ইউসুফ জামীল - মুহাম্মাদপুর, ঢাকা

৬৭১৫. প্রশ্ন

গতকাল আসরের পর একজন রোগীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় তখন আমি হাসপাতালে গিয়ে তাকে এক ব্যাগ রক্ত দেই রক্ত দেওয়া শেষ হলে চামড়ার ওপর হালকা একটু রক্ত দেখা দেয়, যা এত সামান্য ছিল যে, গড়িয়ে পড়ার মতো ছিল না আমি তা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলি এরপর আমি ওযু আছে মনে করে পুনরায় ওযু না করেই মাগরিবের নামায পড়ি

জানার বিষয় হল, রক্ত দেওয়ার দ্বারা আমার ওযুতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে? এবং এ অবস্থায় নামায পড়া কি সহীহ হয়েছে?

উত্তর

রক্ত দেওয়ার দ্বারা আপনার ওযু ভেঙে গেছে তাই এরপর ওযু না করে যে নামায পড়া হয়েছে তা সহীহ হয়নি উক্ত নামায এখন কাযা করে নিতে হবে কেননা ওযু ভঙ্গ হওয়ার জন্য শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হওয়াই যথেষ্ট; বের হওয়ার পর তা চামড়ায় গড়িয়ে পড়া শর্ত নয়; বরং গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত সিরিঞ্জের মাধ্যমে ব্যাগ-শিশি ইত্যাদিতে নিয়ে নিলেও ওযু ভেঙে যাবে

* >الفتاوى الولوالجية< /৪৭العلقة إذا أخذت بعض جلد إنسان ومصت، حتى امتلأ من دمه بحيث لو سقط لسال، انتقض الوضوء؛ لأن الدم فيه سائل.

আলমুহীতুল বুরহানী ১/১৯৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৩৯

শেয়ার লিংক

আরশাদ লাবিব - সিরাজগঞ্জ

৬৭১৬. প্রশ্ন

আমাদের বাড়ির পাশে একটি ডোবা আছে আমার দাদা সেখানে এবার পাট জাগ দিয়েছেন পাটের পাতা পচে পানি অনেক দুর্গন্ধ হয়ে গেছে

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এই পানির কী হুকুম? এই পানি দিয়ে কি ওযু-গোসল করা যাবে?

উত্তর

গাছের পাতা পড়ে পানি দুর্গন্ধ হয়ে গেলেও তা নাপাক হয় না তাই ঐ পানি দিয়ে ওযু-গোসল করা সহীহ হবে

* >بدائع الصنائع< /৯৫ : ولو تغير الماء المطلق بالطين أو بالتراب، أو بالجص، أو بالنورة أو بوقوع الأوراق، أو الثمار فيه، أو بطول المكث، يجوز التوضؤ به؛ لأنه لم يزل عنه اسم الماء، وبقي معناه أيضا مع ما فيه من الضرورة الظاهرة لتعذر صون الماء عن ذلك.

আলআজনাস, নাতিফী ১/৪৭; আলমাবসূত, সারাখসী ১/৭২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৪; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২৭৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৬৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১

শেয়ার লিংক

আবু উসামা - সিরাজগঞ্জ

৬৭১৭. প্রশ্ন

তারাবী ছুটে গেলে অনেককে দেখা যায়, তারাবী শেষ হওয়ার পর আগে ছুটে যাওয়া তারাবী পড়ে, এরপর একাকী বিতির আদায় করে আবার অনেকে আগে জামাতের সাথে বিতির পড়ে, এরপর বাকি তারাবী একাকী আদায় করে

এক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি কোন্টি জানিয়ে বাধিত করবেন

উত্তর

ইমামের সঙ্গে তারাবী ছুটে গেলে উত্তম হল, তারাবী শেষ হওয়ার পর প্রথমে ইমামের সঙ্গে জামাতে বিতির আদায় করা এরপর ছুটে যাওয়া তারাবী আদায় করা তবে কেউ যদি আগে ছুটে যাওয়া তারাবী আদায় করে এরপর একাকী বিতির পড়ে নেয়, তাহলেও অসুবিধা নেই

* >الفتاوى الهندية< /১১৭ : وإذا فاتته ترويحة أو ترويحتان، فلو اشتغل بها يفوته الوتر بالجماعة، يشتغل بالوتر، ثم يصلي ما فات من التراويح، وبه كان يفتي الشيخ الإمام الأستاذ ظهير الدين.

