যুহাইর - বনশ্রী, ঢাকা

৬৭৬৩. Question

কিছুদিন আগে আমি গোসল করে জুমার নামাযের জন্য প্রস্তুত হই এরপর দেখলাম, আমার নখ কাটা হয়নি তাই আমি নখ কাটতে বসে যাই তখন আমাকে আমার এক সাথি বললেন, আপনি এখন কেন নখ কাটছেন? আপনাকে তো এখন আবার ওযু করতে হবে নখ কাটলে তো ওযু ভেঙে যায় কিন্তু আমি তার কথা না শুনে পুনরায় ওযু না করে ঐ অবস্থায়ই জুমার নামায আদায় করি

এখন জানার বিষয় হল, তার এ কথা কি ঠিক? নখ কাটলে কি আসলেই ওযু ভেঙে যায়? উক্ত অবস্থায় পুনরায় ওযু না করে আমার জুমার নামায আদায় করা কি সহীহ হয়েছে?

Answer

ঐ কথাটি ঠিক নয় নখ কাটলে ওযু ভাঙে না সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নখ কাটার পর পুনরায় ওযু না করে আপনার জুমার নামায আদায় করা সহীহ হয়েছে

হাসান বসরী রাহ. থেকে বর্ণিত

عَنِ الْحَسَنِ، فِي الرَّجُلِ يَأْخُذُ مِنْ شَعْرِهِ وَمِنْ أَظْفَارِهِ بَعْدَ مَا يَتَوَضَّأُ؟ قَالَ : لاَ شَيْءَ عَلَيْهِ.

যে ব্যক্তি ওযু করার পর চুল ও নখ কেটেছে তার ওপর কোনো কিছু আবশ্যক নয় (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৫৭৬)

* كتاب >الأصل< للشيباني /৩৬ : قلت: أرأيت رجلا توضأ وضوءه للصلاة، ثم جز شعره أو نتف إبطه، أو قص أظفاره أو أخذ من شاربه، هل يمسح شيئا من ذلك؟ قال: لا؛ لأن هذا طهور ونظافة.

আলমাবসূত, সারাখসী ১/৬৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১৩৯; আলমুহীতুর রাযাবী ১/৮১; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪

Sharable Link

তাসফিয়া সুলতানা - মুহাম্মদপুর, ঢাকা

৬৭৬৪. Question

কিছুদিন আগে আমার গর্ভপাত ঘটে যাতে শুধু এক টুকরা গোশত বের হয় তাতে কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রকাশ পায়নি এরপর লাগাতার চারদিন রক্তও বের হয় আমি তা নেফাসের রক্ত মনে করে এ কয়দিনের নামায পড়িনি

জানার বিষয় হল, তা কি নেফাস হিসেবে গণ্য হবে? এবং এ কয়দিনের নামাযের কী হুকুম? সেগুলো কি কাযা করতে হবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু গর্ভপাত হওয়া অংশটি নিছক একটি গোশতের টুকরা ছিল, শরীরের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আকৃতি তাতে প্রকাশ পায়নি, তাই এরপর যে রক্ত দেখা গেছে, তা নেফাস হিসেবে গণ্য হবে না তবে গর্ভপাতের পূর্বে যদি আপনি ১৫ দিন বা ততোধিক সময় পবিত্র থাকেন, তাহলে তা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে সেক্ষেত্রে এ দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে না আর যদি গর্ভপাতের পূর্বে কমপক্ষে ১৫ দিন পবিত্র অবস্থায় না কাটে, তাহলে তা ইস্তেহাযার রক্ত হিসেবে গণ্য হবে এবং এ দিনগুলোর নামায কাযা করতে হবে

* >الحاوي القدسي< /১৪৩ : وما رأت من الدم بعد السقط الذي لم يستبن خلقه من عضو وإصبع، لم يكن نفاسا، ويكون حيضا أو استحاضة.

বাদায়েউস সানায়ে ১/১৬১; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪৭০; ফাতহুল কাদীর ১/১৬৫; আলমুজতাবা, যাহেদী ১/১৪২; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩০২

Sharable Link

মাহদী হাসান - মুহাম্মদপুর, ঢাকা

৬৭৬৫. Question

জনৈক ব্যক্তি কুরবানীর দিন একটি চাকু দিয়ে ছাগল জবাই করে কাজের ফাঁকে সবাই যখন নাস্তা করতে বসে, তখন সে কাপড় দিয়ে চাকুটি মুছে নেয় এবং তা দিয়ে ফল কেটে খায় অবশ্য সে তা মুছে নেওয়ার দ্বারা তা থেকে রক্ত দূর হয়ে যায়

জানার বিষয় হল, এই চাকুটি না ধুয়ে শুধু মুছে নিয়ে তা দ্বারা ফল কেটে খাওয়া কি জায়েয হয়েছে?

Answer

লোহা, গ্লাস ইত্যাদি (মসৃণ বস্তু)-তে নাপাকি লাগলে তা ভালোভাবে মুছে নিলেই পাক হয়ে যায় এসব বস্তু ধোয়া আবশ্যক নয় তাই প্রশ্নোক্ত ব্যক্তির চাকুটি কাপড় দিয়ে মুছে নেওয়ার দ্বারা তা পাক হয়ে গেছে এবং এর দ্বারা ফল কেটে খাওয়াও জায়েয হয়েছে

* >شرح مختصر الكرخي< للقدوري /১৯৯ : وقد قال أصحابنا في النجاسة، إذا وقعت على السيف والمرآة فمسحت، طهرت؛ لأنه جسم صقيل لا يتداخله النجاسة، فإذا مسحت لم يبق منها إلا اليسير الذي لا يعتد به.

