপাল, মাথা নয়। 

-আলবাহরুর রায়েক ১/৩১৯; ফাতহুল কাদীর ১/২৬৫-২৬৬; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫০০

শেয়ার লিংক

নাজমুস সাকিব - কুমিল্লা

৩১৬৬. প্রশ্ন

আমি একদিন ফজরের নামাযের সময় মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পাই। তখন আমি সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে যাই। নামায শেষ হওয়ার পরও ফজরের অনেক সময় বাকি ছিল। তাই আমি মসজিদের এক কোণে সুন্নতের জন্য দাঁড়িয়ে যাই। এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, এখন সুন্নত পড়া মাকরূহ। সূর্যোদয়ের পর পড়ে নিও। জানতে চাই, ঐ ব্যক্তির কথাটি কি সঠিক?

উত্তর

হাঁ, ঐ ব্যক্তি ঠিকই বলেছে। কেননা হাদীস শরীফে এসেছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত  নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮২৫ 

তাই ফজরের সুন্নত ছুটে গেলে সূর্যোদয়ের আগে পড়বে না; বরং সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্য হেলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আদায় করে নিবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ফজরের দুই রাকাত সুন্নত (সময়মতো) পড়েনি সে যেন সূর্যোদয়ের পর তা আদায় করে নেয়।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৪২৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ১০৫৩

 

নাফে রাহ. বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. (ফজরের সময়) মসজিদে প্রবেশ করে দেখেন জামাত শুরু হয়ে গেছে। তিনি ফজরের সুন্নত না পড়েই জামাতে শরিক হয়ে গেলেন। নামায শেষে তিনি মসজিদে বসে অপেক্ষা করতে থাকেন। অতপর সূর্যোদয় হয়ে গেলে তিনি দুই রাকাত সুন্নত কাযা করে  নেন।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ২/৪৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৫৭; মাআরিফুস সুনান ৪/৮৮

শেয়ার লিংক

আবদুল হালীম - শাহবাগ, ঢাকা

৩১৬৭. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে এই অসিয়ত করেছিল যে, তার জানাযা নামায তার নাতী পড়াবে। কিন্তু নাতীর পৌঁছতে দেরি করায় মৃত ব্যক্তির ছেলে জানাযা পড়ায়। প্রশ্ন হল, অসিয়ত ভঙ্গ করে ছেলের নামায পড়ানো কি ঠিক হয়েছে? উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তির ছেলেও নামায পড়ানোর যোগ্যতা রাখেন।&

উত্তর

কারো ব্যাপারে জানাযার ইমামতির অসিয়ত করলে সে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি নয়; বরং মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ানোর ব্যাপারে শরীয়ত যাদেরকে প্রাধান্য দিয়েছে তারাই এর বেশি হকদার। অবশ্য হকদার ব্যক্তি যদি মৃতের অসিয়তকৃত ব্যক্তি বা অন্য কাউকে ইমামতির অনুমতি দেয় তবে সেটারও সুযোগ আছে। প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মৃতের অভিভাবক হিসেবে ছেলের জানাযা পড়ানো নিয়মসম্মতই হয়েছে।

-আদ্দুররুল মুখতার ২/২২১; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৪/৭৯; আলবাহরুর রায়েক ২/১৮১; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৩২৪

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ ইরফান - মিরপুর, ঢাকা

৩১৬৮. প্রশ্ন

জানাযার নামাযে নিয়ত করার সময় মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা কি নির্ধারণ করা আবশ্যক। মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা কেউ যদি তা না-ই জানে তবে তার জানাযা কি সহীহ হবে? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

জানাযা আদায়ের জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানা জরুরি নয়। কারো যদি তা জানা না থাকে; বরং শুধু সামনে রাখা মৃত ব্যক্তির জানাযার নিয়ত করে তাহলেও জানাযা নামায সহীহ হয়ে যাবে। অবশ্য জানাযার প্রসিদ্ধ দুআ ছাড়াও কিছু দুআ এমন আছে, যেগুলোর জন্য মৃত ব্যক্তি পুরুষ না মহিলা তা জানার প্রয়োজন হয়। তাই জানাযার আগে এ বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া উচিত।

-আলবাহরুর রায়েক ১/২৮৩; শরহুল মুনইয়াহ ২৪৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৬৭, ১৬৪; রদ্দুল মুহতার ১/৪২৩