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৩; আযযাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/২১২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ২০; আলবাহরুর রায়েক ২/৬৭; রদ্দুল মুহতার ২/৪৪

শেয়ার লিংক

আবরার লাবিব - সিরাজগঞ্জ

৬৭১৮. প্রশ্ন

মুহতারামের নিকট একটি মাসআলা জানতে চাচ্ছি, অনেক সময় এমন হয় যে, মসজিদে গিয়ে ইমামকে শেষ বৈঠকে পাই নিয়ত বেঁধে বসে তাশাহ্হুদ শুরু করার পরপরই ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেলেন

হুজুরের নিকট জানতে চাচ্ছি, আমি কি তখনই দাঁড়িয়ে যাব, নাকি তাশাহ্হুদ শেষ করে এরপর দাঁড়াব?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার তাশাহ্হুদ শেষ হওয়ার আগে ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেললেও আপনি তাশাহ্হুদ পূর্ণ করেই দাঁড়াবেন কেননা মাসবুক বৈঠকে শরীক হওয়ার পর তাশাহ্হুদ পূর্ণ করার আগে ইমাম সালাম ফেরালে মাসবুকের জন্য তাশাহ্হুদ পূর্ণ করে দাঁড়ানোই নিয়ম অবশ্য এক্ষেত্রে কেউ তাশাহ্হুদ শেষ না করে দাঁড়িয়ে গেলেও তার নামায হয়ে যাবে

* >الفتاوى الهندية< /৯০ : إذا أدرك الإمام في التشهد، وقام الإمام قبل أن يتم المقتدي، أو سلم الإمام في آخر الصلاة قبل أن يتم المقتدي التشهد، فالمختار أن يتم التشهد، كذا في الغياثية. وإن لم يتم أجزأه.

কিতাবুল আছার, ইমাম মুহাম্মাদ রাহ., বর্ণনা ১৩১; আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৭৫; আয্যাখীরাতুল বুরহানিয়া ২/৫১; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/১০৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৯৬

শেয়ার লিংক

হাসান শরীফ - লাকসাম, কুমিল্লা

৬৭১৯. প্রশ্ন

আমার জীবনে অলসতাবশত অনেক নামায ছুটে গেছে এজন্য আমি অনুতপ্ত ও লজ্জিত এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তেগফার করছি

জানার বিষয় হল, আমি কি প্রত্যেক নামাযের আগে-পরে কাযা নামাযগুলো পড়তে পারব? যদি পারা যায় সেক্ষেত্রে আসর ও ফজরের নামাযের পরও কি পারব?

 

উত্তর

হাঁ, যে কোনো ফরয নামাযেরই আগে-পরে কাযা নামায পড়তে পারবেন এমনকি আসর ও ফজরের নামাযের পরও কাযা নামায পড়া যাবে ফজর ও আসর নামাযের পর ওই ওয়াক্তের ভেতর নফল নামায পড়া মাকরূহ কিন্তু তখন কাযা পড়া জায়েয আছে তাতে সমস্যা নেই

কাযা নামায কেবল তিন সময় পড়া নিষেধ

১. সূর্যোদয়ের সময় থেকে সূর্য কিছুটা ওপরে ওঠা পর্যন্ত

২. সূর্য যখন লালবর্ণ ও নিস্তেজ হয়ে যায় তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত

৩. ঠিক মধ্যাহ্নের সময়

এই তিন সময় ছাড়া দিন-রাতের অন্য যে কোনো সময় কাযা নামায পড়া যায়

তবে উল্লেখ্য যে, কাযা নামায যথাসম্ভব মানুষের অগোচরে পড়াই ভালো বিশেষত আসর ও ফজরের নামাযের পর কেননা তখন প্রকাশ্যে নামায পড়লে মানুষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির আশঙ্কা রয়েছে

* كتاب >الأصل< للشيباني /১২৬-১২৭ : قلت: أرأيت رجلا نسي صلاة مكتوبة، فذكرها بعدما صلى الفجر قبل أن تطلع الشمس، أو ذكرها بعدما صلى العصر قبل أن تتغير الشمس؟

قال: عليه أن يقضيها ساعة ذكرها. ...

قلت: أرأيت رجلا نسي صلاة مكتوبة، فذكره حين طلعت الشمس أو حين انتصف النهار، أو ذكرها حين تغيب الشمس؟ قال: لا يصليها في هذه الساعات الثلاث.

قلت: وكذلك لو كانت الصلاة هي الوتر أو المكتوبة أو غيرها؟ قال: نعم، لا يصلي في هذه الثلاث ساعات ما خلا العصر، فإنه إذا ذكر العصر من يومه ذلك قبل غروب الشمس، صلاها.

খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৮; তুহফাতুল ফুকাহা ১/১০৬; আলহাবিল কুদসী ১/১৫১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; আলবাহরুর রায়েক ১/২৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩৭৫; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৬৯

শেয়ার লিংক

আবদুল্লাহ ফারহান - সিরাজগঞ্জ

৬৭২০. প্রশ্ন

আমি একটি মসজিদে তারাবীর নামায পড়াই মসজিদটি বাজারের পাশে হওয়ায় অধিকাংশ মুসল্লী বাজারের ব্যবসায়ী নামাযের বৈঠকে আমি তাশাহ্হুদ, দরূদ শরীফ, দুআ মাসূরা সবই পড়ি এতে অনেক সময় লেগে যায় কয়েকজন মুসল্লী অনুরোধ করেছেন যেন আরেকটু কম সময় নিই

হুজুরের কাছে জানতে চাই, এ অবস্থায় কি তারাবীর বৈঠকে দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূরা না পড়ার কোনো সুযোগ আছে?

উত্তর

না, এমনটি করা উচিত নয় কেননা সকল নামাযের শেষ বৈঠকেই দরূদ শরীফ ও দুআ মাসূরা পড়া সুন্নত শরীয়তসম্মত ওজর ছাড়া অবহেলাবশত তা ছেড়ে দেওয়া অন্যায় আর একে নিয়ম বানিয়ে ফেলা তো আরও গর্হিত কাজ তাই বিনা ওজরে এমনটি করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক

তবে আপনি চাইলে দুআ-দরূদগুলো (সহীহ উচ্চারণ করে) তারতীলের সাথে না পড়ে দ্রুত গতিতে পড়ে নিতে পারেন

* >حلبة المجلي< /১৮৪ : فإذا أتم التشهد يصلي على النبي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كما عليه الإجماع العملي سلفا وخلفا. وأما الكلام في أنها في هذه الحالة سنة أو فرض، فقال عامة السلف والخلف سنة، لا يقدح تركها في جواز الصلاة، وإنما يقدح في فعلها على الوجه الأكمل المسنون، حتى يعد تاركها بتعمد تركها مسيئا.

শরহুন নুকায়া ১/১৮২; শরহুল মুনইয়া, পৃ. ৩৮২; আলবাহরুর রায়েক ১/৩০৪

শেয়ার লিংক

আবু সুফিয়ান - রায়ণগঞ্জ

৬৭২১. প্রশ্ন

আমাদের এলাকায় একটি কথা প্রচলিত আছে তা হল, স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে স্পর্শ করা, গোসল দেওয়া, তাকে দেখা সবই নাজায়েয কথাটি কি সঠিক?

উত্তর

স্বামীর জন্য মৃত স্ত্রীকে গোসল দেওয়া ও স্পর্শ করা নাজায়েয সুফিয়ান সাওরী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

لاَ يُغَسِّلُ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ.

স্বামী তার (মৃত) স্ত্রীকে গোসল দিতে পারবে না (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ৬১১৯)

তবে মৃত স্ত্রীকে দেখা নাজায়েয নয়; বরং সে তাকে দেখতে পারবে

* كتاب >الآثار< للإمام محمد /২৪৫ : قال أبو حنيفة: أكره أن يغسل الرجل امرأته قال محمد: وبقول أبي حنيفة نأخذ، إن الرجل لا عدة عليه، وكيف يغسل امرأته، وهو يحل له أن يتزوج أختها؟ ويتزوج ابنتها إن لم يكن دخل بأمها؟ بلغنا عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه، أنه قال: نحن كنا أحق بها إذا كانت حية، فأما إذا ماتت فأنتم أحق بها. قال محمد: وبه نأخذ.

* >فتح القدير< /৭৬ : والزوج في امرأته أجنبي، إلا في غض البصر.

কিতাবুল আছল ১/৩৫৭; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৮৭; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২১৯; মুখতারাতুন নাওয়াযিল ১/৪০২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৭৪; রদ্দুল মুহতার ২/১৯৮

শেয়ার লিংক

যাকারিয়া হোসেন - ঢাকা সেনানিবাস

৬৭২২. প্রশ্ন

রোযা রেখে কোনো মুমূর্ষু রোগীকে এফেরেসিস সিস্টেমে প্লেটলেট/প্লাটিলেট/অনুচক্রিকা/ কনভালেসেন্ট প্লাজমা দেওয়া যাবে কি?