আততাজনীস ওয়াল মাযীদ ১/২৮৩; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ১/৪৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৪২; ফাতহুল কাদীর ১/১৭৪; আদ্দুররুল মুখতার ১/৩১০

Sharable Link

রাহাত জামিল - ময়মনসিংহ

৬৭৬৬. Question

শুক্রবার আসরের সময় আমাদের মসজিদের মুআযযিন সাহেব আযান দিচ্ছিলেন আযানে তিনি حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ এর আগে حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলে ফেলেন পরক্ষণই পেছন থেকে একজন বলে উঠলেন, حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ পরে হবে তখন তিনি حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ দুইবার বলে পুনরায় حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলেন এবং যথারীতি আযান শেষ করেন

এখন আমার প্রশ্ন হল, এক্ষেত্রে নিয়ম কী ছিল? ছুটে যাওয়া বাক্য অর্থাৎ حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ দুইবার বলে পুনরায় حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলা, নাকি শুধু حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ বলে حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ না দোহরিয়ে اللهُ أكْبَرُ বলে বাকি আযান শেষ করা? এক্ষেত্রে মুআযযিন সাহেবের কাজটি কি ঠিক হয়েছে?

Answer

হাঁ, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মুআযযিন সাহেবের কাজটি নিয়মসম্মতই হয়েছে حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ আগে বলে ফেলার পর حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ বলে পুনরায় حَيَّ عَلَى الْفَلاَحِ বলা ঠিকই হয়েছে কেননা আযানের মধ্যে কোনো বাক্য আগে বলে ফেললে নিয়ম হল, স্মরণ হওয়ার পর ছুটে যাওয়া বাক্যটি বলবে অতঃপর পরের বাক্যগুলো পুনরায় বলে এরপর থেকে বাকি আযান পূর্ণ করবে এক্ষেত্রে এটিই উত্তম পদ্ধতি

 

* كتاب >الأصل< /১১৭ : قلت: أرأيت مؤذنا أذن وقدم شيئا قبل شيء فقال: أشهد أن محمدا رسول الله، ثم قال: أشهد أن لا إله إلا الله؟ قال: فإذا قال: أشهد أن لا إله إلا الله، فإن عليه أن يقول: أشهد أن محمدا رسول الله، حتى يكون بعدها. قلت: فإن لم يفعل ومضى على ذلك؟ قال: يجزيهم.

বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৬৯; আলমুজতাবা, যাহেদী ১/১৮৯; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৭৯; গুনইয়াতুল মুতামাল্লী, পৃ. ৩৭৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৬

Sharable Link

মুশাররফ হোসেন - হযরতপুর, কেরানীগঞ্জ

৬৭৬৭. Question

জামাতে নামায পড়ার সময় কখনো ভুলক্রমে রুকুর তাকবীর না বলেই ইমামের সঙ্গে রুকুতে চলে যাই এতে কি আমার নামায নষ্ট হয়ে যাবে? বিষয়টা নিয়ে খুব পেরেশানীতে আছি অনুগ্রহ করে দ্রুত জানাবেন

Answer

না, প্রশ্নোক্ত ভুলের কারণে নামায নষ্ট হবে না রুকুর তাকবীর ছুটে গেলে নামায নষ্ট হয় না তবে রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবীর বলা সুন্নত তাই ইচ্ছাকৃত তা ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়

প্রকাশ থাকে যে, নামাযে আরও মনোযোগী ও যত্নবান হওয়া কাম্য যেন সুন্নত-মুস্তাহাব কোনো কিছু ছুটে না যায়

* >بدائع الصنائع< /৪০৭ : بخلاف تكبيرات الركوع والسجود فإنها من السنن، ونقصان السنة لا يجبر بسجود السهو.

শরহু মুখতাসারিল কারখী ১/৬২০; ফাতাওয়া ওয়ালওয়ালিজিয়া ১/৯৯; আলমুহীতুল বুরহানী ২/৩১৪; মাজমাউল আনহুর ১/১৩৫; আদ্দুররুল মুনতাকা ১/১৩৪

Sharable Link

নাজমুল হক - ওয়েব থেকে প্রাপ্ত

৬৭৬৮. Question

আমাদের মসজিদের পুনর্নির্মাণ কাজ চলছে তাই নামাযের জন্য মসজিদের পাশেই অস্থায়ীভাবে একটি ঘর বানানো হয়েছে তবে জায়গাটি ছোট জুমার সময় এখানে সবার জায়গা সংকুলান হয় না এর পাশেই একটা খালি বড় মাঠ আছে এলাকার লোকজন এ মাঠেই জুমার নামায আদায় করতে চাচ্ছেন

জানার বিষয় হল, উক্ত জায়গায় কি তাদের জুমার নামায আদায় হবে? মসজিদের বাইরে কি জুমার নামায পড়া যায়?

Answer

হাঁ, উক্ত মাঠে জুমার নামায সহীহ হবে কেননা জুমার নামায সহীহ হওয়ার জন্য মসজিদ শর্ত নয় মাঠেও জুমা জায়েয আছে

তবে উল্লেখ্য যে, কাছাকাছি অন্য কোনো জামে মসজিদ থাকলে এবং সেখানে জায়গা সংকুলান হলে মাঠে জুমা না পড়ে ঐ মসজিদে গিয়ে জুমা পড়াই উত্তম হবে

* >غنية المتملي< ص ৫৫১والمسجد الجامع ليس بشرط، ولهذا أجمعوا على جوازها بالمصلى في فناء المصر.