শেয়ার লিংক

রিফাত হাসান - খিলগাও, ঢাকা

৩১৬৯. প্রশ্ন

আমি কলেজে পড়ি। ছোট থেকেই নামায-রোযার প্রতি মনোযোগী ছিলাম। কিন্তু এবার রমযানে কলেজে গিয়ে বন্ধুদের প্ররোচনায় পড়ে ৫টি রোযা ভেঙ্গে ফেলি। তারপর থেকে এ নিয়ে খুব চিন্তিত আছি। বারবার তাওবা ইস্তিগফার করেছি। এ অবস্থায় আমার জন্য আর কী করণীয়? দয়া করে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

রমযানের রোযা না রাখা বা রেখে ভেঙ্গে ফেলা মারাত্মক গুনাহ। এজন্য শুধু তওবা করা যথেষ্ট নয়; রবং এর কাযা আদায় করতে হবে এবং বিনা ওজরে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেললে কাফফারাও আদায় করতে হবে। সুতরাং আপনি ঐ ৫টি রোযার জন্য ৫টি রোযা কাযা আদায় করবেন এবং ঐ সবগুলো রোযা ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙ্গে ফেলার কারণে একটি কাফফারা আদায় করবেন। কাফফারা হল লাগাতার ৬০টি রোযা রাখা। লাগাতার ৬০টি রোযা রাখতে অক্ষম হলে পূর্ণ খাবার খেতে পারে এমন ৬০ জন মিসকীনকে তৃপ্তি সহকারে দু বেলা খাওয়াতে হবে। অথবা প্রত্যেককে এর মূল্য দিতে হবে।

-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯৩৬; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৩; রদ্দুল মুহতার ২/৪১২, ৩/৪৭৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২৭৭, ৪/১০৯

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ - টেকনাফ

৩১৭০. প্রশ্ন

মানতের ইতিকাফ আদায়ের জন্য কি রোযা রাখা শর্ত? শর্ত হলে আমি দুদিন ইতিকাফ করার মানত করেছিলাম অন্যদিকে আমার উপর গত রমযানের দুটি কাযা রোযাও রয়েছে। এ অবস্থায় আমি কি ঐ কাযা রোযা দুটি আদায়ের সাথে আমার মানতের ইতিকাফ আদায় করতে পারব?

উত্তর

ইতিকাফের মানত করলে রোযাসহ ইতিকাফ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই মানতের ইতিকাফ আদায়ের জন্য স্বতন্ত্র্য রোযা রাখা আবশ্যক। এক্ষেত্রে পূর্বের কাযা রোযার নিয়ত করা সহীহ নয়। 

 

অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাকে ঐ দুই দিনের ইতিকাফ স্বতন্ত্র্য রোযাসহ আদায় করতে হবে।

-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৭১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪২-৪৪৩; কিতাবুল আছল ২/১৯৬; আলবাহরুর রায়েক ২/৩০০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৪

শেয়ার লিংক

ফাতেমা বিনতে মুজীব - চরফ্যাশন, ভোলা

৩১৭১. প্রশ্ন

আজকাল ভিড়ের কারণে অনেক মহিলার পক্ষ থেকে মাহরাম পুরুষরাই কংকর মারার কাজ সেরে নেন। এটা কি সহীহ? আবার অনেক মহিলা ভিড়ের কারণে মুযদালিফার মাঠে না থেকে সরাসরি মিনার তাঁবুতে এসে রাত যাপন করেন। সাথে মাহরাম পুরুষও এসে পড়েন। জানতে চাই এমন করা কি জায়েয হবে? এতে কি কোনো দম ওয়াজিব হবে?

উত্তর

ভিড়ের ওজরে অন্যকে দিয়ে রমী করানো (কংকর মারানো) বৈধ নয়। এর দ্বারা তাদের এই ওয়াজিব আদায় হবে না। দিনের বেলায় ভিড় থাকলেও রাতে তেমন ভিড় থাকে না। রাতে মহিলা ও দুর্বলদের জন্য রমীর উপযুক্ত সময়। প্রকাশ থাকে যে, অন্যকে দিয়ে রমী করানো কেবল তখনই জায়েয যখন হাজ্বী অসুস্থতার কারণে জামরাতে পৌঁছতে এবং রমী করতে সক্ষম না হন। যে অসুখে তার জন্য বসে নামায পড়া বৈধ এমন অবস্থায় অন্যকে দিয়ে রমী করাতে পারবেন, অন্যথায় নয়। আর ভিড়ের ওজরে মহিলাদের জন্য উকূফে মুযদালিফা না করে আরাফা থেকে সরাসরি মিনায় চলে যাওয়ার অনুমতি আছে। এতে তাদের উপর দম ওয়াজিব হবে না। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশী হাজ্বীদের মিনার তাঁবুগুলো যেহেতু মূলত মুযদালিফার সীমানাতেই পড়ে তাই আরাফা থেকে সরাসরি মিনার ঐ তাঁবুতে চলে গেলেও সকলের উকূফে মুযদালিফা আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সক্ষমদের জন্য উত্তম হবে মসজিদে মাশআরে হারামের নিকটে খোলা আকাশের নিচে উকূফ করা।