উল্লেখ্য, এর পদ্ধতি হল, হাতের ভেইনের (রগ/শিরা) ভেতর দিয়ে ৩৫০ এম. এল. থেকে ৪৫০ এম. এল. ব্লাড বের হয়ে এফেরেসিস মেশিনের কিটের (বক্সের) ভিতরে প্রসেসিং হয়ে পুনরায় বাহির থেকে অঈউ নামক অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (এটি হল এমন একটি পদার্থ, যা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে) ও সাথে একটি গ্লুকোজ জাতীয় নরমাল স্যালাইন রক্তের সাথে যুক্ত হয়ে আবার ওই একি হাতের ভেইনের (রগ/শিরা) ভিতরেই চলে যাচ্ছে এইভাবে ৫/৮ সাইকেলে ৫০ থেকে ৮০ মিনিট (প্রতি সাইকেল ড্র/রিটার্ন শেষ করতে ১০/১২ মিনিট সময় লাগে) চলবে

প্রশ্ন হল, এর দ্বারা কি রোযা ভাঙবে? এখানে সরাসরি পাকস্থলিতে কোনো কিছুই প্রবেশ করছে না

উত্তর

রোযা অবস্থায় এফেরেসিস সিস্টেমে প্লেটলেট/প্লাটিলেট অনুচক্রিকা/কনভালেসেন্ট প্লাজমা দেওয়া যাবে কেউ তা দিলে বা নিলে কারোই রোযা নষ্ট হবে না কেননা প্রশ্নের বিস্তারিত বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এতে রোযা ভঙ্গের কোনো কারণ নেই তাই রোযা রেখেও এগুলো দেওয়া যাবে রোযার ক্ষতি হবে না

­–আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৬৭; আলবিনায়া ৪/২৮৮; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, ১০/২/৪৫৪

শেয়ার লিংক

উসামা হাবিব - যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

৬৭২৩. প্রশ্ন

আমার বন্ধুর বাবা দশ রমযানের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ফলে বকি বিশটি রোযা আর রাখতে পারেননি ঈদের এক সপ্তাহ পর আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন কিন্তু তার আট দিন পরেই ইন্তেকাল করেন তবে সুস্থ হওয়ার পরও তিনি রোযাগুলোর কাযা আদায় করেননি

এখন বন্ধু জানতে চাচ্ছে, তার বাবার এই রোযাগুলোর ফিদইয়া আদায় করা কি জরুরি? জরুরি হলে তা কীভাবে আদায় করবে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ঐ পুরো বিশ দিনের রোযার ফিদইয়া আদায় করা জরুরি নয়; বরং শুধু আটদিনের ফিদইয়া আদায় করাই যথেষ্ট কেননা ঐ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর যেহেতু শুধু আটদিন জীবিত ছিল, তাই তার যিম্মায় শুধু আট দিনের রোযার কাযা বাকি আছে

অতএব এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি যদি ইন্তেকালের আগে রোযাগুলোর ফিদইয়া আদায় করার অসিয়ত করে গিয়ে থাকে, তাহলে তার ওয়ারিশদের ওপর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ থেকে আটটি রোযার ফিদইয়া আদায় করা জরুরি আর যদি অসিয়ত না করে গিয়ে থাকে, তাহলে যদিও সে ক্ষেত্রে ফিদইয়া দেওয়া ওয়ারিশদের ওপর আবশ্যক নয় তথাপি মৃত ব্যক্তির আখেরাতের প্রতি লক্ষ করে ঐ রোযাগুলোর ফিদইয়া দিয়ে দেওয়াই তাদের জন্য উত্তম হবে

আর ফিদইয়া হল, প্রতি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকীনকে দুইবেলা খাওয়ানো কিংবা এর মূল্য প্রদান করা

* كتاب >الأصل< للشيباني /১৬৫ : قلت: أرأيت المريض يمرض قبل دخول شهر رمضان، فلا يزال مريضا حتى ينسلخ شهر رمضان، ثم يموت؟

قال: ليس عليه من قضاء شهر رمضان شيء. ...

قلت: أرأيت إن صح بعد شهر رمضان عشرة أيام، ثم مات، ما عليه؟ أترى عليه قضاء شهر رمضان؟ قال: لا، وإنما عليه قضاء العشرة الأيام التي صح فيها.

আলমাবসূত, সারাখসী ৩/৯০; আলগায়াহ ৭/৪৩৭; আলহাবিল কুদসী ১/৩০৯; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/২২২; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৩০; আলবাহরুর রায়েক ২/২৮৩

শেয়ার লিংক

আতিকুল ইসলাম - চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা

৬৭২৪. প্রশ্ন

আমাদের বাসার পাশের মসজিদটি অনেক পুরোনো ও জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে গেছে এবং তা সম্প্রসারণেরও প্রয়োজন দেখা দিয়েছে তাই কিছুদিন আগে মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয় এখন সেখানে নতুন করে মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে আপাতত আমরা পাশের একটি গাড়ির গ্যারেজে নামায পড়ে থাকি গত রমযানে আমি এখানে ইতিকাফে বসি দুই দিন পর এক আলেম বললেন, এখানে ইতিকাফ সহীহ হবে না আমি তার কথা অনুযায়ী সেখান থেকে বের হয়ে যাই এবং ইতিকাফ ভেঙে ফেলি

জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক? আমাকে কি এই ইতিকাফের কাযা করতে হবে?