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৫৯; আলমাবসূত, সারাখসী ২/১২০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৫৫০; আননাহরুল ফায়েক ১/৩৫২; হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাকী, পৃ. ২৭৯

Sharable Link

মুহাম্মাদ আলফাতিহ - সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা

৬৭৬৯. Question

আমার এক নিকটাত্মীয় কয়েক মাস যাবৎ অনেক অসুস্থ ছিলেন এসময় তিনি শুয়ে বা বসে মাথার ইশারায় নামায পড়তেন শেষ দুই সপ্তাহ অসুস্থতা অনেক বেড়ে যায় তখন তার হুঁশ-জ্ঞান ছিল কিন্তু শুয়ে মাথার ইশারা করে নামায পড়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না এখন তিনি সুস্থ হয়েছেন

জানার বিষয় হল, তার জন্য কি ঐ দুই সপ্তাহের নামায কাযা করতে হবে?

Answer

না, প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে তাকে ঐ দুই সপ্তাহের নামায কাযা করতে হবে না কেননা অসুস্থ ব্যক্তির হুঁশ-জ্ঞান থাকলেও তার যদি মাথার ইশারায়ও নামায আদায়ের সক্ষমতা না থাকে, আর এ অবস্থায় একাধারে ছয় ওয়াক্ত কিংবা এরও বেশি সময় পার হয়ে যায়, তাহলে পরবর্তীতে সে সুস্থ হয়ে গেলেও ঐ নামাযগুলোর কাযা করা জরুরি নয়

* >الفتاوى الولوالجية< /১০৬ : وإذا أغمي عليه أو جن، أو عجز عن الإيماء بالرأس، إن دام على ذلك، حتى كان أكثر من يوم وليلة، يسقط قضاء الصلاة، وإن كان أقل لا يسقط.

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৯৮; ফাতাওয়া খানিয়া ১/১৭২; আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ২/৪০৫; হালবাতুল মুজাল্লী ২/২৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৯৯

Sharable Link

সালীম মাহদী - আদর্শ সদর, কুমিল্লা

৬৭৭০. Question

আমি কয়েক দিন আগে বিতিরের নামাযে দুআয়ে কুনূত তো পড়েছি; কিন্তু দুআয়ে কুনূতের আগে তাকবীর বলতে ও হাত ওঠাতে ভুলে যাই এমনকি সেজন্য সাহু সিজদাও আদায় করিনি

জানার বিষয় হল, আমার নামায কি আদায় হয়েছে?

Answer

হাঁ, আপনার বিতির নামাযটি আদায় হয়েছে এক্ষেত্রে সাহু সিজদা না করে ঠিকই করেছেন কেননা বিতির নামাযে দুআয়ে কুনূতের আগে হাত ওঠানো ও তাকবীর বলা সুন্নত; ওয়াজিব নয় তাই এগুলো ছুটে গেলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না তবে কোনো ওজর ছাড়াই নামাযে ইচ্ছাকৃত কোনো সুন্নত ছেড়ে দেওয়া অন্যায় ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ভুল না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে

* >البحر الرائق< /৯৬ : ومما ألحق به تكبيره، وجزم الشارح بوجوب السجود بتركها، وذكر في الظهيرية أنه لو ترك تكبيرة القنوت، فإنه لا رواية لهذا، وقيل : يجب سجود السهو اعتبارا بتكبيرات العيد، وقيل: لا يجب اهـ. وينبغي ترجيح عدم الوجوب، لأنه الأصل، ولا دليل عليه.

শরহু মুখতাসারিল কারখী, কুদূরী ১/৬১০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৯৮; রদ্দুল মুহতার ১/৪৬৮, ২/৬

Sharable Link

মুহাম্মদ ওয়াকার - লালবাগ, ঢাকা

৬৭৭১. Question

আমি ঘর থেকে বের হলে রাস্তার ধুলোবালি থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরে বের হই একদিন রাস্তায় নামাযের সময় হয়ে গেলে একটি মসজিদে যাই এবং মাস্ক পরা অবস্থায়ই নামাযে দাঁড়িয়ে যাই আমার ধারণা ছিল, মাস্ক পরে নামায পড়তে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু নামাযের পর আমার পাশের মুসল্লী বললেন, মাস্ক পরে নামায পড়া মাকরূহ

তাই আমি জানতে চাচ্ছি, আসলেই কি মাস্ক পরে নামায পড়া মাকরূহ?

Answer

হাঁ, বিনা ওজরে মুখ ঢেকে নামায পড়া মাকরূহ হাদীস শরীফে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছে

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত

أَنَّ رَسُولَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ السَّدْلِ فِي الصَّلَاةِ، وَأَنْ يُغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন এবং (নামাযে) মুখ ঢাকতে নিষেধ করেছেন (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৪৩)

অবশ্য কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে মাস্ক পরে নামায পড়লে মাকরূহ হবে না

* كتاب >الأصل< للشيباني /১৩ : قلت: أرأيت الرجل إذا صلى أتكره له أن يغطّي فاه وهو يصلي؟ قال: نعم.