-যুবদাতুল মানাসিক ১৮৪; গুনইয়াতুন নাসিক ১৮৮

শেয়ার লিংক

ফয়জুর রহমান - আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম

৩১৭২. প্রশ্ন

এক মহিলা হজ্ব করবে। তার বড় ভাই সৌদীতে চাকরি করে। ঢাকা বিমান বন্দর পর্যন্ত তার সঙ্গে তার ছোট ভাই থাকবে। ঢাকা থেকে জেদ্দা বিমানবন্দর পর্যন্ত মামাতো বোন ও তার স্বামী সাথে থাকবে। জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে তার বড় ভাই তাকে নিয়ে যাবে এবং তার সঙ্গেই হজ্ব করবে। প্রশ্ন হল, সে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে জেদ্দা পর্যন্ত তার মামাতো বোন ও তার স্বামীর সাথে হজ্ব করার জন্য যেতে পারবে কি?

উত্তর

মাহরাম ছাড়া নারীর জন্য হজ্বের সফরে যাওয়াও নিষেধ। মামাতো বোনের স্বামী মাহরাম নয়। তাই প্রশ্নোক্ত মহিলা মামাতো বোন ও তার স্বামীর সাথে হজ্বে যেতে পারবে না। বরং স্বামী বা কোনো মাহরামের সাথেই যেতে হবে। হাদীস শরীফে এসেছে, আবদুলস্নাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মহিলা তার মাহরাম ব্যতিরেকে সফর করবে না এবং কোনো পুরুষ মাহরাম ছাড়া কোনো মহিলার নিকট যাবে না। অতপর এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি অমুক সৈন্যদলের সাথে জিহাদে যেতে চাই আর আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে চায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমিও তার সাথে হজ্বে যাও।

-সহীহ বুখারী ১/১৪৭, ১/২৫০; বাদায়েউস সানায়ে ২/২৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৬৪; মুখতাসারুত তহাবী ৫৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৭; যুবদাতুল মানাসিক ৩২

শেয়ার লিংক

আরশাদ সাইফ - হবিগঞ্জ, সিলেট

৩১৭৩. প্রশ্ন

এ বছর হজ্বের কাফেলায় এক ব্যক্তি হলক করে হালাল হওয়ার পর তাওয়াফে যিয়ারতের আগেই স্ত্রীর সাথে থেকেছে এবং স্ত্রীসূলভ আচরণ করেছে। এরপর তারা তাওয়াফে যিয়ারত ও তাওয়াফে বিদা করার পর দেশে চলে আসে। এখন তাদের উক্ত ভুলের কারণে জরিমানা দিতে হবে কি? এক ব্যক্তি বলেছে, তাদের উপর উট কুরবানী করা ওয়াজিব। এটা কি ঠিক?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেককে একটি করে জরিমানা-দম ছাগল বা দুম্বা মক্কার হেরেম এলাকায় জবাই করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের উপর উট কুরবানী করা ওয়াজিব প্রশ্নের এ মন্তব্য ঠিক নয়। কেননা মাসআলা হল, উকূফে আরাফার পর হালাল হওয়ার আগে স্ত্রী মিলন হয়ে গেলে প্রত্যেককে একটি করে উট বা গরু জরিমানা দিতে হয়। আর যদি হালাল হওয়ার পর তাওয়াফে যিয়ারতের আগে এই ভুল হয়ে যায় তবে একটি করে ছাগল বা দুম্বা জরিমানা দিতে হয়।