উত্তর

হাঁ, ঐ আলেম ঠিকই বলেছেন ইতিকাফ সহীহ হওয়ার জন্য মসজিদ শর্ত ওয়াকফকৃত মসজিদ ব্যতীত অস্থায়ী নামায-ঘরে ইতিকাফ সহীহ নয় অতএব প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত জায়গায় আপনার ইতিকাফ করা সহীহ হয়নি তাই এর কাযাও লাগবে না

* >أحكام القرآن< للجصاص /২৪৩فحصل من اتفاق جميع السلف أن من شرط الاعتكاف الكون في المسجد.

ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪৪২; ফাতহুল কাদীর ২/৩০৬; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৪৯; হাশিয়াতুশ শিলবী ২/২২২

শেয়ার লিংক

সাদ আবদুল্লাহ - কচুয়া, চাঁদপুর

৬৭২৫. প্রশ্ন

আমি কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের ছাত্র কিতাবখানার দীর্ঘ দশ বছরে বিভিন্ন উপায়ে আমি কিছু কিছু কিতাব সংগ্রহ করি যার অধিকাংশই তাফসীর, শুরূহুল হাদীস ও ফিকহের কিতাব অন্য ফনেরও অল্প কিছু কিতাব আছে সবগুলো কিতাবের মূল্য যাকাতের নেসাবের সমান বা কিছু বেশি হবে কিতাবগুলো ছাড়া আমার ব্যক্তি মালিকানায় অন্য কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি নেই

হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমার জন্য কি মাসিক খোরাকী ও অন্যান্য প্রদেয় আদায় করার জন্য মাদরাসার এমদাদী তহবিল (যার উৎস, যাকাত, ফিতরা ও সদকা) থেকে সহযোগিতা নেওয়ার কোনো সুযোগ আছে?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কিতাবগুলো যেহেতু আপনার অধ্যয়নের জন্য; প্রয়োজন অতিরিক্ত নয়; এবং প্রশ্নের বর্ণনামতে আপনার মালিকানায় অন্য কোনো সম্পদও নেই, তাই আপনি মাদরাসার এমদাদী তহবিল (যাকাত, ফিতরা ও সদকা) থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিতে পারবেন

* >خلاصة الفتاوى< /২৪০ : رجل له كتب العلم ما يساوي مائتي درهم، إن كانت مما يحتاج إليها للحفظ والدراسة والتصحيح، لا يكون نصابا، وحل له أخذ الصدقة، فقها كان أو حديثا أو أدبا.

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ১০৯; আত্তাজনীস ওয়াল মাযীদ ২/৩৩৫; বাদায়েউস সানায়ে ২/১৫৮; ফাতহুল কাদীর ২/২১৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৬৫

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান মারুফ - লালমনিরহাট

৬৭২৬. প্রশ্ন

আমার একটি গরুর ফার্ম আছে তাতে সাতষট্টিটি গরু আছে সেগুলোর দুধ দোহন করে বাজারে বিক্রি করি এগুলোর খাবার-দাবার ও লালন-পালন ফার্মেই করা হয় এখন বছর শেষ হওয়ার পর কি আমাকে এগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে?

উত্তর

প্রশ্নের বর্ণনা মতে আপনি যেহেতু গরুগুলো ক্রয় করেছেন এগুলোর দুধ বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের জন্য; সরাসরি গরু ব্যবসা করার জন্য নয় এবং গরুগুলো নিজে নিজে মাঠে চরেও খায় না; বরং ফার্মেই খাবার দিয়ে লালন-পালন করা হয় তাই এক্ষেত্রে আপনাকে ঐ গরুর যাকাত আদায় করতে হবে না এ ধরনের গরু যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয় অবশ্য যেসব গরু ব্যবসায়িক পণ্য (বর্তমান সময়ে যাকে মোটাতাজাকরণ প্রকল্প বলা হয়) যা কেনাই হয় বিক্রির উদ্দেশ্যে এমন গরু যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত

উল্লেখ্য, আপনি গাভীগুলোর দুধ বিক্রি করে যে অর্থ অর্জন করেন, তা থেকে যদি সঞ্চয় হয়, তবে তা যাকাতের হিসাবে আসবে

* كتاب >الأصل< للشيباني /৫৭ : قلت: أرأيت الرجل تكون له الإبل بالكوفة أو بمصر من الأمصار أو بمدينة من المدائن، يعلفها ويعمل عليها، أو يعلفها ويشرب ألبانها، ولا يعمل عليها، يعلفها في بيته، إناثا كانت أو ذكورا، يعمل عليها ويعلفها، وكيف إن كان هذا كله في غير مصر، وكانت في البرية أو في السواد، فكان يعمل عليها ويعلفها ويستقي عليها؟ قال: ليس في شيء مما وصفت صدقة.