আলগায়া, সারুজী ৪/১৪৬; আলমুহীতুল বুরহানী ২/১৩৭; মিরাজুদ দিরায়া ১/৯০৬; মারাকিল ফালাহ, পৃ. ১৯৩; রদ্দুল মুহতার ১/৬৫২

Sharable Link

নুমান - উত্তরা, ঢাকা

৬৭৭২. Question

মুহতারাম, আমাদের একটি সামাজিক সংগঠন আছে এই সংগঠনের জন্য আমরা সাধারণ দানের পাশাপাশি যাকাতদাতাগণের কাছ থেকে যাকাতের টাকাও সংগ্রহ করে থাকি এবং এই টাকা আমরা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত অভাবী ব্যক্তিদের চিকিৎসা, চাষাবাদ, লেখা-পড়া, বিবাহ-শাদী, সুদী লোনে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদেরকে সেখান থেকে মুক্ত করা প্রভৃতি কাজে খরচ করি

যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে এই ফান্ড থেকে সুদমুক্ত ঋণও নিতে চায় কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি যে, আমাদের জন্য এই ফান্ডের যাকাতের টাকা থেকে লোকদেরকে ঋণ দেওয়া বৈধ হবে কি না আমাদেরকে এ বিষয়ে সঠিক মাসআলা জানিয়ে উপকৃত করবেন

Answer

যাকাত আদায় হওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের টাকা অথবা যাকাতের অর্থে খরিদকৃত বস্তুর পূর্ণ মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি যাকাতের টাকা থেকে ঋণ দিলে যাকাত আদায় হয় না যদিও ঋণগ্রহীতা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত হয়

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত সংগঠনের পরিচালকগণ দাতাগণের যাকাত আদায়ের প্রতিনিধি মাত্র দাতাগণের পক্ষ থেকে সঠিক খাতে যাকাতের টাকা পৌঁছানোর যিম্মাদারী তারা নিয়েছেন দাতাগণও নিজেদের যাকাতের অর্থ যথাযথ পন্থায় ব্যয় হবে এমন আস্থা নিয়েই তাদের কাছে দিয়ে থাকেন অতএব তাদের কর্তব্য হল, দ্রুত উপযুক্ত ব্যক্তিদেরকে এ টাকাগুলোর মালিক বানিয়ে দেওয়া যাতে করে সঠিকভাবে দাতাগণের যাকাত আদায় হয়ে যায় কিন্তু তা না করে সংগঠনের পরিচালকগণের জন্য যাকাত ফান্ড থেকে কাউকে ঋণ দিলে তা মানুষের যাকাতের অর্থে অন্যায় হস্তক্ষেপের শামিল হবে এতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কয়েকটি সমস্যা তৈরি হয়

১. মানুষের যাকাতের অর্থ সরাসরি যাকাতের খাতে ব্যয় না করে অন্য কাজে ব্যবহার করা অথচ প্রতিনিধির জন্য এ ধরনের তসরুফ জায়েয নয়

২. দাতাগণের যাকাত দীর্ঘদিন অনাদায়ী থেকে যাওয়া বা যাকাত আদায়ে অনেক বিলম্ব হওয়া কেননা যাকাতের টাকাগুলো ঋণ দেওয়ার পর ঋণগ্রহীতা থেকে ফেরত নিয়ে যতক্ষণ না তা যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হবে, এর আগ পর্যন্ত এ টাকার যাকাত আদায় হবে না আর যাকাত আদায়ে অল্প কিছুদিন বিলম্ব করা জায়েয হলেও বেশি বিলম্ব করা শরীয়তসম্মত নয়

৩. এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে কোনো ঋণগ্রহীতার অসামর্থ্য বা অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সেই টাকা সম্পূর্ণ খোয়াও যেতে পারে বর্তমান যুগে ঋণের ক্ষেত্রে তা অস্বাভাবিক কিছু নয় এমনটি ঘটলে ওই টাকার যাকাত আদায় হবে কীভাবে সেক্ষেত্রে তো দায়িত্বশীলদের নিজ পকেট থেকে মানুষের ওই যাকাত আদায় করতে হবে

এসব সমস্যার কারণে উক্ত সংগঠনের জন্য যাকাতের টাকা সরাসরি যাকাতের খাতে আদায় না করে এ টাকা দিয়ে ঋণ দেওয়া বৈধ হবে না

সাংগঠনিকভাবে যাকাতের অর্থ জমা করে তা উপযুক্ত লোকদের মধ্যে বিলি করার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে যে, জমা হওয়া যাকাতের পুরো টাকাই হকদারদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে সংগঠনের ব্যবস্থাপনাগত কোনো খরচ এ টাকা থেকে নেওয়া যাবে না

মনে রাখতে হবে, যাকাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধান তাই এক্ষেত্রে খুব সতর্কতা কাম্য এজন্য যাদের সামর্থ্য ও যাচাই-বাছাইয়ের যোগ্যতা আছে, তাদের জন্য নিজ হাতে যাকাত আদায় করা উত্তম অবশ্য নিজের যাকাতের অর্থ আদায়ের জন্য বিশ্বস্ত এবং মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত বিজ্ঞ ব্যক্তিকেও দেওয়া যেতে পারে

প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের সংগঠন পরিচালনা করার আগে এর যাবতীয় নিয়মনীতি কোনো নির্ভরযোগ্য দারুল ইফতায় দেখিয়ে সংশোধন ও সত্যায়ন করিয়ে নেওয়া কর্তব্য যেন মানুষের ফরয হক আদায়ে কোনো প্রকারের ত্রুটি না হয়ে যায়

* >الفتاوى الخانية< /১৭ : رجل دفع إلى رجل عشرة دراهم، وأمره أن يتصدق بها، فأنفقها الوكيل، ثم تصدق عن الآمر بعشرة دراهم من ماله، لا يجوز، ويكون ضامنا للعشرة.