-মানাসিক, পৃ. ৩৩৯; ইলাউস সুনান ১০/৩৪০

শেয়ার লিংক

শরীফুল ইসলাম - ময়মনসিংহ

৩১৭৪. প্রশ্ন

এক ছেলে এবং এক মেয়ে কাজি অফিসে গিয়ে কাবিননামায় স্বাক্ষর করে বিবাহ করে নেয়। কিন্তু তারা মৌখিক ইজাব-কবুল করেনি। এ সময় তাদের সাথে তাদের চারজন বন্ধু-বান্ধবও ছিল। তিন মাস পর পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহের অনুষ্ঠান হয়। তাদের এক আত্মীয় বললেন, এদের বিয়ে তো সহীহ হয়নি। নতুন করে কাজি ডেকে বিয়ে পড়াতে হবে। আর এখনই বিয়ে করানো যাবে না। বরং কয়েকমাস পরস্পর পৃথক থাকবে এরপর ঐ মেয়ের ইদ্দত শেষ হওয়ার পর বিবাহ হবে।

জানার বিষয় হল, এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কি? আর পূর্বের বিয়ে সহীহ না হওয়ার কারণ কী?

উত্তর

তাদের ঐ বিবাহ সহীহ হয়নি। বিবাহ সংঘটিত হওয়ার জন্য দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ কিংবা একজন পুরুষ ও দুজন নারীর সামনে মৌখিকভাবে ইজাব-কবুল করা শর্ত। মৌখিকভাবে ইজাব-কবুল না করে শুধু লিখিতভাবে ইজাব-কবুল করলে বিবাহ সংঘটিত হয় না। তাই শুধু কাবিন নামায় স্বাক্ষরের দ্বারা তাদের ঐ বিবাহ সহীহ হয়নি। এতদিন তাদের একত্রে থাকা অবৈধ হয়েছে।

এখন যদি তারা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় তাহলে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে মৌখিক ইজাব-কবুলের মাধ্যমে বিবাহ করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের মাঝে বিবাহের জন্য ইদ্দত পালন করা লাগবে না। বরং যে কোনো মুহূর্তে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে।

-দুরারুল হুককাম ফী শরহি গুরারিল আহকাম ১/৩২৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৭০, ১/২৮০; আলবাহরুর রায়েক ৩/১০৬; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৪৮৫

শেয়ার লিংক

মানছুর নাঈম - ছাগলনাইয়া, ফেনী

৩১৭৫. প্রশ্ন

জনৈক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে মুহাববত করে কখনো কখনো আপু মনি বলে ডাকে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এতে কোনো অসুবিধা আছে কি? এ কারণে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি? স্ত্রীকে বোন বা আপু বলে ডাকার হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

স্ত্রীকে এভাবে সম্বোধন করা মাকরূহ ও গুনাহের কাজ। হাদীস শরীফে এসেছে, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বোন বলে সম্বোধন করল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনে এ থেকে তাকে নিষেধ করলেন।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২০৪ 

 

তাই এমন বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। অবশ্য উক্ত কারণে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হয়নি।

-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২০৪; বাযলুল মাজহূদ ১০/৩২২; ফাতহুল কাদীর ৪/৯১; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৪৭০; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৮

শেয়ার লিংক

আশরাফুল আলম - মালিবাগ, ঢাকা

৩১৭৬. প্রশ্ন

কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয় মারা যায়। ইন্তেকালের একমাস আগ থেকে তিনি ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় তার ছেলেদের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। মারা যাওয়ার সপ্তাহখানেক আগে তার শহরের জমিটি জনৈক ব্যক্তির নিকট নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। এজন্য তিনি বায়না দেন এবং আংশিক মূল্যও গ্রহণ করেন। তবে এখনো সাব কবলা রেজিস্ট্রি হয়নি। ওয়ারিশগণ তার ইন্তেকালের পর বিষয়টি জানতে পেরে মনক্ষুণ্ণ হয় এবং তারা এ বিক্রয় কোনোভাবেই মেনে নিচ্ছে না। প্রশ্ন হল, এখন তারা ঐ বিক্রয় বাতিল করতে পারবে কি না? এক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুম কী? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত জমি বিক্রির লোকসান যদি ঐ ব্যক্তির সকল সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ সমপরিমাণ বা এর চেয়ে কম হয় তাহলে উক্ত বিক্রি কার্যকর হয়েছে বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে ওয়ারিসগণের আপত্তি করার কোনো অধিকার থাকবে না। কেননা মূমুর্ষ অবস্থায়ও এক তৃতীয়াংশ সম্পদে এ ধরনের হস্তক্ষেপ করার অধিকার তার আছে। আর যদি মৃতের এক তৃতীয়াংশ সম্পদের চেয়ে বেশি লোকসানের সাথে বিক্রি করা হয় তাহলে ওয়ারিসগণের অনুমতি বিহীন এ বিক্রি কার্যকর হবে না। তারা যদি অনুমতি না দেয় তাহলে ক্রেতা এক তৃতীয়াংশের চেয়ে অধিক লোকসানের অংশ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। অন্যথায় ওয়ারিসগণ ঐ বিক্রয়চুক্তি বাতিল করে দিতে পারবে।