আলইখতিয়ার ১/৩৫৩; গায়াতুল বায়ান ২/৬৯২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ২/২১৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৮২

শেয়ার লিংক

আবদুর রহমান - গেণ্ডারিয়া, ঢাকা

৬৭২৭. প্রশ্ন

আমি বাংলাদেশ থেকে উমরার ইহরাম বেঁধে জেদ্দায় যাই সেখানে আমার এক বন্ধুর দাওয়াতে তার বাসায় গিয়ে উঠি দুপুরের খাবারের জন্য সে একটা বকরি জবাই করার প্রস্তুতি নেয় এরপর সে আমাকে বকরিটি জবাই করতে বলে আমি যেহেতু ইহরাম অবস্থায় ছিলাম তাই জবাই করতে অসম্মতি জানাই তখন সে বলে যে, ইহরাম অবস্থায় শিকারের প্রাণী জবাই করা নিষেধ গৃহপালিত পশু জবাই করা নিষেধ নয় কিন্তু আমি যেহেতু নিশ্চিত ছিলাম না, তাই এরপরও জবাই করতে সম্মত হইনি

হুজুরের কাছে জানতে চাই, আমার বন্ধুর কথা কি ঠিক? ইহরাম অবস্থায় গৃহপালিত প্রাণী জবাই করলে আসলেই কি কোনো অসুবিধা নেই?

উত্তর

হাঁ, আপনার বন্ধু ঠিকই বলেছেন ইহরাম অবস্থায় গৃহপালিত প্রাণী জবাই করা নিষেধ নয় ইহরাম অবস্থায় কেউ গৃহপালিত পশু জবাই করলে তার ওপর কোনো জরিমানা আসে না ইবরাহীম নাখায়ী ও আতা রাহ. বলেন

لاَ بَأْسَ أَنْ يَذْبَحَ الْمُحْرِمُ مَا لَيْسَ بِصَيْدٍ.

ইহরাম অবস্থায় শিকারী প্রাণী ছাড়া অন্যান্য প্রাণী জবাই করতে অসুবিধা নেই (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৪৭৩৯)

* >بدائع الصنائع< /৪২৬: فلا يحرم على المحرم ذبح الإبل، والبقر، والغنم، لأنها ليست بصيد؛ لعدم الامتناع والتوحش من الناس. وكذا الدجاج والبط الذي يكون في المنازل، وهو المسمى بالبط الكسكري، لانعدام معنى الصيد فيهما، وهو الامتناع والتوحش.

শরহুল জামিইস সাগীর, সাদরুশ শহীদ, পৃ. ২৫২; আলইখতিয়ার ১/৪৫৩; আলমুজতাবা ২/৩৯৬; আলবিনায়া ৫/৩১২; আলজাওহারাতুন নাইয়িরা ১/২২৭; মানাসিক, মোল্লা আলী আলকারী, পৃ. ৩৮০

শেয়ার লিংক

হাসান - ভোলা

৬৭২৮. প্রশ্ন

এ বছর হজ্বের উকূফে আরাফার সময় আমার মিসওয়াক কীভাবে যেন হারিয়ে যায় তাই আরাফার ময়দানের একটি নিম গাছের ডাল ভেঙে আমি মিসওয়াক বানিয়ে নিই এবং তা দ্বারা মিসওয়াক করি

জানার বিষয় হল, ইহরাম অবস্থায় ডালটি ভাঙার কারণে আমার ওপর কি কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়েছে? কষ্ট করে একটু জানাবেন

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার ওপর কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয়নি কেননা আরাফার ময়দান হেরেমের অন্তর্ভুক্ত নয় আর ইহরাম অবস্থায়ও হেরেমের বাহিরের কোনো গাছ-পালা কাটলে কোনো জরিমানা ওয়াজিব হয় না

প্রকাশ থাকে যে, গাছ বা এর ডাল কাটার কারণে জরিমানা ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি হেরেম এলাকার বিশেষ কিছু গাছ-পালার সাথে সম্পৃক্ত; ইহরামের সাথে নয় হেরেম এলাকার যেসব গাছ-পালা কাটা নিষেধ, ইহরাম ছাড়া অন্য অবস্থায়ও সেগুলো কাটা নিষেধ এবং এর কারণে যে জরিমানা ওয়াজিব হয়, তা ইহরামকারী ও অন্যান্য ব্যক্তি সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য শুধু ইহরামকারীর ওপর ওয়াজিব হয় আর অন্যদের ওপর ওয়াজিব হয় না বিষয়টি এমন নয়

* >المبسوط< للسرخسي /১০৪ : فأما حرمة الشجرة بسبب الحرم؛لأن الإحرام لا يمنع قطع الشجرة، فلهذا كان المحرم والحلال في ذلك سواء.