* >رد المحتار< /২৭২: (قوله: فيأثم بتأخيرها إلخ) ظاهره الإثم بالتأخير، ولو قل كيوم أو يومين؛ لأنهم فسروا الفور بأول أوقات الإمكان. وقد يقال: المراد أن لا يؤخر إلى العام القابل؛ لما في البدائع عن المنتقى بالنونإذا لم يؤد، حتى مضى حولان، فقد أساء وأثم اهـ، فتأمل.

আলফাতাওয়া মিন আকাবীলিল মাশায়িখ, পৃ. ৬১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/২০২; আলমুহীতুল বুরহানী ৯/১৫৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৬৪৪; ফাতাওয়া রাহীমিয়া ৭/১৪৩

Sharable Link

জুনাইদ আহমাদ - মোমেনশাহী

৬৭৭৩. Question

আলহামদু লিল্লাহ এ বছর আমার হজে¦ যাওয়ার সৌভাগ্য হয় হজে¦র দ্বিতীয় দিন নয় তারিখ দিবাগত রাতে আমাদের কাফেলার সবাই আরাফা থেকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে বাসে যাত্রা করে কিন্তু রাস্তায় প্রচুর জ্যাম ছিল যার কারণে সূর্যোদয়ের আগে আমরা মুযদালিফায় পৌঁছতে পারিনি সূর্যোদয়ের অনেক পর আমাদের বাস মুযদালিফার সীমানায় পৌঁছায়

এখন প্রশ্ন হল, যথাসময়ে উকূফে মুযদালিফা করতে না পারায় আমাদের হজ্ব আদায়ে কোনো সমস্যা হয়েছে? এবং এর কারণে আমাদের ওপর দম ওয়াজিব হয়েছে?

Answer

প্রশ্নোক্ত কারণে আপনাদের হজে¦র কোনো সমস্যা হয়নি কেননা যথাসময়ে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগে পৌঁছতে না পারাটা ওজরবশত ছিল; ইচ্ছাকৃত ছিল না মুযদালিফায় রওয়ানা হওয়ার পরও রাস্তায় ভিড়ের কারণে ঘটেছে তাই এ কারণে আপনাদের ওপর কোনো জরিমানা আবশ্যক হবে না তবে শরীয়তসম্মত ওজর ছাড়া উকূফে মুযদালিফা ছেড়ে দিলে দম আদায় করা আবশ্যক

* >البحر الرائق< /৩৪২ : وصرح في الهداية بسقوطه للعذر، بأن يكون به ضعف أو علة، أو كانت امرأة تخاف الزحام، لا شيء عليه. وسيأتي في الجنايات أن هذا لا يخص هذا الواجب، بل كل واجب إذا تركه للعذر لا شيء عليه، ولم يقيد في المحيط خوف الزحام بالمرأة، بل أطلقه، فشمل الرجل لو مر قبل الوقت لخوفه، لا شيء عليه.

বাদায়েউস সানায়ে ২/৩২২; আলমুহীতুর রাযাবী ২/১৮০; মানাসিক, মোল্লা আলী কারী, পৃ. ২১৯, ৩৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ২/৫১১

Sharable Link

ইয়াসিন মোল্লা - সিরাজগঞ্জ

৬৭৭৪. Question

আল্লাহর রহমতে এ বছর আমি উমরা করেছি নফল তাওয়াফ ও অন্যান্য আমলের মধ্যেই সময় কাটানোর চেষ্টা করেছি তবে তাওয়াফ করতে গিয়ে কখনো ওযু ছুটে গেলে ওযু করে এসে কী করব তা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছি ওযু করে আসার পর তাওয়াফ প্রথম থেকে শুরু করতে হবে, নাকি যে চক্করে ওযু ভেঙেছে সেখান থেকে শুরু করলেও হবে? হুজুরের নিকট এর সঠিক মাসআলাটি জানতে চাচ্ছি

Answer

তাওয়াফ অবস্থায় যেখানে ওযু ভেঙেছে ওযু করে সেখান থেকে বাকি তাওয়াফ পূর্ণ করলেও তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে

তবে ওযু ভাঙার আগে তাওয়াফের অধিকাংশ চক্কর (চার চক্কর) করা না হয়ে থাকলে ওযু করে আসার পর পুনরায় প্রথম থেকে তাওয়াফ আদায় করা উত্তম

আতা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

تَسْتَقْبِلُ الطَّوَافَ أَحَبُّ إلَيَّ، وَإِنْ فَعَلَتْ فَلاَ بَأْسَ بِهِ.

(তাওয়াফের মাঝে ওযু ভেঙে গেলে ওযু করে এসে) শুরু থেকে তাওয়াফ করা উত্তম তবে (যে স্থানে ওযু ভেঙেছে সেখান থেকে) যদি তাওয়াফ করে নেওয়া হয়, তাহলেও সমস্যা নেই (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ১৩৬০২)

* >المبسوط< للسرخسي /৪৮ : (قال) وإذا خرج الطائف من طوافه لصلاة مكتوبة أو جنازة أو تجديد وضوء ثم عاد، بنى على طوافه؛ لما بينا أنه ليس كالصلاة في الأحكام، فالاشتغال في خلاله بعمل لا يمنع البناء عليه.