-শরহুল মাজাল্লাহ ২/৪১১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৬/১০৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৬৭৯-৬৮০; আলবাহরুর রায়েক ৮/৪২৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাদ্দুর ৪/৩২৮

শেয়ার লিংক

মাসরুর বিন কাইয়ুম - বাখরাবাদ, কুমিল্লা

৩১৭৭. প্রশ্ন

এক ব্যক্তি আমার থেকে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে এবং তার মোটর সাইকেলটি আমার কাছে বন্ধক রেখেছে। ঋণ আদায়ের আগ পর্যন্ত আমি তার সাইকেলটি অন্যদের নিকট ভাড়া দিয়েছি। এতে আমার কিছু টাকা আয় হয়েছে। পরববর্তীতে সে ঋণ আদায় করে দিলে আমি তার সাইকেলটি ফেরত দিয়ে দেই। আমার প্রশ্ন হল সাইকেল দ্বারা অর্জিত টাকা আমার জন্য ভোগ করা জায়েয হবে কি? না হলে এ টাকা কী করব? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

 

উত্তর

ঋণদাতার জন্য বন্ধকি বস্ত্ত থেকে উপৃকত হওয়া নাজায়েয। তা সুদের অন্তর্ভুক্ত। তাই মোটর সাইকেলটি থেকে অর্জিত ভাড়া আপনার জন্য ভোগ করা  জায়েয হবে না। আপনি যদি ঋণ গ্রহিতার অনুমতিক্রমে সাইকেলটি ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে তা দ্বারা উপার্জিত সকল অর্থ মালিকের প্রাপ্য। এগুলো তাকে ফেরত দিতে হবে। আর যদি তার অনুমতি ছাড়া ভাড়া দিয়ে থাকেন তাহলে এ থেকে উপার্জিত সকল অর্থ আপনাকে সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে মোটর সাইকেলের মালিকও তা ভোগ করতে পারবে না।

-রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৫৯৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৮/৫৬২-৫৬৩; আলমুহীতুল বুরহানী ১৮/৮৯

শেয়ার লিংক

আলী আহমদ - দোহার, ঢাকা

৩১৭৮. প্রশ্ন

কুরবানীর পশুর কান বা লেজ কী পরিমাণ না থাকলে বা কাটা থাকলে এর দ্বারা কুরবানী সহীহ হয় না?

উত্তর

কুরবানীর পশুর কান বা লেজ অর্ধেক বা এরচেয়ে বেশি না থাকলে এর দ্বারা কুরবানী করা সহীহ নয়। যদি অর্ধেকের চেয়ে বেশি অংশ থাকে তাহলে এর দ্বারা কুরবানী করা সহীহ হবে।

-শরহু মাআনিল আছার ২/২৭১; কিতাবুল আসল ২/৪৯৪; শরহু মুখতাসারিত তাহাবী ৭/৩৫৫; ইলাউস সুনান ১৭/২৪০

শেয়ার লিংক

ফয়জুল ইসলাম বিন সালেহ - আরিচা, মানিকগঞ্জ

৩১৭৯. প্রশ্ন

আমরা সহোদর তিনভাই মিলে প্রতি বছর একটি গরু কুরবানী করি। বড় ভাই এক ভাগ আর আমরা দুই ভাই তিন অংশ করে মোট ছয় ভাগ নিয়েছি। আমরা দুই ভাই সমান সমান টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ করি। কিন্তু বড়ভাই আমাদের মধ্যে তুলনামূলক অসচ্ছল হওয়ায় তিনি তার অংশের পুরো টাকা দেন না। আমরা দুই ভাই বলেছি, আপনি যা পারেন দেন, বাকিটা আমরা দুজনে দিয়ে দিব। অবশ্য গোশত সকলের অংশ হারেই বণ্টন করা হয়। টাকা কম-বেশির কারণে তাতে ব্যবধান করা হয় না; বরং ধরে নেওয়া হয় যে, আমরা ছোট দুই ভাই বড় ভাইয়ের টাকার আংশিক আদায় করে দিই।

জানতে চাই, উল্লেখিত পদ্ধতিতে আমাদের কুরবানী কি সহীহ হচ্ছে? 