وفيه أيضا /১০৩ : فأما في قطع الغصن فينظر إلى أصل الشجرة، فإن كان في الحل، فله أن يقطعه، وإن كان في الحرم، فليس له أن يقطعه.

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ২/৫৫৮; বাদায়েউস সানায়ে ২/৫৫০; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৪৪৪-৪৪৫; আলমুহীতুর রাযাবী ২/২৮৮-২৮৯; রদ্দুল মুহতার ২/৪৭৮, ৫৬৭

শেয়ার লিংক

আদনান - পটিয়া, চট্টগ্রাম

৬৭২৯. প্রশ্ন

বিবাহ অনুষ্ঠানে যে কাজী বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের জন্য আসেন, তিনি একটি ফি নিয়ে থাকেন ফি ধার্য হয় মহরের পরিমাণের সাথে মিল রেখে

প্রশ্ন হল, এ ফি কোন্ পক্ষ আদায় করবে? বরপক্ষ, না কনে-পক্ষ? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন

উত্তর

বাংলাদেশের আইন এবং সমাজের প্রচলন অনুযায়ী বিবাহ রেজিস্ট্রেশনকারীর ফি বরপক্ষের আদায় করতে হয় তাই এ ফি বরপক্ষই আদায় করবে অবশ্য কনে-পক্ষ নিজেরা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে দেয়, তাহলে এতেও কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু তাদের ওপর এটি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না

আলমাবসূত, সারাখসী ১৬/৫৩; আলমুহীতুর রাযাবী ৬/৫৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/৪৫০; রদ্দুল মুহতার ৫/৪২২

শেয়ার লিংক

জহিরুল ইসলাম - ফেনী

৬৭৩০. প্রশ্ন

আমার ফুফাতো ভাই বিদেশ যাওয়ার আগে টাকার প্রয়োজনে তার মোটরসাইকেলটি আমার কাছে বিক্রি করে দেয় বিক্রির সময় সে আমাকে আশি হাজার টাকা দাম বললেও আমি পঁচাত্তর হাজার টাকা হলে নেব এই প্রস্তাব দিই তখন সে বলেছিল, পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিলে তো আপনার ভাইকেই দিবেন এরপর সে আমাকে সাইকেলটি বুঝিয়ে দিতে চাইলে আমি পঁচাত্তর হাজার টাকার কথা বলেই তার থেকে সাইকেলটি বুঝে নিই এবং সে বিদেশ যাওয়ার আগেই তাকে পঁচাত্তর হাজার টাকা পরিশোধ করে দিই দুই বছর পর বিদেশ থেকে এসে সে এখন আমার কাছে সাইকেলটির মূল্য বাবদ আরও পাঁচ হাজার টাকা দাবি করছে

জানতে চাই, এমতাবস্থায় শরীয়তের বিচারে আমি তাকে আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে বাধ্য কি না?

উত্তর

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনি সর্বশেষ পঁচাত্তর হাজার টাকা মূল্য বলার পর বিক্রেতা যেহেতু এর ওপর আর আপত্তি জানায়নি; বরং এরপর ভিন্ন কোনো কথা বলা ছাড়াই সাইকেলটি আপনাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, তাই এই মূল্যেই সাইকেলটির বিক্রি সম্পন্ন হয়ে গেছে সুতরাং এখন তার অতিরিক্ত দাবি গ্রহণযোগ্য নয় সে তা দাবি করলেও তা দিতে আপনি বাধ্য নন

* >عيون المسائل< ص ৮২ : رجل ساوم رجلا بثوب، فقال البائع: أبيعه بخمسة عشر، وقال المشتري : لا آخذه إلا بعشرة، فذهب به، فهو بخمسة عشر إن كان في يد المشتري حين ساومه، وإن كان في يد البائع، فدفعه إليه، فهو بعشرة.

ফাতাওয়া খানিয়া ২/১২৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/২২৩; আলমুজতাবা ২/৪২৮; আলবাহরুর রায়েক ৫/২৬৭

শেয়ার লিংক

আসাদুল্লাহ - মিরপুর, ঢাকা

৬৭৩১. প্রশ্ন

আমরা জানি, স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ওপর চার মাস দশ দিন শোক পালনের বিধান আছে এছাড়া নিকটাত্মীয় অন্য কেউ মারা গেলে তিন দিন শোক পালনের যে কথা আছে, তা কি শুধু নারীদের জন্য, নাকি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এ শোক পালনের সুযোগ আছে?