আলমুহীতুর রাযাবী ২/২০৬; ফাতহুল কাদীর ২/৩৮৯; আলমাসালিক ফিল মানাসিক ১/৪৪৮; রদ্দুল মুহতার ২/৪৯৭; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১২৭

Sharable Link

শামসুল আলম - ডুমুরিয়া, খুলনা

৬৭৭৫. Question

গত দুই মাস আগে আমি আমার মেয়েকে এক প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে দিই ছেলে বিদেশ থাকা অবস্থায়ই তার প্রতিনিধির মাধ্যমে বিয়ে সংঘটিত হয় কিন্তু আল্লাহর ফয়সালা ওই ছেলের দেশে আসার পূর্বেই ইন্তেকাল হয়ে গেছে

জানার বিষয় হল, বিয়ের পর তো আমার মেয়ের সাথে তার স্বামীর দেখাসাক্ষাৎ কিছুই হয়নি এক্ষেত্রেও কি তার ওপর ইদ্দত পালন জরুরি? ইদ্দত অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তাকে কি অন্যত্র বিবাহ দেওয়া যাবে?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার মেয়ের ওপর স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত (চার মাস দশ দিন) পালন করা জরুরি ইদ্দত শেষ হওয়ার পূর্বে তাকে অন্যত্র বিবাহ দেওয়া জায়েয হবে না কেননা স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত আবশ্যক হওয়ার জন্য বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ, মেলামেশা কিংবা নির্জনবাস কিছুই শর্ত নয়; বরং বিবাহ সহীহভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দেখাসাক্ষাৎ হওয়ার আগে স্বামী মারা গেলেও স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করা আবশ্যক

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

وَ الَّذِیْنَ یُتَوَفَّوْنَ مِنْكُمْ وَ یَذَرُوْنَ اَزْوَاجًا یَّتَرَبَّصْنَ بِاَنْفُسِهِنَّ اَرْبَعَةَ اَشْهُرٍ وَّ عَشْرًا.

আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তাদের স্ত্রীরা নিজেদের চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে (সূরা বাকারা, আয়াত ২৩৪)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসীর রাহ. বলেন

هَذَا أَمْرٌ مِنَ الله لِلنِّسَاءِ اللَّاتِي يُتَوَفَّى عَنْهُنَّ أَزْوَاجُهُنَّ: أَنْ يَعْتَدِدْنَ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرَ لَيَالٍ، وَهٰذَا الْحُكْمُ يَشْمَلُ الزَّوْجَاتِ الْمَدْخُوْلَ بِهِنَّ وَغَيْرَ الْمَدْخُوْلِ بِهِنَّ بِالْإجْمَاعِ.

যেসকল মহিলার স্বামী মারা গেছে তাদের জন্য আল্লাহর নির্দেশ হল, তারা চার মাস দশ রাত ইদ্দত পালন করবে এবং এ বিধানটি স্বামীর সাথে সহবাস হয়েছে বা হয়নি সকল মহিলার জন্যই প্রযোজ্য এ ব্যাপারে সবার ইজমা (তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪২৬)

আতা রাহ. বলেন

تَعْتَدُّ الْمُتَوَفَّى عَنْهَا أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا، وَإِنْ لَمْ يُصِبْهَا زَوْجُهَا.

স্বামী মারা গেলে স্ত্রী চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করবে, যদিও স্বামীর সাথে সহবাস না হয়ে থাকে (মুসান্নাফে আবদুর রায্যাক, বর্ণনা ১২০৪৯)

 

* كتاب >الأصل< /৪০৩ : والمتوفى عنها زوجها إن كانت حرة مسلمة أو من أهل الكتاب بعد أن يكون زوجها مسلما، فعدتها أربعة أشهر وعشرة أيام، إن كان دخل بها، وإن لم يكن دخل بها، صغيرة كانت أو كبيرة.

শরহু মুখতাসারিত তাহাবী, জাস্সাস ৫/২৩৯; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২২৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৮; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/২৫৬; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩২; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫১০

Sharable Link

শাহবায - আশুলিয়া, সাভার

৬৭৭৬. Question

আমি এক বিষয়ে আল্লাহর কসম করে বলি যে, আমি আর কখনো এ কাজ করব না কিন্তু পরে আমি তা ভুলে যাই এবং ঐ কাজটি করে ফেলি এখন আমার ভুলবশত ঐ কাজটি করার দ্বারাও কি কসম ভঙ্গ হয়ে গেছে? যদি ভঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে হেফযখানায় পড়ার সময় ছোট (নাবালেগ) থাকা অবস্থায় যেসকল কসম করেছিলাম, কিন্তু বড় হয়ে ভুলে ভঙ্গ করে ফেলি, তার জন্যও কি কাফফারা দিতে হবে?

Answer

কসম করার পর ভুলে গিয়ে তা করে ফেললেও কসম ভেঙে যায় তাই প্রশ্নোক্ত অবস্থায় আপনার কসম ভেঙে গেছে আপনাকে এর কাফফারা আদায় করতে হবে

আর হেফযখানায় ছোট (নাবালেগ) অবস্থায় যেসকল কসম করেছিলেন, তা সংঘটিতই হয়নি কেননা কসম সংঘটিত হওয়ার জন্য বালেগ হওয়া শর্ত তাই বড় হয়ে ভুলে ঐ কাজগুলো করার কারণে কাফফারা দিতে হবে না

* >الفتاوى التاتارخانية< /৩৪ : المكره والطائع والناسى فى الحلف والحنث سواء.

ফাতহুল কাদীর ৪/৩৪৮, ৩৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৭৭, ২৮০; মাজমাউল আনহুর ২/২৬৫, ২৬৪; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭০৪, ৭০৯

Sharable Link

রাজু - বারিধারা, ঢাকা

৬৭৭৭. Question

বর্তমানে বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ডিপিএস করা যায় এতে ইসলামিক ডিপিএস-এরও অপশন আছে তারা একে শরীয়তসম্মত ও বৈধ বলে প্রচার করে থাকে

মুহতারামের কাছে জানতে চাই, এটি কি বাস্তবেই শরীয়তসম্মত? এতে টাকা জমা রেখে মুনাফা ভোগ করা কি বৈধ হবে?