উত্তর

হ্যাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনাদের কুরবানী সহীহ হয়েছে। গরু-মহিষে শরিকে কুরবানী দেওয়ার জন্য শর্ত হল, কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম না হওয়া। প্রশ্নোক্ত অবস্থায় বড় ভাই যদিও তার অংশের চেয়ে কম দিচ্ছেন কিন্তু অন্য দুই ভাই তার অংশের বাকিটা দিয়ে দিবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তাই বড় ভাইয়ের অংশ এক সপ্তমাংশের কম হয় না।

-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৭৮

শেয়ার লিংক

আবদুস সামাদ - মিরপুর, কুষ্টিয়া

৩১৮০. প্রশ্ন

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব হয়? জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর

প্রাপ্তবয়ষ্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলমান নর-নারী মুকীম ব্যক্তি, যে ১০ যিলহজ্ব সুবহে সাদিক থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। নেসাব হল : স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি। আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। আর অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের সম্পদ। স্বর্ণ বা রুপার কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হয় তবে স্বর্ণ-রুপা উভয়টি মিলে কিংবা এর সাথে প্রয়োজন-অতিরিক্ত অন্য বস্ত্তর মূল্য মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়ে যায় সেক্ষেত্রেও কুরবানী ওয়াজিব হবে। স্বর্ণ-রুপার অলঙ্কার, নগদ অর্থ, যে জমি বাৎসরিক খোরাকীর জন্য প্রয়োজন হয় না এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র-এ সবই কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬,আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

শেয়ার লিংক

আবুল কালাম - নবীনগর, বি.বাড়িয়া

৩১৮১. প্রশ্ন

খালিদ ৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে, যার দ্বারা মোটামুটিভাবে তার সংসার চলে। গত কয়েকদিন পূর্বে তার আম্মা ইন্তেকাল করেন। পিতা আগেই মারা গেছেন। মায়ের মৃত্যুর পর তার মামারা তার আম্মার পৈত্রিক সম্পত্তি (৬ শতাংশ জমি, যার প্রতি শতাংশের মূল্য প্রায় এক লক্ষ টাকা) তার ও তার তিন বোনের নামে ১.৫ শতাংশ করে সমানভাবে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে। এছাড়া খালিদের উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই। তবে বর্তমানে তার কাছে নগদ ৫০ হাজার টাকা আছে। জানার বিষয় হল, প্রশ্নোক্ত অবস্থায় খালিদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে কি না?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী খালিদ মীরাস সূত্রে ১.৫ শতাংশ জমির মালিক হয়েছে তা যেহেতু তার প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ এবং তার মূল্যও নেসাব পরিমাণের বেশি (অর্থাৎ প্রায় এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা) তাই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।-ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৮৬; রদ্দুল মুহতার ২/৩৩৯ 

 

প্রকাশ থাকে যে, মায়ের সম্পত্তি তার ছেলেমেয়ের মাঝে সমানহারে বণ্টন করা বৈধ হয়নি। কুরআন মজীদের হুকুম হল, মেয়ের তুলনায় ছেলে দ্বিগুণ মীরাসের হকদার। 

-সূরা নিসা ৪ : ১১

শেয়ার লিংক

খায়র বিন জালাল - ঝালকাঠি, বরিশাল

৩১৮২. প্রশ্ন

কুরবানীর গরু কিনতে গেলে দেখা যায়, লোকেরা গরুর দাঁত দেখে। যদি বিশেষ দুটি দাঁত উঠে তাহলে পছন্দ হলে কেনে, অন্যথায় ঐ গরু কেনে না। তারা মনে করে, বিশেষ দুই দাঁত না উঠলে সেই গরু দিয়ে কুরবানী করা যায় না।

এখন আমার জানার বিষয় হল, গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুটি দাঁত উঠা কি জরুরি? আর যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়, কোনো একটি গরুর দুই বছর হয়েছে, কিন্তু এখনও বিশেষ দুটি দাঁত উঠেনি তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করলে সহীহ হবে কি না? 