আরও জানার বিষয় হল, স্বামী মারা গেলে যেভাবে নারীরা সাজসজ্জা ত্যাগ করার মাধ্যমে শোক পালন করে, এক্ষেত্রেও কি সেভাবেই তা পালন করতে পারবে? পুরুষরা কীভাবে শোক পালন করবে? জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন

 

উত্তর

পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয়স্বজন কেউ মারা গেলে তার জন্য নারী-পুরুষ সকলেরই তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করা জায়েয আছে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা জায়েয নয় তিন দিনের এ শোক পালনের বিষয়টি শুধু নারীদের জন্যই নয়; বরং পুরুষরদের জন্যও এর সুযোগ আছে

আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রা. থেকে বর্ণিত

أنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمْهَلَ آلَ جَعْفَرٍ ثَلَاثاً أَنْ يَأتِيَهُمْ، ثُمَّ أَتَاهُمْ، فَقَالَ: لَا تَبْكُوْا عَلَى أَخِيْ بَعْدَ الْيَوْمِ.

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাফর রা.-এর পরিবারকে (তার শাহাদাতের পর) তিন দিন শোক পালনের জন্য সময় দেন এরপর তিনি সেখানে গিয়ে বলেন, আজকের পর তোমরা আর আমার ভাইয়ের জন্য কাঁদবে না (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪১৮৯)

ইমামুল হারামাইন জুওয়াইনী রাহ. শোক পালনإحداد) ) সংক্রান্ত হাদীস উল্লেখ করে বলেন

ثُمَّ هَذَا التَّحَزُّنَ فِيْ هَذِهِ الْمُدَّةِ لَا يَتَخَصَّصُ بِالنِّسْوَةِ.

এ সময়ে (তিন দিনের) এই শোক পালন কেবল নারীদের সাথে সীমাবদ্ধ নয় (নিহায়াতুল মাতলাব ১৫/২৪৭)

আর এ শোক পালন দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নারীরা চাইলে এসময় সাজসজ্জা পরিত্যাগ করতে পারবে আর পুরুষগণ শোক পালনার্থে এই তিন দিন মৃতের বিয়োগ ব্যথায় ঘরে অবস্থান করতে পারবে এছাড়া সকলেই মৃতের জন্য কান্না আসলে বিলাপ না করে কান্নাকাটি ও দুঃখ ভারাক্রান্ত ভাব প্রকাশ করতে পারবে মৃতের জন্য শোক পালন দ্বারা উদ্দেশ্য শুধু এতটুকুই; এর অতিরিক্ত কিছু নয়

তবে কারও মৃত্যুতে তিন দিনের এ শোক পালন শুধুই একটি মুবাহ ও বৈধ কাজ; সুন্নত বা মুস্তাহাব কিছুই নয়

এক্ষেত্রে ভালোভাবে মনে রাখতে হবে যে, শোক প্রকাশের ক্ষেত্রে বিলাপ করা বা হা-হুতাশ করে কান্নাকাটি করা, বুক চাপড়ানো, কপাল চাপড়ানো বা এজাতীয় বাড়াবাড়ি করা সম্পূর্র্ণ নাজায়েয ও গুনাহ এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই

এছাড়া বর্তমানে সমাজে শোক পালনের যে প্রথা আবিষ্কার হয়েছে, যেমন, কালো পোশাক পরা, কালো পতাকা টানানো, পতাকা অর্ধনমিত রাখা, বছর বছর শোক দিবস পালন করা, বার্ষিকী পালন করা এসবই কুসংস্কার ও বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত মুসলমানদের এ ধরনের গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক

* >التجنيس والمزيد< /২৮৬-২৯০ : الجلوس للمصيبة ثلاثة أيام للرجال، جاءت الرخصة فيه، وتركه أحسن؛ لقوله: لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تحد على ميت فوق ثلاثة أيام، إلا على زوجها أربعة أشهر وعشرا، والإخفاء أحسن. ... ويكره النوح والصياح؛ لما روي أن النبي صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى عن الصوتين الأحمقين الفاجرين: صوت النائحة والمغنية، وأما البكاء فلا بأس به. ... ويكره الجلوس على باب الدار للمصيبة، فإن ذلك عمل أهل الجاهلية، ... ويكره تمزيق الثياب، وتخميش الوجه؛ لأن النبيصَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نهى عن ذلك.

ফাতহুল কাদীর ৪/১৬০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আলমুজতাবা ২/১১৫; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৮/৩০২, ৪/১৯৪; রদ্দুল মুহতার ২/২৪১

শেয়ার লিংক