Answer

প্রচলিত ব্যাংকগুলোতে ফিক্সড ডিপোজিট কিংবা অন্যান্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা এবং এর থেকে মুনাফার নামে প্রাপ্ত অর্থ ভোগ করা জায়েয নয় কারণ, এসব মুনাফা সরাসরি সুদ যা কুরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট দলীল দ্বারা  হারাম এদেশের মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর (যেমন, বিকাশ)-ও একই হুকুম

আর আমাদের দেশে বর্তমানে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলো কাগজে-কলমে ইসলামী হওয়ার দাবি করলেও প্রকৃত পক্ষে শরীয়া নীতিমালা অনুসরণ করে পরিচালিত হয় না তাদের বিনিয়োগ কার্যক্রমগুলোর অধিকাংশই যথাযথভাবে শরীয়তসম্মত পন্থায় সম্পাদিত হয় না এমনকি অর্থ জমাকারীদের সাথে তাদের লেনদেনও পুরোপুরি বৈধ পন্থায় হয় না ফিকহুল মুআমালাত ও প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর সঠিক ধারণা রাখেন এমন কারো কাছেই বিষয়গুলো অস্পষ্ট নয় আর তাদের কারবারগুলো শরীয়াসম্মত না হওয়ার বড় আরেকটি প্রমাণ তো ভুয়া ও বে-আইনী লেনদেন করে অনেকগুলো ইসলামী ব্যাংকের দেওলিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া

তাছাড়া বিকাশ ইসলামিক ডিপিএস-এর সার্ভিস ঢাকা ব্যাংক পিএলসিসিটি ব্যাংক পিএলসি-এর মাধ্যমে দিয়ে থাকে আর এ দুটিই হচ্ছে সুদী বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের কেবল ইসলামী উইন্ডো বা শাখা রয়েছে এদিক থেকে বিকাশের ইসলামী নামের সেভিং সার্ভিসগুলো শরীয়তপরিপন্থি ও অবৈধ হওয়া আরও স্পষ্ট কেননা ব্যাংকের মূল সিস্টেম সুদী রেখে এর কোনো শাখা বা শাখারও একটি অংশকে ইসলামী দাবি করা ইসলামের নামে প্রহসন ছাড়া কিছু নয় যেখানে ইসলামী ব্যাংকগুলোই ঠিকমতো ইসলাম মেনে চলে না, সেখানে তারা কীভাবে সুদের রমরমা ব্যবসার মাঝে একটি টেবিলে ইসলাম বাস্তবায়ন করে ফেলে

অতএব বিকাশে ইসলামিক ডিপিএস-এ টাকা জমা রাখা এবং এর থেকে মুনাফার নামে দেওয়া টাকা ভোগ করা জায়েয হবে না এ থেকে বিরত থাকা জরুরি

এ দেশে ব্রাক-এর ইসলাম পরিপন্থি তৎপরতা কারো অজানা নয় তারাই কিনা নিজেদের প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এ ইসলামিক ডিপিএস সার্ভিস খুলেছে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করার এহেন তৎপরতা বন্ধ হওয়া উচিত

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষও অনৈসলামিক ব্যাংকগুলোর ইসলামী উইন্ডো বন্ধ হওয়া দরকার বলে মতামত প্রদান করেছেন

বাদায়েউস সানায়ে ৪/৪২৬; আলমাআয়ীরুশ র্শইয়্যাহ, পৃ.  ১৫৬, ২১০-২১৬, ২৪২-২৫৫; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ৫, ২/১৫৩৯, ১৫৯৯; সংখ্যা ১২, ১/৬৯৭

Sharable Link

আবু তালহা - ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ

৬৭৭৮. Question

আমার লেপ-তোশকের একটি দোকান আছে বিক্রয়ের পাশাপাশি কেউ অর্ডার করলে তার জন্যও আমি লেপ-তোশক তৈরি করি তবে অর্ডারদাতা ক্রেতাকে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়ার নির্ধারিত তারিখের আগে তার জন্য প্রস্তুতকৃত ঐ পণ্য অন্য কোনো ক্রেতা পছন্দ করে কিনে নিতে চাইলে আমি সেটি তার কাছে বিক্রি করে দিই এবং সময়ের আগেই অর্ডারদাতার জন্য আরেকটি পণ্য তৈরি করে ফেলি আবার যেহেতু বিক্রি করার জন্য আমার কাছে আগ থেকেই কিছু পণ্য তৈরি করা থাকে, ফলে কোনো অর্ডারদাতা তৈরিকৃত ঐ পণ্যের মতো কিছু বানানোর অর্ডার করলে সেক্ষেত্রে আমি নতুনভাবে পণ্য তৈরি না করে আগের বানানো ঐ পণ্যটিই অর্ডারদাতা ক্রেতাকে বুঝিয়ে দিই

এখন জানার বিষয় হল, শরীয়তের দৃষ্টিতে কি আমার এই লেনদেন জায়েয হচ্ছে?