উত্তর

গরু কুরবানীর উপযুক্ত হওয়ার জন্য দুই বছর পূর্ণ হওয়া জরুরি। বিশেষ দাঁত উঠা জরুরি নয়। তবে যেহেতু বিশেষ দুটি দাঁত দুই বছর বয়স পূর্ণ হলেই উঠে থাকে তাই সাধারণত দুই দাঁত উঠাকে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আলামত মনে করা হয়। এ কারণেই মানুষ কুরবানীর পশু কিনতে গেলে তা পরীক্ষা করে। এতে আপত্তির কিছু নেই। তবে যদি কোনো গরুর ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও বিশেষ দুটি দাঁত উঠেনি তাহলে সেই গরু দ্বারা কুরবানী সহীহ হবে।

-সহীহ মুসলিম ২/১৫৫; বাযলুল মাজহূদ ১৩/১৮; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৮; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৬১১-১৩

শেয়ার লিংক

আ: মজিদ - বাঘের বাজার, গাজীপুর

৩১৮৩. প্রশ্ন

আমি কুরবানীর ঈদের তিন মাস আগে কুরবানীর উদ্দেশ্যে একটি গাভী ক্রয় করেছি। কুরবানীর আগে সেই গাভীটির একটি বাচ্চা হয়েছে। জানার বিষয় হল, এ বাচ্চাটির ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী?

উত্তর

উক্ত বাচ্চাটি সদকা করে দিতে হবে। অবশ্য জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি জবাই করে দেয় তবে তার গোশত সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব হবে।

-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪৪৩; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩২২

শেয়ার লিংক

মানসুরা বেগম - দাগনভূঞা, ফেনী

৩১৮৪. প্রশ্ন

প্রায় ২৫ বছর আগে জনৈক ব্যক্তি এক ছেলে, দুই মেয়ে ও এক স্ত্রী রেখে ইন্তেকাল করেন। এত বছর পর্যন্ত তাদের স্থাবর সম্পত্তি (জমিজমা) ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন করা হয়নি। এখন সে সম্পত্তি শরীয়ত মোতাবেক বণ্টন করা হবে।

অতীতে মরহুমের ছেলে ঐ স্থাবর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু টাকা খরচ করেছে (কারণ কিছু জমি নিয়ে মামলা মুকাদ্দমা সংক্রান্ত ঝামেলা ছিল, যা নিষ্পত্তি করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে ইত্যাদি) তবে মেয়েরাও মাঝেমধ্যে সামান্য কিছু টাকা দিয়ে খরচে শরিক হয়েছিল। এখন সম্পত্তি বণ্টনে ছেলে দাবি করছে যে, যত টাকা সে অতীতে খরচ করেছে তার সমান ভাগ মেয়েদেরকে নিতে হবে এবং ঐ টাকার যে অংশ তাদের ভাগে পড়বে তারা এর দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হবে। সে এর কারণ দেখাচ্ছে যে, অতীতের চেয়ে বর্তমানে টাকার মূল্য কমে গেছে।

তাই জানতে চাচ্ছি যে, ছেলের দাবি মোতাবেক মেয়েদেরকে তাদের অংশের চেয়ে বেশি আদায় করতে হবে কি? শরীয়ত মোতাবেক তারা এখন কত টাকা পরিশোধ করবে? বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ এজমালি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে যত টাকা খরচ হয়েছে অর্থাৎ ছেলে যা খরচ করেছে এবং মেয়েরা মাঝেমধ্যে যা দিয়েছে সবগুলো হিসাব করে প্রত্যেক ওয়ারিসের উপর তাদের হিস্যা অনুপাতে বর্তাবে। প্রশ্নোক্ত ওয়ারিসদের হিস্যা হল : স্ত্রী : ১২.৫%, ছেলে : ৪৩.৭৫% এবং প্রত্যেক মেয়ে : ২১.৮৭৫% করে। 

অতএব মরহুমের স্ত্রী তার হিস্যা অনুসারে উক্ত খরচের এক অষ্টমাংশ বহন করবে। অতপর অবশিষ্ট খরচের দুই চতুর্থাংশ ছেলে, একভাগ প্রথম মেয়ে এবং অপর ভাগ দ্বিতীয় মেয়ে বহন করবে। মেয়েরা পূর্বে যা খরচ করেছে তা বাদ দিয়ে তাদের অংশের বাকি টাকা তাদের ভাইকে পরিশোধ করবে।

