নুমান - উত্তরা, ঢাকা
৬৭৭২. Question
মুহতারাম, আমাদের একটি সামাজিক সংগঠন আছে। এই সংগঠনের জন্য আমরা সাধারণ দানের পাশাপাশি যাকাতদাতাগণের কাছ থেকে যাকাতের টাকাও সংগ্রহ করে থাকি এবং এই টাকা আমরা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত অভাবী ব্যক্তিদের চিকিৎসা, চাষাবাদ, লেখা-পড়া, বিবাহ-শাদী, সুদী লোনে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদেরকে সেখান থেকে মুক্ত করা প্রভৃতি কাজে খরচ করি।
যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে এই ফান্ড থেকে সুদমুক্ত ঋণও নিতে চায়। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি যে, আমাদের জন্য এই ফান্ডের যাকাতের টাকা থেকে লোকদেরকে ঋণ দেওয়া বৈধ হবে কি না। আমাদেরকে এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানিয়ে উপকৃত করবেন।
Answer
যাকাত আদায় হওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের টাকা অথবা যাকাতের অর্থে খরিদকৃত বস্তুর পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি। যাকাতের টাকা থেকে ঋণ দিলে যাকাত আদায় হয় না। যদিও ঋণগ্রহীতা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়।
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত সংগঠনের পরিচালকগণ দাতাগণের যাকাত আদায়ের প্রতিনিধি মাত্র। দাতাগণের পক্ষ থেকে সঠিক খাতে যাকাতের টাকা পৌঁছানোর যিম্মাদারী তারা নিয়েছেন। দাতাগণও নিজেদের যাকাতের অর্থ যথাযথ পন্থায় ব্যয় হবে– এমন আস্থা নিয়েই তাদের কাছে দিয়ে থাকেন। অতএব তাদের কর্তব্য হল, দ্রুত উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে এ টাকাগুলোর মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাতে করে সঠিকভাবে দাতাগণের যাকাত আদায় হয়ে যায়। কিন্তু তা না করে সংগঠনের পরিচালকগণের জন্য যাকাত ফান্ড থেকে কাউকে ঋণ দিলে তা মানুষের যাকাতের অর্থে অন্যায় হস্তক্ষেপের শামিল হবে। এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি সমস্যা তৈরি হয়–
১. মানুষের যাকাতের অর্থ সরাসরি যাকাতের খাতে ব্যয় না করে অন্য কাজে ব্যবহার করা। অথচ প্রতিনিধির জন্য এ ধরনের তসরুফ জায়েয নয়।
২. দাতাগণের যাকাত দীর্ঘদিন অনাদায়ী থেকে যাওয়া বা যাকাত আদায়ে অনেক বিলম্ব হওয়া। কেননা যাকাতের টাকাগুলো ঋণ দেওয়ার পর ঋণগ্রহীতা থেকে ফেরত নিয়ে যতক্ষণ না তা যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হবে, এর আগ পর্যন্ত এ টাকার যাকাত আদায় হবে না। আর যাকাত আদায়ে অল্প কিছুদিন বিলম্ব করা জায়েয হলেও বেশি বিলম্ব করা শরীয়তসম্মত নয়।
৩. এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে। কোনো ঋণগ্রহীতার অসামর্থ্য বা অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সেই টাকা সম্পূর্ণ খোয়াও যেতে পারে। বর্তমান যুগে ঋণের ক্ষেত্রে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমনটি ঘটলে ওই টাকার যাকাত আদায় হবে কীভাবে। সেক্ষেত্রে তো দায়িত্বশীলদের নিজ পকেট থেকে মানুষের ওই যাকাত আদায় করতে হবে।
এসব সমস্যার কারণে উক্ত সংগঠনের জন্য যাকাতের টাকা সরাসরি যাকাতের খাতে আদায় না করে এ টাকা দিয়ে ঋণ দেওয়া বৈধ হবে না।
সাংগঠনিকভাবে যাকাতের অর্থ জমা করে তা উপযুক্ত লোকদের মধ্যে বিলি করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে যে, জমা হওয়া যাকাতের পুরো টাকাই হকদারদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। সংগঠনের ব্যবস্থাপনাগত কোনো খরচ এ টাকা থেকে নেওয়া যাবে না।
মনে রাখতে হবে, যাকাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান। তাই এক্ষেত্রে খুব সতর্কতা কাম্য। এজন্য যাদের সামর্থ্য ও যাচাই-বাছাইয়ের যোগ্যতা আছে, তাদের জন্য নিজ হাতে যাকাত আদায় করা উত্তম। অবশ্য নিজের যাকাতের অর্থ আদায়ের জন্য বিশ্বস্ত এবং মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত বিজ্ঞ ব্যক্তিকেও দেওয়া যেতে পারে।
প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের সংগঠন পরিচালনা করার আগে এর যাবতীয় নিয়মনীতি কোনো নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতায় দেখিয়ে সংশোধন ও সত্যায়ন করিয়ে নেওয়া কর্তব্য। যেন মানুষের ফরয হক আদায়ে কোনো প্রকারের ত্রুটি না হয়ে যায়।
* >الفتاوى الخانية< ৩/১৭ : رجل دفع إلى رجل عشرة دراهم، وأمره أن يتصدق بها، فأنفقها الوكيل، ثم تصدق عن الآمر بعشرة دراهم من ماله، لا يجوز، ويكون ضامنا للعشرة.
* >رد المحتار< ২/২৭২: (قوله: فيأثم بتأخيرها إلخ) ظاهره الإثم بالتأخير، ولو قل كيوم أو يومين؛ لأنهم فسروا الفور بأول أوقات الإمكان. وقد يقال: المراد أن لا يؤخر إلى العام القابل؛ لما في البدائع عن المنتقى بالنون: إذا لم يؤد، حتى مضى حولان، فقد أساء وأثم اهـ، فتأمل.
–আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৬১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৬৪৪; ফাতাওয়া রাহীমিয়া ৭/১৪৩