Answer

অর্ডারকারীর জন্য তৈরিকৃত লেপ-তোশক ইত্যাদি অর্ডারকারী বুঝে নেওয়ার আগে অন্যের কাছেও সেটি বিক্রি করা জায়েয আছে তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল, নির্ধারিত সময়ের ভেতরই তাকে তার পণ্য সরবরাহ করতে হবে এবং ওই পণ্যটি পুরোপুরি অর্ডারকারীর সাথে চুক্তিকৃত গুণগত মানের হতে হবে আর অর্ডারকারীর কাক্সিক্ষত মানের পণ্য পূর্ব থেকে বানানো থাকলে এক্ষেত্রে সেটিও তাকে দেওয়া যাবে

* >المبسوط< للسرخسي ১২/১৩৯ : (وإذا عمله الصانع، فقبل أن يراه المستصنع باعه، يجوز بيعه من غيره) لأن العقد لم يتعين في هذا بعد.

আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৩৬৫; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৪/৫২৭; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৯/৪০১; আলবাহরুর রায়েক ৬/১৭১; আদ্দুররুল মুখতার ৫/২২৫; শরহুল মাজাল্লাহ, আতাসী ২/৪০১

Sharable Link

আতাউল্লাহ - রংপুর

৬৭৭৯. Question

যায়েদ শরীফ থেকে তিন বছরের জন্য একটি জমি পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়েছে ইতিমধ্যে দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে সে এ সময়ে সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষাবাদ করেছিল এ বছর সে চাচ্ছে এ জমিটি কারো কাছে বর্গা দিতে শরীফের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সে নিজেই (জমির মালিক) তা বর্গা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে

হুজুরের কাছে জানতে চাই, শরীফ তো ঐ জমির মূল মালিক, যায়েদের জন্য ঐ জমিটি শরীফের কাছে বর্গা রাখা জায়েয হবে? দয়া করে জানাবেন

Answer

না, ভাড়া নেওয়া জমি স্বয়ং জমি-মালিকের কাছেই বর্গা দেওয়া জায়েয নয় জমিটি বর্গা দিতে চাইলে অন্য কারো কাছে দিতে হবে

 

* >المحيط البرهاني< ১৯/৬১لا يجوز دفع الأرض إلى الآجر مزارعة، سواء كان البذر من قبل الآجر أو كان من قبل المستأجر.

ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৬/১০০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৭৪

Sharable Link

হাসানুজ্জামান - যশোর

৬৭৮০. Question

আমি দোকান থেকে একটি মেলামাইন বোর্ডের ওয়্যারড্রব কিনেছি বাসায় আনার পর দেখলাম একটা ড্রয়ারের ভেতরের কিছু অংশ ভাঙা সাথে সাথে দোকানদারকে ফোন করলে সে বলল, আপনি চাইলে ওয়্যারড্রব ফেরত দিয়ে যেতে পারেন কিন্তু সমস্যা হল, এই ওয়্যারড্রব তার দোকানে নিতে হলে পাঁচ শ টাকা ভ্যান ভাড়া খরচ হবে

প্রশ্ন হল, সে-ই তো আমাকে ত্রুটিযুক্ত পণ্য দিয়েছে এখন এই ভ্যান ভাড়া কি আমাকেই দিতে হবে, না তার থেকে নিতে পারব?

Answer

প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওয়্যারড্রবটি বিক্রেতাকে ফেরত দিতে চাইলে তা দোকানে পৌঁছে দেওয়ার ভাড়া আপনাকেই বহন করতে হবে বিক্রেতা এই খরচ বহন করতে বাধ্য নয় হাঁ, বিক্রেতা যদি স্বেচ্ছায় উক্ত খরচ বহনে আগ্রহী হয়, তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই

* >جامع الفصولين< /৩৩৬ : مؤنة رد المبيع بعيب أو خيار شرط أو رؤية على المشتري.

আলমুহীতুল বুরহানী ১০/৯৮; ফাতাওয়া বায্যাযিয়া ৪/৪৪৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৩/৬১; রদ্দুল মুহতার ৫/১৬

Sharable Link

মুহা. শাফায়াতুল্লাহ - ভৈরব, কিশোরগঞ্জ

৬৭৮১. Question

আমার ছোট ছেলের পেশাব ঝরার কারণে ডাক্তারের পরামর্শে দেড় বছর বয়সেই তাকে খতনা করানো হয় কিন্তু খতনা করানোর পর থেকেই লক্ষ করছি যে, খতনা করানোর সময় সাধারণত যতটুকু চামড়া কেটে ফেলা হয় ততটুকু কাটা হয়নি ফলে কিছু চামড়া থেকে যায় এখন তার বয়স সাত বছর

জানতে চাই, এ চামড়া থেকে যাওয়ার কারণে কি তাকে আবার খতনা করানো লাগবে, নাকি আগের খতনাই যথেষ্ট হবে?

 

Answer

খতনার জন্য যতটুকু চামড়া কাটতে হয় যদি এর অধিকাংশই কাটা হয়ে থাকে, তাহলে তার খতনা সম্পন্ন হয়ে গেছে; নতুন করে আবার খতনা করানোর প্রয়োজন নেই তবে যদি চামড়া অর্ধেক বা অর্ধেকের কম কাটা হয়ে থাকে, তাহলে তার খতনা সম্পন্ন হয়নি সেক্ষেত্রে তাকে পুনরায় খতনা করাতে হবে

* >عيون المسائل< ص ২১৯ : ولو أن غلاما ختن، فلم يقطع الجلدة كلها، فإن قطع أكثر من النصف فهو ختان، وهو جائز، وإن كان أقل من ذلك لا.

আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৮৫; ফাতাওয়া সিরাজিয়া, পৃ. ৭৫; মাজমাউল আনহুর ৪/৪৯০; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫৭; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৭৫১

Sharable Link