 

এজমালি সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে ছেলে অন্যদের পক্ষ থেকে যা খরচ করেছে তা ঋণ হিসেবে ধর্তব্য হবে। তাই প্রত্যেক ওয়ারিসের হিস্যা অনুপাতে যত টাকা আসে তত টাকাই তার প্রাপ্য। এক্ষেত্রে টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ার অজুহাতে মেয়েদের থেকে তাদের হিস্যার অতিরিক্ত দাবি করা জায়েয হবে না। অবশ্য ছেলে সকলের পক্ষ থেকে নিজ টাকা দ্বারা কাজটি সমাধা করার জন্য সওয়াবের অধিকারী হবে।

-আলমাবসূত, সারাখসী ১৪/৩০; আদ্দুররুল মুখতার ৫/১৬২; রাসাইলে ইবনে আবেদীন ২/৬২; মাজাল্লাতু আহকামিল আদলিয়্যাহ, মাদ্দাহ : ১৩০৮; আলমাবসূত, সারাখসী ২৯/১৪৮; আসসিরাজী ফিলমিরাছ ১২

শেয়ার লিংক

মাহবুবুর রহমান - ঢাকা

৩১৮৫. প্রশ্ন

আমরা বিভিন্ন পাঠাগার থেকে অনেক সময় কিতাব নিয়ে আসি। কখনো কোনো কোনো কিতাবে ভুল পরিলক্ষিত হয়।

এক্ষেত্রে ভুলগুলো কেটে সহীহ করে দেওয়া কি জায়েয হবে?

 

উত্তর

পাঠাগার কিংবা কোনো ব্যক্তির বই এনে অনুমতি ছাড়া তাতে কোনোরূপ দাগ দেওয়া, কাটাকাটি করা বা ভুল সংশোধন করা জায়েয নয়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি থাকলেও শুধু নিজ ধারণাবশত এরূপ করা অনুচিত। তাই কোনো ভুল ধরা পড়লে তা যথাযথ তাহকীকের পর ভিন্ন একটি কাগজে লিখে কিতাবের ঐ স্থানে রেখে দেওয়া যেতে পারে এবং কর্তৃপক্ষকেও তা অবহিত করা যেতে পারে।

-ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৮৮; শরহু মানযুমাতে ইবনে ওহবান ২/৫৪; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/২৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৫/৬৮৬

শেয়ার লিংক

মুহাম্মাদ - ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট

৩১৮৬. প্রশ্ন

দাঁড়িয়ে খাওয়া বা পান করা কি গুনাহ? কোনো পরিস্থিতিতে অপারগ হয়ে দাঁড়িয়ে খেলে বা পান করলে কি গুনাহ হবে?

উত্তর

বসে পানাহার করা সুন্নত এবং তা রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র অভ্যাস। কোনো ওজর ছাড়া দাঁড়িয়ে পানাহার করা মাকরূহ। কেননা হাদীস শরীফে দাঁড়িয়ে পানাহার করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 

সহীহ মুসলিমে আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। (বর্ণনাকারী) কাতাদা বলেন, আমরা আনাস রা.-কে জিজ্ঞাসা করলাম তাহলে দাঁড়িয়ে খাওয়া কেমন? তিনি বললেন, এটা তো আরো মন্দ কাজ।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২০২৪ 

অপর একটি বর্ণনায় আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখে বললেন, বমি করে ফেলে দাও। সে বলল, কেন? তিনি বললেন, তুমি কি পছন্দ কর যে তোমার সাথে বিড়াল পান করবে? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বললেন, এর চেয়েও মন্দ কেউ? অর্থাৎ শয়তান তোমার সাথে পান করেছে।-শরহু মুশকিলুল আছার, ২১০২; ফাতহুল বারী ১০/৮৫ 

 

 

 

তাই হাদীসের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাভাবিক অবস্থায় বসেই পানাহার করতে হবে। অবশ্য বিশেষ পরিস্থিতিতে যেখানে বসে পানাহারের কোনো ব্যবস্থা নেই কিংবা বসে খাওয়া বা পান করতে সমস্যা সেÿÿত্রে দাঁড়িয়ে পানাহার করা যাবে। কেননা প্রয়োজনবশত দাঁড়িয়ে পান করার কথাও হাদীসে আছে।

-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৬২৭, ২৭৪৪৮; ফাতহুল বারী, ১০/৮৬

শেয়ার লিংক